যদি তুমি বলো পর্ব ২৯

যদি তুমি বলো পর্ব ২৯
আফনান লারা

ইশান মিটমিট করে হাসছে।তিথি ইদানিং খুব চালাক হয়ে গেছে।ঘুরিয়ে বললেও ঠিকই ধরে নেয়।এদিকে তিথি আরও চিন্তায় পড়ে গেলো।তার মানে ইশান তাকে নিয়ে একেবারে জাপান চলে যাচ্ছে না তো?
ভয়ে ভয়ে সে আরও একবার কল দিতে চায় তানিয়াকে কিন্তু পরে ভাবলো তানিয়া তো ঘুরেফিরে একই কথা বলবে।তার চেয়ে বরং শশীকে একটা কল দিলে সে আসল পরামর্শ দিতে পারবে।

সেইসব ভেবেই তিথি কল দিলো শশীকে।শশী চারদিন হলো ফ্যামিলি ট্যুর দিয়ে দেশে ফিরেছে।
ফ্রি ছিল অনেকটাই।তিথির কল তাকে আরও আনন্দিত করে দেয়।সে খুশি হয়ে তিথির সাথে কথা বলতে থাকে।কথা বলার এক সময় গিয়ে তিথি ওর কাছে পরামর্শ চায় ইশানের সাথে বিদেশ যাওয়া নিয়ে।তানিয়া পজিটিভ পরামর্শ দিলেও শশী দিলো নেগেটিভ পরামর্শ। তার নাকি দূর সম্পর্কের এক বোন হাসবেন্ডের সাথে বিদেশ গিয়ে মরা লাশ হয়ে ফিরেছে।তাকে নাকি খুব মারতো,একদিন মারার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সে একেবারে মরেই গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

এ কাহিনী শুনে ভয়ে তিথির গলা শুকিয়ে আসলো।এদিকে ইশান খবরের যে চ্যানেলটা দেখছে তাতে দেখাচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন।
তিথি কলটা রেখে চোখ বড় করে ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ভাবে ইশান তো আর তাকে মেরে ফেলবেনা।এই টুকু ভরসা আছে

তা চিন্তা করে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে তারপর বললো,’টিভিটা অফ করুন তো।অসহ্য!’
ইশান আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।তাও টিভিটা অন করে উঠে এসে তিথির থুঁতনি টেনে ধরে বললো,’তুই আমাকে আদেশ করবি নাকি আমি তোকে আদেশ করবো?’
‘আমি’

এটা শুনে ইশান ওর থুঁতনিটা আরও জোরে টেনে দিয়ে বললো,’ইউ আর রঙ।আমি তোকে সবসময় আদেশ করবো।তুই আদেশ করার বয়স পার করে ফেলেছিস।তোর বয়স টা সেকালে থাকাকালীন অনেক আদেশ করেছিস। আর নাহ’
এটা শুনে তিথি দূরে সরে যায়।তারপর কত কি ভাবতে ভাবতে রুম ছেড়ে পালায়।ইশান ভাবে এখন যত পালিয়ে নিক।ওখানে গেলে পালিয়েও দরজা খুঁজে পাবেনা।

কাল ভোরবেলা তারা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
তিথি তার আগে বাবার বাসায় আসলো সবার সাথে দেখা করে নেয়ার জন্য।
তানিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেছে।পরের মাসে তার কাবিনের তারিখ আর এদিকে তিথি চলে যাচ্ছে।
তখন তিথি তাকে বোঝালো সে আসার চেষ্টা করবে।
ইশান জানতোনা তিথি যে ওর বাসায় গেছে।

সে অফিস থেকে ফিরে তিথিকে কোথাও না দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো। পরে অবশ্য তামিয়া আপু বললেন ওর বাসায় যাওয়ার কথা।
ইশান তখন হাঁপ ছেড়ে বেঁচে চলে যাচ্ছিল তখন তামিয়া ওকে দাঁড়াতে বলে।তার পাশে বসতেও বলে।

ইশান তাই ওর পাশে বসে,তখন তামিয়া বললো,’জানি তুই আর আম্মু তিথির উপর প্রচণ্ড রেগে আছিস।কিন্তু ইশান,একটা কথা বলি শুন।তিথি বড্ড ভাল একটা মেয়ে।আমি জানি সে তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু তখন ওর বয়সটা নিয়ে একটু ভাব।তখন তার মধ্যে ম্যাচিউরিটি ছিল না বিদায় সে অনেক কিছু না জেনে বলে ফেলেছিল।ক্ষমা করে দিয়ে,সব ভুলে ওকে জীবনের সব সুখ দিস যা তুই ওকে সবসময় দিতে চেয়েছিলি। ‘
ইশান চুপ করে সব শুনলো।তামিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আরও একবার ভেবে নেওয়ার কথা বলে।

তিথি বাসায় গিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে।তার বাসায় ফেরার কথা একেবারে মনে ছিল না।
এদিকে রাত এগারোটা বেজে যাবার পরেও তার বিকেলের ঘুমটাই শেষ হচ্ছেনা দেখে ইশান নিজেই ওকে নিতে চলে আসে।ও আসার পর তানিয়া ওকে জানায় সে তিথিকে জাগানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
তিথি ইচ্ছে করেই এত দেরি করছে।ইশান তখন তিথির রুমে এসে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দেয়।

‘কে রে তানু!এত জ্বালাস কেন!চারিদিকে শুধু জ্বালানোর মানুষ সব!’
ঘুমের ঘোরে এসব বলতে বলতে তিথি অন্যদিকে মুড়িয়ে শোয়।
ইশান ওর কাছে এসে কানের কাছে বলে,’ইশান এসে গেছে’
তাতেও তিথি ওঠেনা।এবার ইশান সোজা গিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানির জগটা এনে জগের ঢাকনা খুলো এক জগ পানি তিথির গায়ে ঢেলে দিলো।

তিথি এক লাফে উঠে বসে।মাথার চুল থেকে পানি চিপে চিপে বের করে বললো,’কার এত বড় সাহস?’
তখন ইশান ড্রিম লাইট নিভিয়ে রুমের মেইন লাইটটা অন করে।
তিথি ইশানকে দেখে হকচকিয়ে কাঁথা জড়িয়ে নেয় সারা শরীরে।তখন ইশান বললো,’নাটক বন্ধ করে শাড়ী চেঞ্জ করে আয়।ফ্লাইটের কথা ভুলে গেলে আবার মনে করিয়ে দিবো’

তিথি মাথায় হাত দিয়ে এলোমেলো হয়ে উঠে শাড়ীটা বদলাতে চলে গেছে দ্রুত।চোখের ঘুম এখনও যায়নি তাও ইশানের ভয় অনেক। যার কারণে ঘুম বাদ দিয়ে আগে ও যা বলেছে তা করে নিতে হবে।
ইশান রুম থেকে বের হতেই রিদম দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলে চিৎকার করে বলে,’দুলাভাই অনেক মিস করবো আপনাদের,এ্যা এ্যা এ্যা!’

‘আরেহ আরেহ!শান্ত হও
আমরা তানিয়ার বিয়েতে আসবো তো আবার’
‘না না।এ হতে পারেনা ভাইয়া ‘
রিদমের এমন ওভার একটিং দেখে ইশান প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও পরে বুঝলো আসল রহস্য।সে আসলে ওদের সাথে জাপান যাবার জন্য এরকম কান্নাকাটি করছে।

ইশান তখন ওকে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,’আচ্ছা তুমি ইন্টার পরীক্ষা টা দিয়ে নাও।এরপর তোমাকেও নিয়ে যাবো’
রিদম মুচকি হাসি দিয়ে চেহারায় লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বললো,’ঐ যে আমাদের বাসায় আসার গলির মোড়ে একটা পিংক কালারের বিল্ডিং আছেনা?চার তলা’

‘হ্যাঁ’
‘ওটার তিন তলায় পিংকি নামের একটা মেয়ে আছে।যদি আমার সাথে ওরেও জাপান যাবার সুযোগটা করে দিতেন!’
ইশাম সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,’আচ্ছা তোমার বয়স কত?’
‘বারো’
‘আর ওর বয়স কত?’
‘সাড়ে এগারো’

‘মারহাবা!সোনায় সোহাগা!আগে তোমরা বড় হয়ে নাও তারপর নাহয় তোমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে একসাথে নিয়ে যাবো’
রিদম তখন আরেকটু কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,”সেটাই তো!বিয়েই তো সমস্যা। পিংকিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে’

‘এ্যা?সাড়ে এগারো বছরের মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে?’
‘আরে ওর বড় বোনকে বিয়ে করাবে।তো এই চাপটা ওর উপর পড়বেনা?ওর বোনের পরে তো ওর বিয়ে হবার কথা।এই জন্য ভাবি কমার্সের স্টুডেন্ট রা কি আর সাইন্স বুঝবে!’
‘তুমি বুঝি সাইন্স নিয়ে পড়ো?তুমি তো সবে ক্লাস সেভেনে পড়ো’

‘ভবিষ্যতে পড়বো তো।ওসব বাদ দিন।তার আগে আমার কাজটা ঠিক কবে হবে সেটা বলতে পারবেন?’
ইশান অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে।তারপর সে বললো খুব শীঘ্রই ওদের নিয়ে যাবে।
তিথি একটা থ্রি পিস পরে এসে ইশানের সামনে দাঁড়াতেই ইশান উঠে দাঁড়ায় চলে যাবার জন্য তখন তিথির বাবা এসে ওর হাতটা ধরে এরপর শক্ত চোখে চেয়ে থেকে বললেন তিথির খেয়াল রাখতে। আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না।মনে অনেক কষ্ট নিয়ে তিনি কথাগুলো শেষ করতে পেরেছেন।ওরা অনেক দিনের জন্য চলে যাচ্ছে বলে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছিল তার।

তিথি ও কান্নাকাটি করছিল আসার সময়।
পথে ইশান ড্রাইভ করতে করতে পকেট থেকে একটা ঔষুধের পাতা বের করে তিথির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো আজকে থেকে এটা খেতে।

তিথি কপাল কুঁচকে অনেকক্ষণ ধরে পাতাটা উল্টেপাল্টে ইশান কে কোনো কিছু না বলেই পাতাটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো।ইশান চুপচাপ গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিল।তিথি মাথা উঁচু করে গর্ববোধ করছে কাজটা সে করতে পেরেছে বলে।
ইশান কিছুক্ষণ পর আরেকটা পাতা ধরে বললো,’আমি জানতাম তুই ওটা ফেলে দিবি।তাই নরমাল একটা ঔষুধের পাতা দিয়েছিলাম।’

যদি তুমি বলো পর্ব ২৮

‘তো এটাও দিন।এটাও ফেলে দিইই’
ইশান মুচকি হেসে বললো,’এটা আর দিবোনা।জোর করে খাওয়াবো’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩০