যদি তুমি বলো পর্ব ৮

যদি তুমি বলো পর্ব ৮
আফনান লারা

পরেরদিন আদিল তিথিকে একটা নির্জন জায়গায় দেখা করতে বলে।জায়গাটি খুব বেশি দূরে না হলেও তিথির অপরিচিত।সে কোনোদিন ঐ জায়গায় যায়নি।যেতে ভয় হচ্ছিল,সে আদিলকে বলেও দিয়েছিল অন্য জায়গায় দেখা করতে কিন্তু আদিল নাকি তার ফিলিংস পাবলিক প্লেসে কনফেস করতে পারবেনা।এত দিনের চেনা বলে তিথি আর মানা করলোনা।ভাবলো আদিল তো আর চরিত্রহীন না।সেটা হলে এতদিনে সে ঠিকই বুঝতো।

এসব ভেবেই তিথি একা একাই ঐ নির্জন জায়গায় এসে পৌঁছায়।মেইন রোড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতন পথ হাঁটতে হয়।তারপর আসে একটা ছোটখাটো নদী।নদীর সামনে বড় বড় ভিনদেশী গাছ।সম্ভবত এটা কোনো ধনী ব্যাক্তির নিজস্ব সম্পত্তি।সুন্দর করেই ফলফলাদির গাছ দিয়ে নদীর এপাশটা ভরাট করেছে।
তিথি নদীরের শান্ত ঢেউয়ের বাতাসে হাঁটতে হাঁটতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিল।বেশ কিছু সময় পর তার ফোনে কল আসে আদিলের।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

আদিল জানতে চায় সে পৌঁছেছে কিনা।তিথি ওকে দ্রুত আসতে বলে তখন।কারণ তার বাসায় ফিরে তানিয়ার বিয়ের শপিংয়ের জন্য যেতে হবে।
আদিল ওকে পাঁচ মিনিটে আসার কথা বলে কলটা কাটে।তিথি এবার নদীর খুব কাছে এসে স্বচ্ছ পানির দিকে চেয়ে ছিল।তার বারবার মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ তাকে দেখছে।অথচ কোথাও কারোর কোনো উপস্থিতি নেই।
হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দ পেয়ে তিথি পেছনে তাকায়।আদিলকে সামনে দেখে দম ফেলে সে।
এরপর ব্রু কুঁচকে বলে,’বলো কি বলবে।’

‘তিথি তুমি কি সত্যিই আমায় ভালবেসে ফেলেছো?’
‘এইসব কেমন কথা?’
‘জাস্ট আনসার টা দাও’
‘আমি তোমায় ভালবেসেছি কিন্তু তুমি তো বাসোনি।নাটক করেছো’
আদিল হাসি দিয়ে বলে,’হ্যাঁ,আমি বাসিনি।তবে এটা সিওর যে তুমি বেসেছো?’
‘অবশ্যই,আমি তো আর তোমার মতন নাটক করিনি’

আদিল তখন একটা জয়ের হাসি হেসে তিথিকে ওখানে রেখেই চলে যাওয়া ধরে।তিথি আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।আদিল তো তাকে কত কথা বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।তাহলে এখন আবার চলে যাচ্ছে কেন?
তিথি ছুটে এসে আদিলের সামনে দাঁড়ায় এরপর বলে,’এটা বলার জন্যই এত দূর আনলে আমায়?’
আদিল তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে,’আচ্ছা আমি যদি বলি আজ আমার সাথে এই জায়গায় থেকে যেতে।সারাটা বিকেল,সারাটা রাত।থাকবে? ‘

‘মানে কি বুঝাতে চাইছো?’
‘মানে এই যে আমার সাথে একটা রাত কাটাতে পারবে?তুমি তো বলেছো আমায় সত্যিকারের ভালবাসো!’
তিথির মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সে আদিলের মুখ থেকে আর কথা বের হতে দেয়নি।মুখের উপর দুটো থাপ্পড় মেরে দিয়েছে ততক্ষণে।এরপর চিৎকার করে বলে,’মানুষ যাকে ভালবাসে,সে মানুষটা যদি তাকে একই রকম ভাবে ভালবাসতো তবে তোমার এই প্রস্তাব ঠিক ধরা যেতো। থাকতাম এক রাত!তাছাড়া ভালবাসার মানুষকে কেউ অবৈধ আকারে চায়না কখনওই।সবসময় বৈধ আকারে চায়।

কিন্তু তুমি তো বলেই দিয়েছো,তুমি আমায় ভালবাসো না
তবে এক রাত কেন!একটা ঘন্টাও আমি তোমার সাথে কাটাতে প্রস্তুত নাহ।তুমি এতদিন সাধু সেজে এখন আসছো সোজা একসাথে থাকার প্রস্তাব নিয়ে?তোমার ভাগ্য ভাল আমি আজকে দামী হিল পরে এসেছি।নাহয় স্যান্ডেল থাকলে ওটা দিয়ে পিটিয়ে স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে ফেলতাম।সময় থাকতে আমার চোখের সামনে থেকে সরো।’

এট বলে তিথি নিজেই উল্টো দিকে হাঁটা ধরে।আদিল দাঁড়িয়ে থেকে ওর চলে যাওয়া দেখছিল।
তখন ওর পাশে এসে দাঁড়ায় ইশান।এরপর বলে,’পরিকল্পনায় একটা ভুল হয়ে গেলো।বড় ভুল!তোমার বলা উচিত ছিল তুমি ওরে অনেক ভালবাসো। আমি শুধু দেখতে চাই সে তোমার সাথে থাকতে রাজি হয় কিনা!ভুলটা কেন করলে!’
আদিল মাথায় হাত দিয়ে বললো তার আসলেই ভুল হয়ে গেছে।তারা যখন এসব আলাপ করছিল তখনই হটাৎ ইশান দেখে তিথি ঐ পথ থেকেই উধাও।এতক্ষণ ওকে হেঁটে চলে যেতে দেখছিল তারা।মূহুর্তের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেলো মেয়েটা!

ইশান আদিলকে রেখে তিথিকে খুঁজতে ছুটলো।একসাথে খোঁজার উপায় নেই।
চারদিকে রাস্তা গেছে।সে কোন রাস্তাতে গেছে সেটা বোঝা মুশকিল।
ইশান তাও অন্ধকারে তীর ছোঁড়ার মতন একটা রাস্তার দিকে পা বাড়ায়।
তিথির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে সে রাস্তাটার শেষ প্রান্তে চলে আসে।এখানটায় একটা পুরান ফ্যাক্টরি ছাড়া আর কিছুই নেই।ফ্যাক্টরিটা তালাবন্ধ। ইশান ওটার চারপাশে ঘুরে এসে ফিরে আসার জন্য পেছনে মুড়তেই দেখে তিথি দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান ওকে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও ভাবতে থাকে এবার তার কি হবে।সে তো ধরা খেতে চায়নি।

‘সেদিন আমাকে লিফট দেয়া সেই ছেলেটা আর এই ছেলেটা তাহলে একই?হাতের ব্রেসলেটটাও একই!’
ইশান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তিথি কাছে এসে ইশানের মাথার ক্যাপটা টান দিয়ে সরিয়ে বলে,’এই ফাটা দাগটা আমিই দিয়েছিলাম তাই না?’
ইশান ক্যাপটা আবার পরে বলে,’কিসব বলছো?মোটেও তেমন কিছুনা।আমার জন্মদাগ এটা’
‘তাই?’

তিথি এবার আরও কাছে এসে ইশানের কপালে চাপ দিলো জোরেসোরে।ওমনি ইশান ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে।
তিথি মুচকি হেসে বলে,’জন্মদাগে চাপ দিলে ব্যাথা হয়?’
ইশান কিছু বলেনা।তিথি এবার ওর মাস্কটা ধরতে নিতেই ইশান ওর হাত ধরে বলে,’আমি দিলেই তবে পারবে,তার আগে এত বেশি করতে পারবেনা ‘

এই বলে ইশান সামনের দিকে হাঁটা ধরে।তিথি ও ওর পিছু আসতে আসতে বললো,’আমার পিছু নিয়ে কি লাভ হচ্ছে আপনার? কি বুঝাতে চান আপনি?তুমি বলবো নাকি আপনি?আসলে আপনার বয়স কত!’
ইশান চুপচাপ হাঁটছে।তিথি আবার বললো,’কতদিন হলো আমাকে এভাবে ফলো করছেন?উত্তর দিন!’
ইশান যেতে যেতে তিথির সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়।কোথাও সে নেই।তিথি ওর হাঁটার গতির সাথে না পেরে পিছিয়ে গেছিলো।এখন কোথাও সে ইশানকে দেখছেনা।

কিন্ত তিথি জানে সে কি করলে ইশানকে আবারও হাতের কাছে পাবে।
তাই সে মেইন রোডে এসেও আবারও সেই নির্জন জায়গাটিতে প্রবেশ করে।যতদূর চোখ যায়,সে হাঁটতে থাকে।
সে জানে,ইশান তার পিছু নেবেই।
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তিথি জেদের বশে পড়ে এতদূর এসে এখন মনে মনে পস্তাচ্ছে।মানুষের ভয় আছে,ভূতের ভয় আছে।

এই ছেলেটাকে হাতের নাগালে পাবার জন্য আর কি যে করতে হবে তাকে!
ভূত টূত নাকি!এই আসে,আর এই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে তিথি থেমে গেলো।
পাঁচ ছয়টা লোক কাঁধে জাল নিয়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।তিথিকে দেখে তারাও থেমে যায়।এখন ওখানে থাকা অবস্থায় কিরকম বিশ্রি ভাবে তারা তিথির দিকে তাকিয়ে ছিল।
সন্ধার অন্ধকারে ঐ কালো কুচকুচকে লোকগুলোর লালসা তিথি দেখতে না পেলেও তার বুকের ভেতর ভয় কাজ করছিল।ঢোক গিলে সে আশেপাশে তাকায়।

তাহলে কি ওর ধারণা ভুল!ইশান আজ আর এদিকে আসবেনা।
এখন এদের থেকে কিভাবে বাঁচা যায়!
তিথি এক পা এক পা করে পিছিয়ে দিলো এক দৌড়।কিন্তু তার দূর্ভাগ্য ঐ পথের উঁচুনিচু রাস্তায় হোচট খেয়ে সে পড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি। হাত ছিলে গেছে, সাথে মনে হয় পায়ের নখেও কিঞ্চিত ব্যাথা সে পেয়েছে।
আশপাশ থেকে মাছোর তীব্র গব্ধ ভেসে আসছিল তার মানে ঐ লোকগুলো তিথির খুব কাছে চলে এসেছে।
তিথি এখন কি করবে!

লোকগুলো তিথিকে দেখে চুপচাপ চলে গেছে।ওরা চলে যাবার পর তিথি উঠে বসে ভাবছে তারা কিছু করলোনা কেন?
তারপর ইশানের কথা মাথায় আসায় তিথি উঠে চারিদিকে খোঁজ করলো ওর।কিন্তু কোথাও তো কেউ নেই
তবে লোকগুলো এভাবে তেড়ে এসেও কিছু না করার কারণ কি!
নিশ্চয় ইশান আশেপাশেই আছে।ওকে দেখেই চলে গেছে।
অন্ধকার বেড়ে যাওয়ায় তিথি আর ওকে খুঁজে সময় বাড়ালোনা।কি করে যে এত জলদি সময় কেটে গেল!মেইন রোডে এসে তিথি গাড়ীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে এবার।

এটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।আদিল তাকে এমন একটা জায়গায় এনে ছেড়ে গেছে যেখানে লোকাল গাড়ী পাওয়াই যায়না।সন্ধ্যায় সবাই শপিংয়ে যাবে বলেছিল।তার এমনিতেও অনেক দেরি হয়ে গেছে।বাসায় না গিয়ে সোজা শপিংমলে উপস্থিত হতে হবে।

তিথি গাড়ীর অপেক্ষায় রোডের পাশের মাইলফলকে উঠে বসে আছে।পা ব্যাথা হয়ে গেছে তার।অন্ধকার হতে হতে এবার এমন হলো যে তিথি দূর পাল্লার গাড়ীর আলো ছাড়া আর কিছুই দেখছেনা।
‘ঐ আদিলের বাচ্চা আর একদিন বলুক দেখা করবে!যমুনা নদীর পানি গেলাবো ওরে!শখ কত আমার সাথে শুবে!’
তিথি দাঁতে দাত চেপে পা দোলাচ্ছিল,তখনই ইশান গাড়ী এনে তার সামনে দাঁড় করায়।
গাড়ীর ভেতর আলো জ্বলছিল বলে ইশানকে সে দেখেছে।এরপর মাইলফলক থেকে নেমে সে বললো,’আপাতত ক্লাসমেটই ভাবি!!

এখনও যাওনি তুমি?আমি জানতাম।আমাকে ফলো করতেছিলা তাই না?’
ইশান চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে।তিথি গাড়ীর দরজা ধরে বলে,’আমাকে ঐ নির্জন এলাকায় একা ছেড়ে দিয়ে এসেছো,এখন আবার লিফট দিতে চাও!বাহ!’
কথা বলতে বলতে তিথি গাড়ীর দরজাটা খোলার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ।

ইশানকে বকাঝকা করতে করতে সে দরজাটা খোলার কাজ করছিল।কিন্তু কোনোমতেই পারছেনা সে।
ইশান এবার বিরক্ত হয়ে একটু ঝুঁকে দরজাটা ভেতর থেকে খুলে দেয়।
এরপর বলে,’পুরান অভ্যাস এখনও যায়নি’
এটা শুনে তিথি কপাল কুঁচকে বলে,’পুরান অভ্যাস মানে!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৭

(আমার কাল থেকে পরীক্ষা।পড়ার মাঝে মাঝে সময় পেলেই গল্প লিখে পোস্ট করে দিবো♥

যদি তুমি বলো পর্ব ৯