মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৩

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৩
আবরার আহমেদ শুভ্র

–এসব কি শুনছি তানজিম? মৃন্ময় ভাইয়া নাকি বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছিলো? তাও আবার তোর সাথে ওনার বিয়ের?
ক্লাসরুমে আনমনে বসে ছিল তানজিম। হঠাৎ সারাহ-র এমন প্রশ্নে চমকে গেলো সে। সাথে মৃন্ময়ের নামটা শুনে বিরক্তে চোখমুখ কুঁচকে গেলো তার। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে উঠলো,

–এই একজন মানুষের জন্যে আমার লাইফটাই হেল হয়ে যাচ্ছে করে ভাই। ইউ নো, এই মানুষের মতোন এমন জঘন্যতম মানুষ আমার জীবনে দুটো দেখছি বলে মনে হয় না।
–কিন্তু হঠাৎ বলা নেয় কওয়া নেই কেমনে কি এসব?
–আমিও জানি না, সেদিন সকালে রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নামতেই দেখতে পায় তাকে। বাবার সাথে কথা বলতে। তার সাথে আমার চোখাচোখি হলো। কিন্তু আমি কোনো না বলে মায়ের কাছে এলাম সে বিষয়ে জানতে। ব্যস তাতেই কেল্লাফতে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–আমার না একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না। সে নাকি ভার্সিটির লেকচারার! তাও ডিপার্টমেন্ট হেড! ভাবা যায়? আর তারই নাকি নূন্যতম কমনসেন্স নেই?
–থাকলে কি এমন নিচুস্তরের মনমানসিকতার পরিচয় দিতে পারতেন তিনি?
সারাহ এবার তানজিমের দিকে তাকালো,
–আচ্ছা সবই তো শুনলাম কিন্তু তাকে এভাবে রিজেক্ট কেন করলো ছোটমামা?

–সেটাও কি শুনতে চাস? ওকে শুনলে কিন্তু হাসি থামাতে পারবি বলে দিলাম। আর সেদিন বেচারার মুখখানা দেখার মতোন ছিলো৷ পুরাই রসগোল্লা! আর বাবা এমন ভাবে রিজেক্ট করলো যে জাস্ট শুনেই আমারও হাসি পেলো কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেরে আটকায় রাখছিলাম বইন।
তানজিম সেদিনের ঘটনা সবটাই এক্সপ্লেইন করে বলল সারাহকে। তার কাছ থেকে সব শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম হলো সারাহ-র । অনেকটা কষ্টে সামলালো সে নিজেকে। তাদের কথার মাঝেই ক্লাসে গম্ভীরমুখে প্রবেশ করলো মৃন্ময়।

ক্লাসের সকলেই মনোযোগ দিলো তাদের পঠিত বিষয়ে। কিন্তু তানজিম আর সারাহ দুজনে এখনও সেই বিষয় নিয়ে হেসে চলছে। মৃন্ময়ের দৃষ্টি স্থির হলো তাদের দিকে। অন্য যায়হোক না কেন, ক্লাসে চলাকালে একে অন্যের ডিস্টার্ব করা সে মোটেও পছন্দ করে না। স্ব শব্দে
হুংকার দিয়ে উঠলো সে,
–হেই ইউ, স্ট্যান্ড আপ!
মৃন্ময়ের গর্জনে কেঁপে উঠল সকলে। সকলের দৃষ্টি এখন মৃন্ময়ের দিকে। তানজিম সারাহ-র ও একই অবস্থা। মৃন্ময় আবারও সারাহ আর তানজিমের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

–আ’ম টেলিং টু ইউরস্! স্ট্যান্ড আপ!
মৃন্ময়ের এমন গম্ভীর কণ্ঠে কেঁপে উঠল দুজনেই। একজন অন্যজনের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। তাদের এমন কান্ডে প্রচন্ড রাগ হলো মৃন্ময়ের। সে বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,
–এই মেয়ে তোমাদের কি আমার কথা কানে যায় না? একটা কথা কতোবার বলতে হয়?
–আ্ আসলে স্ স্যার…

–আসলে আর নকলে কি? আমি তোমাদের পড়া নিয়ে কথা বলছি আর তোমরা হেসে চলছো! কি এমন বিষয় ছিলো সেটা যে এমন করে হাসতে হয়? আমায় বলো আমিও শুনি তোমাদের কথা! আমারও হাসি পায় কিনা দেখি।
সারাহ-র এবার তানজিমের দিকে তাকালো একবার, তানজিম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–এই ব্যাটা দেখি নিজের কথা নিজেই শুনতে চাই। এখন যদি তারে সেই কথা বলি তাহলে তো ব্যাটা এখানেই পটল তুলবে!
তাদের মৌনতা দেখে রাগ হলো মৃন্ময়ের। সে প্রচন্ড রেগে বলে উঠলো,

–ষ্টুপিড গার্লস! এরপরে যদি আর একবার তোমাদের অকারণে হাসতে দেখি তো সোজা ক্লাসের বাইরে পাঠিয়ে দিবো। বসো!
বলে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে আবারও নিজের জায়গাতে চলে গেলো মৃন্ময়। অতঃপর আবারও পড়ানো শুরু করে সে।
ক্লাসের শেষে রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে তানজিমের দিকে একপলক তাকালো মৃন্ময়। আবারও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ক্লাস থেকে। নিজের কেবিনে যেতে যেতে মনে মনে ভাবছে,
–তোমায় দেখার তৃষ্ণা আমার কোনো কালেই ফুরাবে না প্রিয়।.. বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো মৃন্ময়।

–স্যার আসবো?
চেম্বারে বসে বসে কার্ডিয়াক বিষয়ক কোনো একটি আর্টিকেল পড়ছিলো ফুয়াদ। হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠে আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে বলে উঠলো,
–ইয়েস কাম ইন।

বলে আবারও সেই আর্টিকেলে মনোযোগ দিলো সে। সে খানিকটা মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইল ফুয়াদের দিকে। এই মানুষটাকে সে অনেক বেশিই পছন্দ করে তার ব্যক্তিত্বের জন্যেই। তার দিকে তাকিয়ে আনমনে তাকিয়ে রইল সে। হঠাৎ তার ধ্যান ভাঙলো ফুয়াদের ডাকে। খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো সে,

–মিস নিপুণ, আমার দিকে এমন ড্যাবড্যাব করে না তাকিয়ে কি বলতে এসেছেন সেটা বলে আমাকে উদ্ধার করুন।
ফুয়াদের কথায় লজ্জা পেলো নিপুণ মেয়েটি। ফুয়াদ যে তাকে এমন করে লজ্জা দিবে সেটা সে ভাবতে পারে নি। সে খানিকটা জড়তা নিয়ে বলে উঠলো,

–স্যার আসলে আমি আরমান সাহেবের মায়ের অবস্থা কথা বলতে এসেছিলাম। কিছুক্ষণ আগেই ওনার ফলোয়াপ করা হয়েছে। ওনার ইসিজির রিপোর্টও অনেকটা ভালোই। কিন্তু সমস্যা হলো আরমান সাহেবের ওয়াইফ মিসেস মীরাকে নিয়ে। ওনি বারংবার বলছেন যে ওনার শাশুড়ীর নাকি পিঠে ব্যথা শুরু হয়েছে, সাথে নাকি ওনার পায়ের গোড়ালি ফুলে যাচ্ছে । কিন্তু তার এই কথার কোনো প্রতিফলন ওনার শাশুড়ীর শরীরে দেখতে পেলাম না। ওনি তো বেশ ভালো করেই হাঁটাচলা করছেন। এই যে দেখুন স্যার রিপোর্টটা।

বলে রিপোর্টটি ফুয়াদের দিকে এগিয়ে সে। অতঃপর কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সেটি। তারপরে ফুয়াদ কিছুক্ষণ ভেবে নিপুণ মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল,
–ইমিডিয়েট আরমান সাহেবকে বলুন আমার সাথে মিট করতে এবং তা আজই। কুইক!
–স্যার ওনি তো নেই, বিজনেস ট্যুরে দেশের বাহিরে গেছেন। তাই ওনার ওয়াইফই মিসেস মীরা এসেছেন এ বিষয়ে কথা বলতে আপনার সাথে।

বিরক্ত হলো ফুয়াদ। এই মহিলাকে একদমই পছন্দ নয় তার। ড্রেসআপ একদম বাজে ধরনের। আর মহিলার চাহনি মারাত্মক বিষাক্ত। যে চাহনিতে স্পষ্টত আহবান অশ্লীল কিছুর। তাই ফুয়াদ কখনোই এই মহিলার সাথে কথা বলতে চায় না। নানান অযুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যায় সে। তবুও আজ তাকে বলতে হবে। নিপুণকে বলল মিসেস মীরাকে ভেতরে আসতে বলতে। মিসেস মীরা রুমে প্রবেশ করলো। আজও তার ড্রেসআপ দেখে বিব্রতবোধ করলো ফুয়াদ। মিসেস মীরা সোজা ফুয়াদের সামনা – সামনি চেয়ারে বসলো। ফুয়াদ তার দৃষ্টি নিচে রেখে বলে উঠলো,

–মিসেস আরমান বলুন, আপনার শাশুড়ীর কি সমস্যা! ওনার রিপোর্ট যথেষ্ট ভালো দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ফলোআপ দেয়ার পরেও তাকে যথেষ্ট ফিট দেখাচ্ছে। তাহলে কি সমস্যার কথা বলতে চাইছেন আপনি?
–প্রথমত আমায় মিসেস আরমান নয়, মীরা বলেই সম্মোধন করবেন। দ্বিতীয়ত, ওনার পায়ের গোড়ালি ফুলে যাচ্ছে। এটাই বলেছি, আর ওনার পিঠে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যথা শুরু হয়েছে।

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১২

–মিসের আরমান, আপনার কথা আমি রাখতে পারলাম না। আর ওনার দূর্বলতার কারণে পিঠে ব্যথা হচ্ছে। আর সেটা সাময়িকের জন্য। তাছাড়া হাঁটাচলা করলেই ওনার পায়ের গোড়ালির সমস্যার সমাধান হবে। দ্যাটস ইট।
–আর মিস নিপুণ, ওনি এখন আসতে পারেন। আপনি এদিকটায় ঘুছিয়ে নিয়েন আমি আর্জেন্ট একটা কাজে বেরুলাম।
বলে কেউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে।

রাস্তায় আসতেই সে যাকে দেখলো তাতেই তার অধরের কোণে আলতো হাসির রেখা খেলে গেলো। আর অস্ফুট স্বরে ভেসে এলো,
–আমার কেশবতী এখানে!

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৪