বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৮

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৮
ইলমা বেহরোজ

তখন রাত তিনটে।বিভোরের ঘুম ভেঙ্গেছে দুটোর দিকে।তারপর আর ঘুমোয়নি।সে টাইগার হিল-এ বিশ্ববিখ্যাত সূর্যোদয় ধারা,দিশারি সায়নকে দেখানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
টাইগার হিল দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে।এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট।দীর্ঘদিন ধরেই সূর্যোদয় দেখার জন্য এই স্থানটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য।টাইগার হিল-এ প্রচণ্ড ঠান্ডা ও শীতের মধ্যেও সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য মন কাড়ে সবার।যদিও সূর্যোদয় দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ,টাইগার হিল-এ কখনো মেঘ আবার কখনো কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।তখন দেখা পাওয়া যাওয়া না সূর্যোদয়ের।

রাত তিনটা বাজতেই বিভোর সায়নকে ঠেলে ঘুম থেকে তুলে।সায়ন ঊর্মির সাথে ঝগড়া করে রাত দশটায় বিভোরের রুমে চলে আসে।বাইরে জমাট অন্ধকার,সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা।টাইগার হিল-এ সূর্যোদয় দেখতে গেলে খুব দেরি করে হলেও ভোর চারটেয় বেরিয়ে যেতে হবে।বিভোর প্রথম বার দার্জিলিং এসেই বুঝেছিলো।
সায়ন ঘুম কাতুরে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

——“দূর শালা।ঘুমাতে দে।”
বিভোর ঠাস করে সায়নের গালে থাপ্পড় লাগায়।সায়ন ভ্রু কুঁচকে নিভু নিভু করে চোখ খুলে।বিভোর ধমকে বলে,
——“তোর গার্লফ্রেন্ডের ঘুম ভাঙ্গা যা।”
——“কেন কই যামু?’
বিভোর সায়নকে টেনে তুলে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে বললো,
——“যা বলছি কর।গেলেই দেখতে পাবি।”
বিভোর দিশারির রুমের দরজায় কয়েকবার করাঘাত করতেই দরজা খুলে যায়।দিশারি ঘুম ঘুম চোখে বিভোরকে দেখে হাই তুলতে তুলতে বললো,

——“সকাল কয়টা বাজে?”
বিভোর দিশারিকে রুমে ঠেলে দিয়ে তাড়া দেয়,
——“দ্রুত জ্যাকেট পর।শাল নে।আমরা এখুনি বের হবো।”
দিশারি আৎকে উঠে বললো,
——“সেকী!কই? ”
——-“টাইগার হিলের সূর্যোদয় দেখবিনা?”
দিশারির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।দ্রুত লাগেজের দিকে এগোয়।
বিভোর ধারার রুমের দরজায় বেশ কয়েকবার করাঘাত করেছে।কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা।তাঁর মধ্যে সায়ন,দিশারি চলে আসে।সায়ন এসেই বললো,

——“ঊর্মি কোথাও যাবেনা বলেছে।ঘুমাবে।আমাদের গিয়ে ঘুরে আসতে বলেছে।”
বিভোর কিঞ্চিৎ ভ্রু বাঁকায়।দার্জিলিং কেউ ঘুমাতে আসে?দিশারি বিভোরকে বললো,
——“ধারার ঘুম খুব সহজে আসেনা।কিন্তু একবার ঘুমালে ডেকে তোলা যায়না।”
বিভোর হাল ছাড়েনি করাঘাত করতেই থাকে।ধারাবিহীন সূর্যোদয় উপভোগ তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।মনের মাঝে জেদ জেঁকে বসেছে।সে ধারাকে বিশ্ববিখ্যাত সূর্যোদয়,আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি সূর্যোদয় দেখাবেই।
একসময় ধারা দরজা খুললো।দরজা খুলে দিশারি বিভোরকে দেখেও না দেখার ভান করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।সে ঘুমের অতীব গভীরে ডুবে আছে।বিভোর কয়েকবার ডাকে।যতবার ডাকে ততবার ধারা চাদর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়েশ করে ঘুমানোর ভঙ্গি করে।এদিকে সাড়ে তিনটা হতে আর ছয় মিনিট বাকি।বিভোর দিশারিকে বললো,

——-“ধারার শীতের কাপর নে তুই।আমি ওরে দেখছি।”
কথা শেষ করেই ধারাকে পাঁজাকোলা করে নেয়।দিশারি-সায়নের মুখ হা হয়ে যায়।বিভোর তাঁর সাতাশ বছরের জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে কোলে নিলো।যেখানে সে নিজের কাজিন,ফ্রেন্ডদের সাথে পাশাপাশি বসতেও অস্বস্থি অনুভব করে!বিভোর রাগ নিয়ে ধমক দেয়,
—–“দুইটা এমনে তাকায়া আছস ক্যান?রুমের দরজা লাগিয়ে আয়।”
হোটেল বয়কে ডেকে গেট খুলে ওরা বেরিয়ে পড়ে।ধারা বিভোরের কোলে ঘুমাচ্ছে।তবে,ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাসটা অনুভব করছে ধারা।খুব দ্রুত ঘুম ভেঙ্গে যাবে।চারিদিকে রাতের শেষ অন্ধকারের হাতছানি।

রাস্তায় নেমে ওরা অবাক হয়।এতো রাতে চারদিকের কোলাহল আর কলকাকলি দেখে।সেই সাথে হাজারো জীপের বহর দেখে।আলোয় আলোয় আলোকিত পুরো রাস্তা।আগে-পিছে, দূরে যতদূর চোখ যায়, আলো আর আলো! ঝলমলে চারিদিক দেখে মন খুশিতে নেচে উঠলো।ধারার ঘুম ভেঙ্গে যায়।চোখ খুলেই হালকা আলোয় বিভোরের মুখটা দেখতে পায়।পিঠ জুড়ে বিভোরের হাত বুঝতে সময় লাগেনি।ধারার সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হয়ে কেঁপে উঠে।ধারার শরীরের কাঁপুনি বিভোর টের পায়।সামনে থেকে চোখ সরিয়ে ধারার দিকে তাকায়।ধারা তাকিয়ে আছে তাঁরই উপর।বিভোর দ্রুত নামিয়ে দেয় ধারাকে।তারপর সামনে এগোয় জিপ নিতে।দিশারি ধারাকে হেসে বললো,

——-“ঘুম থেকে উঠতেছিলি না তাই বিভোর কোলে করে নিয়ে আসছে।”
দিশারি ফিক করে হেসে উঠে।ধারা বিস্মিত হয়।দিশারি বিভোরকে ভালবাসে।অথচ,অন্য একটা মেয়েকে কোলে নিয়েছে সেটা নিজের চোখে দেখেও এমন হেসে কথা বলছে কীভাবে?দেখেও মনে হচ্ছে না মনে চাপা কষ্ট হচ্ছে দিশারির।খুবই প্রানবন্ত। সত্যি কি ভালবাসে বিভোরকে?নাকি ভালোলাগা?কে জানে!ধারা নিজেই ভালবাসার সংজ্ঞা জানেনা।
বিভোর জিপ নিয়ে আসে।ওরা উঠে বসে।জিপ অন্ধকার-কুয়াশা-ঠাণ্ডা ভেদ করে ছুটে চললো টাইগার হিল-এর উদ্দেশ্যে।ড্রাইভার জানালো, অনেকেই নাকি তিনটে বাজতে না বাজতে গাড়ি নিয়ে টাইগার হিল-এর দিকে ছুট লাগিয়েছে।ধারা অবাক কন্ঠে বললো,

——“বাবাহ এতো জনপ্রিয় সূর্যোদয়।”
বিভোর মৃদু হেসে বললো,
——“অভিজ্ঞদের মত হচ্ছে,আগ্রায় গিয়ে তাজমহল না-দেখা যেমন অপরাধ, দার্জিলিং এসে টাইগার হিল-এ সূর্যোদয় না দেখাও ততখানি অপরাধ।”
দিশারি ফোড়ন কাটে,
——“হু তাই আমরা অপরাধ থেকে বাঁচতে হাড় হিম করা ভোররাতের শীতকে কাঁপতে থাকা বুড়ো আঙুল কোনোরকমে দেখিয়ে ছুটে চলছি টাইগার হিল-এর দিকে।”

ওরা টাইগির হিল-এ পৌঁছে দেখে সারি সারি গাড়ি। নির্দিষ্ট পয়েন্টের অনেকটা আগে ওদের গাড়ি পার্ক করা হলো।গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত রওনা হলো উঁচু স্থানটির দিকে।যেখান থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়।বিভোর ধারার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।সায়ন দিশারির হাত।
উঁচু স্থানটিতে গিয়ে দেখে জায়গা নেই,নেই অবস্থা। এই ভিড়ের মধ্যে ধারা-বিভোর পূর্ব দিকের কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়।আর দিশারি, সায়ন উত্তর দিকে।দর্শকদের বেশিরভাগ বাঙালি এবং তারা ক্যামেরা-মোবাইল নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী একটা ভাব ফুটিয়ে তুলছে।সূর্যোদয় তো নয়,যেন বাঘ আসবে!
বিভোরকে ঘেঁষে ধারা দাঁড়ায়।তার পরনে ফতুয়া আর ট্রাউজারই রয়েছে।গাড়িতে থাকাকালে দিশারির থেকে শাল নিয়ে পরেছে।জ্যাকেট নাকি সে খুঁজে পায়নি।এখন শীতে কাঁপতে হচ্ছে।বিভোর ধারাকে বললো,

——“আমার শাল ভালো লাগে খুব।আপনি চাইলে আমার জ্যাকেট নিতে পারেন।আর আমায় শাল দিতে পারেন।”
অথচ, বিভোরের শাল একদমই পছন্দ না।প্যারা মনে হয়।তবে এখন কেনো মিথ্যে বললো সে জানেনা।ধারা বললো,
——“না না ঠিকাছে।”

ধারা শীতের প্রকোপে কাতরস্বরে “হুহু” করতে থাকে।বিভোর আর কিছু না বলে,দ্রুত জ্যাকেট খুলে ধারাকে পরিয়ে দেয়।শাল টেনে নেয়।আকস্মিক ঘটনায় ধারা হতবিহ্বল। কিন্তু কিচ্ছুটি বললো না।অদ্ভুত ভালো লাগা অনুভূতি হচ্ছে।
আকাশের আলো ফুটি-ফুটি অবস্থা দেখে উত্তেজনা শুরু হয়ে গেল।মোবাইল-ক্যামেরা নিয়ে ঠ্যালা-ধাক্কা দিয়ে অনেকেই সামনে যাবার চেষ্টা কছে।সূর্যোদয়ে সময় চলে আসে।সূর্যের আভাস দেখা দেওয়া মাত্র প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও একটা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়লো। একটা বিশৃঙ্খলাও তৈরি হলো।কে কাকে টপকাবে, কে আগে ছবি তুলবে,কে আগে শোভার চোটে আকুল হবে।এই তাড়নায় ন্যূনতম সভ্যতা এবং সৌজন্য ভুলে গিয়ে একটা চূড়ান্ত পড়ি-কি-মরি পরিস্থিতি।সূর্যর আভা যখন কাঞ্চজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করল তখনই উপস্থিত জনতা একসঙ্গে হো-ও-ও-ও করে উঠে।সিটির তীক্ষ্ণ আওয়াজে ভরে গেল ভোরের পাহাড়।সূর্য উঠছে।

সূর্যোদয়ের মুহূর্তে সবাই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।সে এক মুগ্ধকর দৃশ্য।যার বর্ণনা দেওয়ার মতো ক্ষমতা কারোর নেই।এমন স্পষ্ট সূর্যোদয় দেখা কপালও বটে। সূর্য একটু একটু করে উঠতে গিয়ে মনে হল যেন হঠাৎ করে লাফ দিয়ে পরিপূর্ণতা পেল।ঠিক যেন একটা আগুনের বল, কাঁপছিল এলোমেলো ভাবে আর মনে হচ্ছিল যেন কেউ খেলছে আগুনের বল নিয়ে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন এটাকে গোল করে আকার দেবার চেষ্টা করছে। সেই আলোর রশ্মির কোমল রূপের কোনো তুলনা নেই।
ধারা বিভোরের এক হাতের বাহু খামচে ধরে খুশিতে।সে সূর্যোদয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ঠোঁটে চোখে হাসি।খুশিতে কাঁপছে সে।বিড়বিড় করছে,

——-“এতো সুন্দর!এতো সুন্দর!”
বিভোর হাসে।সূর্যোদয়ের সৌন্দর্যের ছিটা যেনো ধারার গায়ে পড়েছে।কি মোহনীয়,মায়াবী মুখ।প্রেমে পড়ে যাচ্ছে কি সে?ভালোলাগাটা কি ভালবাসার রূপ নিচ্ছে?আর ধারার বয়ফ্রেন্ড সে কোথায়?
সূর্যের আলো কাঞ্চজঙ্ঘার চূড়াতে পড়তেই তা লাল আভায় ভরে গেল।আস্তে আস্তে সাদা বরফের পাহাড় পরিণত হলো সোনালী পাহাড়ে।রং যেন গলে গলে পড়ছে।পূর্ব আকাশে উঁকি দেওয়া সূর্য তখন কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে।শ্বেতশুভ্র পর্বতের এ রূপের সাক্ষী হলো ধারা,বিভোর আরো শত শত মানুষের জোড়া চোখ।তখন চারপাশে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক। সবাই মূহুর্ত বন্দি করার চেষ্টায়।
পাহাড়ের চূড়ায় উদীয়মান সূর্যকে প্রণাম জানাতে শুরু করেন অসংখ্য সূর্য পূজারি।অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে টাইগার হিল থেকে মাত্র ৩০ রুপিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা, হিমালয়, সিকিম, নেপাল সীমান্ত ও অন্যান্য পাহাড় দেখতে।
এতো হৈ হৈ এর মধ্যে পাহাড়ের উত্তর কোণায় চোখ পড়লো ধারা এবং বিভোরের।সেদিকটায় কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।ধারা শুষ্ক মুখে বললো,

——-“পাহাড়ের এক কিনারে তুমুল হই-হট্টগোল আর সূর্য দেখে ফেলার উল্লাস।অন্য কিনারটা শান্ত, একলা।তাইনা বিভোর সাহেব?”
বিভোর মাথা নাড়ায়।ছোট করে জবাব দেয়,
——“হুম।”
তাঁরা দুজন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে, অনেক দূরের ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রামে পা টিপে টিপে ঢুকছে সূর্যের আলো।কয়েকটা কুঁড়ে ঘর।কিছু ছোটখাটো ক্ষেত।এটুকুই অস্তিত্ব গ্রামটার।
গ্রামটায় হয়তো শ’খানেক কি তারও কম বাসিন্দার জমায়েত।কোনো তাড়া নেই,কোনও প্রতিযোগিতা নেই,শুধু নীরবে,নিশ্চিন্তে থাকাটুকু আছে।
ধারা আক্ষেপ করে বললো,

—–“গ্রামটাতেও সূর্যোদয় হচ্ছে।কিন্তু সেই সূর্যোদয়ের কোনও জনপ্রিয়তা নেই।খ্যাতি নেই, উদযাপন নেই।”
বিভোর একদৃষ্টে গ্রামটা দেখছে।সে তাল মেলায়,
——“হুম এখানে যে কেউ চাইলেই দেখতে পারে ছোট্ট সেই গ্রামের সূর্যোদয়।এখানে কোনো উদ্যোগ-আয়োজন নেই। কোনও পূর্ব-পরিকল্পনা। কোনও অপেক্ষা প্রয়োজন নেই।”
ধারা বললো,

——“আচ্ছা কখনো কি কোনো ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো ছুটেও যায়নি তার দিকে?কী নাম গ্রামটার?”
বিভোর জানায়,সে জানেনা। কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনো।
কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যালোকের সোনালী আভার পাশাপাশি একটা অনামী পাহাড়ি গ্রামের শরীরে ভোর হয়ে যাওয়ার সাক্ষী হলো ওরা দুজন।ধারা, বিভোর দুজনের মনে তৃপ্তির সুখ।খ্যাতি আর আলোর ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়ানো এই গ্রামটার কাছেই ভোররাতে ঘুম থেকে ওঠার সার্থকতা দেখতে পাচ্ছে তাঁরা।
কিছুক্ষণ পর ধারা ঘোর লাগা গলায় বললো,
——“ধন্যবাদ আপনাকে।আপনার জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটা দিন পেলাম।শ্রেষ্ঠতম সৌন্দর্য দেখলাম।”
জবাবে বিভোর মুচকি হাসলো।

টাইগার হিলে ভোরবেলা অনেকে ফ্লাস্কে করে গরম গরম ব্ল্যাক কফি বিক্রি করে।বেশিরভাগ নারী বিক্রেতা।কনকনে শীতে কফির চুমুকে মন জুড়িয়ে যায়।সেই স্বাদ নিলো ওরা চারজন।তারপর আরও কিছুক্ষণ দিশারি,ধারা,সায়নের ফটোশুটে সাহায্য করে বিভোর।নিজে ছবি তুলেনি একটাও।ধারার অস্বস্থি হচ্ছিলো ছবি তুলতে।কিন্তু দিশারির জোরাজুরিতে বাধ্য হয়।ক্যামেরায় ছবি তুলে দেওয়া সময় বিভোরের চোখ বার বার আটকে যাচ্ছিলো ধারাতে!
নামার সময় দেখা মিললো পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে প্রার্থনা লেখা বর্ণময় কাপড়ের পতাকা। দার্জিলিংয়ের আরও একটা চেনা বৈশিষ্ট্য এটি। মূলত বৌদ্ধধর্মের এই প্রেয়ার ফ্ল্যাগ পাহাড়ি এলাকার অন্যান্য ধর্মস্থানেও দেখা যায়৷
দিশারি, ধারা আগে আগে হাঁটে। সায়ন বিভোরকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৭

——“ব্যাপারটা কি মিয়া?তুমি কি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো?”
বিভোর হেসে সায়নকে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
——“শালা বেশি বুঝোস!”
সায়ন একটু ভাব নিয়ে বললো,
——“মামা অনেক মেরেছো আমায়।এইবার তোমার জুলিয়েটকে বলে দিবো তুমি বিবাহিত।তোমার বউ পালিয়েছে কারণ তোমার পুরুষত্বে সমস্যা।তারপর জুলিয়েট তোমাকে পাত্তা দিবেনা।প্রতিশোধ!বুঝছো মামা? প্রতিশোধ!”
সায়নের কথা শুনে বিভোর ডাকাতের মতো হো হো করে হেসে উঠলো।

বৃষ্টি হয়ে নামো পর্ব ৯