বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব ১৪

বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব ১৪
নুরুন্নাহার তিথী

পরিচিত মেয়েলি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে সদর দরজার দিকে চেয়ে আরহান উৎফুল্ল স্বরে বলে ওঠে,
“আরে তোরা?”
“হ্যাঁ আমরা। কেন খুশি হোসনি?”
মেয়েটির কণ্ঠে অভিমান। আরহান ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“খুশি হব না কেন? তোরা আমার বাড়িতে যে কোন সময় আসতে পারিস। আমি সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি তাই জিজ্ঞাসা করেছি। ভেতরে আয়।”

সাফা, রাফাত, তন্নিরা ভেতরে এসে আয়েশা খানমকে সালাম দেন। আয়েশা খানম হাসি মুখে বলেন,
“কেমন আছো তোমরা?”
“এইতো দাদী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
সাফার স্বতঃস্ফূর্ত জবাবে আয়েশা খানম মুচকি হাসেন। অতঃপর বলেন,
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বসো তোমরা।”
ওদেরকে বসতে বলে আয়েশা খানম রান্নাঘরের দিকে গেলেন সার্ভেন্টকে বলতে। এদিকে সাফা ঘুর ঘুর নজরে রুহানীকে দেখছে। সে বলে ওঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হাই আমি সাফা। সাফা ইসলাম। তুমি?”
সাফার কথার বিপরীতে রুহানী মুচকি হাসে। আরহান বলে ওঠে,
“ওর নাম রুহানী।”
“তোকে জিজ্ঞাসা করেছি? তুই কেন বলছিস? ওর নাম ও বলুক।”
কথাটা সাফা ভ্রুকুটি করেই বলল। আরহান জবাব দেয়,

“ও কথা বলতে পারে না।”
আরহানের মুখ থেকে রুহানীর সত্যটা শুনে সাফার কুঁচকানো ভ্রুঁ শিথিল হলো। সে নরম স্বরে বলল,
“সরি।”
রুহানী প্রতিবারের মতো একই প্রতিক্রিয়া দেখাল।

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই রুহানী সোফায় বসে আছে তখন পায়ের কাছে কেউ নড়াচড়া করছে। পায়ে সুরসুরি অনুভূত করায় মাথা নুইয়ে দেখে বাচ্চা খোরগোশটা সোফার নিচে! রুহানীর ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে খোরগোশটাকে কোলে তুলে নিল। তারপর ওর সাথেই খেলতে লাগল।

আরহান তার বন্ধুদের জন্য কফি করে নিয়ে বাগানে যাচ্ছিল তখন রুহানীকে দেখে। সে রান্নাঘরে ফিরে গিয়ে ঝটপট ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি, গুড়ো দুধ, চিনি, কফি পাউডার নিয়ে আরেক মগ কফি বানিয়ে ট্রে সহ ধীর পায়ে রুহানীর দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে বনিকে রুহানীর কোলে দেখে কিছুটা অবাক হলো। বনি তার সাথে রান্নাঘরে ছিল। ভেবেছে খেলছে কিন্তু সে দেখি রুহানীর কাছে চলে এসেছে! আরহান মুচকি হেসে বলল,

“মনে হচ্ছে বনির তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার কাছেই বারবার চলে আসছে।”
রুহানী মিষ্টি হেসে আরহানের দিকে একবার নজর বুলিয়ে বনির গায়ে হাত বুলাতে থাকে। আরহান এবার ওকে কফির অফার করে।

“চলো আমাদের সাথে কফি আড্ডায় যোগ দাও।”
কথাটা শুনে রুহানী প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালে আরহান হেসে বলে,
“চলো তো। বেশ মজা হবে। আমার ফ্রেন্ডগুলো যা ব*দ*মা*শ!”
রুহানী হালকা হেসে বনিকে নিয়ে সাথে চলল। বাগানে যেতেই রাইদা এসে আরহানের হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে নিল। আরহানের পাশে রুহানীকে দেখে সাফার বুকের ভেতর কেমন কেমন করতে লাগল। সে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,

“আসো রুহানী। আমাদের সাথে জয়েন হও।”
আরহান বলে,
“রুহানীর চাচিকে নিয়ে মনে হয় দাদী নিজের ঘরে রেস্ট করছেন। রুহানী একা বসে ছিল তাই আমাদের সাথে আসতে বললাম। বসো রুহানী। ”
রুহানী হালকা হেসে বসল। ওরা আড্ডা, হাসা-হাসি করছে। সাফা প্রচণ্ড হাসছে। সে হাসতে হাসতে আরহানের উপর বারবার পরেও যাচ্ছে। আরহান এবার মজা করেই বলে ওঠল,

“তুই একটু সোজা হয়ে বসতে জানিস না? এমন ব্যালেন্সে সমস্যা হলে প্লেন ব্যালেন্স কীভাবে করবি?”
কথাটা অন্যসব দিনের মতো সাফা সাধারণ ভাবে নিল না। তার ইগোতে লাগায় সে রাগ করে উঠে দাঁড়াল। অতঃপর বলল,
“যা আমি চলে যাচ্ছি। থাকব না এখানে। ”
সাফা সাথে সাথে গটগটিয়ে গেইটের দিকে হাঁটা ধরল। তন্নি বলে ওঠল,
“ওকে আটকা আরহান।”

“আরে বাদ দে। ওর রাগ কর্পূরের মতো। আজ বাদে কাল আবারও এমনটাই করবে। যেতে দে। আবার ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটা সাফাও শুনল। সে চোখ বন্ধ করে নাকের কাছে হাত দিয়ে কান্নার ধা*ক্কা আটকানোর চেষ্টা করল। অতঃপর পেছনে না ঘুরে সোজা হেঁটে গেইটের বাহিরে চলে গেল। রাফাত এবার আরহানকে বলল,
“ও এবার সত্যি সত্যি রাগ করল নাতো?”

“আরে ইয়ার, ওকে তুই চিনিস না? অতিরিক্ত আহ্লাদী। ঠিক হয়ে যাবে। তোরা কফি শেষ কর।”
আরহান নিজের মগে চুমুক দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল রুহানী কফি না খেয়ে গেইটের দিকেই চেয়ে আছে।
“তুমি খাচ্ছ না কেন? খাও। ওর কথা ভেবো না। কালকেই ঠিক হয়ে যাবে।”
রাইদা এতক্ষণ সবটা দেখে এবার বলল,

“দেখি কালকে। একটু পেছনে ঘুরে প্রতিবারের মতো বললও না।”
আরহান সবাইকে সাফার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখে কিঞ্চিত বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠে,
“যা! তোরাও যা। আমি ঘুমাব। তোদের মতো দুঃখ প্রকাশ করতে টাইম নাই। সারাদিন বনিকে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।”
রাফাত বলে,

“আরেহ তোরা দুটো একইরকম। এতো রাগিস কেন? তুই টায়ার্ড। রেস্ট কর।”
কিছুক্ষণ পর কফি খাওয়া শেষে টুকটাক আড্ডা শেষে আরহানের অন্য বন্ধুরাও চলে যায়। আরহান লক্ষ্য করে রুহানী বনিকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে। আরহান বলে,
“তোমার খোরগোশ পছন্দ?”
রুহানী দৃষ্টি না সরিয়েই হ্যাঁ বোধক মাথা দুলায়।
“তাহলে আজ থেকে বনি তোমার।”

রুহানী তৎক্ষণাৎ হতভম্ব হয়ে আরহানের দিকে তাকায়। আরহান হালকা হেসে বলে,
“হ্যাঁ আমি সত্যি সত্যি বনিকে তোমায় দিচ্ছি। আমি বাসায় খুব একটা থাকি না। তখন সার্ভেন্ট ওদের খাবার দেয়। বনি এমনিতে খেতে চায় না। খুব জিদ্দি। খাবার হাত দিয়ে ধরে ধরে খাওয়াতে হয়। তুমি নিয়ে গেলে যত্নও হবে। আমি বাসায় থাকলেও ওকে খুব একটা সময় দিতে পারি না। নিবে তুমি?”

রুহানী কালক্ষেপন না করে দ্রুত সায় দেয়। আরহান বনিকে একবার কোলে নিয়ে আদর করে রুহানীর কোলে দিয়ে দেয়।
বিকেলের দিকে রুহানীরা আরহানদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে। রুহানী নিজেই বনির জন্য নিজের ঘরেই থাকার জায়গা বানলো। যদিও জানে বনি ওখানে থাকবে না। কিন্তু সে ভীষণ খুশি।

আজমল খান আরহানকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে। আরহান আসলে তিনি বলেন,
“দেখো আমি তোমার শখ মেনে নিয়েছি। ২ বছরের মতো হচ্ছে তুমি পাইলট হয়ে জয়েন করেছ। গ্রাজুয়েশনের পরেই তোমাকে বলেছিলাম মাস্টার্সের জন্য লন্ডন যাও।

কিন্তু শোনোনি। জেদ করে নিজেরটা করেছ। এবার তোমাকে শুনতে হবে। আমার শরীর আগের মতো কর্মঠ নেই যে মাঠেঘাটে দৌঁড়াব। আমি চাই তুমি এবার আমার কথাও শোনো। তুমি একজন বেটার পাইলট তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই কিন্তু আমার ব্যবসা, রাজ*নী*তি সবকিছুরও তোমায় হাল ধরতে হবে। আমি কতোদিন বাঁচি তা তো বলতে পারি না। তোমাকে সব বুঝিয়ে যেতে চাই। তুমি এখানকার কোনো ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সটাও করে নাও।”

আরহান মৌন হয়ে সবটা শুনল। তারপর লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“পাইলটের জবটা ছেড়ে দিব বলছ? মায়ের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নটাকে নিজের করেছিলাম। এখন বাবারটাও?”
আজমল খান ছেলের মুখাবয়বের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইলেন। আরহানের গ্রাজুয়েশনের পরপর এটা নিয়ে ঝা*মেলা হয়েছিল। এখনও কি আরহান রাজি হবে না? মনে মনে প্রতিকূল চিন্তা করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব ১৩

আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রথম বই “মেঘের আড়ালে উড়োচিঠি” প্রিঅর্ডার চলছে। ৩১মে ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। যেকোনো বুকশপে প্রিঅর্ডার করতে পারবেন। ৩৩% ছাড় প্রিঅর্ডারের জন্য প্রযোজ্য।
গতকাল আমার ফোনের ডিসপ্লে ফেটে গেছে। ভাগ্যিস কালো হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব ১৫