যদি তুমি বলো পর্ব ১১

যদি তুমি বলো পর্ব ১১
আফনান লারা

তিথির বেশ ভালমতন মনে আছে সিড়িতে তেলজাতীয় কিছু একটা ছিল,যাতে পা রাখতেই সে পড়ে যায় এত উপর থেকে।
কয়েকদিন ধরে ওর সাথে সব খারাপই হচ্ছে।মনে হয় যেন জীবনে কুফার আগমন ঘটেছে।
ওমনি তিথি শুনতে পেলো তার ভাঙ্গা পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করছে।তিথিকে তানিয়ার কাছে রেখে সকলে মিলে নাকি আজ পাত্রের বাড়ি যাবে।

তিথি ইশান নাম শুনে সন্দেহ করলেও পরে যখন শুনলো ছেলে ব্যবসায়ী তখন আর সন্দেহ রাখেনি।তবে রিদমকে বলেছে আসার সময় একটা ছবি তুলে আনতে।সে দেখবে ছেলেটা দেখতে কেমন।
তানিয়াকে তিথির কাছে রেখে সকলে মিলে ইশানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
যেতে প্রায় দু ঘন্টার মতন লেগে যায় তাদের।এর কারণ হলো তারা মেইন রোড দিয়ে এসেছে।আর মেইন রোডে ছিল প্রচুর জ্যাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ইশানদের বাসার ভেতর ঢুকে তারা তো সবাই অবাক।এত বড় বাসার ছেলের জন্য কিনা তাদের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এসেছে!
কিন্তু বাসায় ঢুকে তারা কোথাও ইশানের মাকে দেখে নি।তারা জানতো বাসায় কেবল ইশানের মা আর দুটো বোন থাকে।তবে বোনদের দেখলেও মায়ের অনুপস্থিতি তাদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া করছিল। তখন ইশানের খালা এসে তাদের আপ্যায়ন করতে করতে জানান ইশানের মা একটু অসুস্থ,তিনি ঘুমাচ্ছেন।বেলা এগারোটার সময় তিনি ঘুমাচ্ছেন,মেয়ে পক্ষের মানুষ আসার পরেও আসলেন না। এসব তাদের মাথার ভেতর চরকির মতন ঘুরছিল তাও তারা খালাদের মিষ্টি ব্যবহারের কাছে হার মেনে সকলে সোফায় এসে বসলেন।

তামিয়া এবং ইকরা এসে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। ইশান বলেছিল তামিয়াকে থাকতে।কিন্তু তিথি থাকলে সে যেন ধারের কাছেও না থাকে।কারণ তিথি ওকে চিনে ফেলতে পারে।
ইশান নিজেই নেই বাসায়।আসতে কিছু সময় লাগবে।সবাই বাসা দেখতে ব্যস্ত। সাথে ইশানের খালারা তো আছেনই,ননস্টপ বকবক করেই চলেছেন।
মিসেস শায়লা করিডোর দিয়ে যাবার পথে দেয়ালে কিছু দাগ দেখে থেমে যান।এরপর বলেন,’এখানে মনে হয় ছবি রাখা ছিল, তাই না?’

‘হ্যাঁ,ফ্রেম ঠিক করাতে সরানো হয়েছে।ঐ আর কি”
খালারা তিথি না আসার কারণ ও জানতে চাইলেন।তখন বাবা তিথির দূর্ঘটনার কথা জানান সবাইকে।
সব কথা শেষে জনাব সুলতান ইশানকে দেখতে চাইলেন।ঠিক সেইসময় ইশান এসে উপস্থিত হয় সেখানে।সালাম দিয়ে সবার মাঝে গিয়ে বসে সে।

ইশানকে চোখের দেখা দেখে তিথির বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।এবারের ছেলেটা সব দিক দিয়েই পারফেক্ট।
ইশানের বাসা,ব্যবসার সব কথা শুনে তিথির বাবার মনে ভয় জেগে উঠলো যৌতুক দেয়া নেওয়া নিয়ে।এটাই মোক্ষম সময় বলে তিনি ইশানের সামনেই কথাটা পেশ করলেন।জানতে চাইলেন তার কোনো চাহিদা আছে কিনা।
ইশান তখন কথাটা শুনে মুচকি হাসলো এরপর বললো,’চাহিদা একটাই।আপনাদের মেয়েকে দিয়ে দিবেন একেবারে’
এটা বলে সে উঠে চলে যায়।রিদম ইশানদের ছাদে চলে গিয়েছিল।ইশানের ছবি তোলার কথা তার মনে নেই।যখন তার মনে পড়লো তখনই সে ছুটে আসলো বাসায়।ইশান তখন তার রুমে গায়ের শার্ট খুলছিল।রিদম লুকিয়ে তার কয়েকটা ছবি তুলে পালিয়ে যায় ওখান থেকে।

তানিয়া ফোনে রকিবের সাথে কথা বলছিল আর তিথি তার পা টাকে নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করছে।জীবনে কখনও তার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি।হঠাৎ করে সব যেন একসাথে ঘটে চলেছে।এর কারণ টা কি!
‘কোনো সিক্রেট লাভারের উদয় হলো নাকি?কিন্তু সমস্যা হলো সিক্রেট লাভার হলে সে আমায় সিঁড়ি দিয়ে ফেলছে কেন?
এটা মনে হয় সিক্রেট এনিমি’

তানিয়া রকিবের সাথে কথা বলতে বলতে অন্য কেবিনে চলে গেছে।এরই মধ্যে সেখানে এসে হাজির হয় একজন ডাক্তার।তিনি তিথির অনুমতি ছাড়াই ওর পায়ের ব্যান্ডেজটা চেক করছিলেন। অনেক দেখাদেখির পর্ব শেষ করে তিনি চেঁচিয়ে নার্স ডাকলেন।এরপর বললেন এত কম দামী ব্যান্ডেজ কেন লাগানো হয়েছে।এটা বলে ধমকে নার্সকে দিয়ে ভাল মানের একটা ব্যান্ডেজ আনিয়ে পুনরায় ব্যান্ডেজ খুলে সেটা লাগিয়ে দিলেন ।তিথি চুপচাপ দেখছে সব।
‘কাহিনী তাহলে এটা!আমায় পাহাড় থেকে ফেলে দিবে,তারপর পাহাড়ের তলা থেকে কুড়িয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাবে।কি অদ্ভুত মানুষ!’

তিথিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাক্তার থতমত খেয়ে ঐ জায়গা থেকে চলে যাওয়া ধরতেই তিথি বলে উঠে ‘থামুন! শুধু একবার বলেন সাধারণ ব্যান্ডেজ আর দামী ব্যান্ডেজের তফাৎ কি?’
ডাক্তার পেছনে ফিরে হাসি দেয়।এরপর বলে,’আপনাকে বলা প্রয়োজন বোধ করছিনা’
এটা বলে তিনি হাওয়া।তিথি এবার নিশ্চিত হলো এটাকে নিশ্চয় সেই লোক পাঠিয়েছে যে এসব কিছুর পেছনে দায়ী।নরমাল ডাক্তার হলে তিথির প্রশ্নের জবাব দিতো!

ইশানদের বাসায় আজ তিথির পরিবারের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।এত সময় হয়ে যাবার পরেও ইশানের মায়ের দেখা মিলছেনা বলে এতক্ষণ মনে মনে হাঁশপাঁশ করলেও সুলতান সাহেব শেষমেশ কথাটি বলেই ফেললেন।
ইশানের মাকে একবার আসতে বললেন।কথাটা পাশের রুম থেকে ইশান ও শুনলো।সে তখন হাতে ঘড়ি পটছিল।
ঘড়িটা পরতে পরতে সে সোজা মায়ের রুমে আসে।

মা অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছেন।
ইশান চেয়ার একটা টেনে নিয়ে মায়ের মুখের সামনে বরাবর বসে।
মা ওকে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললেন সাথে সাথে।
ইশান তখন বললো,’তুমি ঘুমাচ্ছো না।যদি ঘুমিয়ে থাকতে তাহলে পা নাড়তে না এতো!ওদের সামনে যাচ্ছো না কেন মা?’
‘আমি মুনিয়ার সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই।অন্য কোনো মেয়ের সাথে না।আর সে মেয়ে যদি হয় তিথি তবে তো জীবনেও না’

‘তিথি আমার উপযুক্ত ‘
মা উঠে বসে ধমকে বললেন,’১১ বছর আগে যখন তুই ঐ মেয়েকে পাগলের মতন ভালবেসেছিলি,সে কি করেছিল মনে নেই তোর?
তোর এই মাকে কত কাঁদিয়েছিল, মনে নেই তোর?’
‘মনে আছে মা’
‘তাহলে কেনো সেই মেয়েকেই তুই ঘরের বউ করে আনতে চাইছিস বাবা?কেন?সে তোর যোগ্য না’
‘যোগ্য।তবে সে যেটা করেছে তার শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে আমি এ জীবনে হারিয়ে ফেলবো।আমি একবার তাকে চেয়েছি,পাইনি।এরপর কত শ্রম করে এখন এই জায়গায় পৌঁছে তাকে আমি একবার মাত্র চেয়েই পেয়ে যাচ্ছি।।।।। ‘

‘তো?তার যে অপরাধ ছিল সেটার কি হবে?’
‘সেটার শাস্তি ও সে পাবে।তুমি এত ভেবোনা মা।তুমি একবার ওদের সামনে যাও।ওরা তো কোনো দোষ করেনি’
‘করেছে!মেয়ে যেরকম,তার পরিবার ও সেরকমই হবে’
‘ওরা অনেক ভাল।ট্রাস্ট মি!একবার আসো!
ইশান জোর করে মায়ের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো।এরপর ওনাদের কাছে নিয়ে আসলো আবারও জোর করে।
সুলতান সাহেব ইশানের মাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন।ওনাকে তাদের সাথে বসে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট ও করলেন তিনি।

মিসেস আরাফাত গাল ফুলিয়ে ইশানের সাথে বসেন ওখানে।
ইশান তখন বলে তার মা একটু অসুস্থ। সবাই যেন খাবার খাওয়া শুরু করে।
খাবারের এক সময়ে তিথির বাবা হঠাৎ জানতে চাইলেন ইশানদের গ্রামের বাড়ি কোন জায়গায়।তখন ইশান বললো,’মিসরিপুর।’

‘মিসরিপুর?কি বলো!আমরাও তো সেই গ্রামের।তোমার বাড়ি কোন দিকে?’
‘মিসরিপুরের পশ্চিমে মওলানা বাড়ি’
‘চিনিনা,তবে হয়ত গেলে দেখলে চিনবো।আরেহ বাহ!আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি আমাদের গ্রামের ছেলে হবে।অবিশ্বাস্য ব্যাপার!’
রিদম ইশানের ছবিগুলো গ্যালারিতে দেখতে দেখতে হাসছিল।সে গিয়ে তিথিকে দেখিয়ে টাকা খাবে।সেই ভাবনাতেই তার মন আকুপাকু করছে এখন থেকে,কেবল টাকা খাবে বলে।

তিথি পায়ের ব্যান্ডেজটা নাড়তে নাড়তে হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।
সে মুচকি হাসি দিয়ে নার্সকে ডাক দেয় উঁচু স্বরে।তখন নার্স আসতেই সে জানায় তার বার্থডে কেক খেতে ইচ্ছে করছে,তার এই আবদারের কথা শুনে অন্য কোনো নার্স হলে ঝাড়ি দিতো আর নয়ত পরিবারের লোককে ডাকার কথা বলতো।কিন্তু এখানে হলো তার উল্টো।নার্স ওর কাছে জানতে চাইলো সে কি ফ্লেভারের কেক খাবে।

যদি তুমি বলো পর্ব ১০

তিথি মনে মনে জানতো এমন কিছুই হবে।তখন সে স্ট্রভেরি ফ্লেভারের একটা কেক আনতে বলে।তার কথা শুনে নার্স চলে যায়।
তিথি ভাবছে আর কি অর্ডার দেয়া যায়।এমন কিছু করতে হবে যাতে করে ঐ নার্স বিরক্ত হয়ে যায় তারপর তার স্যারকে কল দিয়ে বিষয়টা জানায়।এরপরই তার স্যার নেক্সট পদক্ষেপটা নেবে!সেও প্রস্তুত।দেখা যাক পানি কতদূর গড়ায়!

যদি তুমি বলো পর্ব ১২