ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৯ (২)

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৯ (২)
সাইয়্যারা খান

বিকেলে আদ্রিয়ান হাজার ডাকাডাকি করলেও উঠে নি রোদ। এমনিতে সজাগ ই ছিলো তবুও বান্দী সাড়া দেয় নি। ঠ্যাটার মতো শুয়ে ছিলো। আসরের সময় দিয়ে উঠে নামাজ পড়ে নিলো। আদ্রিয়ান তখন মসজিদে চলে গিয়েছে। রোদ কোন কথা বলে নি। নামাজ শেষে রোদ চুল আঁচড়াতে বারান্দায় যায়। তখনই রুমে ডুকে আদ্রিয়ান। রোদকে না দেখে ভ্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো বারান্দার দরজা খোলা।

বিড়াল পায়ে আদ্রিয়ানও বারান্দায় গেল। রোদ তখন চুল আঁচড়াতে ব্যাস্ত। আদ্রিয়ান একবার গলা খ্যাঁকানি দিলো তাতেও বিশেষ লাভ হলো না। রোদ নিজের মতো করে চুল বেঁধে আদ্রিয়ানকে সাইড কেটে রুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ান হতাশার শ্বাস ফেললো। আদ্রিয়ান আপাতত চাইছে না রোদ নিজের বাসায় যাক। এখন যদি ঐ বাসায় নিশ্চিত মানুষজন আসবে। দুইজন ভালো বলবে সাথে একজন মন্দও বলবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মানুষ সর্বদা কথা বলতে পছন্দ করে এতে কার ক্ষতি হলো তা তারা বুঝতে চায় না। মূলত আদ্রিয়ান চাইছে রোদ আরো স্ট্রং হোক। ঠিক যতটা স্ট্রং হলো কারো কথায় ওর এনজাইটি অ্যাটেক না হয়। ঐ বাড়ী গেলেই এমন সমস্যা হতে পারে সিউর আদ্রিয়ান। নতুন বিয়ে হওয়া মেয়ে বাবার বাসায় গেলে লোকজন ভীর করবেই। কিন্তু এসব রোদকে কে বুঝাবে? এই মেয়ে তো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। কোন কথা শুনতেই নারাজ সে।

রুমে ডুকতেই দেখলো রোদ মিশিকে কোলে নিয়ে ফোনে কোন ভিডিও দেখছে। মিশি কখন ঘুম থেকে উঠলো ভেবে পেল না আদ্রিয়ান। আওয়াজ শুনেই বুঝা যাচ্ছে নিশ্চিত দুই জন সিনচেন দেখছে। মিশি তো মায়ের কোলে বসে মজা নিয়ে দেখছে। রোদও দেখছে সাথে মিশির ছোট চুলে ঝুটি করে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান ডুকতেই রোদ মিশিকে কোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এবার মেজাজ খারাপ লাগছে আদ্রিয়ানের। কতক্ষণ থাকবে এভাবে?
রোদ নিচে নামতেই দেখলো জারবা আর আলিফ বসে টিভি দেখছে। রোদকে দেখেই জারবা খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে এসে বললো,

— ছোট ভাবী চল বাইরে যাই।
— এখন কোথায় যাব?
আলিফ উঠে এসে বললো,
— খালামনি চলো বাড়ীর পেছনে যাই। মজা হবে।
রোদ যাবে কি যাবে না ভাবতেই কোল থেকে মিশি বললো,
— মাম্মা মাম্মা চলো না যাই প্লিজ। মিশি আর মাম্মা খেলবে।

রোদ কি আর না যেয়ে পারে? উহু একটুও না। তাই চার জন রওনা দিলো বাড়ীর পেছন দিকে। রোদ এই দিকে তেমন একটা আসে নি। আসলে রোদ এখনও পুরো বাড়ীই দেখে নি। সামনে গ্যারেজ এরপর ডুপ্লেক্স একটা বাড়ী যার এক সাইডে বড় ছাদ আর পেছনে অনেক খানি ফাঁকা জায়গা। এখানে বড় ছোট গাছ ও আছে। সাথে বসার জন্য স্পেস। মাঝে খোলা জায়গা হয়তো বাচ্চাদের খেলার জন্য। মিশি তো মায়ের কোল থেকে নেমেই দৌড়া দৌড়ি শুরু করেছে আলিফের সাথে। রোদ জোরে বললো,

— মা আস্তে দৌড়াও পরে যাবে।
মিশি কি আর শুনে কারো কথা? জারবা একটা ফুটবল নিয়ে এলো। এখন নাকি ওরা ফুটবল খেলবে। এতদিন পর ফুটবল দেখে রোদের চোখ চিলিক দিয়ে উঠলো। রাদ আর রুদ্রর সাথে প্রায়ই খেলতো রোদ। মাঠে খেলা হলে রাদ যেতে দিতো না দেখতে। এ নিয়ে মুখ ফুলালেই রাদ,রুদ্র আর ইশান মিলে খেলতো ওর সাথে। আজকেও ফুটবল দেখে রোদ মন খারাপ ভুলে গেল। চিল্লিয়ে ডাকলো,

— মিশু,আলিফ এখানে আসো।
দুই জনই দৌড়ে এলো। রোদ নিজের উরণা সাইডে চেয়ারে রেখে এলো। পরণে ওভার সাইজ টিশার্ট আর প্যান্ট। জারবাও তাল মিলালো। সবার আগে রোদই কিক মারলো। এরপর শুরু হয়ে গেল চারজনের ক্রীড়াকালাপ। নিমিষেই লেগে গেল হৈ চৈ। মিশান নিজের ব্যালকনিতে বসে ছিলো হঠাৎ চিল্লাচিল্লির আওয়াজে নিচে তাকাতেই ওদের দেখলো। নিজেও এক দৌড়ে নিচে নেমে এলো। হঠাৎ করে মিশানের পায়ের কাছে বল আসতেই মিশান কিক মারলো যার বিপরীতে রোদ কিক করলো৷ রোদ একবার মিশানের দিকে তাকালো সাথে সাথেই চোখা চোখি হলো। রোদ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— যে আগে গোল করবে সেই জিতবে।
মিশানও ঘাড় কাত করে বললো,
— ডান।
লেগে গেল যুদ্ধ। পাঁচ জন মিলে যেন বাড়ী ঘর সহ কাঁপিয়ে ছাড়ছে। আদ্রিয়ান ফোনে কথা বলছিলো হঠাৎ করে এমন আওয়াজে ফোন কেটে দিয়ে বাইরে উঁকি দিলো।

তাকাতেই নিজের অজান্তে ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো। চোখে ভর্তি করে নিলো ঐ দৃশ্য। রেলিং এ ভর করে দেখতে লাগলো। কি মনে করে আবার নিচে চলে গেল। বসে বসে আরাম করে দেখবে আদ্রিয়ান। ততক্ষণে সাবাও এসে হাজির। সাবা আর আদ্রিয়ান বসে বসে দেখছে। এমন সময় হুট করে গোল করে দিলো মিশান। মিশি, আলিফ আর জারবা জোরে চিল্লিয়ে উঠলো। রোদ মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। মিশান বল হাতে এগিয়ে এসে বললো,

— আ’ম দা উইনার।
রোদ মুখ ঝামটা মে’রে বললো,
— জ্বি না। আমি ই আটকাই নি। ছোট মানুষ তাই ছেড়ে দিলাম। নাহলে আমি ই জিততাম।
— হারার পর সবাই এটাই বলে।
রোদ নিচের ঠোঁট বের করে ভেঙিয়ে বললো,
— তুমি জানো আমার ভাইয়া এলাকায় সবসময় ম্যাচ জিতে। পাঁচবার ট্রফি জিতেছে। আর সেই ভাইয়াকে আমি হারিয়ে দেই৷
মিশান এবার হাসতে হাসতে বললো,

— তোমার কথা তোমাকেই ফিরত দিলাম। তুমি ছোট মানুষ তাই তোমার ভাইয়া ছেড়ে দিতো।
রোদ মুখ নিচু করে নিলো। আসলেই তো রোদ তো কোনদিন ভাবে নি। এত বড় দামড়া দামড়া ভাইদের ও কীভাবে হারাতো? নিশ্চিত ভাইরাই সুযোগ করে দিতো।
ঘেমে নেড়ে একাকার হয়ে গিয়েছে সবাই। ফর্সা রোদ চেহারা লাল হয়ে গিয়েছে। মিশিরও একই অবস্থা। মিশি ঠোঁট ফুলিয়ে এসে রোদের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,

— মাম্মা আমরা হেরে গিয়েছি?
রোদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— না তো মা তোমার ভাইয়া ছোট মানুষ তাই মাম্মা ছেড়ে দিয়েছি।
বলেই মিশিকে নিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। রোদ জানে এখন আর কথায় পারবে না। তাই কেটে পড়াই শ্রেয়। এদিকে মিশান আর জারবা এতক্ষণ থম ধরে দাঁড়িয়ে থেকে হু হা করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান আর সাবাও বসে হাসলো রোদের বাচ্চামি দেখে। সাবা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— দেখো রোদই একদিন মিশানের মায়ের চাহিদা পূরণ করবে।
— জানি।
মিশান জারবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— পুত্তি চলো ভেতরে যাই।
বলেই আলিফকে কাঁধে তুলে নিলো। আলিফও ভাইয়ের চুল খামচে ধরে রাখলো। জারবা মুখ কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ছোট ভাইয়া তোমার ছেলে আবারও আমাকে পুত্তি ডাকে।কিছু বলবা?
আদ্রিয়ান আর কি বলবে। ছোট বেলায় মিশান ফুপি ডাকতে পারতো না তাই পুত্তি ডাকতো। বড় হওয়ার পরও ও পুত্তি ই ডাকে। এতে করে ক্ষেপে যায় জারবা। মান ইজ্জতের ব্যাপার স্যাপার। পুত্তি কোন ডাক হলো। জারবা আর মিশানের বয়সের পার্থক্যও তেমন একটা না। দুই জন বন্ধুর মতোই।

রুমে ডুকেই আদ্রিয়ান দেখলো রোদ ভেজা টাওয়াল দিয়ে মিশিকে পুরো মুছিয়ে ড্রেস পাল্টে একটা ছোট বিড়াল প্যান্ট আর পাতলা গেঞ্জি পরিয়ে দিলো। নিজেও অন্য একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ানের হাতে রোদের ওরনা। বাইরেই ফেলে এসেছিলো এই মেয়ে। আদ্রিয়ানকে দেখতেই মিশি হাত বাড়িতে দিলো যার অর্থ কোলে নাও। আদ্রিয়ান হেসে মেয়েকে কোলে তুলতেই মিশি বাবার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

— বাবাই বাবাই?
— জ্বি মা, জ্বি মা।
আদ্রিয়ান ও মিশির মতো করে বলায় কুটকুটিয়ে হাসলো মিশি আবার কি মনে করে মন খারাপ করে ফললো। আদ্রিয়ান তা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে আমার মা’য়ের?
— মাম্মা হেরে গিয়েছে। মাম্মা সেড সেড।
আদ্রিয়ান মেয়ের গালে চুমু দিয়ে বললো,
— উহু। মাম্মা সেড হলে আমরা হ্যাপি করে দিব।

ওদের কথার মাঝেই রোদ বেরিয়ে এলো। এখন শান্তি লাগলো ওর। মাগরিবের আজান দিতেই আদ্রিয়ান চলে গেল মসজিদে আর রোদও মিশিকে বসিয়ে নিজে নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ থেকে উঠে মিশিকে কোলে তুলে নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো,
— আমার বাচ্চা আজকে কি খাবে?
মিশি খুশি হয়ে বললো,

— পাসতা।
— আচ্ছা মা বলো তো তোমার ভাইয়া কি পছন্দ করে?
মিশি পরে গেল গভীর ভাবনায়। তার ভাই কি পছন্দ করে কি পছন্দ ভাবতে ভাবতে রোদ ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
— হ’য়েছে আম্মাজান আর ভাবতে হবে না।
মিশি যেন খুশি হলো। আসলেই ও জানে না ভাই কি পছন্দ করে। রোদ কিচেনে ডুকতেই দেখলো সাবা চা বানাচ্ছে। রোদকে দেখেই হেসে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু লাগবে?
— হুম। পাসতা রান্না করব। একটু বলবে কোথায় কি আছে?
— তোর কেন রান্না করতে হবে? আমি করে দিচ্ছি। বাচ্চাদের সাথে বোস গিয়ে।
রোদ জেদ ধরে বললো,
— না না আমিই করব।

অগত্যা রাজি হলো সাবা। ততক্ষণে কিচেনে জোগ দিলো জারবা। সাবা চা রান্না করে আবার পাকোড়া বানাতে মনোযোগ দিলো৷ হঠাৎ করেই বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব। তাই চায়ের সাথে পাকোড়া বেস্ট হবে। সব শেষ করে তিনজন হাতে হাতে করে সব ড্রয়িং রুমের টেবিলে নিয়ে এলো। সাবা আদ্রিয়ানের মায়েরটা তুলে রুমে দিয়ে এলো। বিকেল থেকে তার হাটুর ব্যাথা বেড়েছে। আদ্রিয়ান আর মিশান ও মসজিদ থেকে এসে সোফায় বসে মিশি আর আলিফের সঙ্গে খেলছিলো।

রোদ আগে এক বাটিতে চামচ দিয়ে সেই পাসতা মিশানকে এগিয়ে দিলো। মিশানও নিয়ে নিলো। আলিফকে দিয়ে নিজে মিশির মুখে তুলে দিলো। আবার কি মনে করে উঠে কিচেন থেকে দুই মিনিট পর হাতে করে দুই কাপ কফি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ানকে এই দুই দিনে চা খেতে দেখে নি রোদ। এই লোক একটা কফিখোড়।এক কফি আদ্রিয়ানকে দিয়ে আরেকটা মিশানকে এগিয়ে দিলো। মিশান মিষ্টি করে হাসি দিলো। আসলেই ওর এখন কফি খেতে মন চাইছিলো। মিশিকে খায়িয়ে রোদ নিজেও একটা পাকোড়া মুখে নিয়ে খেতে খেতে সবার সাথে কথায় যোগ দিলো। কারো সাথে মিশতে তেমন একটা সময় লাগে না ওর। মিশান পাসতাটা শেষ করে বললো,

— তুমি রান্নার করেছো?
রোদ মুখে পাকোড়া চিবুতে চিবুতে বললো,
— হুম।
— অনেক মজা হয়েছে।
— এসব বলে লাভ নেই। পরেরবার ছাড় দিব না বাচ্চা মানুষ।
মিশি, আলিফ আর জারবা হু হা করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান আর সাবাও একটুও হাসলো। মিশান মুখ ছোট করে বললো,
— তুমি তোমার ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে দেখো সে যেটা বলবে সেটাই মেনে নিব।

রোদের হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেল। নিশ্চিত রোদ জানে এখন বিপদ হতে পারে তাই মুখ ভেংচি দিয়ে আরেকটা আলাম পাকোড়া মুখে পুরে নিলো। ওর আচরণে সবাই হেসে উঠলো। আরিয়ানের আজ রাতে অফ থাকায় হসপিটাল থেকে তারাতাড়ি ফিরে এলো। নিজেও সবার সাথে যোগ দিলো।
এভাবেই সন্ধ্যাটা কেটে গেল সবার আনন্দে আনন্দে।

একেবারে এশারের সময় নামাজ পড়েই মিশিকে খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো রোদ। উঠে জারবার রুমে যেতে নিলেই দেখলো মিশানের রুমের দরজা খোলা। কোন ভিডিও দেখছে কেমেস্ট্রির কিন্তু হয়তো বুঝতে পারছে না। রোদ নক করে বললো,
— আসবো মিশান?
মিশান একবার তাকিয়ে বললো,
— কিছু বলবে?
— কোন সমস্যা হচ্ছে?

— আসলে অর্গানিক ক্যামিস্ট্রির বিক্রিয়াটা বুঝতে পারছি না। সমতা করছি তবুও হচ্ছে না। লাস্টে শুধু মিথেন রয়ে যাচ্ছে বারবার। ভিডিও দেখেও বুঝতে পারছি না।
রোদ এগিয়ে এসে বইটা হাতে তুলে নিলো। মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি বলি দেখো বুঝ কি না?
— আচ্ছা।

রোদ খাতায় পুরো বিক্রিয়া ভেঙে ভেঙে লিখে দিয়ে বুঝিয়ে বললো। সাথে এটাও বললো যে, সব বিক্রিয়া সাধারণ নিয়ম মেনে হয় না। কিছু কিছু বিক্রিয়া ব্যাতীক্রম হয়। পুরোটা দেখিয়ে রোদ জিজ্ঞেস করলো,
— বুঝেছো?
মিশান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি বেস্ট। আমি এই জীবাশ্মের অধ্যায় অনেকদিন ধরে বুঝার চেষ্টা করছি। স্কুলের স্যারও বুঝিয়েছিলো কিন্তু আমি কিছুই বুঝি নি। থ্যাংক ইউ।
রোদ একটু হেসে মিশানের চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,

— মেনশন নট ইউ আর এ গট!
মিশান থতমত খেয়ে বললো,
— আমি ছাগল?
— আরে ধুর আমিতো কথার কথা এমনিতেই বললাম। এখন যাই। পড়া শেষ করে নিচে এসো।
— আচ্ছা।
শুনে চলে গেল রোদ। মিশান একটু হেসে পড়ায় মনোযোগ দিলো৷ আদ্রিয়ান দরজার সামনেই দাঁড়ানো ছিলো মূলত রোদকে খুজতে এসেছিলো। কে জানতো একদিনেই দু’জনের এত বনে যাবে।

আদ্রিয়ান রোদকে পেছন থেকে ডাকলেও পাত্তা দিলো না রোদ। সোজা জারবার রুমে ডুকে পড়লো। বের হলো একেবারে রাত ১০ টায়। ডাইনিং টেবিলে একে একে সবাই এসে বসতে লাগলো। আজ সাবার সাথে রোদও কিচন থেকে একটা একটা করে এনে টেবিলে রাখতে লাগলো। শাশুড়ীর হাটু ব্যাথা তাই বেশি হাটতে পারবেন না। সাবাকে একা একা করতে দেখে রোদ নিজেই এগিয়ে এসে হেল্প করছে এতে সাবা হাজার না করলেও রোদ নড়ে নি।

কে বলবে এই রোদ দুই দিনের নতুন বউ? মনে হয় বাড়ীর মেয়ে যেমন জারবা। আজকে আদ্রিয়ানের পাশেও বসলো না রোদ। বদ লোকের আশে পাশে থাকবে না রোদ তাই যেয়ে বসলো সাবার সাথে। আদ্রিয়ানের মেজাজ খারাপ যা ছিলো এখন তা গেলে বেড়ে। দাঁত কটমটি করে রোদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু কাকে চোখ রাঙাবে রোদ তো ফিরেও তাকাচ্ছে না। নিজের মতো করে আজ একটু খেয়ে বাকিটা নেড়েচেড়ে সবার সাথে উঠে পরলো। সাবাকে আবার এগুলো গুছাতে হেল্পও করলো সাবা আর জারবা।

রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি কিন্তু রোদের কোন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। যাবে কীভাবে? নিচে রোদ, মিশান, জারবা মিলে মুভি দেখছে। আদ্রিয়ানের রাগ হিরহির করে বেড়ে গেলো। ধুপধাপ পা ফেলে নিচে এসে সোজা টিভি অফ করে দিলো এক ধমক। এত রাতে কীসের টিভি?
জারবা আর মিশান কোন মতে কেটে পরলো রয়ে গেছে রোদ। আদ্রিয়ান দাঁত কটমটি করে বললো,
— সোজা রুমে।

রোদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একদম সোজা হয়েই রুমে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ান ও সব লাইট অফ করে রুমে এলো। ওয়াসরুম থেকে রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান ওকে টেনে ধরলো। রোদ হাত ছাড়াতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর কোমড় পেচিয়ে ধরে দাঁত চেপে বললো,
— সারাদিন অনেক হ’য়েছে। এখন পালিয়ে দেখাও।
— ছাড়ুন।
আদ্রিয়ান আজ আর ছাড়লো না মুখ এগিয়ে নিলো রোদের গলার দিকে। রোদ তখনও ঠেলতে ঠেলতে বললো,
— কথা নেই আপনার সাথে। ছাড়ুন।

মুহূর্তেই আঁতকে উঠল রোদ। জোরে এক ধাক্কা দিলো আদ্রিয়ানকে। গলায় হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখে পানি টলমল করছে। মাত্রই কি করলো আদ্রিয়ান? রোদ হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে চাইলেই রোদ সরে গেল। আদ্রিয়ান জোর করে ধরে গলা থেকে হাত সরিয়ে বাইট করা যায়গায় গভীর ভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। রোদ মুহূর্তেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান এবার দু-হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— কাল দেখা করাব প্রমিস।
রোদ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
— ধুর মিয়া। কামড় দিয়ে এখন দরদ দেখাচ্ছে।
— “মিয়া”? কি সব ভাষা বল রোদ?

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ৯

রোদ ভেংচি কাটলো। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে রোদের কোমড় জড়িয়ে উঁচু করে ধরে বেডে শুয়িয়ে লাইট অফ করে নিজেও ওর পাশে শুয়ে পরলো। মিশিকে একপাশে আর রোদকে আরেক পাশে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব ১০