যদি তুমি বলো পর্ব ১৩

যদি তুমি বলো পর্ব ১৩
আফনান লারা

তিথি রাগ করে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে গেছে।এমনিতেও তাকে যে ইনজেকশান দেয়া হয়েছে।এই ঘুমে সে কাল সকাল ছাড়া উঠতে পারবেনা।
তিথিকে এভাবে ঘরে বসিয়ে রাখার জন্যই ইশানের এই প্ল্যান ছিল।যাতে করে তাকে পাত্রের সাথে একাধিক বার সাক্ষাৎ করার কথা না ওঠে।

যে একবার দেখা হবে সেটা ইশান ম্যানেজ করে নিতে পারবে।
আপাতত নরমাল একটা অনুষ্ঠান হবে।পরে বড় করে করে করা যাবে,এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় দু পক্ষ।এবার তিথির বাবার একটাই রিকুয়েস্ট তা হলো তিথি ওকে দেখে মতামত দিবে।তিথি যদি হ্যাঁ বলে তবেই বিয়েটা হবে।আর নয়ত বিয়েটা এখানেই শেষ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথির মতামতকে সবসময় গুরুত্ব দেন জনাব সুলতান।এবারও এর নড়চড় হবেনা।
যেহেতু তিথির পায়ের সমস্যা, সে হেঁটে কোথাও যেতে পারবে না তাই ঠিক করা হলো ইশান নিজে আসবে বাসায়।
ইশান রাজি ও হলো।তানিয়া ভাবছে এবার তো ধরা খাবে সে।আপু তো ইশানকে দেখলেই হাঙ্গামা করবেন।
এইসব ভাবতে ভাবতেই তার কটা দিন কাটছিল।এদিকে ইশান বিন্দাস তৈরি হয়ে এসেছে তিথির সাথে দেখা করতে।

সোফায় ইশান এবং তার বন্ধু আরিয়ান সহ বসে আছে।সুলতান সাহেব বললেন ইশান যেন তিথির রুমে যেয়ে ওর সাথে কথা বলে।ইশান রাজি হয়ে উঠে দাঁড়ায়।আরিয়ানকেও ইশারা করে।তানিয়া তখনও জানেনা ইশানের আসলে প্ল্যান টা কি।
সে চুপটি করে সব দেখছে।ইশান তার বন্ধু আরিয়ানকে নিয়ে তিথির রুমে আস্তে আস্তে প্রবেশ করেছিল।তিথির বাবা রান্নাঘরের দিকে যেতেই ইশান থেমে যায়।

ভেতরে ঢুকে শুধু আরিয়ান।ইশান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।তানিয়া মুচকি হাসি দিয়ে সেও ভেতরে ঢুকে।আরিয়ানকে দেখে তিথি সালাম দেয়।আরিয়ান সালাম নিয়ে ওর সামনে চেয়ারে বসে।এরপর সে প্রশ্ন করে তিথি বিয়েতে রাজি কিনা।তিথি তখন বলে তার বাবা মা যেটা বলবেন সেটাই হবে।আরিয়ান মাথা নাড়ায় এরপর আবারও বলে তিথির কিছু জানার আছে কিনা।

আরিয়ান ছিল শ্যাম বর্ণের লম্বা চওড়া একটা ছেলে।ইশানের সাথে তার সম্পর্ক এই তো কয়েক বছরের।ইশান তাকে এই কাজে হেল্প করার জন্য অনেক রিকুয়েস্ট করায়।তাই সে রাজি হয়ে আজ এখানে এসেছে।
তিথি কিছুই বলেনা।অপরিচিত একটা ছেলের সামনে বসে তার আর কি বলা উচিত সেসব নিয়ে ভাববার পরিস্থিতিতে সে নেই।

আরিয়ান বলে,’ভেবে নিন।এটাই কিন্তু শেষ দেখা’
‘শেষ দেখা মানে?’
‘মানে ঐ তো বিয়ে ছাড়া আর দেখা হবেনা আমাদের’
‘এত ভাববার কিছু নেই।দু পরিবারের মতামত ও জরুরি’
আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে উঠে চলে যায়।যাবার সময় তিথির সামনে একটা ছোট্ট ঝুড়ি ভর্তি চকলেট রেখে যায়।ইশান এনেছিল এটা।

তিথি বসে বসে আরিয়ানের চলে যাওয়া দেখে চুপচাপ।
আরিয়ান বের হয়ে ইশানকে বলে,’ভাবী কিন্তু দারুণ’
ইশান কিছুই বলেনা। ওকে নিয়ে আবারও সোফায় এসে বসে তারা।বাবা নাস্তার ব্যবস্থা করেছেন।
নাস্তা খেয়ে তারা চলে যাবে।ইশান বলেছে বাসায় গিয়ে বিয়ের তারিখ সম্পর্কে আলোচনা করবে তারা।
তিথির বাবার মত ছিল এঙ্গেজমেন্ট টা আগে হয়ে যেতে।কিন্তু ইশান রাজি হয়নি।সে চায় একেবারে বিয়ে।
তাই তিনিও আর জোরজবরদস্তি করেন নাই।ছেলের ও তো কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকতে পারে।
তিথি আনমনে বসে থাকে সারাদিন।তার কেন যেন বারবার মনে হয় বিয়েটা হওয়া ঠিক হচ্ছেনা।এখনই বিয়ের কি খুব প্রয়োজন ছিল?

আদিলের সাথে রাগ করে সে বিয়েটাতে শুরুতে নেচে নেচে মত দিয়ে দিলেও এখন তার খুব খারাপ লাগে।
আদিলের জন্য নয়,বরং নিজের জন্য।সে একটু একা কটা বছর থাকতে চায়।নিজেকে শক্তপোক্ত করে তারপর নাহয় বিয়ের পিড়িতে বসবে, এত তোড়জোড়ের কি দরকার!
আবার বাবা মায়ের মুখে এত রাশি রাশি হাসি দেখে তার আর বিয়েতে অমত দিতে সাহস হয়না।তারা কত খুশি।এই খুশি সে নষ্ট করবে?
পনেরো দিনের মাথায় তিথির পা একটু একটু ভাল হয়ে উঠলো।এখন সে হাঁটতে পারে। তবে ছুটতে পারেনা।চাপ লাগলেই ব্যাথা আগের মতন।

এদিকে ইশানের রুমটাকে রেনোভেট করা হচ্ছে তার আদেশেই।
নতুন আলমারি,নতুন ওয়ারড্রব।
মুনিয়ার চোখে পানি থাকে সারাক্ষণ ।এ রুমটা তার হবার কথা ছিল,অথচ এখন তার চোখের সামনে অন্য কারোর হবে।
ইশান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে ছিল।তখন ওর পাশে আরিয়ান এসে দাঁড়ায়।সেও বিছানার দিকে চেয়ে বলে,’কি হিরো?বিছানা নিয়ে কি ভাবছো মনে মনে?
আচ্ছা তুই এত অশ্লীল কেন রে ভাই?’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে।আরিয়ান ওকে আবারও নিজের দিকে ফিরায় এরপর বলে,’আচ্ছা তুই নাকি তিথিকে অনেক আগ থেকে চিনিস?’

‘হ্যাঁ।’
‘ওহ হো।তিথিকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিস?’
‘হ্যাঁ।বিরাট বড় সারপ্রাইজ সে পাবে’
‘তোরা বড়লোকেরা এসব নিয়েও এমন ফাজলামি করিস!আমি ভাই সাধারণ একটা বিয়ে করে নিয়েছি।আমার এত সারপ্রাইজ দেয়ার ইচ্ছে নেই।আমি অনেক লম্বা দেখে আমার বউ এমনিতেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছিলো।’
এটা বলে সে হাসতে হাসতে চলে গেলো আন্টির কাছে।এই সুন্দর পরিপাটি রুমটা দেখে ইশানের মনে এক আক্রমণাত্মক চিন্তা ভাসছিল।কি করে সে এই রুমেই সব প্রতিশোধ নেবে সেটা!

বিয়ের আর দুইদিন বাকি।কথা ছিল ইশান,তার মা এবং তিথি তানিয়াকে সাথে নিয়ে বিয়ের শপিংটা করা হবে।কিন্তু ইশান এবং তার মা নাকি আসবেনা।ইশানের খালা দুইজন মিলে শপিংটা করাবে।
তিথি ভেবেছিল বিয়ের আগে দেখা করার শেষ সুযোত
আরিয়ানের(ইশানের) সাথে আরও কথা বলে নিবে কিন্তু তাও আর হলোনা।
ইশান বলেছে সে আসবেনা,কিন্তু সে ঠিকই এসেছে।সেও তিথিকে অনেকদিন দেখেনা বলে একবার চোখের দেখা দেখার জন্য ছুটে এসেছে এতদূর।

তিথি শাড়ী একটাতে হাত রেখে দেখে তার দাম বিশাল।তাই সে শাড়ীটা সরিয়ে অন্য শাড়ী দেখতে থাকে।তখন ইশান তানিয়াকে কল দেয়।
‘হ্যালো ভাইয়া’
‘বেগুনী রঙের শাড়ীটা বুক কর’
‘কিন্তু কোন?ওটা তো রেখে দিয়েছে’
‘মানুষ পছন্দ নাহলে দাম দেখেনা।সে দাম দেখেই রেখে দিয়েছে।’
তানিয়া তখন শাড়ীটা তুলে বলে,’ভাইয়া আমরা এটাই নিবো’
‘আরে রাখ এটা।দাম দেখেছিস?’

‘ভাইয়া বলছিল দাম নিয়ে ভাবতে না।ওরা তো আরও বেশি বাজেট রেখেছে’
খালা বেগুনী রঙ দেখে বললেন,”বিয়ের শাড়ী হবে টকটকা লাল।বিয়ের শাড়ী কি বেগুনী হয়?না না।এটা বাদ।অন্য রঙ দেখো’
তিথি তখন তানিয়াকে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে শাড়ীটা সরিয়ে দেয়।
এরপর খালার ফোনে একটা কল আসে।
‘হ্যালো ইশান, কিরে বাবা?কি হয়েছে।হঠাৎ কল দিলি?’
‘বেগুনী শাড়ীটা কিনে নাও’
খালা হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন আশেপাশে ইশান আছে কিনা এরপর বললেন ‘মানুষ বিয়েতে বেগুনী পরেনা তো বাবা’

‘এখন থেকে পরবে। আমি চাই আমার বিয়ের সাজ বেগুনী হোক’
খালা আর কি করবেন।শেষমেশ বেগুনীটাই কিনে নিলেন।তানিয়া শাড়ীটা বারবার ধরে ধরে দেখছে।
তারা দোকান থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল সেসময় দোকানদার ছুটতে ছুটতে এসে তানিয়ার হাতের শাড়ীর ব্যাগটা ধরে আটকায়।
‘ম্যাম উই আর রিয়েলি ভেরি সরি।আসলে এই শাড়ীটা অলরেডি বুকড্ ছিল।আমাদের কর্মচারীরা জানতোনা।এটা আপনারা নিতে পারবেন না’
খালা তখন বললেন তাহলে অন্য শাড়ী দেখান।

তিথি মন খারাপ নিয়ে অন্য একটা শাড়ী দেখতে বসে।ইশান মিটমিট করে হাসছে।সে জানে এই শাড়ীটা অলরেডি বুকড্।একটা কাপল এসে শাড়ীটা বুক করে গেছিলো।সে নিজের চোখে দেখেছে তারা এটিএম বুথ থেকে শাড়ীর টাকা তুলতে কাছের একটা রোডে গেছে।ইশান সব জেনে শুনেই শাড়ীটা ওদের দিয়ে কিনিয়েছে।তিথিকে সে খুশি করাবে আবার সব কেড়েও নিবে।

যদি তুমি বলো পর্ব ১২

তিথি মন খারাপ করে অন্য একটা লাল শাড়ী কিনে নেয় শেষে।
তার কষ্টটা যাচ্ছেই না।ঐ সুন্দর শাড়ীটার কথা ভেবে মন চাইছে শাড়ী কেনা লোকগুলো থেকে কিনে নিয়ে আসতে,ইশ ওরা যদি দিতো!
সব সুন্দর জিনিস গুলো এক পিসই থাকে দোকানে!আরেক পিস রাখলে কি এমন হতো?’

যদি তুমি বলো পর্ব ১৪