বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৭

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৭
শারমিন আক্তার বর্ষা

A.S নেহার গাল দু’টো তার দু-হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে,নেহাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল। নেহা ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে ফেলে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে A.S দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— ‘কি ভেবেছিলি তুই? আমাকে চিট করে পালিয়ে বেঁচে যাবি? এত সহজ? আমি A.S ‘ বাজপাখির নজর আমার। ইঁদুরের গর্ত থেকে শিকার টেনে বের করে আনবার ক্ষমতা আমার রয়েছে।

A.S এর রাগ জেনো সময়ের সাথে তীব্রর থেকে তীব্র হচ্ছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে অনবরত জল ঝরতেছে নেহার। নেহার ফর্সা বরণ দুই গালে, পুরুষালী হাতের পাঁচ টা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওয়াসিফ বসে আছে রুমের এক কোণে। কিছুক্ষণ পর, নেহার সামনে থেকে সরে যায় A.S’ দাঁড়িয়ে আছে একহাত কোমরে এবং আরেক হাত দেওয়ালের সাথে চেপে রেখে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিছুক্ষণের মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যেতো নেহা,রাস্তায় গাড়ির সমস্যা হয়,গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি ঠিক হওয়ার অপেক্ষা করে নেহা। কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো সে বুঝতে পারছে। আঁড়চোখে A.S এর দিকে তাকাতেই ওর বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। তীক্ষ্ণ চোখে এখনও নেহার দিকে তাকিয়ে আছে সে। জেনো, উনার চোখ,চোখ নয় অগ্নিয়গিরির লাভা,যে কোনো মূহুর্তে ফাটবে।

রুমের এক কোণায় জড়সড় হয়ে বসে বোবা কান্না কাঁদছে নেহা। A.S তাজকে উদ্দেশ্য করে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করে ঠা’স করে দরজা খুলে হনহনিয়ে রুম থেকে চলে যায়। ভ্রু কিঞ্চিত উঁচু করে নেহার দিকে এগিয়ে যায় আসিফ। চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ব্যাথায় কুকড়িয়ে ওঠে নেহা। মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ করছে। পাষান মনে কিঞ্চিত মায়া হচ্ছে না। পিছনে এনামের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। পিছন থেকে এনাম একটা ধাড়ালো চা/কু আসিফের হাতে তুলে দেয়। চক্ষু জোড়া বড়সড় করে আসিফের দিকে তাকিয়ে আছে নেহা। ডানেবামে মাথা নাড়াচ্ছে,হাত পা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। আসিফ উল্টোহাতে চা/কুটা নেহার গ’লার ওপরে রাখে।

— এক মাসের আগে বাংলাদেশের কোনো ভিসা নাই। একমাস পরের টিকিট উপলব্ধ আছে।
খালাতো ভাই আশিকের কথাটি শুনে নিরাশ হয়ে বিছানায় বসে পরল ইয়ানা। তার এখন এই মূহুর্তে বাংলাদেশ যাওয়া অতিব আবশ্যক, সেখানে এক মাস।

মাথায় হাত দিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে ওঠল ইয়ানা। তার পাশে বসে আছে তার বোন। ইয়ানার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সান্ত্বনা দিচ্ছে, রুহানি ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের মন মেয়ের সাথে এখন পর্যন্ত কথা বলেনি মন তো উতলা হবেই। হঠাৎ বিছানার ওপরের ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল।

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অশ্রু মুছে ফোন হাতে নেয়। বাংলাদেশের সিম, যে সিম থেকে রুহানি মেসেজ পাঠিয়েছিল দেখে দ্রুত কল রিসিভ করে ইয়ানা। অপরপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে রুহানির খবর জানালো শ্যামা। মেয়েকে দেখার ইচ্ছা করছে ইয়ানার। শ্যামা নিচু কণ্ঠে বলল, আন্টি আমি আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিচ্ছি। কল রিসিভ করে রুহানিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ইয়ানা। বেশ কিছুক্ষণ ভিডিও কলে মেয়েকে দেখলেন। নাক টেনে মলিন কণ্ঠে ইয়ানা শুধালো,

— রুহানি ও এখনই ঘুমাচ্ছে কেনো? বাংলাদেশের সময় তো এখন রাত ১২টা বাজে।
শ্যামা রুহানির কিডনেপ হওয়ার কথা চেপে যায়। জার্নি তে ক্লান্ত বলে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে বলে। ইয়ানা শান্ত কণ্ঠে, শ্যামাকে বলে রুহানির খেয়াল রাখবার জন্য আর একা একা জেনো কোথায় যেতে না দেয়। শ্যামা ইয়ানাকে কথা দেয় ওরা সব বন্ধুরা মিলে রুহানিকে দেখে রাখবে। কানাডায় এখন একটা বাজে, সকাল থেকে এই পর্যন্ত পানি ছাড়া কিছু খায়নি ইয়ানা। রুহানি সুস্থ আছে দেখে স্বস্তি পায় সে। ইয়ানার খালা টেবিলে খাবার সাজিয়ে ইয়ানা ও বাকিদের খাওয়ার জন্য আওয়াজ দেয়।

ভোর ৫টা বাজে, বাড়ির পাশেই একটা মসজিদ আছে। মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে আসছে। নামাজের জন্য বিছানা ত্যাগ করে মি.মাহিন। ফজরের নামাজ আদায় করে রাস্তায় ঘন্টা খানেক হাঁটাহাঁটি করেন। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। হাঁটাহাঁটি করে বাড়ি ফিরছে মি.মাহিন। রাস্তার পাশে লেকের সামনে এক জোট মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, উনি সামনে এগিয়ে গেলেন। প্রশ্ন করলেন এখানে কি হয়েছে?

পাশে থাকা একজন লোক মি.মাহিনের দিকে তাকালেন শূন্যে হাত নাড়াতে নাড়াতে বলল,
— ওই তো ঐখানে লেকের পুকুরে একটু আগে একটা মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত লা’শ ভেসে ওঠছে।
লোকটার কথামত মাহিন পুকুরের জলে তাকালো। সত্য একটা মেয়ের লা’শ জলে সাতার কাটছে। একজন উৎকণ্ঠে বলল,
— পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে, এখনও আসছে না কেনো?

মেয়েটির মৃ’তদে’হ সচোক্ষে দেখে মাহিনের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হয় মাহিন। বাড়ির ভেতরে এসে, সোফার ওপরে ধপ করে বসে পড়ল। মাহিনের হাসফাস দেখে এগিয়ে গেলেন তার স্ত্রী সুমাইয়া। মাহিন ক্লান্ত ভরা দৃষ্টিতে তাকাই সুমাইয়ার দিকে। তার চক্ষু জোড়া ছলছল করছে। মাহিনের এমন দৃষ্টি দেখে সুমাইয়ার বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। সুমাইয়া মাহিনের পাশে বসে শুধালো, কি হয়েছে?
মাহিন ভারী নিঃশ্বাস ফেলল,অস্ফুটস্বরে বলল,

— সোনাই পুকুরে একটা মেয়ের লা’শ ভেসে ওঠছে। দেখে মনে হচ্ছে, গতকাল গভীর রাতে কেউ পুকুরে মেয়েটি কে ফেলে গেছে।
— কি বলছো তুমি? এমন একটা ম-ম হর্ষক ঘটনা ঘটেছে। না জানি কার মেয়ে হবে? পুলিশ আসছে?

— না। শুনেছি, পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে তবে এখনও আসেনি।
— আচ্ছা তুমি একটু শান্ত হও। এক গ্লাস পানি খাও। এই বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করো না। তোমার হাই পেসার উত্তেজিত হলে হিতে বিপরীত হবে।
স্ত্রী কথামত তিন ঢুকে এক গ্লাস পানি পান করল মাহিন। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে হাত পা এলোমেলো করে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন।

ক্লোরোফোমের কৃপায় এখনো ঘুমাচ্ছে রুহানি। শ্যামা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে তার মায়ের সাথে হাত বটায়,রান্নার কাজে। সকলের জন্য নাস্তা বানায়। কানাডা থেকে তার বন্ধুরা দু’দিন আগে চলে আসছে। রুহানি আসতে পারবে না বলে ওরা আগে চলে আসে। রুহানি ওদের থেকে একদিন পর আসে। টিকিট বুক ছিল বলে, আসতে পারছে।

নিচ তলার ফ্লাটে, থাকছে শ্যামার বন্ধুরা। নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে৷ নিচ তলার এক রুমে চারজন ছেলে ও অন্য রুমে পাঁচ জন মেয়ে শেয়ারে থাকছে। রুহানি ওঠেনি বলে,তাকে আর ডাকেনি শ্যামা। খাবার আনতে সকলে খাওয়া শুরু করে। খেতে খেতে শ্যামা সকলকে রুহানির সহি সলামত আসার খবর জানায়। রুহানি আসবে সেটা শ্যামা ও বাকিরা কেউ জানতো না। লাস্ট টাইমে প্লেনে ওঠবার আগে মেসেজে জানায়।

শ্যামা তখন বিষয়টা সিরিয়াসলি নেয়নি। যখন বাংলাদেশের সিম দিয়ে কল দেয় তখন স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর সে সবাইকে জানায়, সে আসছে বলে সবাই খুশি হয়। বিপত্তি হয় তখন,পুরোদিন পাড় হওয়ার পরও যখন রুহানি না আসে৷ সকলে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পরে। রুহানি ও শ্যামা ছাড়া অন্যরা বাংলা ভাষা পরিপূর্ণ ভাবে জানে না। ওদের দু’জনের জন্য তারা মোটামুটি বলতে পারে। তাও একটা শব্দ বলতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে।

মাথায় চিনচিন ব্যাথা করছে,পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম। চোখ মেলে তাকাতেই আবছা আবছা একটি ছেলের অবয়ব দেখতে পাই। অস্পষ্ট ভুল দেখছি ভেবে সঙ্গে সঙ্গে চোখের পাপড়ির পলক ফেলে আবারও তাকাই, বিছানার দুইপাশে হাতে ভর দিয়ে খানিকটা আমার ওপরে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে A.S! উনাকে এই অবস্থায় আমার ওপরে ঝুঁকে থাকতে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। চোখের পাতায় ভাসল,তার হাতের পিস্তলের ঝলক। চক্ষু জোড়া কপালে ওঠে গেলো। মনে হচ্ছে এখনই নেত্র যুগল বেরিয়ে যাবে। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলাম অস্ফুট স্বরে,

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬

— আহহহহহহহহহহহ! বলে চিৎকার দিতেই তার শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি বিস্ময়ে চোখ জোড়া মেলে ধরলাম। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। সিরিয়াসলি এখন বলাই যায়, ‘আইএম তো অবাক।’

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৮