মেঘের অন্তরালে গল্পের লিঙ্ক || লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

মেঘের অন্তরালে পর্ব ১+২+৩
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

নিজের বউয়ের জায়গায় অন্য একটা মেয়েকে বউ সাজে বাসরঘরে বসে থাকতে দেখে ছিটকে দূরে সরে গেলো নিহান। আজই ধুমধামে বিয়ে হয়েছে নিহান রেজওয়ান আর আনজুম ইসরার। বিয়ের আগে নিহান ইসরাকে দেখেছিলো এক সুন্দরী রমণী আর এখন তার সামনে বধূ সেজে বসে আছে এক শ্যামবর্ণ মেয়ে। নিহান অবাকের চাইতেও চরম অবাক তার সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে।
বিস্ময়ে চিৎকার করে বললো, আপনি কে আর আমার স্ত্রী ইসরা কোথায় ?
কাঠের পুতুলের ন্যায় মেয়েটার উত্তর, আমিই আপনার স্ত্রী আনজুম ইসরা। যাকে মাত্র ঘন্টা তিনেক আগে নগদ ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেছেন আপনি।

রেগে চিৎকার করে নিহান বললো, ফাজলামি করেন আমার সাথে ? কোথায় এক ফালি চাঁদের টুকরো ইসরা আর কোথায় অমাবস্যার আঁধার আপনি।
মেয়েটা ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো, আপনি যে চাঁদের টুকরো খোঁজছেন সে আমার একমাত্র মামাতো বোন হুমাইরা হুর।
নিহান বিস্মিত কণ্ঠে বললো, মানে ?
ইসরা মলিন হেঁসে বললো, এতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আর দক্ষ ইন্জিনিয়ার হয়েও এটুকু বুঝতে পারছেন না এখনো ?
নিহান চিৎকার করে বললো, হেয়ালি না করে স্পষ্ট করে বলুন।

ইসরা ফুলে সাজানো বেড থেকে নেমে নিহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, মানেটা হচ্ছে আমার পরিচয়ে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে দেখনো হয়েছে আমার বোন হুরকে। বাসররাতে বর বউয়ের মুখ দেখার আগে আর কেউ বউয়ের মুখ দেখতে পারবে না এমন কোনো নিয়ম আমাদের বংশে নেই। এই নিয়মটা স্পেশালি আমার জন্য তৈরি করা হয়েছিলো যাতে আপনারা আমাকে চিনতে না পারেন আর বিয়েতে কোনো বাঁধা না আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিহান সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ইসরার গালে আর রেগে দাঁত কিটিমিটি করে বললো, লজ্জা করছে না নিজের কুকর্তি এতো সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করতে ? একটুও লজ্জা করলো না এতোগুলো মানুষকে এভাবে ঠকাতে ?
থাপ্পড় খেয়ে ইসরার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফোটে উঠলো, নিজের প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি। কারণ তার জানাই ছিলো প্রত্যেকটা নারীর মতো তার বহু প্রতীক্ষিত এই রাতে এমন কিছুই অপেক্ষা করছিলো তার জন্য।
ইসরা মনে মনে বলে উঠলো, কেনো এমন করলে বাবা, এতোটাই বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম ? তাহলে কী সেই বুক ভড়া ভালোবাসাগুলো মিথ্যা ছিলো ?

চোখের কোণে পানির বিন্দু চিকচিক করছে ইসরার। বুকের ভেতর অভিমানের পাহাড় তৈরি হয়েছে জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, নিজের জন্মদাতা পিতার উপর আর মমতাময়ী মায়ের উপর। তার মা যদি আর একটু চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো আজকের এই দিনটা দেখতে হতো না ইসরার। বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজে ইসরার ঘোর কাটলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো নিহান তার সামনে নেই আর রুমের দরজা হাট করে খোলা। বাইরে থেকে অনেকের অনেক কথাই ইসরার কানে আসছে তবে সে নিশ্চুপ পাথর।
এতোবড় ধোঁকা কী করে করতে পারলেন উনারা ?
এই জন্যই বুঝি এতো নাটক করছিলো ? কেউ বউয়ের মুখ দেখতে পারবে না। তখন কে জানতো এতবড় জঘন্য পরিকল্পনা লুকিয়ে রেখেছিলো মনে।

পুরো পরিবার আর আত্নীয় স্বজন সবাই ধোঁকাবাজ। এই মেয়েকে আর এক মুহূর্ত এই বাড়িতে রাখবো না আমরা।
কালই থানায় গিয়ে প্রতারণার মামলা করবো।

হঠাৎ সবার আওয়াজ ছাপিয়ে নিহানের আওয়াজ ইসরার কানে এসে পৌঁছালো, আমি কালই ডিভোর্স দিতে চাই এই মেয়েকে।
এসব শুনে হয়তো কান্নায় ভেঙে পরা উচিত ছিলো ইসরার। কিন্তু তার চোখে এক বিন্দু অশ্রুকণার উপস্থিতি দেখা গেলো না। এমন কিছুর জন্য সে নিজেকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখেছিলো। বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্ক থেকে মুক্তির জন্য ডিভোর্স নামক একটা তিক্ত প্রক্রিয়া যে পূর্বে থেকেই আছে সেটা তার পরিবার ভুলে গেলেও সে ভুলে যায়নি। মাত্র কিছুদিন আগেই আঠারোতে পা দিয়েছে ইসরা আর মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষাও দিয়েছে। কেবল যৌবনে পা দেওয়া গোলগাল মুখের শ্যামবর্ণ মেয়েটাকে এখনই বিয়ে দেওয়ার কীসের এতো তাড়া ছিলো তার পরিবারের সেটা অজানা। সদ্য ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে মোটা অংকের বেতনে, বড় কোম্পানিতে জয়েন করা ছেলে হাতে পেয়ে লোভ সামলাতে পারেনি ইসরার বাবা ইখতিয়ার আহমেদ। একমাত্র মেয়েকে সুখী দেখতে চায় না এমন বাবা হয়তো পৃথিবীতে খোঁজে পাওয়া অসম্ভব। ইখতিয়ার আহমেদ মেয়েকে সুখী দেখার লোভে এতোটাই অন্ধ ছিলেন ঠিক ভুল বিচার করতেই ভুলে গিয়েছিলেন। ইসরা তো স্বপ্ন দেখেছিলো মন দিয়ে পড়াশোনা করে ভালো ডক্টর হতে। তাহলে স্বপ্ন দেখানো মানুষটাই আজ কেনো স্বপ্নগুলো কেড়ে নিলো তার উত্তর নেই ইসরার কাছে।

সকাল সাতটা বাজে ইসরার ঘুম ভেঙে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা সময় লাগলো কোথায় আছে সেটা বুঝতে। যখন সব মনে পড়লো বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো তার। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো এখনো রাতের মতোই আছে সব। তার মানে এই রুমে কেউ প্রবেশ করেনি। দরজাটা এখনো গতরাতের মতো হাট করে খোলা দেখা যাচ্ছে। ক্লান্ত শরীর বেডে এলিয়ে দেওয়ার পর কখন ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলো জানা নেই ইসরার। উঠে রুমের এক কোণে থেকে নিজের লাগেজ টেনে আনলো। হালকা নীল রঙের একসেট থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে রুমে এলো।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। ৫.৫” উচ্চতার ছিপছিপে গড়নের একটা মেয়ে, মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল, সামনের ছোট চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে কপালের উপর। জোড় ভ্রু যেনো সৌন্দর্যটা আরো একটু বাড়িয়ে তুলেছে। সরু তীক্ষ্ণ নাকটায় গতকাল নিহানদের দেওয়া ছোট্ট ডায়মন্ডের নাকফুল জ্বল জ্বল করছে। গতকালের হালকা কাজলের রেষ লেগে থাকা ডাগর ডাগর চোখদুটো ঘন পাপড়ির মাঝে রক্তলাল বর্ণ ধারণ করেছে অজানা কারণে। নিজেকে দেখে কালো আর গোলাপি রঙ মিশ্রিত ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফোটে উঠলো ইসরার। সবাই বলে গায়ের রঙটা যদি সাদা হতো তাহলে ইসরার থেকে সুন্দরী মেয়ে হয়তো সারা বিশ্ব খোঁজেও পাওয়া যেতো না। এতো এতো পূর্ণতার মাঝে একটা শূন্যতা সব তুচ্ছ করে তুলেছে সবার চোখে।

বাইরে আবার চেঁচামেচির শব্দে ইসরার পূর্ণতা আর শূন্যতার হিসাবে গড়মিল হয়ে গেলো। মাথায় লম্বা একটা ঘোমটা টেনে রুমের বাইরে পা রাখলো ইসরা। দোতলা থেকে নিচের ড্রয়িংরুমে তাকিয়ে মাথা নিচু করে সোফায় বসে থাকতে দেখলো নিজের বাবা, বড় চাচা আর একমাত্র মামাকে। যাদের কখনো কারো সামনে মাথা নত করতে দেখেনি ইসরা। এতোক্ষণ নিজেকে অনুভূতিহীন পুতুল মনে হলেও নিজের আপনজনদের এভাবে অন্যের সামনে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে বুক ফেটে কান্না আসছে ইসরার। আবারও বাবাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, খুব কী ক্ষতি হয়ে যেতো এসব না করলে ?
ইসরাকে নিহানের চাচাতো বোন আমিরার চোখে পড়তেই নিচ থেকে চেঁচিয়ে বললো, ছিহ্ ভাইয়া, এটাই সেই আলকাতরার কৌটা নাকি

আমিরার আওয়াজে চমকে উঠলো ইসরার বাবা, বড় আব্বু আর মামা। নিহানের বাড়ির সবাই চরম বিরক্তি নিয়ে উপরের দিকে তাকালো, সাথে নিহানও। প্রত্যেকের বিরক্তি মাথা মুখটা যেনো আরো বিষিয়ে গেলো ইসরাকে দেখে। হুরের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ ইসরার। হুরের গায়ের রং দুখে আলতা আর ইসরা সেখানে এক ফোঁটা কালি যেমন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ভড়ে উঠলো ইখতিয়ার আহমেদের। বড্ড আফসোস হচ্ছে কেনো মেয়ের কথা শুনলো না তখন। তিনি তো ভেবেছিলেন একবার বিয়েটা হয়ে গেলে আর কী করার থাকবে নিহানের ? বাধ্য হয়ে থাকবে ইসরার সাথে আর একসময় ভালোও বাসবে কিন্তু সেগুড়ে বালি।

লম্বায়, সৌন্দর্যে বা যোগ্যতায় কোনোদিক থেকে কম নয় আমার ভাগ্নে। সবকিছুতে সফলতা আর্জন করে এসেছে সবসময়। কোনোদিক থেকে আপনার মেয়ে আমাদের ছেলের সাথে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখে আপনারা নিজেরাই বলুন। আমরা ভদ্র ফ্যামিলি তাই গতরাতেই আপনাদের মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেইনি।

নিহানের মামার কথা শুনে টলমলে চোখে তাকালো ইখতিয়ার সাহেব। ইসরার মামা কিছু বলতে চাইলে তিনি হাত চেপে ধরে তার। কারণ এখানে উনাদের কোনো দোষ নেই, সম্পূর্ণ দোষ নিজেদের। তাই এখন এমন কথা কেনো, গায়ে হাত তুললেও কিছু বলার মুখ নেই।
নিহানের ছোট চাচা গম্ভীর গলায় বললো, কাজটা একদমই ঠিক করেননি আপনারা। সবাই থানায় যেতে চেয়েছিলো শুধু আমার কথায় আগে আপনাদের খবর দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো ঝামেলা চাই না। নিহান আপনাদের মেয়েকে নিয়ে সংসার করতে পারবে না তাই আপনারা আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যান। ডিভোর্স পেপার সময় মতো পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর বাইরে কিছু করতে চাইলে আমরা বাধ্য হবো থানায় মামলা করতে। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই যুগে এসে আপনারা কতবড় একটা প্রতারণা করেছেন। আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। এই যুগে এসে কেউ এমন প্রতারণা করার পরিকল্পনা করতে পারে।

ইসরার বাবা মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে, ইসরার বড় আব্বু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, তিনি নিজের স্বত্বা বজায় রেখে গম্ভীর মুখে বসে আছে। সে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন ছোট ভাইকে কিন্তু বিনিময়ে তাকে শুনতে হয়েছে ইসরা তার নিজের মেয়ে নয় বলে তার ভালো চায় না। এসব শোনার পর তিনি আর একটা শব্দও করেননি। তবে ভাইয়ের এমন সংকটের দিনে মুখ ফিরিয়েও থাকতে পারেনি, তাই সাথে এসেছে। অপরদিকে ইসরার মামা রাগী মানুষ অনেক কষ্টে নিজের রাগ চেপে রেখেছে। এখন এই পরিবারের চাইতে নিজের দুলাভাইয়ের উপর বেশি রাগ হচ্ছে তার। বরাবরই হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষ ইখতিয়ার আহমেদ।

এভাবে একমাত্র মেয়ের জীবন নিয়েও হুটহাট সিদ্ধান্ত নেবে কল্পনাও করতে পারেনি তারা। এসবই গোপন ছিলো ইসরার মামার কাছে আজই সব জানতে পেরেছেন তিনি। আগে থেকে জানতে পারলে কখনোই একমাত্র ভাগ্নীর জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিতেন না। অন্যদিকে ইসরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে। নিজের গায়ের রং নিয়ে কখনো আফসোস না হলেও আজ বড্ড বেশি আফসোস হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই বিষাক্ত জীবন থেকে নিজেকে আর নিজের আপনজনদের মুক্তি দিতে। কিন্তু সেটা করা সম্ভব নয় ইসরার পক্ষে। আত্মহত্যা মহাপাপ নামক একটা বাক্য তার পা বেঁধে রেখেছে লোহার শিকলের মতো। পৃথিবীর সব কষ্ট হেরে গেছে নিজের লজ্জিত বাবার নিচু মাথা দেখে। ইসরার মনে হচ্ছে এর চেয়ে কষ্টের হয়তো এই পৃথিবীতে তার কিছু নেই তার জন্য।

আমাদের সমাজে ভালো খবর ছড়াতে যতটা সময় নেয় তার থেকে কয়েকগুণ কম সময়ে খারাপ খবরগুলো ছড়ায়। নিহানের বউ পাল্টে যাওয়ার কথা যেনো বাতাসের আগে ছড়িয়ে পড়লো পুরো মহল্লায়। যাদের বউ দেখতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনাও ছিলো না তারও রেজওয়ান বাড়ির দিকে ছুটতে লাগলো বউ দেখার জন্য। পুরো মহল্লা জানাজানি হয়ে যাওয়ার খবর শুনে রেজওয়ান বাড়ির সকলে ইসরার বাবাকে তাড়া দিতে লাগলো, মেয়েকে নিয়ে এখনই এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। আর বাধ্য হয়ে তিনি করলেনও তাই। এতোদিন সবাই কালো উপাধিতেই ভূষিত করেছিলো ইসরাকে। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো তার সাথে আরো একটা উপাধি যুক্ত হতে যাচ্ছে তার নামের পাশে। আর সেটা হচ্ছে ডিভোর্সি।

ইসরা নিজের জিনিসপত্র যেভাবে এনেছিলো সেভাবেই নিয়ে বের হলো রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে এসে নিহানের দিকে তাকালে নিহান মুখ ফিরিয়ে নিলো তার থেকে। নোনাজলে ভড়ে উঠলো ইসরার লাল টকটকে হয়ে যাওয়া চোখ জোড়া।
চলো বাবা।

মেয়ের ভারী গলা শুনে টলটলে চোখে তাকালো ইখতিয়ার আহমেদ। ইসরা চোখ সরিয়ে নিলো বাবার থেকে। ইসরার বড় চাচা হাত জোড় করলেন সবার সামনে তবে মুখে কিছু বললেন না। হনহনিয়ে বের হয়ে গেলেন সদর দরজা দিয়ে। সবাই বের হয়ে গেলে ইসরা আর একবার ঘুরে তাকালো নিহানের দিকে কিন্তু নিহান অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইসরা ধীরপায়ে বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। ইসরা বের হয়ে যেতেই নিহান বড় বড় কদমে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রুমে গিয়ে সব ভাংচুর করতে লাগলো। ইসরা গাড়িতে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, কোনো কথা বলছে না কারো সাথে।

#মেঘের_অন্তরালে
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০২

তাই তো বলি এমন কয়লার মতো মেয়েকে কীভাবে এমন রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে বিয়ে দিলো ? এতো সুন্দর পরিকল্পনা করেছে কেউ বুঝতেই পারেনি।
ভাবতে পারো এই যুগে এসে এমন বউ পাল্টানোর কাহিনী কেউ কল্পনা করতে পারবে ?
ইখতিয়ার সাহেবকে দেখে কিন্তু বুঝা যায় না উনি এমন ধোঁকাবাজি করতে পারেন।
তুমি ঐ মেয়ের কথা একবার ভাবো। দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। এদিকে বাপের সাথে মিলে দিব্যি এমন একটা ধোঁকাবাজি করে ফেললো।
ছেলের পরিবার ভালো ছিলো তাই এমনই এমনই ছেড়ে দিয়েছে। আমি হলে তো গোষ্ঠী শুদ্ধ জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তাম।
ইসরা,,,,?

মায়ের ডাকে চমকে উঠলো ইসরা। নিহানের সাথে বিয়ের আজ পনেরো দিন। চলে আসার পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি ও বাড়ির সাথে। একটা পেপার পাঠিয়েছিলো নিহান, ইসরা না দেখেই সাইন করে দিয়েছে। আজ বসে আছে কোর্টের সামনে একটা ফাঁকা জায়গায়। এই পনেরো দিনে ইসরা ভালো করে বুঝে গেছে তার পরবর্তী জীবন কেমন হতে চলেছে। বাড়ির বাইরে বের হওয়া মুসকিল হয়ে গেছে তার পরিবারের জন্য। দশ বছরের ছোট ভাইটা সেদিন মায়ের কোলে মাথা রেখে কেঁদেছে অনেকটা সময়। ইমন নিজের আপুকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু বিয়ের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইসরা আর তার পরিবারের নামে ইমনকে অনেক কথা বলেছে ইমনের বন্ধুরা। ছোট ছেলেটা এসব সহ্য করতে পারেনি। বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে মাথা রেখে নিঃশব্দে কেঁদেছে। ইসরা অনেকটা চঞ্চল ছিলো আগে কিন্তু গত পনেরো দিনে কেউ তার গলার আওয়াজ শুনেছে বলে মনে করতে পারবে না।

কী ভাবছিস তখন থেকে ? চল ভেতরে ডাকছে তোকে।
ইসরা কোনো কথা না বলে, মায়ের সাথে পা মিলিয়ে চলতে লাগলো। মেয়ের অবস্থা দেখে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে পারভীন বেগমের। এই পনেরো দিনে মেয়েটা যেনো আরো শুকিয়ে গেছে। সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখা মেয়েটার গলা শুনে না আজ পনেরো দিন। পারভীন বেগমও স্বামীর সাথে কথা বলে না। ইসরা ভেতরে গিয়ে একবার সামনে তাকালো। নিহান আর তার পরিবারের কিছু মানুষকে দেখতে পেলো। নিহান ছাড়া বাকি কাউকে ততটা চিনতে পারছে না সে। আকাশী কালারে একটা ফুল হাতা শার্ট নিহানের গায়ে। ফর্সা গায়ে শার্টটা যেনো নিজের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। চশমার পিছনে চোখদুটোর দৃষ্টি এই মুহূর্তে ইসরা দিকে। কপালটা পূর্বের মতো কুঁচকে গেলো ইসরাকে দেখে। গালের চাপ দাঁড়ি নিহানের সৌন্দর্য একটু বাড়িয়ে তুলেছে। ইসরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো, সত্যি তাকে মানায় না নিহানের পাশে। নিহানের পাশে হুরের মতো মেয়েই মানায়।

নিহান ইসরাকে দেখে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, প্রতারক।
ইসার কীভাবে যেনো নিহানের ঠোঁট নাড়ানো দেখেই বুঝে গেলো নিহান তাকে প্রতারক বললো। ইসরা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো।
বিয়ের মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে ডিভোর্স সম্ভব নয়। অন্তত তিন মাস তাদের একসাথে থাকতে হবে। এরপরও যদি তাদের মনে হয় একসাথে থাকা সম্ভব নয় তাহলে ডিভোর্সের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এতে সময় লাগবে তিন মাস। মোট কথা তাদের একসাথে থাকতে হবে ছয় মাস।

কোর্টের নির্দেশ শুনে নিহান বিস্মিত কণ্ঠে বললো, অসম্ভব, ঐ প্রতারক মেয়ের সাথে আমি ছয় মাস কেনো একটা দিনও এক ছাঁদের নিচে থাকতে পারবো না।
নিহানের বাবা নিহানকে বুঝিয়ে বললো, ডিভোর্স পেতে হলে কিছু করার নেই। কোর্টের নির্দেশ মানতেই হবে। আর তুই একা থাকবি নাকি আমরা সবাই তো আছি বাড়িতে নাকি ?
নিহান কিছু না বলে ইসরার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো কোর্ট থেকে। ইসরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে মায়ের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। কী দরকার ছিলো আবার এই ঝামেলার ? সব শেষ হয়ে গেলেই তো ভালো হতো। ঐ বাড়িতে গিয়ে তিলে তিলে শেষ হতে হবে ইসরাকে। সেটা আর কেউ বুঝতে না পারলেও ইসরা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।

নিজের রুমে বসে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ইসরা। ইখতিয়ার আহমেদ একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। বেতন ভালোই পায় আর তাতে ইসরাদের জীবন বেশ সাচ্ছন্দ্যে চলে এসেছে এতোদিন। পাঁচতলা একটা ফ্ল্যাটে থাকে ইরসা নিজের পরিবারের সাথে। তিনটা বেডরুম, একটা ড্রয়িংরুম আর কিচেন। প্রত্যেক রুমে ওয়াশরুম আছে আর একমাত্র ইসরার রুমে একটা ছোট বেলকনি, বেশ সাজিয়ে রেখেছে সেটা ফুলের গাছ দিয়ে। ফ্লোরে একটা মাদুর পাতা থাকে সেখানে ইসরা বসে থাকে মাঝে মাঝে। ইসরা বেড থেকে নেমে ধীরপায়ে বেলকনিতে গিয়ে বসলো। দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখের কোণ থেকে নোনা জলের ধারা বয়ে যেতে লাগলো।

মাত্র পনেরো দিন আগেই তার জীবনটা একদম অন্যরকম ছিলো আর আজ একদম ভিন্ন। ইসরা যেনো দিন দিন নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।
ফ্ল্যাশ ব্যাক
বাবা তুমি যেটা করছো সেটা একদম ঠিক নয়। এভাবে এতোগুলা মানুষকে তুমি ঠকাতে পারো না।
ইসরার বাবা কড়া গলায় বললো, আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। একবার বিয়েটা হয়ে গেছে সবাই এমনই সব মেনে নিবে।
বাবা তুমি ভুলে যাচ্ছো বিয়ে হয়ে গেলেও অনেক কিছু করার থাকে। তারা চাইলেই ডি,,,
দিন দিন তুমি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো ইসরা। এতো ভালোবাসায় আগলে রাখি বলে এতো সাহস হয়েছে তোমার। যে আদর করে সে শাসনও করতে জানে সেটা ভুলে যেও না।

কথাগুলো বলে বড় কদমে ইসরার রুম থেকে বের হয়ে গেলো ইখতিয়ার আহমেদ। ইসরাকে সব জানাতেই ইসরা পরিষ্কার মানা করে দেয় সে এভাবে কাউকে ঠকাতে পারবে না। কিন্তু ইখতিয়ার আহমেদ একরোখা মানুষ নিজের কথার উপর কারো কথা শুনতে পছন্দ করেন না। ইসরা নিজের ফোন বের করে তাড়াতাড়ি হুরকে কল দিলো।
ঘুম ঘুম গলায় হুর রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ইসরা ব্যস্ত গলায় বললো, হুর এটা তুই কী করে করতে পারলি ?
ইসরার গলা শুনে হুরের ঘুম ছুটে গেলো আর লাফ দিয়ে উঠে বসে আমতা আমতা করে বললো, তুই কী বলছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না ইশু।

ইসরা রেগে বললো, তুই বাবার কথায় কোনো ছেলের সাথে দেখা করেছিলি আমার পরিচয়ে ?
হুর ভয়ে ঢোক গিলে বললো, দেখ ইশু আমার কোনো দোষ নেই। ফুপা আমার হাতে ধরে অনেক অনুরোধ করেছিলো আমি কীভাবে না করতাম তুই বল ?
ইসরা ধপ করে বেডে বসে পড়লো। রাগে দুঃখে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার।
ইসরা চোখ মুছে ব্যস্ত গলায় বললো, ঐ ছেলের নাম্বার আছে তোর কাছে ?
আমার কাছে নাম্বার নেই কিন্তু তোর ফোনেই আছে।
ইসরা বিস্মিত কণ্ঠে বললো, আমার ফোনে আছে মানে ?

কয়েকদিন আগে আমার ফোন হারিয়ে গেছে বলে তোর আগের ফোনটা এনেছিলাম না ? সেটা ফুপার কথাতেই এনেছিলাম আর তোর ফোন দিয়েই দুদিন কথা বলেছিলাম নিহান ভাইয়ার সাথে । ফুপা কী বলে ম্যানেজ করেছে জানি না। এখন আর ফোনে কথা বলার দরকার নেই বলেছে, তাই তোকে গতকাল ফোন ফেরত দিয়ে এসেছি।
ইসরা নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এতসব করে ফেলেছে কেউ বুঝতেই পারেনি। ইসরা আর ইসরার মা আজই সব জানতে পেরেছে। আগামীকাল নিহান নিজের পরিবার নিয়ে পাকা কথা বলতে আসবে তাই সব জানিয়েছে ইসরাকে আর তার মাকে।
ভেজা গলায় ইসরা বললো, তুই যে এতোকিছু করেছিস মামা মামি জানে ?
হুর কিছুটা সময় নিয়ে বললো, ফুপা আর আমি ছাড়া কেউ জানতো না। ফুপা আমাকে অনুরোধ করেছিলো কাউকে যাতে না জানাই। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম তাই কাউকে বলতে পারিনি।

ইসরা এক মুহুর্ত লেট না করে হুরের কল কেটে দিলো। হুর আর ইসরা সমবয়সী, বোন আর বেস্টফ্রেন্ড দু’টোই। বাসা খুব বেশি দূরে নয় তাই একসাথেই থাকা হয় সবসময়। ইসরা কল কেটে হন্তদন্ত হয়ে হুরের ফেরত দেওয়া ফোনটা খুজতে লাগলো। আগের ফোনটা হারিয়ে গিয়েছিলো তাই নতুন ফোন কিনে দিয়েছিলো ইসরার বাবা। নতুন ফোন কেনার কিছুদিনের মধ্যে আগের ফোন একজন ফেরত দেয়। ইসরা ফোন পেয়ে নিহানের নাম্বার খুজতে লাগলো। নাম্বার দেখে ইসরার মুখে হাসি ফোটে উঠলো। কিন্তু যেই কল দিতে যাবে কোথা থেকে ইখতিয়ার আহমেদ এসে ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো।

বাবা ফোনটা দাও।
তুমি কাকে কল দিচ্ছিলে ?
তুমি যাকে চরমভাবে ঠকাতে চাইছো ?
ইখতিয়ার আহমেদ সজোরে থাপ্পড় মারলেন মেয়ের গালে। বিস্ময়ে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম ইসরার। জ্ঞান হয়েছে পর তাকে কখনো ফুলের টোকা দেয়নি তার বাবা। আজ সেই বাবা তাকে থাপ্পড় মারলো, ইসরা বিশ্বাস করতে পারছে না।
টলমলে চোখে বাবার দিকে তাকালো, বাবা তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে ?
বলেছিলাম, যে আদর করে সে শাসনও করতে জানে। তোমার কোনো ধারণা আছে সব কিছু গুছিয়ে আনতে আমাকে কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আর তুমি এক সেকেন্ডে সব শেষ করে দিচ্ছিলে ?

ইসরা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরে বললো, বাবা তুমি বুঝতে পারছো না কেনো ? এটা ভুল, এটা অন্যায় আর তার মাশুল ভয়ংকর হবে। এভাবে আমি কখনো সুখী হতে পারবো না। আমি যেমন আমাকে সেভাবেই যে মেনে নিতে পারবে সব সত্যিটা জেনে, তার সাথে সুখে থাকবো আমি।
রাগে মুখ শক্ত করে ইখতিয়ার আহমেদ বললো, আমি এতোকিছু শুনতে চাই না। তুমি যদি আবার এই বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। আর তোমার বাবাকে তুমি চেনো। যেটা বলে সেটা করে দেখাতেও কখনো পিছুপা হয় না।
ইসরার দু’টো ফোন নিয়েই ইখতিয়ার আহমেদ বের হয়ে গেলো ইসরার রুম থেকে। ইসরা হাঁটু মুড়ে বসে হাঁটুতে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো। অনেক সময় কান্না করার পর উঠে হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নিলো।

তুমি যা করছো তার জন্য আমার থেকে তোমাকে বেশি আফসোস করতে হবে বাবা। সেটা আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তুমি কাঁদবে আমার থেকেও বেশি। আমি আর কিছু করবো না তুমি যা খুশি করো আর তার পরিণতির জন্য প্রস্তুত হও।
ইসরা আর কিছু করেনি। নিহানের পরিবারের থেকে ইসরাকে সবসময় লুকিয়ে হুরকে তাদের সামনে রাখা হয়েছে। ইসরার মা বারবার ইসরার বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু সে নিজের সিদ্ধান্তে অটল। হুরের বাবা-মা এই বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনি। ইখতিয়ার নিজের বড় ভাইকে সব বললে সেও অনেক বুঝায় কিন্তু তাকে উল্টো অপমান করে ইখতিয়ার। সবার এতো বাঁধা উপেক্ষা করে ইখতিয়ার মেয়ের বিয়েটা সম্পন্ন করেই ছাড়েন।
ইসরা ?

কারো ডাকে ইসরার অতীত বিচরণে ব্যাঘাত ঘটালো। মাথা ঘুরিয়ে হুরকে দেখতে পেলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে৷ হুর ইসরার সামনে আসার সাহস যোগাড় করে উঠতে পারেনি এতোদিন।
হুর মাথা নিচু করে কষ্টে কাতর গলায় বললো, একজন বাবার বয়সী মানুষ যখন হাতে ধরে নিজের মেয়ের একটা সুন্দর জীবন ভিক্ষা চায়। তখন কিছু করার আছে বলে আমার মাথায় আসেনি। আমিও চেয়েছিলাম তোর সুন্দর একটা জীবন।
হুর খুব নরম মনের একজন মানুষ। ইসরা ভালোই বুঝতে পারছে তার বাবা হুরের ভালোভাবে ব্রেনওয়াশ করেছে। মেয়েটার নরম মনের খুব সুন্দর ব্যবহার করেছে। বাবার প্রতি অভিমানের পাহাড়টা ইসরার একটু একটু বেড়েই চলেছে পরিস্থিতির সাথে সাথে। হুর অসহায় দৃষ্টিতে ইসরার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়।

#মেঘের_অন্তরালে
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৩

হুর অনেকটা সময় ইসরার দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে পাশে বসে পড়লো। বেলকনির বেলি ফুলের গাছটা সাদা ফুলে ভড়ে উঠেছে৷ ফুলের মিষ্টি গন্ধ মন জুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। হুর আর ইসরা পাশাপাশি বসে আছে।
ছোটবেলা থেকে বাবার কাছে একটা গল্প শুনে এসেছি। আমার বাবার দাদাকে বিয়ের জন্য ছোট মেয়েকে দেখিয়ে বড় মেয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যখন সব জানাজানি হলো তখন অনেক ঝামেলা হয়েছিলো কিন্তু একটা সময় গিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। বাকি জীবনটা নাকি তারা সুখী দম্পতি হিসেবে কাটিয়ে গেছে।

ইসরার হঠাৎ বলা কথায় হুর খানিকটা চমকে তাকায় ইসরার দিকে। এই গল্পটা হুর অনেকবার শুনেছে ইসরার কাছে। প্রত্যেকবার বলা শেষে ইসরা আর হুর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতো আর বলতো কী সাংঘাতিক ব্যাপার ভাবতে পারিস ? কিন্তু আজ কেউ হাসতে পারলো না বরং হুরের ভেতরটা ধক করে উঠলো।
ইসরা আবার বললো, আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে গল্পটা নিয়ে সবসময় মজা করতাম সেটা একদিন আমার জীবনের গল্প হয়ে দাঁড়াবে।

হুর ইসরার কথার উত্তরে কিছু বলতে পারলো না মাথা নিচু করে বসে রইলো। ইসরার কোনো রাগ নেই হুরের উপর, কারণ মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী মনের দিকে থেকে ঠিক ততটাই নরম। একটু ইমোশনাল কথা বলে যে কেউ হুরকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে। হুরকে নিয়ে ইসরার মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। পৃথিবীটা যে বড্ড কঠিন এখানে এতো সহজ সরল মানুষকে সবাই ব্যবহার করে শুধু, তাদের সরলতার সুযোগ নেয়।
ইসরা হুরের দিকে তাকিয়ে বললো, এতটা সহজ সরল হয়ে যাস না, যাতে নিজের ক্ষতি হয়। পৃথিবীটা চেনার চেষ্টা কর হুর, নাহলে জীবনে অনেক হোটচ খেতে হবে।
হুর মাথা নিচু করে বললো, তুই প্লিজ মাফ করে দে আমাকে।
ইসরা আর কিছু বললো না, আবার বেলকনির বাইরে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হুরও কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো ইসরার পাশে।

ডিভোর্সের তাড়া নিহানের পরিবারের, ইসরার বাবার নয়। মেয়েকে ও-বাড়ি পাঠানোর কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না তার মধ্যে। মেয়ের সাথে চোখ মেলানোর সাহস পায় না ইখতিয়ার আহমেদ। সবসময় মেয়ের থেকে মুখ লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। নিজের জীবনের সব সিদ্ধান্ত ঝুঁকে পড়ে নিয়েছেন তিনি। মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাও কোনোরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই নিয়ে ফেলেছেন। নিজের হাতে সযত্নে মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন সেটা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন।

গতরাতে নিহানের বাবা ফোনে জানিয়েছেন সকালে গাড়ি পাঠাবেন ইসরাকে নিতে। সেই থেকে ইসরার বাসায় অনেকটা গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। যে বাড়ি থেকে এতো অপমানে বের করে দেওয়া হয়েছে সেই বাড়িতে মেয়েকে আবার কীভাবে পাঠাবে ভেবে পাচ্ছে না। আবার পরক্ষণে ভাবছে সেই অপমান সে নিজের ডেকে এনেছে, দোষটা তাদের নয়। ইসরা সকালে নিজের রুম থেকে এখনো বের হয়নি। নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বেশ অনেকটা সময় হলো কিন্তু ইসরাকে কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। পারভীন বেগম চার পাঁচবার মেয়ের রুমের সামনে গিয়ে আবার ফেরত এসেছে। ইখতিয়ার আহমেদ আজ অফিস না গিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে কপালে হাত রেখে।

পারভীন বেগম বিনা প্রয়োজনে কিচেনে দাড়িয়ে আছে দেয়ালে হেলান দিয়ে আর ইমন খেয়েদেয়ে স্কুলে চলে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মেয়ের রুমের দরজা খোলার শব্দে পারভীন বেগম আর ইখতিয়ার আহমেদ দু’জনেই সেদিকে তাকালো। রেডি হয়ে লাগেজ নিয়ে বের হয়েছে ইসরা। মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাড়ালেন ইখতিয়ার আহমেদ। ইসরা বাবা-মা কারো দিকে না তাকিয়ে মেইন ডোর খোলে বের হয়ে গেলো। পারভীন বেগম মেয়ের পেছনে যেতে লাগলো। ইখতিয়ার আহমেদ যাবে কী যাবে না চিন্তা করতে করতে দু’জনেই চলে গেলো আর সে আবার নিজের জায়গায় বসে পরলো।
গেইটের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইসরা সেদিকে এগিয়ে গেলো।
পারভীন বেগম ধরা গলায় বললো, ইসরা।

ইসরা দাঁড়িয়ে গেলো কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালো না। পারভীন বেগম নিজেই এগিয়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন কিন্তু ইসরার মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সযত্নে মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ইসরা বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। পারভীন বেগম চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রইলেন চলে যাওয়া গাড়ির দিকে। চোখের আড়াল হয়ে গেলেই বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো তার। নিজেকে কোন রকম সামলে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালেন।

ইসরা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, চোখ দুটোয় শ্রাবণ ধারা বয়ে চলেছে। অজানা এক পথে হাঁটতে চলেছে সে। এই পথের শেষ কোথায় তার অজানা। চলার পথটা যে সহজ হবে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না তার। গাড়ি থেমে গেলে হুঁশ ফিরলো ইসরার। সামনে তাকিয়ে সাদা রঙের দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখতে পেলো। মোটামুটি বেশ বড় বাড়িটা আর সুন্দর। হ্যাঁ এটাই নিহানদের বাড়ি, যেখানে আরো বিশ দিন আগে এসেছিলো বধূ সেজে। ইসরা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ি থেমে নেমে নিজের লাগেজ নিয়ে সামনে আগাতে লাগলো। কলিং বেল বাজালে একটু পর দরজা খোলে গেলো। সামনে তাকিয়ে নিজের মায়ের বয়সী ভদ্র মহিলাকে দেখতে পেলো। পোশাক আশাকে বুঝা যাচ্ছে বাড়ির কাজের লোক। ইসরা ভেবেছিলো উনিও ইসরাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে তাকাবে। কিন্তু ইসরার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে মিষ্টি হাসলেন ইসরার দিকে তাকিয়ে।

ভেতরে আহেন।
ইসরা লাগেজ টেনে ভেতরে গেলে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না।
আমি এই বাড়ির কাজের লোক মনিরা। আপনে আমার সাথে আহেন আপনার রুম দেখাই দেই।
ইসরা কিছু না বলে মনিরার পেছনে হাঁটতে লাগলো। নিচতলার একদম কর্ণারের একটা রুমে ইসরাকে নিয়ে গেলো মনিরা।
আপনে এই রুমেই থাকবেন গতরাতে বড় সাহেব বলে দিছে।
ইসরার বুঝতে সময় লাগলো না এটা বাড়ির গেস্টদের জন্য বরাদ্দকৃত রুম। সেও তো এই বাড়ি গেস্ট মাত্র কয়েক মাসের, তাই তার জায়গা এখানেই হওয়ার কথা।

আপনে কিছু খাইবেন ?
ইসরা মলিন হেঁসে বললো, না।
কিছু লাগলে আমারে বইলেন আমি এহন যাই।
ইসরা সম্মতি দিলে মনিরা বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ইসরা রুমটা ভালো করে দেখতে লাগলো। খুব বেশি কিছু নেই রুমে, একটা বেড, ড্রেসিং টেবিল, সোফা আর কাবার্ড। পাশে বেলকনি দেখে ইসরা সেদিকে এগিয়ে গেলো। কয়েকটা এরিকা পাম গাছ ছাড়া বেলকনিতে আর কিছু নেই। ইসরা কিছুটা সময় সেখানে থেকে রুমে এসে নিজের জিনিসপত্র গুছাতে লাগলো। কাজ শেষ করে শাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে পড়লো। এখন বেলা বারোটা বাজে ইসরার পেটে কিছুই পরেনি। ক্ষুধা লাগেনি এমন নয় তবে খাওয়ার ইচ্ছেও নেই। চুল আঁচড়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে নিহান। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ছিলো নিহানের। বাড়তি কিছু ভাবার সময় পায়নি কখনো। সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতো। যার ফলস্বরূপ আজ একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ সে, সমাজে নিজের ভালো একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। ক্যারিয়ার আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় হয়নি তার৷ সুদর্শন হওয়ায় কলেজ আর ভার্সিটি লাইফে অনেক মেয়ের ক্রাশ ছিলো নিহান কিন্তু পাত্তা দেয়নি কখনো। ইসরা মানে হুরকে দেখে তার ভালো লেগেছিলো। ভালো লেগেছিলো বলতে মনে হয়েছিলো মেয়েটা তার পাশে দাড়ানোর যোগ্যতা রাখে। সে একটা শার্ট কিনতে গেলেও কয়েকবার দেখেশুনে কিনে আর জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয়ে এভাবে ঠকে গেলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার, ইচ্ছে করছে গেস্ট রুমে থাকা মেয়েটাকে খুন করে নিজের রাগ মেটাতে। ভাগ্য ভালো মেয়েটা তার সামনে নেই তাহলে হয়তো সত্যি সত্যি খুন করে দিতো।

ফজরের নামাজ পড়ে ধীরপায়ে ছাঁদে চলে গেলো ইসরা। দুদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে কিন্তু কারো সামনে যায়নি। নিহানের আর তার ছোট চাচার পরিবার একসাথেই এই বাড়িতে থাকে। নিহানের মা ছাড়া বাকি সবাই চাকরিজীবী এই বাড়ির। ইসরাকে আলকাতরার কৌটা উপাধি দেওয়া নিহানের চাচাতো বোন আমিরা এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তার সাথেও ইসরার দেখা হয়নি। রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই ছাঁদে চলে গেলো। বাড়িটা মনিখালার সাহায্যে অনেকটা চিনে নিয়েছে ইসরা আর এই বাড়ির একমাত্র তার সাথেই কথা বলে ইসরা। তাকে মনিখালা বলেই ডাকে। ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাতেই গেইট দিয়ে নিহানকে ঢুকতে দেখলো সাদা পাঞ্জাবি পড়া আর টুপি মাথায়। নিহান বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো আর ইসরা আকাশের দিকে তাকালো। এভাবে কারো জীবন চলতে পারে কিনা ইসরার জানা নেই। এই বাড়িতে নিজেকে অন্য কোনো গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে ইসরার কাছে। মা অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু ইসরা রিসিভ করেনি, কেনো যেনো কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে না তার।

আপনি এখানে কী করছেন ?
ছাঁদে এসে ইসরাকে দেখে নিহানের কপাল কুঁচকে গেলো। প্রতিদিন এই সময়টা ছাঁদে কাটাতে ভালো লাগে নিহানের তাই চলে এসেছে কিন্তু ইসরাকে এখানে একদমই আশা করেনি সে। নিহানের আওয়াজে চমকে পেছনে ফিরে তাকালো ইসরা। নিহানের মতো ইসরাও নিহানকে একদমই প্রত্যাশা করেনি।
রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই এখানে এসেছি।
এটা আপনার নিজের বাড়ি নয় যখন যেখানে ইচ্ছে চলে যাবেন। এই সময়টা আমি ছাঁদে কাটাই, আর কেউ থাকুক সেটা আমি পছন্দ করি না।

নিহানের কথায় ইসরার মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সে নিজের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
নিহান বিরক্ত হয়ে নিজেই চলে যেতে গেলে ইসরা বলে উঠলো, আপনার জন্য একটা খারাপ খবর আছে আমার কাছে।
নিহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, আপনার মতো মানুষের থেকে কেউ ভালো কিছু আশাও করতে পারে না। আপনার গায়ের রং যতটা কালো আপনার মনটা তার থেকেও বেশি কালো।
ইসরা মুচকি হাঁসলো নিহানের কথায় আর বললো, আমার মন কতটা কালো আর সাদা সেটা আমি ভালো জানি। তবে আপনার মন কতটা সাদা সেটা আপনি ভালো জানেন। আর হ্যাঁ নিশ্চিত থাকুন আপনার বাসায় পারমানেন্ট থেকে যাওয়ার কোনো চেষ্টা আমি করবো না, আর না আপনার মন জয় করার চেষ্টা করবো।
চেষ্টা করে লাভ আছে বলে আপনার মনে হয় ?

ইসরা নিহানের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললো, আপনি হুরকে পছন্দ করেন সেটা আমি জানি। তবে যদি ভেবে থাকেন ডিভোর্সের পর হুরকে বিয়ে করবেন তার জন্য বলে রাখি হুরের বয়ফ্রেন্ড আছে। সেটা আমার মামাও জানে এবং বিয়েটা মোটামুটি ঠিক করা। আরাফ ভাইয়ার পড়াশোনা শেষ হলেই বিয়ের কাজ কমপ্লিট করা হবে।
নিহান চোখ মুখ শক্ত করে বললো, ঐ মেয়ে তো আপনার থেকে এক ধাপ এগিয়ে। কীভাবে ভাবলেন এমন প্রতারক কাউকে আমি আমার জীবনে জায়গা দিবো।

কথাটা শেষ করে বড় কদমে ছাঁদের গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো নিহান। হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো, আপনাকে যেনো আমার চোখের সামনে আর না দেখি। আপনার যা প্রয়োজন নিজের রুমে পেয়ে যাবেন। এই বাড়ির মানুষদের থেকে যত দুরত্ব বজায় রাখবেন সেটাই ভালো আপনার জন্য।

নিহান চলে যেতেই ইসরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ইসরার মনে একবিন্দু ইচ্ছে নেই এই সম্পর্কটাকে সুযোগ দেওয়ার। মনে মনে সেও চায় এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে। তার মধ্যে কোনো ইচ্ছে নেই এই পরিবারের কারো মন জয় করার। এই পরিবারের প্রথম দিনের ব্যবহারে ইসরা বুঝে গেছে তাদের যতটা না সমস্যা বউ পাল্টে যাওয়ায় তার থেকে হাজার গুন সমস্যা একটা কালো মেয়ে তাদের পরিবারের বউ হয়েছে বলে।

চলে যাওয়ার সময় পেছনে থেকে কারো আওয়াজে শুনতে পেয়েছিলো, আর একটু ফর্সা হলে তাও ভেবে দেখা যেতো।
আর নিহান সে তো কালো মানুষদের এক প্রকার ঘৃণা করে বলা চলে। মনিখালার থেকে ইসরা শুনেছে ছোটবেলায় কোনো কালো বাচ্চার সাথে নিহান খেলতো না পর্যন্ত। নিহানের ছোট চাচার ছেলের গায়ের রং নিহানের থেকে চাপা তাই তাকেও নাকি খুব একটা পছন্দ নয় নিহানের। মনিখালার ভাষ্যমতে সে কালো নয় উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, নিহান তাকেই পছন্দ করে না আর ইসরা তো সেখানে একদমই কালো।
ইসরা বিড়বিড় করে বললো, মিস্টার নিহান আমার গায়ের রং যতটা কালো তার থেকে আপনার মনটা আরো বেশি কালো। এমন কারো মনে জায়গা করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই যে মানুষকে সম্মানই করতে জানে না। আপনার মতো আমিও সময়ের অপেক্ষায় আছি। তবে তার আগে আমার বাবাকে বুঝাতে চাই সে কতবড় অন্যায় করেছে।

মেঘের অন্তরালে পর্ব ৪+৫+৬