যদি তুমি বলো পর্ব ৯

যদি তুমি বলো পর্ব ৯
আফনান লারা

গাড়ীতে নিরবতা চলছে দুজনেরই।কিন্তু তিথি মোটেও চুপচাপ বসে নেই।সে তার ব্যাগে থাকা আয়নাটাকে বাম পাশে নিয়ে সেই আয়নায় ইশানের চোখগুলো দেখছে।এই চোখ তার অনেক চেনা মনে হয় কিন্তু সেই মানুষটা কে ছিল ওটাই মিলাতে পারছেনা।ইশান যেন বুঝে গেলো।সে তিথির আয়না বরাবর তাকালো এবং তিথির এই কার্যকলাপে অবাক হলোনা একটুও।যেন সে অনেক আগে থেকেই জানতো।

তিথি হকচকিয়ে চশমাটা তুলে নিজের লিপস্টিক ঠিক করার নাটক করছে।
ওমনি ইশান এক হাত গাড়ীতে রেখে আরেক হাত এগিয়ে তিথির লিপস্টিকে আঙ্গুল দিয়ে লেপটে বললো,’এবার দেখো আয়নায়,ঠিক আছে কিনা’
‘আশ্চর্য! এমন করলে কেন?’
‘তোমার লিপস্টিক ঠিক আছে তাও তুমি আয়নায় সেটা দেখার নাটক করছিলে।তাই আমি সত্যি সত্যি লিপস্টিক এলোমেলো করে দিলাম যাতে করে তোমার আয়না দেখা সার্থক হয়’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ইশানের এমন উদ্ভট কথায় তিথি রেগে আগুন।তাও কিছু বলতে পারলোনা।কারণ সে এই ছেলের গাড়ী করে ফিরছে।এখন বেশি তালিবালি করলে তারে হয়ত মাঝ পথেই নামিয়ে দেবে।
তিথি ঢোক গিলে গেলো পুরো রাগটা।এরপর হাত দিয়ে ঠোঁট ঠিক করে মূর্তির মতন বসে থাকলো।
ইশান মিটমিট করে হাসতে থাকে।
তিথি ইশানের গাড়ীর সামনের গ্লাসে হাত রেখে বলে,’ঠিক করে ফেলেছেন?’
‘হ্যাঁ।আচ্ছা একটা কথা জানো তিথি?’

‘কি?’
‘কাঁচ ভাঙ্গলে বিয়ে দ্রুত হয়।’
‘তোহ?কার বিয়ে হবে?আমার তো হচ্ছেনা।আমার ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে তবে’
‘তোমারও হবে অপেক্ষা করো’
‘আমার না হয়ে তোমার হোক।আমার বাবা এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নাই।

ইশান তিথিকে শপিংমলের সামনে নামিয়ে দেয়।তিথি পেছনে ফিরে বলে,’তোমার মুখ ঢেকে রাখো কেন?কপালের জন্মদাগের মতন মাস্কের ভেতরেও কি জন্মদাগ আছে?
ইশান কিছু না বলেই ওখান থেকে চলে যায়।
তিথি এরপর ঠিক করে যে করেই হোক এই ছেলের মুখটা দেখে নিতে হবে।তবেই যত রহস্যের গোড়া আছে সব সমাধান হবে।

তিথিকে শপিং মলের বাহিরে দেখে তানিয়া বের হয়ে এসে বকাঝকা শুরু করে দেয়।তার আসার কথা ৭টায়।এখন বাজে সাড়ে আটটা।
তিথি কানে ধরে ক্ষমা চায়।খুব একটা দেরি হয়নি,সবাই বেনারসী পছন্দ করতে ব্যস্ত এখন।
তিথিকে নিয়ে তানিয়া সেই জায়গায় এনে বসায়।তানিয়া বলে ওর পছন্দ খুব একটা মানানসই না।তিথি যেন ওর হয়ে পছন্দ করে দেয়।

তিথি সব শাড়ীতে চোখ বুলিয়ে একটা শাড়ীতে হাত রাখে।ওমনি পাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলাও শাড়ীটা ধরে নেয়ার জন্য।
তিথি পাশে তাকায়,তাকিয়ে দেখে মিসেস আরাফাত।
ওনাকে দেখে তিথি প্রথমে চিনতে না পারলেও দু মিনিটের মাঝামাঝিতে চিনে ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।এরপর সালাম দেয়।
মিসেস আরাফাত ওর সালাম নেয় এরপর চশমাটা ঠিক করে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন তিনি। যেন তিনি ওকে দেখতেও চাননা,কথা তো দূরে থাক।
তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।ওর মা,বোন বাবা কেউই মিসেস আরাফাতকে দেখেননি।তিথি একাই দেখেছে।

তিথি ও কিছু আর বললোনা।সে বসে পড়লো আগের জায়গায়।মিসেস আরাফাত ঐ শাড়ীটা কিনে তিথিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,’মুনিয়া এদিকে আয় তো!দেখি তোকে কিরকম লাগে।আমার ইশতিয়াকের বউ বলো কথা!’
এ কথা শুনে তিথি আরও অবাক হয়ে যায়।তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে এরপর চারিদিকে তাকায় সে।কোথাও ইশতিয়াকে সে দেখেনা।

হুট করে তানিয়া এসে ওকে ঝাঁকুনি দিয়ে জানতে চায় তার কি হয়েছে।শাড়ী চয়েস কেন করছেনা।
তিথি কোনো মতে একটা শাড়ী বেছে দেয় ওকে।
ইশতিয়াকের বিয়ে!
মুনিয়া শাড়ীটা আয়নার সামনে গিয়ে গায়ে জড়িয়ে দেখছিল।
মিসেস আরাফাত মুখ বাঁকিয়ে আবারও বললেন,’দেখলেন রফিক সাহেব!আমার ছেলের বউকে?কোটিতে একটা।যেমন সুন্দর,তেমনি শিক্ষিত।ও তো মাস্টার্স করতে বিদেশ চলে যাবে।সেটা জানেন?
ইশতিয়াকের সাথেই চলে যাবে।আমি বাপু সেই রকমের শাশুড়ি না যে ছেলের বউকে আটকে রাখবো।ওদের যদি ইচ্ছা থাকে বিদেশ যাবার,তবে যাবে।সমস্যা নেই,আমি আটকাবোনা।’

তিথি চুপচাপ সব শুনছে আর মুনিয়াকে দেখছে।খুব ইচ্ছে হলো ইশতিয়াককে দেখার।সে এখন কেমন আছে!কোথায় আছে!
বেশ কিছু সময় পর ওপারে একজন লোককে সে বিল পে করতে দেখে।পরনে নীল রঙের শার্ট।মুনিয়া ছুটে গিয়ে লোকটার পাশে দাঁড়ায়।ওর জন্য মুখ দেখা যাচ্ছিল না।তিথি বুঝে যায় ওটাই ইশতিয়াক।
সে ও ওদিকে এগোয় দেখার জন্য।কিন্তু আফসোস সে দেখতে পাবার আগেই লোকটা কোথায় যেন চলে গেছে।কোথাও আর সে নীল রঙের শার্টট পরা কাউকে দেখতে পেলোনা।
তানিয়া তখন তিথিকে ডাকতে এসে বলে তারা জুয়েলারি সেকশনে যাবে।সে যেন দ্রুত আসে।সময় নষ্ট না করে।
তিথি ওদিকটা দেখতে দেখতেই চলে যায়।

গাড়ীতে মিসেস আরাফাত বললেন,’মুনিয়াকে এই শাড়ীতে বেশ মানাবে ‘
ইশাহ চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছিল।সে জানতোনা মা এই শপিংমলে এসেছে।অর্ধেক পথ যাবার পর মা কল দিয়ে জানান উনি এখানে আছেন।এদিকে তিথিও এখানে।তাই ইশান মল থেকে নতুন আরেকটি জামা কিনে পরে নেয় যাতে তিথি ওকে চিনতে না পারে।
এক সময়ে মা হঠাৎ করে বললেন এই শাড়ী নাকি মুনিয়ার বিয়ের শাড়ী।তখন ইশান বলে,’ভালোই তো,তবে মুনিয়ার বিয়ে খাচ্ছি আমরা’

এ কথা শুনে পরক্ষনেই মা বললেন, ‘ওর বিয়ে মানেই তো তোর বিয়ে!’
এ কথা শুনে ইশান গাড়ী থামিয়ে দেয়।এরপর বলে,’আগেও বলেছি আমি ওরে বিয়ে করতে পারবোনা’
‘পারতে হবে,আমার ও তো শখ জাগে একটা পুত্রবধুর।তোর বিয়ে হবে,বাচ্চা হবে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো সারা বাসায় ঘুরঘুর করবে।আমার এখন বয়স হয়েছে।এসব শখ করা কি অস্বাভাবিক? ‘
ইশান কিছু বলেনা গাড়ীটা আবারও স্টার্ট দেয়।

বাসায় ফিরে তিথির পুরো পরিবার এতটাই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত ছিল যে সবাই না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।পরেরদিন সকাল দশটা বেজে গেলেও কারোর ঘুম ভাঙ্গেনা।
বুয়া এসে দরজা ধাক্কিয়ে চলেও গেছে,তাও কেউ ওঠেনি।
ঠিক দশটা দশ মিনিটে তিথির বাবা সবার আগে ঘুম থেকে ওঠেন।এরপর চোখ ঘঁষতে ঘঁষতে তিনি ডাইনিংয়ের কাছাকাছি আসেন তখনই কলিংবেল বাজার আওয়াজটা তিনি পান।
পানির বোতলটা হাতে নিয়েই তিনি যান দরজা খুলতে।
খুলে দেখেন দুজন ভদ্র মহিলা আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তারা সালাম দিয়ে দিলো সবার আগে।তিথির বাবা সালাম নিয়ে ওনাদের ভেতরে আসতে বললেন।তিনি তখনও ঘুমের ঘোর থেকে বাহিরে বের হতে পারেননি।হা করে শুধু মেহমানদের মুখ দেখে চলেছেন।মহিলা দুজন আর সে মেয়েটি এসে বসে সোফায়।তারপর মহিলা একজন বললেন,’আপনার বড় মেয়ে বাসায় আছে?’
‘তিথি?আছে তো।আপনারা চেনেন ওকে?’

‘জ্বী চিনি।আমি হলাম করুনা হাওলাদার।আমার বাড়ি খুলনায়।এখানে আমার বোনের বাসায় এসেছি।তো ভাবলাম বোনের ছেলের জন্য একটা মেয়ে বেছে দিই,আমি নাকি ভাল বাছতে পারি।সে সূত্রে আপনাদের মেয়ের কথা শুনলাম।’
তিথির বাবার এবার যত ঘুম ছিল সব উঠে গেছে।তিনি হাতের বোতলটা রেখে ওনাদের পাশের সোফায় বসে পড়লেন।এরপর জানতে চাইলেন ছেলে কি করে।
ছেলের খালা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,’ব্যবসা করে।বিরাট বড় ব্যবসা’
‘কিসের ব্যবসা?’

‘ব্যবসাটা আসলে বিদেশে,জাপানে।জাপানের একটা নাম করা নুডুলসের কারখানার মালিক আমাদের ছেলে।’
খালা ২য় জন মশকরা করে বললেন,’চিন্তা করবেন না।আপনার মেয়েকে সারাদিন ঐ নুডুলস খেতে হবেনা।আমাদের ছেলে তারে দুনিয়ার সব খাবারের টেস্ট করাবে।’
এই বলে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দেয়।
তিথির বাবা বুঝতেছেন না কি করবেন।তারপর ভাবলেন একবার তিথির মাকে ডেকে আনলে ভাল হয়।এই বলে তিনি চলে গেলেন ভেতরের রুমের দিকে।

রিদম ব্রাশ মুখে ঢুকিয়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।সোফা দখল করে তিনজন নারীকে দেখে সে থেমে যায়।চোখ ডলে বলে,’আপনারা কি সত্যি এসে বসে আছেন নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?’
‘আমরা তো হুর পরী না বাবা।স্বপ্ন হবার কি আছে?
‘কখন বললাম আপনারা হুর পরী?দেখে তো শাঁকচুন্নি ইয়ে মানে আন্টি মনে হয়।’

যদি তুমি বলো পর্ব ৮

শাঁকচুন্নি কথাটা সে গালের ভেতরে রেখেই বললো।কেউ শুনলোনা।শুধু শুনলো রিদম আর গল্পের পাঠকেরা।
বড় খালা বললেন,’তা তোমার নাম কি বাবা?’
রিদম মুখের ভেতর থেকে ব্রাশ বের করে কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বললো,’হ্যালো কিউটিস!আই এম মুখেশ আম্বানি’

যদি তুমি বলো পর্ব ১০