ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৪

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৪
সাইয়্যারা খান

আদ্রিয়ানের একদম বুকে মিশে ঘুমাচ্ছে রোদ। পাশেই মিশি শুয়ে শুয়ে হাতে থাকা পাজেলটা সল্ভ করতে ব্যাস্ত। মাগরিবের আজান এখনও পরে নি তবে সময়টা লাল আভায় রাঙানো। অফিসে যাচ্ছে না আদ্রিয়ান আজ সপ্তাহ খানিক হলো। রোদকে ছাড়া একচুলও নড়ছে না বিগত দিনগুলোতে। রোদ এখন পুরোপুরি আড়াই মাসের প্রেগন্যান্ট। এইটা ওইটা লেগেই থাকে মেয়েটার।

এই ভালো থাকে তো হুট করে শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান এজন্য একদম লেগে থাকে রোদের সাথে। বউ অসুস্থ সেখানে আদ্রিয়ান কি আর অফিসে যেতে পারে? বিগত দিনগুলো ভালো যায় নি। রোদের বমি হচ্ছে অতিরিক্ত। ঐ দিন বমির সাথে লাল লাল তরলও দেখা দিয়েছিলো। শক্ত আদ্রিয়ান আবার বউ নিয়ে ভীষণ ভীতু তাই তো সেই লাল তরল দেখেই চিৎকার করে বাড়ী এক করেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওর মা, সাবা এমনকি আরিয়ানও কত বললো, এটা স্বাভাবিক কিন্তু আদ্রিয়ান বুঝি শুনে? সেই রাতেই ডক্টরকে কল করে। ডক্টর মিহা শুধু হেসে বলেছিলেন,”ইটস নরমাল মি.জোহান। অতিরিক্ত বমি করায় গলা ছিলে এমন হয়েছে”। একথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়েছিলো আদ্রিয়ান। রোদ আপাতত মেডিক্যাল যেতে পারছে না। অসুস্থতার কারণে একদমই সম্ভব হচ্ছে না সাথে ফুল বেড রেস্ট। হাজার প্রশ্ন রোদের মনে।

জিজ্ঞেস ও করেছে শতবার কিন্তু সন্তুষ্টি জনক উত্তর পায় নি। মাথা ঘুরিয়ে এই পর্যন্ত বিগত দিনে পরেছে কয়েকবার। একবার তো বাথরুমও পরলো। সে কি হৈচৈ করে করে উঠলো আদ্রিয়ান। ইদানীং তো রোদই ভয় পায়। এই বুঝি ওর কিছু হলে আদ্রিয়ানের ক্ষতি হয়ে যায়। ডক্টর আদ্রিয়ানকে কেন প্রকার টেনশন নিতে বারণ করেছেন। আদ্রিয়ান সবাই’কে কিভাবে বুঝাবে এই চিন্তা যে সহজে কমবার নয়।
রোদ একটু নড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান আলতো হাতে রোদের মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে ছোট্ট একটা চুমু খেল কপালে। আদুরে গলায় ডাকলো,

— সোনা?
— উমম।
— উঠবে এখন? একটু খেতে হবে না?
রোদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো। আজ দুপুরে খাওয়ার পরপরই বমি হয়েছে অনেক। পরে আর খাওয়া হয় নি তার আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ঘুমু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো রোদ,
— মিশান এসেছে কোচিং থেকে?
— না। আজান হয় নি এখনও। উঠাই? উঠবে।

চোখ খুললো রোদ। হাত বাড়িয়ে আদ্রিয়ানের মুখটা ছুঁয়ে দিলো। আদ্রিয়ান হাসলো। রোদকে ধরে আস্তে করে উঠে বসলো। পাশেই মিশির সাথে খেলতে ব্যাস্ত হলো রোদ। আদ্রিয়ান গেলো খাবার আনতে। খাবার নিয়ে রুমে ডুকতেই কানে এলো রোদের কন্ঠ। ফোনে কারো সাথে কথা কথা বলছে। আদ্রিয়ান পাশে খাবারটা রেখে মিশিকে কোলে তুলে নিলো। মিশি বাবা’কে নিজের হাতের সল্ভ করা পাজেলটা দেখালো। আদ্রিয়ান মেয়েকে আদর করে বললো,

— মা। ভাই এসেছে বোধহয়। দেখে আসো তো।
কোল থেকে নামাতেই মিশি দৌড়ে বেরিয়ে গেল। পেছন থেকে রোদ কানে ফোন ধরেই জোরে আওয়াজ দিলো,
— মিশি? মাম্মা কতবার বলেছি দৌড়ে যেতে না?
মিশি শুনলো কি না আল্লাহ জানে। রোদ আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটলো। আদ্রিয়ান ভাত হাতে পাশে বসতেই রোদ কিছুটা বিরক্ত কন্ঠে বললো,

— আমি বুঝি না আম্মু রোজ কল দিয়ে কেন কাঁদে? আরে ভাই আমি কি একমাত্র দুনিয়ায় যে কি না প্রেগন্যান্ট? সাবা আপু,জাইফা আপু এরা ও তো ছিলো। একটু অসুস্থ তো সবাই হয় তাই বলে এত রিএক্ট করার কি আছে? ভাই তো পাগল হয়ে আছে। আব্বু সহ যোগ দিয়েছে সেই পাগলামিতে। চাচা-চাচি ও থেমে নেই। রোজ রোজ এক প্যাঁচাল। আ’ম জাস্ট ফেড আপ।
আদ্রিয়ান রোদের মুখে এক লোকমা তুলে দিয়ে বললো,

— রিএক্ট করে কারণ তুমি ছোট।
— আ’ম নাইটিন ইয়ার্স ওলড এন্ড মাদার অফ টু চিলড্রেনস।
মুখের টুকু শেষ হতেই বলে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান হাসলো। মুখে হাসি হলেও বুকে আছে চাপা কষ্ট। রোদের মুখে আবারও খাবার তুলে দিলো। খাওয়া শেষ এমন সময় মিশান এলো। হাতে কিছুর বক্স। রোদ চোরা চোখে আদ্রিয়ানকে দেখে নিলো একবার। মিশানকে ইশারা করতেই মিশান পেছনে লুকিয়ে ফেললো বক্সটা। আদ্রিয়ান প্লেট হাতে বের হতেই রোদ মুখে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বললো,

— দাও।
মিশান বক্সটা একেবারে খুলে মা’য়ের কাছে দিলো। টিস্যু এগিয়ে এনে মা’য়ের কাছে দিলো। রোদ বক্সটা খুলেই টুপ করে একটা মোমস মুখে ডুকিয়ে নিলো। ভীষণ মজা। আজ মাস খানিক সময় পর খেলো রোদ। মন চাইছিলো অনেক খেতে কিন্তু আদ্রিয়ান দিলে তো? ছেলেকে দিয়ে লুকিয়ে আনিয়েছে রোদ। মিশান রোদের খুশি মুখটা দেখে নিজেও খুশি। মা-বাবা খুশি মানেই মিশান খুশি। দু’জনের একজনের ও কিছু হলে ছেলেটা চুপ করে যায়। সেদিন রোদ আর আদ্রিয়ান যখন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো সবচেয়ে বেশি আঘাতটা হয়তো মিশানই পেয়েছিলো। পুরো তিনদিন কারো সাথে কথা বলে নি। আদ্রিয়ান আর রোদ মিলে কত কষ্ট কথা বলালো।

মিশান এবার নিজ হাতে বাকিটা রোদকে খাওয়ালো। তিনটা খাওয়ার পর আর খেতে পারলো না রোদ। মাত্র তো ভাত খেলো। বাকিগুলো মিশানকে খায়িয়ে দিয়ে বললো,
— তোমার বাবা যাতে টের না পায় আব্বু। নাহলে আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে।
— বারোটা তোমার এখনই বাজবে।
হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে ভরকালো রোদ, মিশান। আদ্রিয়ান দেখে ফেলেছে। ঢোক গিললো রোদ। মিশানের হাতটা চেপে ধরলো। মিশান ও ভয় পেয়েছে। আদ্রিয়ান রোদকে শুধু বললো,

— একবার শুধু পেট ব্যাথা উঠুক। একদম ছেড়ে চলে যাব এইবার। এত জ্বালা সহ্য হচ্ছে না আর।
রোদের বুক মোচড়াচ্ছে। চোখ জমেছে। মিশানকে নিজের সাথে আসতে বলতেই মিশান মায়ের হাত ধরেই বসে রইলো। রোদের হাতটা মুছে দিতেই আদ্রিয়ান এবার গম্ভীর সহ রাগী কন্ঠে কিছুটা ধমকে উঠলো মিশানকে। রোদ আস্তে করে বললো,

— মিশান যাও। মা ঠিক আছি।
আবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ওর দোষ নেই। আমি জোর করে আনিয়েছি।
মিশান উঠে বের হলো আদ্রিয়ানের পিছু পিছু। ভাবলো আজ বকা একটাও মাটিতে পরবে না। কিন্তু হলো উল্টো টা। আদ্রিয়ান ভালো করে ছেলেকে বুঝালো ওর মা’য়ের জন্য আপাতত কতটা ক্ষতিকর বাইরের খাবার। যদিও ডক্টর বলেছে এই সময়তে ক্রেভিং থাকবেই।

রাতুল এখন কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে আছে। দিশা কোনমতে সংসার টানছে। এই যে রাতুল বাসায় আসলেই হাতের ব্যাগ, ফাইল সব নিজে গুছায়। গরমে ঘেমে থাকে বলে ঠান্ডা শরবত বানিয়ে রাখে। প্রয়োজনীয় সব গুছায়। রাতের সঙ্গী হয়। নীরব বিকেলের সাথী হয়। রাতুল এখন ওর মায়ের সাথে কথা কমিয়ে দিয়েছে। কেন জানি ওর মন টানে না। হু হা বলে কথা কাটিয়ে দেয়। ভদ্রমহিলা আপাতত কিছুটা অসুস্থ। রান্নার কাজ দিশাই করছে।

বাকি কাজের জন্য ছুটা বুয়া আছে। সকালে শশুরের চা’য়ের দায়িত্বটা ও দিশার। নিজের কষ্ট ভুলানোর জন্য সংসার নামক জেলখানায় নিজেকে বন্দি করে নিয়েছে ও। আগে তো রাতুল কিছুটা এফোর্ট দিচ্ছিলো স্বাভাবিক হতে এখন সব দিশাই করছে। এককথায় জোর করে সংসার করা যাকে বলে আর কি। ইদানীং আবার রাতুলের প্রতি কিছুটা অনুভূতি জমেছে ওর। স্বাভাবিক। একসাথে থাকলে তাও যদি হয় এতটা কাছাকাছি। এতটা পবিত্র বন্ধনে থাকা। সেখানে অনুভূতি থাকাট স্বাভাবিক। সমস্যা হলো এই অনুভূতি গুলো শুধু মাত্র আবেগের। মায়া হয় দিশার। ছেলেটা সংসার করছে দিশার সাথে অথচ দিশার ই উন্মুক্ত বক্ষে মাথা গুজে গুমড়ে কাঁদে ভালোবাসার জন্য।

রাদ আর রাতুল বসে আছে এলাকার মোড়ে থাকা চায়ের দোকানটায়। বৃষ্টি আসবে এমন একটা ভাব। ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে চারদিকে। রাদ চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললো,
— সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
রাতুল উদাস ভাঙ্গিতে চায়ে চুমুক বসালো। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রাদ। কিছুটা বন্ধুত্বের হক নিয়েই বললো,

— দিশা’কে বিয়ে করেছিস। এখন এসবের কোন মানে হয় না।
— দিশা’কে বিয়ে করার আগে রোদ নামক ভালোবাসাটাকে বুকেই দাফন করেছিলাম আমি। আমার না পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর একটা স্মৃতি ও। তবুও সব বাদ দিয়ে ভুলে আমি দিশা’কে বিয়ে করেছি। এখন যখন জানলাম যেই কারণটাকে ঘিরে আমি আজ রোদহীন সেই কারণের কোন অস্তিত্ব ই নেই। এতদিন নাহয় মন শান্ত রেখেছি।এখন?তুই ই বল আমার কেমন লাগে? আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা কর।

— সব ঠিক। সব বুঝলাম। আল্লাহ তোর ভাগ্যে দিশাকেই রেখেছে। ও সুখে আছে রাতুল। নিজের সংসারটা গুছা এবার। দিশাকে কাছে টেনেই দেখ একবার। হয়তো তোর সবটুকু সুখ ওর মধ্যেই আছে। জুটি তো আল্লাহ সৃষ্টি করে তাই না? তাহলে? তুই তো আর টিনএজার না। যথেষ্ট বুঝদার। বিয়ে করা বউয়ের সামনে আহাজারি করিস না পাওয়া ভালোবাসার জন্য? এটা একটা মেয়ে কিভাবে মেনে নিবে? ধর যদি দিশা ও না থাকে তখন পারবি থাকতে?
রাতুল চুপ রইলো। রাদের প্রশ্নের উত্তর ওর জানা নেই। নীরবতাই শ্রেয় এখন। তবে কিছু একটা তো বুকে লেগেছে যখন ভেবেছে দিশাও থাকবে না৷ এতদিন একসাথে ছিলো। মায়া বা আবেগ যেটাই হোক কিছু একটা তো আছে।

— আজকে বাইরে চলি প্লিজ।
রোদ বায়না ধরলো। মাসের উপরে হয়ে আসছে এই রুম থেকে বের হতে দিচ্ছে না আদ্রিয়ান। রোদের সর্বোচ্চ দৌড় ওই বারান্দা পর্যন্ত তাও শুধু বিকেলে একবার আধ ঘন্টার জন্যে আদ্রিয়ান নিয়ে যায়। তাও আবার নিয়ে বসিয়ে রাখে। রোদের আম্মু-আব্বু সহ বাকিরাও এসে এসে রুমে দেখে যায়। রোদ বুঝে না ও কি রুগী? এমন ভাবে ট্রিট করার কি আছে? আদ্রিয়ান রোদের ঠিক পেছনে গিয়ে বসলো। চুলগুলো আঁচড়ে বাঁধতে বাঁধতে বললো,

— আর কয়টা দিনই তো সোনা। এরপর তুমি, আমি, বাবু আর ওর ভাই-বোন’রা মিলে ঘুরব।
রোদ ঠোঁট ফুলিয়ে বসে পেটে হাত রেখে আদর করে বললো,
— দেখলি বাবু তোর আব্বু কেমন। তোর মা’কে একটু ভালোবাসে না। কি এমন চাইলাম? একটু বাইরে যেতেই তো।
আদ্রিয়ান ঠোঁট টিপে হাসছে। রোদ তা দেখে গালটাকে আরেকটু ফুলালো।

রাত তখন ১২ টা বাজে নি।আরেকটু সময় বাকি। রোদকে আদ্রিয়ান বুকে নিয়ে ঘুম পারিয়েছে অথচ দুষ্ট রোদ আজ ঘুমায় নি। আজ রাতটা নিশ্চয়ই ঘুমানোর রাত না। রোদ খুবই এক্সাইটেড কিন্তু আফসোস আশানুরূপ কিছুই করতে পারে নি ও। তবুও বেডে বসে যতটুকু করা যায় ততটুকু করেছে ও। আদ্রিয়ান আপাতত রুমে নেই। কোথায় গেলো উঠে পাঁচ মিনিট আগেই। রোদ ডানপাশের ড্রয়ার হাতরে কিছু বের করলো। এইত সময় হয়ে আসছে। ১২ টা বেজে গেলো বলে। তখনই রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। রোদের পাশে বসতেই রোদ ওকে ঝাপটে ধরলো। রোদ মুখ খুলার আগেই আদ্রিয়ান অতি আদর মিশিয়ে মুগ্ধ হওয়া কন্ঠে শুধালো,

— শুভ প্রথম বিবাহ বার্ষিকি বউ।
রোদের ঠোঁট জুড়ে তখন হাসি। মুখে নিজেও বললো,
— হ্যাপি এনিভার্সিরি ভালোবাসা।
আদ্রিয়ান রোদের মাথায় চুমু খেল। হাতে থাকা ফুলের তোরাটা এগিয়ে দিয়ে চুমু খেল হাতের তালুতে। রোদ নিজেও একটা গোলাপ দিয়ে আদ্রিয়ানের কাছাকাছি এলো। দূরত্ব ঘুচালো। আদ্রিয়ান দুই হাতে রোদের গাল চেপে ধরতেই রোদ দু’জনের ওষ্ঠাধর মিলিত করে দিলো। ভালোবাসায় মত্ত হলো দু’জন।

বেশ সময় নিয়ে বিনিময় ঘটলো প্রেমসুধার। আদ্রিয়ান ছাড়লো। রোদ হাঁপাচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদকে কিছু বলার আগেই রোদ হাত রাখলো আদ্রিয়ানের শার্টের বোতামে। বুকের উপরের দিকের দুটো বোতাম খুলতেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ফেললো। অসন্তুষ্ট হলো রোদ। আবারও চেষ্টা চালালো। ফলাফল বৃথা। আদ্রিয়ান বাঁধা দিচ্ছে। কিন্তু কেন? রোদ জোর করে সবগুলো বোতাম খুলেই কামড়ে ধরলো বুকে। আদ্রিয়ান শুধু অল্প ব্যাথায়”আহ্” উচ্চারণ করলো। রোদ ছেড়ে চুমু খেতে লাগলো সেই বুকে। আদ্রিয়ান বেসামাল হচ্ছে। রোদকে থামানো প্রয়োজন নাহলে অঘটন ঘটে যাবে।এই মেয়ে ওকে পাগল করে ছাড়বে।

আদ্রিয়ান প্রথমে আপোষে চেষ্টা করলেও রোদ মানলো না। না পেরে আদ্রিয়ান জোর করে নিজের থেকে ছাড়ালো। আদ্রিয়ান রোদকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— সোনা আজ না।
— কিন্তু কেন?
— আজ না প্লিজ।
— আমার এখনই আদর চাই।
রোদের জেদী কন্ঠ। আদ্রিয়ান রোদের মাথায় হাত রেখে বুঝানোর স্বরে বললো,

— এই সময়ে এসব ঠিক না সোনা। বেবির ক্ষতি হতে পারে।
ব্যাস এক কথায় শান্ত রোদ। হাসলো আদ্রিয়ান। ওর বউটা এত আদুরে কেন?
রোদ আদ্রিয়ানের কোলে বসে রইলো। মনে করতে লাগলো বিগতদিন গুলোর কথা। কিভাবে একটা বছর একসাথে কাটিয়ে দিলো কখনো টের পেল না। কিছু ভালোবাসা, কিছু দুষ্টামী, কিছু অভিমান, কিছু আভিযোগ ঘেরা ছিলো সময়গুলো। সর্বোপরি আদ্রিয়ান পেয়েছে রোদকে আর রোদ পেয়েছে আদ্রিয়ান সহ দুটি সন্তান। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো রোদ। ভরকে গেলে আদ্রিয়ান। বাকিরা এতক্ষণ ছিলো দরজার বাইরে সারপ্রাইজ দিবে বলে। তারাও দৌড়ে ডুকলো।

হসপিটাল জুড়ে পায়চারি করছে আদ্রিয়ান। চন্নি নেই ওর। বাকিরাও টেনশনে। রোদ আপাতত চেকআপে আছে। কিছু টেস্ট করতে হবে। তাই করা হচ্ছে। ড.মিহা খুবই চিন্তিত। আদ্রিয়ান সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ড.মিহা বলে উঠলো,
— আলট্রা করি আগে।
সকলেই চিন্তিত। রোদের পরিবারের সবাই ও হসপিটালে। এত রাতে যেন একটা হইচই পরলো পুরো হসপিটালে। রাতুল আর দিশাও এখানে। এত মানুষ এলাউড না হলেও চারজন ডক্টরের পরিচিত হওয়াতে কেউ কিছু বললো না।

আলট্রা রিপোর্টটা হাতে নিয়ে ধপ করে বসে পরলো আদ্রিয়ান। এটাই কি হওয়ার ছিলো? কিছুক্ষণ আগেও না রোদ কত কথা বললো অনাগত সন্তান ঘিরে। কত আশা, কত স্বপ্ন সবই কি নিছক স্বপ্ন ছিলো? আচ্ছা এটা কি মিথ্যা হওয়া যায় না? খুব কি ক্ষতি হতো আদ্রিয়ান একটু খুশি হলে? ড.মিহা মাত্রই যেটা বললো সেটা শুনার পর থেকেই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আদ্রিয়ান। কারো সাথে কোন প্রকার কথা বলে নি।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৩

রাতুল হতভম্ব হয়ে আছে। কি হয়ে যাচ্ছে এসব? আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া এখন সবার রোদটা ঠিক থাকুক শুধু। সন্তানের শোকে যে আগে মৃত্যু ঘটে মা’য়ের। বিগত আড়াই মাসে এই প্রাণটাকে ঘিরেই তো কত কথা।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৪৫