যদি তুমি বলো পর্ব ২৮

যদি তুমি বলো পর্ব ২৮
আফনান লারা

তিথিকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ইশান ব্যাগগুলো সরিয়ে রেখে বলে,’যেমন কর্ম তার তেমনই তো ফল হবে তাই না? আর তুই কি আমাকে আদৌ ভয় পাস?যেভাবে না যাওয়ার জন্য বাহানা করছিস!’
তিথি কিছু বলেনা।ওখানে গেলে তার যে তেরোটা বাজবে তার দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে মনে কল্পনা করে চলেছে সে।কাল বাদে পরশু তাদের ফ্লাইট।তিথির খাওয়া দাওয়া উঠে চলে গেছে।ইশান তাকে মেরেও ফেলতে পারে এই চিন্তায় তার নির্ঘুম রাত কেটেছে।ইশান এ রাতে বাসায় ছিলনা।শাওয়ারটা শেষ করে কোথায় যেন গেছে।

তিথি মন খারাপ নিয়ে তানিয়ার সাথে কিছু সময় কথা বললো।তানিয়া তাকে আশস্থ করেছে যাতে ভাল কিছু নিয়ে ভাবে।হতে পারে ইশান তাকে খুব ভালবাসা দেবে।
তানিয়ার কথা আর ইশানের বড় বোন তামিয়ার কথা যেন এক রকম হয়ে গেলো।আসলেই কি ইশান তাকে খুব ভালবাসবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

নাকি সবই তার মনের ভুল।ইশান হয়ত তাকে অনেক বেশি কষ্ট দেবে যা সহ্য করার মতন হবেনা।
এইসব ভাবতে ভাবতেই সকালটা হয়ে যায়।
তিথি জানে কলা মুড়ি সে পাবেনা।তাই একটা পাউরুটির টুকরো নিয়ে সে চলেই যাচ্ছিল তখন পেটের খিধে বললো আরও কিছু চাই।

তাই সে ঠিক করে একটা কাপ নুডুলস খাবে।নুডুলস কোম্পানির মালিকের বউ হবার সুবিধা হলো ঘরে শুধু নুডুলস আর নুডুলস পাওয়া যাবে।মাঝরাতে কিংবা ভোরবেলা ক্রেভিংস হলে নুডুলসকে হাতের কাছে পাওয়া যাবে।
তিথি খুশি হয়ে নুডুলসে গরম পানি ঢেলে রুমে চলে আসে।নুডুলসটা খাওয়ার সময় তার চোখ গেলো প্যাকেটে লেখা এটার ফ্লেভারের নামের দিকে।

মিন্ট ফ্লেভার।তিথির হঠাৎ মনে পড়ে যায় ইশান যে ফ্লেভারের নুডুলসের উদ্ভোধন করতে জাপান যাচ্ছে সেই নুডুলসই এটা।
উদ্ভোধন হবার আগে এটার সেম্পল আসতেও তো সময় লাগার কথা।আর এটার তো বানানোর ডেট লেখা এক বছর আগের।তার মানে এটা পুরোনো ফ্লেভারের।
তবে ইশান তাকে নিয়ে কেন জাপান যাচ্ছে?পুরোটাই তাহলে নাটক!
তিথির আর খাওয়া হলোনা।মাথায় বড় একটা চিন্তা ঢুকে গেলো।

এখন তার কি করা উচিত?
ঠিক ঐ সময়ে ইশান বাসায় ফেরে।কাল রাতে আদিলের সাথে একটা ক্লায়েন্টের সমস্যার কারণে সারারাত তাকে অফিসে কাটাতে হয়েছে নাইট ডিউটি অফিসারের সাথে।
ওটার সমাধান করেই সে মাত্র ফিরলো।তিথির সামনে নুডুলস দেখে প্রথমে তার কিছু সন্দেহ হলো না।
তিথি ইশানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।ইশান গায়ের শার্টটা খুলছিল তখন তিথি বললো,’কোন ফ্লেভারের নুডুলস উদ্ভোধন করবেন বলেছিলেন যেন?’

‘মিন্ট’
‘তাহলে এটা কি?’
ইশান পেছনে তাকায়।তিথির হাতের নুডুলসটাও মিন্ট ফ্লেভার।ইশান আবারও নিজের কাজে মন দেয়।
তখন তিথি উঠে এসে বলে,’আমি জানতে চাই এত মিথ্যা কথা কেন? আপনি কি জন্য আমাকে জাপান নিয়ে যেতে চাইছেন?’

ইশান কিছু বলেনা।তিথি এবার প্রচণ্ড রেগে যায়।সে চিৎকার করে বলে যত কিছু হয়ে যাক না কেন সে জাপান যাবেনা।এই বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ইশান ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে বলে,’আমার স্ত্রী হিসেবে এটা তোর দায়িত্ব যে আমার কথা শোনা।জাপান হোক কিংবা মহাকাশের কোনো গ্রহ হোক।আমি তোকে যেখানে নিয়ে যাবো তোকে আমার সাথে সেখানেই যেতে হবে এবং এটা পালন করতে তুই বাধ্য।’
‘না আমি বাধ্য নই’

ইশান তিথির হাত ছাড়লোনা।চুপ করে তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।তিথি ওর কাছে আবারও জানতে চাইছে কেন তারা জাপান যাবে যেখানে এই মূহুর্তে জাপান যাবার কোনো প্রয়োজনই নেই।
এবার ও ইশান জবাবটা দেয়নি।কিন্তু সে আরও কিছু বলতে চাইছিল তখনই মা এসে পড়েন সেখানে।
তিনি নামাজ পড়ে এসেছেন এদিকে।ইশান আর তিথিকে এমন অবস্থায় দেখে তিনি দ্রুত ওদের রুমে ঢোকেন।তারপর জানতে চাইলেন কি হচ্ছে এখানে।

ইশান তিথির হাতটা ছেড়ে দেয় সাথে সাথে।তিথি ওনার দিকে ফিরে সবটা বলে দেয়।সে বলে দেয় যে ইশানের জাপানে কোনো কাজই নেই।সে অন্য উদ্দেশ্যে যাচ্ছে কাজের নাম করে।
মা এ কথা শুনে ইশানের দিকে তাকালেন ওর উত্তরের আশায়।তখন ইশান বললো,’মা তুমি যাও।আমি আসছি’
মা মাথা নাড়িয়ে চলে যেতেই তিথিও তার পিছু পিছু যাওয়া ধরলো কিন্তু ইশান আর তাকে যেতে দিলোনা।সে তিথির আগেই এসে ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে।তিথি ভীষণ ভয় পেয়ে যায় ওর এমন কাজে।

ইশান তখন বলে,’তুই যদি আমার সাথে জাপানে না যাস তবে তোকে জোর করে নেয়ার ক্ষমতা আমার কাছে।কিন্তু যদি সেই জোরটা আমার সবার সামনে করতে হয় তবে এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে তিথি।খুব খারাপ!
আমি চাইনা বাহিরের মানুষের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট হোক।চুপচাপ আমার সাথে কাল ভোরবেলা রওনা হবি।যদি এর আগে কোনো হট্টগোল তুই করেছিস তবে ইশানের আর যেসব রুপ তোর দেখা বাকি আছে সেগুলো খুব দ্রুত দেখিয়ে দিবো

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ‘তবে তাই হোক!দেখান আপনার রুপ।দেখি আর কত নিকৃষ্ট হতে পারেন আপনি’
কথা শেষ করার আগেই তিথি গালে একটা কামড় খেলো।আচমকা ঘটে যাওয়ায় সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।কামড়ের ব্যাথার শিহরণে সে গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে ভ্যাবলার মতন শুধু চেয়ে রইলো।ইশান ওর গাল থেকে হাতটা সরিয়ে বলে,’বত্রিশটা দাঁতের দাগ বসিয়ে দিয়েছি।জাপান না গেলে আরও দাগ বসবে’

তিথি কাঁদবে,না চিৎকার করবে সেটার অংক কষাকষি করছে।এদিকে ইশান তার মায়ের কাছে চলেও গেছে।তিথি কোনো উপায় না পেয়ে তানিয়াকে কল করে।
তানিয়াকে সে এই ঘটনার কথা বলে সাহায্য চায়।
তানিয়া কামড়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘টুকু তোমার মনে আছে?সেবার ইশান ভাইয়া তোমায় হাতে কামড়েছিল?তুমি তার একটা কথা শুনো নি বলে?’
‘ভুলে গেছিলাম।এখন মনে পড়লো’

তানিয়া হাসির জন্য কথাই বলতে পারছেনা। তিথি বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে আয়নার সামনে গিয়ে হাতে পাউডার ঢেলে গালে ঘঁষতে লাগলো।তামিয়া দেখলে এবার সেও হাসবে।
‘একটা পাগলের সংসার করছি আমি!’

‘মা বলো কি বলবে’
‘তুই জাপান কেন যাচ্ছিস?’
ইশান মায়ের হাত ধরে ওনার পাশে বসে।এরপর বলে,’হ্যাঁ,আমার একটা ইচ্ছে আছে।কিন্তু সেটা পরে জানবে।এখন না’
‘আমি যেন না শুনি যে তুই এত সহজে ঐ মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস।খবরদার!’
‘আরেহ না।ওসব কিছুনা।সে এত সহজে ক্ষমা পাবেনা’

এই বলে ইশান চলেই যাচ্ছিল হঠাৎ মা ওকে আবারও দাঁড়াতে বললেন।এরপর আলমারি থেকে একটা বক্সের ভেতরের সুতা বের করে বক্সটা সহ ইশানকে দিলেন।এরপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,’হয়ত তোদের আসতে এক বছরের বেশি লাগতে পারে।এত দিন তো আর মেয়েটাকে শাস্তি দিবিনা।একদিন না একদিন ক্ষমা করতেই হবে।আমি আশা করি সু খবর দিবি আমায়।সুতাটা তখন ওর হাতে পরিয়ে দিস। ‘

ইশান অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার অবাক করা চাহনি দেখে মা বললেন তিনি তিথিকে ক্ষমা করেননি এখনও।তার পরেও তার তো স্বামীর থেকে কিছু অধিকার পাওনা আছে এগুলো তো আর অস্বীকার করা যায়না।
ইশান চলে আসে ওখান থেকে।রুমে এসে দেখে তিথি পাউডার মেখে সারা মুখ সাদা বানিয়ে ফেলেছে।কিছুতেই দাগটা কারোর নজরে আসতে দেবেনা।ইশান ব্যাগ খুলে সুতাটা ভেতরে ঢুকিয়ে তিথির দিকে তাকায়।এরপর দুষ্টু করে একটা হাসি দিয়ে বলে,’বাচ্চা কয়টা নেয়ার ইচ্ছা থাকা উচিত নতুন দম্পতির?’

এ কথাশুনে তিথি চমকে তাকায় ওর দিকে।তার মানে তার সন্দেহটাই কি সত্যি হতে যাচ্ছে!
ইশান বসে বসে হাসছিল।তিথি তখন গালে হাত রেখে দূরে সরে গিয়ে বলে,’কি করবেন আপনি?’
‘আমি কি করবো?জাস্ট জানার ইচ্ছে হলো’
‘আআআআপপপপনি না বলছেন ঔসব কোনোদিন করবেন না।তাহলে হঠাৎ জানার ইচ্ছে কেন হচ্ছে?’

‘আমার সেখানে যে একটা বউ আছে তার সাথে প্রেমালাপ করবো।আচ্ছা,তুই নিজেকে কি ভাবছিস?নাহয় তোকে এক কোণায় বসিয়ে রাখবো।তোর তো এত ভাবার দরকার নেই,তুই শুধু আমাকে এটা বল শুরুতে কয়টা বাচ্চা নেয়া ভাল?’
তিথি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।ইশান আবারও বললো,’আহা বললাম তো,জাপানে গেলে আমার সেখানে যে বউ থাকবে তাকে ভালবাসবো।তোর তো ভাবার প্রসঙ্গই আসেনা’

যদি তুমি বলো পর্ব ২৭

‘প্রসঙ্গ আসে,কারণ জাপানে গেলে সেখানে আমিই আপনার বউ হিসেবে থাকবো।কথা ঘুরিয়ে বললেও উত্তর টা একই দাঁড়ায় মিঃইশতিয়াক!’

যদি তুমি বলো পর্ব ২৯