যদি তুমি বলো পর্ব ২৭

যদি তুমি বলো পর্ব ২৭
আফনান লারা

ইশানের মা বসে বসে খাতায় কিছু লিস্ট লিখছিলেন।জাপানের কিছু প্রোডাক্ট তার লাগবে।ইশান চলে যাবে শুনে ওগুলোর লিস্ট করছেন তাকে দেবেন বলে।তিথি বেশ অনেকক্ষণ ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওনাকে দেখছিল। কি দিয়ে কথাটা শুরু করবে তাই ভাবছে।ইশানের চেয়ে ইশানের মাকে তার বেশি ভয় হয়।অনেক ভেবেচিন্তে সে ঠিক করে কথাটা সে তামিয়াকে দিয়ে পেশ করাবে।তাই দরজা থেকে ভেতরে না গিয়েই সে চলে যায় সোজা তামিয়ার রুমে।

তামিয়া শুয়ে শুয়ে তার হবু বর আকাশের সাথে ফোনে কথা বলছিল।তিথি দরজায় নক করে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে।
‘আসবো আপু?’
‘কে তিথি?আসো!’
তামিয়া কল কেটে উঠে বসে।তিথি ভেতরে এসে চুপিচুপি দরজাটা লাগিয়ে তামিয়ার পাশে বসে এরপর ওর হাতদুটো ধরে বলে,’একটা হেল্প করবে আপু?’
‘কি?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘তোমার আম্মুকে বলবে,, ইশান আমাকেও তার সাথে করে জাপান নিয়ে যাচ্ছে’
‘কি বলো!এটা তো দারুণ ব্যাপার।মা তো জানবেই,এখন জানানোর কি আছে?’
‘এখন জানাও,তাহলে উনি শুনলে আমাকে আর জাপান যেতে হবেনা’
‘এটা কেমন কথা?তুমি জাপান যেতে চাও না কেন?ওহ আচ্ছা বুঝলাম।ভাইকে ভয় পাচ্ছো?তোমার ধারণা ওখানে গেলে ভাই তোমাকে আরও জ্বালাতন করবে?হাহাহাহাহা!!হাসালে!বরং ওখানে গেলে তোমাদের মাঝখানের দূরত্বটা অনেক কমে যাবে।তুমি বুদ্ধি দিয়ে ভাবো।এটা তোমার সংসার জীবনের জন্য অনেক ভাল একটা আইডিয়া।তোমার তো দৌড়ে দৌড়ে যাওয়া উচিত।তা না করে তুমি কিনা ক্যানসেল করার পিছনে ছুটছো?’

তিথি ঢোক গিলে বললো,’তুমি বুঝতেছো না আপু।আমার সত্যিই যেতে ইচ্ছে করছেনা।আমার অনেক ভয় করছে।তুমি তোমার ভাইকে চিনোনা।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যখন চাইতেছো আমি মাকে গিয়ে কথাটা বলি।তবে তাই হবে’

এটা বলে তামিয়া চলে গেলো মাকে বলার জন্য।তিথিও পিছন পিছন গেছে।বাহিরে দাঁড়িয়ে ওনার ভাবগতি দেখবে।
তামিয়া মায়ের কাছে যেতেই তিনি বললেন তার কিছু লাগবে কিনা বলতে,লিস্টে এড করে দিবেন।তামিয়া তখন মায়ের হাত থেকে লিস্ট টা সরিয়ে বলে,’মা তুমি কি জানো ইশান তিথিকেও নিয়ে যাচ্ছে?’

‘মশকরা করছিস?’
‘না তো।সত্যিই এটা।’
মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।এত বড় কথা কিনা সে লুকিয়েছে!ওনার চোখ বড় করা দেখে তিথি আনন্দে নাচতে নাচতে যেই না পিছনে মুড়লো ওমনি জোরেশোরে এক ধাক্কা খেলো ইশানের সাথে।ওর মুখে এত হাসি দেখে ইশান বললো,’আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছিস?’
‘না,তবে সেরকম কিছু ‘

ইশান কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে মায়ের রুমে ঢুকে গেলো।তামিয়াকে দেখে রুম থেকে চলে যেতে বলে সে মায়ের পাশে এসে বসে।তামিয়াও ফোন টিপতে টিপতে চলে যায়।মা তো রেগে আগুন,তিনি তামিয়া চলে যাবার পরই ইশানকে প্রশ্ন করলেন কেন সে তিথিকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
তিথি বাহিরে থেকে সব কথা শুনছে চুপটি করে।

ইশান বললো,’মা তুমি ভাবছো আমি ওকে ভালবেসে নিচ্ছি?মোটেও না।আমি ওকে আরও বেশি শাস্তি দেবার জন্য নিচ্ছি ‘
মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর বললেন,’কিরকম শাস্তি?ওখানে গিয়ে আর কিরকম শাস্তি তুই দিবি?’
‘মা বোঝো,ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।ওরে যে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তা সুন্দর মতন দিতে পারবো।’
মা ভাবলেন কিছুক্ষণ এরপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,’তবে তাই হোক।যেটা ভাল মনে করিস, কর।’
তিথি নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি দিলো।এত জোরে দিলো যে ইশান শুনে ফেললো।সে রুম থেকে বের হয়ে দেখে তিথি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে যাচ্ছে।

‘এই যে তিথি ম্যাডাম!’
তিথি জিভ কামড়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।
‘সবই তো শুনলেন,এবার নিজের জামাকাপড়, পাউডার লোশন সব গুছান দ্রুত’
তিথি পেছনে তাকিয়ে বললো,’কতদিনের জন্য?’
‘দিন বলছিস কি!বছর ও হতে পারে’

ইশান ওকে কষ্ট দিতে দিতে কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে এই ভেবে তিথির হাত চলছেনা।সে জামা একটা নিয়ে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকছে।তার এমন অবস্থা দেখে ইশান নিজেই ওর ব্যাগ প্যাক করে দিচ্ছে।তিথির ভয়ে ইশান আরও মজা পাচ্ছে।ওখানে গেলে ওকে আরও ভয় দেখিয়ে মজা নেওয়া যাবে।
ইশানের মুখে হাসি দেখে তিথির কলিজা শুকিয়ে গেলো।সে সোফায় বসে বসে ভাবছে আজ রাতেই সে পালাবে।কিছুতেই এই ছেলের সাথে বিদেশ পাড়ি দেয়া যাবেনা।

ঠিক তাই একটা পরিকল্পনা করে তিথি।সে আজ রাতে পালাবে।নানু বাড়িও যাবেনা,বাবার বাড়িও যাবেনা,বান্ধবীর বাড়িতেও যাবেনা।সে যাবে হোটেলে।ইশান জাপান চলে যাওয়া পর্যন্ত হোটেলে গাপটি মেরে বসে থাকবে সে।
রাত বারোটা বাজতেই ইশান অফিস থেকে ফেরে।সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে যেতেই তিথি পা টিপে টিপে বেরিয়ে যায়।সকলে নিজ নিজ রুমে।সদর দরজার আশেপাশেও কেউ নাই।তিথি তার পার্সটা নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে দিলো এক ছুট।কিন্তু আফসোস, ইশান মনে হয় আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিল।সে দারোয়ানকে বলেছে তিথিকে দেখলে যেন বের হতে না দেয়।দারোয়ান সে জন্য কড়া পাহারা বসিয়ে রেখেছে।

তিথিও কম না।
সে বিল্ডিংয়ের পিছনে গেলো বাউন্ডারি টপকে যাবে বলে।বাউন্ডারি দেখে তিথির ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।
স্কুলের টিফিন টাইমে এভাবে বাউন্ডারি টপকে সে ক্লাস মিস দিতো।
এখনও সেরকমই মনে হচ্ছে।বাউন্ডারি খাঁমছে ধরে সে উপরে ওঠার চেষ্টা করতে যেতেই কেউ একজন ওর আঁচল ধরে এক টান দিয়ে ওকে নিচে ফেলে দেয়।

মাটিতে ধপাস করে পড়ে তিথি মাথা তুলে তাকালো।ইশান খালি গায়ে,গলায় তোয়ালে ঝুলানো।সে কোমড়ে হাত রেখে তিথির দিকে তাকিয়ে আছে।
‘জাপান যাবার ভয়ে যে কোণায় পালাস না কেন,ইশতিয়াক তোকে বের করে আনবেই।দারোয়ান আমায় ইনফর্ম করে দিয়েছে তুই যে পালাচ্ছিস!’
তিথি মাথা চুলকে বললো,’পালাবো কেন?আমি প্রেক্টিস করছিলাম’

‘জাপানে আমার যে ফ্ল্যাট আছে এক তলার।সেটাতেও চারিদিকে বাউন্ডারি করা।মন মত প্রেক্টিস করে নিস’
এই বলে ইশান তিথির হাত ধরে টেনে উঠায়।তিথি হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, ‘যাব না’
এই বলে সে বসেও গেলো।ইশান তখন তিথিকে ধরে কোলে তুলে নেয় এরপর হাঁটতে হাঁটতে বলে,’তুই যাবিনা তোর ছায়া যাবে’

তিথি নিরবে ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কোনো হাতাহাতি সে করলোনা।শুধু এক দৃষ্টিতে ইশানের দিকে তাকিয়ে রইলো।যেন তার খুব ভাল লাগছে এভাবে করে যেতে।ইশান কিছুদূর যাবার পর টের পেলো তিথি তাকে বাধা দিচ্ছেনা।
তাই সে তিথির দিকে তাকায় তখনই।চোখে চোখ পড়তেই তিথি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলে,’নামবো’
‘এতক্ষণ ভাল লাগছিল?এখন লজ্জায় পড়ে নামতে চাইছিস?’

‘মোটেও না’
ইশান দরজার সামনে এসে তিথিকে নামিয়ে দেয়।তিথি তখন বাহিরে গেটের দিকে তাকিয়ে ভাবে তার আর পালানো হলোনা।
ইশান ওকে টেনে বাসায় ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে বললো,’ফের যদি দেখি পালানোর চেষ্টা করেছিস তবে এভাবেই কোলে তুলে এরপর নিচে ফেলে দিবো’

তিথি মুখ গোমড়া করে যেতে যেতে মায়ের রুমের কাছে গিয়ে থেমে যায়।তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।সে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলে,”আমাকে দেখতে না পারলে কোলে তুলেছেন কেন?’
এ কথা সে ইচ্ছে করে বললো যাতে মা শুনে।এরপর উল্টো পাল্টা ভাবে।
ইশান তিথির কথা শুনে থামলো।সেও বুঝেছে এত রাতে তিথি এত জোরে কেনোই বা কথাটা বলেছে।তখন সে তিথির কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,’মা রাতে ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমায়।তোর এত মিষ্টি গলা তিনি শুনবেন না’

তিথি কপালে হাত দিয়ে ইশানের পিছু পিছু গেলো।মনে হয় তার ভাগ্যে জাপান যাওয়াই লেখা আছে।কি বিপদ!
হঠাৎ তার মনে পড়লো পাসপোর্ট গায়েব করলে তার আর জাপান যেতে হবেনা।তাই সে ফোন নিয়ে তানিয়াকে কল করে তার পাসপোর্ট টা লুকিয়ে ফেলার জন্য।

যদি তুমি বলো পর্ব ২৬

তানিয়া কল ধরে যেটা বলে সেটা শুনে তিথি বোকা বনে গেছে।
তানিয়া বলে ইশান কয়েকদিন আগেই লোক পাঠিয়ে তিথির পাসপোর্ট নিয়ে গেছে জরুরি দরকারে।

যদি তুমি বলো পর্ব ২৮