ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৫২

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৫২
সাইয়্যারা খান

আজকে রিলিজ দেওয়া হবে হসপিটাল থেকে। যদিও রোদ আর আদ্রিয়ানের রিলিজ যদিও আগে হয়েছিলো কিন্তু বাবুটা’র রিলিজ হবে আজ। সাড়ে সাত মাসে বাবুটা হয়েছে। সেই থেকে আজ ১৫ দিন হলো। তবুও আটমাসে হওয়া বাচ্চাদের তুলনায় ছোট ই মনে হয় ওকে সাথে বাচ্চাটা দূর্বল ও বটে। ডক্টর পুরোপুরি ভাবে বলে দিয়েছে এক্সটা কেয়ারে রাখতে।

এতদিন শুধু ফিডিং করানোর জন্য রোদের কাছে দেওয়া হতো কিন্তু এখন থেকে রাত দিন সবসময় রোদের কাছে থাকবে ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা রোদ। আদ্রিয়ান কিছুটা টেনশনে আছে। বারবার ডক্টরদের সাথে কথা বলছে। কিভাবে কি করবে না করবে এগুলো সব যদিও জানানো হয়েছে তবুও আদ্রিয়ানের কৌতুহলের অন্ত নেই। লোকটা একটু বেশিই চিন্তিত। রোদ যে ভেতরে ভেতরে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে সেটা ও কাউকে বুঝতে দিতে চাইছে না বিশেষ করে আদ্রিয়ান’কে। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান এগিয়ে এলো। ব্যাস্ত হাতে রোদের মাথায় বড় একটা ঘোমটা টেনে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— বাবুকে দিবে এখনই।
রোদ উঠার চেষ্টা করলো। এখনও উঠতে বসতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আদ্রিয়ান দুই হাত বাড়িয়ে রোদকে ধরে সাহায্য করলো। সব কিছু গুছানো শেষ। বাচ্চাদের ও বাসায় পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু হসপিটালে রাদ, ওর মা আর আরিয়ান আছে। বাকিরা থাকতে চাইলেও আদ্রিয়ান না করে দিয়েছে। এরমধ্যেই নার্স নিয়ে এলো ছোট্ট সোনাকে। বাচ্চাটা ঘুমাচ্ছে। আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো বাবুকে।

একদম ছোট সাথে আন্ডার ওয়েট ছেলেটা। কোলে নিতেই আদ্রিয়ানের একবাহুতেই জায়গা হয়ে গেল। একদম বুকে মিশে আছে পুচকো’টা। রোদ আলতো হাতে গালে ছুঁয়ে দিতেই পুচকো’টা নিজের চিকন ছোট্ট গোলাপি ঠোঁট’টা নাড়ালো। যা বিস্তর হাসি ফুটালো ওর মা-বাবা সহ মামা আর নানু’র ঠোঁটে। রাদ এগিয়ে এসে রোদকে ধরলো। বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা দিলো আদ্রিয়ানদের বাসার উদ্দেশ্য।

হাজার বলে কয়েও রাজি কারানো গেলো না আদ্রিয়ান’কে যাতে রোদকে ওদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অগত্যা রোদ আদ্রিয়ানদের বাসায়ই যাচ্ছে। কারণ জানা আছে রোদের। তাই আর দ্বিতীয় বার এনিয়ে কথা তুলে নি। গাড়িতে সামনে ড্রাইভারের সাথে রাদ বসেছে। পেছনে রোদ আদ্রিয়ান সাথে রোদের মা।

আদ্রিয়ানের বুকেই আছে বাবুটা। আদ্রিয়ান এদিক ওদিক একবারও তাকালো না। বাবুর দিকেই ওর ধ্যান অথচ একহাতে আবার রোদকে ধরে আছে। অদ্ভুত এই আদ্রিয়ান। পাগল করা তার ভালোবাসা। মাত্রাতিরীক্ত তার উন্মাদনা। সীমাহীন তার প্রেম। এতো এতো প্রেমের বর্ষনেই তো আজ ভিজে একাকার রোদ। এত সবেই তো আজ এই দশা রোদের। এই পাগল আদ্রিয়ানের পাগলামি’তেই নিজেকে বারবার হাজার বার হারিয়ে ফেলতে মন চায় রোদের।

রোদ মাথা এলিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের চওড়া কাঁধে। একহাত রাখলো বাবুর পিঠে। ওভাবেই তাকিয়ে রইলো দুজন ছোট্ট সোনার দিকে। তাদের এত কষ্টের ছোট্ট একটা প্রতিদানের দিকে।
ওদের গাড়িটা দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল একসময়। রাতুল তবুও ঠাঁই দাঁড়িয়ে। বাচ্চাটা আরো ঘন্টা খানিক আগেই দেওয়া হতো কিন্তু রাতুলের অনুরোধে দেওয়া হয় নি। রাতুল অনির্মেশ চেয়ে ছিলো বাবুটার দিকে। ছুঁয়েছে। হেসেছে। আদর করছে। এরপর? একসময় কেঁদে ফেলেছে।

কিছু না বলা কথা বলেছে পুচকোটাকে। তার প্রগাঢ় অভিলাষ ব্যক্ত করেছে। পুচকো তখন জেগেই ছিলো। ছোট্ট ছোট্ট চোখ দিয়ে তাকিয়ে সে রাতুলকে দেখেছে। রাতুলের কান্না মাখা চোখ দেখেছে। আফসোস সে বুঝতে অক্ষম আর রাতুল অক্ষম বুঝাতে। ঐ যে থাকে না কিছু নামহীন অজ্ঞাতনামা সূত্র। তাই হয়তো আছে রাতুলের সাথে রোদের সন্তানদের। নাহলে কেন রাতুল কাঁদে আজও ঐ ছোট্ট মেয়েটার জন্য? কেন হাহাকার করে উঠে হাতবিরাতে এই ছোট্ট ছেলেটার জন্য?
হঠাৎ ফোন বাজতেই রাতুল শার্টের কনুই’তে চোখ মুছলো। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে উঠলো,

— আসসালামু আলাইকুম। কোথায়? ব্যাস্ত?
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। কোথায় আর থাকব? তোমার হৃদয়ের দহনের প্রথম পাতায় ই আছি।
হাসির একটা চমৎকার আওয়াজ পেলো রাতুল। নিজেও হাসলো মাথা চুলকে। ইদানীং বোঁকা বোঁকা সাহিত্যক অনুভূতি জন্মায় তার মাঝে। এসব বলতেই দিশা হাসে গড়াগড়ি খেয়ে। রাতুল পা বাড়ালো সামনের দিকে। প্রশ্ন করলো,

— আজ যাবে নাকি কাল?
— আজই যাব। বাবুটাকে দেখব। আর…
— আর কিছুই না। সোজা বাসায় আসবে। শুনো আজ শাড়ি পড়িও তো দিশা। আলসের মতো কিছুই করো না। আজ শাড়ি পড়বা। আমি তারাতাড়ি ফিরব। দরজা যাতে তোমাকেই খুলতে দেখি। রাতে খাবে না। একসাথে খাব। আর….

— এবার তো থামুন।
— উমম।থামবো? আচ্ছা থামি। তবে শুনো সাজবা না। পরে সব আমার পেটে যাবে….
“বাজে লোক”, “অসভ্য লোক” এই শব্দ দুটোই শুনতে পেলো রাতুল। এরপর টুটটুট।দিশা লজ্জায় কল কেটে দিয়েছে। রাতুল ফিঁক করে হেসে উঠলো। কেবিনে ডুকে নার্স’কে বললো যাতে রুগী পাঠায়।

এত এত ঝর ঝাপটা মিটিয়ে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে। নতুন প্রাণ নিয়ে। একটা প্রাণ হারিয়ে আজ বাড়ীর চৌকাঠে পা রাখলো আদ্রিয়ান রোদ সাথে তাদের নবজাতক। দৌড়ে বাচ্চারা চলে এলো। আদ্রিয়ানের বাবা কোলে তুলে নিলেন নাতি’কে। তার ছেলের ছেলেকে। ছোট্ট পুচকু’টাও দাদার কোলে চুপ করে আছে।

ঘুম তার গাড়িতেই ভেঙেছে। কিন্তু তেমন কান্নাকাটি করে নি। আদ্রিয়ান ওর মা’কে বলে রোদকে নিয়ে রুমে যেতে নিলেই রোদ যাবে না। আদ্রিয়ান বুঝলো কিছু। এতদিন পর এতকিছু হারিয়ে যখন একটা সম্বল পেয়েছে তখন কি আর সেটা ছাড়তে মন চায়? হোক না সেটা এক মুহূর্তের জন্য।
আদ্রিয়ান রোদ’কে ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

— একটু পরই এসে যাবে ও। তোমার এখানে থাকা ঠিক না। চলো।
রোদ মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান ওকে ধরে সবার আড়ালে আসতেই ফট করে কোলে তুলে নিলো। এই সময়ে আদ্রিয়ান থাকতে নিশ্চিত ওর বউকে সিড়ি বইতে দিবে না। রোদ এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার আদ্রিয়ানের গলা জড়িয়ে নিলো। মৃদু হেসে উপরে চলে গেল আদ্রিয়ান।

দরজা ভিরিয়ে রোদকে বেডে বসিয়ে আলমারি থেকে দু’জনের কাপড় বের করছে ও। এদিকে রোদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে। রুমের খাট চেঞ্জ। বড় একটা বেড। যেটা রোদ আদ্রিয়ান মিলেই পছন্দ করেছিলো। চার সন্তান নিয়ে একসাথে শুবে বলে। বুকটা হুহু করে উঠলো। খালি অনুভব হলো। চাপ সৃষ্টি হলো হৃদপিণ্ডে। কলিজা’টা যেন কেউ মোচড়ে ধরছে। গলায় আটকে গেলো রোদের। কেউ চেপে ধরেছে যেন। চোখে জ্বালাপোড়া অনুভূতি হচ্ছে। পানি পরতে দেওয়া যাবে না। আদ্রিয়ান আছে। আচ্ছা রোদের ই এমন লাগছে আদ্রিয়ানটার কেমন লাগছো? আদ্রিয়ান কেন প্রতিক্রিয়াহীন?

দু’জন ই দু’জন থেকে নিজেদের আড়াল করতে ব্যাস্ত। অথচ ভিতর ভিতর দহনে পরিপূর্ণ। ছোট্ট একটা দোলনা’র মতো বেড রাখা খাটের সাইডে। এখানে তো দুটো থাকার কথা। তাহলে একটা কেন? দুই হাতে চাদর খাঁমচে ধরেছে রোদ। নিঃশ্বাস উঠানামা করছে। দম আটকে আসছে যেন। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে ঝট করে রোদকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। বুক উঠানামা করছে ওর। নিজেকে শক্ত রাখছে কার জন্য? এই রোদটার জন্য ই তো। এখন যদি রোদ এমন করে তাহলে কি চলে?

আস্তে ধীরে শান্ত হয়ে এলো রোদ। আদ্রিয়ান কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। রোদকে ধরে ধরে ওয়াসরুমে নিলো। নিজে গোসল করিয়ে দিলো। রোদ’কে পোশাক পড়িয়ে রুমে বসিয়ে নিজেও গোসল করলো। এতদিনে একটু ফ্রেশ লাগছে। রোদ ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিতেই আদ্রিয়ান বের হয়ে তা মুছে দিতে দিতেই কেউ দরজায় নক করলো। আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— এসো।

আদ্রিয়ানের মা এসেছে বাবুকে নিয়ে। পেছনে মিশি কান্না করছে। মিশান ওকে ধরে আছে। রোদ চমকালো। আদ্রিয়ান গিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে মা? তাকাও। কেন কাঁদছে বাবা’র জান?

মিশি কাঁদছে। রোদের কেন জানি মনে হচ্ছে ওর ছোট্ট মেয়েটাও কাঁদছে। উঠে দাঁড়িয়ে গেল রোদ। এগিয়ে এলো ধীরে ধীরে। মিশিকে নিতে চাইলো। দিলো না আদ্রিয়ান। এই সময়ে রোদ মিশিকে কোলে নিলে সমস্যা হবে। রোদ জোর করলেও দিলো না আদ্রিয়ান। রোদ কিছুটা রাগী চোখে তাকালো। আদ্রিয়ান ভরকালো। কিছু না বলে রোদকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে মিশিকে দিলো। রোদ দুই হাতে মিশিকে বুকে চেপে নিলো। এখনও বুক ধকধক করছে ওর। সারা মুখে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে মা? এই যে আমি। কেন কাঁদছে মাম্মার বাচ্চা?
— মিশির বোন নেই। মিশি বোন চাই।
কেঁদে কেঁদে বললো মিশি। রোদ ওকে আরো আঁকড়ে নিলো। ওর গলা ফাটিয়ে কাঁদতে মন চাইলো কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? আদ্রিয়ান চমকালো এমন কথায়। ওর মা নিচু স্বরে বললো,

— আলিফ হয় তো কথার মাঝে শুনেছে। মিশিকে বলেছে। সেই থেকে কাঁদছে।
আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— আচ্ছা সমস্যা নেই।

ওর মা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। তার ছোট ছেলেটার জীবনে সুখ গুলো বড্ড অদ্ভুত ভাবে আসে। মিশান রুমে ডুকে মায়ের পাশে বসলো। মাথা রাখলো মা’য়ের কাঁধে। রোদের হঠাৎ ই আবার মনে হচ্ছে কই রোদ অসুখী? কোথাও ওর শূন্যতা? এই তো একগুচ্ছো ভালোবাসা ওর। তিন তিনটা সন্তান।

পুচকে’টা হঠাৎ কেঁদে উঠলো। বাচ্চার কান্নার শব্দ কানে আসতেই ধরফরিয়ে উঠলো রোদ। কখন যে ঘুমালো। আশে পাশে তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান ছেলেকে বুকে নিয়ে রোদের দিকে আসছে। রোদ ছটফট করে উঠলো। এই কান্নার শব্দ যেন সহ্য হচ্ছে না। টলমলিয়ে উঠলো চোখ। আদ্রিয়ান রোদের পাশে বসে পাশ থেকে বালিশ নিয়ে রোদের কোলের উপর রেখে বললো,

— ক্ষুধা লেগেছে। কতক্ষণ খায় নি।
বলেই বালিশটার উপর দিয়েও নিজেও হাত দিয়ে ধরলো। বাচ্চাটা এতই ছোট যে কোলে নিয়ে খাওয়ানো যায় না। তাই বালিশ দিয়ে উঁচু করে নিতে হয়। আদ্রিয়ান রোদের এমন আচরণ দেখে মনে মনে হাসলো। ছোট রোদ মা হয়েছে যদিও আগেই কিন্তু এমন অবুঝ মা হয়েছে প্রথম।

আদ্রিয়ান ই রোদের পোশাক ঢিল করে দিলো। বাবু’কে খাওয়াতে সাহায্য করলো। বাবু’টা দুধ পেতেই চুকচুক করে খাচ্ছে। একদম শান্ত। রোদ তাকিয়েই রইলো। ওর কাছে এসব নতুন নতুন অনুভূতি গুলো অতি মূল্যবান। একদম অগেছালো। কেমন ঘোলাটে। নিজের অনুভূতি গুলোকে এখনো বুঝে উঠতে পারে নি রোদ। সব কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে ওর।
বাচ্চাটা খেয়েই মা’য়ের বুকে ঘুম। আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো হাতে খাবার নিয়ে। রোদ অরুচি মুখ করে তাকাতেই আদ্রিয়ান বলে উঠলো,

— কোন হেলাফেলা না রোদ। এই সময় তোমার খাওয়া দাওয়া একদম হেলা করা যাবে না। পোস্ট প্রেগ্ন্যাসির রুলস সব মানতে হবে।
— সত্যি এখন মন চাইছে না। পরে খাই?
— উহুম। হা করো। খায়িয়ে দিচ্ছি। তুমি ঠিক ঠাক না খেলে বাবু কিভাবে খাবে বলো?

রোদ আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ খেয়ে নিলো। এই ভালোবাসা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের। নাহলে কেউ কি পায় পোস্ট প্রেগ্ন্যাসির এতসব যত্ন নিজের স্বামী থেকে? সবাই তো নতুন বাচ্চা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। কেউ কি তখন আর মায়ের কথা মনে রাখে? তার ও যে যত্ন দরকার তা কি কেউ মনে রাখে? আদ্রিয়ান রাখে৷ রাখছে। নিজের সবটুকু দিয়ে স্ত্রী’কে আগলে রাখছে।

অন্ধকার যতটা ঘনিয়ে আসছে পালা দিয়ে ততটাই বাড়ছে ছোট পুঁচকের কান্না। ঘুম সে আসছেই না। বিপাকে পরলো সবাই। অবশেষে যখন একটু থামলো তখন আদ্রিয়ান এক প্রকার জোর করেই ওর মা, সাবা আর জারবাকে বিদায় করলো। তাদের ও রেস্ট দরকার। সাবা’র ও ছোট্ট আরিয়ানা আছে।

ছেলের কান্নায় যখন রোদও কেঁদে ফেলেছিলো তখন আদ্রিয়ান কল লাগায় ড.মিহা’কে। ডক্টর মিহা হেসেছিলেন অল্প। টের পেয়েছিলো আদ্রিয়ান। তিনি জানান এটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতোই কাঁদছে। অন্য সমস্যা নেই। কিছুটা সস্তির শ্বাস ফেলেছিলো রোদ আদ্রিয়ান। মিশান আপাতত ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে হাটছে। পুঁচকে’টা চোখ পিটপিট করে ভাই’কে দেখে আবার মুখে আঙুল ঢুকিয়ে রাখলো। মিশান ঝটপট মা’য়ের কাছে এসে বললো,

— মা মুখে হাত দিয়েছে। সমস্যা হবে না?
রোদ একটু হেসে হাতটা সরিয়ে দিতেই যেন মহা ভারত শুদ্ধ হলো। গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো পুঁচকে’টা। রোদ কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকাতেই দেখলো মিশানই কেঁদে দিবে। রোদ হাত বাড়িয়ে কোলে নিলো ছেলেকে। নাড়লো। আদর দিলো। কত কথা বললো। লাভ হচ্ছে না। রোদ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

— আব্বু দেখো তো তোমার বাবা কোথায়? বলো মা ডাকে।
মিশান দৌড়ে বেরিয়ে গেল। মিনিটের মধ্যেই টেনে কোথা থেকে আদ্রিয়ান’কে নিয়ে এসেছে। আদ্রিয়ান’কে জিজ্ঞেস করার ও সুযোগ দেয় নি। রুমে ডুকে ছেলেকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— আবারও কাঁদছে?
— আমি শুধু মুখ থেকে হাত নামিয়েছি।
আদ্রিয়ান ব্যাস্ত পায়ে এগিয়ে এসে ছেলেকে কোলে তুললো। মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাবা আমি দেখছি। তুমি যাও ঘুমাও।
— ও থামছে না কেন?
আদ্রিয়ান অল্প হাসার চেষ্টা করে বললো,
— খাবে হয়তো।

মিশান ঝটপট করে ভাইয়ের আঙুলে চুমু খেয়ে চলে গেল। আদ্রিয়ান দরজা লাগিয়ে রোদকে দিলো খাওয়াতে। প্রথম প্রথম খাবে না সেই পুঁচকে’টা। কত আদর আহ্লাদ করে পরে গিয়ে খাচ্ছে সে। রোদ তখনও মুখ গোমড়া করে রেখেছে। আদ্রিয়ান ভাবলো ছেলে হয়তো খেয়েই ঘুমাবে কিন্তু না সে গোলগোল চোখ দিয়ে বাবা মাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলো নাড়ছে। আদ্রিয়ান ছেলের পায়ে চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বললো,

— বাবা’র জান ঘুমাবে না?
ছোট বাবুটা “উ আ” শব্দ করছে। হঠাৎ করেই মুখে হাত ডুকালো সাথে সাথেই বমি করে দিলো। রোদ ভীষণ ভয় পেলেও আদ্রিয়ান তেমন উত্তেজিত হলো না কারণ বার্প না করানোর কারণে এমন হয়েছে। রোদ’কে সান্ত্বনা দিতে দিতে পাতলা একটা সুতি কাপড়ের টুকরো দিয়ে আদ্রিয়ান ছেলেকে পরিষ্কার করে দিয়ে নতুন কাপড় পড়াচ্ছে। রোদ ভীতু গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— বমি করলো কেন? ডক্টরকে ফোন দিন।
— বার্প না করানোর কারণে এমন হয়েছে। এরপর থেকে খেয়াল রাখবে।
বলে আদ্রিয়ান ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। রোদ ঐ দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,
— মিশান নাম রেখেছে ওর। আকিকা কবে হবে?
— আগামী পরসু। সবাইকে বলা হয়ে গিয়েছে। গরু দেখাও হয়েছে। কাল সকালে নিয়ে আসবে।
— ওহ্।
ছেলে ততক্ষণে ঘুম। আদ্রিয়ান ছেলেকে বুকে নিয়েই রোদের পাশে আধ শোয়া হলো। লাইট টা অফ করে বললো,

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৫১ শেষ অংশ 

— ঘুমাও এবার সোনা। কাছে এসো। এদিকে এসো।
রোদ এগিয়ে এলো কিছুটা। আদ্রিয়ানের বাহুতে মাথা রেখে চোখ বুজে নিলো। কয়েক ফোঁটা খুশির পানি পরলো চোখ গড়িয়ে।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৫৩