বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২
জাওয়াদ জামী

সকালের রান্না শেষ করে, বাবাকে খাইয়ে বেড়িয়ে পরে মেয়েটি। গন্তব্য ‘ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে’ র ছোট্ট অফিসটিতে। প্রায় আধাঘন্টা রাস্তা পায়ে হাঁটার পর একটা অটোতে উঠে। ওরও আধাঘন্টা লাগবে অফিসে পৌঁছাতে।
অটোর মৃদু ঝাঁকুনিতে ঘুম আসে মেয়েটির। রাত একটায় পড়াশোনা শেষ করে বিছানায় গিয়ে, আবার ভোর পাঁচটায় বিছানা ছাড়ে সে। ফজরের নামাজ আদায় করে লেগে যায় রান্নার কাজে। এটা তার নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত শরীর একটু বিশ্রাম চায়। কিন্তু বিশ্রাম তার ভাগ্যে নেই। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে, বাড়িতে যেয়ে রাজ্যের কাজ করতে হয়। শরীরটায় বিশ্রামের ফুরসৎ মেলেনা।

আধাঘন্টা পর অটো থামতেই মেয়েটির ঘুম ভাঙ্গলো। নিজেকে একটু ধাতস্থ করে, ভাড়া মিটিয়ে নেমে যায় অটো থেকে। শুরু হতে যাচ্ছে তার ক্লান্তিকর একঘেয়েমি আরেকটা দিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠা তাহমিদের ছোটবেলার অভ্যাস। যত রাতেই ঘুমাক না কেন ফজরের আজান দেয়ার সাথে সাথে ওর ঘুম ভেঙে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ও ফজরের নামাজ আদায় করে, কিছুক্ষণ বাগানে হাঁটাহাঁটি করেছে। এরপর গোসল সেরে বই নিয়ে বসেছে। ডাক্তার হলে এই এক বিপদ। সময়ে-অসময়ে বই মুখের সামনে রাখতেই হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পড়তে বসে তাহমিদের চা’য়ের তেষ্টা পায়। বই রেখে নিচে নামে। উদ্দেশ্য বড়মার হাতের এক কাপ কড়া লিকারের চা।
” আফরোজা, বাজারের ব্যাগ আর লিষ্ট দাও। আমি বাজার এনে দিয়েই অফিসে যাব। দেখ, লিষ্টে কোনকিছু যেন বাদ না যায়। ” সানাউল রাশেদিন স্ত্রীকে তাড়া লাগান।
তাহমিদ নিচে নামতেই বড় চাচ্চুর কথা শুনে ফেলল।

” সিনিয়র স্যার, তুমি কাঁচা বাজারে যাচ্ছ? কে বলেছে এত কাজ করতে? নাকি একদিন বাজার করে সারা মাস অসুস্থ হয়ে থাকতে চাও! সবই কি অফিস কামাইয়ের ধান্দা? এত ফাঁকিবাজ হলে কবে থেকে? ” তাহমিদ দ্রুত পায়ে এসে বড়মার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নেয়।

” বড়মা, কাউকে যেতে হবেনা। আমিই যাচ্ছি। তার আগে এক কাপ কড়া চা দাও। এখন থেকে কোন কিছু কিনতে হলে আমাকে বলবে। বাজারের মত কঠিন কাজ, তোমার হাসবেন্ডের মত ভুঁড়িওয়ালাকে দিয়ে হবেনা। ”
তাহমিদের বলা শেষ হয়েছে কিনা তেতে উঠলেন সানাউল রাশেদিন।
” আফরোজা, ঐ বেয়াদবটাকে বল, আমিও বাজার করতে জানি। দুই দিনের ছেলে হয়ে আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে! কথায় আছেনা, ‘ দুই দিনের বাঙালী, ভাতকে বলে অন্ন। ‘ তোমার ছেলে ঠিক সেই ভাব ধরেছে। ওকে বলে দাও, আমিই বাজার করব। ”

” দিদুন, তোমার বড় ছেলেকে ছোটবেলায় হরলিক্স খাওয়াওনি? আমি কি বলছি তা বোঝেনা কেন? এই শরীর নিয়ে বাজারে যেতে চাচ্ছে! মনে কর, বাজারে মানুষের চাপে, গরমে সেখানেই চিৎপটাং হয়ে পরে রইল। তখন তাকে তুলবে কে? আটজন মিলে তাকে তুলতে পারবেনা। তাকে তুলতে হলে ক্রেন লাগবে। চিন্তা কর, বাজারের হুড়োহুড়ির ভেতর ক্রেনের চিন্তা কারও মাথায় আসবে? ”

ব্যাস হয়ে গেল। সানাউল রাশেদিনের রা’গ দেখে কে। কিন্তু রা’গ ঝাড়তে হলে প্রতিপক্ষ লাগে। তিনি আর প্রতিপক্ষ কোথায় পাবেন! কারন উপরোক্ত কথাগুলো বলেই তাহমিদ হাওয়া। সানাউল রাশেদিন বৃথাই গজরাতে থাকেন।
বাজার থেকে এসে তাহমিদ ঘেমে-নেয়ে একাকার। ও ব্যাগ বড়মার হাতে দিয়ে রুমে যায়। আরেকবার গোসল করতে হবে।
” কুহু, ঐ কুহু। কনে গিয়া ম’র’ছ’স? হা’রা’ম’জা’দি তরে কতবার কইরা ডাকতাছি, শুনবার পাসনা? ”
শিউলি আক্তারের ডাক শুনে দৌড়ে বাইরে আসে কুহু।

” বল ছোটমা। ডাকছিলে কেন? ”
” আইছে নবাবজাদী! আমি চাকরানী এতক্ষণ তারে ডাকতাছি, সে এখন আমার উপর মেহেরবানী করতাছে। ভাব দেইখা মনে হয় জমিদারের ঝি। মা’য়ে ম’র’বা’র আগে তালুক রাইখা গেছে। সে ম’র’বা’র কালে তরে নেয়নি ক্যা হা’রা’ম’জা’দী? তাইলে আইজ আমার সংসারে এত কষ্ট থাকতনা। ”
কুহু কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে ফিরেছে। গোসল সেরে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছিল কেবলই। ঠিক তখনই শিউলির ডাকে বাইরে এসে এত কথা শুনতে হয় ওকে।

” অযথা কথা না বাড়িয়ে কি বলবে বল। আর সব সময়ই কেন কথার মাঝে আমার মা’কে টানো? মা যখন আমাকে নেয়নি, সেই কথা এতবার করে বলে কেন নিজেকে কষ্ট দাও? আল্লাহ না চাওয়া পর্যন্ত আমি মা’য়ের কাছে যেতে পারবনা। সে তুমি যতই চাওনা কেন। ” কথাগুলো বলার সময় কুহুর গলা বোধহয় একটু কাঁপল!
” আইছে জ্ঞানবতী, আমারে জ্ঞান দিতে! দুই কলম পড়াশোনা শিখাই নিজেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভাবতাছে! চাকরি আর কেউ করেনা। ”
” কি বলবে, বল। আমি একটু শোব। ”

” কইতাছি যে, এই বাসনগুলা মাজবো কে? তোর ম’রা মা আইসা, মাইজা দিব? জমিদারের ঝি এর খালি শুইতে মনে চায়। বাড়ির কামগুলা করব কে? ”
” একটা কথা আমিও জানি আর তুমিও জানো, আমার মা কখনোই ফিরে আসবেনা। তবুও তাকে কেন শান্তিতে থাকতে দাওনা? দোহাই লাগে আমার মা’কে নিয়ে কিছু বলোনা। আর আমি সকালে যাওয়ার আগেই সব কাজ করে রেখে গেছি। দুপুরে তোমরা খেয়েছ সেই থালাবাসন তুমি মাজবেনা? আমি সারাদিন পরিশ্রম করে এসে তোমাদের এঁটো বাসন মাজতে বসব! ”

” কেনরে, বাসন মাজলে কি তর হাত ক্ষইয়া যাইব? তর কি সোনায় বান্ধা হাত? ”
” সে আমার হাত সোনায় বাঁধা হোক, আর মাটিরই হোক, এখন থেকে দুপুরের বাসনগুলো তুমি ধুয়ে রেখ। আমি অফিস থেকে এসে রাতের খাবার রান্না করব, থালাবাসন ধোব। ”
” মানুষে এমনেই কয়না, সতীনের পোলাপান কখনও নিজের পোলাপানের মত হয়না। কি সুন্দর কইরা আমার মুখের উপর না কইরা দিল! দুধকলা দিয়া আমি কা’ল’সা’প পুষতাছি। ” বুক চাপড়ে আহাজারি করতে থাকে শিউলি।
কুহু জানে ও কিছু বললে ঘটনা আরও অনেকদূর গড়াবে। তাই ও চুপ থাকে। লম্বা চুলে হাতখোঁপা বেঁধে কলপাড়ে যায়। পেছনে ফেলে রেখে যায় দীর্ঘশ্বাস।

রাতে বারান্দায় বসে পড়ছে কুহু। ঘরে দৃষ্টি আর শিহাব ঘুমাচ্ছে। গত পাঁচদিন শিউলি তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছিল। সেই পাঁচদিন কুহু ঘরেই পড়াশোনা করেছে। আজ ওরা এসে পরায় সবসময়ের ন্যায় বারান্দায় পড়ছে। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কুহু বারান্দায়ই পড়াশোনা করে। ও চায়না ওর জন্য ভাইবোনের অসুবিধা হোক।
অবশ্য দৃষ্টি আর শিহাব ওকে অনেকবারই বলেছে ঘরে এসে পড়তে। কিন্তু কুহু প্রতিবারই মানা করেছে। কুহু জানে একটু এদিক-ওদিক হলেই শিউলি ওকে কথা শোনাবে। তাই আগে থেকেই সাবধান হয়ে গেছে।
রাত বারোটা, কুহু আপনমনে পড়ছে। ওর অন্য কোনও দিকে নজর নেই। আজ বান্ধবীর কাছ থেকে কয়েকটা নোট জোগাড় করেছে। সেগুলোতেই চোখ বুলাচ্ছে। ওর লক্ষ্য পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়।

চাঁদের রুপালি আলো এসে ছুঁয়ে দিয়েছে কুহুর ললাট, কপোল, চিবুক। শ্যামলা রংয়ের মেয়েটির চেহারা এই আলোটুকু পেয়েই যেন উদ্ভাসিত হয়েছে। বারান্দার গ্রীল ভেদ করে শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে শ্যামলা শরীর। ভাগ্যিস বাড়ির চারপাশে দেয়াল ছিল। নইলে এই রাত-বিরেতে ওর পড়াশোনার কষ্ট হত। যদিও দেয়ালের প্রতিটি ইটে নোনা ধরেছে। শ্যাওলার আস্তরণ পরেছে পরতে পরতে। যদিওবা এই গ্রীষ্মে শ্যাওলার রং ফিঁকে হয়েছে, কিন্তু বর্ষার পানি পেয়েই তারা আবার নবজীবন লাভ করবে। তরতাজা সবুজ রংয়ের হয়ে উঠবে।

” কুহু মা, তুই এখনও জেগে আছিস? এই গরমে আবারও বারান্দায় বসেছিস? দেখতো ঘামে কেমন ভিজে গেছিস। ” কায়েস এসে মেয়ের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দেয়।
” আমার অতটাও গরম লাগছেনা, বাবা। কিন্তু তুমি এতরাতে বাইরে এসেছ কেন! কিছু লাগবে? তোমার ক্ষুধা লেগেছে, বাবা? ”
” আমি তোর কাছেই এসেছি। আমার কিছু লাগবেওনা আর ক্ষুধাও লাগেনি। তোর সাথে কিছু কথা ছিল। ”
” বল, বাবা, কি বলবে। ”

” সারাদিন কত পরিশ্রম করিস। বাসায় এসে আবার রাজ্যের কাজ করতে হয়। আমি বাবা হিসেবে অযোগ্য। নিজে শুয়ে-বসে থেকে মেয়ের কামাই খাচ্ছি। অথচ আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। এই বয়সে কোথায় বাবার বাড়িতে আরাম করবি, কিন্তু তোর কপালে সেটা নেই। আমি নিজের হাতে তোর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি। আমার একটা ভুলে আজ তোর এই পরিনতি। দৃষ্টি, শিহাবও আমার দোষেই এই সংসারে অভাবের মধ্যে বড় হচ্ছে। ” কায়েসের চোখে পানি, গলার স্বর জড়িয়ে যাচ্ছে।

” তোমার দোষে সব হয়েছে। তুমিই এসবের জন্য দায়ী। ” স্বগতোক্তি ঢঙে আনমনে বলল কুহু।
” কি ভাবছিস, মা? ”
” বাবা, তোমার দোষে কিছুই হয়নি। তুমি ঠিক ছিলে। এখানে কেউই ভুল ছিলনা। যে যার দিকে ঠিক ছিল। শুধু ভাগ্য আমাদের সাথে নিঠুর খেলা খেলেছে। এসব কথা ভেবে কষ্ট পেওনা, বাবা। এমনিতেই তোমার শরীর খারাপ, তার ওপর কিসব এলোমেলো চিন্তা কর! কোন বাজে চিন্তা করবেনা বলে দিলাম। আমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতাম, তবে কি সংসারের হাল ধরতামনা? আমাকে তুমি বরং ছেলেই ভাব। দেখবে কষ্ট কমে যাবে। ”

” তাই কি হয়, মা? তোকে ভালো একটা পরিবারে বিয়ে দিতে পারলে আমি চিন্তা মুক্ত হই। কতদিন আর এভাবে সংসারের ঘানি টানবি? ”
কুহু এবার বুঝতে পারছে, বাবা কেন এত রাতে ওর কাছে এসেছে। আর কেনইবা বারবার ওর বিয়ের কথা বলছে।
” তুমি কি বলতে এসেছ, বাবা? সোজাসুজি বলে ফেল। আর যাইহোক আমার কাছে কোন ফর্মালিটি দেখিওনা। ”
কিছুক্ষণ উসখুস করে মুখ খোলে কায়েস।

” আমাদের মহল্লার কাউন্সিলরের বড় ছেলে সবুজের জন্য তোকে পছন্দ করেছে কাউন্সিলর। সবুজেরও তোকে পছন্দ। তাই আজ কাউন্সিলর আমাদের বাড়িতে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ”
কুহু অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রয়।

” বাবা, তুমি অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত নও! তুমি একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ হয়ে, তোমার মেয়ের কাছে এই কথা বলছ! কাউন্সিলর নিজেও অশিক্ষিত, তেমনি তার ছেলেও তাই। এই মহল্লায় এবং আশেপাশে কাউন্সিলরের ছেলে বখাটে বলে পরিচিত। তুমি কাউন্সিলরকে নিষেধ করে দিতে পারতে, বাবা। সেই সুযোগ তোমার ছিল। কিন্তু তুমি সেটা না করে বিষয়টাকে জিইয়ে রেখেছ! ”

” মাগো, আমি যে নিরুপায়। তোরা আমার তিনজন সোনার টুকরো ছেলে-মেয়ে। আমি কাউন্সিলরকে সরাসরি নিষেধ করে তোদের ক্ষতি ঢেকে আনতে চাইনা। আমি জানি তারা কেমন। তাই যা করব ভেবেচিন্তে করতে হবে। আমি তোকে শুধু বিষয়টা জানাতে এসেছি। তোর কাছ থেকে হ্যাঁ জবাব শুনতে আসিনি। আমি ম’রে গেলেও কাউন্সিলরের ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিবনা। আমি শুধু তোকে জানিয়ে রাখলাম। যাতে তুই আগে থেকেই সাবধান হতে পারিস। ”

” বাবা, তুমি অযথাই চিন্তা করোনা। দেখবে আমাদের কিচ্ছু হবেনা। আমি একবার ভালো কোথাও চান্স পেলে, সেখানে আমরা একসাথে থাকব। আমি বেশি বেশি টিউশনি করাব। দৃষ্টি, শিহাবকে পড়াশোনা করাব। তোমার সব স্বপ্ন আমরাই পূরণ করব, বাবা। ”

” এই সংসার চালাতে তোকে কত কষ্ট করতে হয়, তা আমি জানি। এইযে প্রতিদিন আধাঘন্টা রাস্তা হাঁটিস বিশটা টাকা বাঁচাতে, সেটা কি আমি জানিনা ভেবেছিস? সেই বিশ টাকা প্রতিদিন শিহাবকে দিস স্কুলের জন্য। দৃষ্টির সব চাহিদা পূরণ করছিস। আমার চিকিৎসা করাচ্ছিস। অফিস করে এসে আবার দুইটা টিউশনি করছিস। আরও কত করবি, মা? তারচেয়ে বরং যদি একটা ভালো ছেলে পাই, তবে তোর বিয়ে দিয়ে দিব। তুই অনন্ত ভালো থাকবি, সুখে থাকবি। ”
” আর তোমরা? তখন তোমাদের কি হবে? তোমাদের সংসার চলবে কিভাবে? দৃষ্টি, শিহাবের পড়াশোনার কি হবে? তোমার চিকিৎসার কি হবে? তোমরা খাবে কি? ”

” পরেরটা পরে দেখা যাবে। প্রয়োজন হলে আমি আবার কাজ শুরু করব। তবুও আমি তোকে সুখী দেখতে চাই। কোনদিন তোকে ভালো খাবার দিতে পারলামনা, ভালো পোশাক দিতে পারলামনা। তারউপর আছে সৎ’মা’য়ে’র অত্যাচার। সব দেখেও আমাকে চোখ বন্ধ করে থাকতে হয়। কিযে ভিষণ জ্বা’লা এটা আমিই বুঝি। ”
” তুমি তো সব সময় এমন ছিলেনা বাবা। অসুস্থ হওয়ার আগে ভালো চাকরি করতে। ছোটমা, শিহাব, দৃষ্টি, আমি সবাইকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। এখনও আমরা সবাই আছি হয়তোবা সেই দিনগুলি আর নেই। কিন্তু ভালোবাসা একই আছে, বাবা। ”

” সেই দিনগুলোতে সবাই সুখে ছিল, শুধু তুই বাদে। সৎমার অত্যাচার কখনোই তোর পিছু ছাড়েনি। তুই আজীবনের কষ্টবতী। তাই আমি তোকে সুখী দেখতে চাই। আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার। ”
” কষ্ট কি কারও জীবনে আজীবন থাকে, বাবা! দেখ এমন একটা দিন আসবে, যেদিন ছোটমা আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝবেনা। আমিই তার অবলম্বন হব। সেদিন কি আমার আদৌ কোনও কষ্ট থাকবে? ”
” তাই যেন হয়, মা। তোর এত কষ্টের প্রতিদান আল্লাহ তোকে যেন দেন। ধৈর্য্যের পরীক্ষায় তুই অনেক আগেই উর্ত্তীর্ন হয়েছিস। শুধু এখন ফলের অপেক্ষায় আছি আমি। ”

” এখন যেয়ে ঘুমিয়ে পর, বাবা। অনেক রাত হয়েছে। বেশি রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে। ”
” তুইও ঘুমিয়ে পর। ভোরেই আবার উঠতে হবে তোকে। আবার শুরু হবে পরিশ্রম, চলবে সারাদিন। ”

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১

কায়েস মেয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলে, কুহু আবারও চোখ গুঁজে বইয়ের পাতায়। ওর অন্য কিছু ভাবার সময় নেই।
ফজরের আজানের সাথে সাথে বিছানা ছাড়ে কুহু। নামাজ আদায় করে চলে আসে রান্নাঘরে। সকাল-দুপুরের রান্না করে, গোসল সেরে, নাকেমুখে কোনরকমে খাবার গুঁজে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে। আধাঘন্টা রাস্তা হেঁটে, উঠে বসে অটোতে। আরও আধাঘন্টা পর পৌঁছাবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অফিসে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩