মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৬

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৬
আবরার আহমেদ শুভ্র

— শাড়ীতে আপনাকে বেশ মানিয়েছে মিস তানজিম। তবে রংটা আরেকটু গাঢ় হলে বেশ ভালোই হতো।
তানজিম তার ফুফুর রুমে যাচ্ছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে একজন অপরিচিত পুরুষের কণ্ঠে চমকে গেলো সে। ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে একপলক তাকালো সে। ব্লাক শার্ট ও ব্লু প্যান্টের কম্বিনেশনে সেজেছে পুরুষটি। ডানে বামে একবার চেয়ে দেখে জিজ্ঞেস করল,

— জ্বি ভাইয়া আমাকে বলেছেন?
— অফকোর্স, এখানে তো আপনি ছাড়া আর কেউই নেই। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, তাহলে!
— না, তা নেই। তবে, ভাইয়া প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।
— ইট’স মাই প্লেজার।
ছেলেটার সাথে কথা বলতে বেশ অস্বস্তি লাগছে তার। তবুও জড়তা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে বলে,
— ভাইয়া আ্ আর কিছু কি বলবেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছেলেটা ভ্রুক্ষেপহীন দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে তার দিকে। এবার লজ্জায় পড়ে গেল সে। একে তো অপরিচিত পুরুষ, তার উপর এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কি বলবে বুঝতে পারে না সে। আবারও বলে উঠল সে,
— ভাইয়া কিছু কি বলবেন? নাহয় আমি চলে যাচ্ছি। ওদিকে আপুরা খুঁজবে আমায়।
— এই মেয়ে আমি কি আপনার ভাই হয়? আ’ম মৃন্ময় আহসান! প্লিজ কল মি জাস্ট মৃন্ময়।
— তা মানলাম মৃন্ময় সাহেব। তবে এখন আমি আসি। আপনার সাথে আমার তো কোন কথা থাকতে পারে না আর। তার উপর আজই আপনাকে প্রথম দেখলাম। এখন আসি।

ছেলেটার গায়েপড়া ভঙ্গিটা বেশ বিরক্তিকর লাগছে তানজিমের কাছে৷ যেন ছেলেটার সামনে থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সেখানে এসে উপস্থিত হলো তানজিমের ফুফাতো ভাই ফুয়াদ। ফুয়াদের দিকে তাকাতেই ভয় পেলো তানজিম। তার চোখ দুটোই বেশ লাল হয়ে আছে৷ চোখেমুখে রাগের আভাস ফুটে উঠেছে। তানজিম কি বলবে বুঝতে পারলো না তার আগেই ফুয়াদ ছেলেটিকে তাড়া দিলো,

— মৃন্ময় তোমাকে আংকেল খুঁজছে আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো?
— যাবো ভাইয়া, আপনি যান আমি আসছি। মিস তানজিমের সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে৷ সেটা সেরেই আসছি৷
এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালো তানজিম।

আজই প্রথম দেখেছে সে ছেলেটিকে, তাও নিজ থেকেই কথা বলতে এসেছে। আর এখন বলে তার সাথে নাকি কি পার্সোনাল কথা আছে। সে ছেলেটার স্পর্ধা দেখে অবাক হলো। তবে এই মূহুর্তে কেন জানি তার এখন ফুয়াদের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে৷ আঁড় চোখে তাকালো তার দিকে। দেখতে চাইছে ফুয়াদের রিয়েকশন। কিন্তু তার রিয়েকশন এমন ভয়ানক হবে সেটা ভাবতে পারে নি। ভয় পেলেও মনে মনে হাসলো সে।

— ওয়াট ননসেন্স মৃন্ময়! তুমি তানজিমকে কতটুকুই বা চিনো যে ওর সাথে তোমার পার্সোনাল কথা থাকতে পারে? তোমার বাবাকে কি জানাবো এই বিষয়ে?
— এখানে আবার বাবাকে টানছেন কেন ফুয়াদ ভাই ? আমার পার্সোনাল কথা থাকতেই পারে। তবু অন্তত এই বিষয়ে নাক গলাতে আসবেন না প্লিজ। আই ডোন্ট লাইক দিস্!

এবার তেতে গেলো ফুয়াদ। মৃম্ময়ের কথার দাপটে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কোনোমতেই শান্ত করতে পারছে না সে। টগবগিয়ে ফুলে উঠতে লাগল কপালের পাশের শিরাগুচ্ছ। অসম্ভব পরিমাণে রেগে গেলো সে। মৃম্মেয়ের কলার ধরে বলে উঠল,
— তোর পার্সোনাল কথা ইজ মাই ফুট! তোর পার্সোনাল কথা অন্য কারো সাথে থাকতে পারে, তানজিমের সাথে নয়। তোরে নেক্সট টাইম যেন তানজিমের আশেপাশেও না দেখি। দেখলেও খুন করবো আমি তোকে। মাইন্ড ইট! …বলে তানজিমকে সাথে করে সেখান থেকে চলে গেলো সে। আর মৃন্ময় হ্যাবলার মতোন তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

ফাইজার শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন অনেক আগেই চলে গেছে। সাথে মৃম্ময়ও চলে গেছে। তবে ফুয়াদের অগোচরে তানজিমকে বলে গেছে সে আবার আসবে। সেদিন কেউ তাকে আটকাতে পারবে না। মৃন্ময় ভেবেছিলো কেউ হয়তো তাকে দেখেইনি। কিন্তু একজন ঠিকই সেটি শুনে নিয়েছে। মনে মনে মুচকি হাসি হাসলো সে। আর বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,

— রেখেছি তারে মনেরো গহিনে, কে পারিবে তারে মোর থেকে নিতে ছিনিয়ে? ~ [শুভ্র]
কাজিনদের সাথে ফাইজার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে তানজিম। ফুফাতো মামাতো ভাইবোন সবাই এক হয়েছে সেখানে। কাজিনদের মাঝে শুধু ফুয়াদ ছাড়া সকলেই আছে। কিছুক্ষণ আগেই একটি ইমার্জেন্সি ওটি করতে বেড়িয়ে গেছে সে। ফিরতে লেট হবে।

তানজিম আজ তার পার্সেলে পাওয়া সেই কলাপাতা রঙের শাড়ীটাই পড়েছে সাথে হালকা প্রসাধনী। তাতেই মোহনীয় লাগছে তাকে। তাতেই মুগ্ধ হয়ে মৃন্ময় তার পিছু নিয়েছে। কিন্তু আরও একজোড়া চোখ তাকে দেখেই চলেছে। হা, তানিম মাহমুদ সে! আজ কেন যেন তার কাছে তানজিমকে বেশ সুন্দর লাগছে। এমন করে সে কখনও দেখেনি তাকে। কিন্তু আজ যেন একরাশ মায়ার ছড়াছড়ি তার ঐ মুখশ্রীতে। সেটা কয়েকবার তানজিম খেয়াল করলেও পাত্তা দিলো না।

রাতে সকলে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগল। যে যেখানেই পারছে শুয়ে পড়ছে৷ অথৈ আর তানিম আলাদা রুমে শুয়েছে। আর তানজিম সারাহ্ ফাইজার রুমে। ফুয়াদ এখনও ফিরে নি। তার নাকি আরও লেইট হবে। এটা শুনে তানজিমের ভীষণ চিন্তা হতে লাগল। সে তার ফুফিকে বলে ফুয়াদ আসা পর্যন্ত জেগেই রইল। ফাতেমা ইয়াসমিনের অনেকবার মানা করার পরও সে শুনেনি। শেষমেশ তার উপর দায়িত্ব দিয়ে সকলে যে যার রুমে চলে এলো ঘুমুতে। অনেকক্ষণ ধরে ওয়েইট করার পর যখন দেখে ফুয়াদ আসছে না তানজিম রুম থেকে বেড়িয়ে সামনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই তানিমকে দেখতে পেয়ে আবার চলে আসবে এমন সময় তানিম তার পথ আটকায়,

— কোথায় যাচ্ছিস তানু?
কেঁপে উঠল তানজিম। যখন তানিমের সাথে তার প্রেম-ভালোবাসা ছিলো তখন তানিম ভালোবেসে তাকে তানু বলেই ডাকতো। কিন্তু আজ দীর্ঘদিন পরে সেই চিরচেনা ডাক শুনে থমকে গেলো সে৷ পরক্ষণেই নিজেকে সামলালো সে,
— আমার গন্তব্যেই যাচ্ছি।
তানজিমের কাটছাঁট উত্তরে অবাক হলেও সেটার বহিঃপ্রকাশ করলো বলা সে।

— আমার সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে যা। আজ না আমার বড্ড একা লাগছে রে।
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সে। ঠিক যেমনটা করে হেসেছিলো সেদিন তানিম। তার মুখোমুখি দাঁড়ালো এবার তানজিম। কঠিন স্বরে বলে উঠল,

— একা লাগছে? কেন লাগছে এতো একা তানিম ভাই? আপনার বউ আছে তাতেও কি একা আপনি? নাকি অন্য মতলব নিয়ে এসেছেন এখানে? বিয়ে করেছেন তবুও পরনারীর সঙ্গ পেতেই কি এতো ভালো লাগে? অন্তত এবার ভালো হয়ে যান।
— কেমনে ভালো থাকবো বল? তোকে ছাড়া যে আমি আসলেই অসম্পূর্ণ!.. বলে তানজিমের দুহাত আঁকড়ে ধরল সে।
— অন্তত আপনার এই কথা আর আমার সামনে না বললে খুশি হবো। আপনার মতো নর্দমার কীটের সাথে যে আমি রিলেশনশিপে ছিলাম সেইটা ভাবতে আমার ঘৃণা লাগছে। আই জাস্ট হেইট ইউ। প্লিজ লিভ মি। আদারওয়াইজ, আই ওডন্ট থিংক টুয়াইজ এবাউট স্ল্যাপিং ইউ, এন্ড আই উইল ফরগেট এবাউট ইউ এন্ড মি! কথাটা মাথায় গেঁথে রাখবেন।

— তানজিম প্লি… তাকে বলতে না দিয়ে,,
— আপনাকে আমার দু’গালে দুটো করে চড় মারতে ইচ্ছে করছে। আপনার এই নোংরা মুখে আমার নাম নিতে আপনার লজ্জা করছে না? রুমে বউ রেখে এখান পরনারীর সঙ্গ পেতে চাইছেন? কেমন পুরুষ আপনি?…

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৫

বলে একমুহূর্তের জন্যেও দাড়ালো না সে। দ্রুত রুমে চলে গেলো। সেখানে থাকলে হয়তো সে নিজেকে আটকাতে পারতো না। হয়তো পুরোনো স্মৃতিগুলো আবারও জীবন্ত হয়ে ধরা দিতো। একদিকে কান্না আসছে আবার তার ভীষণ রকম রাগও হচ্ছে। মনে মনে বলে উঠল সে,
— ক্যারেক্টারলেস পার্সন। এতে সহজে ছাড়ছি আপনাকে মিস্টার। জাস্ট হেইট ইউ।

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৭