ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৯

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৯
মেহা মেহনাজ

জায়গাটার নাম পূবের বিল। অথচ এর মুখ পড়েছে দক্ষিণ দিকে। এমন অদ্ভুত নামকরণের কাহিনি জানতে বেশ আগ্রহ জেগে উঠে তুষারের মনে। কিন্তু বকুল নিজেও এই ব্যাপারে জানে না। ওর কাছে কখনোই এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এখন তুষারের থেকে শোনার পর মনে হচ্ছে, আসলেই কারো কাছে জিজ্ঞেস করে জানা উচিত ছিল।
ওরা হাঁটছে বিলের পাশ ধরে। দুজনেই চুপচাপ। এখন সময়টা মধ্যাহ্ন। কিছু সময়ের ভেতর আযান পড়ে যাবে। সহসা বকুল নিজ থেকে বলে উঠে,

“বিকালে আইলে ভালা হইতো। ওই সময় অনেক মানুষ আসে। খুব হৈচৈ হয়। রোইদটাও গায়ে লাগত না।”
তুষার প্রতিউত্তরে বলল,
“আমার কিন্তু এখনই বেশ লাগছে। খুব একটা লোকজন নেই। তোমার সাথে দারুণ গল্প করা যাচ্ছে।”
“রোইদটা…”
“গায়ে লাগছে। এটাও ভালো। শীতকালে মিষ্টি রোদের চেয়ে দারুণ আর কি হতে পারে?”
বকুল ভ্রু কুঁচকে তাকাল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনের লগে আমি কতা দিয়া পারুম না। যাই কই, সবকিছুর উত্তর আপনের ধারে আছে। লাগে যেন জিভের আগায় উত্তর ফিট কইরা রাখছেন।”
তুষার হেসে উঠল,
“ঠিক আছে। এই যে আমি চুপ করলাম। আপাতত আর কিচ্ছু বলছি না।”
“না না থাউক। আপনের যা ইচ্ছা লাগে তাই কন। আমি কে আপনেরে চুপ করানোর! আমিই আর কিছু কমু না।”
হঠাৎ করে তুষার থমকে দাঁড়াল। বকুল ওকে অনুসরণ করে নিজেও থেমে যায়। ওর কপালে ঈষৎ ভাঁজের সৃষ্টি হলো।

“কি হইলো? থামলেন ক্যান?”
“আসলেই রোদটা আর সহ্য হচ্ছে না। এখানে আশেপাশে কোনো বসার জায়গা নেই?”
“বাড়িত যাই চলেন। পরে আসুমনি। আমিই আপনারে বিকালে নিয়া আসুমনি আবার।”
“না না, আসলামই তো মাত্র! এখনই বাড়ি গিয়ে তোমার সৎ মায়ের কালো মুখ দেখতে চাই না। তারচেয়ে বরং আশেপাশে কোনো জায়গা থাকলে বলো, গিয়ে বসি একটু।”
বকুল হেসে উঠল,

“আইচ্ছা ঠিক আছে। এইনেই একটা আম গাছ আছে বড় দেইখা। ওইডার তলায় অনেক জায়গা। গাছের ছায়া ও পড়ছে। আমি আগে এইদিকে আইলেই ওই গছের তলায় গিয়া একবার হইলেও ঘুরা দিয়া আইতাম। আপনে চলেন, ওইনেই যাই। ওইনে আপনের আরাম লাগব।”
তুষার ওর প্রস্তাবে রাজী হলো।
“ঠিক আছে চলো।”

খুব বেশি দূরে না। বিলের পাশে মাঝারি আকৃতির একটি জঙ্গল। সেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে মিনিট দুই হাঁটলেই বড় আম গাছটি চোখে পড়ে। পাশ দিয়ে উত্তর দিকে চলে গেছে একটি রাস্তা। এই রাস্তা ধরলে সোজা বকুলদের বাড়ি যাওয়া যায়।
আমগাছটা সত্যিই অনেক বড়। তুষার যতবড় ভেবেছিল, তার চাইতেও অনেক। সচরাচর এতবড় আমগাছ দেখা যায় না। জায়গাটা একটু প্রাকৃতিক ভাবে নোংরা হলেও সুন্দর। তুষারের ভালো লাগলো। নিচে বসার মতো কোনো জায়গা নেই, তাই ওরা দাঁড়িয়েই রইলো। তুষার দাঁড়াল গাছের গায়ে হেলান দিয়ে। বকুল উত্তরের ওই রাস্তাটার দিকে এক আঙুল তুলে তুষারকে বলল,

“এইহান দিয়া গেলে অনেক তাত্তারি বাড়ি যাওয়া যায়। এই রাস্তাডা ধইরা সোজা হাঁটলেই হবে।”
তুষার রাস্তাটা চিনে রাখল।
“আচ্ছা।”
বকুল এবার ওর দিকে তাকাল।
“এবার কন দেহি, কি লিগা ঘুরতে আইছেন? আর এইডা কেমুন ঘুরা? আমগো গেরামে দেহার মতো সেরম কিছু নাই ও।”
তুষার মাথা নাড়ালো,
“আছে। অনেক কিছুই আছে দেখার। আমি কিন্তু এখন অনেক সুন্দর একটা দৃশ্য দেখছি।”

“কি কইলেন? কি দেখতেছেন?”
“একটা সুন্দর দৃশ্য। সামনে তাকাও।”
বকুল তাকাল,
“কই?”
“আরে মাথা ওদিকে না, এদিকে তাকাও। আমার সম্মুখে। দেখো।”
বকুল তাকাল, দেখার চেষ্টাও করল, কিন্তু কি যে দেখবে ও বুঝে উঠতে পারল না। ওর চোখে সুন্দর কিছুই ধরা পড়েনি। যেন ওর মনের অবস্থাটা স্পষ্টই বুঝতে পারে তুষার। সে ফিক করে হেসে দিলো।
“কিচ্ছু চোখে পড়েনি, তাই না?”
বকুল অসহায়ের মতো মাথা নাড়ে,
“না।”

“আচ্ছা। আমার আঙুল যেদিকে তাক করব সেদিকে তাকাও। দেখো কি দেখতে পারো।”
তুষার ওর একটা আঙুল সম্মুখে অজানা কিছুর উদ্দেশ্যে তাক করলে সেই ইশারা অনুসরণ করে বকুলও তাকাল। এবং তখনই ওর চোখে পড়ল। দুইটা বোলতা একটা ফুলের উপর ঘুর ঘুর করছে। একটা বসলে আরেকটা উঠে যায়, আরেকটা বসলে অপরটা উঠে যায়। হুট করে বকুলের সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে। এই বোলতার কামড় খাওয়ার দুর্ভাগ্য ওর বহুবার হয়েছে। এই প্রাণী দেখলেই ওর ভয়ে হাত-পা কাঁপে। বকুল আশেপাশে পাগলের মতো তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগে। পেয়েও যায়। কিছু শক্ত মাটির দলা। কয়েক টুকরো তুলে নিয়ে ফুলটাকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারে। বোলতা দুটি উড়ে দূরে চলে যায়। তুষার আহত কণ্ঠে বলে উঠে,

“এটা কি করলে?”
বকুল হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“কি করলাম? আপনের ভালো করলাম। ওইটারে আপনে সুন্দর কইতাছিলেন? ছিঃ…ওডির মতো অজাত আর কোনো প্রাণী হইতে পারে না। কামুর তো খান নাই তাই সুন্দর কইলেন। কামুর খাইলে বুঝতেন কেমুন বেথা লাগে।”
“সুন্দরে কাঁটা থাকে বেশি। জানো না?”

“আপনের ভাষা আমি বুজি না ভাইজান। আপনে শিকখিত মানুষ। আমার মতো মূক্ষ মানুষ কি আর বুঝব আপনের ভাষা?”
“এই ভাষা বুঝতে হলে পড়াশোনার দরকার হয় না। এই ভাষা মনের ভাষা। বললাম না, যার হৃদয়ে প্রেম নেই, সে প্রকৃতির ভাষা বুঝে না।”
বকুল তেঁতে উঠে,
“কে কইছে আমার অন্তরে ওডি নাই?”
“তার মানে তোমার মনেও ভালোবাসা আছে।”
বকুল কণ্ঠ নিচু করে জবাব দেয়,

“আছে। কিন্তু হেইডা প্রেম নাকি ভালোবাসা, আমি কইতে পারি না।”
বকুল হঠাৎ করেই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আর কোনো দিকে খেয়াল নেই তার। আপন মনে কি যেন ভেবে চললো। তুষার তখনো গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। বকুলের দিকে তাকিয়ে রইলো নির্নিমেষ। এক পর্যায়ে সে খেয়াল করে, মেয়েটার চোখ কেমন ভিজে উঠতে শুরু করেছে। তুষার ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে ডাকলো,

“বকুল!”
বকুল সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো। তারপর ছোট করে উত্তর দেয়,
“হু…”
তুষার এগিয়ে আসে কিছু কদম। বকুলের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আকুতিপূর্ণ গলায় বলে উঠে,
“আমাকে একটু বলবে দয়া করে তোমার গল্পটা?”
বকুল নিস্তেজ স্বরে বলল,

“আমার কুনু গল্প নাই।”
“আবারও মিথ্যে বলছো!”
একথার পিঠে বকুল চুপ করে রয়।
তুষার বলল,
“আমাকে তুমি কি ভাবো?”
বকুলের সহজ স্বীকারোক্তি,
“কিছুই না।”

তুষার একটু আহত হলো ভেতরে ভেতরে। যেন এতোই ঠুনকো ওদের সম্পর্ক- বিষয়টা মানতে কষ্ট হলো। তবুও নিজের অনুভূতি নিজের ভেতরই মাটি চাপা দিয়ে তুষার বলতে লাগল,
“কিন্তু আমি তোমাকে আমার বন্ধু ভাবি। আমার চেয়ে অনেক ছোট বন্ধু। একজন বন্ধু হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করব, আমাকে একটু বলবে তোমার কোথায় এত কষ্ট?”
বকুল চোখ বড় বড় করে বলে উঠে,

“আপনি আমারে বন্ধু ভাবেন?”
“হ্যাঁ ভাবি।”
“না না না…এরম দামড়া পাঠার মতো বেডা আমার বন্ধু হইতে যাইবো কোন দুঃখে?”
“আমি দামড়া পাঠা?”
“জে… আপনার বয়স আর আমার বয়স দেখছেন? আকাশ পাতাল তফাৎ!”
“কিছু সম্পর্কের কোনো বয়স হয় না, জাত হয় না। বন্ধুত্বও তেমনই একটা সম্পর্ক। তোমার তরফ থেকে তুমি আমাকে যা খুশি ভাবতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে আমার বন্ধুই ভাববো।”

বকুল পুনরায় জবাব না দিয়ে চুপ হয়ে রইলো। পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল।
“উত্তর পাবো না?”
বকুল তাকাল,
“আমার কুনু গল্প নাই। কি ক্মু আমি আপনেরে?”
“কাউকে ভালোবাসতে? মনে এত কিসের কষ্ট চেপে রেখেছো?”

“ভালোবাসতাম কিনা কইতে পারি না তয় একজনের প্রতি মায়া হইয়া গেছিল। এক চালের তলায় থাকলে একটা কুত্তার লগেও মায়া হইয়া যায়। আর হেয় তো আছিল মানুষ, তার উপরে আমার স্বামী! মায়া না হইয়া যাইবো কই?”
তুষার আকাশ সমান চমকে উঠল।
“তোমার স্বামী মানে? তুমি বিবাহিত!”
“হুম। তয় এহন আর আমি বিয়াত্তা না। আমারে তালাক দিয়া ঘর থেইকা বাইর কইরা দিছে।”
“কি বলছো! কেন?”

“দোষ আসলে আমারই। আমি অনেক আবোলতাবোল মাইয়া তো। আমি ঘুরতাম এদিক ওদিক, উড়তাম, টইটই করতাম। তয় বিশ্বাস করেন, সংসারের কামে কখনো খামখেয়ালি করি নাই। হের যত্নের ব্যাপারেও আমি সবসময় সাবধান থাকছি। এইদিক দিয়া হেয় আমারে দোষ দিতে পারব না। হেইর পর আমার বাচ্চা অয় না অয় না কইরা হেয় আরেকখান বিয়া কইরা উঠাইয়া নিয়া আইলো। আমি মাইনা নিছিলাম।

হেইয় বউ আহনের পরই জানতে পারলাম, আমি পোয়াতি! আমার পেডে আমগো বাবু আইছে। আমি যেই খুশি হইছি বিশ্বাস করবেন না! হেয়ও ইট্টু খুশিই হইছিল। এর দুইদিন পরই আমি বিকাল বেলা খেলতে বাইর হইছিলাম। আর খেলতে গিয়া কি থেইকা কি হইলো আমি জানি না। আমার বাচ্চাডা নষ্ট হইয়া গেল। হেরপর হেয় আমারে বাইর কইরা দিছে তালাক দিয়া। এহন এই লিগা আমি বাপের বাড়ি থাকি। এই হইলো আপনের ঘটনা। আর কি শুনতে চান, কন?”
তুষার সময়টাকে হেলায় নষ্ট করল না। বকুলকে যে প্রশ্ন করবে সে প্রশ্নেরই উত্তর দেবে ও। এইটুকু বুঝতে পেরে তুষার একের পর এক প্রশ্ন করে চললো।

“তোমার স্বামীর নাম কি?”
“মোরশেদ।”
“তাঁর আরেক বরকি তুমি থাকাকালেই আসছে?”
“হুম।”
“তোমার খারাপ লাগেনি?”

এই পর্যায়ে বকুলের ঠোঁটের কোণে একটা সূক্ষ হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখা যায়। সেই হাসির সবটুকু জুড়ে তীব্র কটাক্ষ।
“একটা মাইনষের লগে আপনে এত্তদিন সংসার করলেন। এক বিছানায় থাকলেন। হের সুখ দুঃখের ভাগিদার হইছিলেন। আপনে তারেই আপনার জীবনের ঢাল মনে করতেন। সেই মানুষটার পাশে হঠাৎ করে আপনে আরেকজনরে দেখলে কেমুন লাগব? খারাপ লাগব? না, শুধু খারাপ না, ওইডার চাইতেও বেশি কিছু থাকলে হেইডা লাগব। আমার তো মনে হইছিল, আমার মাতার উপরে পুরা আকাশ ভাইঙ্গা পড়ছে। হেই কতা ভাবলে এহনো আমার…”

বকুল থেমে দম টেনে নিলো। ওর কণ্ঠ ভিজে গেছে। তুষার সহসা এগিয়ে এসে একটা হাত বকুলের মাথার উপর রাখল। মুহূর্তেই বকুল বাঁধ ভাঙা নদীর মতো হু হু করে কেঁদে উঠে। এই প্রথম কোনো পুরুষ ওর মাথার উপর স্নেহের হাত রেখেছে। এই প্রথম কোনো স্পর্শে ও নির্যাতন খুঁজে পায়নি। এই প্রথম কোনো ছোঁয়া ওকে অস্বস্তি দেয়নি। এই প্রথম কারো সংস্পর্শে এসে নিজের ভেতরের পাথরটা গলতে শুরু করেছে। এবং এই প্রথম বারের মতো কোনো পুরুষ তার কান্নার সাক্ষী হলো! সেই পুরুষটি আবার অচেনা, অপরিচিত!

তুষার আরেকটু এগিয়ে এসে বকুলের মাথার উপর রাখা হাতটা আরও দৃঢ় করে। নরম কণ্ঠে বলল,
“এইটুকু বয়সে অনেক কঠিন ব্যাপার সহ্য করে ফেলেছো। তোমাকে তাই জ্ঞান দিবো না। শুধু এতটুকুই বলব, নিজের ভালো থাকা নিজের করে নিতে হয়। সবসময় সব জায়গায় স্যাক্রিফাইস করলে চলে না। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো বকুল?”

বকুল কান্না চোখে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো,
“ওইডা কি কইলেন? বুজি নাই।”
“কোনটা?”
“ওই একটা কি যেন উচ্চারণ করলেন। আমার মুখ দিয়া আইতাছে না।”
“স্যাক্রিফাইস?”
“হ হ, ওইডাই। আমি মুখ্য মানুষ। এডি কি বুজি?”
“এটা একটা ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ। তুমি অন্যের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করো। অনেক কষ্ট সহ্য করো, অনেক ছাড় দাও, বিনিময়ে তুমি কি পাও?”

“কষ্ট!”
“হুম, এটাই বললাম। আজ থেকে আর কাউকে ছাড় দিবে না। যেটা তোমার জিনিস, তোমার অধিকার, সেটা নিয়ে তোমাকেই লড়াই করতে হবে। তুমি কি বুঝতে পারছো আমার কথা এইবার?”
বকুল বুঝলো। তুষারের কথাগুলো ওর মস্তিষ্কে দারুণ আলোড়নের সৃষ্টি করে। তুষার ফের বলল,
“বকুল, তুমি সবচেয়ে বেশি কি ভয় পাও?”
বকুল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,
“মাইনষের কতা।”

“মানুষের তিক্ত কথা, তাই তো? অথচ তুমি কি জানো, এই একটা জীবন পার হয়ে গেলে তুমি আর পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে না। এই এক জীবনে যখনই তুমি মা*রা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে তোমার নামটাও পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে যাবে। লোকে তখন তোমায় ‘লাশ’ বলে সম্বোধিত করবে। আর সেই ‘লোকে কি বলবে’ এই ভেবে ভেবে তুমি মানসিক অশান্তিতে দিনের পর দিন জর্জরিত হবে। এটা কি ঠিক? তুমিই বলো।”
“তাইলে অহন আমি কি করাম?”

“তোমার প্রথম কাজ, এই ভোঁতা মনকে শক্ত করা। যখনই মন শক্ত হবে, কাউকে পরোয়া করবে না, তখন নিজের অধিকার কিভাবে বুঝে নিতে হয়, সেটা নিজেই বুঝতে পারবে। নাও, এখন চোখ মোছো। এমন ভাবে কাঁদছ যেন আমি তোমার সহায় সম্পত্তি সব ছিনিয়ে নিয়ে গেছি! এভাবে কেউ অল্পতেই কাঁদে, বোকা মেয়ে!”
বকুল চোখ মুছতে মুছতে বলল,

“এতকিছু হইলো আমার লগে, আমি কান্দুম না তো কে কান্দবো, কন?”
“মোরশেদ কাঁদবে, তুমি নও। তোমার দোষ নেই, তাই প্রকৃতি তোমার সাথে আছে। মোরশেদের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে, নিজেই দেখতে পারবে। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। আর শোনো, তুমি এখন আগের চেয়েও বেশি ভালো থাকবে। থাকতেই হবে। থেকে দেখিয়ে দিতে হবে মোরশেদ কে যে ও যদি ভালো থাকতে পারে তোমাকে ছাড়া তাহলে তুমিও ম*রবে না ওকে ছাড়া।”

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৮

বকুল আবার কেঁদে ফেলল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,
“এতকিছু আমি কেমনে করাম? আমি কি পারুম?”
তুষার বকুলের একটা হাত সহসাই ধরে বলে উঠল,
“পারবে, অবশ্যই তুমি পারবে বকুল। নিজের মনের প্রতি জোর রাখো।”

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ১০