বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১০

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১০
ইলমা বেহরোজ

দিশারি ঝাঁপ দিয়ে নামে।বিভোরের খেয়াল হয়।দ্রুত ধারাকে হাতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে সরে আসে।প্রায় ২০-৩০ মিনিট পর সবাই উপরে উঠে আসে।রোদে দাঁড়িয়ে রক গার্ডেনের ফটোসেশন করে।ততক্ষণে অনেকখানি শুকিয়ে যায় কাপড়।বিভোর ভেবেছিলো,দিশারির যখন শুরু থেকেই ইচ্ছে গোসল করার।হয়তো কাপড় নিয়ে এসেছে।কিন্তু, আনেনি!রক গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আসে ওরা।

জিপ যাত্রা শুরু করেছে মিনিট তিনেক আগে।ধারার চোখে-মুখে লজ্জার আভা।নিজেকে গুটিয়ে রাখছে।মাঝে মাঝে মৃদু হাসছে বাইরে তাকিয়ে।কেনো হাসছে নিজেও জানেনা।জানালা দিয়ে বাইরে চোখ মেলে তাকায়।পাহাড়ের মাঝে মাঝে বসতি।জানালা দিয়ে মাথা বের করে নিচে তাকায়।নিচ থেকে যেমন পাহাড়ের উপরের বাড়ি গুলো খুব ক্ষুদ্র দেখায়।আবার উপর থেকেও নিচের বসত বাড়ি গুলো খুব ক্ষুদ্র দেখায়।বিমানের উপর থেকে যেমন সব কিছু ক্ষুদ্র দেখায়,তেমনি পাহাড়ের উপর থেকে নিচের সমতল ঘরবাড়ি গুলো তেমন দেখায়। অনেক উপরে উঠার পর মেঘের জন্য আর নিচের সব কিছু দেখা যাচ্ছেনা।কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছে সব।
দিশারি ধারার হাত খামচে ধরে রেখেছে।পাহাড়ি রাস্তা গুলোর মোড় গুলো ভয়ঙ্কর।মাঝে মাঝে ১৮০ ডিগ্রি টার্ন।পাশে তাকালেই পাহাড়ের পাদদেশ।কোন ভাবে পড়লে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।কেউ মনে হয় না খুঁজতেও আসবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাঝপথে বিভোর গাড়ি থামাতে বলে ড্রাইভারকে।সবাইকে নিয়ে অরেঞ্জভ্যালি টি স্টেটে একটু নেমে সময় কাটায়।তারপর আবার জিপ যাত্রা শুরু করে।সন্ধ্যার পূর্বে হোটেলে ফিরা হয়।যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে মুসলিম রেস্টুরেন্টে গরম পেট ঠান্ডা করে।
সন্ধ্যার পর সায়ন দিশারির রুমে আসে।দিশারি দরজা খুলে বিস্ময়ে প্রশ্ন করলো,

—–“ওমা।আমার রুমে?তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে লুতুপুতু শেষ?”
সায়ন আওয়াজ করে দরজা লাগায়।মতিগতি ভালো ঠেকছেনা সায়নের।দিশারি সাবধানে প্রশ্ন করে,
——“এনিথিং রং দোস্ত?”
সায়ন টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে সোফায় বসে।দিশারি খিটখিট করে বলে উঠলো,
——“ভং ধরছস ক্যান?কিছু জিগাইছিনা?”
সায়ন তাকায়।চোখ লাল।দিশারি দৌড়ে এসে সায়নের পাশে বসে।সায়ন চোখ সরিয়ে নেয়।দিশারি সায়নের মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,

—–“কি হইছে বল?”
সায়ন দিশারির হাত সরিয়ে দেয়।রাগ নিয়ে বলে,
——“ঊর্মি কথায় কথায় ঝগড়া শুরু করে আসার পর থেকে।ওর জন্যই দার্জিলিং আসা।কিন্তু,ওরই আগ্রহ নাই কোনো।এমনকি আমাকেও পাত্তা দিচ্ছেনা, মূল্য দিচ্ছেনা।যাচ্ছে তাই ব্যবহার করছে।এত খরচ করে সময় বের করে এসে লাভটা কি হলো?আবার ওরে কিছু বলাও যায়না।বালের প্রেম!”
—–“ওহ এই ব্যাপার।আরে ভাবিস না।হয়তো কোনো কারণে আপসেট।তাই মন বসাতে পারছেনা।”
দিশারি বিছানায় এসে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।তারপর বলে,
——“যা,যা।ঊর্মির কাছে যা।রাগ না দেখিয়ে সুন্দর করে কথা বল।সমস্যা টা কি জানার চেষ্টা কর।”
সায়ন গলা উঁচু করে বলে,

—–“তোর বলে দিতে হবেনা।চেষ্টা করছি কাম হয় নাই।”
——“তাইলে আর কি করার।ঘুমাইতে দে….
——“মাত্র সাতটা বাজে।ঘুমাইবি?”
——“ঠান্ডা লাগতাছে।টায়ার্ড খুব আমি।শুয়েই থাকুম।বাতি নিভা।”
—–‘পারতামনা।”
দিশারি কপাল কুঁচকে বিছানা থেকে নামে।বাতি নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালায়।তারপর শুয়ে পড়ে।সন্ধ্যার পর কুয়াশায় চারপাশ ছেয়ে যায়।ঠান্ডা পড়ে খুব।যদিও শরৎকাল।তবুও।
সায়ন একা একা ঝিম মেরে অনেক্ষণ বসে থাকে।দিশারিকে ডাকে দিশারি উত্তর দেয়না।সায়ন ফুঁস ফুঁস করতে থাকে।বলে,
——“তোর রুমে আইছি দেইখা ভাব বাইড়া গেছে?”
দিশারি নিশ্চুপ।সে শুনছে টিপে টিপে হাসছে।কিন্তু উত্তর দিচ্ছেনা।সায়ন বড় বড় পা পেলে দিশারির পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ে উল্টোমুখী হয়ে।দিশারি হুংকার দেয়,

—–“ঘেঁইষা শুইছস ক্যান?”
—–“তুই কথা কস না ক্যান?”
—–“ইচ্ছে হইতাছে না তাই।”
—–“আমার ইচ্ছা হইছে তাই শুইছি।”
দিশারি আর জবাব দেয়নি।কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজে।কিন্তু হাঁসফাঁস লাগছে।এরকম পাশ ঘেঁষে একটা ছেলে শুয়ে আছে।দিশারি মিনমিনে গলায় বললো,
—–“সায়ন যা বের হইয়া।”
—–“ঊর্মির কাছে যামুনা।”
—–“বিভোরের কাছে যা।”
——“রুমে নাই।”
—–“কই গেছে?”
—–“জানিনা।”

দিশারি উঠে বসে।সায়ন তাকায়।দিশারি বললো,
—–“আমার রুমে যে আইছস তোর গার্লফ্রেন্ড মাইন্ড করবো।”
—–“করুক।”
—–“ব্রেকাপ করব যখন বুঝবি।”
—–“করুক।”
দিশারি চুল খোঁপা করে।পা ভাঁজ করে বসে।ফেসবুকে লগ ইন করে।সায়ন হা হয়ে দিশারিকে দেখে।দিশারির প্রতি তাঁর একটা দূর্বলতা আছে।একটা অনুভূতি আছে।ফ্রেন্ডের চেয়েও বেশি কিছু মনে হয়।কিন্তু কি সেটা কখনো তদন্ত করতে ইচ্ছে হয়নি।বিশেষ করে দিশারির ঘাড়ের ভেসে থাকা রগ আর কালো ছোট তিলটা বেশি ভালো লাগে।সায়ন চোখ সরিয়ে নেয়।চোখ বুজে।বুকে তোলপাড় হচ্ছে।
সায়ন শোয়া থেকে দাঁড়ায়।আসছি বলে বের হওয়ার উপক্রম হয়।দিশারি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,

——“রাগ করেছিস?”
সায়ন থমকায়। না তাকিয়েই উত্তর দেয়, না।দিশারি সায়নের সামনে এসে দাঁড়ায়।মুখটা দেখে বললো,
—–“ওমা!রাগে নাকটা লাল হয়ে গেছে বাচ্চাটার।”
সায়ন তাকায় দিশারির দিকে।দিশারির ঘাড়ের তিল চোখে জ্বলজ্বল করে উঠে।তিল আর ঠোঁটের হাসি একত্রে মিলে দিশারিকে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।সায়ন আবেগের তাড়নায় ভুল করে বসে।দিশারি সায়নকে ঠেলে সরিয়ে দেয়।ঘাড়ে হাত রেখে চিৎকার করে উঠে,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৯

—–“এইটা কি করলি তুই?”
সায়নের শরীর গরম হয়ে আসে।ঠোঁটে এক হাত রেখে চোখ খিঁচে।নিজের অজান্তে কি করে বসলো সে!দিশারির কান্নার আওয়াজ আসছে কানে।সায়ন কথা বলার ভাষা হারায়।এগুতে এগুতে আমতা আমতা করে বলে,
——“দিশু শোন…আ..আমি দিশু প্লীজ…স
——“তুই বের হয়ে যা..
দিশারি সায়নের কথা না শুনে ঠেলে বের করে দেয়।মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয় ঠাস করে।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ১১