রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৩

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৩
সিমরান মিমি

বাংলাদেশ কর্ম কমিশনে দায়িত্বরত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে একজন দন্ডপ্রাপ্ত সরকারের জনপ্রতিনিধি বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রথম দণ্ডিত হওয়ার দিন থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য হয়ে থাকেন। তাঁর মতে, সংবিধানের ৬৬ নং অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো, যারা জনপ্রতিনিধি, তাদের কেবল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হলেই হবে না, তাদের সুনাম অবশ্যই প্রশ্নাতীত হতে হবে।

এছাড়াও বিচারিক আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার পক্ষে আরও যুক্তি রয়েছে। যেমন, ঋণখেলাপিরা, একবার ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে, আপিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এ ছাড়া ‘গভর্নমেন্ট সার্ভেন্ট (ডিসমিসাল অন কনভিকশন) রুলস’ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অপসারিত হন−পরবর্তী সময়ে আপিলে দণ্ড রহিত হলে অবশ্য তাঁরা পুনর্বহাল হবেন। এর কারণ হলো, দণ্ডপ্রাপ্তরা যেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে না পারেন। একই যুক্তি সংসদ সদস্যদের বেলায়ও প্রযোজ্য, কারণ সংসদ সদস্যরাও গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ও মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রচলিত আইনে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল দায়ের করার পর অতীতে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলেও ‘জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা, ২০০৭’-এর অধীনে দণ্ডপ্রাপ্তরা সে সুযোগ পাবেন না। বিধিমালার ১১(৫) ধারা অনুযায়ী, ‘এই বিধিমালার অধীন দায়েরকৃত কোন মামলায় কোন ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এবং উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হলে, উক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদসহ যে কোন স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবে।’

দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডপ্রাপ্তির দিন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। ফলে অনেকের আশঙ্কা যে, দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা আবারও উচ্চ আদালতে আপিল ঠুকে দিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। তবে আশার কথা, বিদ্যমান আইনেই তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা যায়। বিদ্যমান আইনি ও সাংবিধানিক বিধিবিধান এবং আদালতের রায় বিশ্লেষণ থেকেও দেখা যায় যে বিচারিক আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার দিন থেকেই তাঁরা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হবেন। দণ্ডের বিরুদ্ধে শুধু আপিল দায়ের করেই তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ লক্ষ্যে তাঁদের দণ্ডের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ পেতে হবে।

পিরোজপুর (৩) এর সাংসদ নেতা পরশ শিকদার দায়িত্বরত অবস্থায়’ই তিনটি হত্যা এবং দুটো মানুষকে জঘন্যভাবে কুঁপিয়ে বিশেষভাবে অক্ষম করার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে এবং পরবর্তীতে সেই দন্ড প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডপ্রাপ্ত হওয়া মাত্র’ই বাংলাদেশ সরকার থেকে তাকে সাংবিধানিক আইনের উপর ভিত্তি করে দ্রুতই অপসারণ করানো হয়।পরবর্তীতে উক্ত জেলায় সরকারের নির্দেশে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী নির্বাচিত করে পুননির্বাচণ সংঘটিত করা হয় এবং পরবর্তীতে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

যদিও পরবর্তীতে একাধিকবার উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে পরশ শিকদারের সাজা কমানো হয় এবং শেষ অবধি আইনি সহায়তায় প্যারোল প্রক্রিয়া’য় মুক্তি দেওয়ার পরে পুনরায় আদালতে আপিল করে পুননির্বাচনের আওতায় আসার চেষ্টা করলে অনেকাংশেই সফল হতেন। কিন্তু তাও তিনি নির্জীব।জীবনের অধিকাংশ সময় এই রাজনীতি,জনকল্যাণ,ক্ষমতায় ব্যয় করে সবথেকে ভুল করেছেন।একমাত্র ছোট ভাইয়ে’র নৃশংস মৃত্যু,বোনের সম্ভ্রম সবকিছুই ক্ষুইয়ে’ছে এই রাজনীতির জন্য।আর নয়।এতো রক্তপাত,প্রতিটা পদে পদে জীবনের অনিশ্চয়তা,প্রিয় মানুষ গুলো বেদনার্ত চিৎকার আর নয়।আর কিছুতেই এসব নিতে পারবে না পরশ।সহ্যশক্তি চরম সীমায় পৌছে গেছে তার।এখন খুব সাধারণ ভাবে জীবনটাকে কাটাবে সে।

নিজের পুরনো স্টাডিরুমে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে নিরব হয়ে জীবনের চরম সত্যটাকে ভাবছিলো পরশ।নাহ, এটা তার একার স্টাডিরুম নয়।পাভেলের’ও ছিলো।যখন সবাইকে জোর গলায় ধমক মেরে নিরবে এসে নিজের স্টাডিরুমে বই পড়তো ঠিক সেই সময়গুলোতেই ইচ্ছে করে বেশী জ্বালাতো পাভেল।কখনো সব কলম, কখনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই,তো কখনো নোটস নিয়ে ঘায়েব হয়ে যেত।সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে যখন পাওয়া যেত,তখন অনুপস্থিত জিনিসপত্রের সাথে হাতের দাবাং মার্কা কিল,ঘুষি পড়তো তার পিঠে।আচমকাই হেসে ফেললো পরশ।

রাতের প্রথম প্রহর।ঘড়ির কাঁটা তখন সবেমাত্র আট’টায় ছুয়েছে।সারাদিনের রৌদ্রের তাপমাত্রা’কেও হার মানিয়ে রাতের সেই ভ্যাঁপসা গরম আশেপাশের মানুষ কে অস্থির করে তুলেছে।রান্নাঘর থেকে প্লেটের টুং টাং শব্দ ভেসে আসছে।স্পর্শী প্লেট ধুয়ে সেগুলো ডাইনিং এ রাখছে।আর পিয়াশা পাশেই তার গচ্ছিত রাখা শৌখিন প্লেট,চামচ,গামলা নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখছে।

সকালেই এতোগুলো জিনিস নামানো হয়েছিলো অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য।সারাটা সংসার জীবনের গোছানো শৌখিন জিনিসগুলো আলতো হাতে ছুয়ে দিয়ে সময়টাকে মনে করছে।
এরইমধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ আসতেই চমকে দাড়ালো স্পর্শী।পরশ স্টাডিরুমে,প্রেমা নিজের রুমে,মহীউদ্দীন শিকদার সোফায় বসেই নিজের স্কুলের কিছু পেপার’স দেখছেন।তাহলে হুট করে এই অসময়ে কে আসবেন?

শশুরকে নিজ কাজে মগ্ন দেখে নিজেই সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল স্পর্শী।আলতো হাতে খিল খুলতেই এক ঝটকা ভ্যাঁপসা হাওয়া’র সাথে ভেতরে প্রবেশ করলেন রাজিয়া বেগম।পেছনে তার স্বামী এবং প্রিতম ও রয়েছে।ডান ভ্রুঁ টা ক্ষানিকটা কুঁচকে তাদের উদ্দেশ্য টা বুঝতে চাইলো স্পর্শী।প্রিতমের লাল হওয়া চোখ,সাথে উসকোখুসকো চুল দেখেই ঘটনা’আঁচ করতে পারলো সে।মিষ্টি হেসে সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বলে সোফায় বসতে দিলেন।ইতোমধ্যে মহীউদ্দীন শিকদার ও অবাক হয়ে গিয়েছেন।বিকেলে ঘটা ঘটনার আংশিক ও তিনি বা পরশ কেউই কিচ্ছু জানে না।স্পর্শী আলতো হেসে রান্নাঘরে এলো।পিয়াশার দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হেসে বললো-

ওমা, তোমার মেয়ের বিয়েটা বুঝি রাতের মধ্যেই হয়ে যাবে।দ্রুত যাও,তোমার কুটনি বেয়ান এসেছে।
বলেই দ্রুত চুলা ধরালো স্পর্শী।ত্রস্ত হাতে ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে পুনরায় চুলার কাছে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন পিয়াশা।ভেবেছিলো হয়তো আলতাফ বা তার বউ এসেছে।কিন্তু হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত কারো আগমনে দুরুদুরু বুক নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলেন।হয়তো বিয়েটা ভাঙতে এসেছে তারা।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নাস্তার ট্রে নিয়ে সবার সামনে হাজির হলো স্পর্শী।কিছু ফল,চা-বিস্কুট আর ডিম নিয়ে তাদের আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করলো।এতোক্ষণে মুখ খুললো রাজিয়া বেগম।হঠাৎ কেন এসেছেন এই প্রশ্নে এতোক্ষণ হেয়ালি করে সবার সাথে মজা করে বলেছিলেন”আত্নীয় দের বাড়িতে কি আসা যায় না”।কিন্তু এখন সত্যটা সবার সামনে প্রকাশ করা উচিত।তার বাম পাশেই প্রেমা বসা রয়েছে।এখানে এসেই পিয়াশাকে দিয়ে প্রেমাকে আনিয়েছে।
হুট করে স্পর্শীর হাত ধরে নিজের পাশে বসালেন রাজিয়া।তারপর হেসে বললেন-

দেখো না মা,প্রিতমটা আমার ভুল বুঝেছে।সকালে ভুল করেই তোমার স্বামীর সাথে মেয়েটার বিয়ের কথা বলেছিলাম।জানার পর তো সবটা চুকেই গিয়েছিলো।আমি তো ব্যাস ওই মজার ছলেই বেয়ান আর তোমার সাথে রসিকতা করেছিলাম।তোমাদের পরিবারে আমি কে নাক গলানোর।

তাও ক্ষমা চাচ্ছি আমি।দেখো না,প্রিতমটা আমার বাড়ি ঘর ভেঙেচুরে লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে।আমি নাকি ওর সাথে প্রেমার বিয়েটা ভেঙে ছি।ওকে এতো বললাম বিশ্বাস ই করলো না।আরে বাবা,প্রেমা মাকে তো আমিও খুব পছন্দ করি।কবে কি না কি হয়েছে সেটাতে তো আর ওর দোষ নেই।তাই বলে ও নাকি প্রিতম কে আংটি ফিরিয়ে দিবে বলেছে।তুমি একটু বোঝাও না ওকে।

আর বেয়ান আপনিও, মজা বোঝেন না।স্পর্শী মাও তো আমার কাছে প্রেমার মতোই।ওকে খারাপ চোখে দেখবো কেন আমি?তাই না মা।তুমি কিছু মনে করো না হ্যাঁ।
আলতো হাসলো স্পর্শী।বললো-
আরে না না আন্টি।কি মনে করবো আমি।আমিও তো মজাই করছিলাম।আর তাছাড়াও আমার শাশুড়ী তো খুব ভালো।হুট করে আপনার মধ্যে অন্যদের মতো টিপিকাল শাশুড়ী দেখে বেশ মজা করতে ইচ্ছে করছিলো।তাই করেছি।আমি কিছু মনে করিনি।

ভ্রুঁ কুঁচকে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে আছে পরশ।কি এমন হয়েছে যে সে জানে না?আর স্পর্শীও বা তাকে বলে নি কেন কিছু?হাঁফ ছেড়ে বাচঁলেন রাজিয়া বেগম।ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো-
দেখছিস।ওরা কিচ্ছু মনে করে নি।তুই শুধু শুধুই পাগলামি করিস।
প্রিতম আগের মতোই নিরব হয়ে রইলো।তারপর মা কে কিছু একটা ইশারা করতেই রাজিয়স বেগম উত্তেজিত হয়ে পুনরায় বললেন-

ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ। আসলে কি বলুন তো আমরা বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলেছি।পরশু শুক্রবারেই বিয়েটা সারা যাক।যত দেরী করবো ততই ঝামেলা বাড়বে।তার থেকে বরং শুক্রবারেই সব ঝামেলা শেষ করা যাক।
টানটান হয়ে সোফায় বসে পড়লো পরশ।সকল নিরবতাকে ভেঙে বললো-
কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কি করে হয়?গোছ গাছের ও তো সময় লাগবে একটা।
তাল মেলাতে গিয়েই ছেলের দিকে তাকিয়ে বেকে বসলেন রাজিয়া বেগম।বললেন-

আরে কাল সারাদিন রাত তো আছে।আর শুক্রবারে না হয় কাবিন টা করে হুজুর ডেকে বিয়েটা করিয়ে নিলাম।অনুষ্ঠান ধীরে সুস্থেও করা যাবে।
তাল মেলালো স্পর্শী।বললো-
হ্যাঁ তাইতো।যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল।আর প্রেমা বিকেলে একটু রেগে গেছিলো।ও বিয়েতে রাজি আছে।আপনাদের চিন্তার কিছু নেই।

রাত সাড়ে এগারোটা।হাত মুখ ধুয়ে সবেমাত্র শুতে এসেছে স্পর্শী।এরইমধ্যে বালিশের নিচে থাকা ফোন বেজে উঠলো। ওঠাতেই স্ক্রিনের উপর “খালামনি” লেখাটা চোখে পড়লো।এ যেন ঘুমোনোর আগে ঘুমপাড়ানী গানের সুর।মিষ্টি হেসে কানে নিতেই ওপাশ থেকে বিপাশার থমথমে সুর ভেসে আসলো।সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী। নোয়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

কি হয়েছে খালামনি?তুমি এমন ভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে?
রেগে গেলেন বিপাশা।কন্ঠে তেজ এনে বললো-
তোকে ছোটবেলায় আমার কাছে রাখা মোটেও ঠিক হয়নি।এখন পান থেকে চুন খসলেই সবাই আমার খুঁত ধরে।সবাই আমাকে কথা শোনায়।আমি তোকে শিক্ষা দিতে পারি নি।
থেমে,

তুই এতটা স্বার্থপর কি করে হলি মা।তোকে তো এতটাও কঠোর হতে বলি নি আমি।স্পর্শী উনি তোর বাবা।তোকে জন্ম দিয়েছেন উনি।যাই হয়ে যাক না কেন তার তো কোনো দোষ নেই।তোর শশুড়বাড়ির সবাই যেমন তাদের সন্তান হারিয়েছে,মেয়ের ইজ্জত হারিয়েছে।তেমনি তোর বাপের বাড়ির লোক ও তাদের জলজ্যান্ত দুটো জোয়ান ছেলে হারিয়েছে।হোক না তারা খারাপ,হোক না দোষ তাদের।কিন্তু তাদের বাবা মায়ের কাছে তো তারা সোনার ছেলে।তাদের নারী ছেড়া ধন।তোর ভাই স্পর্শী।

এতোদিন ঢাকায় ছিলি,পিরোজপুরে যাস নি,তোর বাবার বাড়ির সাথে কোনো কন্টাক্ট রাখিস নি ভালো কথা।আমি বলার পরেও কারো কাছ থেকে কোনো সাহায্য ও নিস নি।সেটাও ভালো কথা।সব ভুলে ঢাকায় থাকতি তাও কখনো আমি তোকে সরদার বাড়ির কারো কথা বলতাম না।কিন্তু এখন?এখন তো তুই পিরোজপুরেই আছিস।ওই অসুস্থ, বিছানায় পড়া বয়স্ক মানুষ টাকে কি একবারের জন্য ও দেখে আসতে পারিস না।যে কিনা প্রতিটা সেকেন্ড ধুকে ধুকে মরে।কি কপাল ওনার।তিন তিন টা সন্তান, অথচ তাকে দেখার কেউ নেই।বড় ছেলেটা খুন হলো,আর মেয়ে দুটো তাকে তো দূর, তার বাড়ির ধারে কাছেও ঘেষে না।স্পর্শী,উনি তোর জন্মদাতা পিতা।তোর কি একটুও মায়া করে না ওনার জন্য।

ছলছলে চোখ নিয়ে ফোনের ওপ্রান্তের বলা কথাগুলো শুনলো স্পর্শী।তারপর কন্ঠে কাঠিন্য এনে বললো-
সত্যি কথা বলবো খালামনি।আমার ওনার জন্য একটুও মায়া করে না।যতটুকু আছে সেটা দায়বদ্ধতা,বাস্তবের দুয়ারে দাড়ানোর কারনে সামান্য অনুভূতির জাগরণ।কেন জানো?কারন উনি আর আমার মধ্যে ওই সব মেয়েদের মতো সম্পর্ক নেই যারা তাদের বাবার হাত ধরে বড় হয়।তাদের কাধে চড়ে বিমানে ওড়া পর্যন্ত সপ্ন দেখে।বিশ্বাস করো,যতটুকু মায়া আমার খালুর জন্যও আছে তার ছিটেফোঁটা ও নেই ওনার জন্য। কেন থাকবে?

আরে বাবা তোমরা বুঝতে কেন পারছো না।বাস্তবতার চেয়ে বেশী কিছু আশা কেন করছো আমার কাছে।আমি বড় হয়েছি ওনার থেকে অনেকটা দূরে,বুঝতে শিখেছি অন্যের হাত ধরে যেখানে বাবা নামক শব্দটা শুধুমাত্র নিজের বায়োডেটায় লাগতো।ব্যাস ওই বাবা নামক শব্দটুকু এটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
আর যাই হোক,উনি আমার বাবা।সামান্য হলেও টান রয়েছে আমার। আমি জানতাম না উনি অসুস্থ।কালকে যাচ্ছি ও বাড়ি।

জোরে দম ছাড়লেন বিপাশা।শান্ত কন্ঠে বললো-
তোর শশুড়বাড়িতে আবার সমস্যা হবে না তো মা?
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো স্পর্শী।বললো-

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪২

আমি কারোর ধার ধারি না।যেতে মন বলেছে,যাব।এতে যদি কাল এ বাড়ি থেকে যাওয়া আমার সংসারের জন্য সমাপ্তি ও হয়, তাও যাব।রাখছি,ঘুমাবো।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৪