মেইড ফর ইচ আদার গল্পের লিংক || অনামিকা রহমান

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ১
অনামিকা রহমান

গ্রামের নামকরা আহমেদ ভিলা সেজে উঠেছে নতুন সাজে। আহমেদ বংশের বুড়া-বুড়ি গত যাওয়ার পর এই আহমেদ ভিলা ছন্নছাড়া হয়ে পরে। গ্রাম ছেড়ে সবাই ঢাকায় পারি জমায়। কোনো বিশেষ কারন ছাড়া এখন আর এই আহমেদ ভিলা প্রান ফিরে পায় না। দীর্ঘ পনেরো বছর পর বিয়ের আমাজে মেতে উঠেছে আহমেদ বংশের সদস্যরা। বংশের বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

আহমেদ বংশের বড় ছেলে সফিউল আহমেদের বড় মেয়ে তন্নি, মেজো মেয়ে তৃনা, ছোট মেয়ে তুলি। তার এই তিন মেয়ে তার জীবন। বড় মেয়েটা খুব শান্ত হলেও মেজো মেয়ে আর ছোট মেয়ের সম্পর্ক টম-জেরির মতো, তাদের খুনশুটিতে মেতে থাকে সফিউল আহমেদ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জামাকাপড় প্যাকিং করছে তন্নি, শ্যামসুন্দর চেহারার গঠন সরল মেয়েটার,হাওয়ায় বারবার চেহারায় চুল আচড়ে দিচ্ছে, হাত দিয়ে চুল গুলো কানের কাছে গুজতে ব্যস্ত তন্নি।ধপধপ পা ফেলে চেচিয়ে উঠলেন সাহেলা খানম, তৃনা কোথায় তন্নি, এই ফাজিল মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না, গ্রামে যেতে হবে, পই পই করে বলে দিয়েছি সব গুছিয়ে রাখতে,

এই মেয়ের কোনো হেলদোলই নেই, বোনের বিয়ে আরো আগ বাড়িয়ে সব করবে তা না, এখনও ছোটদের মতো আচরণ করে, তুলি কই, ওই পাজিটাকেও একটা শিক্ষা দিতে হবে। বারান্দা থেকে তুলি বেড়িয়ে আসে, সাহেলা খানমের কথায় জবাব দেয়, আমাকে নয় বরং তৃনাকে দেও, ওকে আমি বারণ করছিলাম, আইসক্রিম খেতে যাস না ২ঘন্টা পরেই আমাদের বের হতে হবে। আমার কথা শোনে নি। তন্নি ঠান্ডা গলায় বলে উঠল আহা মা থাক না, আমি তো সব গুছাচ্ছি। ও আমায় দেখিয়ে দিয়ে গেছে কি কি নিতে হবে। সাহেলা খানম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন,অরঃপর রুম ত্যাগ করলেন।

স্কুটার নিয়ে আইসক্রিমের দোকানের সামনে গিয়ে থামল তৃনা। হেলমেট খুলে ঝুলিয়ে দিল স্কুটারে। মাথায় বেনী করা চুল গুলো হাটু ছুই ছুই। দুধ সাদা বর্নের মেয়েটা তরতর করে ঢুকে পড়লো শপে। লম্বা তেমন নয় ৫ফিট, যাকে বলে পুতুল সাইজ। যেকেউ দেখলে এই মেয়ের প্রেমে পড়তে বাধ্য, তবে তৃনা মেয়েটি এতোই দুষ্টু প্রকৃতির, কোনো ছেলে যে তাকে সামলাতে পারবে তার কোনো গ্রান্টি নেই। তৃনা বলে উঠে, এই মামা চটপট করে আইসক্রিম দেও তো।
আইসক্রিম খেয়ে আবার যেতে হবে।

দোকানী এক গাল হেসে বলল, তুমি তো আমার রেগুলার কাস্টমার, এতো তাড়া কিসের।আর বইলো না মামা, বড় টার বিয়ে হবে, গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হবে, যেতে হবে তাড়াতাড়ি করো,এখানে বসেই শেষ করে বাসায় যাবো।
আইসক্রিম খেয়ে বাসার উদ্দেশ্যে ছুটলো তৃনা। পা টিপে টিপে বাসায় ডুকলো তৃনা, এর মধ্যেই সাহেলা খানম সামনে দাড়িয়ে পড়লো,বলতে লাগলো, তোকে কতবার বলব এতো আইসক্রিম খাবি না, কথা কেনো শুনিস না, কয়টা বাজে দেখ, তৃনা থতমত খেয়ে বলল, আম্মু ৫মিনিটে রেডি হচ্ছি, এই বলেই তৃনা ধপাস করে দরজার খিল আটকে দিল। সাহেলা খানম বলল, এই ফাজিল মেয়েটা জীবনে ভালো হবে না।

সফিউল আহমদের চাচাত ভাই তনয় আহমেদের বড় ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তন্নির । তনয় আহমেদের এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলের নাম তন্ময়, মেজো মেয়ে রোদেলা, ছোট মেয়ে আন্নি। আন্নি আর রোদেলা দুই বছরের ছোট বড়।আন্নি আর তৃনা জাহাঙ্গীর নগর ভার্সিটিতে পড়ে। বয়স,আচরণ, স্বভাব মিলে যাওয়ায় বোনের থেকেও বন্ধুত্ব বেশি এদের মাঝে।

বংশের বড় মেয়ের বিয়েতে একমাত্র ফুফু থাকবে না এতো হতে পারে না, তাই সফিউলের বোন রেহানাও স্বামী, সন্তান নিয়ে উপস্থিত হবে কথা দিয়েছে ভাইকে। রেহানার এক ছেলে সন্তান, নাম আবির। ঢাকা ভার্সিটিতে পদার্থ বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ৬ মাসের জন্য জার্মানিতে গিয়েছিল। প্রফেসর নাফিয়ুরের প্রজেক্টে অংশগ্রহন করতে ,যা প্রায় শেষের দিকে । তার বিশ্বাস আবির গৌরবের সাথে বিজ্ঞানী হবে।তাই আবির জার্মানি থেকে ঢাকায় এসে তারপর আসবে বিয়েতে।

প্রানহীন আহমেদ ভিলা পরিচর্যা করে মিজান নামের এক মধ্যবয়স্ক লোক। প্রান দিয়ে রক্ষা করে এই আহমেদ ভিলা, বাড়ির সকল সদস্য আসার আগেই পরিষ্কার করার জন্য মানুষজন নিয়ে লেগে পড়েছে। এই বাড়ির নাতি নাতনিরা আসবে বহু বছর পর। বুড়ো বুড়ি গত হওয়ার পর নাতি-নাতনিদের পাড়া না পড়লেও সফিউল আহমদ আর তনয় আহমেদ আসে, বিভিন্ন কাজের সুত্রে , তাই ওতো ঘটা করে পরিষ্কার করা হয় না।

বংশের বড় মেয়ের বিয়ে হবে বলে এতো আয়োজন। তাই মিজান কাকা হাক ডাক ছেড়ে সবাইকে কাজ করাচ্ছেন। মিজান ইতোমধ্যে খবর পেয়েছে সন্ধ্যা নাগাত চলে আসবে সবাই। তবে রেহানার পরিবার আসতে আসতে কাল সকাল হয়ে যাবে। আগে আবির ফিরবে তারপর রেহানার পরিবার চলে আসবে গ্রামে, তাই কথা হয়েছে ভাইদের সাথে।

সফিউল আহমেদ এর স্ত্রী সাহেলা খানম, তৃনা- তুলির ঝগড়ার মিমাংসা করছে, ঝগড়ার মুল বিষয় হচ্ছে গাড়িতে বসা নিয়ে। তুলি বলছে আমি আব্বুর সাথে বসব, তৃনা বলছে সে আব্বুর সাথে বসবে। সাহেলা খানম দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, একটা কথা না উচ্চারণ করে, তন্নির সাথে গিয়ে পিছনে বস, তোদের বাবার সাথে আমি বসব।এই কথায় তুলি তৃনাকে ভেংচি কেটে বলল, এবার বস গিয়ে। তৃনা মুখ ফুলিয়ে গিয়ে তন্নির পাশে বসে পড়ে। সফিউল একটা হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করল। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।

আহমেদ ভিলার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তন্ময়দের গাড়ি। ড্রাইভিং সিট থেকে বের হলো এক বলিষ্ঠ তরুন। পেশায় প্রভাষক। স্যামসুন্দর চেহারার গঠন তন্ময়ের,সুঠাম দেহের অধিকারী, দেখলেই বোঝা যায় নিয়ম করে জিমে যাওয়া হয়। চুল গুলো সিল্কি, বাতাসে দোল খাচ্ছে। তন্ময়, রোদেলা,আন্নির মা মেহরিমা, আন্নি আর রোদেলাকে বলছে মিজার ভাইয়ের কাছে যেয়ে বল এসেছি মাল গুলো যার যার রুমে দিয়ে আসতে, রোদেলা আর আন্নি হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো, তনয় আর মেহেরিমা যাওয়ার আগে তন্ময়কে বলল গাড়ি পার্কিং করে মিজান কাকাকে যেনো দেখিয়ে আসে।

বিকাল নাগাদ সফিউল আহামেদের গাড়ি এসে আহমেদ ভিলায় পৌছায়। যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বিশাল বাড়ি তাই মেয়ে ছেলেদের নিজস্ব করেই একেক রুমে একেকজনকে দেওয়া হয়েছে।
এখনও পরিবার পূর্ন হয় নি। কাল রেহানার পরিবার আসলেই আহমেদ ভিলা পরিপূর্ণ হবে।

রাত ৯টায় ল্যান্ড করলো আবিরের ফ্লাইট। রেহানার স্বামী আতিক খান অপেক্ষা করছে তাদের ছেলের জন্য । দেখতে শুভ্র বর্নের আবির, চুল্ গুলো সিল্কি, কপালে এসে বার বার পড়ছে বাতাসের দোলায়, আবির শরীরের গঠন সুঠাম আর বলিষ্ঠ। গাড়িতে উঠে আবির। একপ্রকার ভাবনার জগতে ডুবে গেলো সে।

আবার সেই নানু বাড়ি যাবে ১৫ বছর পর আবির, কাজিনদের সাথে তার কত স্মৃতি আছে আদৌ কি সবার সেই সব স্মৃতি মনে আছে,পড়ালেখার প্রচুর চাপে কাকতালীয় ভাবে কারো সাথে দেখা হয় নি আবিরের।সেই ৪বছরের তৃনা নামের সেই পুতুল মেয়েটি দেখতে কেমন হয়েছে সেই চিন্তা করেই আবির একটা প্রশস্ত হাসি দিল।, কত স্মৃতি আছে ওই আহমেদ ভিলায়।

খান মঞ্জিলে এসে গাড়ি থামল, যাবেদ নামের ভদ্রলোক গাড়ি থেকে মালামাল বাসায় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, রাত টা কাটিয়ে গ্রামে যেতে হবে, বিয়ে শেষ হওয়ার পর এসে সব গোছাবে রেহানা খানের নির্দেষ। তাই রাতের খাবার খেয়ে খান মঞ্জিল ঘুম পুরীতে রুপ নিলো।

আহমেদ ভিলার সদস্যরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে বড়রা ঘুমিয়ে গেলেও, ছোটরা আড্ডায় মেতে উঠেছে, রাত ৩টা অব্দি আড্ডার ইতি কাটিয়ে সবাই যে যার রুমে ঘুমাতে গেলো।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ২