যদি তুমি বলো পর্ব ৭

যদি তুমি বলো পর্ব ৭
আফনান লারা

তানিয়া পানির বোতল নিয়ে ছুটে আসছিল তখনই তার ধাক্কা লাগে ইশানের সাথে।ইশান তানিয়াকে দেখে চোখ ঢাকার চেষ্টা করে কিন্তু তানিয়া ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে বলে, ‘ইশতিয়াক ভাইয়া!’
এটা শুনে ইশান চলে যাওয়া ধরে কিন্তু তখনই তানিয়া ওর পথ আটকে দাঁড়ায়।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সে।
ইশান বুঝে যায় তানিয়াকে ধোঁকা দেয়া যাবেনা।
তানিয়া বলে,’আপুর স্মৃতি শক্তি কম হলেও আমার অনেক বেশি,এটা তুমি জানো ভাইয়া!পালানোর কারণ কি?পালাবো তো আমরা!’

ইশান ভাবে এখন তানিয়ার কাছে সব স্বীকার করলে তার যত পরিকল্পনা আছে সব বাতিল হয়ে যাবে।তাই সে তানিয়াকে সরিয়ে দ্রুত চলে গেলো।কোনো কথাই বললোনা।
তিথি মাথায় হাত দিয়ে তখন তানিয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়।ইশানকে চলে যেতে দেখে সে বলে,’এই ছেলেটা আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে জানিস!’
‘তাকে চিনো আপু?’
‘চিনবোনা কেন!আমার ভার্সিটিতে নতুন এসেছে’
‘ওহ!তার মানে এই টুকুই চেনো!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আর কি চিনবো?তবে জানিস!ওর চোখটা কার সাথে যেন মেলে!আমার ঠিক মনে পড়ছেনা।তোর কি মনে পড়ে?আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কারোর এমন চোখ ছিল?আমার পেটে আসছে কথা কিন্তু মুখে আসছেনা’
তানিয়া বুঝে গেছে ইশান চায়না সে তিথিকে ওর পরিচয় জানাক।তাই তানিয়া আর বেশি কিছু বলেনি তিথিকে।
এরই মাঝে রকিব তিথিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।দুজনের চেহারায় এত মিল।তিথি একদম ছবির সে মেয়েটির মতই।
রকিব তব্দা খেয়ে বসে আছে।তখন তিথি বলে ‘সরি,এতদিন পরিচিত হইনি।আমি তিথি, তানিয়ার বড় বোন’
‘ওহ আচ্ছা,এবার বুঝলাম।আপনাকে কাল দেখিনি’

‘আসলে আমি বাসায় ছিলাম না।আচ্ছা আপনারা কথা বলুন।আমি আসি’
তিথি তানিয়াকে থাকতে বলে সে চলে যায়।
বাহিরে এসে ইশানকে চারিদিকে খোঁজে।এরপর দেখা হলে গলা টিপে সব কথা সে বের করে নিবে।
কোমড়ে হাত দিয়ে ওসবই ভাবছিল তিথি,
সেসময় তার সামনে এসে দাঁড়ায় মিয়াজুল করীম আঙ্কেল।
ইশান দূর থেকে তিথিকে দেখছিল এতক্ষণ। ওমনি মিয়াজুল আঙ্কেলকে দেখে তার মাথা হেট হয়ে যায়।কি করে সে এই আপদ দূর করবে তাই ভাবে এবার।

‘তিথি মা কেমন আছো?’
তিথি কোমড় থেকে হাত ছাড়িয়ে চোখ বড় করে তাকায়।অনেকক্ষণ দেখার পরেও সে চিনতে পারেনা।
এরপর আঙ্কেল বললেন,’ওহ হো!তোমার তো আবার ভোলার স্বভাব আছে,আরে আমায় চিনতে পারছোনা?তোমার বান্ধবী সনির বাবা আমি’
‘সনি?সনি সনি!ওহ মনে পড়েছো।ঐ যে সব সাবজেক্টে ফেল করতো।সেই সনি?’
‘হ্যাঁ।এই তো চিনতে পারলে!ইশাননন……’

এটা বলতেই দুটো লোক এসো মিয়াজুল আঙ্কেলকে দুপাশ থেকে ধরে তিথির সামনে থেকে নিয়ে গেলো।তিথি ভাবছে আঙ্কেল ইশানের নাম নিলেন কেন!
লোক দুটোকে ইশান পাঠিয়েছিল।আর একটু থাকলেই আঙ্কেল হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিতো, কি একটা ঝামেলা!সব জায়গায় গিয়ে হাজির হয়ে যায়।
তিথি মুখ ঘুরিয়ে ইশানকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথাও না পেয়ে সে একাই রিকশাতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মাথায় একটা কথাই ঘুরছে, আঙ্কেল ইশানের নাম নিলো কেন!কোন ইশান!

ঐদিন মিয়াজুল আঙ্কেলকে ইশান তিথির অসুস্থতার দোহায় দিয়ে বাসায় আনা রোধ করেছিল।তারপর আঙ্কেলকে হোটেলে এনে কিছু খাইয়ে ভুলভাল বুঝিয়ল বিদায় ও করেছিল সে।
এসব ভাবতে ভাবতে ইশান ফোন বের করে আদিলকে কল দিয়ে বলে কাল যেন কাজটা সে ঠিক ঠাক করতে পারে।
ফোন রাখতেই ইশানের মায়ের কল আসে।
ইশান ভয়ের কারণে ধরতে চায়নি কিন্তু না ধরেও যে উপায় নেই।রিসিভ করতেই হলো।রিসিভ করতেই মা জানতে চাইলেন সে কোথায়।

তখন ইশান জানায় অফিসের কাজে বাহিরে এসেছে।মা ওকে বেশি কিছু বললেন না শুধু বললেন সে যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে।তিনি ওকে দেখতে চান।
এদিকে মাথা ফাটার দাগ,দাগের জায়গাতেই স্থির।এই দাগ দেখলে মা কত হাজার প্রশ্ন যে করবেন,অসুস্থ ও হয়ে যেতে পারেন।
এদিকে মানাও করা যাবেনা।মা মুখ ফুটে যেতে বলেছেন যখন।

মাথায় একটা ক্যাপ পরে ইশান বাসায় ফিরে মায়ের সামনে আসে।মা ওকে দুইদিন না দেখে কান্নাকাটি করতে করতে ওকে জড়িয়ে ধরেন।এরপর জানতে চান সে কোথায় ছিল। কেন বাসায় ফেরেনি।
ইশান মায়ের পিঠে হাত রেখে তিথির কথা ভাবছিল।এই এক নারী তার মাকে কাঁদিয়েছিল,এই এক নারী তার জীবন তছনছ করেছিল।এবং এই এক নারীকেই সে সম্ভব ভালবেসেছিল!

তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।চোখ মুছে সে মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
মা ওর হাত ধরে রেখে সোফায় বসে বললেন,’তোর ফুফাতো বোন মুনিয়া এসেছে।তোকে দেখার জন্য কত অপেক্ষায় ছিল।কিন্তু তুই তো আসছিসই না!সারপ্রাইজ দিবে বলে সে একবার কল ও করেনি। যা ওর সাথে গিয়ে কথা বলে আয়,আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে’
ইশান মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়া ধরতেই মা ওর হাতটা ধরে ফেললেন।এরপর ওর হাতে তিনি একটা আংটির বক্স দিলেন।

ইশান প্রতিমাসে মায়ের একাউন্টে অনেকগুলো টাকা ট্রান্সফার করে।সেই টাকা থেকে মা এই আংটিটা কিনেছেন।হীরের আংটি।
আংটির বক্সটার দিকে চেয়ে রইলো ইশান।তখন মা বললেন,’ওকে আজ পরিয়ে দিবি।আমি চাই তুই মুনিয়াকে বিয়ে করে সংসার জীবনে পা রাখ।আমার বিশ্বাস মুনিয়া তোর জীবনটাকে পূর্ণতা দেবে।’
ইশান কিছু বলেনা।বক্সটা নিয়ে তার রুমে চলে আসে।আসতেই দেখে তার বারান্দায় মুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উড়ছিল।সে অন্যমনস্ক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
ইশান আস্তে করে রুমে ঢুকে বক্সটা তার আলমারিতে রেখে দেয়।এরপর সে চলে আসে তামিয়ার রুমে।মুনিয়া তখনও কিছুই টের পায়নি।

ইশান তামিয়ার রুম থেকে একটা আংটি নিয়ে ফেরত আসে আবার।এরপর মুনিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
মুনিয়া ইশানের গায়ের গন্ধ পেতেই চোখ বুজে অন্যদিকে ফিরে যায়।
তখন ইশান বলে,’লজ্জা পেলে তোর লস।এই রিং কিন্তু পাবিনা’
তখন মুনিয়া আড় চোখে ইশানের হাতের দিকে তাকায়।তার হাতে একটা রিং ছিল।
সে হাতটা বাড়িয়ে ধরে ওর দিকে।ইশান মুচকি হেসে রিংটা বারান্দার রেলিংয়ের উপর রেখে বলে,’কোনো নারীর অনামিকা আঙ্গুলে রিং পরানোর কারণ জানিস?এর ভিন্ন ব্যাখা আছে তবে আমি যে ব্যাখা জানি সেটাই বলছি।।।নারীর অনামিকা আঙ্গুলে রিং পরানো মানে তাকে জীবনসঙ্গী করার প্রথম ধাপে সই করছি।’

এই বলে ইশান রিংটার দিকে ইশারা করে বলে,’রিংটা পরে নে’
‘তুমি পরিয়ে দেবেনা?’
‘আমি তো তোকে জীবনসঙ্গী বানাতে চাইনা,তাহলে ১ম ধাপের সই কেন করবো?’
এটা বলে ইশান তার রুমে চলে আসে।মুনিয়া সেই রিং নিয়ে ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়।ওর হাতটা ধরে বলে,’আমি চাই তোমার স্ত্রী হতে, করবেনা?তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো?’
‘সেটা তোর জানার বিষয় না।রিং দিয়েছি,নিজে নিজে পর ইচ্ছে হলে।’

এটা বলে ইশান তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।মুনিয়া রিংটা নিজে নিজে পরে বের হয়ে আসে।তখন ইশানের মা ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছিলেন। মুনিয়াকে দেখে তিনি বললেন,’কিরে?ইশান কোথায়?’
‘ওয়াশরুমে’
‘মন খারাপ কেন?রিং পরায়নি?’

এটা বলে তিনি মুনিয়ার হাত ধরলেন।কিন্তু তার কেনা রিং আর এই রিংয়ের কোনো মিল তিনি পেলেন না।মুনিয়া রোবটের মতন দাঁড়িয়ে ছিল।
ইশানের মা ভাবছেন তাহলে তার রিংটা ইশান কার জন্য রেখেছে।
ইশান মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আলমারি থেকে সেই রিংয়ের বক্সটা বের করে তার কোটের পকেটে ভরে রাখে।কাল এই রিং তার আসল মালিকের কাছে যাবে।
ক্যাপটা পরে মুচকি হাসি দিয়ে ইশান পেছনে তাকাতেই দেখে তার মা দাঁড়িয়ে।
‘রিংটা কাকে দিবি তুই?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৬

‘কাউকে না’
‘তাহলে মুনিয়াকে দিলিনা কেন?’
‘সে রিংটার যোগ্য না’
‘ তাহলে কে যোগ্য?আচ্ছা,তুই কি এখনও তিথির কথা ভাবছিস ইশান?তার জন্য রেখেছিস?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৮