মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৫

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

রুটব্রিজটা দেখতে এতো মোহনীয় ছিলো যে সবাই বিমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো।ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলা নদীটাও সবার দৃষ্টি কেরে নিয়েছিলো।রুটব্রিজ দেখা শেষ করে ওরা আবার ফিরে আসে।সবারই অবস্থা বেহাল।নামার সময় না যেতোটা কষ্ট হয়েছিলো। তার থেকে বেশি এখন হয়েছে।সবার পা গুলো প্রায় অবশ।ওরা আধাঘন্টার মতো বিশ্রাম করে নিলো।সবার বিশ্রাম নেওয়ার পালা শেষ হলে।রুদ্রিক সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,’ এখন কি তোরা সবাই আবার ঘুরতে যাবি?না-কি বিশ্রাম নিবি?’

অথৈ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,’ না না ঘুরবো।আমরা এখন ঠিক আছি।কি বলো সবাই?আমি ঠিক বলছি না?’
রুদ্রিক অথৈয়ের উচ্ছ্বাস মৃদ্যু হাসলো।মেয়েটা যে ঘুরাঘুরি বেশ পছন্দ করে তা আর বলতে নেই।সাফাত পকেটে দু হাত গুজে দাঁড়িয়ে ছিলো।সে শান্ত কণ্ঠে বলে,’ আমরা এখন ওয়ারী ছড়া যাবো।তাহলে এখন সবাই গাড়িতে উঠে বসো।তাড়াতাড়ি রওনা হই।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সবাই সাফাতের কথামতো গাড়িতে উঠে বসল।তারপর গাড়ি চলল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।এদিকে ওদের যাওয়ার পথের দিকে চারজোড়া চোখ হিংস্রভাবে তাকিয়ে আছে।তার মধ্যে থেকে একজন রাগি গলায় বলে উঠল,’ ভাই?তোমার হয়েছিলোটা কি?তুমি এমন একটা মোক্ষম সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করে দিলে?’
অপর ব্যক্তিটি বিরক্ত চোখে তাকালো।বলল,’ তুই এতো অধৈর্য কেন জেনি?একটা কাজ কি মুখে বললেই হয়ে যায়?’
জেনি অধৈর্য কণ্ঠে বলে,’ আমি জানি না রিয়ান ভাই।যেভাবেই হোক ওই অথৈকে পথ থেকে সরিয়ে দেও।আমি জানি না।আমার জাস্ট রুদ্রিককে লাগবেই।’

রিয়ান বোনের কথায় বাঁকা হাসলো।তীর্জক স্বরে বলে,’ আর আমি যদি অথৈকে না মেরে।রুদ্রিককে মেরি ফেলি?’
জেনি যেন আকাশ থেকে পরলো।রিয়ানের কাছ থেকে এমন একটা কথা সে শোনার জন্যে প্রস্তুত ছিলো না।জেনি আশ্চর্য হয়ে বলে,’ কিসব বলছ ভাই?তুমি রুদ্রিককে কেনো মারবে ভাই?তুমি তো জানো আমি রুদ্রিককে কতো ভালোবাসি।তুমি ওই অথৈকে যেভাবেই হোক শেষ করে দেও।আর তুমি তখন সিড়ি থেকে ওকে ধাক্কা দিলে না কেন?ওখান থেকে পরলে আর বাঁচার চান্স ছিলো না।’

রিয়ান রাগি চোখে বোনের দিকে তাকালো।ধারালো গলায় বলে,’ তোর মাথাটা পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে বুঝেছিস?আর কিসের ভালোবাসার কথা বলছিস?এটা জাস্ট তোর সাময়িক মোহ।রুদ্রিককে টপকে দিলেই সেই মোহও কেটে যাবে।’
‘ ভাই নাহ।’
‘ জাস্ট সাট আপ জেনি। চুপচাপ কটেজে ফিরে যা।আমার যা মন চায় আমি তাই করবো।আর একটা কথাও তোর মুখ থেকে আমি শুনতে চাই নাহ।’ এটা বলেই রিয়ান চলে গেলো।আর জেনি বিরবির করল,’ তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না ভাই।আমারই যা করার করা লাগবে।আমি রুদ্রিককে যেকোনো মূল্যে আমার করেই ছাড়বো।’

ওয়ারী ছড়া মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ গারো পাহাড়ে পারমেগ্রে নামক একটি ছোট গ্রামে অবস্থিত একটি রিভার ক্যানিয়ন যা তুরা শহর থেকে ৮৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ওয়ারী ছড়া শব্দের ওয়ারি মানে গভীর নদী। এই জায়গাটি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে তবে এটি ইতিমধ্যে একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এই ওয়ারী ছড়া প্রায় ৪৫ ফুট গভীর এবং ১ কিমি দীর্ঘ ট্রেইল। এটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে।

ওয়ারি নদীতে ক্যাসকেডিং ছাড়াও রয়েছে রে-নাং এবং চিবোক ডেয়ার নামে দুটি প্রধান জলপ্রপাত রয়েছে। এই দুই জলপ্রপাতে পৌঁছাতে চাইলে হাইকিং করে পৌঁছাতে হবে। তাই আপনি যদি একটি মুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে ইচ্ছুক হন তবে এটির জন্য যান। কারন এই জলপ্রপাতগুলিতে পৌঁছানোর পথটি খুব কঠিন। ঝর্ণাগুলি চমৎকার স্বচ্ছ পানির জলপ্রপাত যা আপনার চোখে আরামের অনুভূতি দিবে এবং মনের প্রশান্তির জন্য ভালো কাজে দিবে। এই দুই জলপ্রপাত ছাড়াও অগ্নিমা ওয়ারী মৎস্য অভয়ারণ্য নামে একটি মৎস্য অভয়ারণ্যও রয়েছে, তবে এটিতে যাওয়ার পথটিও কঠিন।

এখানকার আশপাশের এলাকা ঘন বন ও পাহাড়ে ঘেরা। তাই ওয়ারী ছড়া পরিদর্শনের সর্বোত্তম সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে যখন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং খুব একটা বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টি এখানকার ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় আপনি স্বচ্ছ নীলাভ জল দেখতে পারবেন না।যদিও ওয়ারী ছড়া একটি নতুন আবিষ্কৃত পর্যটন গন্তব্য তবুও এরই মধ্যে এখানে অনেক এক্টিভিটি করার মতো সুবিধা গড়ে উঠেছে।

পর্যটন অবকাঠামো ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে, কিন্তু স্থানীয়রা আপনার ভ্রমণকে যতটা সম্ভব স্মরণীয় করে তুলছে।এই শান্ত নদীতে রিভার র‍্যাফটিং আপনার অভিজ্ঞতার সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি। নদীর পানি আসলে নীল। যদিও সেখানে বিভিন্ন গুহা রয়েছে, তাই এটি একটু কঠিন হতে পারে। তাদের বোটিং সুবিধাও বিকল্প হিসেবে রয়েছে তবে বেশিরভাগ মানুষ রিভার রাফটিংটাই পছন্দ করেন। এখানকার জলের শব্দ, জলপ্রপাত, সবুজ বনভূমি এবং পরম নিস্তব্ধতা এটিকে ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।

পারমেগ্রে গ্রামে পৌছাতেই ওরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলো।গাড়ি আর সামনে যাবে না।এইবার হেটেই যেতে হবে।সবাই যার যার ব্যাগপত্র নিয়ে হাটা শুরু করে দিলো।আরহা সামনে এগোতে এগোতে বলে,’ এই পাহাড়ে এলে এই সমস্যা।শুধু পাহাড় বেয়ে বেয়ে নিচে নামো।নয়তো উপরে উঠো।’
আরহার কথায় সাফাত তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,’ তো এতো সমস্যা হলে এসেছো কেন?যারা হাইকিং করতে পারে না।তাদের না আসাটাই বেটার।’

আরহা একটুও ক্ষেপলো না।শান্ত কণ্ঠে বলে,’ হাইকিং করতে পারি না।কিন্তু তাই বলে কি পৃথিবী ঘুরে দেখবো নাহ?’
সাফাত চোখ উল্টিয়ে ফেলল।এই মেয়ের সাথে অহেতুক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।ওরা সবাই ওয়ারী ছড়া যাওয়ার জন্যে হাটতে লাগল।আরও অনেক অনেক পর্যটক দেখা যাচ্ছে।তারাও ওয়ারী ছড়া যাবে।ভীষণ দূর্গম পথ।পাহাড় গা ঘেষে ঘেষে নামতে হয়।সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে একজন একজন করে পাহাড়ের রাস্তায় মই দেওয়া সেগুলো পার হতে।কারন পাহাড়ের গা কেটে যে সিড়িগুলো তৈরি করা হয়েছিলো।

সেগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।তাই সেখানে বাঁশের তৈরি মই দিয়ে রাখা।সবাই বেশ কষ্টে নিচে নেমে আসল।কাঙ্ক্ষিত স্থানটায় আসতেই সবার চোখ জুড়িয়ে গেলো।এইযে কষ্ট করে কতোটা পথ পারি দিয়ে এখানে এসেছে।তা যেন একমুহূর্তেই বিলীন হয়ে গেলো।প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে।বিশাল বড়ো বড়ো পাহাড়।সেই পাহাড়ের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে এলোমেলোভাবে বয়ে চলেছে ওয়ারি নদী।অথৈ যেন এই সৌন্দর্য্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।সবুজ ঘণ অরণ্য তার মাধ্যে বয়ে চলা নদীর জল নীল রঙের।সবাই নদীতে নেমে পরল।হাটু সমান পানি রয়েছে।ওখানে গিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠল।অথৈ রুদ্রিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।ওর কাছে আসল।এসেই হাসি হাসি মুখে বলে,’ আপনি আসছেন না কেন?’

রুদ্রিক অথৈয়ের হালকা ভিজে যাওয়া চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।বলল,’ ওখানে যদি যাই।তাহলে তো তোমাকে সেইভাবে দেখতে পারবো না।’
অথৈ রুদ্রিকের কথাটার মানে পুরোপুরি বুঝতে পারলো না।তাই বলে,’ মানে?সেইভাবে মানে কপি ভাবে দেখতে পারবেন না?’

রুদ্রিক ঝুকে আসল অথৈয়ের কাছে।ওর গরম নিশ্বাসগুলো অথৈয়ের কানে এসে বারি খাচ্ছে।অথৈ চোখ বন্ধ করে নিলো।পর পর শুনতে পেলো রুদ্রিকের ফিসফিসানো কণ্ঠস্বর,’ তুমি পানির মধ্যে নেমে উল্লাস করছে।দুহাতে পানি নিয়ে দূরে ছুড়ে মারছ।হিমেল হাওয়া এসে ক্ষণে ক্ষণে তোমার গা ছুঁয়ে গেলে।তুমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলো।পর পর তোমার ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসির রেখা দেখা যায়।তোমার এলোমেলো কেশগুলো আরও এলোমেলো হয়ে যায়।

এইযে হালকা ভিজে যাওয়া কাপড়চোপড় তোমার।সব মিলিয়ে আমি তোমাকে আমি ঠিক কি বলে তোমার প্রসংশা করবো তা ভেবে পাই না।কিন্তু তোমাকে এই রূপে দেখে আমার হৃদপিন্ডটা যে আমার আয়ত্তে থাকে না।জোড়ালো শব্দ তুলে বাঁজতে থাকে।মনটা চরমভাবে বেহায়া হয়ে পরে।ইচ্ছে করে তোমার এই স্নিগ্ধ,কোমল, ভেজা দেহটা খুব করে ছুঁয়ে দিতে।খুব গভীরভাবে।এতোটা গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে যতোটা করলে তুমি আমার মাঝে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।আর আমি তোমার মাঝে।আমাদের মাঝে ইঞ্চিখানেকও যেন দূরুত্ব না থাকে।’

অথৈ সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।এই লোকটার বলা প্রতিটা বাক্য ওর হৃদয়ের গভীরে গিয়ে গেঁথে যায়।এই যে এখন যা যা লাগামহীন কথাগুলো বলল লোকটা।ওই কথাগুলো দিয়েই যেন মনে হচ্ছে লোকটা ওকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।রুদ্রিক অথৈয়ের অবস্থা দেখে সরে আসল।ঠোঁটের কোণে ওর হাসি বিদ্যমান।রুদ্রিক এইবার ওর হাতদুটো অথৈয়ের কোমড়ে রেখে ওকে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে আসল।অথৈ হকচকিয়ে গেলো।চট করে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।অথৈ ঘাবড়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে,’ কি করছেন?ওরা সবাই এখানে তো! সবাই দেখলে কি ভাববে?’

রুদ্রিক যেন অথৈয়ের কথাটায় ভ্রু-ক্ষেপ করলো না।চট করে অথৈকে কোলে তুলে নিলো।এতে যেন অথৈ আরও ঘাবড়ে গেলো।জলদি আশেপাশে নজর দিলো।না এদিকে কেউ তাকিয়ে নেই।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত।তাও বলা তো যায় না।কেউ যদি দেখে ফেলে?অথৈ দুহাতে রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরল।তার নিজেরও ইচ্ছে করে না রুদ্রিকের সান্নিধ্যে থেকে যেতে।কিন্তু লজ্জা করে তো?অথৈ মিনমিন করে বলে,’ সবাই দেখে ফেলবে তো।কি করছেন?’

রুদ্রিক অথৈয়ের কপালে চুমু দিলো।অথৈ আবেশে চোখ বন্ধ নিলো।রুদ্রিকের দেওয়া প্রতিটি ছোঁয়ায় ওর শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।রুদ্রিকের ঠোঁটজোড়া অথৈয়ের কপাল থেকে সরে আসতেই।অথৈ আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো।রুদ্রিক অথৈয়ের চোখে চোখ রেখে গাঢ় স্বরে বলে,’ দেখুক!আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছি।’
অথৈ ওর হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় করল।তারপর মাথাটা রুদ্রিকের বুকে এলিয়ে দিয়ে বলে,’ ওদিকটায় চলুন না।ওরা দেখলে আমি ভীষণ লজ্জা পাবো।’

রুদ্রিক হেসে দিলো অথৈয়ের কথায়।রুদ্রিক এখন নিজেই নিজের কাজে অবাক হয়।আগে ও কি ছিলো।আর এখন কি হয়ে গিয়েছে।এই মেয়েটা ওকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।আগে বিনা কারনে কখনই হাসতো না ও।হাসলেও তা মৃদু হাসতো।আর এখন এই মেয়েটা ওর কাছে থাকলে,পাশে থাকলে। কারনে অকারনেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।এই যে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে।কি যে শান্তি লাগে এতে।সকাল থেকে যেই নাম না জানা চিন্তারা হানা দিয়ে বেড়াচ্ছিলো এই মেয়েটা ওর বুকে মাথা রাখতেই যেন সব গায়েব হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক এখন অথৈকে ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না।

এই মেয়েটাকে সর্বদা মুখের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে মন চায়।খুব করে তো বলেছিলো ওর মাস্টার্স শেষ করে। অফিসে জয়েন করবে।তারপর কিছুদিন পর অথৈকে ওর কাছে একেবারে নিয়ে আসবে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা বলে বড্ড ভুল করে ফেলেছে।এখন যেন অথৈকে ছাড়া একদন্ডও থাকতে পারে না রুদ্রিক।এইযে মেয়েটাকে ছাড়া নিসঙ্গ রাতগুলো কাটায়।তা যে কতোটা কষ্ট কাটায় ও জানে।এই মেয়েটাকে ওর পাশে চায় ও খুব করে।এতোটা কাছে চায় যতোটা কাছে আসলে ওদের আর কখনও কেউ আলাদা করতে পারবে না।রুদ্রিক একপা একপা করে এগিয়ে যাচ্ছে।অথৈ চুপটি করে রুদ্রিকের বুকে লেপ্টে আছে।রুদ্রিক হাটতে হাটতে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে উঠল,’ ওরা দেখলে তুমি লজ্জা পাবে।আর যদি আমি তোমার সব দেখে ফেলি?তখন লজ্জা পাবে নাহ?’

রুদ্রিকের এমন লাগামছাড়া কথা শুনে অথৈয়ের কান গরম হয়ে গেলো।গালগুলো ভারি হয়ে আসল।লজ্জায় ঠিক কি বলবে ভেবে পেলো না।অথৈকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রিক ভ্রু নাচিয়ে ফের বলে,’ কি বলো?আমি দেখলে লজ্জা পাবে?’
অথৈ চট জলদি রুদ্রিকের ঠোঁটে হাত রেখে ওর মুখ বন্ধ করে দিলো।লজ্জায় হাশফাশ করতে করতে বলে উঠে,’ এমন কেন আপনি?শুধু শুধু আমাকে এতো লজ্জা দেন কেন?’

রুদ্রিক চোখে হাসে। ওর ঠোঁটে রাখা অথৈয়ের হাতে চট করে চুমু দিয়ে বসে। অথৈ শিউরে উঠে হাত সরিয়ে ফেলে।রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ তোমাকে লজ্জা দিবো না তো কি?আমার পাশের বাড়ির আন্টির মেয়েকে লজ্জা দিবো?’
অথৈয়ের ভ্রু-জোড়া কুচকে আসে।কি থেকে কি বলল এই লোক?আর লোকটার পাশের বাড়িতে মেয়েও আছে?অথৈ চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলল,’ আপনার পাশের বাড়ির মেয়েকে বুঝি এর আগে কিছু বলে লজ্জা দিয়েছিলেন বুঝি?’
রুদ্রিক বুঝতে পারছে।অথৈ ক্ষ্যাপে যাচ্ছে।তাই অথৈকে একটু বাজিয়ে দেখার জন্যে রুদ্রিক বলল,’ হ্যা দিয়েছিলাম তো।মেয়েটা না ভারি মিষ্টি জানো।ও তো পুরো আমার জন্যে পাগল।আমারও ওকে অনেক ভালো লাগে।’

রুদ্রিকের মুখে এমন কথা শুনে।রাগে ওর সারা শরীর রি রি করছে।নাক ফুলিয়ে বলে,’ তো?এতোই যখন ভালোলাগে।আমাকে তাহলে বিয়ে করলেন কেন?ওই মেয়েকেই বিয়ে করতেন।’
রুদ্রিক মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে।তবে তা বাহিরে প্রকাশ করল না।মুখটাকে দুঃখী দুঃখী করে বলে,’ আর বলো না।ও না আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটো হয়ে যায়।আর দাদুর ওকে পছন্দ না।তার তো তোমাকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো।তাই তো দাদুর জন্যেই তোমাকে বিয়ে করতে হলো।এখন আর কি করবো বলো?বিয়ে তো আমার হয়েই গিয়েছে।’

অথৈয়ের ভীষণ কষ্ট লাগল।এটা স্বাভাবিক নিজের স্বামী মুখে এমন কথা শুনলে প্রতিটি স্ত্রীই কষ্ট পাবে।অথৈ চোখ ভরে আসল।নিজেকে সামলাতে না পেরে।ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে উঠে।অথৈকে এমনভাবে কাঁদতে দেখে রুদ্রিক হতভম্ব হয়ে পরল।ও ভাবেনি অথৈ যে এইভাবে কেঁদে দিবে।রুদ্রিক অস্থির হয়ে বলে উঠে,’ হেই, হেই কাঁদছ কেন?কাঁদে না।এই মেয়ে?অথৈ?আমি মজা করেছি।মজাও বুঝো না?কান্না থামাও।’

রুদ্রিকের কথা শেষ হতে দেরি।অথৈয়ের রাগ করতে দেরি নেই।ও রাগে রুদ্রিকের বুকে ঘুষি দিতে লাগল।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,’ আপনি একটা খারাপ লোক।আমার সাথে এমন করলেন কেন?অসভ্য লোক।নামান আমাকে কোল থেকে।নামিয়ে দিন।আমাকে ধরবেন না।’

রুদ্রিক হাসছে। প্রাণখোলা হাসি।রুদ্রিকের এহেন হাসি দেখে অথৈয়ের হাতজোড়া আঘাত করা থামিয়ে দিলো।কান্নাভেজা চোখে এসে ভড় করে একরাশ মুগ্ধতা।এই লোকটা হাসলে এতো সুন্দর লাগে।যে অথৈয়ের আশেপাশে কি হচ্ছে সব ভুলে যায়।শুধু ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।অথৈয়ের কান্নাও থেমে গিয়েছে।রুদ্রিক অথৈয়ের কোন নড়চড় না দেখে হাসি থামালো।তবুও ওর ঠোঁটের কোণে এখনও হাসির ছোঁয়া লেগে আছে।রুদ্রিক ভ্রু বাকিয়ে তাকিয়ে বলে,’ কি কান্না শেষ?’
অথৈ কিছুই বলল না।ও এখনও রুদ্রিককে দেখছে।রুদ্রিক নরম সুরে বলে উঠে,’ কি দেখছ ওমন করে?’

অথৈ কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই অকপটে বলে,’ আপনাকে দেখি।আপনি এভাবে হাসলে না আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।আমি চোখ সরাতে পারি না।আপনার ওই হাসিতে আমার বুক ব্যথা করে।’
রুদ্রিক দুষ্টুমি স্বরে বলে,’ তাহলে তো সর্বনাষ।আমার হাসিতে বুক ব্যথা করলে তো আর আমার হাসা যাবে না।’
অথৈ দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না ইঙ্গিত দেখিয়ে বলে,’ এই না না হাসবেন না কেন?একশবার হাসবেন।আমার যে এই ব্যথা ভীষণ ভালো লাগে।মিষ্টি ব্যথা।’

রুদ্রিকের মনটা যেন জুড়িয়ে গেলো অথৈয়ের কথায়।ও আর কিছু বলল না।অথৈকে নিয়ে চুপচাপ হেটে নদীর অন্য বাঁকে চলে গেলো।একটু সাইডে জায়গাটা।এখানে কেউ নেই।আর ওপারপাশ থাকে এদিকটা দেখাও যায় না।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে পাহাড়ের গা ঘেষে দাঁড় করিয়ে দিলো।রুদ্রিকের চোখে ঘোর লেগে আছে।অথৈ সেই চোখের ভাষা স্পষ্টই বুঝতে পারছে।অথৈ মাথা নিচু করে নিলো।ওর হৃদস্পন্দন হু হু করে বেড়ে গিয়েছে।অথৈ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,’ এভাবে তাকাবেন না।এভাবে তাকালে আমার যেনো কেমন কেমন লাগে।’

রুদ্রিক টু শব্দও করল না।একটা হাত রাখল অথৈয়ের কোমড়ে।আরেক হাত অথৈয়ের গালে স্পর্শ করল।অথৈয়ের গালগুলো গরম হয়ে আছে।রুদ্রিকের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ লাগতেই।অথৈ কেঁপে উঠে।শিরশির করে উঠে সর্বাঙ্গ।রুদ্রিক মাথা নুইয়ে আলতো করে চুমু খেলো অথৈয়ের ঠোঁটে। পর পর গভীরভাবে ডুবে গেলো ওষ্ঠচুম্বনে।অথৈও হাত বাড়িয়ে খামছে ধরল রুদ্রিকের পিঠ।রুদ্রিকের ভালোবাসাময় স্পর্শে নিজেকে হারিয়ে ফেলল।এদিকে রুদ্রিক মনে মনে ভাবছে,

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৪

‘ আমি আর তোমার থেকে দূরে থাকতে পারব না অথৈ। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।আমার সাধ্যে যে আর কিছু নেই।তোমাকে সম্পূর্ণ রূপে নিজের করে পাওয়ার জন্যে যে আমার বুকের ভীতরটা তীব্র দহনে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।আমি তোমার থেকে একমুহূর্তও দূরে থাকতে পারবো না।তুমি আমার অথৈ। তোমাকে পুরোটাই আমার আমার করে চাই।তীব্রভাবে চাই।’

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৬