যদি তুমি বলো পর্ব ১০

যদি তুমি বলো পর্ব ১০
আফনান লারা

তিথির বাবা মহাশয় তার মহাশয়াকে ডেকে তুলার জন্য একটা স্টিলের বাটি খুঁজছেন।তিথির মায়ের ঘুম খুবই গভীর।যার কারণে সকাল বেলার মৃদু আওয়াজে ডাকার ফলে তার ঘুম ভাঙ্গার কথাই না।
অনেক খুঁজে স্টিলের বাটিটা বের করে তিনি বাজানো শুরু করে দিলেন।ওমনি লাফিয়ে উঠে বসলেন মিসেস শায়লা।
তিনি চোখ বড় করে জানতে চাইলেন সকালে এত বিদঘুটে পদ্ধতিতে তাকে ঘুম থেকে তোলার কারণ কি।
সুলতান সাহেব তখন ফিসফিস করে বললেন,’তোমার মেয়েকে দেখতে এসেছে এক সনামধন্য পরিবার।জলদি তৈরি হয়ে তাদের সামনে যেয়ে বসো’

‘এ্যাহ?আবার?তানিয়ার না বিয়ে ঠিক হলো?’
‘এরা এসেছে তিথির জন্য’
এ কথা শুনে মা জলদি উঠে পড়লেন তৈরি হবার জন্য।
ওদিকে রিদম পাত্রের খালা দুজনের সাথে ভুলভাল যা পারছে আনাবসানাব বলেই চলেছে।
ঠিক সে সময় তানিয়া একটা ঝাড়ু নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে বললো,’বান্দর!সকাল সকাল এত ভাষণ শুরু করলি ক্যান?অবশ্য তুই তো ভাষণ দেস আর শোনে কাউয়া জনতা,ভাল মানুষ শোনেনা!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

এ কথা বলে তানিয়া চেয়ে দেখে পাত্রের খালা আর বোন ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তানিয়া হাতের ঝাড়ুটা পেছনে লুকিয়ে দাঁত কেলিয়ে সালাম দিলো এরপর এক পা এক পা করে রিদমের পিছনে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে বললো,’আপনারা কারা?’
ওনারা নিজেদের পরিচয় দিলেন তানিয়া আর রিদমকে।
এরপর তারা তিথির কথা জানতে চাইলেন।তখন তানিয়া বলে সে ঘুমাচ্ছে।তখন বেলা এগারোটা বাজে।
তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’আসলে কাল আমরা রাতের দুইটায় ঘুমাইছি তো।তাই টুকুর উঠতে দেরি হচ্ছে।আমি উঠাই আনি।আপনারা বসুন,এই রিদম তুই তো শরবত বানাতে পারিস।শরত বানিয়ে ওনাদের দে!”

রিদম মাথা চুলকে তাই চলে গেলো।এরই মধ্যে তিথির মা এসে ওনাদের সালাম দিয়ে কথা বলতে বসে গেলেন।
তানিয়া ঝাড়ু ফেলে তিথিকে জাগাতে এসে হাজির।তিথি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।মাথা বালিশের তলায়।
তানিয়া ওর বালিশটা কেড়ে নিয়ে বলে,’টুকু উঠো!তোমায় দেখতে পাত্রপক্ষ এসেছে,জলদি উঠো!’
এ কথা শুনে তিথি উঠলো।চোখ ডলে বললো,’ছেলে কি করে?’

‘ময়দা মাখে,সেটাকে চিকন করে সিদ্ধ করে।তারপর শুকায়’
এটা বলে তানিয়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলো।তিথি ভ্রু কুঁচকে বলে,’ময়রা?’
‘আরে ধুর!মজা করতেছি।তুমি উঠো তো।ফ্রেশ হয়ে আমার বেগুনী রঙের জামাটা পরো।ওটা পরলে তোমায় বেগুনী পরীর মতন লাগে।জলদি করো’

তানিয়া জোরপূর্বক তিথিকে উঠিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।এরপর গেছে রান্নাঘরে।
রিদম তিন গ্লাস শরবত তৈরি করে রেখেছে।নিয়ে যাওয়াই ধরছিল তখন তানিয়া ওকে থামিয়ে বলে,’তোর তো পুরান অভ্যাস।চিনির জায়গায় নুন দেস,নুনের জায়গায় চিনি।আজ অবধি তোকে বোয়াম চিনাইতে পারি নাই।দাঁড়া টেস্ট করে দেখি’
এই বলে তানিয়া মুখে দিয়ে ফুরুত করে আবার ফেলে দেয় সব।রিদম পুরান ভুল আবারও করেছে।সে শরবতে চিনির জায়গায় লবণ দিয়ে দিছে।
তানিয়া ওরে কিছুক্ষণ বকাবকি করে বললো বাসায় কিছু নাই।সে যেন তিনটা ডিম পোজ করে নেয়।অন্তত এগুলা দিলেও মান বাঁচবে।

রিদম মাথা নাড়িয়ে ডিম ভাজি করতে চলে যায় আর তানিয়া শরবতের ট্রে নিয়ে ওনাদের সামনে রেখে আসে।
তারপর তানিয়া এসে দেখে তিথি তৈরি।বিয়ে করা নিয়ে এতদিন তিথির তেমন ইন্টারেস্ট না থাকলেও এখন আছে কারণ এখন তার পিছুটান নাই।যাকে নিয়ে সংসার পাততে চেয়েছিল সে মানুষটা একটা ধোকাবাজ বলে এখন তার নতুন একটা মানুষকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা লাগেনা।হয়ত মাঝে মাঝে খারাপ লাগবে এই ভেবে যে এতগুলো দিন কার পেছনে ব্যয় করেছে সে।

চুলগুলোকে ক্লিপ দিয়ে বেঁধে তিথি ওনাদের সামনে এসে হাজির হয়।
সালাম দিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে।পাত্রের খালা ওকে নিজের পাশে বসতে ডাকলেন তখন। তিথি ও তাই করে।
তিনি তিথির পুরো নামটা জিজ্ঞেস করলেন।এর বেশি একটা প্রশ্ন ও তিনি করলেন না।
সেই সময় রিদম তিনটা ডিম পোজ নিয়ে এসে হাজির।ওনাদের খেতে দিয়ে সে বলে ‘মাস্টার শেফের উইনার ছিলাম।আমার রান্না খেলে খুশিতে মরে যাবন।নিন খান’
পাত্রের খালা হাসি দিয়ে ডিম নিয়ে মুখে দিয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালেন।তারপর ডিমটা রেখে দিলেন তিনজনেই।

রিদম ভাবছে এত মজা হয়েছে যে হাত থেকে বাটি রেখে প্রশংসা করতে চায় তারা।তাই সে লজ্জায় লাল হয়ে চোখে হাত দিয়ে ঢেকে ফেললো।
তানিয়া ওনাদের মুখের চাহনি দেখে একটা বাটি থেকে ডিম একটু তুলে মুখে দিয়ে বুঝলো রিদম নুনের জায়গায় চিনি দিয়ে ডিম ভাজি করে এনেছে।সে কপালে ঠাস করে বাড়ি একটা দিয়ে এরপর রিদমের কান টেনে ধরে ওনাদের সামনে থেকে নিয়ে গেলো।ওনারা কেউই ডিমের ভাল খারাপ টেস্ট নিয়ে কিছু বলেননি।

তিথিকে চলে যেতে বলে তারা তিথির বাবা মায়ের সাথে অনেক কথাই বললেন।তিথি অবশ্য সেসব শুনতে যায়নি,কিন্তু তানিয়া আর রিদম আড়ি পেতে সব শুনেছে।এবং বুঝেছে ওনারা হয়ত কথাটা আগাতো চান,আর তাই কাল তিথির বাবা মাকে ওনারা বাসায় দাওয়াত দিয়ে চলে গেছেন সবাই।
বাবা ভীষণ চিন্তাভাবনায় আছেন।কি করা উচিত তার। সেটা ভাবতে গিয়ে পরে ঠিক করলেন হয়ত এবার তিথিকে বিয়ে দেয়ার আসল সময় এসে উপস্থিত হয়েছে।তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগামীকাল ওদের বাসায় যাবার।

তানিয়ার ফোনে আজ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।সে রিসিভ করতেই কিছুক্ষণ স্তম্ভিত রয়ে যায়।এরপর হঠাৎ ব্যাগ গুছিয়ে সে বের হয়ে গেলো।
এসে উপস্থিত হলো একটা খোলামেলা নিরিবিলি রেস্টুরেন্টে।
সে বসে বসে পা নাড়ছে চিন্তায়।অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তার সামনে এসে দাঁড়ায় ইশান।
তানিয়া মুচকি হাসি দেয় তখন।ইশান চেয়ার টেনে বসে বলে,’বলো কি খাবে?স্ট্রভেরী স্যান্ডুইচ? ‘

‘এখনও মনে আছে ভাইয়া?’
‘হ্যাঁ’
ইশান ওয়েটারকে ডেকে খাবারের অর্ডার দেয়।এরপর বলে,’তোমার টুকুর বাসায় আজ বিয়ের প্রস্তাব গিয়েছিল তাই না?’
‘হ্যাঁ,কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?’
ইশান তখন সানগ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বলে,’পাত্র আমি’
এটা শুনে তানিয়া চোখ বড় করে ফেলে।পরপরই খুশিতে তার মন ভরে যায়।সে বলে এটা হলে খুব ভাল হবে।
তখন ইশান বলে,’কিন্তু তোমার একটা হেল্প করতে হবে আমায়।সে জন্যই তোমায় কল দিয়ে এখানে এনেছি’
‘কি ভাইয়া?’

‘বিয়েটা হবে কিন্তু তিথি যেন কোনোভাবেই না জানে তার বিয়ে ইশতিয়াকের সাথে হচ্ছে’
‘সেটা কিভাবে সম্ভব? বিয়ের আগে তো একবার হলেও আপু ছেলেকে নিজ চোখে দেখতে চাইবে।’
‘সেটা জানি।সেটার ব্যবস্থা আমি করতে পারবো।তা নিয়ে ভাবছি না।কিন্তু যাতে সে কোনোভাবে আমায় না চিনে সেই দিকটা তোমার দেখতে হবে।তোমার বাবা,মা,ভাই কেউই আমাকে চিনেনা।তারা দেখলে সমস্যা নেই।
একমাত্র তুমি চিনো,তুমি পারবেনা এ কাজ?’

‘কিন্তু ওর সাথে এমন লুকোচুরি কেন?বিয়ের পরে তো দেখা হয়েই যাবে’
‘তুমি জানো, তিথি আমার কথা শুনলে বিয়েটা কখনওই করবেনা’
‘কেন করবেনা ভাইয়া?আপনি তো এখন ওয়েল সেটেলড্।সে রাজি হয়ে যাবে।বলে দেখুনই না!’
ইশান হাসে।খাবারের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বলে,’সব শুনলে রাজি তো হবেই!কিন্তু আমি চাইনা সে জানুক।আশা করি তুমি আমার এই অনুরোধ রাখবে’

তানিয়া মাথা নাড়ে।এরপর বলে ওঠে,’আপুকে অনেক ভালবাসেন তাই না?’
ইশান তার ফোনে একটা ভিডিও দেখছিল তখন।সম্ভবত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।তিথি তার বাসা থেকে বের হচ্ছে আর তার নামার সিঁড়িতে কেউ একজন তেল ঢালছে।
সেটা দেখে ইশান হাসলো এরপর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’হ্যাঁ,অনেক বেশি ভালবাসি’

তিথিকে হাসপাতালে এনে বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে আর তার ডান পা উপরে তোলা।
আগামী বিশ/বাইশ দিনের মতন তার পায়ে এই ব্যান্ডেজ এবং চোট,দুটোই থাকবে।
তিথি বারবার বলছে সিঁড়িতে তেল ছিল,তেল আসলো কি ভাবে,তদন্ত করতে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৯

কিন্তু কেউ তার কথার পাত্তা দিচ্ছেনা।সকলে ওর বিয়ের কথা নিয়ে চিন্তা করছে। ছেলে নাকি জাপান চলে যাবে পঁচিশ দিন পর।সে এর আগে বিয়ে করে নিতে চায়।
তিথি গাল ফুলিয়ে রাখলো আর পা টার দিকে চেয়ে রইলো।তার কাছে কেমন যেন পরিকল্পিত মনে হচ্ছে সব।

যদি তুমি বলো পর্ব ১১