ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২১

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২১
Suraiya Aayat

আমি দরজা বন্ধ করবার পূর্বেই উনি দরজা আটকে নিজে প্রবেশ করলেন আর দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন হাতে হাত ভাজ করে। আমি খানিকটা চমকে গেলাম ওনার এমন কাজকর্মে। বুঝলাম যে আজ আমার রক্ষে নেই। আমি দু এক কদম পেছাতেই উনি বেশ নরম কন্ঠে বললেন,
‘আমি তোমার ভাইয়া? ‘
ওনার এমন প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে কী আছে? থাকলেও তার উত্তর আমার জানা নেই। আমি আমতা আমতা করে বললাম,

‘হমম, তা নয় তো কি। আপনি তো আমার ভাইয়াই! আরিশ ভাইয়া। ‘
উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
‘ তুমি ওনাকে বলোনি তুমি ম্যারিড?’
ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে আমার কাঁপাকাঁপির মাত্রা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। আমিও ওনার সমান গতিতে কয়েক কদম পেছাতে লাগলাম, আমি জানি একটা সময় আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকবে কিন্তু তার আগেই আমি পালাবো উনি ধরতে পারবেন না।
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘নাহ বলিনি। কেন বলবো? আপনি আর সানা দুজনেই আমাকে রেখে একা শপিং করতে চলে গেছিলেন তো আমি কেন বলবো? উনি তো আর আপনাদের মতো না, উনি আমাকে একটা চার হাজার টাকা দিয়ে জামা কিনে দিয়েছেন। ‘
কথাটা বলতেই আরিশ ভাইয়া আমাকে আর পেছাতে দিলেন না, উনি আমার হাতটা ধরে ওনার কাছে টেনে নিতেই আমি হুমড়ি খেয়ে ওনার ওপর পড়লাম কিন্তু উনি নিজেকে এবং আমার ভর সামলে নিলেন। আমি ওনার বুকের কাছে এসে জড়োসড়ো হয়ে এলাম, উনি ওনার দু হাত দিয়ে আমার কোমরে হাত দিয়ে জড়িয়ে রইলেন। আমার সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো, পারলে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে য়ায়। উনি কিছু বলছেন না, তবে আমি অনুভব করলাম ওনার হাতটা কোমর ছাড়িয়ে আমার পিঠকে স্পর্শ করছে। আমি জানি আমি নড়াচড়া করলেই উনি রেগে যাবেন, উপায়ন্তর না পেয়ে আমি চুপচাপ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ওনার স্পর্শ গুলোকে অনুভব করতে লাগলাম।

ওনার শ্বাস ওঠানামা করছে অনবরত তা আমার মুখ এর ওপর আছড়ে পড়ছে। আমার বুকের ভিতর এক অজানা ভালো লাগা খারাপ লাগার মিশ্রিত স্রোত বয়ে যাচ্ছে একনাগাড়ে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার মাথার খোঁপাটা একটানে খুলে দিতেই আমি জড়ো হয়ে গেলাম যেন। উনি আমাকে যতোটা নিজের কাছে টানা যায় ঠিক ততোটাই কাছে টানলেন। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘আরিশ ভাইয়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছাড়ুন। ‘
আমার কথা ওনার কানে কতোটা গেল আমার জানা নেই, তবে ওনাকে আমার একদম স্বাভাবিক লাগছে না, আরিশ ভাইয়ার এমন রুপ আমি কখনো দেখিনি। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন,
‘ডোন্ট ক্রিয়েট এনি ডিস্কারবেন্স আরুপাখি! ‘

ওনার এমন কথাতে ভয়ে আমার বুক ধুকধুক করতে লাগলো, নিজের হৃদস্পন্দন যেন আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছি। উনি এক আলাদাই ঘোরের মধ্যে বিরাজ করছেন। তারপর মিনমিন করে বলে উঠলেন,
‘ বলো আমি তোমার কে? ‘
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘জামাই, আপনি আমার জামাই। ‘
‘কথাটা মনে থাকবে? ‘
‘জ্বি, জ্বি মনে থাকবে। ‘
কথাটা বলে আমি এমন পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটাতে চাইলেও উনি তা করলেন না, আমি সরে আসতে নিলছি উনি আমার কপালে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ দিলেন, আমি দৃষ্টি সংযত করে রইলাম। কপাল ছুঁয়ে উনি আমার দু গালে ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই আমি বললাম,
‘ আরিশ ভাইয়া নীচে আম্মু হয়তো ডাকছে। ‘
আরিশ ভাইয়া ডাক শুনে উনি চোখ মুখ কোঁচকালেন, আমি বুঝলাম আমি পুনরায় বেফাস কথা বলে ফেলেছি।
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘আবার ভাইয়া? ‘
আমি হড়হড়িয়ে বললাম,
‘ ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না। জামাই, আমার জামাই। ‘
উনি এতো সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নন, উনি বললেন,
‘ ইউ সুড হ্যাভ আ পানিশমেন্ট। ‘
আমি কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না, তবে চোখ মুখ বন্ধ করে রইলাম আমি, নাহলে ওনার কাছেই আজ আমি ঘায়েল হয়ে যাবো।
আচমকা উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দূরে সরে এলেন। আমি সরে এলাম ওনার থেকে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম উনি হাসছেন মুচকি মুচকি। তাতে আমি লজ্জায় শেষ।
উনি আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বললেন,

‘বেশি দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে না আমার থেকে নতুবা এতো বেশি কাছে টেনে নেব সে সহ্য করা মুশকিল হয়ে যাবে। ‘
কথাটা বলে উনি ব্যালকনিতে চলে গেলেন। আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম, আমার শরীরটা কেমন জানি আনচান আনচান করছে। ওনার এমন রুপ আমি কখনো দেখিনি। আমি ওনার দিকে পিছু ফিরে একবার তাকালাম, দেখলাম উনি ফোনে কথা বলছেন কার সাথে। আমি আর সেদিকে তাকালাম না, দৌড়ে নীচে নেমে এলাম। ওনার কাছে আর কিছুখন থাকলেই আমি ওনাতে ঘায়েল হয়ে যেতাম। কথা গুলো ভাবলেই লজ্জায় আমি লজ্জাবতীর মতো কুঁকড়ে যাচ্ছি। নীচে যেতেই দেখলাম আন্টি এখন সানাকে নিয়ে পড়েছেন। ওনার হাব ভাবে মনে হচ্ছে পারলে ওনার ছেলের সাথে এক্ষুনি তার বিয়ে দিয়ে দেন। আমি দেখছি আর হাসছি। মনে মনে ভাবছি ‘ বেচারি সানাজান আব তেরা কইয়া হোগা। ‘

উনি দুপুর বেলা বাসায় ফিরে যেতে চাইলেই আম্মু ওনাকে যেতে দিলেন না। তিনি নতুন জামাই তাই জামায় আদর না করলে সেটা বেমানান হয়। কথাটা ভেবে বেশ জোরজবরদস্তি ভাবেই ওনাকে রাখা হয়েছে। উনি সেই সকাল থেকে আমার রুমটা দখল করে বসে আছেন যা আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। সানা আম্মুর সাথে গল্পগুজব করছে। তার আমার আম্মু সাথে আমার থেকেও বেশি মিল। আমার যদি কোন ভাই থাকতো তাহলে তার সাথে সানার বিয়ে দিয়ে আমার ভাবী করে রাখতাম। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। তারপর বেশ নবাবী একটা ভাব নিয়ে রুমে ঢুকলাম, উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে ফোনের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। ওনাকে আমার বেডে শুয়ে থাকতে দেখে আমি বলে উঠলাম,

‘আপনি আমার বেডে কেন? গেস্ট রুমে যান। ‘
উনি বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘আচ্ছা আমি তোমার কে? ‘
আমি ওনার ইশারা বুঝতে পেরে চোখ মুখ কুঁচকে বললাম,
‘জামাই! ‘
ঝগড়া শুরু করার পূর্বেই ঝগড়ার সমাপ্তি। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘হয়েছে হয়েছে। আর হিসাব বোঝাতে হবেনা। ‘
উনি মুচকি হেসে ফোনের দিকে মনোনিবেশ করে হঠাৎই বলে উঠলেন,

‘ তোমার ওয়াড্রবে তোমার জামা রাখা আছে, দেখো পছন্দ হয় কি। পছন্দ না হলেও কিছু করার নেই। ‘
আমি চোখ বাকা করে ওয়াড্রব এর দিক এগোতে থাকলাম। তা খুলতেই দেখলাম বেশ কয়েকটা জামা কাপড়ের ব্যাগ। পুরোপুরি না দেখে অল্প অল্প দেখলাম সেগুলো। আমার পছন্দ হয়েছে বেশ কিন্তু ওনার সামনে তা প্রকাশ করা যাবে না না হলে উনি নিজে ভাব নিতে শুরু করবেন। কথাটা ভেবে আমি বললাম,
‘খারাপ না ভালোই। ‘
মনে মনে ভেবে খুশিও লাগছে যে আমাকে না নিয়ে গেলেও আমার পছন্দ মতো সব কিছু এনেছি। বিড়বিড় করে বললাম,

‘সাধে কি আপনাকে আলাদীন বলি! ‘
কথাটা উনি শুনতে পেলেন না। আমি কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই উনি বললেন,
‘কোথায় যাচ্ছো তুমি? ‘
‘নীচে। আশরাফ চাচার কাছে। ‘
উনি ফোনটা রেখে আমার দিক মনোনিবেশ করে বললেন,
‘ তা কেন শুনি?চাচা নাকি তার প্রেমের গল্প বলে তোমাকে।’
আমি ওনার দিক মুখ ভাঙচি দিয়ে বললাম,
‘অন্নেক ভালো চাচা। আপনার মতো নিম পাতার ফ্যাক্টরি নয় সে। ‘

কথাটা শুনতেই উনি আমার কাছে এসে আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ এখন কিন্তু আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ সো। ‘
ওনার কথার ইশারা বুঝতে পেরে আমি ছ্যাত করে ওনার থেকে দ্রুত সরে এলাম। আজকাল উনি কি একটু বেশিই লুচ্ছামি করছেন নয় কি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে। আপনি জামাই আর আমি বউ। এতো বার মনে করানোর কি আছে? ‘
উনি আমার দিকে নীচু হয়ে খানিকটা ঝুকে বললেন,
‘আমি অন্যকিছু বোঝাতে চাইছি। এক্সপ্লেইন করবো? ‘

উনি আরও কিছু অশ্লীল বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার পূর্বেই আমি ওনার মুখ চেপে ধরে বললাম,
‘মুরব্বি হয়ে আমাকে এসব শেখাচ্ছেন। তওবা তওবা। আপনি থাকেন আমি আসছি। ‘
কথাটা বলে কোনরকম ওনাকে পার করে আমি সেখান থেকে দ্রুত সরে এলাম। আজকে ওনার মাঝে এতো রোমান্টিকতা আমার হজম হচ্ছে না। আমি আমার পিছন পিছন আর একটা পায়ের আওয়াজ শুনলাম। পায়ের আওয়াজ শুনে আমি দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই সেই পায়ের আওয়াজ টাও বেড়ে গেল। আমি পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

‘আপনি কিন্তু আজকে আমাকে একটু বেশিই জ্বালাচ্ছেন।’
উনি আমার পাশে এসে আমার কাধে একহাত ঝুলিয়ে বললেন,
‘ বউ ছাড়া মন আমার কেমন কেমন করে! ‘
আমি একটা ঢোক গিলে ওনার হাত সরিয়ে বললাম,
‘আজ আপনি কিছু খেয়েছেন? এমন করছেন কেন? অন্যদিন তো হিটলার গিরি করেন তাহলে? ‘

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২০

আমার এমন কথা শুনতেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি টাল সামলাতে না পেরে ওনাকে আঁকড়ে ধরলাম।
উনি রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
‘আজ আপনি শেষ মিস টুইটুই। ‘
ওনার চোখ মুখ আলাদাই কথা বলছে, ওনার মুখে এক হিটলারী হাসি! আজ আমি সত্যিই শেষ।

ভালোবাসি বলে দাও পর্ব ২২