যদি তুমি বলো পর্ব ২৬

যদি তুমি বলো পর্ব ২৬
আফনান লারা

নানু ভাবলেন ইশান হয়ত সব বুঝছে।কিন্তু নাহ।ইশান এইবার বেঁকে বসেছে।সে বলে তিথির দোষ যদি কেবল দোষই হতো তবে নিশ্চয় সে মাফ করে দিতো। কিন্তু তিথি তো দোষ করেনি।সে করেছে অন্যায়।
অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।তিথি সেকালে ইশান আর তার মাকে যে অপমান করেছিল এ কথা ইশান আর ওর মা বাদে আর একটা মানুষ ও জানেনা ওর পরিবারের,এমনকি তিথির পরিবারের কেউই জানেনা।

আর তাই নানু ইশানের কাছে সব শুনে অবাক হলেন।সব শুনার পর তিনি বললেন,’তবে তিথি যদি দোষই করে থাকে তাহলে ইশান কেন তাকে বিয়ে করেছে।’
এর জবাবে ইশান কিছু বলেনা।কিছু সত্য সবাইকে বলতে হয়না।সাময়িকের জন্য সে সত্য চাপা রাখলে দুই পক্ষেরই মঙ্গল ঘটবে।
নানু কোনো জবাব না পেয়ে চলে এলেন।তবে তিনি ইশানের না বলা কথাটি ঠিকই বুঝে গেছেন।আর তাই মিটমিট করে হাসছেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথিকে অনেকক্ষণ না দেখে ইশানের চিন্তা হলো।বিদেশে গেলেও সে সবসময় তিথির উপর নজর রাখতো।যাতে সে কোনো ছেলের ফাঁদে না পড়ে যায়।শেষে বাধ্য হয়ে আদিলকে লাগায় কাজে।আদিল ওর বিশ্বস্ত লোক।সে তিথিকে না ছোঁয়ার শর্তে সই করে কাজটা করেছে। এবং এর জন্য ইশান তাকে ঢাকায় স্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।
রুম থেকে বের হয়ে ইশান ঘুরতে ঘুরতে মামির সাথে খেলো এক ধাক্কা।

এই মামি হলেন সানজিদা মামি।উনি তিথির একাধারে মামি হোন আবার বান্ধবীও হোন।তিথির ক্লাসমেট ছিলেন তিনি।
সেই সূত্রে ইশানকে তিনি চিনতেন,দু একবার তিথিকে ডিস্টার্ব করতে দেখেছিলেন।কিন্তু বিয়েতে ইশানকে দেখে চিনতে না পারলেও বারবার মনে হচ্ছিলো ওকে কোথাও একটা দেখেছেন।
এখন আবারও ওর মুখটা সামনে দেখে তিনি আন্দাজ করে বললেন,’আচ্ছা তুমি কি পানপাড়া হাই স্কুল চিনো?’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’চিনি।আপনাকেও চিনি।’

‘আচ্ছা তুমি কি তিথিকে আগে থেকে চিনতে?’
ইশান হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়।মামি তো অবাক।হা করে তাকিয়ে রইলেন।এত বছর পর আগের ইতিহাস আবার সামনে চলে আসলো!ভাবা যায়!
এই ছেলেটা তিথিকে যখন ডিস্টার্ব করতো তখন মনে মনে তিনি হিংসা করতেন।তার জন্য যদি এমন একটা ছেলে পাগল থাকতো তবে কতই না ভাল হতো!

সেই ছেলে শেষ পর্যন্ত তিথির জন্যই থেকে গেলো!
তিথির কথা মনে পড়ায় মামি বললেন তিথি নানুর রুমে।
এই বলে তিনি কাজে চলে গেছেন।ইশান নানুর রুমে এসে তিথিকে ঘুমাতে দেখে ওর কাছে আসে।অনেকক্ষণ ওকে দেখে সে তিথির হাত ধরে চুড়ি গুলো সব খুলে নেয়।তিথি গভীর ঘুমে থেকে বিড়বিড় করে বলছিল ‘চুড়ি নিলে শাস্তি মাফ!’

ইশান চুড়িগুলো নিয়ে চলে আসে।তিথির ঘুম ভাঙ্গলো ঠিক দশটায়।সে উঠে বসতেই নানু ওর হাতে পানির মগ দিয়ে বললেন ইশান গাড়ীতে বসে ওর অপেক্ষা করছে।সে যেন দ্রুত তৈরি হয়ে যায়।খাওয়া দাওয়া গাড়ীতেই করে নিতে পারবে,তিনি খাবার প্যাকেট করে দিয়েছেন।তিথি শুরুতে কিছুই বুঝতে পারলোনা।পরে হুশ ফেরায় বললো সে তো যাবেনা।সে এখানেই থাকবে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা।নানু এক প্রকার জোর করেই ওকে তুলে ফেললেন বিছানা থেকে এবং বললেন এইসব ঘাউরামি বাদ দিয়ে সংসারে মন দিতে।সবসময় সব বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে প্রতিযোগিতা করা উচিত নয়।
তিথিকে তিনি ঠেলে গাড়ীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।ইশান সানগ্লাস পরে বসে ছিল।তিথি ওর পাশে বসে বললো,’আমাকে ছাড়া ভাল লাগেনা।আবার আমাকে নাকে দড়ি দিয়েও ঘোরাবে! ‘

ইশান যেন কথাটা শুনলোইনা,একটা ভাব নিয়ে বসে আছে সে।
সে এবার নানু বাড়ি থেকে তিথিকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে।মা,আপু সবাই ততক্ষণে বাসায় ফিরেও গেছেন।
ইশান তিথিকে বাসায় রেখে অফিসের কাছে চলে গেছে।এদিকে তিথিকে একা পেয়ে ইশানের মা ধরলেন ওকে ভাল করে।তিনি জানতে চাইলেন তারা কি কারণে হঠাৎ নানুর বাড়ি গেলো।

‘আমি গিয়েছিলাম,কিন্তু উনি ও এসে পড়লেন।কোনো দাওয়াত ছিল না।আমি এমনিতেই গেছিলাম’
‘তুমি জানোনা? তুমি গেলে আমার ছেলেও যাবে?তুমি যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নও তা জানা আছে আমার।ইচ্ছে করে আমার ছেলেকে ওতদূর নিয়ে গেলে।ও যে তোমার জন্য পাগল এটা তো জানোই।আবার কি প্রমাণ করাতে চাও?’
তিথি চুপ করে আছে।কিছু বললেই আবার আগুন লাগবে।তার চেয়ে বরং চুপ করে থাকাই ভাল।ইশানের মা আরও অনেক কিছু বলে চলে গেছেন।

আগেকার তিথি হলে দু চারটা কথা মুখের উপর বলে দিতো।এখনকার তিথি বলে সে চুপ থেকে গেলো।
ইশানের জাপানে যেতে হবে জরুরি একটা কাজে।তাদের নতুন একটা ফ্লেভারের নুডুলস তৈরি হয়েছে সেটার উদ্ভোধন করবে সে।তিথিকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ইশান সেটা না ভেবে অন্য একটা প্ল্যান করেছে।সে তিথিকে দেশেই রেখে যাবে যাতে করে তিথি ইশানের অনুপস্থিতিটা হারে হারে টের পায়।

যদি ওকে সাথে করে জাপান নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে দেখা গেলো সে টের পাওয়ার বদলে ইশান নিজেই তিথির প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়বে।
আর তাই সে তার প্ল্যানের টিকেট দারোয়ানকে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে তিথি সেটা দেখে কি রিয়েকশান দেয় তা জানার জন্য।

দারোয়ান ওর কথামতন টিকেটটা বাসায় দিয়ে আসে।
ভাগ্যক্রমে দরজাটা তিথিই খুলেছিল।সে টিকেটের খাম হাতে নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে যায়।ইশানের চিঠি বলে সেটা পড়ে দেখার কৌতুহল তাকে বাধ্য করে খামটা ছেঁড়ার জন্য।
আর তাই সে রুমে গিয়ে খামটা খুলেও ফেলে।
দেখলো ইশানের জাপান যাওয়ার টিকেট,পরশু ভোর ৬টায়।

ইশান ভেবেছিল তিথি মনখারাপ করবে,কিন্তু সেটা না হয়ে হলো তার উল্টো। তিথি দারুণ খুশি হলো।সে একটু শান্তিতে থাকবে ভেবে আনন্দে আটখানা হয়ে রুমে ঘুরতে লাগলো।
কি শান্তি!ইশান চলে গেলে সে ঐদিনই বাবার বাড়ি চলে যাবে।তানিয়ার বিয়ের আয়োজনে মশগুল থাকবে।কত মজা হবে তার।মাথা থেকে বোঝা নেমে যাবে।কয়েকদিন শাস্তি পেতে হবেনা।
তিথির আর আনন্দ ধরছেই না।
ওদিকে ইশান অফিসে থেকে মিটমিট করে হাসছিল তিথির অবস্থা চিন্তা করে।

ইশান সেদিন বাসায় ফিরলো একটু জলদি করেই।কারণ তার দেখার ছিল তিথি কি করে।
কিন্তু তিথির হাবভাব দেখে ইশান আশ্চর্য হয়ে যায়।তিথিকে দেখে মনে হয় সে হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।
আর তাই ইশান গাল ফুলিয়ে নিজের ব্যাগে জামাকাপড় ঢুকাচ্ছিল।তখন তিথি এসে নিজেও তাকে হেল্প করতে থাকে।
ইশানের আরও রাগ বেড়ে গেলো এসব দেখে।সে ব্যাগটা সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে নিজের কাজ করতে থাকে।
আর কাজ করতে করতে বলে,’আমার টিকেট কোথায়? ‘

তিথি এক দৌড়ে সেটা এনে দিতেই ইশান বললো,’এত খুশি হবার কি আছে?আমি কি তোকেও নিচ্ছি?’
‘নিচ্ছেন না বলেই তো আমি এত খুশি’
‘ওহ রিয়েলি?ওকে ফাইন।আমার সাথে এবার তুইও যাচ্ছিস।অনেকবছর আগে তোকে বলেছিলাম একদিন তোকে আমি বিলেত নিবো, এই শুনে তুই খুব হাসছিলি।এবার তোর হাসির চৌদ্দটা আমি বাজাবো’
তিথির মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চাইলো ওখানে ইশানের বাসায় আর কে কে থাকে।

ইশান হাসি দিয়ে বলে,’আমি গোটা একটা ফ্ল্যাটে একা থাকি।পাশের ফ্ল্যাটে একটা কাপল থাকে।এরপর দূর দূরান্তে বাসা বাড়ি নেই,সব বন আর বন।’
তিথি ঢোক গিলে বলে,’তার মানে ওখানে আমি আর আপনি একা?’
‘জ্বী’

যদি তুমি বলো পর্ব ২৫

তিথি এক দৌড় দিলো।ইশান বুঝলোনা সে দৌড় কেন দিলো,আর দৌড়টা দিয়ে গেলোই বা কোথায়।
তিথি আসলে ইশানের মায়ের রুমে গেছে।উনি যদি শুনেন ইশান তার বউকে সমেত জাপান চলে যাচ্ছে তবে তিনি এই অঘটন কিছুতেই ঘটতে দেবেন না।কারণ ইশানের সাথে তো তার কথা হয়েছে, সে সবসময় তিথিকে শাস্তি দেবে।বিদেশ নিয়ে যাওয়া মানে তো শাস্তি হতে পারে না।
এইসব শুনে তিনি নিশ্চয় তিথির যাওয়া ক্যানসেল করতে পারবেন।

যদি তুমি বলো পর্ব ২৭