মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪২

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪২
সাদিয়া জাহান উম্মি

ভালোবাসাময় একান্ত মুহূর্ত কাটাচ্ছিলো রুদ্রিক আর অথৈ। দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটি চলছিলো ওদের মধ্যে।কিন্তু বাধা পরে দরজায় বার বার করাঘাত করার কারনে।অথৈ সাথে সাথেই সরে আসল রুদ্রিকের কাছ থেকে।লাজুক হেসে বলে,’ আমি দেখছি কে এসেছে।’

অথৈ নামতে নিলেই রুদ্রিক ওর হাত টেনে ধরে।অথৈ পিছনে ঘুরে ওর দিকে তাকাতেই রুদ্রিক বলে,’ তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো।আমি দেখছি কে এসেছে।’
অথৈ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।তারপর চলে হেলো ওয়াশরুমে।এদিকে রুদ্রিক গিয়ে দরজা খুলে দেখে অনিক আর নীল দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ এমন জঘন্যভাবে হাসার কারন?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুজনেই থতমত খেয়ে গেলো।ওদের হেনস্তা করতে পেরে রুদ্রিক ঠোঁট কামড়ে হাসল।অনিক নিজেকে সামলে নিলো।পর পর দুষ্টু হেসে বলে,’ কি ব্যাপার মামা?সেইযে রুমে ঢুকেছ।বের হওয়ার তো নামই নিচ্ছ না।’
নীল ভ্রু-নাচাচ্ছে।

‘ বুঝি, বুঝি সব বুঝি।’
রুদ্রিক বুকে হাত আড়াআড়িভাবে বেঁধে বলে,’ বুঝতেই যখন পারছিস।তো এমন অসভ্যদের মতো করছিস কেন?আর ডিস্টার্ব করছিস কেন?’
অনিক আর নীল প্ল্যান করে এসেছিলো রুদ্রিককে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে।কিন্তু এই ছেলের যে লজ্জা শরম নেই তা তো আগে থেকেই জানা।এখন নিজেরাই বিব্রতবোধ করছে।তাই আর কথা এগোলো না ওরা। অনিক বলে,’ ইহান বলল তোদের ডেকে দিতে।লাঞ্চ করে আশপাশ ঘুড়ে আসব।এটাই বলতে এসেছি।’

‘ হুম বুঝলাম।’
‘ জলদি তৈরি হয়ে আয়।’
নীল আর অনিক চলে গেলো।রুদ্রিক দরজা আটকে রুমে আসতেই দেখে অথৈ মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরোচ্ছে।রুদ্রিক বলে,’ শেষ?’
মুখের উপর থেকে তোয়ালে সরালো অথৈ। মৃদ্যু হেসে বলে,’ হু! আপনি যান ফ্রেস হয়ে আসেন।’
রুদ্রিক প্রশ্ন করল,’ তোমার ক্ষিদে পায়নি?’

অথৈয়ের তেমন একটা ক্ষিদে পায়নি।তাই বলল,,’ নাহ,ওতোটাও পায়নি।’
রুদ্রিক এগিয়ে গেলো রুদ্রিকের কাছে।মাথা নুইয়ে আনলো অথৈয়ের মুখ বরাবর।অথৈ হকচকিয়ে গেলো।পিছাতে নিলেই ওর কোমড় আঁকড়ে ধরে রুদ্রিক ফিসফিস করে সুধায়,’ ক্ষিদে পাবে কিভাবে?আমার এতোগুলো আদর খেলে।তাহলে কি আর ক্ষিদে পায়?’

অথৈয়ের মুখটা হা হয়ে গেলো।পর পর রুদ্রিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আওড়ায়,’ অসভ্য কোথাকার।এরকম নির্লজ্জ মানুষ আমি দুটো দেখিনি।’
রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো।বক্র হাসির রেখা অধর কোণে ফুটিয়ে বলে উঠে,’ সব পুরুষরাই তাদের বউদের কাছে অসভ্য আর নির্লজ্জই হয়।সভ্য হলে তাহলে আর তাদের আর বাচ্চার বাবা হওয়া লাগবে না।আর যারা বউয়ের কাছে সভ্য হয় তাহলে বুঝবে তাদের মাঝে সমস্যা আছে।’

অথৈ তাজ্জব বনে গেলো।মানে কি থেকে কি বলে ফেলল।অথৈ দুয়েকবার পলক ঝাপ্টালো।বলল,’ মানে কি থেকে কি বললেন এসব?আমি বললাম কি?আর আপনি আমাকে কি থেকে কি বুঝিয়ে দিলেন।’
রুদ্রিক অথৈয়ের হাত থেকে তোয়ালেটা নিয়ে বলে,’ যা বলেছি আর বুঝিয়েছি ভালোই করেছি।এখন আমি ফ্রেস হতে যাবো।তুমি তো আমার আদর খেয়ে পেট ভড়িয়ে ফেলেছ।

কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তো সেটা হয়নি।তাই আমার ক্ষিদে পেয়েছে।লাঞ্চ করব।এরপর আশেপাশে ঘুড়ব সবাই।সো জলদি রেডি হয়ে নেও।আর হ্যা উষ্ণ কাপড় গায়ে দিও।বাহিরে ঠান্ডা লাগবে।’
এই বলে রুদ্রিক ফ্রেস হত চলে গেলো।মিনিট দশেক পর বের হয়ে দেখে অথৈ রেডি হয়ে আছে।কালো টপ্স,উপরে জিন্সের জ্যাকেট,সাথে জিন্স প্যান্ট,আর গলায় কালো স্কার্ফ পরেছে মেয়েটা। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে।রুদ্রিক আলতো হেসে বলে,

‘ লুকিং সো বিউটিফুল মাই ওয়াইফি।’
অথৈ হেসে বলে,’ ধন্যবাদ আপনাকে।’
‘ মাই প্লেসার বিউটিফুল লেইডি।’
অথৈ হেসে দিলো রুদ্রিকের কথায়। রুদ্রিকও হাসল।তারপর রেডি হয়ে নিলো।অথৈয়ের সাথে ম্যাচিং করে কালো টি-শার্ট, উপরে কালো ডেনিম জ্যাকেট আর কালো ডেনিম প্যান্ট পরল।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিলো।পুরো রেডি হয়ে অথৈয়ের দিকে তাকালো।

দেখে মেয়েটা ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিক কাছে এসে তুরি বাজালো অথৈয়ের মুখের সামনে।এতেব হুশ আসে অথৈয়ের।একটু আগে কি করছিলো ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই লজ্জায় নুইয়ে পরল।ইশ,কি বেহায়া ভাবে তাকিয়ে ছিলো ও মানুষটার দিকে।কিন্তু ওর কি দোষ?লোকটা এতো সুন্দর যে অথৈয়ের শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।এই নিজেকে ওর সাথে ম্যাচিং করে কালো রঙে মুরিয়েছে।এতে লোকটাকে মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে।চোখ ফেরাতে পারছে না অথৈ। এখন দোষটা কার?নিশ্চয়ই অথৈয়ের নাহ?এদিকে রুদ্রিক দুষ্টু হেসে বলে,’ এভাবে লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি ম্যাডাম।তোমারই বর আমি।আমাকে যতো খুশি দেখতে পারো।’

অথৈ মুখ ভেংচি মারলো রুদ্রিককে।তারপর বলে,’ আমার বয়েই গিয়েছে আপনাকে দেখতে।আমি তো আয়নায় নিজেকে দেখছিলাম।’
‘ আমি জানি আপনি কাকে দেখছিলেন।এখন আর কথা নয় চলুন যাওয়া যাক।’
রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দিলো অথৈয়ের দিকে।অথৈ রুদ্রিকের বাড়িয়ে দেওয়া হাত আঁকড়ে ধরল।তারপর চলল বাকিদের কাছে।

ইহান দাঁড়িয়ে আছে রিধি আর পিহুর জন্যে বরাদ্দকৃত কটেজে।গলা খাকারি দিয়ে দরজায় টোকা দিলো।এইভাবে পর পর কয়েকবার দিলো।না কোনো সারাশব্দ নেই।এইবার না পেরে জোড়ে করতে লাগল।এইবার শব্দটা বেশ জোড়ালো হওয়ায় পিহু চমকে ঘুম থেকে উঠে।তারপর ইহানের গলার আওয়াজ পেতেই দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে।এদিকে রিধিও উঠে বসেছে।চোখে একরাশ ঘুম এখনো।ট্রেনে ভালোভাবে ঘুমোতে পারেনি।তাই এখনও ওর ঘুম পাচ্ছে।এদিকে পিহু দরজা সম্পূর্ণ খুলে দিয়েছে।ইহানকে দেখে বলে,’ হ্যা ভাইয়া?ডাকছিলেন?’

ইহানের কণ্ঠে খানিকটা বিরক্তির রেশ, ‘ হ্যা।সেই কখন থেকেই।খাওয়া দাওয়া করতে হবে নাহ?ঘুড়তে বেড়োবো খাওয়া দাওয়া করেই।তোমাদের…..’
আর কিছু বলতে পারলো না ইহান।তার আগেই ওর নজর গিয়ে রুমের ভীতরে বিছানার উপরে বসা রিধির দিকে চলে যায়।ঘুম ঘুম চোখ মুখ মেয়েটার,চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।গায়ে ওড়না নেই।ঢিলাঢালা লেডিস টিশার্ট পরেছে।যার একপাশ কাধ থেকে খানিকটা নিচে নেমে গিয়েছে।ফলে ফর্সা কাধটা দেখা যাচ্ছে।প্লাজুটাও পায়ের অনেকটা উপরে উঠে আছে।

মেয়েটার পুরাই বিধ্বস্ত অবস্থা।রিধিকে এই অবস্থায় দেখে ইহানের বু পাশটা কেঁপে উঠে।হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় হু হু করে।এলোমেলো রিধিকে দেখে ও নিজেও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে উলটো দিকে ঘুরে গেলো।আমতা আমতা করে বলে,’ দ্রুত তৈরি হয়ে আসো।আমরা সামনের ওই ফুল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।’

ইহান আর এক মুহূর্ত দেরি করল না।দ্রুত পায়ে চলে গেলো।পিহু কিছুই বুঝলো না ইহানের এমন অস্থিরতার কারন।তাই দরজা আটকে রুমের ভীতরে চলে আসল।কিন্তু বিছানার দিকে তাকাতেই ওর চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে যায়।প্রায় একপ্রকার চিৎকার করেই বলে,’ তুই কখন উঠলি?’

পিহুর চিৎকারে রিধি চোখ মেলে কপাল কুচকে তাকালো।বলল,’ কখন উঠলাম মানে?তুই উঠার পর পরেই তো উঠলাম।কোন উল্লুকটায় এসে এইযে দরজা ধরাম ধরাম করে বারি দেওয়া শুরু করছিলোরে বাবা।’
পিহু উঁচু কণ্ঠে বলে,’ ওটা ইহান ভাইয়া ছিলো।আর আমি দরজাটা পুরোটা খুলে রেখেছিলাম গাধি।তুই কি উঠে গিয়েছিস আমি জানতাম নাকি?’

রিধি বলে,’ তো?এখানে এমন করার কি আছে?’
পিহু দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ। তোর কি অবস্থা।আমিও তো বলি ইহান ভাইয়া এমন করে চলে গেলো কেন?এখন বুঝলাম বিষয়টা।’

রিধি পিহুর কথা শুনে বিরক্ত হয়ে নিজের দিকে তাকালো।তাকাতেই ওর চোখজোড়া মার্বেল আকার ধারণ করে।এ কি অবস্থা ওর?এমন এলোমেলোভাবে ও বসেছিলো।আর সামনে ইহান ছিলো। লোকটা ওকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছে।লজ্জায়,আতংকে রিধি জোড়েসোড়ে এক চিৎকার দিলো সর্বশক্তি দিয়ে।পর পর মুখটা দুহাতে ঢেকে একদৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।পিহু নাক মুখ কুচকে বলে,’ এখন লজ্জায় মুখ ঢেকে কি হবে?যা হবার তো হয়েই গিয়েছে।’

এদিকে ইহান বাহির থেকে রিধির চিৎকার শুনতে পেয়েছে।হাসতে লাগল।মেয়েটা বড্ড অবুঝ।ভাজ্ঞিস ও ছিলো।অন্য কেউ হলে কি হতো?তবে রিধি যে এই বিষয়টা নিয়েই চিৎকার করেছে বুঝতে বাকি নেই।বাকিরাও শুনেছে।প্রিয়ান বলল,’ রিধি এমন চিৎকার করল কেন?বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।’
প্রিয়ান যেতে নিলেই ইহান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’ যাওয়ার দরকার নেই।আমিই তো মাত্র আসলাম।দেরি হয়ে গিয়েছে ওদের তাই এমন করছে।ওরা কেমন জানই তো তোমরা।’

আহিদ সম্মতি জানালো,’ হ্যা রে ইহান ভাই ঠিক বলছে।আর ওরা আসলেই নাহয় জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে।’
সবাই আহিদের কথায় একমত দিলো।এদিকে ইহান এখনও মিটিমিটি হাসছে।বিষয়টা রুদ্রিক ধরতে পারল।ভ্রু-কুচকে বলে,’ কিরে তুই হাসছিস কেন?’
ইহান হাসি থামিয়ে নিয়ে বলে,’ এমনি।কিছু একটা মনে পরে গিয়েছে।তাই হাসছি।’
অথৈ রুদ্রিকের হাত ধরে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে,’ শুনুন না ওসব ছাড়ুন।দেখেন না ফুল গাছটা কতো সুন্দর।আসুন কিছু ছবি তুলি।’

রুদ্রিক মুচঁকি হেসে অথৈয়ের সাথে ছবি তুলতে লাগল।অথৈ একেকরকম ভঙিমা করছে।সাথে রুদ্রিককেও বলছে এভাবে করতে। এভাবে দাঁড়াতে।দূর থেকে সাফাত সেসব দেখে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।অথৈ কতোটা সুখী রুদ্রিকের সাথে তা ওকে দেখলেই বোঝা যায়।দুজন একেবারে পার্ফেক্ট ম্যাচ।মেড ফোর ইচ আদার।

সাফাত আনমনা হয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগল।হঠাৎ ওর নজর গেলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটার দিকে।মেয়েটা এদিকেই তাকিয়ে আছে।সাফাতের কপাল কুচকে আসে।এই মেয়ে ওর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন?সাফাতকে নিজের দিকে তাকাতে দেখেই আরহা চওড়া হাসলো।আর আরহার হঠাৎ এমন হাসিতে সাফাত থতমত খেয়ে যায়।এমন হাসি দেওয়ার মানে কি?পাগল না-কি মেয়েটা?হঠাৎ ফোনে টুংটাং মেসেজের আওয়াজ আসল সাফাতের।সাফাত ফোন অন করে দেখে আরহাই ওকে মেসেজ করেছে হোয়াইটস এ্যাপে।

‘ আমার দিকে তাকিয়েছিলেন কেন মি.? আমাকে আমার পছন্দ টছন্দ করে ফেলেছেন না-কি?’
সাফাত এইবার পুরোপুরিভাবে বুঝে ফেলেছে এই মেয়ের মাথায় গন্ডগোল আছে।নাহলে এমন করে একটা ছেলেকে কোন মেয়ে মেসেজ পাঠায়।ফের আবারও মেসেজের শব্দ হলো।

‘ এই মি. আবার তাকান না এদিকে।আমার ফ্রেন্ডরা আপনাকে দেখবে।’
সাফাত বিরক্ত হয়ে রিপ্লাই করল,’ বেশি বকছ তুমি।আমাকে মেসেজ করা থেকে বিরত থাকো।’
সাফাত এটা সেন্ড করতেই হঠাৎ ওর খেয়াল আসল।ও এই মেয়েটার সাথে কথাই বলছে কেন?আর এই মেয়েটাকে এখনও এড করে রেখেছে কেন? এখনই ব্লক করতে হবে।সাফাত আরহাকে ব্লক করতে নিবে।তার আগেই আরহা আবার মেসেজ করে।

‘ আমি জানি আপনি এখন বিরক্ত হয়ে আমাকে ব্লক করতে যাচ্ছেন।কিন্তু খবরদার ভুলেও আমাকে ব্লক করবেন না।যদি করেন তাহলে আপনার সাথে যে লোকগুলো আছে তাদের কাছে গিয়ে আপনার নামে উল্টাপাল্টা বলে আপনার প্রেস্টিজের বারোটা বাজিয়ে দিবো।’
সাফাতের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসল।রাগি চোখে তাকালো আরহার দিকে।যেন এক্ষুণি আরহাকে এই চোখের আগুনে ভষ্ম করে দিবে।আরহা সাফাতের রাগ দেখে মিটিমিটি হেসে আবার মেসেজ করল,’ ইশ,রেগে একেবারে গোলাবারুদ হয়ে গিয়েছে।বলি এতো রাগার কি আছে বলুন?আমার মতো কিউট একটা মেয়েকে আপনি ওমন করে চোখ রাঙানো দিন কিভাবে?’

সাফাত মেসেজটা পড়ে আর রিপ্লাই করল না।না আর তাকালো আরহার দিকে।কিন্তু আরহা দূর থেকে সাফাতকে দেখছে।মন ভরে দেখছে।এ দেখার যেন শেষ নেই।জীবনে অনেক ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে।কিন্তু কারোও সাথেই ও রিলেশনে জড়ায়নি।কেন যেন কোনো ওইসব ছেলেদের ভালোই লাগতো না ওর।এসব প্রেম, ভালোবাসা যে ওর জন্যে না তা বেশ ভালো করে বুঝতে পেরে গিয়েছিলো।কিন্তু হঠাৎ করেই যে ও নিজেই কাউকে ভালোবেসে ফেলবে এক দেখায়।এটা ভাবনার বাহিরে ছিলো।এক দেখার ভালোবাসাতেই যেন আরহা ওর দিন রাত সব ভুলে বসেছে।মাথায় শুধু ঘুরপাক খায় সাফাত আর সাফাত।আরহা মনে মনে আওড়ালো বেশ কয়েকবার সাফাতের নাম।পর পর নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।

রিধি আর পিহু এসে পরেছে।ওদের দেখেই আহিদ বলে,’ এইতো দুটো এসে পরেছে।এখন যাওয়া যাক ভাইয়া।আর সহ্য হচ্ছে না।ক্ষিদের কারনে মনে হচ্ছে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে।’

সবাই হেসে দিলো আহিদের কথায়।এরপর সবাই রেস্টুরেন্টের দিকে হাটা ধরল।এদিকে রিধি যেন চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছে।ইহান ওকে ওমন একটা অবস্থায় দেখেছে ভাবলেই শরীর শিরশির করে উঠে।কি একটা অবস্থা।হঠাৎ রিধি অনুভব করল ওর পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে।তাও আবার গা ঘেষে।রিধি মাথা উঠিয়ে ইহানকে দেখেই লজ্জায় নুইয়ে পরে।ইহান ঝুকে আসল ক্ষানিকটা।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে আওড়ায়,’ ওইসময় তোমাকে অনেক আবেদনময়ী লাগছিলো।জাস্ট মাথা খারাপ করে দেওয়া টাইপ।খবরদার মেয়ে আমি দেখেছি বলে ছাড় পেলে।পরেরবার থেকে খেয়াল রাখবে।কারন আমি আমার ব্যক্তিগত সবকিছু আমার একান্তে যত্নে নিবিড়ভাবে রাখতে পছন্দ করি।মাইন্ড ইট?’

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪১

ইহান সরে আসল।রিধি বড়ো বড়ো চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইহান যে এমন কিছু বলবে ও জীবনেও ভাবেনি।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এদিকে ইহান রিধিকে সুযোগ বুঝে চোখ মেরে দিলো।রিধি থতমত খেয়ে যায়।ইহান ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে।পর পর বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে যায়।পিছনে রেখে যায় স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিধিকে। যে আপাততো ইহানের কান্ড কারখানা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৩