বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২৮

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২৮
ইলমা বেহরোজ

এভারেস্ট।বিশ্বব্যাপী সব বয়সী মানুষের কাছে চরম উত্তেজনার মাপকাঠি।ধারা ছুটছে এভারেস্ট চড়ার উপযুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে।উত্তেজনায় তরতর করে কাঁপছে ভেতরটা।এইতো গতকাল রাতেই সে স্বপ্ন দেখে,বিভোর এবং সে বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁটে জয়ের হাসি।তখনি ঘুমটা ভেঙে যায়।ট্রেন এসে থামে ঢাকা রেল ষ্টেশনে।ট্রেন থেকে নেমেই বিভোরের মুখটা দেখতে পায়।এই মুখটা এতো প্রিয়!
ধারা লোকচক্ষু পরোয়া না করে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভোরের বুকে।বিভোর মৃদু হেসে জড়িয়ে ধরে।কয়েকজন লোক চোখা চোখে দেখছে।বিভোর ধারার মাথায় হাত রেখে বলে,

—- “এখনি ভিডিও করা শুরু হয়ে যাবে মানুষের।তোমার ভাইয়েরা দেখলে এভারেস্ট চড়া কিন্তু আর হবেনা।”
ধারা দ্রুত সরে যায় বিভোরের থেকে।বিভোর হেসে ধারার লাগেজ হাতে নেয়।তারপর ধারার হাতে ধরে সামনে এগুতে থাকে।পথিমধ্যে তাঁদের অনেক কথোপকথন হয়।রিক্সায় উঠার পর বিভোর বললো,
—- “জিন্স ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পরছো কবে থেকে?”
ধারা মৃদু হেসে চুল কানে গুঁজে বললো,
—- “কয়েকদিন।”
বিভোর সুক্ষ্ম চোখে ধারাকে দেখে আগাগোড়া।ধারা লজ্জা পাচ্ছে খুব।তাকাচ্ছেনা সরাসরি।চুল খোলা!
বিভোর কন্ঠে অবাক ভাব রেখে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—- “চুল খোলা!”
ধারা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—- “কেনো ভালো লাগছেনা?”
বিভোর হেসে ধারার কোমর দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
—- “খুবব।”
ধারা উত্তরে কিছু বললোনা।বিভোর বললো,
—- “এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো?এমন লজ্জা তো দুই বার দেখাতেও পাওনি।”
ধারা চোয়াল শক্ত করে বললো,
—- “কচু পাচ্ছি।”

দিশারির বাড়িতে ধারাকে রেখে বিভোর ফ্ল্যাটে আসে।কাল থেকে ধারাকে নিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে নতুন যাত্রা।রাত দশটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠলো।বিভোর খাওয়া ছেড়ে দরজা খুলে দেখে ধারা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পিছনে দিশারি।বিভোর কিছু বলে উঠার পূর্বেই ধারা গমগম করে বলে উঠলো,
—- “বরের ফ্ল্যাট থাকতে ফুফির বাড়ি কিছুতেই থাকবোনা।”
কথা শেষ করে বিভোরকে ঠেলে বেডরুমে ঢুকে।ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।বিভোর হতবুদ্ধি হয়ে যায়।দিশারির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে,
—- “মেয়েটা এত পাগল আর জেদি কেনো!”
দিশারি ফিক করে হেসে ফেলে।তারপর অন্য রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
—- “আমিও থাকছি তোর বাসায়।”
দিশারি রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়।বিভোর চেঁচিয়ে উঠলো,
—- “আজব!আমি কই থাকবো।”

বিভোর অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দু’রুমের দরজা দেখে।তারপর আবার খেতে বসে।তখন আবার দরজায় করাঘাত।বিভোর বিরক্তিতে অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ে।দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে সায়ন ঢুকে।ঢুকেই এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে,
—- “দিশারি নাকি আসছে?কই ও?”
বিভোর বললো,
—- “কেনো?”
—- “ঝগড়া লাগছে।হুমকি দিছে,বিয়ে নাকি করবেনা।ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম,হোয়াটসঅ্যাপ, সব কিছুতে ব্লক করে দিছে বালডা।”
—- “কি করেছিস তুই?”
—- “কিছুই করি নাই।হুদাই।”
—- “শিওর কিছু করিস নাই?”
সায়ন আড়চোখে বিভোরের দিকে তাকায়। তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,
—- “এক্সের সাথে একটু দেখা করে ফেলছি ভুলে ভুলে।ওইটাই কীভাবে জানি জেনে গেছে।”
বিভোর বাঁকা হেসে টেবিলে এসে বসে।এরপর বললো,

—- “হারামী।তোরে জুতা দিয়ে পিটানো উচিৎ। ”
—- “আর হবেনা।”
—- “ওরে গিয়া ক।”
—- “কই ও?”
—- “রুমেই।”
সায়ন ধারা যে রুমে সেই রুমে দিকে এগোয়।বিভোর নবাবি চালে ধমক মেরে বললো,
—- “ওইইই।এই রুমে আমার রত্ন।তোরটা ওইটায়।”
সায়ন কিঞ্চিৎ ভ্রু বাঁকায়।বলে,
—- “ধারা আসছে?”
—- “হু।”
সায়ন আর কিছু বললোনা।মাথা চুলকাতে চুলকাতে দ্বিতীয় রুমের সামনে এসে আদুরে গলায় টেনে ডাকলো,

—- ” আমার দিশা………।দরজা টা খুলো না।”
ওপাশ থেকে চিৎকার আসে,
—- “হারামি তুই এখানে কেন আসছস।যা তুই তোর বাবুর কাছে।গিয়া দুদু খাওয়া।”
—- “এসব বলেনা পাখি।একটু দরজা খুলো।আর স্বামীকে তুই-তুকারি করতে নেই পাখি।”
—- “একদম ন্যাকামো করবিনা।থাপ্রাইয়া বাথরুম মুছার ত্যানা বানায়া দিমু।”
বিভোর জোরে হেসে উঠে।বেডরুম থেকে ধারাও ফিক করে হেসে ফেলে।সায়নের শরীর জ্বলে উঠে।নিজেকে সামলে বললো,
—- “আচ্ছা সমস্যা নাই।তবুও দরজা খুলো।”
দিশারি দ্বিগুণ ক্ষেপে বললো,

—- “আর তুই কিসের স্বামী বললি?তোর সাথে আমার বিয়া হইছে?হয় নাই তো।আর হবেওনা।”
সায়ন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
—- “সরি পাখি।আর হবেনা।আমার দিশু ময়না।পাখি।প্লীজ দরজা খুলো।”
বিভোর এক হাতে ভর করে সায়ন আর দিশারির কথা শুনছে।আর মুচকি হাসছে।ফ্রিতে বিনোদন ঘুমাবার আগে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।দিশারি দরজা খুলতেই সায়ন হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে দরজ বন্ধ করে দেয়।বিভোর উঠে দাঁড়ায়।আর চেঁচামেচি হবেনা মনে হচ্ছে।সে বেডরুমে এসে দরজায় করাঘাত করতে গিয়েও করেনি।সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশের সোফায় সায়ন ঘুমাচ্ছে।রাতে হয়তো দিশারি বের করে দিয়েছে।তবুও বিভোর ডেকে বললো,

—- “কিরে এখানে কখন এলি?”
সায়ন ঘুম ঘুম চোখে বললো,
—- “দিশারির সাথে থাকতে কেমন জানি হয় একটা।বিয়ে তো কয়দিন পরই।থাক না কয়টা দিন দূরত্ব। ”
বিভোরের বুকে ভালো লাগার পরশ লাগে।সায়নের চুলে ঝাঁকি দিয়ে বাথরুমে ঢুকে।মানুষের কত রূপ!
একটা প্লে বয়ের ধারণা এরকম হয়!ভালবাসা কি না পারে!ভালবাসার শক্তি অনেক।অনেক বেশি।ভালবাসার প্রধান গুণ,একটা মানুষকে চেঞ্জ করা।

বিভোর অফিস থেকে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।ধারা বাড়িতে থাকাকালীন মাইশার কাছে অনেক রান্না শিখেছে।বিভোরকে রেঁধে খাওয়াবে বলে।আজ তাই করলো।ভোরে বিভোরকে দিয়ে বাজার করিয়ে এনেছে।বিভোর বাজারের লিস্ট দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিল।এত রাঁধবে কে।অফিস থেকে ফিরে এত রান্না দেখে চোখ কপালে।দুপুরের ভোজন দারুণ হয়।এরপর দুজন বিছানায় বসে আলোচনা নিয়ে।বিভোর বললো,
—- “তোমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে ধারা।আজ রাত বারোটার পর ছাদে শীতের কাপড় ছাড়া থাকবে।বৃষ্টি হলে বেশি ভালো।সহ্য করতে হবে তোমাকে ঠান্ডা।মনে জোর রাখবে।বিষ দিয়ে বিষ তুলতে হবে তোমার।সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।এই ঠান্ডা এভারেস্টের ঠান্ডার এক অংশ ও না।”
—- “কিন্তু এভারেস্টে তো ঠান্ডা রোধের জন্য আলাদা কাপড় পরাই থাকবে।”
—- “এক্সিডেন্ট কি বলে কয়ে হয়?তখন যদি ঠান্ডা সহ্য না করতে পারো?সিকিমে কি হয়েছিল?হুডি জ্যাকেট,গামবুট, হ্যান্ড গ্লাবস পরে থাকা স্বত্তেও ঠান্ডায় অজ্ঞান হয়ে গেছো।সিকিমে, এভারেস্টের কাছে কিছুনা।তুমি কি এভারেস্ট পানিভাত ভাবছো?”

—- “আচ্ছা যা বলবা তাই হবে।”
—- “পর পর দুই দিন তোমাকে ঠান্ডা সইতে হবে।এরপর ট্রেকিং করতে হবে।”
—- “ট্রেকিং?”
—- “ট্রাভেলিং করো আর ট্রেকিং বুঝোনা।”
—- “একা একা যে কোনো গ্রুপের সাথে যোগ দিয়ে জেলার বিভিন্ন প্লেস ঘুরি।এতসব জানার দরকার পড়েনি।শুনেছি অনেকবার।কি এটা জানতে আগ্রহবোধ করিনি।এখন তুমি বলো।”
—- “ট্রেকিং মানে পায়ে হাঁটা দীর্ঘ পথ।সেটা বুনো পথ হোক বা পাহাড়ি পথ। ”
—- “পায়ে হাঁটতে হবে!কতক্ষণ? ”
—- “এক দিনের বেশিই।”
ধারা ঢোক গিলে বলে,
—- “এতক্ষণ হাঁটতে হবে?”
বিভোর মুচকি হেসে বললো,

—- “আরো কঠিন ব্যাপার আছে।তাই বলছি এভারেস্ট যাওয়া বাদ দাও।এভারেস্ট তো হেঁটেই জয় করতে হবে তাইনা?”
—- “সেটা সম্ভব না।এতদিন জেদ ধরে বললেও।এখন কেমন একটা নেশা ধরে গেছে।প্লীজ যেতে চাই।”
বিভোর ধারার দিকে তাকায়।ধারার চোখে-মুখে অদম্য ইচ্ছে স্পষ্ট।বিভোর বললো,
—- “আচ্ছা।মনোবল বাড়াও।অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তোমার।ট্রেকিং নিয়ে বিস্তারিত কাল বুঝাবো।আজ বাইরে চলো ঘুরে আসি।”
—- “কি পরবো আমি?”
—- “শাড়ি এনেছো?”
—- “হু।”
—- “পরো তাহলে।”
—- “তুমি পাঞ্জাবি পরো?”
—- “পরতেই হবে?”
ধারা মাথা নাড়ায়।

বাসায় ফিরেছে ওরা সন্ধ্যায়।ফিরেই দুজন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।রাত বারোটার পর জেগে থাকতে হবে।বিভোর এলার্ম দিয়ে রেখেছে দশটা ত্রিশের।ঠিক দশটা একচল্লিশে বিভোরের ঘুম ভাঙে।রাতের ডিনার প্রস্তুত করে ধারাকে টেনে তুলে।ধারা শীতে কাঁপছে।কম্বল ছেড়ে উঠতে চাইছেনা।বিভোর খাইয়ে দেয়।খাওয়া পর্ব শেষ হয় এগারোটা পঞ্চাশে।বিভোর সব গুছিয়ে এসে বললো,
—- “ছাদে চলো।”
ধারা উঠে বসে মোটাসোটা একটা জ্যাকেট পরে বিভোরের।বিভোরের মায়া হয়।তবুও চোয়াল শক্ত করে বললো,
—- “একি!জ্যাকেট পরছো কেনো?খুলো।”
ধারা নরম গলায় বললো,

—- “খুব ঠান্ডা যে…
—- “ধারা তোমাকে ঠান্ডা সইতেই ছাদে যেতে বলছি।চাঁদ দেখতে নয়।”
—- “এভাবে কঠিন স্বরে কথা বলছো কেনো?”
—- “আমি তোমার বর নই এখন।শিক্ষক মনে করো তাহলে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।খুলো জ্যাকেট।নয়তো এভারেস্ট যাওয়ার চিন্তা বাদ দাও।”
ধারা গুমোট মুখ করে জ্যাকেট খুলে।সাথে সাথে ঠান্ডায় শরীরের পশম কাটা কাটা হয়ে উঠে।ধারার শরীর কেঁপে উঠে।বিভোরের গায়ে পাতলা কাপড়ের একটা শার্ট।সে ঠান্ডা সইতে পারে।তবে ধারার কাঁপুনি দেখে কেনো জানি ভেতরটা কেঁপে উঠে।ধারার কাছাকাছি আসে।ধারার দু’গালে হাত রেখে কন্ঠ নরম করে বললো,
—- “খুব কষ্ট হবে ধারা।ছেড়ে দাওনা।”
ধারা নিজের জায়গায় অটুট থেকে বললো,

—- “আমি যাবো।”
বিভোর সরে দাঁড়ায়।কঠিন স্বরে বলে,
—- “আসো।”
ছাদের এক কোণে ধারা দাঁড়ায়।পরনে ফতুয়া আর ট্রাউজার।চুল খোঁপা করা।বিভোর কেমন স্যার স্যার ভাব নিয়ে বললো,
—- “তিন ঘন্টা এখানে থাকবে।ছাদের নিচে যাওয়ার চেষ্টাও করবেনা।আমি রুমে যাচ্ছি।ভূত তো ভয় পাওনা?তাহলে একাই থাকো।”
বিভোর ঘুরে দাঁড়ায়।আবার তাকিয়ে বললো,
—- “মনে জোর বাড়াও।ভাবো তুমি এক যুদ্ধে নেমেছো জয়ী হতেই হবে।শীতের প্রকোপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাও।সহ্য করার চেষ্টা করো।মনোবলই আসল।মনোবল স্পিডে বাড়াও।”
বিভোর থামে।তারপর তিরষ্কার করে বললো,

—- “মনে হয়না পারবে।আধা ঘন্টা পর এসে দেখবো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছো।”
বিভোর ব্যঙ্গ করে হেসে নিচে নেমে যায়।ধারার কান্না পাচ্ছে।এতো ঠান্ডা।তার উপর বিভোর এত কঠিন কেনো হলো হুট করে।কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।ঠান্ডায় শরীরের পাঁজর অবশ হয়ে যাচ্ছে।ঢাকা এত ঠান্ডা কেনো।কুয়াশা বৃষ্টির ফোঁটার মতো শরীরে পড়ছে।নাকি বৃষ্টিই পড়ছে?শরীর কাঁপছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।পা গুলো অবশ হয়ে গেছে।ধারা চোখ বন্ধ করে বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে।মনোবল বাড়াতে হবে।সে ছাদে হাঁটা শুরু করে বিড়বিড় করে,

—- “ঠান্ডা লাগা যাবেনা।দুনিয়াতে ঠান্ডা বলতে কিছু নেই।আমার ঠান্ডা লাগেনা।যা যা ঠান্ডা যা।ভয় পাইনা তোকে।যা যা।”
ত্রিশ মিনিট বকবক করে ধারার মুখে ফেনা উঠে গেছে।বৃষ্টিই হচ্ছে।ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে সে।মৃত মানুষের ন্যায় হাত-পা ঠান্ডা বরফ।দুই ঘন্টা পার করে দেয় হাত পা নড়াচড়া করে।আরো এক ঘন্টা বাকি।কিন্তু মাথাটা ভারী হয়ে এসেছে।মনোবল ধরে রাখা যাচ্ছেনা।ধারা চাপা কান্নায় ভেঙে পড়ে।কিছুতেই আর সহ্য করা যাচ্ছেনা।বিভোরও ছেড়ে চলে গেল।একটু থাকলে কি হতো।ধারা শরীর গরম করতে দৌড়াতে থাকে ছাদে।ছাদটা অনেক বড়।এক পাশেই সে হাঁটাহাঁটি করছে,দৌড়ছে।এবার অন্য পাশে আসে।সেখানে বিভোর!সে বিভোরকে দেখে চমকে উঠে।বিভোর রেলিঙে হেলান দিয়ে তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে।কখন আসলো? যখন অন্য পাশে গেলো ধারা তখন হয়তো এসেছে।ধারা পাত্তা দিলোনা।আবার এসে নিজের জায়গায় দাঁড়ায়।দাঁতে দাঁত লেগে গেছে ঠান্ডায়।তিন ঘন্টা পূর্ণ হতে আরো বিশ মিনিট বাকি।তখনি ধারার শরীর অবশ হয়ে আসে পুরোপুরি। বিভোর দ্রুত এগিয়ে আসে।ধারাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে।ধারা অনুভব করে বিভোরেএ শরীরটা অনেক ঠান্ডা!কতক্ষণ হলো মানুষটা ছাদে এসেছে?ধারা চোখ তুলে বিভোরের দিকে তাকায়।বিভোরও তাকায়।বিভোরের চোখ দু’টি লাল।ধারা কাঁপা হাত বিভোরের গালে রেখে বললো,

—- “কেঁদেছো কেনো তুমি?”
কথার সাথে ধারার নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ে বিভোরের মুখে।বিভোর ঠোঁটে হাসি টেনে বলে,
—- “কই না তো।”
—- “তোমার গলাটাও কাঁপছে। কাঁদছিলে কেন?”
বিভোর আচমকা ধারাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।জোরে নিঃশ্বাস নেয় কান্না আটকাতে।সে কখনো কাঁদেনা সহজে।ধারা বিভোরের পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
—- “এখন আর কষ্ট হচ্ছেনা আমার।এত বড় ছেলে কাঁদে হা ?”
বিভোর ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
—- “আমার সামনে শীতে কাঁপছিলে।কাঁদছিলে।কেমনে সহ্য হবে আমার।”
ধারা হেসে ফেলে।বিভোরের চোখে চোখ রেখে বলে,
—- “ওলে বাবা।এত ভালবাসা।”

বিভোর ধারাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়।ধারার মুখে,হাতে ঘাড়ে,গলায় বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে।পানির ফোঁটাগুলো ফর্সা গায়ে মুক্তোর মতো মনে হচ্ছে। ঠোঁট দু’টো বারংবার কেঁপে উঠছে।ধারা দু’হাতে বিভোরের গলা জড়িয়ে ধরে।বিভোরের কপাল ছড়িয়ে ভেজা চুল।মাদকতা কাজ করছে হৃদয়ের গভীরে।সর্বাঙ্গে হচ্ছে শিহরণ।বৃষ্টিতে,শীতল বাতাসে প্রেম প্রেম ঘ্রাণ।আচ্ছা প্রেমের ঘ্রাণ আছে?বিভোর ঠোঁট ধাবিত করে ধারার দিকে।
ফ্ল্যাটে এসে ধারাকে নামিয়ে দেয়।ধারা লজ্জায় চুপসে গেছে।ঠান্ডাটা অনুভব হচ্ছেনা একটুও।বিভোর অন্যদিকে ফিরে বলে,
—- “চেঞ্জ করে নাও।”

ধারা ঢুকে এক রুমে বিভোর অন্যরুমে।বিভোর ট্রাউজার পরে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে কফি নিয়ে আসে ধারার রুমে।ধারার পরনে আকাশি রঙের কটনের কামিজ।গায়ে উড়না নেই।ভেজা চুল বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।বিমোহিত হয় বিভোর।গভীর রাত।নিশ্চুপ চারপাশ।প্রেমময়ী আবেদন কড়া নাড়ছে বুকের গভীরের হৃদয়টায়।মনে চলছে উত্তাল অবাধ্য ঢেউ।একি তোলপাড়!একি অনুভূতি!দু’টি
মানুষের প্রথম পরিচয় এই অনুভূতির সাথে।যন্ত্রনাময় চমৎকার সুখ অনুভূতি।বিভোর চোখ বন্ধ করে গোপনে শ্বাস নেয়।এরপর বললো,
—- “কফি নাও।শরীর চাঙ্গা হবে।”
ধারা কাঁপা হাতে কফি নেয়।বিভোর এরকম খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন।থাকলে থাকুক।তাঁর কেনো এমন হচ্ছে?বিভোর নিজের কফি রেখে।গলা থেকে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে ধারার পিছনে দাঁড়ায়।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২৭

—- “চুল মুছোনি কেনো?”
ধারা কিছু বলার পূর্বে বিভোর ধারার চুল মুছা শুরু করে।ধারার হাত কেঁপে উঠে।কফি পড়ে যেতে নিলে দ্রুত ধরে ফেলে।ধারার সব চুল এক পাশ করে দেয় বিভোর।কামিজের গলা অনেক বড়।বিধায় পিঠের অনেক অংশ উন্মুক্ত।ধারার পিঠে বড় একটা কালো তিল।তিলটা দেখতেই মুহূর্তে পায়ের তলা শিরশির করে উঠে বিভোরের।নিঃশ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে পড়েছে।বিভোর হাত বাড়ায়।পরক্ষণেই কি মনে করে সরিয়ে নেয়।রাতটা এতো ভয়ংকর মনে হচ্ছে কেন?

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ২৯