রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ১১

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ১১
লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)

সময় পাল্টেছে, মানুষ পাল্টেছে। একসময় যাকে সহ্যই করতে পারিনি আজ সেই আমার সব হয়েছে। আমার হৃদয়জুড়ে অবস্থান করছে।দেখতো দেখতে কেটে গেছে ১ মাস। এই ১ মাসে সাদিকে নতুন ভাবে চিনেছি আমি। যার মধ্যে রাগ-জেদটা আগের মতই আছে কিন্তু আমার উপর এপ্লাই করা হয় কম। কারণ আমি ওনার অবাধ্য হই না। ওনার ছোট ছোট আবদার গুলো পূরণ করেও আনন্দ পাই।পুরনো অতীতকে ভোলা সহজ নয় জানি।

কিন্তু অতীতে যাকে ভালোবাসতাম তাকে এখন শুধুই ঘৃণা করি। তারজন্য মনে ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু এই ১ মাসে সাদির জন্য অনেক অনুভূতি জমিয়েছি আমি।যেই মানুষটা আমার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ১ টা মাস আমাকে গভীরভাবে না ছুঁয়ে থাকতে পারে সে আর কারোর জন্য কি তা জানি না কিন্তু আমার জন্য সব।এটা ওনার প্রতি আমার করা অন্যায় বা স্বার্থপরতা কি না জানি না।কিন্তু আমারো সময়ের প্রয়োজন ছিলো আর উনিও সেটা দিয়েছেন। পুরনো কথাগুলো ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। ফুপি কাঁধে হাত রেখে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

___” কি ভাবছিস?”
আমি পিছনে ফিরে হালকা হেসে বললাম,
___” কিছু না ফুপি। এমনিই।”
___” কেক বানানো হলো?”
আমি কেকটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
___” এইতো শুধু নাম লেখা বাকি।কয়টা বাজে গো?”
___” ৮ টা বাজে।সাদি চলে আসবে। তুই একটু তাড়াতাড়ি কর মা।”
___” আচ্ছা।”

বলেই কাজে মন দিলাম আমি।আগামী কালকে সাদির জন্মদিন। তাই আমি আর ফুপি মিলে তাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে ভেবেছি। আমি কেকটা তৈরী করে ফ্রিজে রাখতে রাখতে কলিংবেল এর শব্দ পেলাম।বুঝলাম! উনি এসে গেছেন। তাই দৌড়ে রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসে পড়লাম। কারণ উনি পড়া নিয়ে কোনো এক্সকিউজ পছন্দ করেন না।
একটু পরেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকলেন সাদি।আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,
___” বাহ,আজ পড়তে বসেছেন মহারাণী।”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বললাম,

___” এমন ভান করছেন যেন আমি পড়াশোনা করিই না।”
___” করিসনা বলেই তো বইটা উল্টো।”
বলে হাসতে হাসতে উনি ওয়াশরুম চলে গেলেন। এদিকে চোখ বড় বড় করে বইয়ের দিকে তাকালাম আমি। তাই তো!বইটা উল্টো করা।বইটা দিয়ে নিজের মাথায়ই বাড়ি মারলাম আমি। ধূর!ধরা পড়ে গেলাম।

উনি ওয়াশরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হলেন। আমি তখন ড্রেসিংটেবিল গুছাচ্ছিলাম। তার দিকে আড়চোখে তাকাতেই উনি আমার হাত ধরে বিছানার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজে সামনে বসে পড়ে বললেন,
___” মাথা মুছে দে।পানি পড়ছে!তোর বরের ঠান্ডা লাগবে।”
আমি মুখ ভেঙিয়ে চুলগুলো মুছতে লাগলাম। তারপর ওনার কাঁঁধও মুছে দিলাম।তারপর বললাম,

___” খালি গায়ে বসে আছেন যে?”
___” আর বলিস না!বাহিরে যে গরম! একটু খালি গায়ে থাকলে আরাম লাগবে।”
___” আমি খাবার রেডি করছি।আপনি চলে আসুন।”
বলেই যেতে নিলাম।ওমনি পিছন থেকে হাতে টান পেলাম। পিছনে ফিরে ওনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

___” খালি পালাই পালাই করিস কেন? আমার পাশে কি একটু বসা যায় না?”
___” আমি কি করলাম?”(অবাক হয়ে)
___” না!তুই কি করবি? তুই তো কিছুই করিস না। স্বামীর সেবা-যত্ন নিয়ে তোর কোনো চিন্তা আছে আদৌ?”
আমি মুখ টিপে হেসে ওনার পাশে বসে পড়লাম। উনি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছেন। আমি ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললাম,
___” আসলে আমি তো জানি না কিভাবে সেবা-যত্ন করতে হয়!একটু শিখিয়ে দিন না!!”
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। আমি হাসতে লাগলাম। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উনি বললেন,

___” শিখিয়ে দিবো তাই না?”
আমি হাসতে হাসতে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
___” হুম হুম। দিন শিখিয়ে।”
___” দাঁড়া তোকে বাপের বাড়ি পাঠাচ্ছি। আর নানুকে বলবো যে তুই আমাকে একটু সময় দিস না।”
___” এই না না! দাদী জ্ঞানের ভান্ডার নিয়ে বসবে।”
___” দেখাচ্ছি মজা।”(শয়তানী হেসে)

বলেই উনি ফোনটা বের করতে নিলেন। এদিকে আমিও ওনাকে কিছুতেই দাদীর কাছে বিচার দিতে দিবো না। আমারে পতীভক্ত বানায় ফেলবে। একপ্রকার টানাটানি লেগে গেলো ফোন নিয়ে। আজ তো আমি বিচার দিতে দিবোই না।এমন সময় ফুপি রুমে ঢুকে বললো,
___” কিরে আব্বু,খাবি… ?”
আমাদেরকে দেখে কথাটা সেখানেই থেমে গেলো। এদিকে ফুপিকে দেখে আমরাও শান্ত হয়ে বসলাম। তবে গুতাগুতি চলছে। ফুপি অবাক হয়ে বললো,

___” কিরে!! তোরা বাচ্চাদের মত ঝগড়া করছিস কেন?”
সাদি মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
___” তোমার মেয়েকে জিগাও।”
ফুপি আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।আমিও মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
___” তোমার ছেলেকে জিগাও।”
ফুপি মাথায় হাত দিয়ে বললো,
___” আমি কাউকেই জিজ্ঞেস করবো না। খেতে চল তোরা। বাঁদরগুলা।”
উনি আমার চুল টেনে ধরে বললেন,

___” আম্মু,এরে সারাদিন পড়তে বসায় রাখবা বুঝছো।”
আমি ফুপির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম,
___” ফুপি দেখো, আমি চুলে ব্যাথা পাই।”
ফুপি সাদির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
___” মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে।ছাড় ওকে।”
উনি চুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
___” বাজে লোক।”
___” বেয়াদব মাইয়া।”

ছাদটাকে ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেট করেছি আমি আর ফুপি। ফুপাও আছেন। তবে ওনাকে দিয়ে কি কাজ করানো যায়? তাই উনি আমাদের ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন। সাদি রুমে বসে কাজ করছে। ওনাকে বলেছি যে ফুপি ডেকেছে। তাই এখনো অবধি ডাক পড়েনি আমার। ১২ টা বাজতে আর ৫ মিনিট বাকি। সবাইকে রেডি হতে বলে আমি নিচে চলে এলাম। সাদি এখনো।লেপটপে কাজ করছে। আমি গিয়েই লেপটপটা বন্ধ করে দিলাম। উনি রাগী গলায় বললেন,

___” এটা কি করলি?”
আমি ওনার হাতের বাহু ধরে টানতে টানতে বললাম,
___” আমার সাথে আসুন।”
উনি উঠে দাঁড়ালেন। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। জানি!কিছু বলতে পারবে না।হাত ধরে টানতে টানতে ছাদে আনতেই আমাদের ঘরের বড় ঘড়িটায় বারোটা বাজার ঘন্টা জানান দিলো।আমি হেসে বললাম,
___” হ্যাপি বার্থডে স্যার। ”

উনি অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। ফুপি আর ফুপাও এগিয়ে এসে উইশ করলেন। সাদি হেসে বললেন,
___” আমার তো কাজের চাপে মনেই ছিলো না।”
ফুপি সাদির মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
___” কিন্তু আমরা কি আমাদের ছেলের জন্মদিন ভুলতে পারি?”
এভাবেই টুকটাক কথা বলতে বলতে কেক কাটা শেষ করলাম সবাই। কিছুক্ষণ পর ফুপি আর ফুপা রুমে চলে গেলো। আমি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সাদি আমার পাশেই দাঁড়ানো।রাত তখন ১ টা। আমি সাদির দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললাম,

___” কি? সারপ্রাইজ কেমন দিলাম?”
___” কে? তুই?”( ভ্রু নাচিয়ে)
___” তো আর কে স্যার! আমিই তো।জিনিয়াস গার্ল।”
উনি আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললেন,
___” মাথামোটা।”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাাম,
___” আপনি মাথামোটা।”

উনি কিছু বলছেন না দেখে আমি ওনার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। উনি হাসছেন। তা দেখে আমিও হেসে দিলাম। তারপর বললাম,
___” রুমে চলুন।”
বলেই সামনে এগিয়ে যাবো এমন সময় আঁচলে টান অনুভব করলাম। পিছনে ফিরে জিজ্ঞেস করলাম,
___” কি?”
উনি আঁচল ধরে টান দিতেই আমি ওনার বুকে আছড়ে পড়লাম।উনি আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

___” আমার বার্থডে গিফট কই ধানিলঙ্কা?”
___” এত বড় সারপ্রাইজের পরও গিফট লাগে নাকি স্যার?”( হালকা হেসে)
___” গিফট না দিলে তো আমি এই সারপ্রাইজ মানবোই না।”
___” আচ্ছা তাই? ঠিকাছে। আপনার যা ইচ্ছে চেয়ে নিন।”(মুচকি হেসে)
উনি আচমকা আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আকস্মিক এমন হওয়ায় ভড়কে গেলাম আমি। ভড়কানো গলায় বললাম,
___” এই কি করছেন?”
উনি দুষ্টু হেসে বললেন,
___” আমি চেয়ে নিই না। নিয়ে নিই।”

ওনার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম আমি।এই প্রথম হয়তো উনি মুখ ফুটে আমার কাছে কিছু চেয়েছেন। আর আমি যে সেটা দিবো না তেমন টা নয়। আমি ওনাকে আমার কাছে আসতে দিবো। আপন করে নেওয়ার একটা সুযোগ ওনার প্রাপ্ত। বিছানায় শুইয়ে দেওয়ায় ঘোর কাটে আমার। লজ্জায় গাল গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি দুই গালে হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। উনি আমার হাতগুলো গাল থেকে সরিয়ে দিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।

___” তুই জানিস তোর এই গালগুলোর উপর কবে থেকে লোভ আমার?”
আমি কিছু বললাম না।হার্টবিট বাড়ছে ক্রমাগত। এক নতুন অনুভূতি পেতে চলেছি।ওনার একটা হাত আমার খালি পেটে অবস্থান করছে। বারবার ঘর্ষণের ফলে কেঁপে উঠছি আমি। ঘাড়ের পাশের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে চুমু দিতেই কেঁপে উঠলাম আমি।কাঁপা গলায় বললাম,
___” কক..কি ক..করছেন!”

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ১০

উনি তেমন পাত্তা দিলেন বলে মনে হলো না। গলায় একটার পর একটা চুমু দিয়ে চলেছেন। এদিকে আমার হাতজোড়া কাঁপছে। ওনাকে জড়িয়ে ধরার মত শক্তিও নাই আমার।গলায় তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করতেই ওনার মাথার চুল আঁকড়ে ধরলাম আমি। উনি শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিলেন।নাহ!আর সহ্য করা যাচ্ছে না। আবেগে করছি না ভালোবাসায় তা জানি না কিন্তু আজকের পর ওনাকে নিজের আরো আপন হিসেবে মেনে নিচ্ছি। ওনাকে নিজের অধিকার বুঝিয়ে দিচ্ছি। নতুন প্রেমে সূচনা ঘটাচ্ছি। আজকের চাঁদ তার সাক্ষী থাক!

রাঙিয়ে দিয়ে যাও পর্ব ১২