মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ২

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ২
আবরার আহমেদ শুভ্র

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতার্ত সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে থাকে তানজিম। কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরেছে তার৷ আপাতত রুমের বাইরে যেতে একদমই নিষেধ করেছে তার বাবা। তাই অনেক্ষণ রুমে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাওয়াতে বারান্দায় আসা তার। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে নিস্তব্ধ এই রাত্রির কষ্ট! ঠিক যেমনই কষ্টের দহনে পুড়ছে সে নিজেই। আনমনে তাকিয়ে আছে আকাশপানে!

হঠাৎ চোখ গেলো বাগানে করা স্টেজের দিকে। কি সুন্দর করে সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে তার না হওয়ার মানুষটা! সকলের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কুশল বিনিময় করছে। কয়েকদিন আগেও যে তারই ছিলো, সে আজ অন্যকারো হয়ে যাবে। যাস্ট কয়েকটা ঘন্টার ব্যবধানে! মলিন হাসি হাসলো তানজিন। কিছু না পাওয়ার বেদনা তার অন্তর্দহন করছে! হাসি পেলো তার! প্রচন্ড রকমের হাসি। একধ্যানে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ সেদিকে। সম্বিত ফিরে আসতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো সেদিক হতে। আর ভাবছে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আজ থেকে জীবনের নতুন গল্প শুরু হতে চলছে আপনার তানিম মাহমুদ । বেস্ট উইশ ফর ইউর ম্যারিড লাইফ মিস্টার তানিম মাহমুদ। আই অলওয়েল ওয়ান্ট টু সি ইউ বি হ্যাপি। .. বলে আঁখি যুগল মুছে নিলো৷
কার জন্য কাঁদবে সে? যে তাকে কষ্ট দিয়ে অন্য কারো হচ্ছে তার জন্যে? কখনওই না। সে নিজেকে শক্ত করে তার অবস্থান বুঝাতে শিখাবে সেই বিশ্বাসঘাতককে৷ সে আজ যে দহনে পুড়ছে একদিন ঠিক একই দহনের জ্বালায় পুড়বেও সে। দ্রুত চোখ মুছে রুমে চলে গেলো সে৷

একজোড়া চোখ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু তার কোনো খেয়ালই করলো না সে। সেই চোখে জ্বলছে ভয়ংকর রকমের প্রতিশোধের নেশা! তার প্রেয়সীর প্রতি অপমানের নেশা। যেটা যেকোনো মূহুর্তে সবকিছু একদম সবকিছুই ভস্ম করে দিতে সক্ষম।

– কেমন লাগছে আমায় তানজু!
কাজিনদের সাথে কথা বলছিলো তানজিম। হঠাৎ পরিচিত মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে পাশ ফিরে তাকালো সে৷ হাসি মুখে দাঁড়িয়ে তার প্রশ্নের উত্তর শোনাতে উদগ্রীব হয়ে আছে ব্যক্তিটি। ক্ষনিকের জন্য কেঁপে উঠলেও হাসি মুখে জবাব দিলো,

– বেশ লাগছে জিজু। একদম পারফেক্ট জামাইয়ের মতোন৷ অবশ্য সিকদার বাড়ীর বড় মেয়ের জামাই বলে কথা তাই না? সুন্দর লাগারই কথা। আপুর সাথে বেশ মানাবে আপনাকে! কি বলিস তোরা?… কাজিনদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে কথাটা বলল তানজিম।
খুঁটা দিয়ে কথা বলায় বেশ ইগোতেই লাগলো তানিমের। তানজুর কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করলো না সে৷ সাথে জিজু ডাকটাও৷ সে ভেবেছিলো তানজিম হয়তো কষ্ট পাবে৷ কিন্তু না, উল্টো তাকে খুঁটা দিয়ে কথা বলায় মনে মনে ক্ষুব্ধও হলো সে যে, তাকে একটা উচিত শিক্ষা সে দেবেই৷ হালকা কাশি দিলে সে, যেনো পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো সে৷

– সেটা তো আমিও জানি মুটকি। তবুও বোনের কাছ থেকে জানতে চাইলাম আরকি তার ভাইকে দেখতে কেমন লাগে।
তানজিম আরও তানিমের প্রেমের কথা কেউ না জানলেও সারাহ্ বেশ ভালো মতেই জানে। সারাহ্ আর তানজিম প্রায় সমবয়সি। তাই তাদের গলায় গলায় ভাব। কারো অপমান কেউ সহ্য করতে পারে না তারা। তানিমের এমন কথা শোনে তেতে উঠলো সারাহ্,

– তানিম ভাই, মুটকি কাকে বলছেন? নিজেকে কেমন লাগে দেখছেন কখনও? আপনার বানর মার্কা ধলা মুখখানা দেখতে এতোই ইনোসেন্ট আর সুন্দর লাগছে যে কি বলবো! যেন একটা ছোট্ট ছেলে ললিপপ পেলে যেমন অবস্থা করে ঠিক তেমনই।
হাসির শব্দ শোনা গেলো পাশ থেকে। অপমানে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তানিমের। বেশখানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে দাতে দাঁত খিঁচিয়ে বলল,

– তোদের সবকটাকে দেখে নেবো আমি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সারাহ্ তার কাজিনদের বলে উঠল,
– তনয়া আর মৃন্ময়ী তোরা তৃশা – ফারাহ্কে নিয়ে ওদিকটায় যা। আমি আর তানজু আসছি।
তানজিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

-ভ্যাবলাকান্তের মতো ওমন করে তাকায় আছিস কেন? চলে রুমে৷ আমি একটি ফ্রেশ হবো।
সারাহ তানজুকে নিয়ে রুমে চলে এলো। সে জানেন এখন তানজিমের মনের অবস্থা। ঠিক কতটা ভালোবাসলে মানুষ এমন অবহেলার স্বীকার হয়।

তাই তো আজ মানুষের মন থেকে ভালোবাসা নামক শব্দটা ছারপোকার ন্যায় হয়ে গেছে। সকলে এখন টাইমপাস আরও দেহের লোভে ভালোবাসা খুঁজে নেয়। তানিমের ক্যারেক্টরও ঠিক এমন ছিলো।
তাদের করা তানিমকে এতো অপমানটা বেশ ভালো লাগলো আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির। মুখের বাঁকা হাসিটা আরও চওড়া হলো। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে সেখান থেকে আরও আড়ালে চলে গেলো সে।

– এভাবে ওখান থেকে টেনে নিয়ে এলি কেন আমায়?
– ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তুই ঠিক নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতি তানজু? হা পারতি!
ডুকরে কেঁদে উঠলো সে৷ আসলেই তো! সে তো অনেক খানি ভেঙে পরেছে। যদি সে কোনো সিনক্রিয়েট করে তো তার বাবা মায়েরই নাম খারাপ হবে৷ এতে কারো দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে কষ্ট হবে না৷ এ সমাজ কখনও তানিমের দোষ দেখবে না দেখবে তার দোষ৷ তখন চুনকালি লাগবেন তার মা-বাবার মুখে। মনে মনে থ্যাংকস দিলো সারাহ্কে,

– কি করবো বলে তুই? উনি আমার সাথে এমন কেন করলো? কি ক্ষতি করেছি আমি তার?
– কোনো ক্ষতিই তুই করিস নি। আর এসব বাজে কথা ছাড়। এখন এই মূহুর্ত থেকে একটাই প্রতিজ্ঞা কর ওনার কথা তুই কক্ষনও ভাববি না৷ সবসময় মনে রাখবি তানিম মাহমুদ নামে কেউ তোর জীবনে ছিলো না। সেটাকে একটা দুঃস্বপ্ন বলে মনে থেকে মুছে ফেলার চেস্টা কর। হাতে এটা সত্যি যে সেটা ভুলা কষ্টের হবে। তবুও এই অনিশ্চিত জীবনে এগিয়ে যেতে হলে তোকে তাকে ভুলতেই হবে।

– কিন্তু তাকে ভুলা কি এতো সহজ হবে? সে তো আমার প্রেম বসন্তের একমাত্র কৃষ্ণচূড়া ফুল! আমার প্রথম ভালোবাসাই তো সে।
– তবুও তোর ওনাকে ভুলে থাকতে হবে। কেননা তুই এতোদিন ভুলেকে চিনতে পারিস নি তাই। যে তোর আবেগ নিয়ে খেলেছে।
-আমি পারবো। যে আমায় নিয়ে খেলেছে সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে নিয়ে না খেলে।

-হুম। নিজেকে শক্ত কর। কারণ, তোকে তানিম ভাই আরও অনেকভাবে কষ্ট দিবে। কেননা তোরা একই ছাদের নিচে থাকবি। যেটা তোর হয়তো সহ্য নাও হতে পারে। কিন্তু এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিবি না যেটা তোর বাব মায়ের আত্মসম্মানবোধে আঘাত করতে পারে৷ আর এটাও জানিস তুই তন্ময় তোকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না।

অন্তত তার দিকটা চিন্তা করে সবসময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে দোস্ত।
সারাহ-র বিজ্ঞের মতো কথা শোনে হালকা হাসলো তানজিম। সে জানে তার পরিবার তাকে কতোটা ভালোবাসে তাদের কেউকে সে উপেক্ষা করতে পারবে না। কক্ষনও নাহ্।

– ‘তোমাকে ভালোবাসা যদি পাগলামি হয়ে থাকে, তবে এই আমি তোমায় আপন করে না পাওয়া পর্যন্ত সেই পাগলামিটুকুই করে যাবো৷ তাতে যদি আমার প্রতি তোমার অভিমান হয়, তাহলে ভেবে আমার ভালোবাসা এভাবে হয় প্রিয়!’ বলে হেসে উঠল লোকটি। তারপরে সেটি পাঠিয়ে দিলো সামনে জ্বলতে থাকা নম্বরের টেক্সটে।
আর জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে আনমনে বলে উঠল,

– যাকে এত্তপরিমাণ ভালোবাসার পরও যখন শুনলাম সে তোকে ভালোবাসতো সেদিন নিজের অনেকখানি খারাপ লেগেছিলো! ভেবেছিলাম আমিই একমাত্র ব্যর্থ যে কিনা ভালোবাসি বলার আগেই হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু না, আমি হারিয়ে ফেলি নি। আর হেরেও যায়নি, হেরে গিয়েছিস তো তুইই!

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১

তোকে আমি অনেক বিশ্বাস করতাম তানিম। কিন্তু সেই বিশ্বাসের মূল্য দিতে পারলি না তুই। চরন মাপের ভুল করেছিস তুই! কষ্ট দিয়েছিস তুই আমার কেশবতীকে! যেটার প্রায়শ্চিত্ত তোকে এমনভাবে দিতে হবে যে তুই কিয়ৎপরিমাণ ভাবতেও পারবি না।
বলে ভয়ংকর হাসি দিলো সেই ব্যক্তিটি!

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৩