রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৪

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৪
সিমরান মিমি

আমি কারোর ধার ধারি না।যেতে মন বলেছে,যাব।এতে যদি কাল এ বাড়ি থেকে যাওয়া আমার সংসারের জন্য সমাপ্তি ও হয়, তাও যাব।রাখছি,ঘুমাবো।
–তাতে তোমার সামান্যতম ও কষ্ট হবে না,তাই না?

চমকে পিছনে ফিরলো স্পর্শী।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে কথা’টা বললো পরশ।মুহুর্তে’ই অসস্তি’তে ভেসে গেল স্পর্শী।আমতা-আমতা করে বালিশ ঠিক করতে করতে বললো-
কিসের কষ্ট?আর কি সব বলছেন আপনি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকলো পরশ।আলতো হাতে স্পর্শীর দু-বাহু ধরে বিছানায় বসালো।তারপর কিঞ্চিৎ হেসে বললো-
জানো তো স্পর্শীয়া,সম্পর্কের সেই শুরু থেকে’ই তোমার পক্ষ থেকে সবসময়’ই একটা গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করেছি আমি।ফোন দিয়ে কথা বললেও তুমি খুশি ছিলে,না বললেও খুশী ছিলে।কখনো নিজে থেকে আমার খোজ নিতে চাও নি।আমি তোমার কাছে থাকি কিংবা দূরে সরে যাই এমন কিছুতেই তোমার কিচ্ছু আসে যায় না।আমার জন্য কোনো আলাদা অনুভূতি’ই কখনো লক্ষ করি নি তোমার মাঝে।আমার বিপদেও কখনো তোমায় ভেঙে পড়ে দিশেহারা হয়ে যেতে দেখি নি আবার আমার সুখেও কখনো ততোটা ও উৎফুল্ল হতে দেখি নি।শুধু কি দেখেছি জানো?
থেমে,

প্রয়োজন দেখেছি।একাকিত্বের বেদনা কে মোছার জন্য শুধুমাত্র আমার কাছে আসতে দেখেছি।তোমার একটা পরিবার,সংসারের অভাব দেখেছি।আর সে জন্যই আমাকে তোমার পারফেক্ট মনে হয়েছে দেখে জড়িয়েছো জীবনের সাথে।এর থেকে আলাদা অনুভূতি কখনো তোমার মধ্যে দেখি নি আমি।এরকম টা কেন হলো বলোতো?আমি তো এমন’টা কখনো চাই নি।একজন নরম,স্নিগ্ধ,বাচ্চামো আবদারে ভরপুর একজন স্ত্রী চেয়েছি।তাই বলে তুমি ভেবো না তোমার এই কঠিন,সবকিছুতে নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়াতে খুশী না আমি।অবশ্যই খুশী।আমি চাই আমার স্ত্রী একদম স্বাধীন থাকুক।প্রতিটা বিপদে দাবানলের মতো দ্রুত এগিয়ে যাক।কিন্তু তাই বলে এতটা পাষান কিভাবে মানবো আমি।

পৃথিবীর পুরো মানুষের সামনে একজন নারী পর্বতের মতো মাথা উঁচু থাকলেও দিন শেষে তার স্বামীর বুক অবধি মাথাটা রাখা উচিত।প্রতিটা বিপদে, আপদে,ভালোবাসায়, অভিমানে স্বামীর বুকে মাথা রেখে অঝোরে কান্না করা,নানারকম বাচ্চামো আবদার করা, দিনশেষে সকল অভিযোগ করা ব্যাস এটুকুই তো চেয়েছি।

কিন্তু তুমি কি করছো?প্রতিটা বিষয়ে আমাকে জানানো তো দূর,নিজে সবার আগে সেখানে পড়ছো।তোমার যেটা ভালো মনে হচ্ছে সেদিকেই চলছো,আমার সামান্য পরামর্শ টুকুও নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছো না।এগুলো বলছি বলে এটা ভেবো না,আমি তোমাকে আমার সামনে মাথা নিচু করে থাকতে বলছি।একদমই এটা চাইছি না আমি।শুধুমাত্র কিছু আবদার চাইছি তোমার কাছে যেগুলো একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে করে।

এই যে তুমি প্রতিটা কথায় সবাই’কে বলে বেড়াও “তোমার যা ইচ্ছে তাই করবে,কেউ তোমাকে বাধা দিতে পারবে না,আর দিলেও সে সম্পর্ক তুমি রাখবে না।এটা করে কি বুঝাতে চাইছো তুমি?যে এই সম্পর্ক টা রাখার জন্য আমি মরিয়া হয়ে আছি,তোমার মিনিমাম মায়া টুকুও নেই।তাই তো।কই?তুমি তো কখনো শক্ত গলায় আমার কাছে এসে বলোনি ” নেতামশাই,আমি হাজার ভুল করলেও আপনি আমাকে কখনো ছাড়তে পারবেন না।বলেছো কখনো?বরং কোনো ভুল দেখলে নিজে থেকে সম্পর্ক টা গুটিয়ে নিয়ে যেতে চাইছো।

তোমার বাবা অসুস্থ,তাকে দেখতে আদোও গিয়েছো কিনা,কিংবা সামনে যাবে কি না এসব ব্যাপারে কখনো আমি বা আমার পরিবার কিছু জিজ্ঞেস করেছি।আর নাতো তুমি কখনো তোমার কোনো কাজে আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছো।চাওয়াটাও ভীষণ হাস্যকর ব্যাপার।তুমি একজন উকিল,নিজের উপর ডিপেন্ড করে চলো তুমি,জীবনে বরাবর’ই স্বাধীন।স্বামীর অনুমতি নিয়ে কি করবে তুমি?

যাই হোক,এসব কথা কোনোকালেই আমি তোমাকে বলতে চাই নি।শুধুমাত্র এতটুকু’ই বলছি চলাফেরায়,আচার-আচরণে আরেকটু মার্জিত হও।তুমি যেটাকে ভালো হিসেবে স্ট্রেইটলি বলে দাও সেটা অন্যদের কাছে ঝগড়ার সমান।এতটা স্পষ্টবাদী হতে নেই স্পর্শীয়া।কথাবার্তায় আরেকটু সফট হও।

সবাই তো অন্তর্যামী নয় যে তুমি যেভাবে কথা বলবে তারা সেভাবেই নেবে।আর হ্যাঁ, এই যে তোমার স্বামী গত চার বছর ধরে জেল খেটেছে,ইনফ্যাক্ট এতটা খারাপ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে এসেছে সেই অনু্যায়ী সামান্যতম স্নিগ্ধতাও তোমার কাছে নেই।এই চারটা বছরে তুমি থেমে নেই স্পর্শীয়া।

লেখাপড়া,তোমার স্বপ্নের ওকালতি,স্বামীকে ছাড়ানো,সংসার সামলানো, জীবন-যাপন সবকিছুই বেশ ভালোভাবে সামলে নিয়েছো তুমি।কখনো আদোও মন খারাপ করেছো কি না তাও কেউ জানে না বরং তুমি জানাও নি।লোকে যেটা জেনেছে, সেটা হচ্ছে আমার মা-বাবার চোখের পানি।প্রতিটা সেকেন্ডে তাদের বেদানাতুর চিৎকার।তাই তারা সেটাই বলবে।একটু মানিয়ে নিতে শিখো।

আর হ্যাঁ, একটা বিষয়ে বেশ ভালো লাগছে জানো তো।এই যে আমার এতো তাড়াতাড়ি মুক্তি না হয়ে যদি ফাঁসি বা যাবতজীবন হয়ে যেতো তাও তুমি নিজেকে সামলে নিতে পারতে।সত্যি’ই তো কারো জীবন কি কারো জন্য থেমে থাকে নাকি।

যাই হোক,সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যেও।আসার আগে আমাকে জানিয়ে দিও গাড়ি পাঠিয়ে দিব।
একটানা কথাগুলো বলে থামলো পরশ।বুকের ভেতর’টা কেমন দুঁমড়ে মুঁচড়ে যাচ্ছে।সে না থাকলেও স্পর্শীয়া সুখি।অথচ দেখো,স্পর্শীয়ার সামান্য অনুপস্থিতি ভাবলেও দম বন্ধ হয়ে যায় তার।নিজের সমস্ত অভিযোগ’কে সামলে নিয়ে বিছানার ও প্রান্তে গেল পরশ।

স্পর্শী এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।এ যেন স্বপ্ন দেখছে সে।ছলছল চোখে এখনো পরশের দিকে তাকিয়ে আছে।কান্নাগুলো কন্ঠনালি ভেদ করে বাইরে বের হতে পারছে না।বারবার ঢোক গিলে সেগুলোকে হজম করার চেষ্টা চালাচ্ছে।নিজেকে সামলে শান্ত গলায় বললো-

শুধু কি লোক দেখানো কান্না করলে’ই বোঝা যায় সে কষ্টে আছে?
নিরব পরশ।স্পর্শী এই নিরবতা সহ্য করতে পারলো না।চেচিয়ে বললো-
এতোক্ষণ তো অনেক ভাষন দিলেন।এখন কেন চুপ আছেন?আমি আপনার মা-বাবার মতো লোক দেখিয়ে কান্না করতে পারি নি বলে আমার কষ্ট হয় নি।আমি অন্য পাঁচটা বউদের মতো চিৎকার করে হাহাকার করতে পারি নি বলে আমার কোনো কষ্ট নেই।আমি আমার স্বামীকে ভালো বাসি না।এটাই তো বলতে চাইছেন?
পরশ শান্ত গলায় বললো-

তোমার বোঝার ভুল।চিৎকার করো না।চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
মুহুর্তে’ই আবারো চেঁচিয়ে উঠলো স্পর্শী। বললো-
কেন ঘুমাবো?আপনি’ই তো বললেন। আমার কোনো অনুভূতি নেই,কষ্ট নেই,ভালো লাগা নেই,আবেগ নেই।আমি লাফাঙ্গা মেয়ে, চলাফেরায় মোটেও মার্জিত নই।আমার স্বামী গত চার বছর ধরে জেলে ছিলো আর আমি গত চার বছরে সুখে -শান্তিতে ঢাকা শহরে শুধু উড়েছি।ইচ্ছে মতো আড্ডা দিয়েছি,নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছি।অথচ কখনো এটা ভেবে দেখেননি কেন ছিলাম ওই ঢাকায়?

আরে আজ চার বছর পর আপনাকে আমি নিজে বছর খানেক দৌড়াদৌড়ি করে ছাড়িয়ে এনেছি তাও আপনার মায়ের চোখে ভালো বউ না আমি।তাহলে তখন কি করে থাকতাম?আরে আপনার পরিবার তো দূর,আপনি নিজেও তো আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।আমার নিজের পরিবার ও চোখে দেখতে পারেনি আমায়।সকল ভুলের কারন তো আমি ছিলাম তাই না।

যদি হাত -পা ছড়িয়ে সবার মতো কাঁদতে পারতাম তাহলেই সবাই বুঝতে পারতো আমার কষ্ট হচ্ছে।কেন?কি দরকার অন্যকে বোঝানোর যে আমি কষ্টে আছি।তারা আমার কষ্টকে মুছে দিতে পারবে?এই যে গত চার চার টা বছর ঢাকা শহরে ছোটাছুটি করেছে এর জন্য না টাকা লাগে নেতামশাই।এই যে তিন তিনবার আপনার কেস টাকে আদালতে উঠিয়েছি এরজন্য কত লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার হিসেব জানে আপনার বাবা?কেসের জন্য প্রথম দিকে ওনার থেকে টাকা আনলেও কখনো উনি আমাকে জিজ্ঞেস করে নি”মাসের পর মাস তুমি ঢাকায় থাকছো,ছোটাছুটি করছো,এই খরচ টা কই পাচ্ছো?

এই চার চার’টা বছর কম কষ্ট হয় নি আমার।আমিও জেল খানায়’ই ছিলাম নেতামশাই।সেই ভোর রাতে উঠে পড়ার পর চাকরিতে যাওয়া,নিজের পড়ালেখা সামলানো,সংসার সামলানো,নিয়ম করে আপনাকে দেখতে যাওয়া,পড়ার খরচ সামলানো এমনকি আপনার কেসের শেষের দিকের যাবতীয় খরচ সামলাতে হয়েছে আমায়।এতো এতো ব্যাস্ততার মধ্যে না কাঁদার সময়টুকুও পেতাম না আমি।আর দেখুন, আজ প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে আমাকে এইসব আজগুবি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ঠিক’ই বলেছেন আপনি আমার একাকিত্ব এর অভাবের কারনেই আপনার সাথে জড়িয়েছি আমি।সবকিছুতে একাই ওকালতি করি,কাউকে কিচ্ছু জানাই না।ভালো বলেছেন।আসলে কি বলুন তো,আমার তো আর ছোটবেলায় আবদারের মানুষ ছিলো না যে কোনো কিছুর অভাব হলে হাত পা ছড়িয়ে তার কাছে ছেলেমানুষী করবো।তাই বলে আমার খালামনি যে আমায় ভালোবাসে নি সেটা বলছি না আমি।কিন্তু কি বলুন তো,খালা তো খালাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।মা তো আর নয়।

চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলো স্পর্শী।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো-
যদি অন্যসবার মতো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতাম,ঘন্টায় ঘন্টায় মূর্ছা যেতাম,তাহলেই ঠিক হতো।কিন্তু দেখুন, আজ আমি পাষান, সত্যি’ই পাষান।স্বামী খুনের দায়ে জেলে,আর আমি ছুটছি অসুস্থ ননদ দিয়ে হস্পিটালে।স্বামী রয়েছে কারাগারে, আর আমি কান্নাকাটি বাদ দিয়ে ঢাকা ছুটছি উকিলের আশায়,বাড়ি ছুটছি শশুড়-শাশুড়ী ননদকে সামলাতে।সত্যিই এরকম পাষান খুব কম’ই হয়।

দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ সবকিছু শুনেছে পিয়াশা বেগম।স্পর্শীর চেঁচামেচিতে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে।অবস্থা বেগতিক দেখে বলে উঠলেন-
একি তোমরা এতো রাতে এতো জোরে ঝগড়া করছো কেন?
শাশুড়ীকে দেখতেই অন্যদিকে তাকালো স্পর্শী।রাগের মাথায় বললো-
ইচ্ছে হয়েছে চেঁচিয়েছি।আমার জামাই’য়ের সাথে আমি চেঁচাবো।আপনি কান পাতছেন কেন?
মুহূর্তে’ই বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো পরশ।ধমক দিয়ে বললো-

মুখ সামলে কথা বলো।আমার মেজাজ গরম করবে না বলে দিচ্ছি।মায়ের সাথে এ কেমন আচরণ তোমার?নিজের মা নেই বলে শাশুড়ী’কে তো আর মা ভাবতে পারছো না।তাই বলে এতোটুকু সম্মান ও কি দিতে পারো না?
মিইয়ে গেল স্পর্শী।রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।এখন এখানে থাকলে রাগ আরো বাড়বে।কাউকে কিচ্ছু না বলেই চুপ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ভীষণ হতাশ হলেন পিয়াশা বেগম।ছেলের উদ্দেশ্যেই ঝাঁঝালো স্বরে বললো-

দিলি তো মেয়েটাকে রাগিয়ে।জানিস ও একটু জেদি।তাই বলে এভাবে ধমক মারলি কেন?
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পরশ।যার জন্য ধমক দিলো সেই উলটো ঝগড়া করছে।থমথমে কন্ঠে মা কে বললো-
এই তুমিও যেমন বাচ্চা,তোমার বউমা ও তেমনি বাচ্চা।আমি এসব সামলাতে পারবো না।ঘুম পাচ্ছে আমার।যার ইচ্ছা সে যাক।

উত্তেজিত হয়ে গেলেন পিয়াশা।করুন কন্ঠে বলল-
যদি রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যায়।ও বাবা দেখ না মেয়েটা কোথায় গেল?আমার জন্যই যতো ঝামেলা হচ্ছে।
পরশ কোনোকিছু না বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো।পিয়াশা বেগম হতাশ হয়ে নিজেই খুজতে লাগলেন স্পর্শীকে।ড্রয়িংরুমে লাইট বন্ধ।চারদিকে ধু ধু অন্ধকার।পরশের রুম থেকে আসা আলোর ফালিটা সোফার উপর বসে থাকা স্পর্শীর অবয়বকে দেখালো।আলতো পায়ে সিঁড়ি হাতড়ে হাতড়ে স্পর্শীর পাশে গিয়ে বসলেন। তারপর করুন কন্ঠে বললেন-

আমি খুব খারাপ শাশুড়ী,তাই না।তুমি না বললেও আমি জানি।কিন্তু তাই বলে ছেলেটার তো কোনো দোষ নেই।ওর সাথে ঝগড়া করো না মা।
স্পর্শী ঢুকরে কেঁদে উঠলো।ভালো লাগছে না কিছুই।খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।পিয়াশা আলতো করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চামো গলায় বললো-

পরশ কি বেশী’ই বকাঝকা করেছে তোমায়?আমায় বলো,দু মা-মেয়ে মিলে নাকে দড়ি বেধে ঘুরাবো।তুমি না পারলে আমি শিখিয়ে দিবো। তোমার শশুরকে তো সেই কবে থেকে ঘোরাচ্ছি।আমার অভ্যাস আছে।শিখবে তুমি?
আচমকা হেসে উঠলো স্পর্শী।পঞ্চাশোর্ধ নারীর মুখে এমন বাচ্চামো কথা শুনলে কার না হাসি পায়?

রাত সাড়ে বারোটা।পরশ কাত হয়ে ওপাশে ফিরে ঘুমিয়ে আছে।আলতো পায়ে কোনো শব্দ না করে এপাশে শুয়ে পড়লো।প্রতিদিন ওই প্রশস্ত বুকটায় আদুরে বিড়ালের মতো লেপ্টে থেকে ঘুমায় স্পর্শী।রাতে ঘুমের মধ্যে সামান্য দূরে সরলেও দুহাত দিয়ে কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় পরশ।অথচ আজ কত দূরে শুয়ে আছে।আর পরশ তাকে ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়েছে।আচ্ছা সেকি খুব বেশী’ই পাষান হয়ে গেছে।যার কারনে নেতামশাই য়ের এই অভিমান।ঢুকরে কেঁদে উঠলো স্পর্শী।মুহুর্তেই কোমড় টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো পরশ।তারপর বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে বললো-

বলেছি কম কাঁদো,তাই বলে এখন কি সারা রাত দিন কেঁদে আমাকে বুঝাতে হবে যে তুমি কষ্ট পাচ্ছো।
স্পর্শীকে জ্বালানোর জন্য কথাটা বললেও মোটেও রাগলো না স্পর্শী।পরশের বুকে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললো-

আমার খুব কষ্ট হয় নেতামশাই।আপনার কোনো বিপদ হলে আমি একটুও শান্তি পাই না।গত চার চারটা বছর একটা রাত ও শান্তিতে দু-চোখের পাতা এক করতে পারেনি।আমি শুধুমাত্র সবার সামনে নিজের আবেগ গুলো তুলে ধরতে পারি না।খুব ভালোবাসি আপনাকে।আপনাকে ছাড়া একা থাকবো,এরকম’টা ভাবলেও দম বন্ধ হয়ে যায় আমার।খুব ভালোবাসি, বিশ্বাস করুন।অনেক ভালোবাসি আপনাকে।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৩

পরশ দুহাত দিয়ে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো স্পর্শীকে।সারা মুখে অজস্র চুমু একেঁ দিয়ে বললো-
আমি জানি তো পাখি।প্লিজ আর কাঁদে না, সোনা।আর কক্ষনো আমি এমন কিচ্ছু বলবো না।তোমাকে কাঁদতে একটুও মানায় না।প্লিজ চুপ করো ময়না পাখি।

রাজনীতির রংমহল শেষ পর্ব