যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৩০

যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৩০
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

শীতল সমীরণ মন না করে শীতল। মন যে খারাপ হয় কারণে অকারণ। প্রথম ভালোলাগা হোক কিংবা অল্প বয়সের ভালোলাগা; খুব সন্তর্পণে তা মনের ভেতর গেঁথে থাকে। অল্প একটু ভালো মুহূর্ত মনে যে রকম আনন্দের সৃষ্টি করে তেমন-ই, অল্প একটু খারাপ মুহূর্তও পুরো মনটাকে বিষিয়ে তোলে। সকালের পরিস্থিতি ঠিক সে রকম।
বই-খাতা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিছানায় বসে রয়েছে সে। কিছুক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে পড়ার চেষ্টা করছে তো; কিছুক্ষণ বিছানায়। কোথাও তার পড়া হচ্ছে না। অথচ একগাদা পড়া পেন্ডিং রয়েছে। ক্লাসের পড়া, কোচিং এর পড়া, প্রাইভেটের পড়া সব! আর এদিকে উচাটন মন নিয়ে সে অস্থিরতায় ভুগছে। সমস্যা তো পড়ার স্থান নয় বরঞ্চ তার মন। সে কিছুতেই আহিলের করা অপমানগুলো ভুলতে পারছে না।
সকালের মা সেলিনা বেগম মেয়ের রুমে এসে পুরোদস্তুর অবাক হয়ে যান। সকাল হাত-পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে ছিল। তিনি হরলক্সিের গ্লাস টেবিলের ওপর রেখে বললেন,

‘একি অবস্থা তোর?’
সকাল করুণস্বরে বলে,’কী?’
‘বইখাতা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছিস কেন?’
‘দেখছ না পড়তেছি?’
‘এই তোর পড়ার নমুনা? এভাবে কেউ পড়ে?’
‘ভালো লাগছে না মা।’
‘কেন? কী হয়েছে?’
‘কিছু হয়নি।’
‘কিছু না হলে ভালো লাগবে না কেন? শরীর খারাপ?’
‘না।’
তিনি কয়েক সেকেন্ড মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,’তোর যে কখন কী হয় বুঝি না আমি! হরলিক্স খেয়ে চুপচাপ সুন্দরমতো পড়তে বোস।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আহিলের কথা মনে পড়ে যায় সকালের। সকালে তো আহিল তাকে ছোটো বলেই অমন বড়ো বড়ো কথা বলে গেছিল। হরলিক্সের কথা শুনে বেপরোয়া মনটা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠল।
সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলিনা বেগমকে পিছু ডাকল,’মা।’
তিনি দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন,’কী?’
‘এখন থেকে আমি আর হরলিক্স খাব না। নিয়ে যাও।’
‘কেন? হরলিক্স আবার তোকে কী করল?’
‘কিছু করেনি। আমি কি ছোটো আছি নাকি যে এখনো হরলিক্স খাব?’
সেলিনা বেগম চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছেন। ধমক দিয়ে বলেন,’খুব বড়ো হয়ে গেছিস তাই না? এক থা’প্পড় দেবো সব কয়টা দাঁত পড়ে যাবে। চুপচাপ খেয়ে নে।’

মা চলে যাওয়ার পর রাগে ফেটে পড়ে সকাল। সবাই কেন তাকে শুধু ছোটো-ই বলে! সে কি খুব বেশি ছোটো? হরলিক্স খেল না সে। ওয়াশরুমে ফেলে দিয়ে গ্লাস খালি করে আবার টেবিলের ওপর রেখে দিলো।
সেই সময়ে নিতুর কল আসে। মনে মনে খুশিই হয় সকাল। যাক, ওর সাথে কথা বললে মনটা তো হালকা হবে।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিতু বলল,’দোস্ত ম্যাথ হোমওয়ার্ক করছিস? হোয়াটসএপে ছবি পাঠিয়ে দে না।’
মুহূর্তেই আবার রাগ উঠে গেল মাথায়। সকাল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’এজন্য ফোন করেছিস? রাখ, ফোন রাখ বলছি।’
‘আরে রাগ করছিস কেন? কী হয়েছে?’
‘ঘোড়ার ডিম হয়েছে।’
‘বলবি তো! না বললে বুঝব কী করে।’
‘কী হবে আবার? সকাল থেকে তো কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। ঐ ছেলের কথাগুলো কানে বাজতেছে শুধু।’
নিতু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’ও এই ব্যাপার? আরে বাদ দে না! কত মানুষ তো কত কথা-ই বলে। সব কি মনে রাখতে হয় নাকি?’
‘বাদ দেবো মানে? পারছি না আমি। একই তো অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখেছি, তার ওপর আবার উলটো আমাকেই অপমান করে গেল।’

‘তুই যেভাবে বলছিস, মনে হচ্ছে সে তোর বয়ফ্রেন্ড? এত হাইপার কেন হচ্ছিস তুই?’
একটুখানি থেমে ফের বলল,’বাই এনি চান্স, তুই তার প্রেমে পড়ে যাসনি তো?’
সকাল চুপ করে থাকে। নিতু বলে,’কীরে? চুপ কেন?’
‘জানিনা।’
‘মনে তো হচ্ছে তুই হাবুডুবু খাচ্ছিস।’
‘খেলেই বা কী?’
‘ট্রিট দিবি।’
‘রাখ তোর ট্রিট! সে তো আমাকে দেখতেই পারে না। কেমন দূর দূর করে দেখিসনি?’
‘হু, তাতে কী? সে রিজেক্ট করতেই পারে। তাই বলে কি তুই হাল ছেড়ে দিবি?’
‘তাহলে কী করব?’
‘আঠার মতো লেগে থাকবি। কয়দিন ইগনোর করবে সে? দেখবি একদিন ঠিক পটে যাবে।’
‘সত্যি বলছিস?’
‘অবশ্যই। তুই কি তার চেয়ে কম সুন্দর নাকি? হাল ছাড়িস না।’
সকাল খুশি হয়ে যায়। নিতু বলে,’মন ভালো হয়েছে? এবার তো হোমওয়ার্কের ছবি দে!’
‘আমি তো পড়তেই পারিনি। হোমওয়ার্কও করিনি। বাট ডোন্ট ওয়্যারি, আমি এখনই হোমওয়ার্ক করে তোকে ছবি পাঠাচ্ছি।’

‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম
দেখা পাইলাম না,
বন্ধু তিনদিন।’
আশিক তার রুক্ষকণ্ঠে গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। আহিল, দিদার, লামিয়া, জুঁই আর রেশমি গালে হাত দিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সকলের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ।
আর সইতে না পেরে রেশমি জোরে একটা ধমক দিয়ে বলল,’এই থামা তোর গান! আমার এলাকার কুত্তাগুলা নইলে এখনই বাসায় আইসা পড়বে।’
আশিক গান থামিয়ে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি আহত। লামিয়া করুণস্বরে বলল,’আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় কয়টা কুত্তা আছে। অলরেডি ওরা ঘেউঘেউ করা শুরু করছে।’

‘সেম রে! হেডফোন নিই নাই তো, তাই ওরা মনে হয় গান শুনে এমন করতেছে।’ বলল জুঁই।
আশিক খুব কষ্ট নিয়ে আহিল এবং দিদারের উদ্দেশ্যে বলল,’ওরা আমাকে অপমান করতেছে। তোরা কিছু বলবি না?’
দিদার বলল,’তোর কি মান আছে যে অপমান করবে?’
আহিল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’আমি তো এটাই বুঝতেছি না, আজ এমন কোন পাপ করেছি যে তোর গান শুনতে হচ্ছে!’
আশিক কান্না করার ঢং করে বলল,’তোরা সবাই আমাকে অপমান করলি তো? কর! বোকারানী যদি কলে থাকত তাহলে ও ঠিক-ই আমার পক্ষ নিতো।’
জুঁই বলল,’ভালো কথা! কীরে লামিয়া তুই যে বললি, অর্ষা কলে আসতে বলছে। কোথায় ও?’
লামিয়া ঠোঁট উলটে বলল,’কী জানি! লাইনেও তো নাই।’

‘দেখ মনে হয় ভুলে গেছে।’ বলল দিদার।
রেশমি হতাশ হয়ে বলল,’এটা কোনো কথা!’
‘হয়তো ব্যস্ত আছে। আমরা কথা বলতে থাকি। দেখি আসে কিনা।’ বলল আহিল।
লামিয়া পা গুটিয়ে আরাম করে বসে বলল,’তাহলে একটা গল্প শোনা।’
‘এখন গল্প শুনাব? তোর হাজবেন্ড কোথায়?’
‘অফিসে। আসতে রাত হবে। তুই গল্প বল।’
আশিক মনমরা হয়ে বলল,’আমার গান তো ভালো লাগল না তোদের। নে আহিল তুই একটা গল্প-ই শোনা। আমরাও শুনি।’
আহিল কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’আর গল্প! নিজেই তো কোনো গল্পে আটকে গেছি মনে হচ্ছে।’
‘কেন? কী হয়েছে?’ প্রশ্ন করল রেশমি।
‘আরে আজ যে তুই আর আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম না সকালে? তখন একটা মেয়ে এসেছিল।’
সকলে অবাক হয়ে সমস্বরে বলল,’মেয়ে!’
রেশমি বলল,’মেয়ে কোত্থেকে এলো? কোন মেয়ে? আমি তো দেখলাম না।’
‘আগে কথা শেষ করতে দে আমায়।’
‘আচ্ছা বল।’

এরপর সে সকালের সাথে ঘটে যাওয়া সকল কথা বন্ধুদের বলল। সবার তো হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
দিদার হাসতে হাসতেই বলল,’তুই আগুন? একটা পিচ্চি মেয়ে তোকে আগুন বলে গেল? হায় আল্লাহ্!’
আহিল মুখ গম্ভীর করে বলল,’হাসছিস কেন তোরা? হাসবি না।’
রেশমি বলল,’শুধুশুধু আমিও জড়িয়ে গেলাম। ঐ মেয়ে নিশ্চয়ই ভেবেছে আমি তোর গার্লফ্রেন্ড?’
‘কী জানি! কথার ধরণে তো মনে হচ্ছিল জেলাস। ভাই রে ভাই, এইটুকুন মেয়ের কথা শুনলে অবাক হয়ে যাবি তোরা।’
‘তাইলে তো মেয়েটারে একবার দেখা দরকার।’ বলল আশিক।
‘কোনো দরকার নাই! এছাড়া মেয়েটা মনে হয় আর সামনে আসবে না। যেই ধমক দিয়েছি, এবার থেকে দেখলে দশ হাত দূরে দূরে থাকবে।’

লেকের থৈ থৈ করা পানির স্রোতের সাথে ভেসে চলছে মাঝারি সাইজের সাদা জাহাজটি। লেকের নীলাভ স্বচ্ছ পানিতে আকাশের বুকে থাকা অর্ধখণ্ড চাঁদটির প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। চাঁদের সঙ্গে রয়েছে ঝলমল করা দূরাকাশের তারা। যাদের দেখতে যতটা সুন্দর লাগে, গগনা করা এরচেয়েও কঠিন। শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব বটে।
এই মুহূর্তে চাঁদের সঙ্গে অর্ষাকে তুলনা করা যায়। নিঃসন্দেহে আহনাফের বুককে বলা যায় বিশাল আকাশ। চাঁদ যেমন আকাশের বুকে থেকে পৃথিবীতে কিরণ ছড়াচ্ছে, ঠিক তেমন-ই আহনাফের বুকে থেকে অর্ষা মুহূর্তটাকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে। এক হাতে আহনাফ তাকে আগলে রেখেছে বুকের মাঝে। খুব যত্নসহকারে। হোক না বিষয়টা অ-জ্ঞানে, তাতেই বা কী আসে যায়! এই মুহূর্তটা অনন্ত হোক। এর শেষ যেন কোথাও না হয়।
অনেকক্ষণ বাদে নেহা আবার আসে বাইরের দিকটায়। বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল। তাড়াতাড়ি সকলকে বাড়িতে ফিরতে বলা হয়েছে। নেহা বাইরে এসে অবাক হয়। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে দুষ্টু হাসি।
দু’হাত গালে রেখে নিজে নিজেই হেসে বলে,’আরে বাহ্! আমার ভাই-ভাবি দেখি খুব রোমান্টিক। দুজনে কী সুন্দর খোলা আকাশের নিচে শুয়ে রয়েছে!’

নেহা এগিয়ে এসে হাঁটু ভাঁজ করে বসে। অর্ষার হাতে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে বলে,’ভাবি? এই ভাবি?’
অর্ষার কোনো হুশ-ই নেই। সে তো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। অন্যদিকে আহনাফেরও একই অবস্থা। কারও-ই কোনো সাড়াশব্দ নেই। নেশাটা দুজনের বড্ড বেশি-ই হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে তো মায়ের হাতে উত্তম-মধ্যম তাকেই খেতে হবে মনে হচ্ছে। এত সুন্দর করে দুজনে ঘুমিয়ে আছে যে, নেহার ডাকতেও মায়া লাগছে। কিন্তু কিছু করারও তো নেই। তাড়াতাড়ি না ফিরলে পানিশমেন্টও তার-ই হবে। তবে এত সুন্দর দৃশ্য তো ক্যামেরাবন্দী করাই যায়।
নেহা উঠে দাঁড়াল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফোনের ক্যামেরায় দুজনের যুগলবন্দী ছবি ফোনে ক্যাপচার করে নিল। ছবিটা দেখলে মনে হবে রাজকুমারের বুকে রাজকুমারী ঘুমিয়ে রয়েছে। সেই সাথে ছবিতে রয়েছে আকাশের সাথে নীলাভ লেকের পানি। আহা! ছবিটা পুরো বাঁধিয়ে রাখার মতো।

ফোন পকেটে রেখে সে নিহিতকে ডাকতে গেল। তার একার পক্ষে দুজনকে ডেকে তোলা সম্ভব নয়। জাহাজ ঘাটে ফেরার পর নেহা, নিহিত এবং আরো কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে আহনাফ এবং অর্ষাকে গাড়িতে উঠিয়ে বসাল।
ড্রাইভিং সিটে বসেছে নিহিত আর পাশের সিটে নেহা। নেহা পেছনের সিটে আহনাফ এবং অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ভাইয়া! দুজনের তো ভালোই নেশা হয়ে গেছে। মা বকবে না?’
‘বকবেই তো। তুই কেন ওদের ঐ জুস খাওয়াতে গেলি?’
‘আরে আমি কি জানতাম নাকি ওরা এত পরিমাণ খাবে!’
‘এবার বোঝ মজা।’
‘প্লিজ ভাইয়া, মাকে একটু ম্যানেজ করে নিও প্লিজ!’
নিহিত গম্ভীর হওয়ার অভিনয় করছিল। এবার হেসে বলল,’তুই চিন্তা করিস না তো।’
বাড়ি ফিরে কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলে দিলেন ফুপি নিজেই। নেহা ও নিহিত মিলে অর্ষা এবং আহনাফকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ওরা দুজন নেশা করে আবোল-তাবোল বলছে বিড়বিড় করে।
ফুপি চমকে প্রশ্ন করেন,’এই অবস্থা কেন?’

নেহা ভয়ে ঢোক গিলে বলে,’আগে ভাইয়া আর ভাবিকে ঘরে নিতে হবে মামনী। এভাবে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না।’
ফুপি একবার ভেতরের দিকে তাকিয়ে চাপাস্বরে বললেন,’তোদের বাবা এখন ঘরে। তাড়াতাড়ি ওদেরকে ওদের ঘরে নিয়ে যা।’
নেহা এবং নিহিত তাই করল। ফুপিও পিছু পিছু গেলেন সেই রুমে। ছেলে-মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,’ওরা যে এত ড্রিঙ্কস করেছে, তোরা কোথায় ছিলি তখন?’
নিহিত বুদ্ধি করে বলল,’ওদেরকে আলাদা স্পেস দিয়েছিলাম মামনী। কিন্তু বুঝতে পারিনি ওরা সময় না কাটিয়ে এত ড্রিঙ্কস করবে।’
‘না, তা কেন বুঝবে? এত পাকনামি কেন করতে গেছ? এখন তোমাদের বাবাকে কী বলব আমি? তিনি তো অর্ষা আর আহনাফের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।’
নেহা ফট করে বলল,’উমম! বলে দাও যে, ভাবি খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে। তাই সকালে দেখা করবে।’
‘আহারে! বুদ্ধির কী বাহার! দেখি কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যায় এখন। তোদের দুটোর বিচার আমি সকালে করব। এখন বের হ ঘর থেকে।’
দু’জন বের হওয়ার পর ফুপিও ঘরের লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে চলে গেলেন।

চোখে-মুখে কিছু সুড়সুড় করছে বলে মনে হচ্ছে আহনাফের। সে বারবার মুখে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে। শেষমেশ ঘুম-ই ভেঙে যায় তার। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে জিনিসটা কী! কিন্তু চোখ মেলে রাখাটাই তার পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়ছে। সে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে। বুকের মাঝে থাকা অর্ষাকে কোলবালিশ ভেবে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নেশা কাটেনি তার পুরোপুরি। নেশার ঘোরে অর্ষার গালে চুমু খায়। ঘুমের মধ্যেই বিরক্ত হয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করে অর্ষা। যেই গালে চুমু দিয়েছে সেই গালে হাত রেখে চুমু মোছার চেষ্টা করে। ফের আবার চুমু খায় আহনাফ। অর্ষা এবার বিরক্ত হয়েই মৃদু আঘাত করে আহনাফের বাহুতে।
এবার যেন আহনাফের হুঁশ ফিরল। সে ফট করে চোখ মেলে তাকায়। এতক্ষণ মুখে যা সুড়সুড় করছিল তা ছিল অর্ষার চুল। আর যাকে কোলবালিশ ভেবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে সে কোলবালিশ নয় বরং অর্ষা!

অর্ষা ঘুম জড়ানো কণ্ঠেই বিড়বিড় করে বলছে,’আমি বলেছিলাম আপনি খারাপ। আপনি সত্যিই অনেক খারাপ। বারবার কেন চুমু খাচ্ছেন? কেন, কেন?’
আহনাফ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ। এরপর অর্ষাকে সরিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে। বুকে ফুঁ দিয়ে বলে,’লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ!’
সে উঠে যাওয়ার আগে অর্ষা তার হাত টেনে ধরে। আহনাফ উঠতে গিয়েও থেমে যায় অর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে। নেশার রেশ হয়ে গেছে তার। সে মুখটা ধীরে ধীরে এগিয়ে নেয় অজান্তেই। অর্ষা চোখ দুটো পিটপিট করে তাকায়। আহনাফের মুখের ওপর হাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বলে,’নো!’
প্রত্যাখানে আবারও হুঁশ ফিরে আসে আহনাফের। একছুটে চলে যায় ওয়াশরুমে। চোখে-মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকায় আহনাফ। মুখের ওপর হাত রেখে বলে,

যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ২৯

‘হায় আল্লাহ্! কী যে হয়ে গেল। অর্ষা দেখেছে আমি চুমু খেতে যাচ্ছিলাম? দেখেছেই তো! না দেখলে বারণ করল কীভাবে? কী হলো হঠাৎ আমার! আমি ও’কে মুখ দেখাব কীভাবে? ওর সামনে যাব কীভাবে? ছি আহনাফ! ছি! কী করে তুই এটা করতে গেলি?’
সে লজ্জায় অস্বস্তিতে গাট হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। রুমে গিয়ে অর্ষার মুখোমুখি যে কীভাবে হবে সেই ভাবনাতেই এখন সে বিবশ হয়ে গেছে।

যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব ৩১