রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২২

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২২
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“কেঁদো না,সোনা।দেখো সব ঠিক হবে।ডাক্তার আসবে,চেকাপ করবে।আর একটু ধৈর্য্য ধরো।এই অবস্থায় কান্না করা উচিত না।”
আদুরে আবদার।প্রেয়সীকে শান্ত করানোর নিতান্ত চেষ্টা।মেয়েটাও বুঝি ভরসা পেলো এহেন বক্তব্যে।ছেলেটার কথায় মেয়েটার বুকের বোঝা হালকা হয়।প্রেমিক পুরুষের প্রশস্থ কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয় নিভৃতে।আগলে নেয় ছেলেটা তার মনের রাণীকে।কি সুন্দর দৃশ্য!মন কাড়ার মতো।

তাহুরা তাদের পানে চেয়ে ড্যাবড্যাব ভঙ্গিতে।গত কয়েকদিন যাবত উমাইর তাকে এমন শান্তনা দিয়ে এসেছে।কেবল “সোনা” আর কয়েকটা লাইন আলাদা।বাদ বাকি সব একই।ছেলেটার সুর একটু মোলায়েম।কিন্তু,উমাইরের!তার সুর গম্ভীর সাথে অস্থির শ্রুতিমধুর।তার কাছাকাছি এসে একটু যত্ন মাখা সুর শুনলেই তাহুরার পা বেঁকে আসে।লোকটা এমন আকর্ষণীয় কেনো?লোকটার ধমক থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা বাক্য তাহুরার হৃদয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে।
মাথায় আঙ্গুলের স্পর্শ পেলে তাহুরা অত্র যুগল হতে নজর ফেরায়।পাশে বসা উমাইর।দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললে উমাইর থমথমে কণ্ঠে আওড়ায়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“যেভাবে তাকাচ্ছো তাদের দিকে,না জানি কোন সময় তোমার নজরে তারা ঝলসে যায়!”
হালকা হাসি উমাইরের অধরে।মনোরম হৃদয় বিদারক,কেমন হাহাকার অনুভব করে তাহুরা। কারো হাসি বুঝি অন্তরে জ্বালা সৃষ্টি করে?করে তো।উমাইরের হাসিতে তাহুরা ঘামতে বাধ্য হয়।
–“মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী।”
তাহুরা উমাইরের উল্টো কথার জবাব দেয়।
–“কেনো?”
প্রশ্ন করে উমাইর।

–“মানে মেয়েটাকে তার হাজবেন্ড যত্ন নিয়ে ভরসা দিচ্ছে।তাই।”
তাহুরা ওড়নার কিনারায় আঙুল প্যাঁচায়।উমাইর তার কার্যে মনোনিবেশ করে।তাহুরার শুভ্র হাত। সেথায় চুমুতে ভরিয়ে দেওয়ার আকাঙ্খা জাগে।পুরুষালি চিন্তায় তনুতে ভর করে উম্মাদনা।নজর সরিয়ে উমাইর বুকে হাত গুঁজে।তাহুরার নিকট কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলে,
–“তাহলে তুমিও লাকি।এমন শান্তনা তোমাকে আমিও দিয়েছি।”
তাহুরা জিহ্বা দ্বারা অধর ভেজায়।দ্বিধা দণ্ডিত ভাবনাগুলো অবশেষে জারি করে মেয়েটা,
–“হ্যাঁ।কিন্তু, ঐ ছেলেটার মতো বলেননি।অনেকটা…না কিছু না।”

থামে তাহুরা।কি বলছে সে উল্টোপাল্টা?মাথাটা নষ্ট হলো কি? উমাইর এর মুখে “সোনা” ডাক,তার জন্যে?এমন কিছু হলে তাহুরা সহ্য করতে পারবে না,অজ্ঞান হবে নিশ্চিত।এছাড়া উমাইর তাকে গায়ে পড়া মেয়ে ভাববে। পরে তাহুরার অবস্থা হবে আফিয়ার মতো।আফিয়ার কাহিনী সবটা জানে এখন তাহুরা।সুনেরা জানিয়েছিলো বোনকে।
–“হুয়াট?ছেলেটার মতো কি বলিনি?”
উমাইর প্রশ্ন করে।

ঘাবড়ে যায় তাহুরা।কি উত্তর দিবে এখন?উমাইর তাকে জব্দ করবে।বিনিময়ে আমতা আমতা করলে উমাইর আরেকটু ঘনিষ্ট হয় তাহুরার নিকট।অতঃপর বলে,
–“সোনা ওয়ার্ডটা আমার পছন্দ না।”
তাহুরা লাজে মরমর।লোকটা কেনো সব বুঝে যায়? তাহুরাও বা এমন ব্যাকুল হলো কবে?লোকটা তাকে সাধারণত তাহু ডাকলেই তাহুরার হুঁশ উড়ে যায়।
–“এমন কিছু না।”
কথাখানা বলতে বলতে মেয়েটার আঁখি ভারী হয়।উমাইর তাকে নির্লজ্জ ভাবছে!
–“কেমন কিছু?”

উমাইর হাসে।সেই হাসিতে শব্দ স্পষ্ট।তাহুরাকে জব্দ করতে ব্যাপক আনন্দ।তবে,তাকে জব্দ করার অনুমতি উমাইর কেবল নিজেকে দিয়েছে।
উমাইর খেয়াল করে তাহুরা ওড়না দ্বারা চোখ মুছে।পড়নে ফরমাল প্যান্টের পকেট হতে টিস্যু বের করে উমাইর।এগিয়ে দেয় তাহুরার পানে,
–“আমার কাছে তুমি সকল আবদার করবে।”
তাহুরা মাথায় উঠায় না।লাজে মুড়ে মেয়েটা।উমাইর তাহুরার হাত টানে।টিস্যু ধরিয়ে দেয়,
–“অন্যের সামনে কেঁদে নিজের রক্তিম রূপ দেখাবে না।”

টিস্যু নিয়ে মুহূর্তে আঁখি আড়াল করে তাহুরা।উমাইর সম্মুখে তাকায়।বক্ষস্থল উত্তাল।ধুকধুক শব্দটা বাহিরেও শোনা যাচ্ছে?তাহুরা জানেও না উমাইর তার জন্যে কি কি নাম ঠিক করে রেখেছে।সহ্য হবে মেয়েটার?সহ্য যে করতে হবে মেয়েটাকে।উমাইর অস্থির,উন্মাদনায় পুষ্ট,চাহিদায় নিমত্ত।কেবল মেয়েটাকে হালাল করার অপেক্ষায়।এরপর উমাইরের ধৈর্য্য ভেঙে মাটিতে লুটপাট।

তাহুরা শান্ত হয় মিনিট তিনেক পর।দৃষ্টি তুললে অবলোকন করে উমাইর কপালে আঙুল চেপে বসে।খরশান চোয়াল।কানের উপরিভাগ কিঞ্চিৎ লাল।মাথা ব্যথা করছে কি?উমাইর কলেজ থেকে সোজা হাসপাতালে এসেছে।তাহুরা এসেছিলো সেই সকালে।এখন সুনেরা এবং জুবায়ের এলে তাহুরা উমাইরের সাথে নিচ তলায় ওয়েটিং রুমে বসে।রোগীর কেবিনে একাধিক মানুষের ভিড় করা নিষিদ্ধ।
তাহুরা সকল মনোভাব আড়াল করে।সংশয়ের সহিত উমাইরকে জিজ্ঞাসা করে,

–“দুপুরে খেয়েছিলেন?”
–“কলিগের বার্থডে ছিলো।”
উমাইর জবাব দেয়।
–“ওহ।কোন স্যারের?”
–“তাহমিনার।”
উমাইরের জবাবে তাহুরার অন্তর ভারী হয়।উমাইর আর তাহমিনা ম্যাম একা বার্থডে পালন করেছে?এর মানে কি দাঁড়ালো?

–“আচ্ছা।আপনি আর তাহমিনা ম্যাম একা…”
–“সময় আছে আমার একা ঢং করার?পুরো টিম ছিলো।”
উমাইর চটে যায় খানিকটা। তাহুরা উমাইরকে ভাবে কি?
–“আপনি রাগ করেছেন?”
উমাইর নিশ্চুপ।রাগ করার কি?তাহুরা সারাক্ষণ উমাইরকে প্রশ্ন করতে পারবে।মেয়েটা তার জীবনের প্রদীপ।অহেতুক চিন্তায় ভাসে তাহুরা।উমাইর জবাব দেওয়ার পূর্বে তাদের সম্মুখে এক লোক থামে।উমাইর মাথা তুলে তাকায়।তাহুরার বাবা উনার আন্ডারে চিকিৎসা নিচ্ছে।ডাক্তার তুহিন।

–“কেমন আছেন তাহুরা?মিস্টার উমাইর, অল গুড?”
তাহুরা উত্তর না দিলেও।উমাইর হাত মেলায় তুহিনের সহিত।তুহিন তাহুরার পানে চেয়ে।তাহুরার দৃষ্টি নত।উমাইর কাঁধ জড়িয়ে ধরে তাহুরার।অনেকটা বুঝিয়ে দেয় এই মেয়েটা কেবল তার।তাহুরা কিঞ্চিৎ নড়ে উঠলেও অবাক হয় না।উমাইর রুঢ় হেসে জবাব দেয়,
–“আমরা ঠিক আছি।”
পরক্ষণে তাহুরার হাত ধরে উমাইর।হালকা টেনে জবাব দেয়,
–“আসো। আই’ম হাংরি।”(আমি ক্ষুধার্ত)

ডক্টর তুহিন অনেকটা অবাক। উমাইরকে চিনে সে জুবায়েরের তাগিদে। অপ্সরী মেয়েটাকে তুহিনের পছন্দ।কিন্তু,উমাইর এর কাণ্ডে অনেকাংশে আশাহত হয়।মেয়েটার সামনে এতবার পড়েছে তুহিন,কখনো তাহুরা চোখ তুলে তাকায়নি।অথচ এখন হেঁটে যাচ্ছে উমাইরের হাত চেপে। তাদের মাঝে নিশ্চয় কোনো গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান!

ক্যান্টিনে ভিড়।হাসপাতালের ক্যান্টিনে ভিড় হওয়া স্বাভাবিক।পরিবেশ শীতল।ক্যান্টিন বিশাল।উমাইর যেমনটা হাত ধরেছে তাহুরার,ওভাবেই হেঁটে বেড়াচ্ছে।খাবার অর্ডার শেষে পে করে সিট খুঁজে নেয়।তাহুরার খাবার তার পানে ঠেলে নিজে খেতে শুরু করে।এমনভাবে খাবার চিবুচ্ছে সে যেনো ক্রোধ সকল খাবারের প্রতি।তাহুরা ভীত।সুদর্শন মানব আবার রেগেছে।কিছু বলবে সে?নাকি আবার বকবে!
–“কয়জনের চোখ তুলবো বলো?”
হিমশিম তাহুরা।কেশে উঠে খানিক,

–“জ্বী?”
–“আজ থেকে হাসপাতালে আসবে,আংকেলকে দেখবে এরপর বাসায় যাবে।এইখানে থাকার নাটক করবে না।এইসব আর ভালো লাগছে না আমার।”
উমাইর টেবিলে চড় দেয়।তাহুরা অর্ধ জীবিত।
–“ঐ ডাক্তার সুবিধার না।আংকেলকে বিদায় জানাও।দেন,বাসায় চলো।”
উমাইর আদেশ করে।
–“আমি থাকতে…”

–“এই চুপ!মেজাজ খারাপ হয়েছে দেখছো না?দেখছো?”
তাহুরা কেঁদে উঠে হু হু শব্দে।উমাইর গলে না।ফের নির্দেশ দেয়,
–“কেঁদে কেঁদে খাওয়া শেষ করো।”
আর এক পল নজর সরায়নি উমাইর তাহুরা হতে।মেয়েটা সত্যি কন্দনরত অবস্থায় খাবার খাচ্ছে।তার আদর মেয়েটা,তার প্রেয়সী।ডাক্তার তুহিনের মতো লোকের অভাব নেই দুনিয়ায়,যেই মেয়েকে দেখবে সেই মেয়েকে পছন্দ করবে।উমাইর ক্রোধে মত্ত। দাঁতে দাঁত চেপে আওড়ায়,
–“ক্যারেক্টারলেস বেয়াদব লোক।”

মুন্সী হাসপাতালে রয়েছে বহুদিন।মাঝে তাহুরার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়।গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে মেয়ে।আগামী সপ্তাহে পূর্বের কলেজে অনার্সে ভর্তি হবে তাহুরা।ভালো ফলাফল করেও খুশি হয়নি সে। বাবা ভালো নেই এখনো।ডাক্তার জানিয়েছে ইন্ডিয়া নিতে হবে।

তাহুরা, সুনেরা চার দিন নিজের বাসায় থেকে আবারও ফিরেছে উমাইরদের বাড়ি।শিউলি প্রথম থেকে মুন্সীর সাথে হাসপাতালে আছে।খরচের বহু অংশ বহন করেছে উমাইর এবং জুবায়ের।মুন্সীর অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে ইন্ডিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সকলে।সবকিছুর ব্যবস্থাও করে।দুইদিন পর রওনা হবে ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে।সাথে যাবে জয়,শিউলি।লোকটা নিজ চিকিৎসার জন্যে ইন্ডিয়ায় গেলো বহুবার।এইবারও খরচ বহন করবে উমাইর,জুবায়ের। তাদের এহেন মহাত্মার জন্যে কৃতজ্ঞ দুই বোন। সুনেরা রোজ রাতে কেঁদে স্বামীর বুক ভাসায়।বিনিময়ে জুবায়ের প্রেয়সীর প্রতি ভালোবাসা দ্বিগুণ করে।

উমাইরকে তাহুরা কয়েকবার শুকরিয়া জানিয়েছিলো।তবে,উমাইর সেই শুকরিয়া গ্রহণ না করে জবাবে বলেছিলো,
–“শুকরিয়া দিয়ে আমার কাজ নেই।আমি যা খুঁজবো তোমার থেকে,সেটাতে সায় দিলে বুঝবো মন থেকে শুকরিয়া বলেছিলে।”
বোকা মেয়েটা কৃতজ্ঞের হাসি হাসে কেবল।অথচ সে জানেনা,উমাইর ঠিক কি বুঝিয়েছে!

বিকেল হতে ঝড়। তাহুরার মন আকুপাকু করে একটু ভিজতে।বাসায় কেবল তাহুরা, নিবরাস এবং মেঘলা বেগম।নিবরাস তাহুরার সাথে অতটা আড্ডা দেয় না।আর একা হলে একদম না।উমাইর সাফ মানা করেছে নিবরাসকে।
মেঘলা এই সময়ে সন্ধ্যার নাস্তা বানায়। ছাদে গিয়ে ভেজার সাহস নেই তাহুরার।সে সিদ্ধান্ত নেয় যা বৃষ্টি হচ্ছে,ব্যালকনি দিয়ে গা ভেজানো সহজলভ্য।যেই ভাবা সেই কাজ।গায়ের ওড়না বিছানায় রাখে সে।পড়নে সুতির কামিজ,সেলোয়ার।মেঘলার রুমের ব্যালকনি নিরাপদ। আশপাশ হতে দেখা যায় না।ঝপঝপ বৃষ্টির শব্দ।ব্যালকনিতে পা রাখতে তনু ভিজতে আরম্ভ করে। তাহুরা দরজা ভিড়িয়ে দেয়। পাছে যদি কক্ষে পানি আসে!

মিনিট বিশেক নিজের সত্তাকে শীতল করে,ভিজিয়ে আকৃষ্ট করে তাহুরা।বৃষ্টির বেগ বাড়লে মেয়েটা হাসে নিজে নিজে।দু হাতের তালুতে পানি জমিয়ে আবারও উপরে ছুঁড়ে।বৃষ্টি বিলাসে মত্ত হয় উমাইরের সরল প্রেয়সী।
উমাইর কলেজ হতে দুপুরে বাসায় ফিরে তন্দ্রায় নিমত্ত।ঘুম ভাঙ্গলো তার নিবরাসের ফোনে।বৃষ্টি উপলক্ষে ফুটবল ম্যাচ রেখেছে ক্লাবে।সেই সুবাদে উমাইর উঠে দ্রুত।ফুটবল তার অন্যতম প্রিয় আসক্তি।হাঁটুর উপর প্যান্ট,সাথে স্পোর্টস টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে কক্ষ হতে বেরোয়।মাকে বলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সেই কক্ষের পানে এগোয় উমাইর।এলোমেলো চুল না আঁচড়িয়ে হাতের সাহায্যে সামলিয়ে নেয়।ফুলে থাকা বাহু স্পষ্ট।স্বাস্থ্যবান পা দৃশ্যমান।দরজায় কড়া নেড়ে অপেক্ষা করে মিনিট তিনেক।দরজা না খুললে আবারও কড়া নেড়ে ডেকে উঠে,

–“আম্মি!”
শব্দ না পেয়ে দরজার হাতল ঘুরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে উমাইর।কেউ নেই।ফিরতে নিলে ব্যালকনির দরজায় আওয়াজ হয়।পিছে বাঁক ফিরলে সে তাহুরাকে দেখে।হাত হতে মোবাইল ছুটে পড়ে মেঝেতে।মেয়েটার অবয়ব স্পষ্ট।ভেতরের গোপন বস্ত্রের ছাপ ভেসে উঠে।

তাহুরার দুনিয়া ঘুরে‌।দ্রুত সরতে নিলে পায়ের পানিতে পিছলে যায়।
উমাইর তাকে ধরার খেয় হারিয়েছে।সে মত্ত মেয়েটাতে।তবে,নিজেকে শক্ত রাখে উমাইর।নিষিদ্ধ অনুভূতি মনে চেপে বিছানা হতে ওড়না নিয়ে ছুঁড়ে তাহুরার সত্তায়।বাহু টেনে দাঁড় করায় তাকে। কটকট সুরে আওড়ায়,
–“নায়িকা সাজা শেষ?দরজা লক করা যায় না? যদি জ্বর আসে,বাসা থেকে বের করবো তোমাকে।”
পরপর উমাইর হাঁটু গেড়ে বসে।ভেজা পা টেনে নেয়,
–“ব্যথা লাগে?”
লজ্জায় তাহুরার জান যায়।অথচ উমাইর কেমন শীতল।যেনো কিছু হয়নি।তাহুরা নিজেকে ওড়নায় মুড়িয়ে নেয়।মুখে হাত রেখে জবাব দেয়,
–“নেই।”

–“থাকলে আরো বাড়িয়ে দিতাম।মাথামোটা কোথাকার।”
উমাইর মেকি রাগ দেখায়।ভেতরটা উত্তাল।কি মিষ্টি সুবাস আসছে মেয়েটা হতে।সহ্য শক্তি হারাচ্ছে সে।মন বলছে এখনই ডুবে যেতে মেয়েটার বক্ষ ভাঁজে।
নিজেকে ধাতস্থ করে উমাইর।জোরে শ্বাস নেয়।অবস্থা বেগতিক দেখে দূরে হটে সে।মোবাইল তুলে মেঝে হতে।পরক্ষণে মিছে ধমক দেয় সে তাহুরাকে,

–“গাঁধীর মতো না দাঁড়িয়ে থেকে চেঞ্জ করো।জ্বর আসলে আজ বাসার বাহিরে থাকবে তুমি,তাহুরা।”
নিজেকে কঠোর মানব সাজায় উমাইর।তাহুরা ভাবে,উমাইর তেমন একটা খেয়াল করেনি কিছু।নাহলে এমন বকতো না।সে সাত পাঁচ না ভেবে স্বাভাবিক করে নিজেকে।
অন্যদিকে রুম থেকে বের হলে যেনো উমাইরের মাথায় পীড়া হয়।অনুভব করে তার ভেতরকার অন্যতম আকর্ষণকে।যা দেখার কথা অনেক পরে,সেটা কেনো আগে দেখলো?কিভাবে সামলাবে সে নিজেকে? তাহুরার স্পষ্ট সকল অবয়ব।মেয়েটার ভেজা রূপ।তিরতির করতে থাকা অধর।মনে হয় না,বছর বছর অপেক্ষা করতে পারবে উমাইর।বাইকের সম্মুখে আসে সে।গাড়ি নিবে না।গায়ের জ্বলন কমছে না এখনো।বৃষ্টিতে ভেজা যাক।পুনরায় নিজের মাথার দুপাশে হাত বুলায় উমাইর।

আসমানের পানে মুখ তুলে।দৃঢ় নিঃশ্বাসে আর্জি জানায়,
–“অতিদ্রুত তুমি আমার হও,জান।নিজেকে শক্ত রাখা মুশকিল এখন।যতবার তোমাকে দেখবো ততবার এই দৃশ্য ভাসবে।”
পরপর উমাইর মোটর বাইকে বসে।হেলমেট পড়ে। ডানে বামে ঘাড় নাড়িয়ে মোটর বাইক স্টার্ট দেয়।আপনমনে সে আওড়ায়,

–“শিট ম্যান!ইউ আর কিলিং মি,তাহু।কিন্তু,যেদিন তুমি আমার হবে,সেদিন আমাতে নিঃশেষ হবে তুমি জান।”
ম্যাচ শেষ এক রাউন্ড।এর মাঝে বিরতি।উমাইর কোকের বোতলে চুমুক দেয়। হাতে ফোন।প্রেয়সীর খোঁজ নিচ্ছে।তাহুরা মেঘলার সাথে টিভি দেখছে।নিশ্চিত মনে উমাইর ফেসবুকিং করলে জুবায়েরের ফোন আসে।ভাইয়ের ফোন রিসিভ করতেই শুনতে পায়,
–“শশুর আব্বা চায়,উনি ইন্ডিয়া যাওয়ার পূর্বে উনার ছোট মেয়ের জন্যে ছেলে ঠিক করতে।আমার বন্ধু আছে নাকি জিজ্ঞাসা করলো।বন্ধু তো আছে আমার অনেক।কিন্তু,আমার ভাইটাকে আমি ভুলি কিভাবে?”
–“দুইদিন আগে এমন কাহিনী করছেন উনি?ওকে,এইবার আসল নাটক আমি দেখাই।আসছি।”

উমাইর ক্ষিপ্ত।
–“তুই কই এখন?”
–“স্পোর্টস ক্লাবে।”
উমাইর হাঁটা অবস্থায় জবাব দেয়।
–“তুই শর্টস আর টিশার্ট পড়ে বিয়ের কথা বলতে আসবি?”
জুবায়ের অবাকের সুরে বলে।
–“কাপড় ছাড়া তো আসছি না।চেঞ্জ করার সময় নেই।মুন্সীকে আমি বিশ্বাস করি না।”
উমাইর বাইকের নিকট পৌঁছায়।

–“মাকে বলছি আমি।”
আবারো বলে জুবায়ের।
–“তাহুরা একা বাসায়।বাবাকে আসতে বলো।”
–“আচ্ছা।”
জুবায়ের ফোন কাটলে উমাইর আবারও হেমলমেট হাতে নেয়।বৃষ্টি থেমে এখন পরিবেশকে সতেজ করেছে। উমাইরের পড়নে কাপড় ভেজা হলেও তার তোয়াক্কা নেই মানবের। মোদ্দা কথা হলো মুন্সীকে বশ করা।
উমাইর মোবাইল পুরে পকেটে।অধর বাঁকা করে হাসে,

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২১

–“ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে আপনার এই কাহিনী করাটা আমার পছন্দ হয়েছে,শশুর আব্বা।আপনার ছোট মেয়েকে আমার কাছে দিতে বাধ্য আপনি।”
–“একটু হেরফের হবে তো আমি উল্টিয়ে দিবো সবকিছু।আমার বোকাটা শুধু আমার।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২৩