যদি তুমি বলো পর্ব ১২

যদি তুমি বলো পর্ব ১২
আফনান লারা

নার্সকে তিথি তার মনের মতন বিরক্ত করে ছেড়েছে।শেষে বাধ্য হয়ে নার্স ইশানকে কল করলো।
ইশান এসব শুনে ভাবছে তিথি তো এরকম মেয়ে নয়।তবে সে কেন করছে এসব।তাই সে নার্সকে বললো তিথিকে ধরে সিট থেকে নামিয়ে ফ্লোরের সিটে বসিয়ে দিতে।

নার্স ও ওর কথামতন দুজন লোক ডেকে ওকে ধরে নিচে সিট বিছিয়ে বসিয়ে দিলো।সেইসময় তানিয়া এসে বলো,’আজব তো!এটা কেমন ব্যবহার আপনাদের?এটা কি সদর হসপিটাল যে সিট বুক হয়ে গেলে রোগী ধরে নিচে নামিয়ে দিবেন?আমি এখনই ডাক্তারকে ইনফর্ম করছি!’
এই বলে তানিয়া চলে গেলো ডাক্তারের চেম্বারে।তিথি গালে হাত দিয়ে ভাবছে এটা নিশ্চয় সেই লোকের অর্ডার ছিল।
এরই মাঝে আরেকটা লোক এসে তিথির খাবারের সব বাটি,গ্লাস নিয়ে চলে গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি মুচকি হাসি দিয়ে বালিশটা ধরে বললো,’নিন এটাও নিয়ে যান।খয়রাতি সব! ‘
ইশান কলে থেকে শুনছে সব।কথাটা তার গায়ে লাগলোনা।সে তার পরিকল্পনা মতেই কাজ করছিল,এবং করবেও!
তানিয়া কেবিনে ঢুকে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয় তাও কেউ কোনো রেসপন্স দিলোনা।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। এমন কি সয়ং ডাক্তার ও তার কথায় কোনো জবাব দিচ্ছেন না।

তানিয়া বিরক্ত হয়ে এবার বাবার নাম্বারে কল দেয়।বাবার ফোন সাইলেন্ট ছিল।বিশেষ একটা কাজে এসেছেন,তার মাঝে অফিসের লোকেরা কল দিয়ে দিয়ে জ্বালাচ্ছিল বলে তিনি ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছেন।
এরপর সে কল দিলো মায়ের নাম্বারে।মায়ের ফোন নির্ঘাত রিদমের কাছে।আর রিদম নির্ঘাত গেমস খেলছে।মায়ের ফোনে যখন সে গেমস খেলে তখন বাহিরে থেকে কল আসলে কলটা ঢুকেনা।এখনও হয়েছে তাই।
তানিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে তিথির কাছে ফিরে আসে।

তিথি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে।তানিয়া এসে দেখে ওরা সিট শুদ্ধু নিয়ে চলে গেছে।সে বড়ই অবাক হলো।এরকম ব্যবহারের কারণ কি?
তখন একজন নার্স এসে তানিয়ার হাতে লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন।যাতে সিটের ভাঁড়া সহ আরও অনেক খরচাপাতি লেখা আছে।ওরা এখনও এক টাকাও পরিশোধ করেনি।
তানিয়া গাল ফুলিয়ে নিজের ব্যাগ চেক করে দেখে পাঁচশ টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেই।এদিকে রিসিটে অনেক টাকা লেখা আছে।

তিথি সেইসময় তানিয়াকে বললো সে যেন একটা সিএনজি ডেকে এনে ওকে বাসায় নিয়ে যায়।এখানে থাকলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তানিয়ার কাছে এই বুদ্ধিটা ভাল লাগলো।সে সিএনজি ডেকে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।বাসায় ঢুকতেই বাবার কল আসে।বাবা তানিয়ার এতগুলো কল দেখে চিন্তায় এখন কলব্যাক করেছেন।
‘কিরে মা।কল দিয়েছিলি?তিথির কি অবস্থা?’

‘টুকুকে নিয়ে আমি বাসায় চলে এসেছি।আর বলো না বাবা,এত রিডিকুলাস হসপিটাল।আর জীবনে আমি যাব না ওখানে।তোমরা বাসায় আসো তারপর বলছি!’
তিথি ভাবছে তার খুশি হবার কথা নাকি কান্না করার কথা।এ কেমন ফ্যাসাদে পড়ে গেছে সে!
একটা লোক তার জীবনে ঢুকে একবার তার উপকার করছে তো আরেকবার তার সর্বনাশ!কি তার উদ্দেশ্য? নিশ্চয় মানসিক কোনো রুগী হবে!

ঘন্টা খানেকের মাঝামাঝি সময়ে তিথির পরিবার আবার বাসায় চলে এসেছে।রিদম এসেই ছুটলো তিথিকে ছেলের ছবি দেখাবে বলে।
‘টুকু দেখো, তোমার বরের ছবি তুলে এনেছি।পুরাই রিত্তিক রওশান’
তিথি হাত বাড়ালো ফোনটা নেবার জন্য তখনই তানিয়া ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়।তারপর বলে,’আগে শালি দেখবে’
এটা বলে সে ইশানের তিনটা ছবি পায়,সাথে সাথে ঐ তিনটাই ডিলেট করে দেয় সে।তারপর বলে,’ইশ রে চাপ লেগে সব ডিলেট হয়ে গেলো’

রিদম তখন রাগ করে বলে সে অনেক কষ্টে ছবি গুলো তুলেছিল।তানিয়া এরকম কেন!
তানিয়া কানে হাত দিয়ে সরি বলে।তিথি ও আর কৌতুহল দেখায় না।তার কৌতুহল অন্য কাউকে নিয়ে।সে ঐসবই ভাবছিল।তখন রিদম ওর পাশে বসে বলে,’টুকু জানো?ছেলেরা মস্ত বড়লোক।আমাদের কত কি খাইয়েছিল, জানো?রকিব দুলাভাইয়ারা আসায় ও আমরা এত কিছু খাওয়াই নাই।ওরা প্রথম দিনেই যা খাইয়েছে।সবই ভাল লাগছে কিন্তু তোমার শাশুড়ি কেমন যেন বাংলা সিনেমার রিনা খানের মতন’

‘বাড়িতে ওরকম একটা দুইটা থাকবেই’
এই বলে তানিয়া রিদমকে উঠিয়ে রুম থেকে বের করিয়ে দিলো।এরপর তিথির পাশে বসে বললো ‘ছেলে কিন্তু খুব সুন্দর টুকু।কোনো মতেই মানা করোনা’
‘সুন্দর দিয়ে কি হবে?আদিল ও সুন্দর ছিল’
‘আহা ঐ গাধার সাথে মেলাচ্ছো কেন?সে তো তোমার সাথে বিয়ে বাদে সব করতে চেয়েছিল।কিন্তু এই ছেলেটা সোজা বিয়ে করতে চায়।ইশ কত্ত কিউট!’
তিথি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে ভাবছে লোকটার পরের প্ল্যান কি হতে পারে।

ইশান তার বারান্দার গ্লাস বাহিরে দিয়ে লাগিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুর হিসাব মিলাচ্ছিল সে।
হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে দেখে তামিয়া গ্লাস ধাক্কাচ্ছে।
ওকে দেখে ইশান দরজার লক খুলে।তামিয়া ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,’কিরে?এত চিন্তা কিসের?’
‘কই।কোনো চিন্তা নেই তো’

‘তোকে আমি চিনবোনা?তুই যে কেবল চিন্তা থাকলেই এখানে এসে বারান্দা লক করে দাঁড়িয়ে থাকিস, তা আমি জানি।আচ্ছা যাকে ঘিরে এত চিন্তা তাকে ছেড়ে দিলেই তো পারিস।তোর কি সুন্দর জীবন কাটাতে ইচ্ছা করেনা?জেনেশুনে আবারও একই ভুল করছিস!’
‘আপু আমি ওকে বিয়ে করলেই জীবনটাকে সুন্দর করতে পারবো’
‘তাহলে কেন এত চিন্তা?’

‘তাকে চোখের সামনে শাস্তি পেতে দেখার জন্য আমাকে তৈরি হতে হবে।মনে হচ্ছে আমি তৈরি না।’
‘শাস্তি দিতে না চাইলে দিস না। ক্ষমা করে দিলেই তো হয়’
‘নাহ।শাস্তি তাকে পেতে হবেই।এত কিছু কেন করলাম যদি সে তার ভুলটাই বুঝতে না পারে!’
তামিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।আর কিছুই বললোনা।তার যেভাবে ভাল লাগে সেভাবেই কাজ টা করুক।বাধা দেয়া কিংবা উপদেশ দেয়ার আর প্রয়োজন নেই।

মা বাবা সকলেই পাত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তিথি সব শুনছে আর একটা বই পড়ছে।তিথি এমনিতে বই পড়েনা,কিন্তু যখন সে অতিমাত্রায় বোর হয়ে যায় তখন বই হাতে নিয়ে পড়ে।
বইটা পড়তে পড়তে তার মনে হলো যে তার সাথে গেমস খেলছে তার সাথে ওরও গেমস খেলা উচিত।ওমনি তিথি তার পেছনে বারান্দার দিকে তাকায়।এরপর রিদমকে ডাক দেয়।

আসার সময় ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে আসতে বলে।রিদম আপেল খেতে খেতে ছুরিটা এনে ওকে দিয়ে বললো,’ব্যান্ডেজ কাটবা নাকি টুকু?’
‘নাহ।যা তোর কাজে যা’
রিদম মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।তিথি জানালার কাছের পর্দাটা টান দিয়ে সরিয়ে দেয়।এরপর বাসার সামনের সেই বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছুরিটা উপরে করে তোলে।এরপর ঘুরাতে থাকে।

‘গুড ইভেনিং স্যার’
‘ইভেনিং,,বলো শাকিল।’
‘স্যার তিথি ম্যাডাম দশ মিনিট ধরে একটা ছুরি হাতে নিয়ে শুধু ঘুরিয়ে চলেছে।আমি বসে বসে হোমওয়ার্ক করছিলাম।হঠাৎ নজরে আসলো।তাই আপনাকে কল দিয়েছি’
‘ঘুরাচ্ছে?আর কিছু করছেনা?’
‘এবার মনে হয় করবে!স্যার!!!ও মাই গড,মনে হয় করে ফেলছে!’
‘কোপ বসিয়ে দিয়েছে বুঝি?’
‘মনে হয় স্যার।আচ্ছা,ম্যাডাম কি পাগল হয়ে গেছে?’

ইশান হাসলো।হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে বললো,’তোমার ম্যাডাম মনে করছে আমি তাকে কয়েক মাস ধরে চিনি।তাই সে আমার সাথে গেমস খেলতে চাইলে আমিও প্রতিযোগিতায় নেমে যাবো।’
‘স্যার আপনি হাসছেন কেন?আমার কাছে সব কিছু অস্বাভাবিক লাগছে’
‘তুমি রুমের পর্দা টেনে হোমওয়ার্ক করো।তিথি বসে বসে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, সে পরীক্ষা করছে আদৌ তার উপর নজর রাখা হচ্ছে কিনা।তাকে আমরা প্রমাণ করে দিব তার উপর নজর রাখা হচ্ছেনা।বুঝলে?এবার তোমার কাজ করো’

তিথি অনেকক্ষণ যাবত এইসব করেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে ছুরিটা রেখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবছে তার কি কোনো ভুল হয়ে গেলো?
রিদম দরজা ফাঁক করে তিথির এই কার্যকলাপ দেখছিল এতক্ষণ।সব দেখা শেষ করে চুপটি করে সে চলে গেছে বাবার রুমে।বাবা ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বিছানায় শুয়েছিলেন।রিদম লাফ দিয়ে খাটে উঠে বাবার কানের কাছে বললো,’টুকু পা ভাঙ্গার সাথে সাথে মাথাটাও ভেঙ্গে ফেলেছে ড্যাড’

‘তোকে কতদিন বলছি আমাকে ড্যাড বলবিনা।তোর এই ড্যাডকে আমার ডেট মনে হয়।ডেট মানে হলো তারিখ।তারিখ মানে মনে করিয়ে দেয় আমি বুড়ো হচ্ছি।দুটো মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি’
‘ওকে ড্যাডি’
‘আবার বলে ড্যাডি।তোর এই ড্যাডি শুনলেই আমার মনে হয় বেডি।নিজেকে বেডি বেডি লাগে তখন।আমার ঠোঁট গোলাপি বলে তুই আমাকে বেডি বলে মজা নিবি? ‘
‘ওকে বাবা বলবো।এবার তো শুনো’
‘বল’

যদি তুমি বলো পর্ব ১১

‘টুকুর মাথা ভেঙ্গে গেছে’
‘মাথা ভাঙ্গে কেমনে?ফোন টিপে টিপে তুই তোর মাথা নষ্ট করছোস এখন দোষ দিচ্ছস আরেকজনের?’
‘ওহ রাইট।মাথা ভাঙ্গে না,নষ্ট হয়। টুকুর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে’

যদি তুমি বলো পর্ব ১৩