বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৩

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৩
ইলমা বেহরোজ

ওরা বগালেকের কটেজে উঠে।ফ্রেশ হয়ে দুজন খাওয়া সম্পন্ন করলো।ধারাকে খাইয়ে দেয় বিভোর।এরপর বললো,
— “শুয়ে পড়ো।একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।কাল ভোরেই বের হবো আমরা।”
ধারা শুয়ে পড়ে।বিভোর পাশে শুয়ে ধারার পেট জড়িয়ে ধরে বললো,
— “আমারো খুব ঘুম পেয়েছে।”
ধারা মৃদু হেসে বললো,
— “ঘুমাও।”
মিনিট চারেক পর বিভোর ধারার মুখের উপর ঝুঁকে বললো,
— “কী ভাবো?”
ধারা হেসে বললো,
— “কিছুনা।”
বিভোর ধারার কপালে চুমু দিয়ে শুয়ে পড়ে।তখন ধারা বললো,

— “আমাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?”
ভেজা কন্ঠের কোমল অনুরোধ ছিল।বিভোর সচকিত হয়ে আবার ঝুঁকে তাকায়।ধারা বললো,
— “একটু বসতে হেল্প করো প্লীজ।”
বিভোর উঠে বসে ধারাকে বসায়।এরপর ধারা বললো,
— “এবার খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?”
নিঃসংকোচ আবেদন!বিভোর নিজেকে ধারার আহত পা থেকে একটু দূরত্বে রেখে জড়িয়ে ধরলো।ধারা বাম হাতে বিভোরের পিঠ খামচে ধরে।বিভোর ধারার নাক টানার আওয়াজ পায়।ধারা কি কাঁদছে?
— “তুমি কাঁদছো ধারা?”
বিভোরের প্রশ্ন শুনে ধারা স্পষ্ট করে কেঁদে উঠলো। বিভোর দ্রুত ধারাকে বুক থেকে সরিয়ে মুখের দিকে তাকায়।
— “কাঁদছো কেনো?কষ্ট হচ্ছে?ব্যাথা করছে খুব?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ধারা কান্না আটকাতে গিয়ে আরো ফ্যাসফ্যাস শব্দ তুলছে।বিভোর অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ে।ধারা নিজে কে সামলিয়ে বললো,
— “তোমাকে হারানোর ভয় বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে।সবসময় খুঁচায়।স্পেশালি,যখন ভালবাসো খুব।”
বিভোর ধারার দু’গালে হাত রেখে বললো,
— “এজন্য এতো কান্না?”
ধারা মাথা নাড়ায়।বিভোর বললো,
— “ভালবাসায় হারানোর ভয় থাকবেই।সেই ভয় রুখতে যারা পারে তারাই আজীবন একসাথে থাকে।”
— “আমরা রুখবো।ফাইনাল।কোনো ছাড়াছাড়ি নাই।দুনিয়া এপাড়-ওপাড় হয়ে গেলেও তুমি আমার।আমি তোমার।”
বিভোর হাসে ধারার কথা শুনে।বললো,
— “আজ্ঞে,যাহা বলিবেন।এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।”
— “আচ্ছা আমি তোমার কি?”

এমন প্রশ্নে বিভোর থমকায়।এরপর একটা চমৎকার ভঙ্গি নিয়ে বললো,
— “তুমি আমার বৃষ্টি।বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা যখন আওয়াজ তুলে মাটিতে পড়ে তখন মনে আনন্দের ঢেউ উঠে।তেমনি তুমি যখন হাঁটো তোমার পা আর মাটি সংঘর্ষ হয়ে যে আওয়াজ তুলে তা আমার ভেতরে শিহরণ জাগায়।মনে হয় এইতো, এইতো আমার ধারা হাঁটছে।আমারই আশে-পাশে আছে।”
ধারা হাসে।চোখে জল মুখে হাসি।কি সুন্দর!ধারা বললো,
— “তুমি যখন আমাকে বৃষ্টি বলো কেমন অদ্ভুত শিহরণ কাজ করে।মনে হয় এক ডাকে বশ করেছো আমায়।আমি যেখানেই থাকিনা কেনো,তোমার এই ডাক একবার আমার কানে আসলে আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দৌড়ে আসবো।”
বিভোর মৃদু হেসে বললো,

— “র‍্যালি?এতো বশ্যতা কেন এই বৃষ্টিতে?”
— “আই ডোন্ট নো।তবে,তোমার মুখে বৃষ্টি নিয়ে এত কথা শুনতে শুনতে বৃষ্টি এখন আমারো ভালো লাগে।”
— “সঙ্গদোষ।”
— “জ্বি না।সঙ্গগুণ।”
দুজন একসাথে হাসে।বিভোর শুয়ে আদুরে গলায় বললো,
— “আমার বৃষ্টি এবার আপনি আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ুন তো দেখি।”
ধারা হেসে বিভোরের বুকে মাথা রাখে।বিভোর ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
— “আর কোনো কথা নয়।এক্কেবারে ঘুম।সন্ধ্যায় উঠে খাবে।”
— “আচ্ছা।”

এরপরদিন জিপে করে ওরা রুমা বাজার আসে।এরপর বান্দরবান।বান্দরবান সদর হাসপাতালে ধারার পা দেখাতে আসে।সকাল থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।ব্যাথাও করছে।রক্ত দেখে দু’বার রাস্তায় অজ্ঞান হয়েছে ধারা।ডাক্তার ব্যান্ডেজ খুলে পা দেখেন।ধারার ক্ষতস্থানে সূচের মতো পাথর পেয়েছেন তিনি।সেটি সরিয়ে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেন।ধারা চোখ খিঁচে কাঁদছে ব্যাথায়।বিভোরকে দেখে শান্ত মনে হচ্ছে তবে ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে।ডাক্তারকে প্রশ্ন করলো,
— “ঢাকা যাওয়া মনে হয় পসিবল না আজ? ”
ডাক্তার বললেন,
— “এখন জার্নি করা অশোচনীয়।দু’দিন ট্রিটমেন্ট নিক।কিছুটা সুস্থ হয়ে তবেই যাত্রা শুরু করুন।”
হাঁটুর হাড়ে বিষধর ব্যাথা।হাঁটুর পুরোটা অংশ ব্যাথায় ফ্যাকাশে কালো হয়ে আছে।দু’দিন মেডিসিন নিয়ে সাবধানে থাকলে ব্যাথা সেড়ে যাবে।হাতের বাহুতে আবার ব্যাথা কম।ডাক্তার ব্যাথা কমার জন্য ইঞ্জেকশন দিতে চান।তখন বিভোর আৎকে উঠে বললো,

— “প্লীজ ডক্টর আস্তে দিবেন।”
ডাক্তার বললেন,
— “উনি যে ব্যাথা সহ্য করছেন তাঁর কাছে এটি কিছু নয়।”
বিভোর দু’হাতে চোখ ঘুরে।ধারা হেসে ফেলে।বিভোর এতো বড় বড় ব্যাপারকে সামলিয়ে ফেলে।আর সামান্য ইঞ্জেকশন এতো ভয় পায়!
বিভোর একাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়।এরপর হাসপাতালের আশে-পাশের একটা হোটেল দু’দিনের জন্য বুকিং করে।রুমে ঢুকে ধারাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।তখন ধারা বললো,
— “ইঞ্জেকশন ভয় পাও?”
বিভোর খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বললো,
— “কই না তো।”
ধারা হাসে।বিভোর তাহলে সত্যিই ইঞ্জেকশন ভয়।
ধারা বললো,
— ‘বাড়ি ফিরি।তারপর আমার কথা না শুনলে ইঞ্জেকশন মারবো হা।”
বিভোর হতবিহ্বল হয়ে পড়ে।কারো কাছে শুনেছিল, দুনিয়াতে যতই ভুল কাজ করো সমস্যা নাই।শুধু একটা ভুল কাজ পুরুষদের কখনো করা যাবেনা।সেটা হলো বউকে দূর্বলতা জানতে দেওয়া যাবেনা।নয়তো তাঁরা এই দূর্বলতাকে হাতিয়ার করে অত্যাচার করে করে কুঁজো করে দিবে।বিভোর ঢোক গিলে।আসলেই,সে ইঞ্জেকশন ভয় পায়।

কেটে যায় দু’দিন।এ দু’দিন ধারা স্বামীর সেবা পেয়েছে প্রতিটা মুহূর্তে।কোনো বিরক্তি,ক্লান্তি ছাড়া সেবা করে গেছে বিভোর।রাতে যখন ধারা ব্যাথায় কেঁদে উঠে তখন বিভোরও উঠে পড়ে।ধারার পা নিজের কোলে নিয়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।গল্প শোনায়।যেনো ধারা ব্যাথার কথা ভুলে যায়।সকাল-বিকাল ধরে ধরে হাঁটিয়েছে।এতো সেবার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না।দু’দিনে পুরোপুরি শেষ।কাটাছেঁড়া অংশও শুকিয়ে এসেছে।দুজন বেরিয়ে পড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে।তিনদিন পর দিশারির বিয়ে।গতকাল থেকে কল করে খুব জ্বালাচ্ছে।যথা সময়ে ঢাকা পৌঁছে ওরা।এরপরদিন দিশারি – সায়ন এর সাথে দেখা করে।বিকেলে চারজন বিয়ের শপিং করতে বের হয়।বিয়ের দিন চলে আসে।ধারা ফুফির বাড়িতে থাকছে দু’দিন ধরে।কারণ,ভাইয়া-ভাবিরা এসেছে।বিয়ের সময়টা রাতে।ধারা ব্যাগ খুলে লেহেঙ্গা বের করতে গিয়ে একটা শাড়ি দেখতে পায়।আকাশি রঙের।সাথে আকাশি রঙের গয়না।গাঁজরা ,পায়েল,চুড়ি।একটা আকাশি রঙের চিরকুট।চিরকুট খুলে।লেখা,

— “ধারা নামের পরীটারে আকাশি রঙে কত মানায়।তা কি সে জানে?”
ধারা হাসলো।দিশারি তখন এসে বললো,
— “গতকাল রাতে পাঠিয়েছিল আমার কাছে।আমি তোর লাগেজে রেখে দিয়েছি।”
রাত সাতটার দিকে পুরো সেন্টার উল্লাসে মেতে উঠে।বিভোর ধারার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে কখন থেকে চেয়ে আছে।এইযে আশে-পাশে এতো এতো মানুষ সবাইকে অগ্রাহ্য করে যে কারোর চোখ ধারার উপর পড়বে।আকাশি রঙে সেজে আছে ধারা।ধারার ভাইয়েরা কাছে।তাই কাছেও যাওয়া যাচ্ছেনা।এ যে কি কষ্ট!এরি মধ্যে চোখে পড়ে সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন আর বাদল মেসবাহকে।বিভোর বিড়বিড় করে,
— “ও মাই গড!বাবা-ভাইয়াকে কে ইনভাইট করলো।”
বিভোর দ্রুত পায়ে সায়নের পাশে আসে।চাপা স্বরে বললো,
— “আব্বা আর ভাইয়াকে ইনভাইট করছোস?”
সায়ন ভারী ইনোসেন্ট ভাবে উত্তর দিলো,

— “হুম ইনভাইট করসি।তোর বাপ মানে আমার বাপ।আর আমার বিয়েতে থাকবোনা?”
বিভোরের রাগে ইচ্ছে হচ্ছে সায়নকে মাটি খুঁড়ে পাতালে ঢুকিয়ে দিতে।ইচ্ছে করে গন্ডগোল টেনে এনেছে সায়ন বুঝতেও পারলনা।তার উপর ঢাকার কত কত স্মার্ট ছেলে-পুলে আছে এখানে।কোনো গন্ডগোল শুরু হলে এরা শিওর ভিডিও করে ভাইরাল করে দিবে।বিভোর দ্রুত পায়ে বাপ-ভাইয়ের কাছে আসে।বাদল মেসবাহ বিভোরকে দেখেই হাত বাড়িয়ে ডাকলো,
— “আমার ভাই।”
তারপর জড়িয়ে ধরে।সৈয়দ দেলোয়ারকে পা ছুঁয়ে সালাম করে।বললো,
— “আব্বা,ভাইয়া প্লীজ আজ এখানে কোনো ভেজাল করোনা।এইটা ঢাকা।আমার পরিচিত অনেকে আছে।সম্মান যাবে।আর ভাইয়া তোমার সম্মান নাই জানি।আমার তো আছে।আমারটা রক্ষা করো প্লীজ।”
বাদলের চোখ কপালে।অবাক স্বরে বলে,

— “আব্বা,ও আব্বা।আপনার ব্যাঠায় কি বলে?আবোলতাবোল বকতাছে কেন?”
সৈয়দ দেলোয়ার বিভোরকে বললো,
— “হুদাই ভেজাল করতে যাবো কেন?”
বিভোর বললো,
— “কারণ,এখানে সাফায়েত, সামিত নামে দুজন আছে।”
বাদল প্রায় লাফিয়ে উঠে বললো,
— “আমাদের পিছু এসেছে ওই হারামজাদা।দেখছেন আব্বা কতো বড় বেত্তমিজ?”
সৈয়দ দেলোয়ার গলার জোর বাড়িয়ে বলেন,
— “আজিজুইরে আসছে?আজকে ওরেসহ ওর ব্যাঠাদের সমাধি করে যাবো এখানে।কত সাহস আমাদের পিছু এসেছে।”
বিভোর কপাল চাপড়ায়।এরপর ধৈর্য্য নিয়ে বললো,
— “আস্তে কথা বলেন অনেকে তাকিয়ে আছে।আর ওরা আপনার পিছু আসে নাই আব্বা।সায়নের যার সাথে বিয়ে হচ্ছে ওই মেয়ে সামিত,সাফায়েতের ফুফুতো বোন।”
বাদলের মাথায় যেন বাজ পড়লো।

— “কি!”
সৈয়দ দেলোয়ার করুণ ভাবে বলেন,
— “আহারে।কত ভালো ব্যাঠা সায়ন।ওর আত্মীয় এরা হচ্ছে!বিভোর একটু দেখ যদি সায়ন ব্যাঠারে বাঁচানো যায়।নয়তো এদের বিষে বেচারা নীল হয়ে যাবে।”
বিভোর জোরপূর্বক হেসে বললো,
— “থাক আব্বা বাদ দেন।যার কপালে যা আছে হবেই।খালি আপনাদের কাছে আমার রিকুয়েস্ট কোনো ভেজাল করে আমার সম্মান ডুবাবেন না।”
বাদল গম্ভীর কন্ঠে বললো,
— “আমার এতো ইচ্ছে নাই ভেজালের।আমারে না খুঁচালেই হবে।”

ডিনার পর্ব শুরু হয়।সাফায়েত চেয়ারে বসে।এদিক ওদিক তাকিয়ে লিয়াকে খুঁজে।দুজনের যতই ঝগড়া হউক দিনশেষে একজন আরেকজনের।বিয়েটা তো প্রেমের বিয়ে।ভালবেসে বিয়ে করা।ভার্সিটির সেরা মেয়েটা ছিল লিয়া।আর সবচেয়ে ভালো মেয়ে।রাগী, জেদি ছিল।তবে মনটা ছিল বিশাল।সাফায়েতের মনের কোণে পুরনো স্মৃতি কড়া নাড়ছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি।তবে সেই হাসি সরে যায় বাদলকে দেখে।কিছুটা দূরত্বে বাদল আর তাঁর বাপ বসে আছে।সাফায়েত খিটমিট করে তাকায়।বাদলও তাকায়।দুজনের চোখাচোখি হয়।বিভোর এগিয়ে আসে।বাদলের কাঁধে হাত রেখে বললো,

— “তাকিওনা।”
বাদল চোখ সরিয়ে নেয়।সাফায়েত সামিতকে চাপা স্বরে বললো,
— “ভাইয়া।দেখো সোচ্চারের বাচ্চা এখানেও চলে এসেছে।”
সামিত খাওয়া শুরু করছিল মাত্র।সাফায়েতের কথা শুনে তাকায়।সাফায়েত ইশারায় পিছনে তাকাতে বলে।সামিয় ঘুরে তাকায়।বাদল আর সৈয়দ দেলোয়ারকে দেখে শরীরের রক্ত টগবগ করে উঠে।
সাফায়েতকে চাপা স্বরে রাগ নিয়ে বললো,
— “আগে খা।শক্তি কর।তারপর ওদের ধরতেছি।”
সাফায়েত মাথা নাড়িয়ে খাওয়া শুরু করে।বাদল খাওয়ার ফাঁকে আড়চোখে তাকায়।সাফায়েতও তাকায়।বাদল চোখ সরিয়ে নেয়।আবার তাকায় তখন সাফায়েত ইশারায় বুঝায়,ধর‍তে পারলে একবার ভর্তা করে দেব।বাদল বিভোরকে বলে,
— “দেখ আমারে ইশারায় কিসব বলতেছে।আমারে খুঁচাচ্ছে।”
বিভোর ভ্রু কুঁচকে বললো,

— “পাত্তা দিওনা।”
খাওয়া শেষে সাফায়েত বাদলের দৃষ্টি লক্ষ্য করে থুথু
ফেলে।বাদল জ্বলে উঠে বিভোরকে বললো,
— “ও কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।আমি ওর ঘাড় মটকে দেবো।”
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।ধারার ভাইটাও এতো ঝগড়াটে!বিভোর দ্রুত ফোন বের করে ধারাকে টেক্সট করে।ধারা কোথা থেকে দৌড়ে আসে সাফায়েত,সামিতের কাছে।শাফি হেসে বললো,
— “কিছু বলবি টুইংকেল?”
ধারা একবার আড়চোখে বিভোরের দিকে তাকায়।তারপর বললো,
— “তোমাদের সাথে থাকতে এসেছি।অপরিচিতদের মাঝে আর ভালো লাগছেনা।”
সাফায়েত বললো,

— “আয়।বস।আর জানিস পরী কি হইছে? বাদইল্লে আর ওর বাপে আমাদের পিছু ধরে এখান অব্দি চলে আসছে।”
ধারা সাফায়েতের পাশে বসতে বসতে বললো,
— “দিশা আপুর বরের আত্মীয় ওরা।মানে ওইযে বিভোর উনার ফ্রেন্ড সায়ন ভাইয়া।ক্লোজ ফ্রেন্ড।তাই ইনভাইট পেয়ে এসেছে।”
সামিত,সাফায়েত কতক্ষণ থ মেরে বসে থাকে।এরপর সামিত বললো,
— “হইছে।এসব খাচ্চরের কথা বাদ।”
বিয়ের নাচ গান ফেলে রেখে বিভোর তাঁর বাপ ভাইকে পাহারা দেয়।আর ধারা তার দুই ভাইকে।
রাত দশটা ত্রিশে প্রায় মানুষ চলে যায়।এখন যারা আছে সব সায়ন,দিশারির আত্মীয় স্বজন।

রাত এগারোটা ত্রিশে আসে বিদায়ের পালা।সবাই সিঁড়ি ভেঙে নামছে।দিশারি সায়ন পাশাপাশি হাঁটছে।আচমকা সায়নে পা দিশারির শাড়ির সাথে প্যাঁচিয়ে যায়।তখনি ঘটে অঘটন।সায়ন উল্টিয়ে পড়ে বাদলের উপর।আর বাদল সাফায়েতের উপর।সাফায়েত পড়ে দু-তিনটা আন্টির উপর।সবাই চিৎকার করে উঠলো।সাফায়েত-বাদল দুজন দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।দুজন দুজনের শার্টের কলার খামছে ধরে।এতক্ষণের জমে থাকা রাগ ঝাড়ার এই সময়।একজন আরেকজনকে ঘুষি, কামড়, চিমটি যা পারে দিতে থাকে।বিভোর সহ আরো কয়েকজন এগিয়ে যায়।তবুও ওদের থামানো যায়না।একজন আরেকজনকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যে জন্ম জন্মান্তর এই বাঁধন ছুটবেনা মনে হচ্ছে।দু’দিকে থেকে দুজনকে অনেকে মিলে টানছে আলগা করার জন্য।কিন্তু কিছুতেই ছুটছেনা।সাফায়েত,বাদলের পরনের কাপড় ছিড়ে গেছে টানাটানিতে।সায়নের দাদা।নব্বই বছরের বৃদ্ধ।তিনি হাতের লাঠি দিয়ে সাফায়েত আর বাদলের পিঠে আঘাত করেন।তখনি দুজন ছুটে যায়।বিভোর লজ্জায় জায়গা ত্যাগ করে।

বাইরে এসে বাইকের উপর বসে।কিছুক্ষণ পর বাদল আসে।ছেঁড়া শার্ট গায়ে।বিভোরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
— “সরি।”
বিভোর বাদলের সরি অগ্রাহ্য করে বললো,
— “আজতো থাকবে।চলো ফ্ল্যাটে।আব্বা কই?”
— “আসতেছে।”
ফ্ল্যাটে চলে আসে ওরা।বিভোর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় মাত্র শুইছে তখন হন্তদন্ত হয়ে বাদল এসে রুমে ঢুকে।হাতে সুতি কামিজ।বিভোরকে বলে,
— “বিভোর তুই মেয়ে আনোস বাসায়?এইটা কার জামা?ছিঃ তুই এমন।”
বিভোর সচকিত হয়।কিছু বলার আগেই বাদল উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করে।আর বলে,
— “আব্বা।আব্বা।আপনার ব্যাঠায় ঢাকায় এসব কি করে দেখেন।”
বিভোর দ্রুত বিছানা থেকে নামতে গিয়ে কম্বলে হুমড়ি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে।আবার উঠে দাঁড়ায়।পাশের রুমে দৌড়ে আসে।বাদল এরিমধ্যে বিচার দিয়ে দিয়েছে।বিভোর কড়া চোখে বাদলের দিকে তাকায়।যার অর্থ,তুমি বড় ভাই না দুশমন?
সৈয়দ দেলোয়ার রাগী স্বরে বলেন,

— “বিভোর তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম।”
সাধারণত যখন সৈয়দ দেলোয়ার রেগে যান।তখন তুমি করে সম্বোধন করেন।বিভোর কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
— “আব্বা বিশ্বাস করেন।আমার চরিত্র পবিত্র খুব।আপনার ছেলে কখনো খারাপ হতে পারে?বাদল ভাইয়া হলে অন্য কথা।আমি ওমন না আব্বা।”
বাদল হা হয়ে যায়।বলে,
— “আমার চরিত্র ভালোনা বললি?”
বিভোর চোখ টিপে।যার অর্থ, বিয়ের আগে কি কি কু-কাম করছো সব আমি জানি।বাবাকে কি বলবো হে?
বাদল ঢোক গিলে বললো,

— “ওহ মনে পড়ছে।আব্বা বিভোরের অফিসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হইছিল কয়দিন আগে।তখন ও বেঠির অভিনয় করছিল।তাই এসব জামা-কাপড় কিনছে।আমি আরো কি ভাবছি।মাত্রই মনে পড়লো।দেন দেন জামাটা দেন।কি সুন্দর জামা।আমিও কিনবো একটা।আব্বা আপনি ঘুমান।ভাই চল আমরাও ঘুমাই।”
সৈয়দ দেলোয়ার হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন।কি হলো ব্যাপারটা!বাদল ড্রয়িং রুমে এসে বলে,
— “যা বাঁচিয়ে দিলাম।”
এরপর ফিসফিসিয়ে বললো,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩২

— “কিন্তু সত্যি টা কি?গার্লফ্রেন্ডের সাথে লিভ-টুগেদার করিস?”
— “আরে না ভাইয়া।আমাকে ওরকম ভাবো?জামাটা আমারই।ওইযে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।”
জামাটা হাতে নিয়ে বিভোর হাসে।এরপর নবাবি চালে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।বাদল চেঁচিয়ে উঠলো,
— “আমি ঘুমাবো কোথায়।দরজা লাগাইছোস কেন।”
— “ফ্লোরে ঘুমাও।”
— “ফ্লোরে ঠান্ডা।কলিজার টুকরা ভাই দরজা খোল।”

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৩৪