বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩২

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩২
ইলমা বেহরোজ

বিভোরের প্রত্যেকটি শিরা-উপশিরা প্রস্তুত যুদ্ধের জন্য।ভয়ংকর ভঙ্গি নিয়ে ছুরি শক্ত হাতে ধরেছে।যে তাঁবুর ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করবে সেই রক্তাক্ত হয়ে ফিরবে।কিন্তু কেউ ঢুকলোনা।তাঁবুর পাশে এসেই পা গুলো থেমে গেছে।একজন গম্ভীর কন্ঠে বললো,
— “ভেতরে কারা আছো বেরিয়ে আসো।”
বিভোরের দু’হাত নরম হয়ে আসে।চাপাস্বরে ধারাকে বললো,
— “ভয় পেয়োনা।এরা আর্মি হয়তো।”
ধারা তবুও ভয় পাচ্ছে।বিভোরের বাহু দু’হাতে শক্ত করে ধরে।বিভোর ধারাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।তিনজন ছদ্মবেশী লোক রাইফেল তাক করে ওদের উপর।বিভোর বললো,

— “ব্যাপার কি?”
একজন লোক বললো,
— “আপনার নাম কি?”
— “মুহতাসিম মাহতাব বিভোর।”
— “উনি কি হয় আপনার?”
— “ওয়াইফ।”
— “আপনাদের গার্ড কোথায়?”
— “আনিনি।”
— “আর্মি ক্যাম্প গার্ড ছাড়া ছেড়ে দিয়েছে? ”
— “আমি এই বছরের বাংলাদেশ এভারেস্ট অভিযাত্রী।সেই সুবাদে গার্ড ছাড়া ছেড়ে দেওয়া।”
তিনজন লোক ওদের উপর থেকে রাইফেল সরিয়ে দেয়।কালো লোকটি বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “স্যার উনারা না।”
আরেকজন বললো,
— “সোলেমান ছবি দেখান দুজনের।”
একজন লোক ফোন বের করেন।উনার নাম হয়তো সোলেমান।সামনের লোকটি ফোন হাতে নেন।এরপর বিভোর ধারাকে একবার আরেকবার ফোন দেখেন।তারপর ভ্রু কুঁচকে ফেলেন।বিভোরকে বলেন,
— “সরি আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য।”
বিভোর মৃদু হেসে বললো,

— “ইট’স ওকে।”
— “হ্যান্ডশেক?”
বিভোর হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো।লোকটি বললো,
— “এভারেস্টে জয়ী হয়ে ফিরুন।উজ্জ্বল করুন এই দেশ।”
— “আমিন।”
তিনজন লোক অন্যদিকে হাঁটা শুরু করে বড় বড় পা ফেলে।ধারা দ্রুত প্রশ্ন করলো,
— “কি হলো?কিছুই বুঝলামনা।”
বিভোর ধারাকে দু’হাতে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “এনারা আর্মি।যা বুঝলাম,কোনো অপরাধীকে খুঁজছে।আর অপরাধী দুজন ছেলে-মেয়ে।এখানেই কোথাও পালিয়ে আসছে।জঙ্গি হতে পারে।”

ধারা দু’সেকেন্ড সময় নিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নেয়।
এরপর বিভোরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “খুব ভয় পেয়েছিলাম।”
বিভোর হেসে ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— “চা – কফি কি খাবা?”
ধারা এবার অবাক হয়না।বিভোরের ব্যাগটা ভারী খুব।না জানি আরো কত কি এনেছে।ধারা মুখ তুলে বিভোরের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “কফি।”
তাঁবু ঘিরে কিছুটা দূরত্বে দূরত্বে আগুন জ্বলছে।দুজন মিলে কাঠ,শুকনো ডাল খুঁজে আগুন ধরিয়েছে।তাঁবুর পাশেই দুজন বসে কফি পান করছে।ধারা বললো,

— “এতো এডভেঞ্চারময় রাত প্রথম কাটাচ্ছি।”
— “চার-পাঁচ দিন আগের রাতটা আমার কাছে বেশি এডভেঞ্চারময় ছিল।”
কথা শেষ করে বিভোর চোখ টিপলো।ধারা দু’হাতে মুখ ঢেকে ধমক দিয়ে উঠলো,
— “উফফ!তুমি কি একটা।”
বিভোর আওয়াজ তুলে হেসে উঠলো।এরপর বললো,
— “সত্যি বলছি।”
ধারা অন্যদিকে চোখ রেখে ব্যঙ্গ করে বললো,
— “কচু।”
বিভোর সিরিয়াস মুখ করে বললো,
— “কেনো এডভেঞ্চারময় তোমার কাছে বর্ণনা করি শুনো।”
ধারা চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,

— “আমি কিন্তু গরম কফি ফেলবো তোমার উপর।পুড়ে যাবে শরীর।”
বিভোর আরো রোমান্টিক হয়ে বললো,
— “কত আগেই পুড়ে গেছি আমি তোমার প্রেমে।আর কি পোড়াবে?”
ধারা এবার হেসে ফেলে।বিভোর মুগ্ধ নয়নে তাকায়।ধারাকে অন্যবেলা ভালো লাগে।সুন্দরী সে।তবে যখন হাসে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা হৃদয়ের মধ্যিস্থলে আঘাত হানে।বিভোরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধারাও তাকায়।চার চোখের মিলন ঘটে নিঃশব্দে।চোখেরও ভাষা আছে।দুজনের মনে হচ্ছে দুজনি চোখ দিয়ে কথা বলছে।কি অদ্ভুত না!
বিভোর কফি রেখে উঠে দাঁড়ায়।ধারার বুকে মুহূর্তে আলোড়ন তৈরি হয়।বিভোর যত এগুচ্ছে তত বেশি আলোড়িত হচ্ছে ভেতরটা।বিভোর ধারার পাশে এসে বসে।গালের যে অংশটা ছিঁড়ে গেছে সেখানে আলতো করে হাতে স্পর্শ করে।এরপর কাটা অংশে অধরের স্পর্শে ভালবাসা মেখে দিয়ে বললো,

— “জ্বলে?”
ধারার হাতের পশম কাটা কাটা হয়ে গেছে।কন্ঠ বসে গেছে।কোনোমতে মাথা নাড়িয়ে না বললো।বিভোর বললো,
— “শরীরে দূর্বল ভাবটা আর আছে?”
ধারা মাথা এদিক-ওদিক নাড়ায়।মানে নাই।বিভোর নরম কন্ঠে বললো,
— “যদি বলি এখনি আমরা নেমে যাবো চূড়া থেকে।পারবে?সেই শক্তি আছে?”
ধারা অবাক চোখে তাকায় বিভোরের দিকে।বিভোরের চোখে রোমান্টিক চাহনিটা নেই।ধারা বললো,
— “পারবো।”
— “ঘুম পাচ্ছে?”
— “না।”
— “জুতা চেঞ্জ করে।জ্যাকেট আর লেদারের গ্লাবস পরে আসো।”
— “কেনো?”
— “যা বলছি করো।”
ধারা গুমোট মুখ করে তাঁবুতে ঢুকে।জ্যাকেট পরতে পরতে বিড়বিড় করে,

— “সেই কখন ঘুমাতে বলছিল।ভয়ে ঘুমায়নি।ধ্যাত ঘুমিয়ে গেলেই ভালো হতো।এখন কি ট্রেনিং দিবে আল্লাহ জানে।”
তারপর বেরিয়ে আসে।বিভোর নিজের ব্যাগপ্যাক থেকে মোটা শক্ত লম্বা দু’টো দড়ি বের করে।দেখতে অন্যরকম।এরপর ধারার হাতে ধরে নিয়ে আসে চূড়ার এক কোণায়।যে পাশটায় পাথর বেশি।বললো,
— “এভারেস্ট অভিযাত্রী হওয়ার প্রধান প্রশিক্ষণ রক ক্লাইম্বিং।যখন মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে কোর্সের জন্য যাবা ওরা পাথরের পাহাড়ে ক্লাইম্বিং কোর্স করাবে সারাদিন।এখন আপাতত কিছুক্ষণের জন্য রক ক্লাইম্বিং চর্চা করো।”

— “দিনে করলে হতোনা?”
— “দিনে আমরা নেমে যাবো।হাতে সময় কম।যেহেতু এখন ঘুম নেই চোখে।সময়টা কাজে লাগানোই বেস্ট।”
ধারার মেজাজ বিগড়ে যায়।ইচ্ছে হচ্ছে বিভোরকে কামড়িয়ে খেয়ে ফেলতে রাক্ষসীর মতো।রাগ গোপনে রেখে বললো,
— “আচ্ছা।”
বিভোর আবার দৌড়ে তাঁবুতে যায়।ধারা দেখে হেলমেটের মতো কিছু একটা বিভোরের হাতে।বিভোর সেটি ধারার মাথায় পরিয়ে দেয়।কপালের ঠিক উপরে সেই হেলমেটের মতো বস্তুটিতে আলো জ্বলে উঠলো।ধারা অবাক হয়ে বললো,

— “এটা কি?’
— “অন্ধকারে ক্লাইম্বিং করবে?আলো দরকার না?আর এটির নাম ক্লাইম্বিং হেলমেট।”
ধারা আর কিছু বললোনা।বিভোর দুটি দড়ির এক অংশ একটা মোটাতাজা গাছের সাথে বাঁধে।দড়িতে অনেক গাঁট আছে।যাতে ধরতে সুবিধা হয়।বিভোর বললো,
— “এবার দড়িটা দু’হাতে শক্ত করে ধরে নিচে নামা শুরু করো।”
কিছু সময়ের ব্যবধানে দড়ি বেয়ে পঁচিশ ফুট নিচে নেমে আসে ওরা।ধারাকে হালকা বেগ পেতে হয়।মাটিতে পা রেখে বিভোর বললো,
— “এবার দড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে তোমাকে।”
— “এ্যাঁ।”
— “জ্বি।”
ক্লাইম্বিং শুরুর আগে দাঁড়ানোর পজিশন,রক ফেস পর্যবেক্ষণ এবং নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত কেমনে করতে হয় বিভোর শিখিয়ে দেয়।নামা যে কারোর জন্য মোটামুটি সোজা।তবে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গেলে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়।অনেক কৌশল জানা থাকতে হয়।ধারা আল্লাহর নাম স্বরণ করে বিভোরের শেখানো কৌশল অবলম্বন করে উপরে উঠার চেষ্টা করে।কিছুটা এগিয়ে পড়ে যায়।শরীর দিয়ে ঘাম নির্গত হচ্ছে।বিভোর উৎসাহিত করে।ধারা দম নিয়ে আবার চেষ্টা করে।আবারো বিফল হয়।গরমে শরীর ফেটে যাচ্ছে।তাই জ্যাকেট খুলে ফেলে।আবার চেষ্টা করে পনেরো ফুট উঠে অনেক্ষণ সময় নিয়ে।এরপর জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো,

— “আমি আর পারছিনা।”
— “আরেকটু চেষ্টা করো।”
— “প্লীজ।”
— “তোমাকে এভারেস্ট নেওয়া হবেনা।”
ধারা অনেক কষ্টে বললো,
— “আমাকে সময় দাও।আমি পারবো।প্লীজ।”
— “আচ্ছা আরেকটু উঠো।”
ধারা আরেকটু উপরে উঠে।তখন বিভোর বললো নেমে আসতে। আট ফুট নামার পর আচমকা হাত থেকে দড়ি ছুটে যায়।পাথরে আঘাত পেয়ে ধারা নিচে পড়ে আর্তনাদ করে উঠলো।কোমর থেকে বন্ধনী ছুটে গেছে।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলনা!বিভোর চিৎকার করতে গিয়েও করেনি।রক ক্লাইম্বিং চর্চা অনেক কঠিন।সে যখন প্রথম বার করেছে কত আঘাত সইয়েছে।ধারা জ্ঞান হারায়নি।বিভোর দ্রুত কাঁধে তুলে নেয়।ধারাকে ধরতে হাত বাড়িয়ে ছিল।কিন্তু ধারা পাথরে ধাক্কা খেয়ে অন্যপাশে পড়েছে।ধারা গোঙাচ্ছে।আর বিভোরের বুক খান-খান হচ্ছে।দ্রুত ক্লাইম্বিং করে উপরে উঠে আসে বিভোর।মাটিতে ধারাকে বসায়।বললো,
— “কোথায় আঘাত পেয়েছো বলো আমাকে?”

ধারার পরনে হোয়াইট টি-শার্ট ছিল।সেটি রক্তে রাঙা হয়ে গেছে।ধারা নিজের শরীরে এত রক্ত দেখে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে।পরক্ষণেই জ্ঞান হারায়।আকস্মিক ঘটনায় বিভোর হতভম্ব।বার বার ডাকতে থাকে ধারাকে।কিন্তু ধারার সাড়া নেই।রাত গভীর তখন।ঝিঁঝিঁ পোকা আর নিশি-পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে চারিদিকে।বিভোরের মনে পড়ে,ধারার হিমোফোবিয়া আছে।কিন্তু দিনে এতবার আহত হলো ধারা তখন তো রক্ত ভয় পায়নি।জ্ঞান হারায়নি।এতসব ভাবার সময় নেই।বিভোর দ্বিতীয় বারের মতো কাঁধে তুলে নেয় ধারাকে।দড়ি রেখেই তাঁবুতে ফিরে আসে।স্লিপিং ব্যাগে শুইয়ে দেয়।সারা শরীরে রক্ত।কোথায় আঘাতটা পেয়েছে বোঝা যাচ্ছেনা।সুক্ষ্ম চোখে খুঁজতে থাকে আঘাতটা কোথায়।কয়েক সেকেন্ডে খুঁজে পায়।ডান হাতের বাহুতে জখম হয়েছে।আর বাম পায়ের হাঁটুতে।বিভোর বুদ্ধিশূন্য হয়ে পড়ে।এতো সাহসী শরীরও যেনো কাঁপছে।ব্যাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার যাবতীয় জিনিসপত্র বের করে রক্ত পড়া বন্ধ করে।ব্যান্ডেজ করে দেয়।এরপর
ধারার শরীর থেকে সব রক্ত মুছে।ব্যাগপ্যাক থেকে আরেকটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে পরিয়ে দেয়।নিজের শার্ট,শরীরেও রক্ত লেগে আছে।তাও পরিষ্কার করে।ধারা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।বা অজ্ঞানই।

রাত তখন তিনটা।আগুন নিবে গেছে।বিভোর আশ-পাশ থেকে আরো কিছু কাঠ সংগ্রহ করে বাইরে আগুন জ্বালায়।এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ আছে নাকি।এরপর ধারার পাশে শুয়ে পড়ে।ধারার মুখের দিকে তাকায়।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।বুকে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।কেউ যেনো সূচ দিয়ে ঘা করছে।কেনো এতো কষ্ট সইছে মেয়েটা?কিসের এতো টান তাঁর এভারেস্টের প্রতি?আদুরে কন্ঠে ডাকলো,
— “ধারা?এই ধারা?”

জাগেনি ধারা।বিভোর ধারাকে বুকে টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে।যখন ঘুম ভাঙে টের পায় পাশে ধারা নেই।বুকটা ছ্যাৎ করে উঠে।বিভোর খালি গায়েই বেরিয়ে আসে।ধারা স্টোভে রাঁধছে।বিভোরের প্রাণ ফিরে আসে।এগিয়ে এসে বললো,
— “কি রাঁধো?এই পা,হাত নিয়ে বেরিয়েছো কেনো।”
— “নুডলস ছাড়া আর কিছু পেলামনা তোমার ব্যাগে।তাই নুডলসই রান্না হচ্ছে।”
— “আচ্ছা সরো।বাকিটা আমি করি।”
খাওয়া-দাওয়া শেষে বিভোর সব গুছিয়ে নেয়।ধারা একটু দূরে মাটির উঁচু অংশে বসে আছে।সে বললো,
— “নামবো কীভাবে এই পায়ে।”
বিভোর কিছু বললোনা।ধারা আর প্রশ্ন করলোনা।তাঁবু ব্যাগে ঢুকিয়ে বিভোর বললো,
— “তোমার হিমোফোবিয়া আছে ভুলেই গিয়েছি।আর গতকাল দিনে এতবার হাত-পা ছিঁড়লো তোমার।রক্ত আসলো।তখন তো ভয় পেতে দেখিনি।হিমোফোবিয়া আক্রান্ত যারা ওরাতো রক্ত দেখলেই ভয় পায়।”
ধারা শান্ত স্বরে বললো,

— “যতবার ছিঁড়ছে দু ফোঁটার বেশি রক্ত আসেনি।তখন ভয় হয় হালকা।তবে এতোটা না।বেশি রক্ত দেখতে পারিনা।সহ্য হয়না।শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়।মাথা ঘুরায়।শরীর কাঁপে।”
— “তোমার ব্যাপারটা অন্যরকম তাহলে।কম রক্তে কিছু হয়না।”
— “হু।”
আদিবাসী কটেজে এসে জোর করে ধারাকে ভাত খাইয়ে দেয়।নিজেও খায়।শরীরে শক্তির প্রয়োজন যে অনেক।এরপর ধারাকে কোলে তুলে নেয়।ধারা চিৎকার করে উঠে বললো,
— “এই কাজ করোনা প্লীজ।তোমার খুব কষ্ট হবে।পারবেনা।”
বিভোর হাঁটতে হাঁটতে বললো,

— “আমি নিজেকে সুপারম্যান ভাবিনা ধারা।কিন্তু নামতে তো হবে নাকি।তোমার ভালো চিকিৎসা দরকার।পাথরের কোনো খাড়া অংশে আঘাত পেয়েছো।বা অন্যকিছুতে।বাজেভাবে জখম হয়েছে।দুই ব্যাগ আর তোমাকে নিয়ে ত্রিশ মিনিটের উপরে হাঁটতে পারবো এই বিশ্বাস আছে।যখন কষ্ট হবে কোথাও বসে রেস্ট নিবো।সারাদিনই তো পড়ে আছে।ধীরে ধীরে যাবো।”
ধারা তবুও নাছোড়বান্দা গলায় বললো,
— “প্লীজ নামাও।আমার ওজন আছে অনেক।”
ধারা ছটফট করতে থাকে। বিভোর ধমকে বললো,
— “ধারা নড়োনা।চুপচাপ থাকলে কষ্ট হবেনা আমার।”
ধারা ব্যার্থ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।মিনিট বিশেকের মাথায় বুদ্ধি আসে।বিভোরকে বললো,

— “আমার ট্রেনিং চলছে।আর এভারেস্টে জখম হবার সম্ভাবনা আছে তাইনা?তখন তো তুমি আমাকে কোলে করে এভারেস্ট জয় করাবেনা।আমাকে আহত শরীর নিয়েই এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগুতে হবে।আর এজন্য অভ্যস্ত হওয়া দরকার আগে থেকেই।সো এখন নামাও।আমাকে জখম নিয়ে হাঁটা শিখার সুযোগ করে দাও।”
কথাটা একদম যুক্তিসম্মত।বিভোর ধারাকে নামিয়ে দেয়।বললো,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩১

— “আমাকে ধরে হাঁটো।”
ধারা মৃদু হাসলো।এক ঘন্টা হাঁটার পর ধারার পা অবশ হয়ে আসে।কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে বসে।তবুও আর হাঁটা যাচ্ছেনা তখন আবার বিভোর কোলে তুলে নেয়।ত্রিশ মিনিট পর নামিয়ে দেয়।ধারা আরো ত্রিশ মিনিট হাঁটে।আবার বিভোর কোলে তুলে নেয়।এভাবেই দুপুর তিন টায় এসে পৌঁছায় বগালেকে।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৩