মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৬

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৬
সাদিয়া জাহান উম্মি

ওয়ারী ছড়াতে ওরা বেশ এঞ্জয় করল।রিভার রাফটিংও করেছে ওরা।আবার সেখানে নাম করা দুটো ঝর্না আছে রে-নাং এবং চিবোক ডেয়ার সেগুলোও দেখেছে।সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিলো প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য।এখানে গুহাও আছে অনেকগুলো।সেখানের একটাতে গিয়ে সবাই জামা-কাপড় চেঞ্জ করে নিয়েছে।ঠান্ডায় সবার অবস্থাই খারাপ।

নদীর পানি ভীষণ শীতল তো তাই।এখন সবার ফিরার পালা তাই ব্যাগপত্র নিয়ে রওনা হলো।পাহাড় বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে একেকজনের অবস্থা পুরো কাহিল।তাই আজ আর কেউ কোনো জায়গায় ঘুরতে যাবে না।সোজা রিসোর্টে চলে যাবে।আর বিশ্রাম নিবে।এদিকে আরহার তো প্রায় জ্বর চলেই এসেছে।ওর অবস্থা নাজেহাল।তারপরেও মেয়েটা টু শব্দ অব্দি করেনি।চুপচাপ হেটে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়েটা যে কি কষ্ট পাহাড় বেয়ে উপরে উঠেছে সেই জানে।কিন্তু কিছু করার নেই।এমন দূর্গম রাস্তায় কি আর কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারে?সবারই কষ্ট হচ্ছিলো।আরহা হাটটে নিয়ে হঠাৎ করে পরে যেতে নেয়।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আরহা।কিন্তু না পরেনি।কারো শক্ত,নিরেট হাতখানা ওর হাত পেছন থেকে চেপে ধরে রেখেছে।যার ফলে ও পরে যায়নি।এদিকে সাফাত আরহা পরে যেতে নিতে দেখেই ওর হাত দ্রুত ধরে ফেলে।

আরহার হাতটা স্পর্শ করতেই বুঝতে পারে মেয়েটার প্রচন্ড জ্বর এসেছে।গা ভীষণ গরম।সাফাত একটান দিয়ে আরহাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়।আরহা একেবারে সাফাতের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। আরহা নিভু নিভু চোখে সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে।শরীরের তাপমাত্রা এতোটাই বারছে যে ওর চোখজোড়াও মনে হচ্ছে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে।ঠিকভাবে তাকাতে পারছে না ও।

এদিকে সাফাত একধ্যানে তাকিয়ে আছে আরহার দিকে জ্বর আসার কারনে আরহা ফর্সা মুখশ্রীটা রক্তিম আকার ধারন করেছে।আধভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।কপালে পরে আছে কয়েকটা বেবি হেয়ার।মেয়েটার বোধহয় ঠান্ডা লাগছে।তাই কেমন একটু পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে।ঠোঁটজোড়া ফ্যাকাশে হয়ে আছে।যা ঠান্ডা লাগার কারনে কাঁপছে।আরহাকে কেন যেন এই বেশে সাফাতের একটা কথাই মাথায় আসল মেয়েটা অনেক কিউট।সাথে মেয়েটার মনটাও অনেক ভালো।

একমুহূর্তেই কিভাবে ওদের বন্ধুদের সাথে মিশে গিয়েছে।ভীষণ মিশুক।আর মেয়েটা চঞ্চলও বটে।সাফাতের অজান্তেই সাফাতের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।আর তা দেখে আরহা হা করে তাকিয়ে থাকলো।ও বোধহয় স্বপ্ন দেখছে।নাহলে যে লোক ওকে দেখলেই সবসময় মুখটা গম্ভীর,শক্ত করে রাখে।আর আজ সেই লোক কিনা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।এটা আদৌ হবার?তবে যা হচ্ছে, হচ্ছে।আরহা চায় এই স্বপ্ন যেন কোনোদিন না ভাঙ্গুন।

সাফাত এইভাবে হাসতে থাকুক ওর দিকে তাকিয়ে।আরহাও হাসল।আরহা হাসতে দেখে সাফাত থতমত খেয়ে গেল।সে কি করছিল?কি হয়ে গিয়েছিল ওর?আর আরহার দিকে তাকিয়ে ও হাসছিলই বা কেন?আশ্চর্য কারবার।সাফাত দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।মুখটা গম্ভীর করে ফেলল চটজলদি।বলল,’ তুমি এতো সেন্সেটিভ একটা পারসোন।এটা জেনেও কেন এসেছ এখানে?এখন জ্বর বাঁধিয়ে বসে আছ।তোমার মা বাবা এখানে নেই যে দিনরাত তোমাকে সেবা করবে।এখন তুমি কি করবে?’

আরহা মলিন হাসল।তার তো মা নেই।আর বাবা থেকেও না থাকারই মতো।আরহার কণ্ঠে বিষাদের ছায়া নেমে এলো।বলল,’ আমার মা নেই।আর বাবা থেকেও না থাকার মতো।তাই মা বাবার সেবা আমি আগেও কোনোদিন পায়নি।আর এখনও পাবো না।’

সাফাতের বুকটা ধ্বক করে উঠল।অজান্তেই এমন একটা কথা বলে ফেলেছে ও।কিন্তু ওর তো দোষ নেই। ও আর জানতো না যে আরহার মা নেই।আর বাবা কথা যেটা বলল সেটা নাহয় আপাতত থাক।সাফাত জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,’ আই এম সরি।আমি জানতাম নাহ।’
আরহা মলিন হেসে বলে,’ ইটস ওকে।আপনার সরি বলতে হবে না।আপনি তো আর আমার লাইফের ব্যাপারে কিছু জানেন না।তাই এটা স্বাভাবিক।’

সাফাত চিন্তিত কণ্ঠে বলে,’ আর ইউ ওকে আরহা?ইজ দ্যেয়ার এনিথিং রং?’
আরহাকে বেশি একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না।মেয়েটা কেমন টলছে।জ্বরটা কি খুব বেশিই বেড়ে গেলো?সাফাত হাত বাড়িয়ে কপাল ছুঁয়ে দিলো আরহার।আরহা সাথে সাথে কেঁপে উঠল।সর্বাঙ্গে যেন ঝংকার দিয়ে উঠল।ওর উত্তপ্ত শরীরে সাফাতের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ যেন ওর শরীরকে কাঁপিয়ে তুলেছে।আরহা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।এদিকে সাফাতের চেহারায় চিন্তার ছাপ।মেয়েটার শরীর ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে।আরহার কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো সাফাত।বলল,’ ভীষণ জ্বর তোমার।জলদি কটেজে ফিরতে হবে।আরহা শুনছ তুমি?’

আরহা পিটপিট নয়নে তাকায়।সাফাত আরহার হাত চেপে ধরল।সহসা কণ্ঠে বলে উঠে,’ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে চলো।বলা তো যায়না কখন পরে যাও।আর তোমার বন্ধুরাই বা কেমন?তোমার এই অবস্থা কারও নজরে আসল নাহ?সবগুলো তোমাকে ফেলে আগে আগে চলে গিয়েছে।’
আরহা সাফাত আর ওর হাতের দিকে তাকিয়েছিলো।যা এখন একে অপরের সাথে পেঁচিয়ে আছে।সাফাতের কথা শুনে ওর দিকে তাকালো। তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,’ আমার আর বন্ধু?হাসালেন আমাকে।ওরা তো আমার সাথে বন্ধুত্ব করেনি।করেছে আমার টাকা পয়সার সাথে।’

সাফাত বারে বারে আরহার প্রতিটি কথায় চমকাচ্ছে ভীষণভাবে।সাফাত বুঝল জ্বরের ঘোরে এই মেয়ে মনের সব কথা উগলে দিচ্ছে।সাফাত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।তবে সাফাত আর বেশি আরহাকে ঘাটলো না।আরহার কথা আপাততো পরেও শোনা যাবে।এখন মেয়েটাকে নিয়ে রিসোর্টে ফিরতে হবে দ্রুত।নাহলে অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে। আর সাফাত তাই করল দ্রুত আরহাকে নিয়ে সাবধানে গাড়ির কাছে আসল।

আরহার কথা শুনে যেটুকু মনে করল ওর ফ্রেন্ডরা ওর টাকা পয়সা দেখে ওর সাথে বন্ধুত্ব করেছে।আ হলোও তাই।ওরা আরহাকে না নিয়েই গাড়ি নিয়ে রিসোর্টে চলে গিয়েছে।এটা জানতে পেরেই সাফাতের রাগে যেন সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।পারলে এক্ষুনি গিয়ে সবগুলোকে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে দিতে।রাগটা মনের মাঝেই পুষে রাখল সাফাত।আরহাকে নিজেদের সাথে করে নিয়েই গাড়িতে উঠে বসল।অথৈ দ্রুত আরহাকে দুহাতের মাঝে আগলে নেয়। মেয়েটা প্রায় আধমরা।জ্বরের কারনে কাঁপছে।অথৈ আতঁকে উঠে বলে,’ ওর তো ভীষণ জ্বর সাফাত ভাইয়া।’

সাফাত মাথা দুলিয়ে বলে,’ হ্যা ওয়ারী ছড়া পানিটা দেখেছিলে কি ঠান্ডা? সেখানে গিয়ে সবার থেকে ওই বেশি লাফালাফি করেছে পানির মধ্যে।তো জ্বর আসবে না আবার?’
অথৈ হঠাৎ নাক মুখ কুচকে বলে উঠে,’ ওর ফ্রেন্ডগুলাও কেমন?ওকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে গেলো?আমি তো ভেবেছিলাম আরহাও বুঝি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে চলে গিয়েছে।পরে দেখি না আপনি ওকে নিয়ে আসছেন।’
সাফাতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসল।হাত দুটো পুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে বলে,’ ওইগুলোকে বন্ধু বলে বন্ধু শব্দের অপমান করো না অথৈ। ‘

সবাই সাফাতের আচমকা রাগ দেখে অবাক হলো।তবে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করল না।
রুদ্রিক সাফাতের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার আরহার দিকে তাকালো।পর পর চোখ বন্ধ করে নিলো।তার মন বলছে।এই দুটোর মাঝে কিছু হতে চলেছে।ও যেটা ভাবছে সেটাই যেন হয়।সাফাতকে কেউ যেন খুব করে ভালোবাসুক।এতোটাই ভালোবাসুক ওকে যেন সাফাতের সেই ভালোবাসার তীব্রতায় নিজের ভালোবাসা হারানোর ব্যথা ভুলে যায়। নতুন করে আবার সবকিছু যেন শুরু করে।

রিসোর্টে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসল।আরহার শরীরের দূর্বলতার কারনে ও অথৈয়ের কোলেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সাফাত আরহাকে কোলে তুলে নেয়।সাথে যায় রুদ্রিক।যাওয়ার আগে অথৈকে রুমে গিয়ে গরম পানি দিয়ে গোসলও নিতে বলে গিয়েছে।এদিকে আরহাদের বুকিং করা কটেজটায় এসে দাঁড়ালও সাফাত।রুদ্রিক বার দুয়েক দরজায় টোকা দিলো।

কিন্তু না দরজা খুলছে না।পর পর চোখ যায় দরজায় তালা ঝোলানো।এটা দেখে সাফাত আর রুদ্রিক দুজনেই বেশ অবাক হয়।এভাবে তালা ঝুলছে কেন?আরহার ফ্রেন্ডরা তো অনেক আগেই চলে এসেছিলো।ওদের তো এখানেই থাকার কথা।আর বাহিরে যাবে সেটাও হবে না সম্ভবত।কারন এতো দূর থেকে জার্নি করে এসে।সবাই নিশ্চয়ই বিশ্রাম বাদ দিয়ে বাহিরে ঘুরঘুর করবে নাহ?রুদ্রিক এইবার সাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ তুই আরহাকে নিয়ে মারিয়া আর সিয়ার কটেজে যাহ।আমি ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আসছি।বিষয়টা বুঝতে হবে তো।এখানে কি হয়েছে।’

সাফাত সম্মতি দিতেই রুদ্রিক চলে গেলো।সাফাত আরহাকে নিয়ে মারিয়া আর সিয়ার কটেজে চলে আসল।বাহির থেকে বার কয়েক সিয়া আর মারিয়াকে ডাকতেই সিয়া এসে দরজা খুলে দিলো।আরহাকে কোলে নিয়ে ওদের কটেজের সামনে এইভাবে সাফাতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সিয়া।ভ্রু-কুচকে বলে,’ তুই আরহাকে কোলে নিয়ে আমাদের রুমের সামনে এমনে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
সাফাত বিরক্ত হলো সিয়ার কথায়।বলে,’ তুই আপাততো সামনে থেকে সর।ওকে অনেকক্ষণ যাবত কোলে নিয়ে আছি।আর সামলাতে পারছি না।’

সিয়া এই কথা শুনে দ্রুত সরে দাঁড়ালো।সাফাত আরহাকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে। গায়ে কম্বল টেনে দিলো।এর মধ্যে মারিয়াও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসেছে।সাফাতকে ওদের রুমে দেখে প্রশ্ন করে,’ সাফাত?কোনো সমস্যা হয়েছে?তুই এখানে?’
সাফাত কিছু না বলে শুধু চোখের ইশারায় বিছানায় শুয়ে থাকা আরহাকে দেখালো।তা দেখেই মারিয়ার ভ্রু-কুচকে এলো।ফের বলে,’ ওকে এখানে এনেছিস কেন?’

সাফাতের আর কিছু বলতে হলো না।এর মধ্যে রুদ্রিক চলে এসেছে।রুদ্রিক বলে উঠে,’ আরহার ফ্রেন্ডরা ওকে রেখেই দেশে চলে গিয়েছে।’
চমকে উঠল ওরা সবাই।সাথে সাফাতও।সাফাত এটা আশা করেনি।যে ওরা এইভাবে আরহাকে একা ফেলে আচমকা চলে যাবে।তাও এমন অসুস্থ মেয়েটাকে একা ফেলে? সাফাত চেচিয়ে উঠে,’ হোয়াট?মাথা ঠিক আছে তোর?কিসব বলছিস?এটা কিভাবে হবে?দেখ আশেপাশেই হয়তো আছে।’

রুদ্রিক পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো।শান্ত কণ্ঠে বলল,’ আমি ঠিকই শুনেছি।মাত্র ম্যানেজারের সাথে কথা বললাম।আর ওর বন্ধুরা ম্যানেজারের কাছে এই চিঠিটাও দিয়ে গিয়েছে।’
রুদ্রিক পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে সামনে এনে ধরল।তারপর আবার বলে,’ অন্যের ব্যক্তিগত জিনিস ধরা বা পড়া ঠিক না।তবে এখন যেহেতু পরিস্থিতি ভিন্ন তাই এই চিঠিটা না পড়েও পারি নি।’
সাফাতের অধৈর্য কণ্ঠস্বর,’ কি লিখা আছে এখানে?’

‘ এখানে লিখা ওদের সবার নাকি বিশেষ জরুরি তলব পরে গিয়েছে।তাই ওদের দ্রুত দেশে ফিরতে হয়েছে।এইজন্যে আরহাকে একা ফেলে চলে গিয়েছে।আর আরহা যেন কষ্ট করে দেশে এসে পরে। এটাই লিখা।’
সিয়া নাক মুখ কুচকে বলে উঠে,’ ছিহ! এইগুলা বন্ধু নাকি অন্যকিছু। এইভাবে মেয়েটাকে একা ফেলে চলে গেলো?একটাবার মেয়েটার সাথে দেখা করেও গেলো না?’

সাফাত আরহার মুখের দিকে তাকালো।আরহার ফ্যাকাসে দূর্বল মুখশ্রীটা দেখে বড্ড মায়া লাগলো।মেয়েটার চেহারা অনেক মায়া মায়া।কেউ কিভাবে ওর সাথে এমন করতে পারে?ভাবলেই সাফাতের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে।সাফাত চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস ফেলল।সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,’ আপাততো এই টপিক বাদ দে।আরহা সুস্থ হোক।তারপর নাহয় ওর থেকেই সবকিছু ভালোভাবে জেনে নিবো।’

একটু থেমে আবার বলে,’ মারিয়া,সিয়া আরহা এখন একা।ওর সাথে কেউ নেই।এখানে আমরাই এখন ধরতে গেলে ওর পরিচিত।আমাদের সাথে মেয়ে আছে পাঁচজন মেয়ে আছে।তাদের মধ্যে তোরা দুজনেই সবচেয়ে বড়।আর বুঝদার বেশি।তাই তোদের কাছেই ওকে রেখে গেলাম।মেয়েটাকে দেখে রাখিস।ওর শরীরে অনেক জ্বর।আমি এখনই যাচ্ছি মেডিসিন আনতে।তোরা একটু ওকে পানিপট্টি কর।’
মারিয়া আলতো হেসে বলে,’ চিন্তা করিস না।আমরা দুজন ওকে দেখে রাখব।ও তো এখন আমাদের ছোটো বোনের মতোই।মেয়েটা অনেক মিশুক।’

সাফাত সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো মেডিসিন আনতে।রুদ্রিক শান্ত স্বরে বলে,’ তিনজন থাকতে তোদের সমস্যা হবে না তো?’
সিয়া বলে,’ আরে কিসের সমস্যা হবে?এমনিতেই এখানে প্রচুর ঠান্ডা পরেছে।তিনজন এক বিছানায় মিলেমিশে থাকব।এতে আরও মজা হবে।তুই চিন্তা করিস না।’
সিয়া আর মারিয়ার ভড়সা পেয়ে রুদ্রিক রুম থেকে বেরিয়ে আসল।বাহিরে সাফাত দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রিক সাফাতের কাছে গিয়ে বলে,’ চল মেডিসিন নিয়ে আসি।’

সাফাত বলে উঠল,’ তোর যাওয়া লাগবে না।তুই রুমে যা। ফ্রেস হয়ে নেহ।আমি এই যাবো আর আসব।’
‘ কিন্তু…’
‘ কোনো কিন্তু না। আমি পারব বললাম তো।’
‘ আচ্ছা।কোনো সমস্যা হলে ফোন করিস। ‘
‘ আচ্ছা।’
রুদ্রিক নিজের রুমের দিকে হাটা ধরল।সাফাত চাপা শ্বাস ফেলে চলল মেডিসিন আনার জন্যে।

অথৈ ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওর ভেজা চুলগুলো মুছছিলো।এমন সময় রুমে আসে রুদ্রিক।রুদ্রিক দেখেই চুল মুছতে মুছতে অথৈ বলে,’ এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?’
রুদ্রিক দরজা আটকে অথৈয়ের কাছে এসে দাঁড়ালো।মৃদ্যু হেসে বলে,’ ক্যান?মিস করছিলে বুঝি আমায়?নাকি তখনকার চুমুটা মিস করছিলে?’
অথৈ লজ্জায় হতভম্ব হয়ে গেলো।এই লোক কিসের মধ্যে কি বলছে?ও কতো একটা ভালো কথা বলল।আর এই লোক কিনা সেটা ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ত্যানাত্যানা করে ফেলে।অথৈ মুখ ফুলিয়ে বলে,’ উফ, আপনি চরম অসভ্য একটা লোক।সরুন তো আপনি।সরুন!’

রুদ্রিক শব্দ করে হেসে দিলো।রুদ্রিকের সেই হাসি ঝংকারে পর পর অথৈয়ের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠল।ও মিষ্টি করে হেসে মাথা আচঁড়াতে লাগল।রুদ্রিক সময় নিয়ে হাসি থামায়। রুদ্রিককে থামতে দেখে অথৈ বলে,’ প্লিজ বলুন না।কোথায় ছিলেন?দেরি হলো যে?আরহার শরীর কি খুব বেশি খারাপ?’
রুদ্রিক এইবার সিরিয়াস হয়ে গেলো। মুখটাকে মূহুর্তেই গম্ভীর করে নিলো।তারপর আস্তে আস্তে অথৈ সবটা খুলে বলল।সব শুনে অথৈ ভেজা কণ্ঠে বলে,’ এতো খারাপ আরহার ফ্রেন্ডগুলো।এইভাবে অসুস্থ মেয়েটাকে একা ফেলে চলে গেলো কিভাবে?একবার মেয়েটার সাথে দেখা করেও গেলো না।মেয়েটা হুঁশে আসলে না জানি কতোটা কষ্ট পায়।’

রুদ্রিক অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’ মন খারাপ করো না।আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।আরহার জন্যে এটা ভালো হয়েছে না বলো?যে মেয়েটা ওর ওই মিথ্যে বন্ধুগুলোর আসল মুখোশটা চিন্তে পারবে।বুঝতে পারবে যে বিপদের সময় যারা একজন মানুষকে এইভাবে ফেলে চলে যায়।তারা কোনোদিন কারো বন্ধু হতে পারে না।’

অথৈ চোখ মুছে নিলো।তারপর দুহাতে গিয়ে রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরে।রুদ্রিকও আগলে নেয় প্রিয়তমাকে।অথৈ রুদ্রিকের বুকে মুখ গুজে দিয়ে বলে,’ এদিক দিয়ে আপনি আমি দুজনেই খুব লাকি জানেন।আমরা জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান কিছু পেয়ে থাকলে তা আমাদের বন্ধুদের পেয়েছি।যারা আমাদের জন্যে বিপদের সময় সর্বদা ঝাপিয়ে পরার জন্যে প্রস্তুত থাকে।’
রুদ্রিক সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বলে,’ হ্যা এটা একদম ঠিক বলেছ।এদিক দিয়ে আমরা পৃথিবীতে বোধহয় সবচেয়ে সুখী কাতারের মানুষদের মধ্যে পরি।উপরওয়ালার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তার জন্যে।’

অথৈ এইবার সরে আসল।তারপর রুদ্রিকের হাতে একটা তোয়ালে ধরিয়ে দিয়ে বলে,’ অনেকক্ষণ হয়েছে। বাকি কথা পরে হবে।এখন ফ্রেস হয়ে আসুন।’
রুদ্রিক ঠোঁট কামড়ে হাসল।মাথা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে,’ ফ্রেস হয়ে আসলে তো কোনো কথা হবে না ম্যাডাম।ভালোবাসাবাসি হবে।’
অথৈ লজ্জামিশ্রিত হাসি উপহার দিলো রুদ্রিককে। তারপর রুদ্রিককে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমের দিকে পাঠালো।ফিরে আসতে নিতেই রুদ্রিকের কণ্ঠ, ‘ আমার জামা কাপড় বের করে রেখো।’

অথৈ পাজোড়া থামিয়ে ফেলে।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,’ কি পরবেন আপনি?’
প্রতিত্তুরে রুদ্রিক বলে,’ স্বামীটা যেহেতু তোমার।তাই সে কি পরবে না পরবে সেটা নাহয় তুমিই ডিসাইড করে দেও।’
এই বলে রুদ্রিক ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর অথৈয়ের ঝলমলে মুখে মিষ্টি হাসি।সে দ্রুত গিয়ে রুদ্রিকের জন্যে ধূসর রঙের একটা টি-শার্ট। আর কালো রঙের ট্রাউজার বের করে বিছানায় রেখে দিলো।তার কেমন যেন লাগছে।মনে হচ্ছে সে সত্যি সত্যি রুদ্রিকের সাথে সংসার করছে।

এইযে রুদ্রিকের ছোটো খাটো সবকিছু এখন সে নিজ হাতে করছে।রুদ্রিকও ওকে এটা সেটা ছোটো খাটো হুকুম দেয়। এসব সে বেশ এঞ্জয় করছে।ওর বেশ ভালো লাগছে ব্যাপারগুলো।আচ্ছা,সে যখন সত্যি রুদ্রিকের বউ হয়ে রুদ্রিকের বাড়িতে যাবে।ঠিক এখন যেভাবে রুদ্রিকের সবকিছু ও নিজ হাতে করছে।আগলে রাখছে।ও বাড়িতেও এমনভাবেই সব করবে।ইনফেক্ট আরও ভালোভাবে করবে।তখন কেমন লাগবে?ওর তো অনেক ভালো লাগবে।এইযে এসব কল্পনা করতে গিয়েও কেমন খুশিতে ওর বুক কাঁপছে।এইভাবে কি রুদ্রিকও খুশি হবে?আচ্ছা ও যেভাবে রুদ্রিককে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখে।রুদ্রিকও কি এভাবে ওর সাথে সংসার করার কল্পনা করে?
ও কি একবার লোকটার থেকে জিজ্ঞেস করবে একবার?কিন্তু কিভাবে করবে?এইটা জিজ্ঞেস করার আগেই ও লজ্জায় মরে যাবে।

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৫

সিয়া কটেজ থেকে বের হয়ে এসেছে।এখান আসার পর সে কটেজের পাশেই একটা তুলসীগাছ দেখেছিলো। সেখান থেকে পাতা আনতে যাচ্ছে।আরহার বেশ কাশি হচ্ছে।তুলসীপাতার রস খাওয়ালে যদি একটু নিস্তার পায় মেয়েটা।কয়েকপা এগুতেই হঠাৎ সিয়া থমকে গেলো।সে কি ভুল দেখছে?চোখ কচলে নিয়ে আবারও ভালোভাবে তাকায় সিয়া।নাহ,ও ভুল দেখছে না।সত্যিই এটা সেদিনকারই লোক।সিয়া বেজায় খুশি হলো।এই লোকটাকে সকালে কতো খুঁজেছিলো। কিন্তু সিয়া পায়নি।ওকে অতো বড়ো একটা বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে লোকটা।আর ও একটা ধন্যবাদও দেয়নি।সিয়া দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো লোকটার কাছে।কাছে গিয়েই হাসি মুখে বলে উঠল,’ এক্সকিউজ মি।এইযে মি. শুনছেন?’

মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব ৪৭