রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১৭

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১৭
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“উফ,অস্থির তো!ভীতু মেয়েটার পাশে আমাদের কুল উমাইর। দারুণ।”
–“এহ?উমাইর কুল? ও হঠাৎ কুল,আবার হঠাৎ হট।মামা,তুই কিন্তু সেরা উমাইর।তোর চয়েজ ফাটাফাটি।মেয়েটাকে মানিয়েছে সাথে।”
–“মা শাহ্ আল্লাহ্ বল।তোদের নজর আবার কুনজর।মামা জলদি বিয়ে খেতে চাই।”
–“এতো জলদি বিয়ে উমাইর করবে না।শালার ধৈর্য অনেক। ভাবীকে আগে সুযোগ দিবে তাকে বুঝার।তোদের মতো বলদ না উমাইর।”

–“কি আর ধৈর্য?ভাবীর রূপের আগুনে অঘটন ঘটাবে উমাইর।আমি শিউর,উমাইর ভাবীর জন্যে উল্টাপাল্টা কিছু একটা করবেই।”
বন্ধুদের একেকজনের মেসেজ আসার গতির মন্থরে নেই।পুরোদমে গ্রুপে অস্থির ভাব।উমাইর বাড়ি ফিরে গোসল সাড়ে। ঐ বাড়ির জন্যে আধ তৈরি অবস্থায় ফোন হাতে নিলে অত্র মেসেজ খানা ভেসে উঠে স্ক্রিনে।
খানিকটা স্ক্রল করলে স্ক্রিন তাহুরা এবং তার যুগলবন্ধী ছবির সন্ধান পায় উমাইর।মেয়েটা লাজুক আর উমাইর থমথমে মুখশ্রীতে মত্ত।তারপরও ছবিখানা তার মনের খোরাক মেটায়।খুব আশা ছিল এমন পাশাপাশি ছবি তোলার। তবে,কখনো তোলা হয়নি।মনে মনে বন্ধুকে ধন্যবাদ দেয় উমাইর।বিশাল বিশাল মেসেজের বিনিময়ে সে বন্ধুদের জবাবে লিখে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“তামাশা বন্ধ কর।”
আবারো হামলে পড়ে একে একে রনি,রকি,বাপ্পি;
–“মামা,বেশি সুন্দর লাগছে তোদের।বল না বিয়েতে বেশি দেরী আছে তোদের?”
–“বারবার বলছি, দেরীতে হবে।উমাইর তার পাখির জন্যে অপেক্ষা করবে।মেয়েটা নাজুক।”
–“জীবনেও না। উমাইর তুই বিয়ে কর।তোর বিয়ের জন্যে আমি মরে যাচ্ছি।দেখতে চাই,কিভাবে তুই তোর লজ্জাবতী বউকে সামলাস।”

ভ্রু কুঁচকে আসে উমাইরের।কি যা তা শুরু করলো!উমাইর মোটেও কখনো তার অনুভূতি নিজ বোকাপাখি ব্যতীত কারো সামনে প্রকাশ করবে? নাহ।টুকটাক পাগলামি দেখলেও আসল ভালোবাসা তার মনের রাণী ছাড়া কাউকে দেখাবে না উমাইর।তার জন্যে জমানো ভালোবাসা উম্মাদনা শুধু তাহুরাই দেখবে,পাবে,সহ্য করবে।
গটগট অক্ষরে উমাইর তাদের মেসেজ দেয়,
–“আর একবার এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে কিন্তু কলেজ-ভার্সিটির উমাইর হবো তোদের জন্যে।বিয়ে যেদিন হবে সেদিন দেখবি।”

বন্ধুরা আবারও নানান বাহানায় এটা সেটা নিয়ে মেসেজ দিচ্ছে।টুকটাক উত্তর দিয়ে তাহুরার ভাবনায় মশগুল হয় উমাইর।
আজ তার শেষ বাক্যে মেয়েটা একদম চুপ হয়ে যায়।লজ্জায় রক্তিম হয়। বোকাটাকে ইঙ্গিত দিয়ে স্বস্থি পায় উমাইর।তারপরও মেয়েটা তার মেজাজ বিগড়িয়েছে। বাড়ির সামনে নামেনি।আরো আগে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে।উমাইর আর জিজ্ঞাসা করেনি কিছু।জিদ করে তাহুরাকে নামিয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে।
মাঝপথে মাও কয়েকবার ফোন দিচ্ছিলো।এখনো এসে মেঘলা ছেলেকে তাড়া দেয়।
উমাইর কাজের গতির বেগ বৃদ্ধি করে।পকেটে ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে আসে কক্ষ হতে।নিচে নামলে উৎসবমুখর পরিবেশ অবলোকন হয় তার দৃষ্টিতে।যারা যাবে সকলে তৈরি।মেঘলা ছেলেকে দেখে এগিয়ে আসে,

–“নিবরাস এসেছে।ওকে গাড়ির চাবি দাও। ডালাগুলো রাখুক তোমার গাড়িতে।”
ডানদিকের প্যান্টের সম্মুখে ঝুলন্ত কী-বাক্স পরখ করে উমাইর জবাব দেয়,
–“আমাকে দাও আমি রেখে আসি।”
–“এখন নাস্তা করবে তুমি।এরপর যাবে।”
–“পেট ভরা।খিদে নেই।”

নিজ বক্তব্য পেশ করে উমাইর নিজে দুহাতে ডালা উঠিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে।
দুই গাড়ি যাবে আজ। উমাইরের গাড়ি সাথে তার চাচার গাড়ি।হাতের ডালা ঠিকভাবে গাড়িতে রাখে উমাইর। ড্রাইভিং সিটে বসতে নিলে আফিয়া আসে।পেছনে দাঁড়ায় মেঘলা এবং দিলরুবা।
মেঘলাকে দেখে উমাইর শান্ত কণ্ঠে বলে,
–“জাফরানকে আমার সাথে দাও।নিবরাস আর আফিয়া আসুক।”
পরপর উমাইর আবারও আওড়ায়,
–“জাফরান, কাম।”

নম্রতা ছেলেকে সামনের সিটে বসায় সাবধানে।উমাইর জাফরানের সিটবেল্ট বেঁধে দেয়।জাফরান মহাখুশি।দুই পা নাড়িয়ে নিজ খুশির জানান দেয় সে।
গাড়ির হেডলাইটের হলুদ রঙ জ্বলে উঠে।যান্ত্রিক শব্দের আলোড়নে বিশাল ফটক ত্যাগ করে উমাইরের গাড়ি।
জাফরান শান্ত ভঙ্গিতে বসে।তাহুরাদের বাড়ি যাবে বলে বেজায় খুশি।উমাইর জাফরানের পছন্দের “বেবি শার্ক” গান চালু করে মৃদু সুরে।

উমাইর ঘাড় বাঁকা করে তাহুরার প্রিয় আবার উমাইরের প্রিয় জাফরানকে দেখে।ছেলেটা মাকে ছাড়া যায় না কোথাও।আজ তাহুরাদের বাসায় যাবে বলে সেই কি খুশি তার!দূরে সুপারশপ অবস্থিত।লাল নীল লাইট দিয়ে আকর্ষন করছে।উমাইর স্টিয়ারিংয়ে এক হাত রেখে অপর হাতে জাফরানের হাত ধরে,

–“চকলেট খাবে?”
–“খাবো খাবো ভাইয়া।”
উৎসুক জাফরান খুশিতে আত্মহারা।বিনিময়ে হাসে উমাইর।জাফরান আস্ত এক আদর তার নিকট।
সুপার শপে ঘুরে ঘুরে জাফরানের জন্যে কিছু চকলেট নেয় উমাইর।জাফরান তার কোলে উঠে তো আবার হাত ধরে হাঁটে।জাফরানকে চকলেট কিনে দেওয়ার পাশাপাশি উমাইর আলাদা কিছু চকলেট নেয় তাহুরার জন্যে।মেয়েটা গাড়ি থেকে নামলে ফের আর খোঁজ নেয়নি উমাইর। অতএব প্রেয়সীর জন্যে এখন অন্তর জ্বলে উমাইরের।বাসায় গিয়ে নিশ্চিত কেঁদেছে মেয়েটা।
জাফরানকে পুনরায় গাড়িতে বসিয়ে উমাইর তার কোলে তাহুরার জন্যে কেনা চকলেটের প্যাকেট রাখলে জাফরান বলে,

–“এগুলো কার?”
–“তাহুরার।”
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জবাব দেয় উমাইর।উত্তর জানিয়ে উমাইর আবারও জাফরানকে বলে উঠে,
–“আজকে তাহুরাকে জ্বালাবে না। কোলেও উঠবে না।কোলে উঠতে ইচ্ছে করলে আমার কাছে আসবে।”
জাফরান চকলেট পেয়ে আহ্লাদে আটখানা।সে মাথা নাড়ায়।আজ সে উমাইরের পক্ষে,
–“আচ্ছা ভাইয়া।”
উমাইর হাসে।বাচ্চাটাকে চকলেট দিয়ে বশ করা সহজ।সব সেট করে উমাইর অনায়াসে।

অত্র বাড়িতে পৌঁছায় তারা দ্রুত।রাস্তায় জ্যাম নেই তেমন।তাহুরাদের বাড়িতে আজ অতিথি শূন্য।কেবল ঘরের লোকেরা।মুন্সীর শরীরটা ভালো নেই।হার্টের সমস্যাটা বেড়েছে।উনিও এগিয়ে আসতে পারেননি ছেলেপক্ষকে অ্যাপায়ন করতে।নিবরাসদের গাড়ি আসে প্রথমে। আবার ফিরেও যায় বাড়িতে। সুনেরা,তাহুরা তাদের জিনিসপত্র নিতে সাহায্য করে।
উমাইরের গাড়ি এলে নিবরাস বেরুতে চাইলে, বাঁধ সাধে সুনেরা। নাস্তার টেবিল হতে মেহমানকে উঠানোর কোনো মানে নেই।সুনেরা নির্দেশ দেয় তাহুরাকে,

–“যা,উমাইর ভাইয়াকে হেল্প কর।”
তাহুরার পায়ের তলায় মাটি শক্ত। এইভাবেও মেয়েটা জর্জরিত উমাইরের বলা বেশ বাক্যে।লোকটার সম্মুখীন হবে কিভাবে?সেই বাক্যের পর উমাইর পুরো গাড়িতে কিছু না বললেও,তাহুরা জানে উমাইর তার প্রতি ক্ষিপ্ত।কথা যে শুনেনি সে উমাইরের। পায়ের গতি ধীর তার।বুকটা অস্থির।নিজেকে ধাতস্থ করতে ব্যস্ত মেয়েটা। বক্ষদেশে হাত রাখে।জোরে শ্বাস ফেলে,

–“চিন্তা করিস না তাহুরা।উনি তো তোকে সরাসরি কিছু বলেনি।হয়তো অন্য কিছু বুঝতে চেয়েছেন স্যার!ঠিক থাক তুই।”
পরক্ষণে মন খারাপ হয় তাহুরার।পুনরায় সে মনে মনে আওড়ায়,
–“আপনাকে আমার খুব পছন্দ স্যার।আমার মনে প্রাণে সারাজীবনের জন্যে কেবল আপনাকে চাই আমি।কিন্তু,আপনি এই কথা শুনলে নিশ্চয় আমাকে খুব বকবেন!”
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তাহুরা উঠানে আসে।উমাইর জাফরানকে নামতে সাহায্য করে।উমাইরের হাতে চকলেটের বাক্স।জাফরান দৌড়িয়ে আসতে নিলে তাহুরা সামলে নেয় জাফরানকে,

–“আস্তে ভাইয়া।পড়ে যাবা।”
–“তাহুরা আপু।”
জাফরান ঢুকে পড়ে তাহুরার বক্ষ পিঞ্জরে।পিঠে হাত রাখে তার তাহুরা।তবে,দৃষ্টি তার উমাইরে নিমিত্ত।
লোকটার সুঠাম দেহ কি আকর্ষণীয়! চুলগুলো তার কিঞ্চিৎ উচুঁ।কলেজে অবশ্য তার চুলের স্টাইল অন্যরকম হয়।অথচ বাহিরে ভঙ্গি বদলে যায় তার চুলের,বেশভূষায়।
আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে এলে কুঁকড়ে উঠে তাহুরা।মনে মনে দোয়া করে,উমাইরের বলা শেষ বাক্যটা যেনো তার জীবনে সত্যি হয়, বাক্যটার অর্থ যেনো তাহুরা যা ভাবছে তাই হয়।
জাফরানের হাত ধরে উমাইরের নিকট পৌঁছায় তাহুরা।মলিন কণ্ঠে শুধায়,

–“আমাকে কিছু জিনিস দিন।”
উমাইর একের উপর এক তিনটা ডালা রাখে ডান হাতে। অপর হাতের চকলেটের বাক্স এগিয়ে দেয় তার প্রাণ ভোমরাকে,
–“এটা নিয়ে বাসায় যাও।”
চকলেটের বাক্স হাতে নেয় তাহুরা।লোকটা এতসব ডালা একা কিভাবে নিবে?লজ্জায়, শঙ্কায় মুখ খুলে মেয়েটা,

–“এতসব আপনি নিতে পারবেন না।আমাকে দিন।”
–“তোমাকে সহ ইজিলি ক্যারি করতে পারবো।প্রমাণ লাগবে?”
থমথমে সুর উমাইরের।তাহুরা অধরে হাত রাখে।দুকদম পেছায়।ততক্ষণে উমাইর সব ডালা নিজ হাতে তুলে।তাহুরাকে মূর্তির মতো লাজে আড়ষ্ট হতে দেখে শান্তি পায় উমাইর।সেই হাসি অপ্রকাশিত রেখে জবাব দেয়,
–“কি সমস্যা?পা চলে না? নাকি প্রমাণ দেখতে চাও?”
উমাইরের অকপট ধমকে অন্তত পুড়ে তাহুরার।তার মনের রাজা এখনো রেগে আজকের জন্যে!তাহুরা জাফরানের হাত ধরে এগোতে নিলে সুনেরা বাহিরে আসে। উমাইরকে সবকিছু একা নিতে দেখে ধমকায় সে তাহুরাকে,

–“তোকে সাহায্য করতে পাঠিয়েছিলাম।”
ধমকে তাহুরা শক্ত করে চেপে ধরে জাফরানের হাত।চমকে উঠে মেয়েটা।
উমাইর ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে তার বোকাটার।সামান্য এই কথায় কেউ এমন ভয় পায়?তাহলে বিয়ের পর মেয়েটার অবস্থা কেমন হবে?উমাইর যে ইচ্ছাকৃত মেয়েটাকে ধমকাবে আবার ভালোবাসায় মুড়ে নিবে!
বেশ হবে,উমাইর মেয়েটার সকল রূপ দেখতে প্রস্তুত।তাহুরা যখন উমাইরের ভালোবাসার স্পর্শে বিচলিত হবে,তখন নিশ্চয় উমাইর হুঁশ বুদ্ধি হারাবে মেয়েটার রূপ দেখে?

এখনকার মতো দমে নেয় নিজেকে উমাইর।অধরে মিথ্যে হাসি টানে,
–“আমি ওকে হেল্প করতে দিইনি। ইটস ওকে,ভাবী।”
–“আচ্ছা ভাইয়া।আসুন।জাফরান,ভাবীর কোলে আসো।”
জাফরানকে কোলে তুলে নেয় সুনেরা।সে যেতে যেতে শুনতে পায় উমাইরের কণ্ঠ,
–“উপর থেকে একটা ডালা নাও।”
সুনেরা আর থামেনি।ভেতরে যায়।তাদের ব্যাপার তারা সামলাক।উমাইর আবার অন্যের নাক গলানো পছন্দ করে না।
এইদিকে তাহুরা হতবিহ্বল।এতক্ষণ তাকে নিজে কথা শুনিয়েছে আবার আপুও এসে বকে যায়।আর লোকটা আবার তাকেই ডালা নিতে বলছে?অদ্ভুত না?

বিনা বাক্যে তাহুরা ডালা নেয় উপর হতে।অতঃপর তাহুরাকে অতিক্রম করে যাওয়া অবস্থায় উমাইর বলে,
–“হাতের জিনিস দুইটাই তোমার।শাড়িটা মা দিয়েছে তোমার জন্যে।মনে আছে নিশ্চয়?”
তাহুরার মন খারাপ উবে যায়।আপুর বকুনি ভুলে।চকলেট তার অতিপ্রিয়।উমাইর এনেছে বুঝি!খুশিতে মেয়েটার আঁখি চকচক করে। উমাইরের পেছনে লম্বা কদমে অগ্রসর হয় তাহুরা।

জাফরানের হাতে লিকুইড চকলেটের প্যাকেট।তাহুরা দিয়েছে। মনের সুখে সেটা খাচ্ছে জাফরান।আবার এইদিক সেইদিক ছোটাছুটি করছে।উমাইর মুন্সীর সাথে টুকটাক কথা বলে।ভদ্রলোক আজ কেমন বেজার।অসুস্থ অনেকটা।তাহুরা বাবাকে চা এনে দেয়। উমাইরের জন্যে আনে চিনি ছাড়া চা।ইদানিং চিনি একদম কমিয়ে ফেলে উমাইর।জাফরান তাহুরাকে অবলোকন করে দৌড়িয়ে আসতে নেয়।পা বেঁকে ভুলক্রমে জাফরান উমাইরের পায়ের নিকট পড়ে।অতঃপর উমাইরের গায়ে শার্ট লেপ্টে যায় চায়ে।জাফরানকে দ্রুত সরায় উমাইর।যদিও চায়ের বিভৎস দাগ বসেছে উমাইরের শার্টে,তবে গরম ভাব লাগেনি।চা তুলনামূলক ঠান্ডা হয় ততক্ষণে।

উমাইর উঠে দাঁড়ায়।তাহুরা ভয় পায় খানিকটা।সে ভাবে জাফরানকে বকবে উমাইর।তাহুরা অসহায় সুরে বলে,
–“ভেজা কাপড় দিয়ে মুছলে দাগ উঠে যাবে, স্যার।”
আতঙ্কে মেয়েটা কি বললো নিজে বুঝেনি।জাফরান কাঁদো করো মুখ করে তাকালে নিবরাস কোলে তুলে নেয় জাফরানকে,
–“ধুর কান্না করবে না।ভাইয়া কিছু বলবে না।”
সুনেরা ব্যস্ত ডালা চেক করতে।সাথে আছে আফিয়া।তাহুরার মা আসে রান্নাঘর হতে।উমাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বলে,

–“তাহু,উনাকে ভেতরে নিয়ে যা।ভেজা কাপড়ে সাবান মেখে একটু ঘষলে দাগ উঠে যাবে।”
তাহুরা মাথা নাড়ায়।উমাইরের অস্বস্তি হচ্ছে এমন ছিপছিপে শার্টে।জাফরান ছোট বাচ্চা,তাকে সে দোষ দেয়নি।বাচ্চারা একটু চঞ্চল থাকে স্বভাবগত।
–“আসুন, স্যার।”
জাফরানের কার্যকলাপে বিরক্ত না হলেও তাহুরার বারবার স্যার ডাকা বিরক্ত করছে উমাইরকে।নিশ্চুপ সে তাহুরার পানে হাঁটে।মায়ের নির্দেশনায় নিজেদের রুমের বাথরুমে উমাইরকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় মানবী।কক্ষে প্রবেশ করে।তাহুরা সর্বপ্রথম আওড়ায়,

–“আমি ভেজা কাপড় এনে দিবো?নাকি আপনি ভেতরে যাবেন?”
উমাইর একনজর তাহুরার পানে চেয়ে কক্ষে নজর দেয়।কেমন প্রশান্তি এই কক্ষে।তার প্রেয়সী এতে ঘুমায় বলে?সারাদিন এই কক্ষে সময় কাটায় বলে?খোলা জানালার সাহায্যে পুকুরপাড় দৃশ্যমান।মাঝারি গোলাকার পুকুরের চারিদিকে সারি গাছ এবং সেথায় জ্বলজ্বল করছে সোনালী রঙের আলো।পরক্ষণে দৃষ্টি সরিয়ে তাহুরার কান টেনে ধরে উমাইর,
–“স্যার! এতো স্যার স্যার করছো হঠাৎ?”
–“জ্বী?”
তাহুরা ভাবুক হয়।

–“তোমার মাথা।যাও ভেজা কাপড় নিয়ে আসো।”
তাহুরা ধীরে যায়।ফিরে আসে মগ ভর্তি পানি সাথে ভেজা কাপড়ে সাবান মেখে।কাপড় খানা উমাইরের পানে এগিয়ে দিলে উমাইর হাত পেছনে নেয়,
–“আমি পারিনা এইসব।মুছে দাও।”
তাহুরা মুছবে?কিভাবে?মুছলে একটুর জন্য হলেও হাত লাগবে উমাইরের সত্তায়।শুকনো ঢেঁকুর গিলে তাহুরা।আলগোছে বলে,

–“আমি কিভাবে!”
–“ওকে।লাগবে না।আমি বাসায় ফিরছি।”
উমাইর দাঁড়ায় না।চলে যেতে নিলে তাহুরা মুচড়ে ধরে উমাইরের শার্টের পেছন অংশ,
–“খেয়ে যাবেন।দিচ্ছি মুছে।”
–“ওকে।”

গা ছাড়া ভাবে উমাইরের।তাহুরার হাত হতে মগ নেয় সে।তাহুরা এক হাতে শার্ট কিছুটা উচুঁ করে ধরে।এরপর অপর হাতে সাবান মাখা ভেজা কাপড় দ্বারা মুছতে আরম্ভ করে শার্ট।
উমাইরের অধর প্রসারিত।তার তুলনায় উচ্চতায় কম মেয়েটার মাথা নিচু।ইচ্ছে হচ্ছে এখনি মেয়েটাকে কাছে টেনে নিতে।মাথায় ভালবাসার স্পর্শ জারি করতে।ভেতরটা এলোমেলো হয় তার।অদ্ভুত উষ্ণতায় ছেয়ে যায় পুরো শরীর।এই রুমটা এইভাবে একটু গরম। ফ্যানেও কাজ হচ্ছে না।এসিতে অভ্যস্ত উমাইর ঘেমে অস্থির। বসার ঘরে, খাবার ঘরে দুইটা করে ফ্যান থাকায় মানিয়ে নিতে পারে সে এই বাসায়।কিন্তু, কক্ষটায় একটা ফ্যান সাথে তার উষ্ণতার পাখি তার নিকটে।অতি নিকটে।

তাহুরার মাথার ঘোমটা আচমকা পড়ে।দৃশ্যমান হয় মেয়েটার শুভ্র ঘাড়,পিঠের উপরিভাগ।মেয়েটা খোঁপা করেছে।তাই সহজে দেখা মিলল তাদের।ঘোমটা পড়ার সাথে সাথে তাহুরা মাথা তুলে।উমাইর তার পানে চেয়ে।অন্যরকম দৃষ্টিতে।উমাইর তাহুরার ঘোমটা টেনে দেয় ফের।কপালে আসা চুল সরিয়ে দেয় মেয়েটার,
–“আমার সামনে ঘোমটা পড়লে আনইজি ফিল করার দরকার নেই।তবে,অন্যের সামনে যেনো ঘোমটা না পড়ে।বি কেয়ারফুল।”

তাহুরা মাথা নাড়ে।লাজে তার আস্তরণ রক্তিম হচ্ছে।উমাইর ব্যতীত তাহুরা কখনো অন্য ছেলের এতটা নিকটে আসেনি।আসার কথা ভাবেনি ইহকালে।উমাইর তার নিজ মনের মানুষ বলে তাহুরার কেবল লজ্জা লাগছে।তাহুরা একমাত্র তার উমাইর স্যারেই মগ্ন,মত্ত,মাতোয়ারা।
তাহুরা কাজ শেষ করে দ্রুত।উমাইরের গরম লাগছে স্পষ্ট বুঝলো মেয়েটা।শার্টে দাগ হালকা এখনো বিদ্যমান।উমাইর শার্টের অবস্থা দেখে বলে,

–“মাছহ বেটার।থ্যাংকস,তাহু।”
–“রুমটা একটু গরম।আপনি ঘেমে আছেন।ড্রইংরুমে বসুন ফ্যানের নিচে।আমি ঠান্ডা পানি দিচ্ছি আপনাকে।”
তাহুরা নিজ বক্তব্য শেষ করে জগ নেয়।যেতে নিলে শুনতে পায় উমাইরের শীতল কণ্ঠ।তার এহেন কণ্ঠ গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে তাহুরার।
–“গরমটা ফ্যান, এসি,ঠান্ডা পানি কিছুতেই কমবে না।যা দিয়ে কমবে,সে এখন আমার আয়ত্বের কাছে তবে দূরে।”
তাহুরা ভ্রু কুঁচকে নেয়।কি বলছে উমাইর?না বুঝে তাহুরা প্রশ্ন করে,

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১৬

–“বুঝলাম না।”
উমাইর দুই কদম এগোয়।জিন্সের পকেটে হাত গুঁজে।কিঞ্চিৎ ঝুঁকে,
–“তুমি নামক মাথামোটা,আমার উষ্ণতার কারণ।সময় এলে বুঝিয়ে দিবো,স্টুপিড রূপসী একটা।”
উমাইর ভ্রু উঁচিয়ে হাসে।কক্ষ হতে বেরুনোর পূর্বে তাহুরার কপালে টোকা দেয়।
তাহুরার জগৎ স্থগিত।উমাইরের হাসিটা খু’ন করেছে তাকে।বুকের গতি স্বাভাবিক নয়।ফ্যালফ্যাল করে মেয়েটা তাকিয়ে রইলো উমাইরের যাওয়ার পানে।

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ১৮