আমি মায়াবতী পর্ব ৪২

আমি মায়াবতী পর্ব ৪২
তাহমিনা মিনা

“মায়া, সিম্পল কিছু নাও। তোমরা মেয়েরা যে আটা ময়দা মাখতে পারো মাশাল্লাহ, দেখলেই বমি আসে আমার।”
মায়া কিছু বলার আগেই কবিতা উঠে কাব্যর হাত খামচে ধরে বলে,”ঠ্যাস মারা কথা কস কেন? বলেই দে আমি আটা ময়দা মাখছি। আর বমি আসলে দূরে যায়ে বমি কর। কাছে করলে গন্ধে থাকা যাবে না।”

কাব্য নিজেকে কবিতার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”ঠ্যাস মারলাম কই? আমি তো ভালোভাবেই বলছি।”
“নেহাত এইটা শপিংমল, না হলে তোর খবরই ছিল আজকে। চুপচাপ বসে থাক এইখানে। আমরা পছন্দ করবো। তোর কাজ শুধু টাকা পেমেন্ট করা।”
কবিতা কাব্যকে ছেড়ে আবার শপের ভিতরে ঢুকতেই কাব্য বিরবির করে বলে, “খবর তো প্রতিদিনই হয়। কিন্তু কোনোটাই কাগজে ছাপা হয়না। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবিতা আর মায়ার শপিং করা দেখছিল।আজকে সবাই মায়া আর কাব্যের বিয়ের জন্য শপিং করতে এসেছে।পরিবারের বড়রা মিলে ঠিক করেছে আপাতত শুধু কাবিন করে রাখবে। মায়ার পরীক্ষা শেষ হলে সামনের বছর অনুষ্ঠান করে তাকে তুলে নিয়ে যাবে। এখন আপাতত ঘরোয়াভাবে সবকিছু করবে শুধু কাছের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে।মায়ার জন্য শাড়ি কেনা শেষ।

বড়রা জুয়েলারি কিনতে ব্যস্ত।সেই সুযোগে কবিতা মায়াকে নিয়ে এসেছে নিজের জন্য কিছু কিনতে। বিয়েটা মায়ার হলেও সবচেয়ে বেশি আগ্রহ কবিতারই। সাবিহা আর রিজা আরো আগেই সব কেনাকাটা শেষ করেছে। কবিতারও শেষ।কিন্তু সে কিছুতেই স্থির করতে পারছেনা আর কিছু লাগবে কি লাগবে না।কাব্য ভালোমতোই জানে এইসব আটা ময়দা কিনে ও ঘরে বসিয়েই রাখবে। বিয়ের দিন কিছুই ব্যবহার করবে না।

সকাল হতেই নাচতে নাচতে পার্লারে চলে যাবে। তাই শুধু শুধু এখানে টাকা খরচ এইসব কেনার কোনো মানেই হয়না। তারউপর আবার এখনও কেউ তার কোনো কিছু কেনা না কেনা নিয়ে কিছুই বলছে না। তিনঘণ্টা ধরে এসে শুধু মায়ার শাড়িটাই কেনা হয়েছে। এইজন্যই বোধহয় তার বাবা আর মায়ার বাবা আসতে চায়নি। হয়তো তারা মেয়েদের এইসব ব্যাপারে ভালোভাবেই জানে।

তাই বলির পাঠা হিসেবে তাকেই পাঠিয়েছে। উপরের ফ্লোরে তার মা-খালামনি আর মায়ার আম্মা আর ফুপি গয়না পছন্দ করেই যাচ্ছে। কিন্তু কোনোটা কিনার মনস্থির করতে পারছেনা। কাব্য একবার নিচে আর একবার উপরে ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে।

“ভাইয়া, আমার সব শপিং শেষ। চল উপরে চল। ”
কবিতার ডাকে সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে কবিতা আর মায়া দাঁড়িয়ে আছে। কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর শেষ? ”
“হ্যাঁ, শেষ তো। উপরে চল।”

“তোর শেষ। ওর তো শেষ না। ওকে এখন একলা ছেড়ে দে। ওর কেনাকাটা বাকি আছে এখনো। ”
মায়া অবাক হয়ে বলে,”আমার তো আর কিছুই বাকি নেই। চলুন উপরে।”
কাব্য কিছু বলার আগেই কবিতা বলে,”ইডিয়ট। তোমার হবু বর তোমার সঙ্গ চাইছেন। তার সাথে কিছু সময় কাটাও।তার হাতে হাত রেখে কিছু কথা বলো। তার সাথে কিছু খেতে যাও। তার সাথে কিছু….. ”
কবিতাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কাব্য বলে, “থামবি তুই? মায়ার সাথে কিছু কথা আছে আমার। তুই উপরে যা৷ দেখ ঐখানে কতদূর হলো সব।”

কবিতা কাব্যকে একটা ভেঙ্গচি কেটে উপরে চলে যায়। কবিতা চলে যেতেই মায়া বলে,”আপনি কি পাগল? ও একা গেল। সবাই এখন কি ভাববে? কিছুই লাগবে না আমার। আর আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি ফোনে বলতেন। এখন চলুন। না হলে আমি অনেক লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়বো।”
কাব্য মায়াকে একটা ধমক দিয়ে বলে,”এতো বেশি কথা কেন বলো তুমি?সবসময়ই দেখি শুধু ছটফট করো। একটু স্থির হয়ে থাকতে পারো না?”

“ওকে, ফাইন। বলুন কি বলবেন।”
“তুমি শিওর এখন বিয়েটা করতে চাও তুমি?”
“হ্যাঁ, আর এইটা তো আর সেইরকম বিয়ে না। ঘরোয়াভাবে কাবিন হবে। আর কাবিন হলেও আপনি তো আমাদের বাসায় থাকবেন না। আপনিই তো জানিয়েছেন এইসব।”

“আমি কি আর ভেবেছিলাম আমার বাপ তোমার বাপ কে তাই বলবে আর তোমার বাপ রাজি হয়ে যাবে।”
মায়া অবাক হয়ে বলে, “মানে কি? কি বলছেন এইসব?আমি তো বুঝতে পারছিনা। ”
“আরেহ,আমি তো ভেবেছিলাম আমি বলবো এইসব কিন্তু তোমার বাবা বলবে বিয়ে করলে বউ রেখে দূরে কেন থাকবে। মাঝে মাঝে আমিও আসতাম যেতাম তোমার বাসায়। কিন্তু তোমার বাবা তো রাজি হয়ে গেছে। এখন এই একটা বছর আমি আমার বিয়ে করা বউ কি শ্বশুরবাড়িতে রেখে আমি আমার বাড়িতে থাকবো?”
মায়া কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু একসময় ফিক করে হেসে উঠে। কাব্য তাকে রাগ দেখিয়ে বলে,”মজা করা হচ্ছে আমার সাথে?”

মায়া তবুও নিজের হাসি থামায় না। কাব্য ওর দিকে তাকিয়ে বলে,”থাক। একটা বছরই তো। থাকবো বউ ছাড়া কোনোরকমে। এতো বছর থাকতে পারলাম আর একটা বছর এমন কি। ”
মায়া হাত নাড়িয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় সেখান থেকে। আর কাব্য মাথা চুলকাতে চুলকাতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।

“এই ভাইয়া, বল না আমি কি পড়বো গায়ে হলুদের দিন? হলুদ শাড়ি না লেহেঙ্গা? ” নিজের কেনা সবগুলো ড্রেস নাড়তে নাড়তে কাব্যকে জিজ্ঞেস করে কবিতা।
“হুমম। পড় যেকোনো একটা। তোকে তো সেই পেত্নীর মতোই লাগবে।”

“রাগাবি না বলে দিচ্ছি বেয়াদব। বাবা কিন্তু বাসায় আছে। ডাকবো কিন্তু আমি।”
“নাহ। তোকে একেবারে পরীর মতো লাগবে। আলিফ লায়লার সেই সাদা পরীর মতো।”
“ইডিয়ট। আমি পড়বো হলুদ ড্রেস। আমাকে সাদা পরীর মতো কেন লাগবে? বল হলুদ পরীর মতো লাগবে। ”
“হুমম। তোকে সবচেয়ে সুন্দরী সোফা নিজবা আছে না? সোফা নাকি সোবা নিজবা ঠিক তার মতো লাগবে।”
কবিতা কাব্যর দিকে চোখ গরম করে বলে,”আমি কি ওর মতো কুটনী?”

“নাহ। ও কুটনী কিন্তু সুন্দরী তো। আমি কি বলেছি ওর মতো কুটনামী করবি তুই?বলেছি ওর মতো সুন্দর লাগবে।”
“কথার প্যাঁচে ফেলবি না আমাকে।মেরে ফেলবো তোকে ভাইয়া।”
“এখন আর ভাইয়াকে কথায় কথায় মেরে ফেলা যাবে না। ভাইয়ার বউ পরে কান্নাকাটি করবে।” কথাটা বলতে বলতে ওদের কাছে আসে ওদের বাবা।

“হ্যাঁ, হ্যাঁ। জানি, জানি আমি।”
কাব্য ওর বাবাকে বলে,”তুমি হঠাৎ আমার রুমে? কিছু হয়েছে নাকি?”
“হ্যাঁ, কতকিছুই তো হয়েছে।”
“কি হয়েছে?”
“তোর বড়ফুপিকে তোর বিয়ের কথা জানিয়েছিলাম আগেই। এখন তোর কোনো ফুপিই আসবে না।”
“কেন? কি সমস্যা?”

“মায়াদের বাসায় অনুষ্ঠান করলে নাকি তারা আসবে না।”
“কিন্তু এইটা তো সেইরকম কোনো অনুষ্ঠানের বিয়ে না। গায়ে হলুদও হবে না সেইভাবে।”
“কিন্তু তারা সেটা মানবে না। বেশিকিছু না হলেও তারা চাইছে আমরা যেন কোনো কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে অনুষ্ঠান করি।”

“পাগল হইছো বাবা? এইসব কোনো কথা?মায়ার বাবার উপর তো প্রেশার পড়ে যাবে। আর সবকিছুই তো ঠিকঠাক ছিল। ৩ দিন পর বিয়ে আর আজ এইসব কি শুরু করলো এইসব?”
“কি আর করা যাবে?তাদের রেখে তো আর বিয়ে হবে না। আমি কথা বলেছি মায়ার বাবার সাথে। উনি রাজি হয়েছেন। আমিও না হয় সামিল হবো তার সাথে।”

কাব্য প্রায় রেগেই বলে,”উনাদের কি কোনো কাজে ঝামেলা না করলে হয়না? এইজন্যই কি আজ কেনাকাটা করার সময়ও এলোনা। আবার এই বাড়িতে এসে সবাইকে বলে বেড়াবে আমাদের কোনো পছন্দ নেই। কাব্যর মা-খালারাই সব কিছু ঠিকঠাক করেছে। উনাদের ফোন দিয়ে বলে দাও মায়ার বাবার বাড়িতেই অনুষ্ঠান হবে। উনারা আসলে আসবে না আসলে আসবে না। আমরা চেয়েছিলাম কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে কোনোমতে বিয়েটা শেষ করবো। কিন্তু উনাদের ব্যবহার দেখে তো মনে হচ্ছে না যে উনারা আমাদের আপন কেউ।”

“ছিহ কাব্য। এইভাবে বলতে নেই। উনারা গুরুজন। উনাদের ছাড়া কোনো কিছুই হবে না। বড়দের দোয়া ছাড়া তোরা সুখী হতে পারবি না তো।” কাব্যর মা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
“উনাদের নিয়ে সেন্টারে গেলেও আমাকে দোয়া করবেনা মা। হয়তো বলবে খাবার ভালো না, খাবার কম পাইছি, ডেকোরেশন সুন্দর না ব্লা ব্লা ব্লা।”

“যথেষ্ট বলেছো কাব্য।আমি জানি ওরা সবসময় অন্যায় আবদার করে কিন্তু ভাইপোর বিয়েতে হয়তো উনাদেরও শখ আহ্লাদ আছে।”
“মা, কথা কিন্তু তোমাকেই শুনতে হবে। উনাদের হয়ে সাফাই গাইবে না মোটেও। আমি তো ফুপিকে বলেছিই সামনে বছর সবই হবে। কিন্তু তারা মানলো না। আসল কথা হচ্ছে উনারা গসিপ করতে পারবেনা কারো সামনে যে উনাদের ভাইপোর বিয়ে বাড়িতেই হয়েছে। তাও আবার মায়াদের ছোট্ট ফ্ল্যাট বাড়িতে। অন্যকে নিজেদেরটা দেখাতেই উনারা বেশি ভালোবাসে।”

“কাব্য, মায়ার বাবা একা সবকিছু করবে না। বিয়ে শুধু উনার মেয়ের একা হচ্ছেনা। আমার ছেলেরও হচ্ছে।আমারও দায়বদ্ধতা আছে। এখন আর এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।” কথাগুলো বলেই কাব্যর বাবা বের হয়ে যায় রুম থেকে।

কাব্য ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি চাইলাম আর কি হচ্ছে এইসব?”
কাব্যর মা কাব্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”বিয়ে বাড়িতে টুকটাক এইসব হয়ই বাবা। এইসব কোনো বিষয় না। বিয়ের পর তো আর তারা থাকতে আসবে না এইখানে।”
কাব্যর মাও চলে যায় সেখান থেকে। এতোক্ষণ কবিতা চুপচাপ ছিল। সবাই চলে গেলে সে কাব্যকে বলে,” একেতো বিয়ে করা বউকে রেখে দূরে থাকার যন্ত্রণা সইবি এখন আবার এই কাহিনি। কি আর করার। থাক, আমি যাই।”

“এখন কি করবো সাগরিকা? আমার হাতে তো এখন ক্যাশ তেমন নেই। জানোই তো তুমি সবকিছু। আমার একার রোজগারে এতোগুলো মানুষের খাওয়া পড়া চলছে।” অনেকটা ভেঙে পড়া গলায় সাগরিকাকে বলে রিজভী।
“তুমি চিন্তা করোনা। কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। আর তাছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে। একটু ধুমধাম করেই তো করতে হবে। কাব্যর বাবা কি বলেছে? কত টাকা লাগবে সব মিলিয়ে? ”

“কালকে জানাবেন বলেছে।”
“হুমম। অনেক সময় আছে এখনো। তুমি দুশ্চিন্তা করো না। টাকার একটা ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে।”
“আমারও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ব্যবসা তো জানোই।টাকা একদিক দিয়ে আসে আর যায়। কিছুদিন আগেই একটা প্রোজেক্ট এ সব দিয়েছি। এখন সেটার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তো টাকা আসবে না।”

“ভেবো না তো। প্রবলেম হলে আমাদের ডিপোজিট টা না হয় ভাঙবো।”
রিজভী প্রায় আঁতকে উঠে বলে,”কি বলছো এইসব?”
“প্রয়োজন হলে সেটাই তো করতে হবে।”
“কিন্তু? ”
“কোনো কিন্তু না।”
“আসবো মা?”

রিজভী আর সাগরিকা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ার নানা-নানী দাঁড়িয়ে আছে সামনে। সন্ধ্যার সময়ই তারা এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে। সাগরিকা আর রিজভী দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে বলে, “আসুন আসুন। ভেতরে আসুন।”
মায়ার নানা বেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে বললেন,” তোমাদের সব কথাই শুনলাম। আমি জানি তোমাদের এখন হাতটান চলছে। কয়েকদিন আগেই তো শুনলাম নতুন বাড়ি বানাইছো গ্রামে।

এখন তো হাতটান হবেই। তবে, আমরা বলি কি আমরাও তো আছি। আমরাও তো মায়ার অভিভাবক।মায়াকে তো এই জীবনে কিছুই দিতে পারিনি। কিছু টাকা না হয় আমাদের থেকেও নিও বাবা। আমরা খুশি হবো। জানি আমরা না দিলেও তোমরা কোনো না কোনোভাবে জোগাড় করবা। কিন্তু তোমাদের চলতে যে খুব কষ্ট হবে।”
“মিয়াভাই।আমারে বলোনাই কেন যে তোমার টাকা লাগবো? আমার আর আছে কারা তোমরা ছাড়া?আমিও তো সাহায্য করতে পারি তোমাগো।”

রিজভী চমকে উঠে বলে,”তুই কি সাহায্য করবি আমাকে?”
রিতু খাটের একপাশে বসে তার শাড়ির আচলের কাছে থেকে একটা বড়সড় বাক্স বের করে খাটের উপর ঢেলে দেয়। দেখা যায় সেগুলো সোনার গহনা।
রিজভী প্রায় আর্তনাদের মতো করে বলে,”এইগুলো পেলি কই থেকে তুই?”

রিতু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”আমার মায় তো আমারে এইগুলার লোভেই অতো কম বয়সে বিয়া দিছিলো মিয়াভাই।এইগুলা আমি বিক্রি করিনাই। আমার স্বামীর স্মৃতি। শত অভাব আর কষ্টের মাঝেও বিক্রি করি নাই। ভাবছিলাম আমার রিজারে দিবো। কিন্তু এখন এইটা মায়ার জন্য বেশি দরকার। তোমার জন্য, তোমার সম্মানের জন্য, আমাদের সম্মানের জন্য বেশি দরকার।তুমি এইগুলা বিক্রি কইরা যা টাকা পাইবা, সেইগুলা দিয়া কাজ হইয়া যাইবো।”

“না,না। এইসব তোর জিনিস। আমি কেন নিবো? আর এইসব তো রিজার জন্য। মায়ার জন্য কেন খরচ করবি?”
“রিজার জন্য রিজার মামা আছে। সেই দিবে।”
“মায়ার বাবা, তুমি বরং এইগুলা বন্ধক দাও।পরে ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে এনো।” সাগরিকা বলে।
মায়ার নানা বলে,” আমাদের থেকে কি কিছুই নিবা না?”
রিজভী মায়ার নানার হাত ধরে বলে,”আপনি মায়াকে যা দিতে চান, সেটা মায়াকেই দিয়েন। মায়ার দাদাবাড়ির একজন মানুষ নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে মায়ার জন্য। আর আমি তো আছিই। যতোটা পারবো করবো। আমাকে অহংকারী ভাববেন না বাবা। ”

আমি মায়াবতী পর্ব ৪১

মায়ার নানার চোখ বেয়ে পানি আসতে চায়। কিন্তু পুরুষ মানুষ যে বড় অদ্ভুত। তারা যে লোক সমাজে কাঁদে না। উপস্থিত সবার চোখে পানি। একটু আগেও যে রিজভী টাকার চিন্তায় ঘুমুতে পারছিলো না, তার চোখেও এখন রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে।তার মায়ার জন্য সবাই যে আছে এখন।সবাই মায়াকে ভালোবাসে।
কিন্তু দুটো ঘর পরেই অবস্থান করা মায়া জানতেও পারলোনা, সে যে নিজেকে জনমদুখিনী ভাবে, সে সেটা মোটেও নয়।

আমি মায়াবতী পর্ব ৪৩