মধুবালা সিজন ২ গল্পের লিঙ্ক || ফারজানা আক্তার

মধুবালা সিজন ২ পর্ব ১
ফারজানা আক্তার

ঠোঁটে তিল থাকলে নাকি প্রেম করে বিয়ে হয়। তার মানে তোর প্রেম করে বিয়ে হবে।
চশমা পরা এই লাজুক মেয়ের প্রেম করে বিয়ে হবে ভাবতে পারছিস তোরা?

ছোঁয়ার ঠোঁট তর্জনী আঙুল দিয়ে হালকা স্পর্শ করে কুটকুট করে হাসতে হাসতে কথাটি বলে উঠে শুভ্র। ভ্রু কুঁচকে গাল ফুলিয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া। মিহিকা, রিয়ানা, তরি, মাহিন, আরজু, লিলি সবাই শুভ্রর সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে চাইলেও হাসলোনা কারণ শুভ্র ওদের মধ্যে সবার বড় আর শুভ্রকে সবাই একটু ভয় পায় কারণ শুভ্র একটু ঘাড়ত্যারা। সবাই নম্র ভদ্রভাবে হাসলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তালুকদার বাড়ির চার তলা বিল্ডিংয়ের ছাঁদের কোনায় কোনায় আজ হাসির শব্দ ভাসছে। খিলখিলিয়ে হাসছে সব ভাইবোন। শুভ্রকে আজ প্রথম দেখা যাচ্ছে সবার সাথে আড্ডায়, তাও ছোঁয়ার রিকুয়েষ্টে শুভ্র এসেছে নয়তো শুভ্র কখনো সবার সাথে আড্ডায় বসেনা সবসময়ই গম্ভীর হয়ে থাকে আর তাছাড়া শুভ্র থাকলে সবাই মন খুলে আড্ডা দিতেও ভয় পায়।

আগামীকাল তরির গায়ে হলুদ তাই সব কাজিন আজ আড্ডার আসর বসিয়েছে। তাদের মাঝ থেকে তরি চলে যাবে আর দু’দিন পরেই তাই এই আড্ডার আসর। বোনদের মধ্যে সবার বড় তরি, তরির সাথে সবার সম্পর্ক ভীষণ ভালো।
সবার হাসির মাঝেই ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো “শুভ্র ভাই আমি তো বিয়ে করলে তোমাকেই করবো আর প্রেম করলেও তোমার সাথেই করবো।”

“আমার বউ হওয়ার যোগ্যতা তোর নেই রে মধুবালা, তোর মতো ডামিস স্টুডেন্ট এর তো কপালে আছে করিম রহিম চাচারা যাদের মাথায় টাক সরকারি চাকরিওয়ালা।”

কুট শব্দ করে হেঁসে ফেলে সবাই। রা’গে ছোঁয়ার মাথার র’ক্ত টগবগ করছে। চোখের কোনে বিন্দু কণাও জমে গিয়েছে হালকা। যখনই ছোঁয়ার ভীষণ রা’গ হয় কোনোকিছুর জন্য তখনই ওর কান্না চলে আসে। শুভ্রর দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। ছোঁয়া দাঁড়াতেই তরি বলে উঠে “কিরে ছোঁয়া কোথায় যাচ্ছিস? এই ভ্যাপসা গরমে মৃদু বাতাস খুব মিস করবি রুমে গেলে।”

“আমার রুমে জানালা আছে।”
এটা বলেই ছোঁয়া হাঁটা ধরলো। রিয়া বলে উঠলো “আরে ছোঁয়া আপা কারেন্ট নেই তো পুরো ঘর অন্ধকার, সিঁড়ি বেয়ে নামবে কিভাবে এই অন্ধকারে? পরে যাবে যে।”

শুভ্র হঠাৎ বলে উঠলো “এই মধুবালা দাঁড়া, আমি জানি তো তুই কেনো চলে যাচ্ছিস সবাইকে রেখে যাতে আগামীকাল তরির গায়ে হলুদে আমাদের বংশের খান্দানী বালা জোড়া হাতে পরে ঢ্যাংঢ্যাং করতে পারিস, তাইতো? কিন্তু তোর এই ইচ্ছা কখনোই পূরণ হবেনা কারণ আমার হবু বউয়ের বালা তোকে আমি ছুঁতেও দিবোনা।”

এটা বলেই শুভ্র ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বা’লি’য়ে ছোঁয়ার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে খুব সাবধানে।
মিহিকা আর মাহিন শুভ্রর ছোট ফুফির ছেলেমেয়ে আর আরজু ছোঁয়া শুভ্রর বড় ফুফির মেয়ে। রিয়া আর তরি শুভ্রর মেজু চাচার মেয়ে আর লিলি শুভ্রর ছোট বোন। শুভ্রর বাবারা তিন ভাই দুই বোন। শুভ্রর ছোট চাচা তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে কানাডা থাকেন। উনার ঘরেও দুটো কন্যা সন্তান রুহি আর রাহি।

শুভ্রকে এভাবে ছোঁয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হলো খুব। যে ছেলে ছোঁয়াকে সহ্য-ই করতে পারেনা সে কিনা ওর হাত ধরেই ওকে রুমে পৌঁছে দিয়ে আসতে যাচ্ছে এটা সবার কাছে জাস্ট অবিশ্বাস্য একটা দৃশ্য।
ছোঁয়া নিজের হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে আর শুভ্র আরো বেশি শক্ত করে ধরছে।
“শুভ্র ভাই ছাড়ো প্লিজ, তুমি যতই পাহারা দাও আমায় কোনো লাভ হবেনা, আগামীকাল তরি আপার হলুদে আমি ওই খান্দানী বালাজোড়া পরবোই পরবো।”

“তোর সাহস দেখে আমি শুধু অবাক হয়না বিশ্বাস কর তোর সাহস দেখে আমার চোখগুলো কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম হয়।
যেখানে সব কাজিন ভয়ে আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলেনা ঠিকমতো সেখানে তুই কিনা আমাকে বিয়ের কথা বলিস সরাসরি। তরি ছাড়া সবাই আমাকে আপনি করে বলে আর তুই কিনা ডাইরেক্ট তুমি করে বলিস। নির্লজ্জ মেয়েমানুষ।”

“আহা..হাহ্ আমি নির্লজ্জ হলে তুমি কী হ্যাঁ? আমি দেখিনি পাশের বাড়ির বিলকিস আন্টির মেয়ের সাথে যে তুমি ইটিসপিটিস করো। বলে দিবো সবাইকে হুহ্। ”
“বিলকিস আন্টি? কে এই বিলকিস আন্টি আবার? আমাদের পুরো এলাকায়-ই তো এই নামের কাউরে চিনিনা আমি।”
“হিহিহি চিনবে কেমনে? ওটা তো আমার কল্পনার বিলকিস আন্টি।”

কথাটা বলেই কুটকুট করে হাসতে লাগলো ছোঁয়া। ছোঁয়ার এই হাসির রিনিঝিনি শব্দ শুভ্রর প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ফ্লাশলাইটের আলোই ছোঁয়ার শ্যামলাবর্ণ চেহারাটা কেমন জানি অদ্ভুত মায়াবী লাগছে শুভ্রর কাছে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে শুভ্র ছোঁয়ার পানে।

শুভ্র হালকা গলা খাখারি দিয়ে বলে “এভাবে হাসলে তোকে একদম চৌরাস্তার জরিনা পাগলীর মতো লাগে।”
শুভ্র কথাটা বলেই মিটিমিটি হাসছে। ছোঁয়া তো রেগে আ’গু’ন। রা’গে ক্ষো’ভে শুভ্রর হাত ঝাড়া মে’রে এক ছুটে গিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয় ছোঁয়া। শুভ্র মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। শুভ্র ছোঁয়ার রুম পাশাপাশিই।

প্রায়ই এক ঘন্টা ধরে তাদের বাসায় কারেন্ট নেই কি জানি নষ্ট হয়েছে আর সেটা ঠিক করতে নাকি আরো ৩০মিনিট সময় লাগবে। ছোঁয়া রুমে প্রবেশ করেই বেশ অবাক হয়েছে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে পুরো রুম পর্যবেক্ষণ করতেছে ছোঁয়া। ছোঁয়ার পুরো রুম মোমবাতি দিয়ে সাজানো, মোমবাতির আলোই রুমটা অন্যরকম সুন্দর লাগছে। হঠাৎ বালিশের উপর রাখা ছোঁয়ার ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসার শব্দ হলে ছোঁয়া ফোনটা হাতে নেয়। ফোন হাতে নিয়ে ছোঁয়া দেখতে পাই শুভ্রর নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে “জানালা খুলবিনা আর বারান্দার দরজাও খুলবিনা মোমবাতি নিবে যাবে হাওয়ায়। আর যদি মোমবাতি নিবে যায় তবে ভুত এসে ঘাড় মটকে দিবে মনে রাখিস।”

মেসেজটা পড়েই ছোঁয়ার হাত থেকে ধপাস করে ফোনটা পরে যায়। এমনিতেই ছোঁয়া অন্ধকার ভয় পায় তারপর আবার শুভ্রর এসব ভুতপ্রেতের কথায় ছোঁয়ার এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তবে ছোঁয়া মনে মনে প্রচন্ড খুশি হয়েছে যে ওর ঘরে এতোগুলা মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে বলে। নয়তো এই অন্ধকারে তো ছোঁয়া ম’রে’ই যেতো। ঠোঁটে একটা মিষ্টি হাসির রেখা টেনে ছোঁয়া ঘুমিয়ে পরলো।

শুভ্র বেলকনিতে যেয়ে তীব্র গরমের মাঝে এই হালকা মৃদু বাতাসের ঘ্রাণ নিচ্ছে। শুভ্র ওর মাকে নিয়ে ভাবছে। এই পুরো পরিবারে সবাইকে শুভ্রর ভালো লাগে শুধু ওর মাকে ছাড়া। ছোটবেলা থেকেই শুভ্রর মা রেহেনা বেগম শুভ্রকে পছন্দ করতোনা কিন্তু ইদানীং শুভ্রকে চোখে হারায় উনি।

তবে এখন শুভ্রর আর মা প্রয়োজন নেই। শুভ্র যখন মায়ের এক চিমটি আদরের জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলো তখন রেহেনা বেগম ওকে ধূরধূর করেছে আর এভাবেই রেহেনা বেগমের জন্য শুভ্রর মনে তীব্র ঘৃণার জন্ম হয়েছে। একইসাথে লিলিকে খুব বেশিই আদরে রেখেছিলেন ছোট থেকে রেহেনা বেগম। শুভ্রর মনে আছে লিলির জন্মের প্রায়ই ৮/৯ মাস আগে থেকেই রেহানা বেগম ওকে অবহেলা করা শুরু করেছেন তখন শুভ্রর বয়স ৭বছর। তবুও ছোট্ট সেই শুভ্র মায়ের জন্য পাগল ছিলো কিন্তু বড় হওয়ার পর শুভ্র পাথর হয়ে গিয়েছে। মায়ের দিকে এখন ফিরেও তাকায়না শুভ্র।

রেহেনা বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন কিন্তু খুব বেশিই দেরি করে ফেলেছেন।
শুভ্র চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

টিপটিপ করে ছোঁয়া চোখ খুলতেই দেখে পুরো রুমে আবছা আলোর ছড়াছড়ি। জানালার গ্লাসের পর্দাটা সামান্য সরে গিয়েছে আর সেই ছোট্ট জায়গাটা দিয়েই এই আবছা আলোর প্রবেশ। মোমবাতি সব সারা রাত জ্ব’লে শেষ হয়েছে। আড়মোড়া ভে’ঙে উঠে বসে ছোঁয়া।

বড় করে মুখ খুলে একটা হামি দিয়ে ছোঁয়া ফোন হাতে নিতেই যেনো কারেন্টের শকড্ খায়। লাফিয়ে উঠে ছোঁয়া দ্রুত ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ জামা পরে নেয়, সাদা রংয়ের উড়নাটা মাথায় ভালো করে পেচিয়ে নিয়ে ছুটে আসে ডাইনিং টেবিলে আর হাঁপাতে থাকে। সকাল ঠিক ৯টাই আজ সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে ডাইনিংয়ে আর ছোঁয়ার ঘুম ভা’ঙ’লো ৯টা বাজার ঠিক ১৫মিনিট আগে। তাই তরিগরি করে ছোঁয়া ১৫মিনিটেই তৈরি হয়ে নিচে নেমে এসেছে।

শুভ্র ছোঁয়ার পেঁছনে এসে ফিসফিস করে বললো “ঠিক গুনে গুনে দুই মিনিট লেট তুই।”
হঠাৎ ছোঁয়ার বুকটা ধুক করে উঠলো। ছোঁয়া ওর মামাদেরকে খুব ভয় পায়।

মধুবালা সিজন ২ পর্ব ২