যদি তুমি বলো পর্ব ৫১

যদি তুমি বলো পর্ব ৫১
আফনান লারা

পিংকিকে এক নজর দেখতে পেয়ে পান্না লুকিয়ে তিথির রুমে এসে বসে আছে।সে এখান থেকে আর বের হবেনা বলে ঠিক করেছে।রিদম বিরিয়ানির প্লেট হাতে পান্নাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল,এদিকে পান্না মানা করে দেয়ায় ওকে নাম ধরেও ডাকতে পারছেনা সে।প্লেট হাতে হন্তদন্ত হয়ে সে পান্নাকেই কেবল খুঁজে চলেছে,ঠিক তখনই সে পিংকির সামনে পড়ে।

‘রিদম?খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’
‘এটা আসলে..আমি খাব আমার খিধে পেয়েছে তো খুব। তাই। ‘
‘চলো,আমি তোমার পাশে বসে বসে তোমার খাওয়া দেখবো।’
‘না’
‘কেন?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘আমি আসলে আগে এই পাঞ্জাবি টা বদলাবো,তারপর খাব।সো এক্সকিউজ মি?’
এটা বলে রিদম তিথির রুমে ঢুকে ভেতর দিয়ে দরজা লক করে দেয়।
এরপর দরজার সাথে লেগে সে শুনার চেষ্টা করে পিংকি চলে গেছে কিনা।
পান্না ওখানেই ছিল,রিদমকে এরকম করতে দেখে সে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে ওর পিঠে আঙ্গুল দিয়ে ওকে ডাকতে শুরু করে।

রিদম এত বেশি ভয় পেয়ে গেলো যে সে পিছিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়ে।পিংকি বাহিরেই ছিল,সে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’কি হয়েছে রিদম?দরজা খোলো’
‘না না,কিছু হয়নি। তুমি যাও,আমি চেঞ্জ করবো’
রিদম এবার পান্নাকে ফিসফিস করে বলে,’আর একটু হলে তো আমার হার্ট এটাক হয়ে যেতো। এভাবে কেউ ডাকে?তোমায় আমি কত খুঁজেছি জানো?’

‘কেন খুঁজেছেন?’
‘বিরিয়ানি খেতে,নাও ধরো।ইশ আমি তো এখন বের হতে পারবোনা।বের হলেই পিংকি দেখে ফেলবে,সাথে তোমাকেও দেখবে।আমি বরং বসে থাকি,তুমি খাও’
পান্না মাথা নাড়িয়ে খেতে বসে,খেতে খেতে সে রিদম খেয়েছিনা কিনা তা জানতে চায়।
‘না,আমার খিধে নেই।আমি প্রথমে যখন বিরিয়ানি রান্না হয়েছিল তখন খেয়ে নিছিলাম একবার তাই এখন আর খিধে নেই’

পান্না ছোট ছোট হাতে খাবার খেতে ব্যস্ত,তার ছোট ছোট ঠোঁটজোড়া,খাবারের ধরন।মাথায় গাঁদা ফুলের মালা,সব একত্রিত হয়ে এক বিশাল সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে।রিদম হা করে তাকিয়ে ছিল।ছেলেদের যৌবন যে কাল থেকে শুরু হয় রিদম সেই কালে সবেমাত্র পদার্পণ করেছে।

এ কালে যাকে সবার আগে মনে ধরে তাকেই আজীবন মনে থাকে।রিদমের মনে হয়েছিল তার সেই ভাললাগা হলো পিংকি।কিন্তু নাহ!আজ পান্নার এই অসামান্য রুপ তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ভাললাগা আর ভালবাসার মাঝে আকাশ পাতাল তফাত।

রঙচটা লিপস্টিক হোক কিংবা শীর্ণ ঠোঁটজোড়া হোক,পাউডারে মাখা সাদা মুখ হোক কিংবা সন্ধ্যার ঘুম থেকে ওঠা শুকনো মুখ হোক!ভালবাসার কাছে এসব কি এসে যায়?
রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পান্না বলে,’কি হয়েছে ভাইয়া?’
‘নাহ কিছুনা।খাও’

তিথি তানিয়ার মুখে হলুদ লাগিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় হলুদ ভর্তি করে নিয়ে ইশানকে খুঁজছে। ইশান রকিবের বড় খালাতো ভাই একটার সাথে স্টেজ নিয়ে আলাপ করছিল।তিথি সুযোগের অপেক্ষায় আছে,কখন শরীফ ভাইয়া উঠে যাবে আর সে গিয়ে ইশানের মুখে হলুদ লেপটে দিয়ে আসবে।
সুযোগ খুঁজতে খুঁজতেই সে ঐ মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে যায়,ওমনি আর দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ছুটে এসে ইশানের দুইগালে মনমত হলুদ লেপটে দেয় সে।

কিন্তু শরীফ উঠে যাবার পর পরই ঐ সিটে এসে বসেছিলেন ইশানের মা।তিনি এই অবস্থা দেখে রাগান্বিত হয়ে বলেন,’এইসব কি তিথি?তুমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে?এত লোকের সামনে কি করলে এটা? আজ কি তোমাদের গায়ে হলুদ?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে।
ইশান তখন মাকে থামিয়ে বলে,’আমি ওর গালে এমন করে লাগিয়েছিলাম, তাই সেও এমনটা করেছে’
‘তুই করেছিস সে বিষয়টা নেয়া যায়।কিন্তু ও মেয়ে মানুষ হয়ে এমন কেন করবে?’
‘দাঁড়াও এর প্রতিশোধ আমি ওর থেকে এখনই নিবো’

এটা বলে ইশান তানিয়ার সামনে গিয়ে হলুদের কৌটা এনে তিথির দুই গালে ভাল করে লাগিয়ে দিয়ে বললো,’দেখো মা,ভাল হয়েছে না?’
মিসেস আরাফাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।এমনটা আশা করেন নাই,তিথিও আশা করেনি।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে তিথির গাল টিপে বললো,’নাও,এবার গোসল করতে যাও।নাহয় বাবুর্চি হলুদ বাটা মনে করে মাংসের ঝোলে ঢেলে দিবে’

পান্নার খাওয়া শেষ হতেই রিদম ওর হাতে কোকাকোলা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।পান্নার মন খারাপ,বুবু আর বাবার ভয়ে সে চেয়েও অনুষ্ঠানটা দেখতে যেতে পারছেনা।গায়ে হলুদে মানুষ কত মজা করে!গান,নাচ এগুলাই তো এই অনুষ্ঠানকে চমকপ্রদ করে তোলে!অবশ্য মন খারাপ করার কিছু নেই।নরসিংদী দাদুর বাড়িতে থাকলে তো এসব ও দেখতে পারতোনা।তার ভাগ্য ভাল যে এত সুন্দর মনের মানুষেরা মিলেছে।সবাই তাকে কত ভালবাসে!রিদম কত কেয়ার করে!

এইসব ভেবে পান্না মিটমিট করে হাসছিল রুমের এক কোণায় বসে।তিথি গোসল করতে এসে দেখে পান্না লজ্জা পাচ্ছে একা একা।
‘একি!এত লজ্জা কিসের?’
পান্না চোখ মেলে তিথিকে পুরো হলুদে হলুদ দেখে ফিক করে হেসে দেয়।তিথি এবার নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।
‘এরকম কি ইশান ভাইয়া করেছে আপু?’

‘আপা ভাল আছেন?’
মিসেস আরাফাত পাশে তাকিয়ে দেখলেন গিয়াসউদ্দিন সশরীরে দাঁড়িয়ে আছে।উনি যেন চোখের সামনে ভূত দেখেছেন।লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলেন এরপর ঢোক গিলে বললেন,’জ্বী ভাল ছিলাম’
‘বসুন না,উঠলেন কেন?’

গিয়াস উদ্দিন বসে পড়ে ওনাকেও বসতে বললো কিন্তু উনি আর একটা সেকেন্ড ও ওখানে দাঁড়াননি।ছুটে পালালেন।গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে পাশে চেয়ে দেখেন এক ভদ্রমহিলা।
‘আসসালামু আলাইকুম আপা?’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘ভাল আছেন?’

‘কেমনে ভাল থাকবো ভাই?বউকে দেখেন!হিন্দি গানে ডেং ডেং করে নাচছে।এসব দেখলে ভাল লাগে?’
‘ঠিক! আজকালকার মেয়েরা সংস্কৃতির ‘স’ ও জানেনা’
‘সব চাইতে বড় বেয়াদব ঐ মেয়েটা ঐ যে হলুদ রঙের থ্রি পিস পরা।কেমন ওড়না খুলে নাচছে!’
গিয়াস উদ্দিন ঐদিকে তাকাতে তাকাতে বললেন ‘হুম!ঐ যে পারিবারিক শিক্ষার অ…..

কথা শেষ করতে না করতেই তিনি দেখলেন তার গুণী মেয়ে পিংকি ওটা।ওমনি ঢোক গিলে তিনি কথাটা পাল্টে বললেন,’আপা আপনার ছেলে-পেলে আছে?মানে বলতে চাইছি বাসায় আপনারা কজন? ‘
‘আমরা চারজন,আমি আমার হাসবেন্ড,আমার ছেলে আর আমার একজন ননাস।’
‘বাহ!অসাধারণ।আমি না একটা ভাল ছেলে খুঁজছি।আমার খুবই গুনবতী,রুপবতী দুটো মেয়ে আছে।তা আপনার ছেলে কি করে?’

‘ব্যবসা করে’
‘বাহ বাহ!ঢাকা শহরে ব্যবসা মানে তুমুল কিছু।তা আপনার ছেলের নাম কি?কিরকম মেয়ে তার পছন্দ যদি একটু বলতেন!!আসলে বিয়ে বাড়িতেই তো মানুষ বিয়ে খেতে এসে আরেকজনের বিয়ে ঠিক করে।তাই না?’
সেই ভদ্র মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,’আমার ছেলের নাম রকিব।তার সাথেই তানিয়ার বিয়ে হচ্ছে’

ওমনি তানিয়ার মামা শ্বশুর এসে বললেন,’আপা তোকেও ধরেছে?এই লোকটাকে পাগল বললেও পাগল লজ্জা পাবে।উনি একটা মেন্টাল!’
‘ভাই মেন্টাল মানেও তো পাগল।বাংলা ভাষার সৎ ব্যবহার করতে শিখুন তারপর পাগল বলতে আসবেন।’
‘রাখেন তো মিয়া!এই লোককে ভেতরে ঢুকতে দিছে কে!আর এক মিনিট থাকলে তো অনুষ্ঠানের সবার চৌদ্দ গুষ্টির সাথে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তারপর ছাড়বে!’

‘ভাই শোনেন!ঠিক আছে মজা টজা বাদ।সিরিয়াসলি নেন!একবার ভেবে দেখিয়েন,বয়স কোনো ফ্যাক্টই না।আমার ওয়াইফ যখন জন্মেছিল তখন আমি জেএসসি পরীক্ষা দিছি।তাহলে ভাবেন কত বড় বয়সের গ্যাপ।আর আপনি কিনা ১২/১৩ বছর নিয়ে ভাবছেন।আমার মেয়ে গুলো কিন্তু খুব সুইট।’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫০

‘আমি তবে একটা কথা বলি আপনাকে? আপনার পাবনার মানসিক হাসপাতাল একবার ঘুরে আসা উচিত’
‘উফ বুঝলাম না!সবাই আমাকে পাবনাতে যেতে বলে কেন’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫২