বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৯

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৯
তাসফিয়া হাসান তুরফা

পড়ন্ত বিকেলের কোলাহলে মুখোরিত ঢাকা শহর। এতক্ষণ মার্কেটের ভেতর ঘুরে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম দুজন! সেখান থেকে বের হতেই ঠান্ডা বাতাসের শীতল পরশ ছুয়ে দিলো আমাদের! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সামনের দিক অগ্রসর হলাম আমরা। পূর্ণর দু’হাতে ভর্তি শপিং-ব্যাগ। উনার একহাতে আছে প্রিয়ার জন্মদিনের গিফট অর্থাৎ একটি ক্যামেরার বক্স।

যেহেতু ওর ছবি তুলা খুব পছন্দ, ফ্রেমবন্দী করতে ভালোবাসে তাই ক্যামেরার চেয়ে ভালো গিফট ওর জন্য আর হতে পারেনা! এটা আমরা বেশ ভেবেচিন্তেই নিয়েছি। এছাড়াও পূর্ণ বড়াম্মুর জন্য শাড়ি আর রাইসার জন্য ড্রেস কিনেছেন। সবার জন্যই আরও টুকিটাকি কেনাকাটা করেছেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উনার মতে একজনের জন্য গিফট নিয়ে যাবো অন্যরা দেখলে তাদেরও অবশ্যই নিতে মন চাবে তাই সবার জন্যই নিয়েছেন। তার সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনায় আরেকদফা মুগ্ধ হলাম আমি! পূর্ণ আমাকেও কিনে দেওয়ার জোর করেছিলেন বেশ কয়েকবার কিন্তু আমি নেইনি। এজন্য উনি রাগ দেখিয়েছেন আমার উপর তবে আমি খুব একটা পাত্তা দেইনি সেটাকে।

মার্কেট থেকে বের হতেই চোখে পড়লো ফুচকার দোকান। ফুচকা খাওয়ার জিদ করতেই পূর্ণ কড়া চোখে তাকালেন, যে দৃষ্টি দেখে খাওয়ার ইচ্ছা উড়ে গেলো আমার! তবুও আদুরে বিড়ালের মতো করুণ চোখে আবদার করে উনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পিটপিটিয়ে তাকাতেই পূর্ণ হতাশ দৃষ্টি ফেলে তাকালেন অন্যদিকে। অতঃপর আমায় নিয়ে এলেন ফুচকার দোকানের কাছে। আশেপাশে তাকিয়ে দোকানের পাশে একটি বেঞ্চে বসা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আমায় সেখানে নিয়ে গিয়ে বসতে বললেন। আমি বসতেই ফুচকাওয়ালা মামাকে এক প্লেট ফুচকা দিতে বলে উনি শক্ত কণ্ঠে বললেন,

—এখানে বসে চুপচাপ খাবে। একদম অন্য কোনদিক যাবেনা, তুরফা। তোমার খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই আমি এসে যাবো।
—আচ্ছা। কিন্তু কোথায় যাচ্ছেন আপনি আমায় রেখে?
—একটা ব্যাগ ফেলে এসেছি দোকানে। সেটাই নিতে যাচ্ছি। তোমার যাওয়ার দরকার নেই, এত প্রশ্ন না করে চুপচাপ এখানে বসে খাও নয়তো এখনি বাসায় চলো।

—নাহ নাহ, আপনি যান। আমি এখানেই থাকবো।
কাচুমাচু মুখে মিনমিনিয়ে বললাম। পূর্ণ হালকা হেসে দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলেন সামনে। কিছুদূর যেতেই একহাতে শপিং ব্যাগগুলো ধরে অপরহাতে পকেট থেকে রুমাল বের করতেই উনার মানিব্যাগটি পকেট থেকে নিচে পড়ে গেলো। তাড়াতাড়ি হেটে চলায় হয়তো খেয়াল করেন নি উনি, আমি দ্রুত বসা থেকে উঠে দাড়ালাম। উনি যে স্পীডে হাটছেন বহুদূর চলে গেছেন। দ্রুতকদমে এগিয়ে যেয়ে মাটি থেকে মানিব্যাগটা তুলে নিলাম আমি। অতঃপর ফিরে এলাম ফুচকার দোকানের সামনে।

ব্যাগটা কোলের উপর রেখে ফুচকার প্লেট নিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম। খাওয়া শেষ হতেই মামাকে প্লেট ফেরত দিতেই তিনি বিল চাইলেন। এদিকে পূর্ণ এখনো ফিরে আসেননি, তাই টাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু না ভেবেই তার মানিব্যাগটা খুলে ফেললাম। তবে ভেতরে যা ছিলো তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি! মানিব্যাগটার সাইড ফোল্ডারে আমার হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি রাখা। আমার শাড়ি ও সাজগোজ দেখে বুঝলাম ছবিটা আমাদের বিয়ের পরেরদিন তোলা, যখন নতুন বউ রুপে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলাম বড়াম্মুদের সাথে৷ সাইড থেকে তুলা ছবিটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা পূর্ণ চুপিসাড়ে হয়তো তুলেছিলেন কোন এক ফাঁকে! সেটাকে আবার ওয়াশ করে সযত্নে নিজের মানিব্যাগে রেখেও দিয়েছেন আমার অজান্তে!

ছবিটা দেখে মুগ্ধ নয়নে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো মুখে। টাকার জন্য ফুচকাওয়ালা মামা আরেকবার হাক দিতেই হুশ ফিরে এলো আমার! সামনে তাকিয়ে দেখি পূর্ণও হেটে আসছেন এতক্ষণে! ফিরে এসেই আমার ঠোঁটে হাসি দেখে উনি ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

—কি হয়েছে? একা একা হাসছো যে?
মুখ স্বাভাবিক করে কিছু না বলেই শান্ত দৃষ্টিতে মানিব্যাগটা বন্ধ করে ফিরিয়ে দিলাম তার হাতে। আমার হাতে নিজের মানিব্যাগ দেখে বিস্মিত হলেন পূর্ণ! হাতে নিতে নিতে স্মিত হেসে বললেন,
—পড়ে গিয়েছিলো না? তাই তো বলি খুজে পাইনা কেন! কখন পড়লো খেয়ালই করিনি। ভাগ্যিস তুমি দেখেছিলে! আমার কত মূল্যবান জিনিস থাকে এর ভেতর। যদি হারিয়ে যেতো?

—এটাও কি আপনার সেই মূল্যবান জিনিস?
কথাটি বলেই মানিব্যাগের ভেতর আমার ছবিটির দিকে ইশারা করলাম। পূর্ণ কিছুটা চমকে গেলেন যেন, সামান্য লজ্জাও পেলেন বোধহয়। হালকা হেসে চুলে হাত চালিয়ে অবাক কণ্ঠে বললেন,

—তুমি দেখে ফেলেছো?
—হুম। ছবিটা কখন তুলেছিলেন? আমি তো টের-ই পাইনি। আপনি আর কতভাবে অবাক করবেন আমায়? আমি বুঝিনা!
আমার কথায় দুর্বোধ্য হাসলেন পূর্ণ! ফাঁকা রাস্তায় যে হাসি ঝংকার তুলে হৃদয়ে। একটু পর উনি থেমে শান্ত গলায় বললেন,
—শুধু এটাই দেখেছো? আর কিছু দেখোনি?

উনার কথায় ভ্রু কুচকে আমি ধীর গতিতে “না-বোধক” মাথা নাড়লাম শুধু। কিসের কথা বলছেন? আগ্রহী চোখে চেয়ে রইলাম তার পানে! আমার কৌতুহলী চাহনিকে আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিতে পূর্ণ হঠাৎ করে ফোল্ডার হতে আমার ছবিটি বের করলেন। অতঃপর মানিব্যাগটি পুনরায় ফেরত দিলেন আমার হাতে। উনার আচরণে সন্দিহান দৃষ্টিতে মানিব্যাগটি নিতেই স্তব্ধ হয়ে হেলাম আমি!

একটু আগেই যেখানে আমার ছবিটা ছিলো ওই জায়গাতেই আমার আরেকটি ছবি, তবে ছবিটি আমার ছোটবেলার! খুব সম্ভবত বাড়ি ছাড়ার আগের ঈদে দাদুবাড়ির ছাদে তুলেছিলাম ছবিটি! ফ্রক পড়া ছোট্ট আমি খিলখিলিয়ে হাসছি ছাদের রেলিঙ ধরে। উনি সেই ছবিটিও এত বছর সংরক্ষণ করে রেখেছেন তাও আবার নিজের মানিব্যাগে?

বিষয়টি ভাবতেই ঠোঁটজোটা কিঞ্চিৎ ফাকা হয়ে গেলো আমার, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হলো! মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলো যেন! তপ্ত নিঃশ্বাস আর অশান্ত মন বলছে এটা কি আদৌ সম্ভব? কাউকে এতটা বিশুদ্ধচিত্তে ভালোবাসা যায়? প্রশ্নের উত্তরটা স্বয়ং পূর্ণই দিলেন আজ। একদৃষ্টে আমার পানে চেয়ে বলতে আরম্ভ করলেন,

—অবাক হয়েছো? ভাবছো এ ছবিটা এখানে কি করছে তাই তো?
স্তব্ধ আমি কোনরকমে মাথা নাড়লাম শুধু! উনি স্নিগ্ধ হেসে নির্মল কণ্ঠে বললেন,
—এত বছর যখন তুমি ছিলেনা আমার কাছে তখন তোমার এই ছবিটাই ছিলো আমার কাছে তোমার শেষ স্মৃতি। এটাকে আকড়ে ধরেই মনে রেখেছিলাম তোমাকে! তাহলে এখন এত বছর পর আমার বড় তুরফাকে ফিরে পেয়ে আমি সেই ছোট তুরফার স্মৃতিকে কি ফেলে দিতে পারি, বলো? তাই তোমার এখনকার ছবির সাথে ওটাকেও যত্ন করে রেখে দিয়েছি মানিব্যাগে। যে জায়গাটায় থাকার স্থান তখনও শুধুই তোমার ছিলো, এখনও আছে, সবসময় থাকবে৷

পূর্ণর কথায় যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম আমি! কিছু বুঝে উঠার আগেই দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। মনেপ্রাণে ধ্বনিত হলো একটাই প্রশ্ন – আমি কি সত্যিই তার এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? নিজের সামনে দাঁড়ানো এই চমৎকার ব্যক্তিত্বের লোকটাকে এক নজরে শুধু দেখেই গেলাম আমি! দিন দিন আর কতভাবে উনি আমায় মুগ্ধ করবেন? আমি কখনো ভেবে পাইনা! উনার এত ভালোবাসার বিনিময়ে আমি কি বলবো বুঝতে পেলাম নাহ। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গিয়েছে যেন! কোনমতে জিব দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে বললাম,

—এত ছোট জায়গায় দু-দুটো ছবি কিভাবে রাখলেন আপনি?
—আমার মনে তো আস্ত তুমিটাকেই রেখে দিয়েছি, তুর পাখি। সেখানে আমার মানিব্যাগে তোমার দুটো ছবি একসাথে রাখা কি এমন কঠিন কাজ বলো?
স্মিমিত হেসে কথাটি বলেই পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে টাকা বের করে ফুচকাওয়ালা মামাকে দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়ে চললেন গাড়ির দিকে। নির্বিকার, স্তব্ধ আমি শুধু চলতে লাগলাম উনার সাথে তাল মিলিয়ে!

সন্ধ্যায় বাসায় এসে রুমে ঢুকতেই চমকে গেলাম দুজনে। বিছানার সামনেই যে দেয়াল সেখানে বড় করে পাশাপাশি আমাদের দুটো ছবি টাঙানো। একটা বিয়ের আগে যেদিন পূর্ণর মাথায় ফুলের মালা ফেলেছিলাম আমি- উনি রাগী চোখে চেয়ে আছেন আমার দিকে, আমি ভয়ার্ত চাহনিতে মুখে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি চেয়ারে। ছবিটা দেখেই হেসে ফেললাম আমি!

অন্যদিকে পূর্ণ বিরক্ত হলেন এই ছবিটা টাঙানোর জন্য। অপর ছবিটা দেখে আমার মুখের হাসি চলে গেলো, তার বদলে ভর করলো একরাশ লাজুকতা। এ ছবিটা কাশবনে তোলা- পূর্ণ আমার কোমড়ে হাত রেখে হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন, আমি লজ্জায় চমকে উঠে তাকিয়ে আছি তার দিকে! এ ছবিটা পূর্ণর পছন্দ হলো, তার মুখের বাকা হাসি অন্তত তাই বলছে আমায়!

—কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
প্রিয়ার কথায় দরজার দিকে তাকালাম দুজনে। আমরা তাকাতেই রুমে প্রবেশ করলো সে। ওর পিছে পিছে রাইসাও এলো। যেহেতু দুটো ছবিই প্রিয়ার তোলা আর তাদের দুজনের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে এসবের পেছনে এদের হাত আছে! পূর্ণ বোনের মাথায় টোকা দিয়ে বললেন,

—সারপ্রাইজ তো ভালোই দিলি। কিন্তু তলে তলে এসব প্ল্যান করলি কবে?
—আর বলোনা, বড় ভাইয়া। প্রথম ছবিটা তোমাদের বিয়ের পর পরই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কি যেন ভেবে দিইনি তখন। পরে দেখলাম না দিয়েই ভালো হয়েছে, কাশবন থেকে এসে ঠিক করেছিলাম দুটো ছবি একসাথে গিফট করবো তোমাদের। এরপর ওয়াশ করতে, বাধাই করাতে টাইম লেগে গেলো। এই যা!

—থ্যাংক ইউ, প্রিয়া। ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে।
হালকা হেসে বললাম আমি। প্রিয়া দুষ্টু হেসে বললো,
—ভালো তো হবেই, ভাবীজান। কে তুলেছে দেখতে হবে না? আর ছবি দুটোয় তোমাদের সম্পর্কের রুপান্তর দেখা যাচ্ছে খেয়াল করে দেখো৷ বিশেষ করে প্রথম ও পরের ছবিতে বড়ভাইয়ার এক্সপ্রেশনের পার্থক্যই সব বলে দিচ্ছে!
প্রিয়ার কথায় হালকা কেশে উঠলেন পূর্ণ। চুলে ক্রমাগত হাত চালিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,

—অনেক কথা হয়েছে। এখন সব বাদ, পড়াশুনা শুরু কর যা। তোর না টেস্ট পরীক্ষা কয়দিন পর? খারাপ রেজাল্ট করলে কিন্তু তোর খবর আছে! রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিবো।
পূর্ণর কথায় একিসাথে বিষম খেলাম প্রিয়া ও আমি। দুজন চেয়ে রইলাম দুজনের দিকে। আমাদের দুজনের দিক তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন পূর্ণ। প্রিয়াও ভাইয়ের কথায় থতমত খেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে রাইসার সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমিও চুপচাপ বই নিয়ে বসে পড়লাম পড়ার টেবিলে!

রাত ১২ টা। প্রিয়ার জন্মদিন আজ। ওর জন্য অর্ডার দেওয়া কেক নিয়ে চুপিসারে বাসার সবাই চলে এলাম ওর রুমের সামনে। দরজায় টোকা দিতেই স্বাভাবিকভাবে দরজা খুললো সে, যেন জেগেই ছিলো এতক্ষণ। প্রিয়া দরজা খুলতেই সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলাম “হ্যাপি বার্থডে” বলে। খুশিতে আপ্লুত হয়ে সবাইকে ভেতরে ঢুকতে দিলো প্রিয়া।

প্রান্ত ভাইয়া ওর বিছানার পাশের টেবিলটা নিয়ে এলেন সামনে, পূর্ণ সেটার উপর কেক রাখলেন। রাইসা চা/কু এগিয়ে দিলো প্রিয়ার হাতে, আমি ভিডিও করছিলাম সবকিছু। সবার “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ” ধ্বনিতে কেক কাটা শেষ হলো। সবার আগে বড়াব্বু, বড়াম্মুকে কেক খাইয়ে তারপর আমাদের খাওয়ালো প্রিয়া। অতঃপর সবাই ওকে যার যার পক্ষ হতে গিফট বুঝিয়ে দিয়ে নিজ নিজ রুমে চলে এলো। রাত ১টা পেরিয়েছে এতক্ষণে। কাল অফিস আছে ছেলেদের আর মেয়েদেরও সকালে উঠে কাজ করতে হবে তাই সবার যে এখন ঘুম প্র‍য়োজন! বড্ড প্রয়োজন!

রুমে এসে বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন পূর্ণ। উনার ঘুমন্ত ক্লান্ত মুখশ্রী বলছে কেমন ধকল গেছে বেচারার উপর দিয়ে আজ। একেতো অফিস করেছেন সকাল থেকে তারপর আমার সাথে মার্কেটে ঘুরেছেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাসায় ফিরেও ল্যাপটপে ছিলেন অনেকক্ষণ! উনার চোখে ঘুম থাকলেও আমার চোখজোড়া নির্ঘুম। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক অপরাধবোধ, অসস্তি, খারাপ লাগা কাজ করছে উনার থেকে রায়হান ভাইয়ের ব্যাপারটা চেপে যাওয়ার কারণে!

উনি যদি পরে জানতে পারেন তবে আসলেই রাগ করবেন, উনার কাছে কারণও থাকবে রাগ করার। আমার উপর এতটা বিশ্বাস করেন, সেই আমিই যদি উনার থেকে কিছু লুকাই তবে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। তার জায়গায় আমি থাকলে আমারও খারাপ লাগবে। এছাড়াও পূর্ণ অন্যকারও থেকে পরে জানতে পারলে উনার সাথে আমার সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। দুনিয়ায় আর যাই হোক না কেন এই মানুষটাকে হারাতে পারবোনা আমি, কিছুতেই নাহ!

পুরো পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমার উনাকেই চাই। স্বার্থপর এ পৃথিবীতে পূর্ণর মতো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মানুষ আমি কি আর কোনদিনো পাবো? তাই হাজারো প্রশ্ন-দুশ্চিন্তা ঠেলে আমি মাঝরাতেই এই শক্তপোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম! আমি পূর্ণকে জানাবো প্রিয়া ও রায়হান ভাইয়ের কথা। এখন উনি রেগে গেলেও উনাকে বুঝাতে পারবো, মানাতে পারবো, সব করতে পারবো কিন্তু পরে তিনি অন্য কারও থেকে জানলে তখন তার সেই রাগ ঠেলার সামর্থ্য আমার নেই! একেবারেই নেই!

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৪৮

উনার এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে হেলান দিয়েই চোখ বন্ধ করলাম আমি। ঘুমের মধ্যেই আমার সে হাত টেনে নিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলেন পূর্ণ। উনার আচরণে হেসে ফেলে আমিও ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম। ঘুমের ঘোরেই অবচেতন মন সন্তুষ্টচিত্তে বলছে “এ মানুষটাকে সব জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি ভুল কিছু করিনি, একদম সঠিক কাজই করেছি!”

বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব ৫০