বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব ৪৪

বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব ৪৪
জাওয়াদ জামী

শাড়ী আর গহনার ওজনে কুহুর প্রান ওষ্ঠাগত। এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়েছে সেই কখন। সারাদিন খাওয়া হয়নি। ক্ষুধায় শরীরের অবশিষ্ট শক্তিটুকুও গায়েব। অন্যদিন ফুপু আর তাহমিনা আন্টি কুহুকে খাওয়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু আজ তাদের সেইদিকে খেয়ালই নেই। ছেলের বিয়ের জন্য তাহমিনা আক্তার কয়েকজন প্রতিবেশি এবং ঢাকায় তার যে দুই বোন থাকেন, তাদের পরিবারকে আসতে বলেছিলেন। সবাই তাদের নিয়েই ব্যস্ত হয়ে গেছে।

কুহু সেই বিকেল থেকে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। না পারছে উঠে যেতে না পারছে বসে থাকতে।
আর এদিকে একটু পরপর আনান এসে ওকে এটাসেটা বলে খুঁ’চি’য়ে যাচ্ছে। তার সাথে সিক্তাও বাদ যাচ্ছেনা। কুহু দাঁতে দাঁত চেপে ওদের অ’ত্যা’চা’র সহ্য করছে। এত কিছুর মাঝেও কুহু তাহমিদকে খুঁজছে। কিন্তু সেই মহাশয়ের কোন খবরই নেই।
প্রতিবেশিরা সবাই চলে গেলে তাহমিনা আক্তার এসে কুহুকে খাইয়ে দেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” মা, কতক্ষণ এসব পরে থাকব? ভিষন গরম লাগছে। প্রতিবেশিরা সবাই চলে গেছে, এবার এসব খুলে সালোয়ার – কামিজ পরি? ” কুহু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে তাহমিনা আক্তারকে।
” সবাই তোকে দেখেছে ভালোকথা। আমার ছেলে কি তোকে ভালো করে দেখেছে? আজ তোকে এভাবে সাজিয়েছি আমার ছেলের জন্য। সে-ই যদি না দেখবে, তবে সাজানোর কোন মানেই হয়না। আমার ছেলেটা কবুল বলার পরেই রুমে যেয়ে ঘুমাচ্ছে। তোর দিকে তাকিয়েও দেখেনি। আর তুই কিনা চাচ্ছিস, আমার ছেলের হক নষ্ট করতে! ” তাহমিনা আক্তারের অকপট জবাবে লজ্জায় মাথা নিচু করে কুহু।

ও মনে মনে ভাবছে, এ কেমন শ্বাশুড়ি তার!
রাত নয়টার দিকে কায়েস ছেলেকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বড় বোনের বাড়িতে প্রবেশ করে।
ড্রয়িংরুমে সবাই মিলে কুহুকে ঘিরে আড্ডা দিচ্ছিল। কায়েস ভেতরে ঢুকে কুহুকে বধূরূপে দেখে অবাক হয়ে গেছে। আজ সকালেই যে মেয়ে ফুলতলা থেকে আসল, রাতেই তাকে বধূ বেশে দেখছে!
কায়েসকে দেখে তাহমিনা আক্তার হাসিমুখে এগিয়ে আসেন।

” আসেন বেয়াই মশাই। মেয়ের বাড়িতে আপনাকে স্বাগতম। এতদিন বোনের বাড়িতে এসেছেন, আজ থেকে মেয়ের বাড়িতে আসবেন। ”
তাহমিনা আক্তারের কথা শুনে কায়েস এবার অবাক হতেও ভুলে গেছে। কি উত্তর দিবে সে তাহমিনা আক্তারের কথার!
আফরোজা নাজনীন এগিয়ে এসে ভাইকে এনে কুহুর পাশে বসায়। বাবাকে দেখে কুহুর বুক ফেটে কান্না আসে। ছোটবেলা থেকেই মা’কে দেখেনি। নিজের বিয়েতে মা’কে তো পাবেইনা জানত, কিন্তু বাবাও যে থাকবেনা এটা ওর কল্পনায়ও ছিলনা।
বাবাকে দেখা মাত্রই কুহু হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আবারও মনে হয় রাতের সেই বিভীষিকা।

ও কিছুতেই সবুজকে ক্ষমা করতে পারবেনা। বিয়ের মত পবিত্র দিনেও সবুজের জন্য ও বাবাকে কাছে পেলনা।
রাতে সবার খাওয়া শেষ হলে ছেলেমেয়েদের উপরে পাঠিয়ে দেন আফরোজা নাজনীন। এরপর কুহু,তাহমিদসহ বড়রা আয়েশা সালেহার রুমে আসেন।

আফরোজা নাজনীন কোন ভনিতা ছাড়াই কুহুর থেকে জানতে চান, রাতে তাহমিদকে ফোন করার কারন। তিনি পুরো ঘটনা না জানা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেননা। কুহুও ভাবল এবার সবাইকে বিষয়টি জানাতে হবে। ওর হঠাৎ তাহমিদকে ডাকা আবার হঠাৎই এই বাসায় চলে আসায় সবারই খটকা লেগেছে।
কুহু একে একে সবটাই জানায় সবাইকে। সবুজের নাম উল্ল্যেখ করতে ভুলেনা। কুহুর মুখে সবকিছু শুনে সবাই কথা বলতে ভুলে গেছে।

” তুই আমাকে রাতেই জানালিনা কেন, মা? তোর বাবা এতটাও খারাপ নয় যে মেয়ের বিপদে এগিয়ে আসবেনা। তোর যদি কিছু হয়ে যেত! ” কায়েস ডুকরে কেঁদে উঠে।
তাহমিদ স্তম্ভিত হয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে আছে। গতরাত মেয়েটার কিভাবে কেটেছে, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। কুহুর কিছু হয়ে গেলে ও বাঁচত কিভাবে!

” বাবা, আমি কোন ঝামেলা চাইনি। যাই ঘটে যাক না কেন, ছোটমা কিছুতেই আমাকে বিশ্বাস করতনা। আমি জানি, রাতে তোমাকে ডাকলে তুমি নিশ্চয়ই সবুজকে ছাড়তেনা। কিন্তু দৃষ্টি কিংবা ছোটমা বিষয়টা সহজভাবে নিতনা। উল্টে গ্রামের সবার কাছে, সব আত্মীয় স্বজনদের কাছে আমাকে দো’ষী করত। আমার নামে মিথ্যা অ’প’বা’দ দিত। দো’ষ না করেও আমিই আ’সা’মী হতাম। তাই আমি তোমাকে জানাইনি, বাবা। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। ” কেঁদে জবাব দেয় কুহু।
” আমি ওকে ছাড়বনা। কালই গ্রামে গিয়ে ওকে পুলিশে দিব। দৃষ্টিকে ওর কাছে আর যেতে দিবনা। ”

” তুই এত উত্তেজিত হোসনা, ভাই। কুহুর কথায় যুক্তি আছে। শিউলি, দৃষ্টি কেউই মানবেনা তোদের কথা। গ্রামে কুহুর নামে দুর্নাম রটাবে শিউলি। মেয়েটার গ্রামে মুখ দেখানো দায় হয়ে যাবে। ” আফরোজা নাজনীন বলেন।
” তুমি এসব বলছ, আপা! তাই বলে ঐ শয়তানটা শাস্তি পাবেনা! আমার মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলতে চাইছে ও। ”

” আমি কি বলছি আগে ভালোভাবে শোন। তুই এখনই গতরাতের ঘটনা নিয়ে ওকে কিছু বলিসনা। এতে কুহুর ওপর আঙ্গুল উঠাবে সবাই। এ সুযোগ ওদের দিসনা। এখন উত্তেজিত না হয়ে বুদ্ধি দিয়ে কাজ কর। ওর সম্পর্কে এযাবৎ যা কিছু শুনেছিস তার প্রমান সংগ্রহ কর। এরপর দৃষ্টিকে বুঝা সবুজ খারাপ ছেলে। ওকে সব প্রমান দেখা। দৃষ্টির চোখে পট্টি বেঁধে দিয়েছে ঐ জা’নো’য়া’র’টা। আগে দৃষ্টির চোখে ওকে অপরাধী প্রমান কর। তারপর কুহুর সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের কথা দৃষ্টিকে জানা। তখন দেখবি দৃষ্টিই ওকে ঘৃণা করবে। এরপর তুই ওকে যা খুশি করিস। আমরা কেউ তোকে বাঁধা দিবনা। বরং তোর পাশে সব সময়ই আছি এবং থাকব। ”

আফরোজা নাজনীনের সাথে সবাই একমত হন।
তাহমিদকে চুপচাপ থাকতে দেখে শফিউল রাশেদিনের খটকা লাগে।
” তাহমিদ, তুমি এমন থম মেরে আছ কেন? কি হয়েছে তোমার? ”
” আমি তোমাদের মতামতের সাথে একমত হতে পারছিনা। ঐ জানোয়ারকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিব। সকালেই যদি এই মেয়ে সব জানাত, আমি সেখানেই ওকে পুঁ’তে রেখে আসতাম।

আর তুমি কি বললে, বড়মা! কুহুর উপর আঙুল তুলবে সবাই! কেন কুহু কি কোন অন্যায় করেছে? অন্যায় করেছে ঐ সবুজ। ওর অন্যায়ের জন্য কুহু কেন মুখ লুকিয়ে থাকবে! আমি কালকেই তোমাদের ঐখানের থানায় যেয়ে, ওর নামে মামলা করব৷ আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা। ”

” তুমি কোথাও যাবেনা। আমরা জানি কুহু কোন অন্যায় করেনি। তবুও কুহুর সম্মান নিয়ে আমরা টানাটানি করতে চাইনা। তুমি মামলা করলেও কিছুই হবেনা। ক্ষমতার মারপ্যাঁচে ও ঠিকই মুক্ত হয়ে যাবে। তখন ও কুহু কিংবা তার পরিবাকে ছেড়ে কথা বলবে? আশেপাশের দশ গ্রামের সবাই চেয়ারম্যান আর তার ছেলের কথা বিশ্বাস করবে। কুহুকে খারাপ প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লাগবে। তাই আমাদের আগে প্রয়োজন ঐ ছেলের সব খারাপ কাজের প্রমান। এজন্য আগে আমাদেরকে কাজ করতে দাও।

ঐখানের এসপি আমার অতি পরিচিত। আমি তার সাথে কথা বলে রাখব। আমাদের হাতে প্রমান থাকলে ওকে শেষ করা কোন ব্যাপারই হবেনা। কায়েস সব প্রমান জোগাড় করুক, আমিও লোক লাগিয়ে দিব প্রমান সংগ্রহের জন্য । সব প্রমান হাতে এলে তোমার যা ইচ্ছে কর। আমি বোঝাতে পেরেছি? ” সানাউল রাশেদিনের কথায় চুপ হয়ে যায় তাহমিদ। কিন্তু ওর ভেতরের র’ক্ত টগবগ করে ফুটছে।

সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, আগে সব প্রমান জোগাড় করেই তবে তারা সবুজের পেছনে লাগবে৷
কুহুকে তাহমিদের রুমে নিয়ে আসেন তাহমিনা আক্তার। আজ বাড়ির বড় মেয়েরা সবাই শ্বশুর বাড়িতে থাকায় এই কাজ তাকেই করতে হচ্ছে। সিক্তা কিংবা আরোশি মেয়েটাকে আর কিইবা শিখয়ে দিবে।
দুরুদুরু বুকে কুহু পা দেয় তাহমিদের রুমের চৌকাঠে। এই বাড়িতে এত বছর যাবৎ আসলেও আগে কখনোই এই রুমে আসেনি কুহু। তাই এই রুম সম্পর্কে কোন ধারনাও নেই।

ভেতরে ঢুকতেই কুহুর নাকে রজনীগন্ধার তীব্র সুবাস লাগে। তাহমিনা আক্তার ততক্ষণে রুমের আলো জ্বালিয়েছেন। রুমটা আলোয় উদ্ভাসিত হতেই কুহুর চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। পুরো খাট রজনীগন্ধা, গোলাপ, কাঠবেলির মালা দিয়ে সাজানো! রুমের দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ফুলের থোকা।
কে সাজালো এভাবে!

” আনান, সিক্তা আর আরোশির কান্ড দেখেছিস! কত সুন্দর করে সাজিয়েছে! আজ থেকে তোর রুম তুই বুঝে নে, মা। এই রুমের সাথে সাথে আমার ছেলের দ্বায়িত্বও আজ থেকে তোকে দিলাম। সারাজীবন আমার ছেলেকে ভালোবাসায় বেঁধে রাখিস। আর শোন, গতরাতের ঘটনা মাথা থেকে একদম ঝেড়ে ফেল। ঐ ছেলে এরা কেউ ছাড়বেনা। ওর শাস্তি ও পেয়ে যাবে। সেসব কথা মনে করে আজকের রাতটা নষ্ট করিসনা। যদি সেসব নিয়ে তাহমিদ তোর সাথে রাগ করে তুই চুপ করে থাকিস। দেখবি রাগ কমে গেলে ও একদম মাটির মানুষ হয়ে যাবে। ” তাহমিনা আক্তার আরও কিছু উপদেশ দেন কুহুকে। কুহুও বাধ্য মেয়ের মত সব মাথায় ঢুকিয়ে নেয়।

তাহমিনা আক্তার রুম থেকে বেরিয়ে গেলে, কুহু বিছানা থেকে নেমে রুমের ভেতরে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। বড় সাইজের ছিমছাম একটা রুম। বেড কভার থেকে শুরু করে ফার্নিচার সবকিছুতেই রুচির ছাপ স্পষ্ট। বড়বড় জানালাগুলো পর্দার আড়ালে নিজেদের মুখ লুকিয়েছে। পুরো রুমের চার দেয়ালে অতিরিক্ত কোন কিছু দিয়ে সাজানো নেই। শুধু দক্ষিণের জানালার পাশে দেয়ালে তাহমিদের একটা ছবি ঝুলছে। সাদা দেয়ালগুলো যেন আলো ছড়াচ্ছে।
কুহু দক্ষিণের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। পর্দা সরিয়ে কিছুক্ষণ সূদুরে চেয়ে থাকে। এরপর এসে দাঁড়ায় তাহমিদের ছবির সামনে।

এ্যাপ্রন হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে। ঘাড় একটু বাঁকা করে তাকিয়ে আছে বামপাশের কোন কিছুর দিকে। বাতাসে এলোমেলো চুল। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। পেছনে লাল, হলুদ কলাবতী ফুলেরা বাতাসে দুলছে।
কুহু এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ছবিটার দিকে৷ তাহমিদ কখন রুমে এসেছে তা জানেইনা। এমনকি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটাও বুঝতে পারেনি।

” আমার মিষ্টি বউটা এ মনযোগ দিয়ে কি দেখছে শুনি? তার একটামাত্র জামাই রুমে এসেছে অথচ তার সেদিকে কোন খেয়ালই নেই! এমন বেখেয়ালি হলে চলবে। ” আচম্বিতে কুহুর কোমড় জড়িয়ে প্রশ্ন করে তাহমিদ। থুতনি রেখেছে কুহুর ঘাড়ের ওপর। ওর নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে কুহুর গালে।

আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠে কুহু। এভাবে তাহমিদের তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরায় কেমন লজ্জা করছে। লজ্জা আরও গাঢ়ো হয় যখন তাহমিদ কুহুর গালে লম্বা চুমু দেয়।
” একি বউ, তুমি কাঁপছ কেন! আমি তো এখনও কিছুই করিনি! এখনই যদি এত কাঁপাকাঁপি শুরু কর তাহলে সারারাত কি করবা! রাতের জন্য হলেও অন্তত কিছু কাঁপা-কাঁপি বাঁচিয়ে রাখ। ”

” এই ছাড়ুন বলছি। নামাজ পড়তে হবে। যান অজু করে আসুন। এই রাতে নামাজ পড়তে হয় সেই চিন্তা না করে শুধু অ’শ্লী’ল কথাবার্তা বলছে! ” কুহু তাহমিদের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে।
” আমি কি একবারও বলেছি নামাজ আদায় করবনা। আমিতো শুধু বউকে চুমু দিয়েছি এবং দিব। কারন আমি দেখতে চাই, আমার বউ কত কাঁপতে পারে। বউয়ের কাঁপার কারন হওয়ার মধ্যেও আনন্দ আছে। ”
তাহমিদের এহেন কথায় কুহু লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

” আপনি কি আমাকে ছাড়বেন? নাকি আমি দিদুনের কাছে যাব? বলছি যে নামাজ পড়তে হবে, তবুও উল্টাপাল্টা কথা বলেই যাচ্ছে! বেশরম লোক একটা। শরীরে লজ্জাশরমের বালাই নেই। ”
” দিদুনের কাছে যেয়ে লাভ নেই সুন্দরী। ঘুরেফিরে আমার কাছেই আসতে হবে। এই রুমটাই এখন তোমার পারমানেন্ট ঠিকানা। আর রুমের মানুষটা তোমার ব্যাক্তিগত সম্পদ। তোমার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সঙ্গী। ভয় পেলে যেমন তার বুকেই তোমাকে মুখ গুঁজতে হবে, তেমনি কষ্ট পেলেও তার বুকই কাঁদার স্থান, আবার তার কারনে লজ্জায় লাল হলেও তার বুকই ভরসা। এবং সবশেষে চরম সুখের দিনেও তার বুকেই তোমার সুখ। এবার বল কোথায় যাবে এই রুম এবং রুমের মানুষটা রেখে? ”

তাহমিদ কথা বলার মাঝেই কুহুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে, বুকে জরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে অনুভব করে সুখের এই ক্ষন।
” বউ, আমার বুকে মাথা রেখে কেমন অনুভব করছ? একটা সুখ সুখ অনুভূতি শরীর-মনে দোলা দিচ্ছে, এটা কি অনুভব করতে পারছ? এরপর কখনও নিজের রুম ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করবে? ”
কুহু তাহমিদের কথার উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসে।
আসলেই এই সুখের কোন নাম নেই।
দুজন একসাথে নামাজ আদায় করে। তাহমিদ কুহুকে নিয়ে বিছানায় যায়।

” এবার একটু ঘুমাও। সারারাত ঘুমাওনি, আবার সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তুমি শুয়ে পর, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ”
” আপনি ঘমাবেননা! আপনারও তো রাতে ঘুম হয়নি! ”
” আমি দুপুরে, সন্ধ্যার পর ঘুমিয়েছিলাম। তাই এখন ঘুম আসবেনা। তুমি কথা না বলে চুপটি করে ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে, তোমাকে দু-চোখ ভরে দেখব। এখন চোখ বন্ধ কর, আমার কাজে বাঁধা দিওনা। ”
” আপনি ভেতরে ভেতরে রে’গে আছেন? ”

” তোমার কেন মনে হল আমি রে’গে আছি? কার ওপর রা’গ’ব আমি! ”
” সবুজের ওপর। আমি জানি আপনি ওর ওপর রে’গে আছেন। ”

বিন্দু থেকে বৃত্ত বোনাস পর্ব

” আজকের এই পবিত্র রাতে, সুখের মুহূর্তে তার কথা মনে করে আমার সুখের বারোটা বাজিয়ে দিওনা। ঐ কু’লা’ঙ্গা’রে’র নাম নিয়ে আজকের রাতের মাধুর্য নষ্ট করোনা। এখন চোখ বন্ধ কর। নইলে এবার সত্যিই রে’গে যাব। ”
কুহু ঝট করে চোখ বন্ধ করে। তাহমিদ হেসে কুহুর চুলে আঙুল চালায়।

বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব ৪৫