মনের কোনে পর্ব ৩

মনের কোনে পর্ব ৩
নাহিয়ানা আফ্রিন 

আফ্রিন ভাবতেও পারিনি যে এতক্ষণ দুইজন যুবক কেমন মুগ্ধ হয়ে গান শুনছিল তার। সে বেলকনি থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে যায় রোজকার মতো কফি বানানোর জন্য যা আফ্রিন এর অভ্যাস।
আসফিন কে ও তার সাথে এক যুবক কে উপর এর দিকে যেতে দেখলো সে তাদের দুজন কে খুব ক্লান্ত লাগছিল।তাই সে চা কফি বানিয়ে চা মামনির রুম এ দিয়ে আসলো।দুই মগে কফি ঢেলে সে সাথে বিস্কুট রাখলো ট্রে-তে হাটা দিলো আসফিন এর রুম এর দিকে।আসফিন এর রুম এর দরজা নক করলো আফ্রিন;
আসফিনঃ কে?

আফ্রিনঃ ভাইয়া আমি আফ্রিন আসবো?
আসফিনঃ আপনি এখানে হঠাৎ? হ্যাঁ ভিতরে আসতে পারেন।
আফ্রিন ঃ রুম এ ঢুকে গেলাম ভাইয়ার, আসলে ভাইয়া আপনাদের জন্য কফি.।
আসফিন অবাক আজ নিজ থেকে আফ্রিন তার সাথে কথা বললো আর কফি ও নিয়ে আসলো।
লাবিব ঃ ওহ থ্যাংক্স আপ্পি আপনাকে ঠিক সময় এই নিয়ে আসছেন, কফি টা অনেক জরুরি ছিলো আমাদের জন্য থ্যাংক্স আ লট।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আসফিন কিছু না বলে কফি নিয়ে সোজা বেলকনি তে চলে গেলো।
আফ্রিন এবার হাটা ধরলো নিজের রুম এর দিকে,আফ্রিন কফি একটু খেলো হঠাৎ তার অনেক বমি পেলো সে দৌড়ে চলে গেলো ওয়াসরুম এর দিকে বমি করে ফ্রেস হয়ে এসে বেড এ বসলো আফ্রিন, ভাবতে লাগলো লাস্ট ৩ মাস ধরে তার পিরিয়ড মিস যাচ্ছে,এমন তো নয় যে সে আর ভাবতে পারলো না বসে পরলো বিছানায়। মোবাইল নিয়ে কল দিলো রামিম কে।

রামিম ঃ হ্যালো মাই কিউটি,আজ এতো সকাল সকাল আমার কথা মনে পরলো?
আফ্রিন ঃ কেনো পরবে না রামিম,আমাকে বিয়ে করবে তুমি?
রামিম ঃ সাডেন বিয়ে নিয়ে পরলা তুমি?(কিছুটা আশ্চর্য হয়ে)
আফ্রিনঃ রামিম আমার লাস্ট দু মাস ধরে পিরিয়ড মিস যাচ্ছে, আজ সকালে বমি হয়েছে,আই থিংক দেট আই এম প্রেগন্যান্ট।

রামিমঃ হোয়াট দা হেল আফ্রিন?তুমি কিভাবে এসব (বসে পরলো সোফায় আর উত্তেজিত হয়ে চিল্লিয়ে বললো)
আফ্রিনঃ আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলছো রামিম আমাকে না তুমি ভালোবাসো?
রামিমঃ এসব কথা পরে বলা যাবে তাড়াতাড়ি রেডি হও আমি এসে তোমাকে হসপিটাল এ নিয়ে যাবো।
আফ্রিন ঃ কেনো?
রামিম ঃ জানো না কেনো এবরশোন করানোর জন্য, এখন বেবি আমার লাগবে না তাছাড়া বিয়ের আগে বেবি এদেসে চলে না।

আফ্রিন ঃ কি আমি কিছুতেই এবোরশন করাবো না রামিম,সমস্যা কোথায় রামিম মামু আর মামির সাথে কথা বলি আমরা তারা নিশ্চিত আমাদের মেনে নিবেন।
রামিম ঃ তুমি বুঝতে পারতেছো না চুপচাপ রেডি হও,
আফ্রন ঃ না কিছুতেই না রামিম আমরা তো একে অপর কে খুব ভালোবাসি তাই না?তোমার কথায় তো আমরা সেদিন ইন্টিমেট হই এখন তুমি এগুলা কেনো বলছো?
রামিম ঃ সো হোয়াট আর কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি এই রামিম ইকবাল এর পিছে কতো মেয়ে ঘুরে জানো আর আমি কিনা তোমার মতো মেয়ে কে করবো বিয়ে হাহ।যা মন চায় তা করো ডোন্ট কল মি এগেইন!
বলেই কল কেটে দেয় রামিম, আফ্রিন কান্না করা শুরু করে আর ভাবে কি হচ্ছে তার সাথে এগুলা। রামিম এখন আমন কেন করছে? কি হবে তার এখন।রামিম এভাবে পালটে গেলো কেনো? ভাবতে লাগলো সেই পুরোনো দিনের কথা।

…………অতীত…………
৩ মাস আগে রামিম ইউ এস এ যায় আফ্রিন দের বাসায়।
তো যেহেতু রামিম সেখানে নতুন কিছু চিনে না তাই রামিম কে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পরে আফ্রিন এর কাধে। আফ্রিন আর রামিম তারা অনেক যায়গায় ঘোরাঘুরি করতো এমন একদিন রামিম আফ্রিন কে প্রপোজ করে ফেলে আর আফ্রিন রামিম কে হ্যাঁ বলে দেয়।এভাবে তাদের দিন কাটে রামিম এর জন্মদিন এর দিন রামিম এর আফ্রিন একটি রিসোর্ট এ জন্মদিন সেলিব্রেট করে রামিম জোর করে আফ্রিন কে ড্রিংকস করায় আফ্রিন নেসায় বুদ হয়ে থাকার ফলে রামিম তার কাজে সফল হয় ভালোবাসার কথা বলে আফ্রিন কে নিজের করে নেয়।যখন আফ্রিন এর জ্ঞান ফিরে সে নিজেকে রামিম এর বুকে পায় রাতের কথা মাথায় আসতেই সে কান্নায় ভেংগে পরে সে রামিম তাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুনিয়ে শান্ত করে সামলে নেয় সেদিন সব।
তারপর আফ্রিন না দেশে আসে মা-বাবার মৃত্যু তে এতো ঝামেলায় সে ভুলে যায় সব

……বর্তমান….
রামিম বসে আছে অনেক ভয়ানক দেখাচ্ছে তাকে আজ,রামিম বলা শুরু করলো, আমি তো আফ্রিন কে কখনো ভালোই বাসি নাই ও তো আমার একটা খেলার গুটি মাত্র যাকে আমি ইউজ করে গেছি।তোর থেকে সব কেরে নিবো আমি আসফিন সব।
রামিম ঃ আম্মু আম্মু ও আম্মু কই তুমি?
রামিমের আম্মু ঃ এইযে আমি বাবা,কি হইছে এমন ডাকছোস কেন?
রামিম ঃ আমি সিনথিয়া কে বিয়ে করার জন্য রাজি আগামি ৪ দিনের মধ্যে বিয়ের সব ব্যাবস্থা করো তুমি।
রামিমের আম্মু ঃ আলহামদুলিল্লাহ আব্বু আমি অনেক খুশি হয়েছি আমি সব ব্যাবস্থা করছি বলে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে রামিমের মা সালেহা বেগম।

সালেহা বেগম আজ অনেক খুশি কারণ তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে রামিম।যাক ভালোই হয়েছে অই অলক্ষির ভুত মাথা থেকে নেমেছে আমার ছেলের।অই বিদেশি মাইয়া আফ্রিন যতই আমার ননদের মেয়ে হোক এক বিন্দু ও দেখতে ইচ্ছা হয় না আমার ওরে।
সালেহা বেগম ঃ হ্যালো আফা,রামিম সিন্থিয়া কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে আর বলছে ৪ দিনের মধ্যে সব ব্যাবস্থা করতে।শুনো তাড়াতাড়ি সব করে ফেল তুমি।
রিনা বেগম ঃ তাই বাকি সালু আচ্ছা আমি সব করছি।
সিন্থিয়ায়ার বাবা কই তুমি? শুনে যাও রামিক বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে আমাদের সিন্থিয়াকে সব ব্যাবস্থা করতে হবে তো আসো।

সিন্থিয়া মায়ের কথায় খুব খুশি হয়ে যায়।কিশোরী মন যে তার রামিম কে সেই কবে দিয়ে ফেলছে সে,১৮ বছর এর কিশোরী আবেগ দিয়ে ভালোবাসে সে রামিম কে।ছোট বলে রামিম কখনোই সিন্থিয়ার অনূভুতি গুলো পাত্তা দিতো না এতে অনেক কষ্ট পেতো সিন্থিয়ার ছোট মন।আজ সে খুব খুশি পেতে চলেছে তার ভালোবাসা।
আজব দুনিয়ায় কেউ ভালোবেসে না বলতে পেরে কষ্ট পাচ্ছে তো কেউ আবার পেয়েও হারালো,আর কেউ নতুন স্বপ্ন বুনছে তার ভালোবাসা কে নিয়ে।

মনের কোনে পর্ব ২

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ দিন আজ রামিম আর সিন্থিয়ার গায়ে হলুদ।দুই দিন ধরে আসফিন তার প্রিয়তমা এর দেখা পাচ্ছে না,আফ্রিন নিজেকে ঘরবন্ধি করে রেখেছে।
সালেহার গলার আওয়াহ শুনে কোনো রকম গায়ে ওরনা জরিয়ে নিচে নেমে এলো আফ্রিন।নিচে এসে দেখলো রামিম আর সালেহা বেগম এসেছেন তার বাসায়।

রামিম আফ্রিন এর দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো আফ্রিন এই দু দিন এ নিজের কি হাল বানিয়েছে মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে তার।রামিম এর তো খুশি হওয়ার কথা কারণ সে তো আফ্রিন এর এই অবস্থা বানিয়ে আসফিন কে কষ্ট দিতে চেয়েছিল তবে আজ তার বুকে কেন চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে, সব অনূভুতি গুলো কে মনের কোনে আটকে দিলো হাসি মুখে আসফিন এর কার্ড এগিয়ে দিলো,
রামিম ঃ আসলে আমার কাল বিয়ে আজ গায়ে হলুদ এতো তাড়াতাড়ি সব হলো যে কাউকে জানাতে পারি নাই আমি।সবার আগে তোকে দিলাম আসফিন। ফুপি তোমরা সবাই আজ বিকেল চলে এসো আমাদের বাসায়।

আস্ফিন ঃ আর ইউ সিরিয়াস মেন তোর বিয়ে আর এখন বলছিস আমাকে?(অবাক হয়ে কারণ আসফিন আশা করে নাই এতো সহযে সরে যাবে তার জিবন থেকে)
আফ্রিন স্তব্দ হয়ে গেলো রামিম এর কথা শুনে তার পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো চোখ বুঝে আসলো তার পরে গেলো সে নিচে….

মনের কোনে পর্ব ৪