যদি তুমি বলো পর্ব ৫০

যদি তুমি বলো পর্ব ৫০
আফনান লারা

ইশান এত বড় ভুল করেছে তা নিজেই বুঝতে পেরে সে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।গাছগুলো থেকে সরলেই যুদ্ধ শুরু হবে। তিথি ইশানের গালদুটো টিপে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,’চুল আপনি ছিঁড়বেন নাকি আমি ছিঁড়ে দিতাম?’

‘চুপ কর!পান্না যাও তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে আসো’
তিথির মাথা এখনও ব্যাথা করছে,আসমান আলীর লোক যে জোরে চুল টান দিয়ে ছিঁড়েছিল।ইশান ও তো অপরাধ করেছে,ওকেও তো শাস্তি পেতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি ওমনি দাঁত কেলিয়ে চিঁৎকার করে বলতে থাকে,’দাদু দেখে যান,আপনার বিলাতি চারা গাছ নষ্ট করে দিছে’
এটা শুনে দাদুর যেন মাথার রগই ছিঁড়ে গেছে।ইশান কপালে হাত দিয়ে সরে দাঁড়ালো চারা গাছ থেকে।দাদু এসে তার চারা গাছের এই করুণ দশা দেখে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেললেন।পালোয়ানদের আবার ডাকলেন ইশানকে ধরে চুল ছেঁড়ার জন্য।

ইশান তখন দাদুকে থামিয়ে নিজেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে ওনাকে দিয়ে দিলো।
‘একটা দিছো কেন?৪টা চারাগাছ নষ্ট করেছো তুমি।আরও ৩টা চুল ছিঁড়ো বলছি!’
তিথি মিটমিট করে হেসেই চলেছে।ইশান আরও ৩টা চুল ছিঁড়ে ওনার হাতে দেয়।এরপর নিজের মাথা ঘঁষতে থাকে।
পান্না তৈরি হয়ে এসে ইশানের গাড়ীতে বসে।তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজে।তানিয়া বারবার কল করে জিজ্ঞেস করছে ওরা আসলে কোথায়।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে কিছুক্ষণ পরেই।

তিথি ওকে আশ্বাস দেয় তারা দ্রুত ফিরছে।
অনেকটা পথ আসার পর লুকিং গ্লাসে ইশান দেখতে পায় পান্না পেছনের সিটে ঘুমিয়ে আছে।তখন তারা জ্যামে ছিল,ইশান আস্তে করে এগিয়ে এসে তিথির গালে চুমু একটা দিয়ে আবার ঠিক হয়ে বসে পড়ে।তিথি ফোনে তানিয়ার হলুদের ছবি দেখছিল,হঠাৎ এরকম ছোঁয়ায় সে অবাক হয়ে গেলো।গালে হাত দিয়ে ইশানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো সে।

‘কি?ওভাবে তাকানোর কি আছে?টমেটোর মতন গালটাকে ধরে দেখতে মন চাইলো।তাতে দোষ কি?’
‘ধরে তো দেখেননি।একেবারে থুথু লাগিয়ে দিয়েছেন।আর টমেটো মানে?আমি কি ভুটকি যে আমার গাল টমেটোর মতন হতে যাবে?

‘সব ভুটকির গাল টমেটোর মতন হয়না,আবার সব টমেটোর মতন গালের মানুষ ভুটকি হয়না’
‘আমার পারমিশন ছাড়া এরকম আর করবেন না’
জ্যাম ছেড়ে দেয়ায় ওরা মেইন রোড থেকে এলাকার গলিতে নেমে গেছিলো।ওমনি ইশান কারের লাইট নিভিয়ে তিথিকে ঝাপটে ধরে বললো,’পারমিশন যদি না নেই,তবে কি করবি বল?’
তিথি চেঁচিয়ে বললো,’পান্না দেখো!’

ওমনি ইশান তিথিকে ছেড়ে দিয়ে আলো জ্বালায়।পান্না তখনও ওঠেনি, সে ঘুমিয়েই যাচ্ছে।
তিথি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।আর রাগী চোখে ইশানের দিকে চেয়ে থাকলো।ছেলেটা ভারী অসভ্য হয়ে যাচ্ছে।এতদিন ভালই ছিল!

বাসায় ফিরে তিথি পান্নাকে নিয়ে সোজা তার রুমে যায়।এরপর নিজের ক্লাস সিক্সের একটা শাড়ী বের করে যেটা কমলা রঙের ছিল।
‘এটা পরে নাও।আমার ছোটবেলার শাড়ী।তোমার গায়ে ফিট হবে।’
পান্না শাড়ী দেখে বলে,’আমি তো পরতে জানিনা ‘
‘আমি পরাই দিচ্ছি’

তিথি হাতের ফোন রেখে পান্নাকে সুন্দর করে শাড়ী পরিয়ে সাজিয়ে তোলে।এরপর ওর থুঁতনি টেনে বলে,’নাও!তুমি রেডি।এবার আমি যাই,আমার অনেক কাজ।তুমি বরং ছাদে গিয়ে অনুষ্ঠান দেখো’
তিথি চলে যাবার পর পান্না আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়।আজ বাসায় যত মানুষ এসেছে সবাই ওর অচেনা।তার শুধু ভয় হচ্ছে পিংকিকে নিয়ে।যদি ওর সামনে একবার পড়ে তাহলে শেষ!

চারিদিকে নজর রাখতে রাখতে পান্না হাঁটছিল ওমনি তার ধাক্কা লাগে রিদমের সাথে।রিদম পানির বোতল নিয়ে ফ্রিজের কাছ থেকে এদিকেই আসছিল।শুরুতে শাড়ী পরা পান্নাকে এই প্রথমবার দেখে সে চিনতে পারেনাই।বাসার অন্য আত্নীয় মনে করেছিল,কিন্তু পান্নার মিষ্টি হাসি দেখে সে ঠিকই চিনে ফেলেছে।

‘তুমি?’
‘আমাকে কেমন লাগছে ভাইয়া?তিথি আপু সাজিয়ে দিয়েছে’
‘তুমি এখানে কি করো?তুমি না দাদুর বাড়ি গেছো?’
‘হুম তো।কিন্তু তিথি আপু আর ইশান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে।আপনি চলে যাবেন তাই আপনাকে বিদায় দেয়ার জন্য’

‘শাড়ী এটা কার?’
‘তিথি আপু দিয়েছে।ভাল না?’
‘খুব সুন্দর,তোমাকে খুব মানিয়েছে।আপুকে বলে এটা নিয়ে যেও।পিংকি কোথায়? ‘
পান্না ওমনি রিদমের মুখে হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে,’বুবুকে বলিয়েন না আমি যে এখানে’
‘কেন?’
‘সমস্যা আছে।’

‘তোমার হাতের থেকে গাঁদা ফুলেরগন্ধ আসছে কেন?গাঁদা ফুল তো ছাদে!তার মানে তুমি তিথি আপুর রুমে আমি যে গাঁদা ফুলের মালা রেখেছিলাম,ওটা নিয়েছো?’
‘হুম।এই যে চুলে লাগিয়েছি।আচ্ছা আপনি কি করতেন ঐ মালা দিয়ে?’

রিদম হাসি দিয়ে চলে গেলো।আর কিছুই বললোনা।তার এতক্ষণ যে মনমরা চেহারা ছিল,পান্না আসায় সেই চেহারা বদলে সতেজতা ফিরে এসেছে।কাউকেই কাজ করতে দিচ্ছেনা সে,সব নিজেই করে চলেছে।পান্না চুলে গাঁদা ফুলের মালাটা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ছাদে এসেছে।

বুবু আর বাবা মা মনে হয় এখনও আসেনি,তাই এই সুযোগে সে তানিয়ার গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়।তানিয়া টিটকারি করে বললো,’দেখো নিজের গায়ে লাগিওনা।অবিবাহিত মেয়েরা গায়ে হলুদ লাগালে বিয়ে হয়না’
পান্না চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।তানিয়া ফিক করে হেসে ফেলে পান্নার বিয়ের প্রতি এতো সিরিয়াসনেস দেখে।

তিথি শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে ছাদে আসছিল,ওমনি চিলেকোঠার কাছাকাছি আসতেই কেউ একজন ওকে টান দিয়ে কোণায় নিয়ে গেলো।তিথি চিৎকার করলোনা কারণ সে হাতের স্পর্শ চিনতে পেরেছে।
‘আপনার কি হলো বলুন তো?নেশাজাতীয় কিছু খেয়েছেন?’

‘তোরে সামনে দেখলে আমার নেশা গ্রহণ করা লাগেনা,তুই নিজেই একটা আস্ত নেশা’
‘তাই নাকি?তো এখন কি করতে চান?’
‘এই নেশা ঢোক গিলে খেয়ে ফেলতে চাই ‘
‘কোন পাশ থেকে শুরু করবেন শুনি?’

ইশান হাসি দিয়ে তিথির হাত কামড়ে ধরে এরপর ওর কপালে চুমু এঁকে দেয়।তিথি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল।ইশান যখন দেখলো তিথি বেশ সুখে আছে তখন সে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তিথির হাতে একটা কামড় দিয়ে চলে যায়।
তিথি ব্যাথায় হাত নাড়তে নাড়তে বলে,’আজ রাতে আমি যদি তানিয়ার সাথে না শুইছি তো আমি মিসেস ইশান আরাফাত না’

‘আসসালামু আলাইকুম ভাই’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।আপনি কে ভাই?’
‘আমি গিয়াসউদ্দিন।দি গ্রেট গিয়াস উদ্দিন।ঐ যে পিংক কালারের বাড়িটা আছেনা?ওটা পুরোটাই আমার’
‘বাহ বাহ! ঢাকা শহরে নিজেদের বাড়ি থাকা খুবই বড় বিষয়।তা আপনি তানিয়াদের কি হোন?’
‘আমি তো তানিয়ার আপন প্রতিবেশী।আর আপনি?’

‘আপন প্রতিবেশী!ওহ! বুঝলাম।আমি তো বর পক্ষ।রকিবের মামা হই।ডালা নিয়ে আসলাম’
‘আচ্ছা আপনারা ডালা যে সাজিয়েছেন, ঐ ডালাগুলো কোথা থেকে নিয়েছেন?আসলে আমার মেয়েদের বিয়ে তো।সেম টু সেম ডালাই নিবো ভাবছি।তানিয়াদের চেয়েও আপনাদের ডালাগুলো আমার অতিরিক্ত ভাল লেগেছে’
‘আপনার মেয়ে আছে?কিসে পড়ে তারা?’

‘একজন সিক্সে পড়ে,আরেকজন ফোরে পড়ে’
‘এত ছোট বয়সে বিয়ে দিবেন?’
‘না তো,আমি বিয়ে দিব ওরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে।আগে থেকে ভেবে রাখছি যাতে পরে সময় নষ্ট না হয়’
‘ওহহহ!ভাল খুবই ভাল।কিন্তু যুগের সাথে সাথে ডিজাইন বদলে।এখন আপনার যে ডিজাইন ভাল লাগছে,পরে সেটা নাও লাগতে পারে।ঐ সময়ে দেখা গেলো আরও সুন্দর সুন্দর ডালা বের হবে’

‘আচ্ছা আপনার কি ছেলে আছে?রকিবের মতন’
‘হ্যাঁ,আমার দুটো ছেলে।আদিত্য ও আরিফ।দুজনেই এমবিএ করছে’
‘মাশাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ! মারহাবা!!!’
‘মানে বুঝতেছিনা।আপনার কি হলো ভাই!কোনো সুসংবাদ নাকি?’
‘আমার মেয়ে দুটোর সাথে বিয়ে দিবেন?’

‘এসব কি বলেন ভাই?সঠিক সময়ে বিয়ে দিলে আমার ছেলেদের আপনার মেয়ের বয়সী মেয়ে থাকতো।এত বড় বয়সের গ্যাপে বিয়ে দেয়া উচিত না’
‘নিক জোনাস আর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বয়সের গ্যাপ ১০বছর হলে আপনার ছেলেরা কেন আমার মেয়েদের বিয়ে করতে পারবেনা?’

‘এখানে তো ১০বছর না। বরাবর ১২/১৩বছরের গ্যাপ’
‘আরে বর বউ সাজালে পারফেক্ট জুটি মনে হবে।আপনি এক কাজ করেন,আগামীকাল বিয়ের দিন দু পক্ষকে দেখিয়ে দিবেন।মেয়েরাও ছেলেদের দেখে নিলো আর ছেলেরাও মেয়েদের দেখে নিলো।ভাল হবেনা?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৯

‘তানু!তানু!’
‘জ্বী মামা?’
‘তোমার চেনা কোনো মানসিক ডাক্তার আছে?’
‘কেন মামা?কার কি হয়েছে?’
‘এই যে এই লোকটা…..একি গেলো কই?আরে ভাইই চলে যাচ্ছেন কেন?মেয়ে বিয়ে দিবেন না?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫১