বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৮

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৮
শারমিন আক্তার বর্ষা

পুকুরের জল থেকে লা’শ’টি উ’দ্ধার করে পো’স্টম’র্টেম জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশেরা আশেপাশে সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ তেমন তথ্য জানাতে পারছে না। শুধু একজন আরেকজন কে দেখিয়ে বলছে, ও আগে দেখছে অন্যজন আরও একজন কে দেখিয়ে একই বাক্য বলছে৷

রাস্তার মোড়ে এক দোকানদার রয়েছে, উনিই পুকুরের জলে লা’শটি ভাসতে দেখে সকলকে দেখিয়েছেন এবং পুলিশকে ইনফর্ম করেছেন। পুলিশ ইন্সপেক্টর নিহান, গম্ভীর হয়ে পুকুরপাড়ের চারপাশে নজরদারি করতে লাগল। কোনো না কোনো ক্লু তো পাবে এটাই প্রত্যাশা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পুকুরের পাশে বড় একটা জামগাছ রয়েছে, ভ্রু কুঁচকে গাছের শিকরের দিকটায় নজর স্থির করল। তার উঁচু ভ্রু দেখে সন্দেহের চোখে তাকাই কনস্টেবল রাহাত। সে প্রশ্ন করতে, নিহান চোখের ইশারায় গাছের শিকরের দিকে তাকাতে বলে৷ দুইটা ভিন্ন জুতার ছাপ। থুতনিতে হাত রাখে নিহান! বাজপাখির মত চোখ জোড়া ছোটছোট করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
— এর থেকে কি বোঝা যায় জানো রাহাত? খু’নি একজন নয়৷ খু’নের পিছনে এক মস্ত বড় রহস্য রয়েছে।

ঘুম ঘুম চোখে মাথায় হাত দিয়ে ওঠে বসলাম। বিছানার চারপাশ জুড়ে বসেছে আমার বন্ধুরা। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিললাম। তিয়াশ শানিত কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
— ‘ কি হইছে? চিৎকার করলি কেন?’

জিব কিঞ্চিত বের করে শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলাম। একে একে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে মেকি হাসি দিলাম। নিজের ওপরে ভীষণ রাগ লাগছে। ভাবা যায়, আমি একটা স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠছি। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম বলে, ওরা সকলে বারান্দায় বসে গল্প করছিল ও চা/কফি খাচ্ছিল। হঠাৎ আমার উৎকণ্ঠিত গলার চিৎকার শুনে তারাহুরো করে সকলে রুমের ভেতরে আসে এবং আমাকে হাঁপাতে দেখে।

শ্যামা আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রেখে শুধালো কি হয়েছে? ওদের সামনে বসে থাকতে দেখে বুঝি A.S নামক সম্মোধন মানুষ টাকে স্বপ্ন দেখেছি। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে সরু চোখে শ্যামার দিকে তাকাই। রাগান্বিত হয়ে ও আমার কপালে একটা টোকা দিল,আর বলল,

— ‘যা ওঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।’
ওঠে গেলাম ফ্রেশ হতে বাথরুমে। নিজেকে মিররে দেখে বেশ অবাক হলাম। আমাকে মা’রা’র কথা বলেছিল তাহলে মা’র’ল না কেনো? আর আমি শ্যামের বাড়িতে কিভাবে আসলাম? কে পৌঁছে দিয়ে গেলো আমাকে? এতগুলো প্রশ্নের উত্তর একমাত্র শ্যাম দিতে পারবে।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে আসলাম। সবাই যার যার বসার জায়গা দখল করে নিয়ে বসে আছে। আমিও ওদের মাঝে বসলাম। মাথাটা ঝিমাচ্ছে, কিছুক্ষণ বাদ শ্যামা কফি মগ আমার সামনে ধরল। গরম গরম কফিতে চুমুক দিতে জেনো শরীরের সব ক্লান্তি শেষ হয়ে যায়। শান্ত কণ্ঠে শ্যামার কাছ থেকে কাল রাতের ঘটনা শুনতে চাইলাম। শ্যামা চোখ দু’টো ছোটছোট করে আমার দিকে তাকাই,তৎপর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ কাল রাতে হিরো মাফিক কিউট হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোকে পৌঁছে দিয়ে গেছে। উফফ কি জোশ যে ছিল ছেলেটা।’
শ্যামার কথা শুনে,নাজিন অস্ফুট স্বরে ইংরেজিতে বলল,’ হ্যান্ডসাম ছিল?’
শ্যামা ওপর নিচ মাথা দুলিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়। নিচু কণ্ঠে বলে, ‘উনার লোক তোকে ভুলবশত তুলে নিয়ে গেছে। আসলে কি হয়েছিল শোন তবে।’ শূন্যে হাত ভাসিয়ে এদিক সেদিক নাড়তে নাড়তে ঘোটা কাহিনি রুহানিকে বলল শ্যামা। সব শুনে গম্ভীর হয়ে বসে রইল রহানি। হুট করে শ্যামার মাথায় আসল,ইয়ানার কথা। রুহানিকে ইয়ানার কথা বলতে রুহানি উৎকণ্ঠে বলে, ‘আমার ফোন কথায়? মা ‘র সাথে কথা বলতে হবে। ‘

নাজিন রুহানির হাতে ওর ফোন দেয়। রুহানি কল দেয় ওর মায়ের নাম্বারে। বেশ কিছুক্ষণ ইয়ানার সাথে কথা বলে। ইয়ানা কান্না করে মেয়ের ওপর অভিযোগ জানায়। সব কিছুর জন্য ইয়ানার কাছে ক্ষমা চায়। ইয়ানা চোখের জল মুছে মেয়ের সুস্থতা কামনা করে কল কেটে দেয়।

নাস্তার টেবিলে বসে সকলের সাথে পরিচিত হয় রুহানি।বাকিরা আগেই পরিচিত হয়েছে। সকলে একসাথে নাস্তা শেষ করে। রুমে বসে ফোন স্ক্রোল করতে লাগে। শ্যামা বলে, ওর বিয়ের শপিং ও ওর বন্ধুদের সাথে নিয়ে করবে বলে এখনও করেনি। বাকিরা আলসেমিতে হাঁক ছেড়ে বলল, -‘ আজকে মলে যেতে পারবো না আগামীকাল ঠিক আছে।’ ওদের কথায় উদাস হল শ্যামা। তবুও ব্যাপার না বিয়ের এখনও ছয়দিন বাকি আছে,কালকে ঢাকা বনানী চলে যাবে তারপর ওখান থেকে শপিং কমপ্লিট করে ফিরবে। এরইমধ্যে শ্যামার ভাবনায় ছেদ ঘটায় রুহানি। সে হাসফাস করে বলল,

— ‘ চল আজ তোর শহরটা ঘুরে দেখবো।’
শ্যামা ভ্রু কিঞ্চিত করে তাকায়,চোখ জোড়া পিটপিট করে বলে,
–‘ এই না তোরা বললি মলে যেতে পারবি না। তাহলে এখন যে আবার বলছিস বাহিরে যাবি?’
রুহানি আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পরে। এবং অন্যদের দিকে চাওয়াচাওয়ি করল। খানিকটা বিড়বিড় করে বলল,

–‘তোর সাথে মলে গেলে শান্তি আছে? হাঁটতে হাঁটতে ঘুরতে ঘুরতে পা ভেঙে যাবে। তার থেকে ভালো বাহিরে ঘুরাঘুরি করা!’
শ্যামা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি বললি তুই আমি শুধু তোদের হাঁটাই? ‘
রুহানি মসৃণ কণ্ঠে বলল,’আমি কি ওইরকম কিছু বলছি নাকি?’
–‘ হইছে আর ঢং করতে হবে না। আমি সবটা শুনেছি, চল ওঠে রেডি হয়ে নে সবাই আজ আমরা একটা দ্বীপে যাবো তারপর বাহিরে অনেকক্ষণ ঘুরবো। আসার পথে রেস্টুরেন্ট হয়ে ফিরবো।’

‘কাল রাতে মেয়েটার সাথে ওরা কি করেছে তোর শোনা জরুরি!’
বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে সুঠাম দেহের পুরুষ। পিছন থেকে শাসিত কণ্ঠে কথাটি বলল নিশান। আঁড়চোখে পাশে তাকাই সে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে রাগী ও শক্ত কণ্ঠে বলে,
-‘ ওই মেয়ের সাথে ওরা কি করছে না করছে তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

ওদের সাফসাফ জানিয়ে দাও,এরপর থেকে জেনো এমন টা কারো সঙ্গে না করে৷ এখন থেকে অনেক সাবধানে সব করতে হবে। পুলিশের নজরে আসা যাবে না৷ দেশের আইন এখন অনেক কড়া। শুনেছিস নিশ্চয়ই সকালের নিউজ? কোনো ভাবে জেনো পুলিশের নজর আমাদের ওপরে না পরে। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় নিজেদের নাম ওঠানো যাবে না৷ সকল এভিডেন্স ন’ষ্ট করতে বল।

কোনো কথা না বলে পিছন থেকে চলে যায় পূর্বের লোকটি। তার পায়ের ধ্বনি শুনে বিড়বিড় করে সে বলল,
— যত উড়তে ইচ্ছে হয় উড়ো আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর তোমার খাঁচায় বন্ধী হতে বেশি দিন বাকি নেই।

-‘ কি খুঁজছো তুমি মামু?’
কারো কম্পিত কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালো ইয়াসির। সে সুক্ষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,
-‘ তুমি এখানে কি করছো আরিশ? তোমার তো এখন অফিসে থাকার কথা। তুমি অফিসে না থেকে বাড়িতে কি করছো?’
আচমকাই ইয়াসিরের মুখশ্রীতে কড়া দৃষ্টি ফেললো আরিশ। আচমকা হাতটি থুতনিতে রাখল, ভ্রুদ্বয় কুঁচকে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

-‘ তুমি আমার রুমে কি করছো মামু? আর এভাবে কি খোঁজা খুঁজি করছো?’
পরোক্ষণেই আরেক দফা বিস্মিত হলো তার দৃষ্টিজোড়া। বক্ষে বেড়ে গেলো তীব্র উত্তেজনা। যেই উত্তেজনাটুকু দমিয়ে রাখতে না পেরে ছুটে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

-‘ তুমি আমার রুমে কেন গিয়েছিলে বললে না? ‘
পিছন থেকে অবাকান্বিত স্বরে প্রশ্নটি করতেই ইয়াসির দাঁড়িয়ে পরে।
দৃষ্টিজোড়া সামনের দিকে নিবদ্ধ রেখে আঁতকে ওঠলো ইয়াসির। পা থেকে মাথা অবদি কিঞ্চিত কম্পন সৃষ্টি হলো তার। বারকয়েক ঢোক গিলে আরিশের দিকে দৃষ্টি বুলাতে সে। ইয়াসিরের মুখ থেকে বাক্যটি শুনতে আরিশের ওষ্ঠকোণে অসরল হাসির রেখা মিললো।

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৭

ইয়াসিরকে পিছন ঝাপ্টে ধরে বলল,
-‘ প্রয়োজনের অধিক কোনো কিছুই ভালো নয়।’

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৯