যদি তুমি বলো পর্ব ৫২

যদি তুমি বলো পর্ব ৫২
আফনান লারা

গায়ে হলুদ শেষে তানিয়া পরিশ্রান্ত শরীরে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে।ঘুমে চোখ জোড়া খুলতেই পারছিল না সে।পান্না ওখানেই বসে বসে জানালা দিয়ে বাহিরের ঝিলিক বাতি দেখছিল।তানিয়াকে ওভাবে এসে শুয়ে পড়তে দেখে সে কাছে এসে ওকে ভালভাবে পরোক করে নেয়।

হলুদের সাজটাও সে তোলেনি।তখন ছাদে গিয়ে তানিয়াকে ভাল করে দেখতে পারেনি পান্না।বড় জোর ৫মিনিটের জন্য থেকেছিল ওখানে।তানিয়াকে সুন্দর লাগছে বলে পান্না মুচকি হাসি দেয়,এরপর রুমের খোলা দরজা দেখে ওদিকে আসে সে।এখন কেউ আসবেনা বলে সে বের হয় রুম থেকে। রিদম গায়ের পাঞ্জাবি খুলে গামছা গায়ে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।সম্ভবত ভিতরে বাবা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘দরজা খোলো বাবা!আমি গোসল করবো।ঘামে চুলের ভেতরে ঘামাচি হয়ে গেছে।সাবান দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে সব উঠাইতে হবে।দরজা খোলো বাবা!’
‘আরে আর দশ মিনিট অপেক্ষা কর।আমারও সেম অবস্থা,মাথায় শেম্পু দিচ্ছি’
‘তোমার রুমের ওয়াশরুমের কি হয়েছে বাবা?’

‘ওটাতে তোর মা মনে হয় কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে’
‘আজিব!’
রিদম গামছা দিয়ে মুখ মুছে পেছনে তাকাতেই দেখে পান্না ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
লজ্জায় লাল হয়ে রিদম গামছা দিয়ে গা ঢেকে বলে,’তুমি এখানে?’
‘নাহ আসলে রুমে থাকতে থাকতে ভাল লাগছিল না।তিথি আপুর রুমে আমি ওয়াশরুম দেখেছি,ওখানে গিয়েও তো করতে পারেন’

‘নাহ,ওখানে ইশান ভাইয়া গোসল করে।বুঝিনা আজ এত গোসল করছে কেন সবাই!অবশ্য আমিও তো গোসল করতেছি!’
পান্না হাসি দিয়ে সোফার রুমে গিয়ে টিভিটা চালু করে বসে।
তারপর কার্টুন দেখতে থাকে।

ইশান গোসল করছে কারণ তিথি ওর মুখের সাথে সাথে গলার সাইডেও হলুদ লাগিয়েছিল,গায়ে কিছু লেগে থাকলে গোসল না করা অবধি ওর ভাল লাগেনা,তাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে সে।তখন থেকে তিথিকে সে এখনও দেখেনি,মেয়েটা গেলো কোথায়!মায়ের কথায় আবার রাগ করেনি তো?
মাথার চুল মুছে তোয়ালেটা রেখে ইশান বাহিরে বেরিয়ে রিদমকে দেখে জিজ্ঞেস করে সে তিথিকে দেখেছে কিনা।রিদম ও জানেনা তিথির খবর।

ইশানের এবার চিন্তা হলো,সে যে ফোন নিয়ে তিথির বাংলাদেশী নাম্বারটাতে কল করা শুরু করে।
অনেকক্ষণ রিং হবার পর তিথি রিসিভ করে।
‘হ্যালো?তুই কোথায়?গাড়ীর আওয়াজ আসছে কেন?আমাকে না বলে কোথায় গেছিস?’
‘আরে আপনার মা তানিয়াকে একটা কাতান শাড়ী গিফট দিবে গহনার সাথে মিলিয়ে, সেটা কিনতে এসেছি।মা তো একা আসতে পারতেন না।’

‘আমাকে নিয়ে যাওয়া যেতোনা?’
‘নাহ!মেয়েদের শপিংয়ে আপনার কি কাজ?আপনাকে না আনি আপনার গাড়ীটা ঠিকই এনেছি।’
‘তোরা কই এখন? আমি আসতেছি, লোকেশান বল”
‘আমরা চৌধুরী টাওয়ারে,শাড়ী কেনা হলেই মা আপনার নানু বাড়ি যাবে,মামা তো অসুস্থ ‘
‘আচ্ছা আমি আসছি,মাকে গাড়ীতে উঠিয়ে দিবো’

‘আপনার গাড়ীতেই ড্রাইভার দিয়ে আসবে’
‘তো?মাকে দেখতে আসতেছি আমি, তোর কোনো সমস্যা আছে?’
‘সমস্যা নাই,আসার সময় আপনার বাসার গাড়ীটা নিয়ে আসিয়েন বরং।তা নাহলে দি গ্রেট ইশানকে লোকাল বাসে চড়তে হবে।’
‘চড়লাম!সমস্যা কোথায়?’

ইশান আর দেরি না করে শপিংমলে চলে আসে।সেখানে এসে দেখে মা কাতান শাড়ী কিনে এখন আরেকটা শাড়ী দেখছে।
‘কি এত শপিং কেন?আমার বিয়ে তো শেষ’
‘দেখ তো ইশান,এইই শাড়ীটা কেমন?’
‘কার জন্য?তিথি?’

তিথি আইসক্রিম খেতে খেতে একটা ছোট বাবুকে দেখছিল।মা মাথা নাড়িয়ে বললেন ওটা তিথির জন্য দেখছেন।
ইশান শাড়ীটা সরিয়ে বলে,’এটা না,কমলা রঙেরটা নাও।আচ্ছা তুমি এত আদর করছো কেন ওকে?বাহিরের মানুষের সামনে দেখতে পারোনা আর একান্তে এত আদর?’
‘একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা!’

‘হ্যালো?’
‘আসসালামু আলাইকুম আব্বা’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি বলবি বল!আমার এখন গাছের আগাছা পরিষ্কার করার সময়,জানিস না?’
‘রাতের ১টার সময়?’

‘হ্যাঁ,তো?তোর তাতে কোনো সমস্যা আছে গিসু?’
‘আব্বা!গিসু বলিয়েন না তো!আমার নাম গিয়াস। নাম তো আপনার আদরের পত্নীই রেখেছিল ‘
‘হুম!তা বটে।তোর মা জীবনে আমার কথায় চলেনা।কত করে বলছিলাম হিয়াস রাখবো।হিয়াস উদ্দিন,সে কয় হিয়াস নাকি হাঁসের মতন লাগে তাই রাখলো গিয়াস।আমিও কম না।আদর করে তোকে ডাকি গিসু’
‘আব্বা যদি হিয়াস রাখতে তাহলে কি এখন হিসু ডাকতেন🥴?’

‘বেয়াদবের বা…..’
‘বলেন বলেন!বেয়াদবের বাচ্চা বলেন!থামছেন কেন?’
‘না বলবোনা কারণ গালিটা আমার উপর এসেই পড়বে।তা কিসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বল,সবসময় আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে উল্টা পাল্টা সময়ে কল করিস’
‘আমার পান্না মামণি কেমন আছে?’

‘আর কেমন থাকবে! বেয়াদব দুইটা আসি ওকে নিয়ে গেছে’
‘কে তারা?কখন এলো!কখন নিলো?আপনি যে আমাকে বললেন না!’
‘আমি ফোনে টাকা ঢুকাই যে তোকে কল দিবো?ছয় মাস আগে ইমার্জেন্সি লোড নিয়ে সেটাও শেষ দিছি।কল দিতাম কি করে?’

‘কারা নিছে?দেখতে কেমন?’
‘একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।ছেলেটা ফর্সা মতন,মেয়েটাও ফর্সা।ছেলেটাকে দেখে বড়লোক মনে হয়েছে।কিন্তু তারা দুজনেই প্রচণ্ড রকমের বেয়াদব।আমার কত গুলো গাছ নষ্ট করে দিয়েছে’
‘পান্না কি তাদের চিনেছে?আপনি বাধা দেননি কেন?’

‘আমি বাধা দিব কেন?তোর মেয়েই তো ডেং ডেং করে চলে গেছে’
‘কিহ!এতবড় ঘটনা ঘটলো!হুমমম!ফর্সা ছেলে মেয়ে!
ঐ রিদম তো কাইল্লা।তাহলে কে!ওহ আচ্ছা তাহলে ঐ ইশান আর তিথি!
তাদের আমার পান্নার সাথে কি কাজ যে এতদূর থেকে নিয়ে আসে!পান্না কোথায়?ওকে তো দেখলাম না অনুষ্ঠানে।’

‘আপনাকে কতবার করে বলেছি গিয়াসকে গিসু বলবেন না।কত সুন্দর নাম গিয়াস দিছি আমি।সারাক্ষণ গিসু গিসু কেমন লাগে শুনতে?
আমাদের মেজো ছেলে কাদেমকেও আপনি সারাদিন কেদু কেদু ডেকে বেড়ান।’
‘এটা আদর।তুমি বুঝবেনা,দেখি মাথার একটা চুল ছিঁড়ে দাও তো’

‘আপনার কারণে চুলগুলা লম্বাই করতে পারিনা,এখন আবার কি দোষ করলাম যে চুল ছিঁড়তে হবে?’
‘আজ বিকালে বাগান দেখতে গিয়ে যে ধপাস করে পড়ে আমার সূর্যমুখী গাছ নষ্ট করেছো ভেবেছো আমি দেখি নাই?’
‘নিজের বউকেও শাস্তি দিবেন?’
‘হ্যাঁ দিবো,বউ বলে শাস্তি একটু বেশিই দিবো’

মাকে বিদায় দেয়ার পর ইশান আর তিথি লোকাল বাসে উঠেছে।সিট এলোমেলো হওয়ায় তিথি সামনের সিটে বসেছে আর ইশান পিছনের সিটে।তিথির পাশে একটা মেয়ে বসা ছিল,মেয়েটা নেমে যাওয়ায় ইশান উঠে আসবে তখনই একটা ছেলে এসে তিথির পাশে বসে যায়,
এরপর তিথির দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে কানে ধরে।
‘হ্যাঁ মামা!ভাবতে পারবিনা কি জিনিস একটা পাইছি’

তিথি চোখ বড় করে বসে থাকলো।ইশানের সাথে একটা লোক বসা তাই সে উঠে তিথিকে সরাতেও পারছেনা।এদিকে ছেলেটা তিথিকে শুনিয়ে শুনিয়ে তার বন্ধুর সাথে যা পারছে,যত পারছে বাজে বাজে কথা বলে চলেছে।
একটা সময়ে ছেলেটা কল রেখে তিথির গায়ের সাথে ঘেঁষে বসে।ইশান উঠে কেলাবে তখনই তিথি ঠাস করে চড় একটা বসিয়ে দিলো।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’কি বললি?আমি জিনিস?আর কি বললি আমাকে পাচার করতে ৫০হাজার টাকা লাগবে?ওজনে ভারী আমি?বেয়াদব ছেলে!’

‘আজব তো!কথা নাই হুটহাট চড় মেরে দিলেন?আপনি জানেন আমি কি নিয়ে কথা বলছিলাম?আমি এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের বিজনেস করি।মালামাল নিয়ে কথা বলছিলাম’
তিথি আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’তোর মালামালের ফিগার হট হয় তাই না?’

ছেলেটা এবার থতমত খেয়ে যায়।ইশান আর কি কেলাবে,তার বউই ছেলেটাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে চলেছে।
তিথি এবার ইশানের দিকে চেয়ে বললো,’কেমন স্বামী আপনি?মারামারি পারেন না?আমাকে যে ছেলেটা ডিস্টার্ব করতেছে এতক্ষণ খেয়াল করেননি?আমাকে কোলে করে নিয়ে যাবার পর একশান নিবেন?’
ইশান যে তিথির বর এটা দেখে ছেলেটা চলন্ত বাস থেকেই নেমে পড়েছে।ইশান উঠে এসে তিথির পাশে বসে বলে,’আমার আগেই তো তুই পেটালি,আমাকে আর সুযোগ দিলি কই?’

‘গিসু’🐸
‘পিংকির মা তুমিও শুরু করছো?’
‘আপনার বাবা ছোট থেকেই আপনাকে গিসু ডাকে?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫১

‘নাহ বড় থেকে ডাকে,ছোট থাকতে গোদা ডাকতো।ঐ যে নারকেল গাছের ঢালের লম্বা লম্বা করে লাকড়ি বানায় না? সেটাকে গোদা বলে।তাও ভাল এখন আর গোদা ডাকেনা,গিসু ডাকে।শুনতে অদ্ভুত হলেও গোদার চেয়ে ভাল’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৩