বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৯

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৯
শারমিন আক্তার বর্ষা

মাঝ রাস্তায় হঠাৎ আরিশ ছুটে এসে রুহানির চুমু খেয়ে বসল, সেটাও আবার ঠোঁটে। আকস্মিক ঘটনায় হতবুদ্ধি হয়ে যায় রুহানি। চোখ জোড়া বড়সড় করে ফেললো। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগে। স্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে ও’কে। কি করবে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। নেত্রযুগল স্থির করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

মিনিট দুই একের পর নিজ হুঁশশ ফিরে পায় রুহানি। নিজের শক্তি প্রয়োগ করে আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরিশ ও’র বাম হাতের দুই আঙুল রুহানির ওষ্ঠদ্বয়ের ওপরের ছুঁইয়ে দিলো, রুহানি নড়ে সরে যেতে নেয়। আরিশ তার ডান হাত রুহানির কোমড় চেপে ধরে একটানে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এতটা কাছাকাছি যে তাদের মধ্যে বিন্দু মাত্র ফাঁক নেই। রুহানি ছুটবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রুহানি কে উত্তেজিত হতে দেখে মৃদু হাসি দিয়ে আরিশ নেশালো কণ্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তখন একবার ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার যদি ধরি মিস তাহলে কিন্তু ধম বন্ধ হয়ে গেলেও ছাড়বো না।”
আরিশের কথা কানে তুললো না রুহানি। ‘ও’ আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর দিগুণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আরিশ রুহানিকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত ও রাগী গলায় বলে,

” তুমি এক কথার মেয়ে না।” তীক্ষ্ণস্বরে কথাটি বলে আবারও রুহানির কোমল ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে নিজের ওষ্ঠদ্বয় জোড়া এক করে নেয়। আগের থেকেও বেশি ছুটাছুটি করছে রুহানি কিন্তু আরিশ ও’কে ছাড়ছে না। রুহানি য়খন ছাড়া পাবার জন্য বেশি নড়ছে আরিশ তখনই রুহানির ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো করে কামড় দিচ্ছে। ব্যাথায় যে কুঁকড়াবে তার ও ব্যাবস্থা নেই।

আরিশের ও’কে এভাবে চেপে ধরায় ধম বন্ধ হয়ে আসছে ও’র। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না ও ফেলতে পারছে না বলে, রুহানির ধম বন্ধ হয়ে যাবে। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে বসল রুহানি। বাম হাত বুকের ওপরে রেখে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। ঘামে কপাল চিপচিপে হয়ে আছে। উত্তেজিত হওয়ায় বুকের মধ্যে হার্ট টা লাফালাফি করছে। মনে হচ্ছে, কিঞ্চিত জায়গা পেলে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসবে। রুহানি চারপাশে অন্ধকার দেখছে, কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। পরক্ষণে চারপাশে চোখ বুলাতে নিজেকে শ্যামাদের ফ্লাটে উপস্থাপন করল। ত্যক্ত শ্বাস ফেলে রুহানি ত্রস্তকণ্ঠে বলে,

” এটা একটা দুঃস্বপ্ন। ভাবতেও আমার গায়ের পশম শিউরে ওঠছে স্বপ্ন ও এতটা ভয়ঃকর হয়।” বুকের ওপর তিনবার থু থু দিয়ে শুধু পরে।
আজ সারাটা দিন রুহানি আরিশের সাথে ছিল। সন্ধ্যার দিকে গাড়ি করে শ্যামার বাসার গেইটের সামনে ও’কে নামিয়ে দিয়ে যায় আরিশ। একটা মানুষ কে পরিপূরকভাবে না চিনে তাকে বাজে বলাটা নিতান্তই অনুচিত।

আজ সারাটা দিন রুহানি আরিশের কাছাকাছি ছিল, আরিশকে দেখেছে কতটা প্রকৃতি প্রিয় সে। মানুষের প্রতি কত স্নেহ মমতা ভালোবাসা। রুহানি সাথে নিয়ে পার্কে প্রবেশ করে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর, দু’জনে বের হয়। দুপুর টাইম খিদে পেয়েছে। কাছেপিঠে কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে বলে, দুজনে একটা রিক্সা তে ওঠলো।
রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দেয়। আরিশ রিকসাওয়ালা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” আপনি কিন্তু কোথাও যাবেন না। আমরা সারাদিন আপনার রিক্সা করে ঘুরবো।” রিক্সা ওয়ালা ডানে মাথা কিছুটা নিচু করে সম্মতি জানালো। রুহানিকে সাথে নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। দু’জনের খাবার অর্ডার দিয়েছে ও এক জনের খাবার পার্সেল। রুহানি অবাক দৃষ্টিতে আরিশের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে, “কি অমায়িক লোকটা৷” মনে মনে বলল।
আরিশ খাবারের পার্সেল হাতে রোডের ওপারে গেলো রিক্সা গুলার হাত খাবারগুলো গুঁজে দিয়ে বলল,” এগুলো আপনার।”

এতগুলো খাবারের প্যাকেট দেখে খুশি হল রিক্সাওয়ালা। খুশিতে চোখে জল চলে আসল লোকটার। রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে মুদৃ হাসল রুহানি৷ এ যুগে কতজনই বা অন্যর মুখে হাসি ফোটায়? ক’জন’ই বা নিজের খাওয়া ফেলে অন্যর মুখে খাবার তুলে দেয়? রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দু-জনে আবারও রিক্সায় চড়ে।

রিক্সা দিয়ে ঢাকা শহর ঘুরতে অনেক মজা। রুহানি কে নিয়ে নদীর পাড়ে যায়, দুজনে একটা বোট নিয়ে জলে নামে। সারাদিন ঘুরবার পর, রুহানিকে। রিক্সা করে শ্যামার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। গেইটের ভেতরে দিয়ে যেতে গিয়ে একবার রুহানি পিছনে ঘুরে তাকাল। কেনো তাকাল তার কারণ ওর নিজেরও জানা নেই। মন বলছিল একটিবার তাকাও। তাকিয়ে দেখল, আরিশ রিক্সা থেকে নেমে পরছে আর দাঁড়িয়ে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। আরিশের মুখে প্রস্ফুটিত হাসি দেখে রুহানি মুচকি হাসল।

আরিশ চলে যাবার পর থেকে রুহানি আরিশের চিন্তায় মগ্ন। খেতে বসতে সব সময় ও” আরিশকে দেখতে পাচ্ছে। চোখের পাতায় ঘুম নেই, যে মেয়ে কখনো নিজের বন্ধু দের বাদে অন্য ছেলেদের সহ্য করতে পারতো না। সে ছেলে আজ সন্ধ্যা থেকে একটা ছেলের স্মৃতি চারণ করছে।

রাত বেশি হয়েছে কি না হয়নি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রুহানির, একটা কফি মগ হাতে নিয়ে ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। হুট করে আরিশকে কেনো এত মনে পড়ছে। তার কথা চিন্তা করে ভালো লাগা কাজ করছে। এই ভালো লাগার উৎস কোই? কফির মগ থেকে গরম গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো রুহানি। করুণ কণ্ঠে বলে,

” আগামীকাল আবারও যেতে হবে। বাবাকে খুঁজতে হবে।”
ফেসবুক স্ক্রোল করতে করতে একদিন পড়েছিলাম, একজন মানুষ অন্য জন মানুষ কে তখনই স্বপ্ন দেখে যখন বিপরীতে মানুষ টি তাকে খুব মিস করে। গালে হাত রেখে পিটপিট করে রুহানি তাকাল। হটাৎ মন উদাস হয়ে গেলো মনে জুড়ে গেলো বিষন্নতা।

অন্ধকার একটা ঘরের মধ্যে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে নিহান ও আদ্রিক। ভ্রুযুগল কুঁচকানো করে আদ্রিক নাহিনকে দেখছে। নাহিনের মস্তিষ্কে কি চলছে, সে দেখে আন্দাজ করার চেষ্টা করছে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে আদ্রিক প্রশ্ন ছুঁড়ে, “হঠাৎ জরুরি তলব। তাও আবার এমন অদ্ভুত জায়গায়?”

আদ্রিকের কথাশুনে অট্ট হাসিতে ফেটে পরে নিহান। চোখ জোড়া ছোটছোট করে নিহানের দিকে তাকাল আদ্রিক। তার হঠাৎ এই হাসির শব্দর কারণ আদ্রিকের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিককে সন্দেহের নজরে তাকাতে দেখে সশব্দে হেসে উঠল নিহান।
“এ.স একটা কথা বলার ছিল?”

সকাল সকাল কোম্পানিতে চলে আসে। তাজ কল দিয়ে জানায় ওদের যে মিটিং টা বিকেলে হওয়ার কথা ছিল ওইটা ইমারজেন্সির সকালেই হবে। তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে অফিস চলে আসে। মিটিং রুমে সকলে মিলে তাদের মিটিং সম্পূর্ণ করে। মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে লিফটের কাছাকাছি আসে এ.স পিছন থেকে শানিতকণ্ঠে উক্ত প্রশ্ন টি করে তাজ। তাজের কথাটি শুনে চলতে গিয়েও থেমে যায় আরিশ। ঘাড় কাত করে শক্ত গলায় বলল, ” কি বলবি বল।” তাজ ভারী নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল, ” আর্শি আসছে আর ও তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।”

তাজের কথাটি কর্ণকুহরে হানা দিতে রাগান্বিত চোখে তাজের দিকে তাকাল এ.স। রাগে চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,
” এ.স না চাইলে তাকে দেখার সাহস কারো নেই। যেভাবে আসছে সেভাবে চলে যেতে বলো। সময় হলে আমি নিজে দেখা করতে যাবো।” এ.স এর কথায় নির্বাক তাকিয়ে রইল তাজ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়।

রুমে ঢুকে গলার টাই টা লুজ করে রাগে চেয়ারে লাণ্থি মারল। রাগে আরিশের কপালের রক ফুলে উঠেছে। মাত্রাতিরিক্ত রাগে ফুসতে ফুসতে চোখ জোড়া বন্ধ করে সোফার ওপরে বসে পরল। চোখ জোড়া খিঁচে মেলে তাকাল, সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,” আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর শুরু হবে আমার আসল খেলা।”

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৮

বি:দ্র: আসসালামু আলাইকুম! গল্প ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। সময়ের অভাবে বড় করে লিখতে পারছি না্। আগামীকাল বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
ভুলক্রটি ক্ষমাসূলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক দেওয়া হয়নি। পরবর্তী তে সময় করে ভুলগুলো শুধরে নেবো।

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২০