রাজনীতির রংমহল শেষ পর্ব 

রাজনীতির রংমহল শেষ পর্ব 
সিমরান মিমি

সকালের শুভ্রতা মাখানো আলো’র রেশ চোখে বিঁধতে’ই চোখ কুঁচকে ফেললো স্পর্শী। আড়মোড়া ভেঙে উঠতে’ই পরশের শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হলো।এই লোকটা এমন কেন?প্রতিদিন সকাল বেলা বিছানা থেকে উঠতে গেলে কমপক্ষে আধ ঘন্টা তার সাথে যুদ্ধ করতে হয়।সজাগ থাকা কালীন ছাড়তে’ই চায় না।শেষে হার মেনে ওভাবেই শুয়ে থাকে স্পর্শী।পরশ পুনরায় ঘুমের ঘোরে যেতেই দ্রুত উঠে পড়ে।

ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে মুখ মুছতে দাঁড়াতেই কেমন অদ্ভুত লাগলো স্পর্শী’র।আগের থেকে শরীরে যেন উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে।মুখ’টা ফুলে ফুলে গুলুমুলু হয়ে গেছে।চেহারা’টাও যেন বেশ সুন্দর হয়ে গেছে।নিজের প্রতি’ই এক অদ্ভুত মায়া খুঁজে পেল স্পর্শী।এ যেন কোনো মায়ার রাজ্য।গায়ের থ্রি-পিসের দিকে তাকিয়ে বিতৃষ্ণা লাগলো।ধীর পায়ে আলমারি’র কাছে গেল।অনেক খুঁজে একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি বের করলো।ভীষণ’ই হালকা এবং নরম কাপড়’টা দুহাত দিয়ে গায়ের সাথে জড়িয়ে ধরলো।তারপর নিজে’ই নিজেকে বললো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হ্যাঁ স্পর্শীয়া,শাড়ি’টা ভীষণ সফট।তুই পড়ে অবশ্যই আরাম পাবি।আজকে এটাই পড়ে ফেল।
সকাল সবে আট’টা।ডাইনিং টেবিলে রুটি সাজিয়ে রাখছে স্পর্শী।কিছুক্ষণে’র মধ্যেই সবাই হাজির হলো।হঠাৎই সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে থমকে গেল পরশ।সামনেই শাড়ি পরিহিতা রমনী টি ব্যাস্ত পায়ে রান্নাঘরে যাচ্ছে তো আসছে।ফরসা শরীর’টা যেন পাতার মধ্য দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে তাকে।উফফফ!এখন তো একটা -দুটো চুমু খেতে’ই হবে।কিন্তু ভরা সমাজে নিজের ইচ্ছেটা’কে দমন করে নিলো পরশ।ত্রস্ত পায়ে আড়চোখে তাকাতে তাকাতে চেয়ারের পাশে এলো।অন্যদিকে তাকিয়ে স্পর্শী’র উদ্দেশ্যে চেপে বললো-

সকালে’র নাস্তা খাওয়ানোর আগে’ই এমন ক্ষুধার্ত বানানো’র প্লান’টা একটুও ভালো ছিলো না পাখি।এখন এই শুকনো রুটি তো গলা দিয়ে আর নামবে না।আমার কিছু ঠান্ডা,ঠান্ডা খাবার চাই।
চমকে উঠলো স্পর্শী।আশে-পাশে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো-
আঁচল ছাড়ুন নেতামশাই।আপনি কিন্তু আমাকে টিজ করছেন।একদম ইভটিজিং মামলা’য় ফাঁসিয়ে দিব।
খুঁক করে কেশে শাড়ির আচল ছেঁড়ে দিলো পরশ।কন্ঠ’কে খাদে নামিয়ে বললো-
তুমি এক গণমান্য নেতা’কে অপমান করছো স্পর্শী’য়া।সিরিয়াসলি?আমি কখনোই এমন ছিলাম না।

সরদার বাড়ি।আজ বহুবছর পর এ বাড়িতে পা রাখছে স্পর্শী।বাড়ি থেকে বারবার বলা সত্ত্বেও গাড়ি নিয়ে আসেনি সে।সিএনজি করে গেটের কাছে থামতে’ই দারোয়ান গেট খুলে দিলো।বাড়িটা’তে আগের সেই উৎসব, আমেজ মোটেও নেই।কেমন মরা বাড়ি’র মতো পড়ে রয়েছে।সদর দরজা’য় ঢুকতে’ই পুনরায় থমকে গেল স্পর্শী।ভেতর’টা একদম থমথমে।মনে হচ্ছে যেন প্রাণহীন কোনো বাড়ি।

রাজনীতি।এই রাজনীতি যেমন হুট করে কাউকে আকাশ ছোঁয়া সম্মানীয় করে দেয়, ঠিক তেমনি আবার সেখান থেকে টেনে মাটিতে ছুঁড়ে মারতে পারে।রান্নাঘর থেকে সোনালী বেগম বের হতে’ই স্পর্শীকে দেখলেন।আচমকাই ভীষণ খুশী হয়ে উত্তেজিত হয়ে সবাইকে ডাকতে শুরু করলেন।আওয়াজ শুনে ডান পাশের রুম থেকে দু-জন শক্ত-পোক্ত যুবক বের হলো।স্পর্শী তাকিয়ে’ই চিনতে পারলো এদের।এরা রিহান,জিহান।যদি সরদার বাড়ির ছেলেমেয়েদের মধ্যে কেউ বেঁচে থাকে তাহলে এই দুজন’ই রয়েছে।

বড় ছেলে দুটো তো কবেই খুন হলো।আর মেয়ে দুটো থেকেও নেই।আলতো হেসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো স্পর্শী।তারপর ধীর পায়ে হেটে গেল কাঙ্ক্ষিত রুমটির দিকে।
শামসুল সরদারের রুমে ঢুকতে’ই অবাক হয়ে গেল।সামনেই বিছানায় পড়ে আছে বাবা নামক লোকটি।সেই তেজ,সেই শক্তপোক্ত শরীর কোনোটাই নেই।কংকালসার এক দেহ নিয়ে বিছানার সাথে মিশে আছে।রুমের বাম কোনায় থাকা জানালা’টার দিকে তাকিয়ে কাত হয়ে শুয়ে আছেন।আচমকা’ই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।ধীর পায়ে তার পাশে গিয়ে বসে বললো-

আব্বু,
কান দুটো সজাগ তার বরাবর’ই।পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে এদিকে ফিরলেন।স্পর্শী’কে দেখতেই দুচোখের পানি ছেড়ে দিলেন।দুহাত বুঁকে চেপে ধরে নিরব হয়ে অভাবেই অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলেন।
স্পর্শী কিচ্ছু বললো না।না কোনো অভিযোগ দিলো আর নাতো কোনো অভিযোগ গ্রহণ করলো।আলতো হাতে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলো ওভাবেই।
আর্শি এ বাড়িতে আসে না অনেক দিন।বাবার সাথে আর্শিকে দেখা করাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলো স্পর্শী।প্রতি সপ্তাহের রবিবার দেখা করে যাবে এমন কথাও দিলো।

সরদার বাড়ি থেকে শিকদার বাড়ি আসতে’ই পুনরায় কিছু অদ্ভুত লক্ষণ দৃশ্যমান হলো স্পর্শীর সামনে।সেতো অবুঝ নয়।বেশ কিছুদিন ধরে’ই এমন’টা হচ্ছে।ধীর পায়ে ফার্মেসী’তে প্রবেশ করলো।কাঙ্ক্ষিত জিনিস’টি নিয়ে পুনরায় বাড়ি’র উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

হাত পা উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে। অদ্ভুত অনুভূতি’তে চোখে পানি এসে গেল।স্পর্শীয়ার এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে ভীষণ জোরে চিৎকার দিতে,পুরো বাড়ি জুড়ে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো লাফাতে।দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে একবার লক্ষ করলো।

নেতামশাই সকালেই ডেকোরেশনের লোকদের সাথে কথা বলতে গেছে।কখন সে আসবে আর কখন বলবে?পেট উগড়ে কথাগুলো বাইরে বের হতে চাইছে।এরইমধ্যে নিচ থেকে পরশের আওয়াজ শুনতেই এ দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামলো।মহীউদ্দীন শিকদার স্কুলে গিয়েছেন।প্রেমা বাড়িতেই নিজের রুমে বসে আছে। আর পিয়াশা বেগম রান্নাঘরে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ক্লান্ত পরশ কে সোফায় বসতে দেখলো।মুহুর্তে’ই দুষ্টুমিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
ত্রস্ত পায়ে এক লাফে কোলে বসলো। চমকে উঠলো পরশ।দুহাত দিয়ে পরশের গলা জড়িয়ে ধরে আলতো করে গালে চুমু দিতে লাগলো।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো পরশ। আশেপাশে তাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে স্পর্শীকে নামাতে নামাতে বললো-

আরে আরে পাগল নাকি তুমি?কি করছো ছাড়ো।এটা ড্রয়িংরুম।
পাত্তা দিলো না স্পর্শী।পুনরায় পরশের কোলে বসে শার্টের বোতাম খুলে বুকে আকিঝুকি করতে লাগলো।আদুরে কন্ঠে বললো-

নেতামশাই,কয়েক’টা ক্রিকেট টিম এনে দিন না আমায়।
কেঁশে উঠলো পরশ।বললো-
এটা কি ধরনের ছেলেমানুষী। কেউ দেখে ফেলবে।ছাড়ো।
ভ্রুঁ কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো স্পর্শী।পরশের কোলের উপর বসেই তার দু গাল চেপে ধরে বললো-

এমা!তা কেন?এটা বললে তো হবে না নেতামশাই।আমি এখন থেকে এরকম’ই করতে থাকবো।আমি নাকি কারো বুকে মাথা গুঁজে আবদার করি না।সে জন্যই কাল সারারাত ঝগড়া করলেন।এবার করলাম তো।ফটাফট কয়েক’টা ক্রিকেট টিম ডাউনলোড করে আমাকে দিয়ে দিন তো।
থেমে দাঁত মেলে হেসে দিয়ে বলল-

আপনি না দিলেও সমস্যা নেই।অলরেডি আমি ওদের এনে ফেলেছি।নেতামশাই,আপনার ছানাপোনা গুলো আসার জন্য একদম অস্থির হয়ে উঠেছে।
থমকে গেল পরশ।দুহাত দিয়ে স্পর্শীকে ধরে সোফায় বসালো।বললো-
এই এই আমার দিকে তাকাও।স্পর্শীয়া সত্যি কথা বলো প্লিজ।
থেমে আস্তে করে,

তুমি কি প্রেগন্যান্ট?
দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো স্পর্শী।পরশের বুকে মুহুর্তে ‘ই মুখ লুকিয়ে ফেললো। শরীরের সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিয়েছে পরশের। সোফায় গা এলিয়ে নিস্তব্ধ ভাবে বসে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর স্পর্শীর কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো-

মাকে বলেছো?
–নাহ,এখনো কাউকে জানাইনি।
বলে আসো।
স্পর্শীকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে শান্ত চিত্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো পরশ।ধীর পায়ে হেটে গেল গোরস্থানের দিকে।নির্দিষ্ট কবর’টার পাশে বসে দুহাত দিয়ে ছুয়ে দিলো সিক্ত মাটি।সকল উত্তেজনা,অনুভূতিকে ছুড়ে ফেলে ফিসফিস করে বললো-
ভাই শুনছিস?তোর বাবুর আম্মুর ছোট্ট একটা বাবু আসছে।খুশি হয়েছিস তুই?

রান্নাঘরের সামনের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো স্পর্শী।রান্না করতে থাকা পিয়াশার উদ্দেশ্যে বললো-
আচ্ছা মা,আপনার একা একা লাগে না?
বুঝতে পারলেন না পিয়াশা। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই স্পর্শী বললো-
এই যে অন্যসব শাশুড়ী রা ছেলের বিয়ের সাথে সাথে বউকে বলে”বউমা দ্রুত কয়েকটা নাতি -নাতনি নিয়্র হাজির হও।আমার একা একা ভালো লাগছে না”।আপনার এমন মনে হয় না?
বোকা বনে গেলেন পিয়াশা।বললেন-

তা কেন মনে হবে না।নাতি-নাতনি আসলে কে না খুশি হয়?
মুহুর্তে উৎফুল্ল স্পর্শী বললো-
আমি জানতাম তো।আর সে জন্যই আপনি বলার আগেই নাতি-নাতনি নিয়ে হাজির হয়ে বসে আছি।আপনি জানেন?আপনার ছেলে দ্রুতই গোটাকয়েক বাচ্চার বাপ হতে যাচ্ছে।
চোখ বড় বড় করে ফেললেন পিয়াশা।উত্তেজিত হয়ে চুলা বন্ধ করে স্পর্শীর কাছে এলো।দ্রুত তাকে সোফায় বসিয়ে বললো-

কবে হলো?আমাকে বলো নি কেন আগে?ক-মাস চলছে?
মেজাজ বিগড়ে গেল স্পর্শীর।বললো-
সাড়ে সাতমাস।
মুহূর্তে’ই হেসে ফেললেন পিয়াশা।
পুরো বাড়ি জুড়ে সুখপাখিরা আনন্দ বিরাজ করছে।দীর্ঘ কত বছর পর শিকদার বাড়ি সুখের মুখ দেখলো।জনে জনে স্পর্শীকে পারছে না তো মাথায় তুলে রাখতে।

রাত সাড়ে দশটা না বাজতেই পিয়াশা ধমকে ধামকে স্পর্শীকে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।এই শরীর নিয়ে মোটেও তাকে জেগে থাকতে দেবে না সে।পরশ ও এক দিনেই ভীষণ শাসন করছে তাকে।হাটতে গেলেও ধমক মেরে বলবে”এতো লাফাও কেন?।কিছুক্ষণ পর পর জড়িয়ে ধরে বলবে”পাখি, পেটে ব্যাথা করছে?করলে আমাকে জানিও।

স্পর্শীর নিজেকে কেমন এলিয়েন এলিয়েন লাগছে।বারবার মন শুধু আফসোস করে বলছে”ইশ বাচ্চা হলে এতো আদর পাওয়া যায়।জানলে গত ছাব্বিশ বছরে বায়ান্ন’টা বাচ্চার জন্ম দিতো সে।
এই যে রাত হতেই আলতো করে বুকের মাঝখান’টায় তার মাথা চেপে ধরে ঘুমায় পরশ।ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে-
আমাকে ছোট্ট একটা পাভেল এনে দাও স্পর্শীয়া।আর কিচ্ছু চাই না।

ভীষণ খারাপ লাগে তখন।চরম সত্যটা’কে সামনে তুলে স্পর্শী জিজ্ঞেস করে-
মেয়ে হলে কি ভালোবাসবেন না নেতামশাই?যদি ছেলে না হয় তখন?
মুহুর্তে’ই দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে পরশ বলে-
নাহ ছেলেই হবে।তুমি দেখে নিও।
আশ্চর্য হয়ে যায় স্পর্শী।বলে-

আপনি কি করে জানেন?
নিজের সকল দুষ্টুমি কে উগড়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে ওঠে-
আমি তো ওর বাবা।বাবার মন কখনো মিথ্যা বলে না।
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে স্পর্শী।নেতামশাই য়ের এই বাচ্চামো রুপ গুলো আজকাল তাকে অবাক করে দিচ্ছি।সেই প্রথমের গুরু-গম্ভীর লোকটা তাকে ভালোবেসে এতটা আগলে রাখবে এটা কি কখনো স্বপ্নেও ভেবেছিলো?

একরাশ চিন্তা নিয়ে হস্পিটালের করিডোরে পায়েচারি করছে শিকদার পরিবারের সবাই।ভেতরে পিয়াশা কে এলাউ করেছে ডাক্তার।পরশ গম্ভীর হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।না চাইতেও প্রিয়জন হারানোর কষ্টগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।মন প্রাণ উজাড় করে খোদার দরবারে আর্জি জানাচ্ছে।আর সে সইতে পারবে না।আর পরিক্ষা নিও না খোদা।ভালোয় ভালোয় বাচ্চাটা হয়ে গেলে এ ধরনের রিস্ক আর নেবে না।একটা বাচ্চাতেই সন্তুষ্ট সে।যে খুশিতে প্রিয়জন হারানোর শঙ্কা থাকে সেই খুশী কখনো চাই না তার।কক্ষনো না।

এরইমধ্যে ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো।দম আটকে রয়েছে পরশের।দরজায় টোকা দিয়ে শেষ বারের মতো নির্লজ্জ হলো।মা কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো-
ও কি ঠিক আছে?

মুহুর্তে’ই ভেতর থেকে নার্স ও ডাক্তারের হাসির শব্দ শোনা গেল।সাথে সাথে পিয়াশার ধমক ও ভেসে আসলো।সস্তি পেলো না পরশ।অস্থির হয়ে উঠলো ক্রমশ।ছেলে হয়েছে তার।সদ্য জন্মানো বাচ্চা টিকে সাদা তোয়ালে জড়িয়ে বাইরে আনলো।পরশ আলতো হাতে কোলে নিলো।কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট্ট আঙুল গুলো স্পর্শ করলো।দপ করে নিজের আধো শক্তিতে পরশের আঙুল’টা ধরে ফেললো বাচ্চাটি। তাকে কোলে নিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো-
এখন কি দেখা করা যাবে স্পর্শীর সাথে?

বেশ চড়াও করে ধমক দিয়ে পরক্ষণেই হেসে ফেললেন পিয়াশা।তারপর হ্যাঁ বলতেই বেবি কোলে নিয়ে কেবিনে ঢুকলো পরশ।স্পর্শীর স্বাভাবিক ভাবেই বেবী হয়েছে। শরীর এবং মানসিক জোর প্রবল থাকার কারনে তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি।পরশকে ভেতরে আসতে দেখেই দুহাত মেলে দিয়ে বললো-
আমার বেবিকে আমার কোলে দিন।

হেসে দিয়ে ছোট্ট শরীরটাকে স্পর্শীর পাশে শোয়ালো।মুহুর্তে’ই আতংক ভরা চোখে স্পর্শী বললো-
একি!আমার বেবী লাল রঙের কেন?
হেসে দিলেন পিয়াশা।বোঝানোর কন্ঠে বললেন-
ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।প্রথম প্রথম সব বাচ্চার শরীরের চামড়া’ই অনেক’টা লাল দেখায়।ওদের চামড়া তো অনেক পাতলা থাকে।তাই রক্তের আস্তরণ টা উপর থেকেই দেখায়।

ধীরে ধীরে এক একজন কেবিনে ঢুকছে স্পর্শী আর বাচ্চাকে দেখছে।কিন্তু এতো এতো মানুষের মধ্যেও পরশ এক সেকেন্ডের জন্য ও স্পর্শীর কাছ থেকে নড়ছে না।ভীড় কমতেই আলতো করে চুমু খেল কপালে। শান্ত কন্ঠে বললো-
খুব বেশী কষ্ট হয়েছে, তাই না পাখি?
চমকে গেল স্পর্শী।ছেলেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো-
ওইটুকু কষ্টের বিনিময়ে এতো মূল্যবান একটা উপহার পেয়েছি।এটাই অনেক।
পরক্ষনেই আপ্লুত হয়ে বেবীকে চুমু দিয়ে বলল-

ওরে আমার আদুরে দলা।তোকে প্রচুর চুমু দিব আমি।মা সারাক্ষণ আদর করতে থাকবে।
পরশ একধ্যানে স্পর্শীর বাচ্চামো দেখছে।হঠাৎ সেদিকে তাকিয়ে স্পর্শী বললো-
এখন তো আমার বাচ্চা হয়ে গেছে।আমিও তো বুড়ী হয়ে গেছি।ভালোবাসবেন এখনো আগের মতো?
হাসলো পরশ।আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো-

তুমি চাইলে প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে ভালোবাসতে রাজি আমি।তুমি চাইলে মুহুর্তে’ই বয়স কমিয়ে সেই প্রেমিক পুরুষদের মতো প্রতিদিন প্রেমপত্র দিবো তোমায়।তুমি চাইলে একশত আট’টা পদ্ম খুজে এনে তোমার হাতে তুলে দিব।
মুহুর্তেই চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে স্পর্শী বললো-

আমি এসব কিছুই চাই না।শুধু প্রতিদিন শিকদার বাড়ির ছাদ বেয়ে আমার রুমে আসবেন। দরজা খোলা যাবে না।তাতেই হবে।
থমথমে মুখ নিয়ে পরশ বললো-

দিলে তো রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে। তুমি সত্যিই বুড়ী হয়ে গেছো স্পর্শীয়া।
বলেই দুজনেই হেসে দিলো।হস্পিটালের কেবিন’টি যেন সর্গ হয়ে ধরা দিলো তাদের কাছে।ছোট্ট শরীর টি আধো আধো চোখ মেলে দেখতে লাগলো মা-বাবার ভালোবাসাময় খুনসুটি।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৪৪ 

#রাজনীতির_রংমহল গল্পটা’র প্রথম চরিত্র ছিলো পাভেল।যার বিয়োগে পাঠককুলের মধ্যে ছড়িয়েছিলো তীব্র বিষাদ।
অনেকেই কষ্ট পাবেন গল্পটা শেষ করায়।কিন্তু আমি চাই নি এই গল্পটাকে এমনি সব নিত্যদিনের কাহিনি লিখে দিয়ে আরো বড় করতে।#রাজনীতির রংমহল এমন একটি গল্প যেখানে আমি রোমান্টিকতা,বাস্তবিকতা,সামাজিকতা,ভালোবাসার কাহিনি,রহস্য,আইন,রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন রোমাঞ্চকর ঘটনা নিয়ে সাজিয়েছি।আশা করি সকল বিষয়ের ছোয়াই রাখতে পেরেছি।
আজকে আমার #রাজনীতির_রংমহল গল্প পড়ুয়া সকল পাঠকদের রেসপন্স চাচ্ছি।সমাপ্তি পর্বে নিশ্চয়ই আমায় হতাশ করবেন না।আমি জানতে চাইছি মোট কতজন আমার এই গল্পটা পড়ছেন।পরিশেষে সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।নিজের স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি।হ্যাপি রিডিং💗💗💗

সমাপ্ত