রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২১

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২১
লেখনীতে: সালসাবিল সারা

–“আসলে…আসলে বাবা অসুস্থ।তাই আমার মন খারাপ।আর কিছু না।”
ধীর সুস্থে জবাব দেয় তাহুরা।উমাইর তার সম্মুখে চেয়ারে বসে।কনভেনশন হলের বারান্দার লবিতে তারা।কয়েক আত্মীয় স্বজন আছেন।তবে তারা দূরে নিজেদের মতো ব্যস্ত।ভরা অনুষ্ঠানে কে বা কার খোঁজ করবে?

তাহুরা হাতে হাত ঘষে।চাচাদের ব্যাপারটা চেপে যায়।অথচ তার মন খারাপের প্রধান কারণ চাচারা।বাবাকে করা অপমান কিভাবে ভুলবে আদরের মেয়ে!দুপুরের কান্ড কারখানা ভাবলে আঁখি ভিজতে চায় মেয়েটার।কিন্তু,সম্মুখে বসা লোকটার জন্যে সব দায়।লোকটা সহজে ছাড়ার পাত্র না।অশ্রুজল দেখলে তাহুরার রক্ষে নেই।তাহুরা আর ঝামেলা চায় না।
উমাইর নিশ্চুপ।তাহুরার বাক্য সত্য।কিন্তু ঈষৎ।পরিপূর্ণ নয়।এইযে মেয়েটা নজর লুকাচ্ছে, হাতে হাত ঘষছে,নিভু দৃষ্টিতে উমাইরকে দেখছে,অত্র লক্ষণ যথেষ্ট।উমাইর তার লম্বা পা সটান করে।তাহুরা একটু পেছায়।
বুড়ো আঙুল দ্বারা কপালের পাশে চুলকায় উমাইর,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“আঙ্কেল আগে থেকে অসুস্থ।এর জন্যে এমন সন্ন্যাসী সেজে আসার কারণ?আমি যদি ভুল না হই,তুমি আমাকে পুরো সত্যি বলোনি।”
তাহুরার হাত থামে।শঙ্কায় চেহারা মলিন।কোনো ভাবে চাচাদের কথা বলা যাবে না উমাইরকে,অন্যদিকে মিথ্যা বলাও সম্ভব না।তাহুরার নিশ্চুপতায় উমাইর গর্জে উঠে ক্ষীণ,
–“আমরা প্রেম করতে আসিনি এখন।সারাটা সময় আমার হাতে নেই।স্পিক আপ,তাহুরা।”
সমান্তরাল দৃষ্টিতে উমাইরের অবয়বে পানে চায় তাহুরা।বুকটা ধুকধুক করছে।উমাইর কেনো এমন জেরা করছে?কি করবে সে কারণ জেনে?নতুন আত্মীয়দের কি নিজেদের পারিবারিক সমস্যা বলা সম্ভব?উনারা নিশ্চয় ভালো ভাবে নিবেন না সমস্যাটা।তাহুরা ইতোস্তবোধ করে কয়েক পল।উমাইরের কড়া নজরে মেয়ে খুব কষ্টে আওড়ায়,

–“দেখুন..এই যে দেখুন…”
–“দেখছি।”
উমাইর সোজা হয়ে বসে।ঠিকই দেখছে সে তার প্রেয়সীকে। নিজ নজরে আবদ্ধ করছে তার প্রেয়সীর অতি সৌন্দর্যে মোড়ানো সত্তাকে।সাধারণ থাকুক বা মেকাপ করুক মেয়েটা,সর্বোপরি তাকে অপ্সরী লাগে।
উমাইরের হিংসা হয়,অন্যরা কেনো তার প্রেয়সীর রূপ দেখবে?তাই তো মেয়েটাকে এটা সেটা সে বলতেই থাকে। পরে অবশ্য অন্তর জ্বলে তার।মেয়েটাকে কটু কথার বদলে কবে ভালোবাসার কথায় দিশেহারা করবে সে তা ভেবে উমাইর ঘাড় কাত করে।
এবার উঠে দাঁড়ায়,

–“দেখছি তোমাকে।বলো এইবার।”
–“আমি এমন দেখার কথা বলিনি।”
তাহুরা এক কদম পিছে যায় ফের।
–“কেমন দেখার কথা বললে?দুষ্টু ইশারা করছো আমাকে?”
ভ্রু কুঁচকে মুখশ্রীতে গম্ভীর ভাব টানে উমাইর সর্বকালের ন্যায়।তাহুরার শরীরে ঝাঁকি দেয়।উমাইর কি বললো মাত্র!তাহুরা বামে ফিরে।আঁখিতে আঁখি রাখার সাহস নেই তার।
–“আমি ব্যাপারগুলো আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারছি না।অন্য কোনো মতলব নেই আমার।”
কি নিঃসংকোচে উত্তর! ভোলাভালা বোকাটা। উমাইরের মন গলে।মেয়েটাকে আর জেরা করবে কি?থাক,কোনো বিশাল ঘটনা হলে অবশ্য তার পরিবার জানতো।

–“আচ্ছা।বুঝলাম।”
উমাইর সম্মুখে অগ্রসর হলে খেয়াল করে তাহুরা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে।নড়চড় নেই।উমাইর বাঁক ফিরে পেছনে।তাহুরা অন্যমনস্ক।উমাইর ভাবে তাহুরা লজ্জায় অনড়।সে শুধায়,
–“আসবে তুমি?নাকি এইখানে রাত পার করবে?”
–“জ্বী?”
বাবার জন্যে চিন্তায় মগ্ন তাহুরার ধ্যান ছুটে।
–“আসো।”

উমাইর ডান হাত এগিয়ে ইশারা করে তাহুরাকে।ধীরে মাথা নাড়িয়ে তাহুরা এগিয়ে যায় উমাইরের পানে।
উমাইর হাত নামায়।বেহায়া হাত আরেকটু হলে মেয়েটার কাঁধে হামলা করতো, তাকে কাছে টানতো নিঃসন্দেহে।তাহুরা আশেপাশে থাকলে উমাইরের দৃষ্টি,ভাবনা সব কেমন বেহায়া হতে চায়।মনের রাণীকে নিজের পাওয়ার চেতনায় হাহাকার করে উমাইরের অন্তত পিঞ্জিরা।কবে আসবে দিনটা!সেদিন একচুল ছাড় দিবে না উমাইর।মেয়েটার কোনো মানাও শুনবে না। এতো ছটফট,নিজেকে সংযত রাখার দিন যেদিন শেষ হবে সেদিন থেকে তাহুরার জীবনে উমাইর নামক ভালোবাসাময় স্পর্শের তুফানের আগমন হবে।মেয়েটাকে নিজ বক্ষের সাথে লেপ্টে রাখবে,তাহুরা চাইলেও উঠতে দিবে না, কোনো মানা শুনবে না।
উমাইরের পাশাপাশি হাঁটতে থাকা তাহুরা জানে না,উমাইর তাকে ভালোবাসার চাদরে অতিষ্ট করার পরিকল্পনায়।

বিয়ের পর্ব শেষ হয় বিদায়ের পর্বের সমাপ্তিতে।বাহিরে সকলে নতুন কনেকে সামলানোর চেষ্টায়।তবে, শক্তভাষী সুনেরা আজ ভঙ্গুর।কতক্ষণ মাকে জড়িয়ে কাঁদে তো কতক্ষণ বোনকে।তাহুরার আঁখির বাঁধ মানে না সাধারণ দিনে।আর আজ কথা নেই।লাগামহীন অশ্রুজলে তার গাল ছেয়ে।হিজাবের দুপাশ,চিবুকের নিচে অনেকটা ভেজা।
উমাইর অবাক হয়।তার ছিঁচকাদুনের কান্নাটা আজ অন্যরকম।নিজের জন্যে বা নিজে ইচ্ছে করে তাহুরাকে কান্না করালে উমাইরের সুখ অনুভব হয়।আজ ব্যতিক্রম।উমাইর বুঝে নিজে কারণ হওয়া ব্যতিত,তাহুরা অন্য কিছুতে কাঁদলে উমারের মেজাজ ঠিক থাকবে না।এখনো মনে ইচ্ছা জাগল,মেয়েটার পা উমাইরের কোমরে পেঁচিয়ে তাকে কোলে নিয়ে নিজ বক্ষে আবদ্ধ করতে।
উমাইর পাশে দাঁড়ানো জুবায়েরকে বলে,

–“শেষ করো এইসব?ভাবী সামলাও?তোমার শালী মনে হয় আজ অজ্ঞান হবে।ওকেও উঠতে বলো গাড়িতে।ভাবীর সাথে গেলে দুজনের ভালো লাগবে।”
জুবায়ের পাশ ফিরে।তার ধৈর্যশীল ছোটভাইকে অবলোকন করে।ভাইয়ের বিয়ে বলে উমাইর এতক্ষণ টিকে রইলো।নয়তো,কবে বিয়ে এটেন্ড করে বাড়ি ফিরতো সে।জুবায়ের হালকা বাঁকা হয়ে প্রশ্ন করে উমাইরকে,
–“কার জন্যে চিন্তা হচ্ছে?আমার বউ নাকি শালীর জন্যে?”
–“সময়ের জন্যে।বাট,তোমার বউয়ের জন্যে চিন্তা করে আমার লাভ কি?তোমার মাথামোটা শালীকে আমার গাড়িতে পাঠাও।”

উমাইর সহজ জবাব দেয়।ভাইয়ের সাথে নজর মিললে,জুবায়েরের অধরে ঝুলন্ত অন্যরকম হাসি পর্যবেক্ষণ করলে উমাইর ফের আওড়ায়,
–“হোয়াট?”
অনেকটা আঁধার ছেয়ে ফেলে উমাইর তার সুদর্শন মুখশ্রীতে।অতঃপর পেছনে ফিরলে অজানা হাসিতে মত্ত হয় উমাইর।বড় তার ছোট ভাইয়ের তৃপ্তিময় হাসিটা উপভোগ করতে পারলো না।

তাহুরাকে বুঝিয়ে,শুনিয়ে শিউলি পাঠাচ্ছে সুনেরার সহিত। বর বউ আলাদা গাড়িতে যাবে।ইতিমধ্যে বেশিরভাগ নিকট আত্মীয় তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি করে প্রগাড়পার।জনে জনে বেরিয়ে যাচ্ছে। সুনেরা বোন যাবে শুনে খানিক দমে।তাহুরাকে অন্য গাড়িতে বসার নির্দেশনা দিয়ে সে জুবায়েরের সাথে পেছনে বসে।সাথে যায় মেঘলা এবং জয়।শিউলিও বেরিয়ে যায় ইমনদের সাথে।এর পূর্বে নিবরাস,জাফরান এবং তাহুরা উমাইরের গাড়িতে উঠে।

তাহুরা জাফরানকে নিয়ে পেছনে বসে।নিবরাস উমাইরের পাশের সিটে বসলে গাড়ির মিডেল আয়নায় তাহুরাকে দেখে নেয় উমাইর।মেয়েটা জাফরানের হাত ধরে বসে।কেমন চুপচাপ। নিবরাস হুট করে বলে উঠে,
–“তুই বোনের বিয়েতে এমন কাঁদলে নিজের বিয়েতে সেন্সলেস হবি মনে হয়।”
তাহুরার ভাবভঙ্গির পরিবর্তন নেই।সে একই।স্থির হয়ে জবাব দেয়,
–“জানিনা রে।”

উমাইর পুনরায় মিডেল আয়নায় দৃষ্টি জ্ঞাপন করলে তাহুরার ক্লান্ত অবয়ব লক্ষ্য করে।এর মাঝে নিবরাস আবারও বলে,
–“জানবি কিভাবে তুই তখন অজ্ঞান।”
–“স্টপ নিবরাস।”
স্বাভাবিক গলায় বলে উমাইর।জর্জরিত মেয়েটাকে নিয়ে অন্য কেউ মজা করবে,হজম হলো না উমাইরের।
–“ওকে ভাই।”
নিবরাস মুখ চেপে হাসে।

পুরো রাস্তায় নিশ্চুপে গাড়ি চলে।রাতের পরিবেশ মনোরম।রাত তাহুরার সর্বপ্রিয়। তিমিরে যখন বাহারি রঙের আলো জ্বলে পরিবেশটা কেমন স্নিগ্ধ হয়।ভারী আঁখি পল্লবে তাহুরা চারপাশ দেখতে ব্যস্ত।মাঝে মাঝে উঁকি দেয় ড্রাইভিং সিটে বসা তার প্রিয়তমের পানে।পেছন হতে সুঠাম দেহি কাঁধ, ঘাড় আর ট্রিম করা চুলের সাথে মাথার তালুতে ঘন চুল দৃশ্যমান।দু একবার চোখাচোখিও হয় তাদের।

তাহুরা নজর সরায়।প্রকৃতি দেখার জো নেই।রাস্তার ধারে সারিসারি দোকান।কিছু দোকান বন্ধ হলেও রঙিন আলোয় জ্বলন্ত।হেলান দেয় তাহুরা গাড়ির সিটে। বোকা মেয়েটার আঁখিতে ভাসমান উমাইরের নানান রূপ।উমাইর কখন কি বলে কিছুই আয়ত্বে আসে না তাহুরার।এই যে আজ,দুইবার তাকে অপদস্ত করলো।প্রথমে কনভেনশনে হলে তাহুরাকে কমপ্লিমেন্ট দিলো তার প্রাকৃতিক চেহারা অন্যদের দেখাচ্ছে কিনা আবার বারান্দার লবিতে বললো তাহুরা সন্ন্যাসী সেজেছে।

কান্নার দরুণ মাথাটা দপদপ করে তাহুরার।উদরে থাকা জাফরানের হাতে হাত বুলায় সে।ভারী আঁখি বন্ধ করে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,উমাইর তাকে যেইভাবে ইচ্ছে বকুক, দিনশেষে এই মানবকে সারাজীবনের জন্যে চায় তাহুরার অন্তর,মন,মস্তিষ্ক।

উমাইরদের গাড়ি পৌঁছায় সবার শেষে।সকলে বাড়ির ভেতর।পার্কিং এরিয়া তাদের বাড়ির আঙিনায় কোণায় আলাদা একটা বিশাল কক্ষ।সেথায় ভাইয়ের ফুলে সাজানো গাড়ির পাশে নিজের গাড়ি পার্ক করে উমাইর।আলগোছে ড্রাইভিং সিট থেকে নামলে নিবরাসও নামে।পেছনের দুজনের হুঁশ নেই।ঘুমে মত্ত তারা।উমাইর গাড়ির দরজা খুলে।তাহুরার নাম ধরে ডাকে,

–“তাহুরা উঠো।”
মেয়েটার খবর নেই।সে জাফরানকে জড়িয়ে ঘুমে মগ্ন।উমাইর জাফরানকে টেনে তুলে।তাহুরা কিঞ্চিৎ নড়লেও তন্দ্রা ছুটলো না।জাফরানকে উমাইর নিবরসের নিকট দিলে সে নিজেই বললো,
–“তুমি তাহুরাকে জাগাও।আমি গেলাম।”
উমাইর মাথা নাড়ে।ঘুমন্ত প্রেয়সীকে আরেকবার দৃষ্টিতে বদ্ধ করে।অতঃপর তাহুরার গালে হাতের উল্টো পিঠে ছুঁয়ে দেয়,
–“এই মেয়ে,উঠো না বাবা।”

কি নরম,আদুরে সুর।তাহুরার জায়গায় অন্য কেউ হলে উমাইর নিশ্চয় তোয়াক্কা না করে এইভাবে রেখে ভেতরে যেতো।
কয়েকবার ডাকার ফলে তাহুরার ঘুম ছুটে।উমাইরকে দেখে নিজেকে ধাতস্থ করে,
–“পৌঁছেছি!”
–“পাঁচ মিনিট আগে।”
উমাইর বুকে হাত গুঁজে।তাহুরা জিহ্বা কাটে দাঁত দ্বারা।দ্রুত নামতে নিলে শাড়ির কুঁচিতে পা আটকে পড়তে নিলে নিজেকে সামলে নেয়।
উমাইর বিরক্ত হয়।ঘুমের ঘোরে মেয়েটা কেনো এমন চঞ্চল হচ্ছে?
–“ম্যারাথনে দৌড়াবে নাকি?”
তাহুরা দুদিকে মাথা দোলায়। অর্থাৎ,সে যাবে না।
–“মাথামোটা।”

উমাইরের সরু জবাব।শব্দটা শুনতে শুনতে তাহুরার মুখস্ত।উমাইর সবসময় কেনো ওকে এমন বকে?যত্ন নিলেও বুঝি বকতে হয়?
ভেতরে কিছু নিয়ম কানুন শেষ করে সকলে ফিরে নিজ কক্ষে। সুনেরা অনেক চেয়েও তাহুরার সাথে ঘুমোতে পারেনি।তাহুরা মেঘলার সাথে থাকবে বলে জানায়।বোনের বিশেষ রাত কিভাবে তাহুরা নষ্ট করবে?
মেঘলার সাথে রাতের অনেকটা সময় তাহুরা গল্প করে।মুন্সী আবার রাতের তিনটায় তাহুরাকে ফোন দেয়।ভিডিও কলে মেঘলা আর তাহুরার সাথে কথা বলে।বাবার সাথে কথা শেষে মেয়েটা প্রাণবন্ত হয়।আরামের তন্দ্রা ভর করে আঁখি জোড়ায়।

সকাল আটটা।উমাইর চঞ্চল।ভেতরে তার অস্থিরতা। জগিংয়ে যেতে কিছুটা সময় দেরী করেছে আজ।ঘুম ভাঙেনি ভোরে।কলেজ হতে তার ছুটি আজ।
তবে বিশেষ ফোন আসায় জগিংয়ে না গিয়ে নিজের গন্তব্য পরিবর্তন করে উমাইর।মায়ের দরজায় দুই টোকা দিতেই মেঘলা দরজা খুলে।মেঘলা মাত্র বের হচ্ছিলো কামরা হতে।জগিংয়ের পোশাকে উমাইর। জগিংয়ে না গিয়ে এইখানে এলে মেঘলা প্রশ্ন করে,

–“আব্বা, জগিংয়ে যাবে না?”
–“ইমন ফোন করেছিলো।তাহুরার বাবাকে হাসপাতালে নিয়েছে খানিক আগে।ভাই,ভাবীর ফোন বন্ধ।তুমি তাদের জাগাও।”
উমাইর এক নিঃশ্বাসে বলে।মেঘলা হাত রাখে মুখে।চিন্তিত সুরে বলে,
–“হায় আল্লাহ্।কি হলো হঠাৎ? কাল রাতেও কথা বললো লোকটা মেয়ের সাথে।তুমি তাহুরাকে জাগাও সাবধানে।আমি যাচ্ছি।”

এমন মানুষ অসুস্থ হলো,তার দুই মেয়ের কথা ভেবে অস্থির মেঘলা।মেয়ে দুইজনের দিকে ফিরে হলেও আল্লাহ্ যেনো মুন্সীকে সুস্থতা দান করে যেতে যেতে দোয়া করলো ভদ্র মহিলা।
উমাইর দরজা খুলে রাখলো সটান।ধীর পায়ে তাহুরার পানে এগোয়।এলোমেলো চুল মুখে ছড়িয়ে তার।পাতলা কম্বল ঠিকঠাক।অগোছালো তাহুরাকে মাত্র ঢেকে সুশীল করে বেরুচ্ছিলো মেঘলা বেগম,তখন উমাইরের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়।
উমাইর চুল সরায় তাহুরার মুখ হতে।অতঃপর ভারী গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে উঠে মেয়েটাকে,
–“তাহু,আমাদের বেরুতে হবে এখন।”

তাহুরা লাপাত্তাহীন। উমাইর আরো গভীর সুরে ডাকলে হুট করে আঁখি মেলে তাহুরা।পাশে দাঁড়ানো উমাইরকে অবলোকন করে কিছু বুঝার পূর্বে উমাইর বলে,
–“আমাদের বেরুতে হবে।ফ্রেশ হও।”
–“কই যাবো?আন্টি কোথায়?”
ঘুম ঘুম সুর তাহুরার। শরীরে শিহরণ জাগে উমাইরের।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে,
–“আছে সবাই।ফ্রেশ হও।আমি রুমের বাহিরে আছি।”

উমাইর কক্ষ হতে বেরুতে নিলে তাহুরা বালিশের পাশ হতে ওড়না নিয়ে দ্রুত নামে বিছানা হতে।প্রশ্ন করে,
–“এই যে বলুন না কি হয়েছে?আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।”
উমাইর থামে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছন ফিরে।মেয়েটার সদ্য ঘুমে হতে জাগ্রত মুখশ্রী কেমন আকর্ষণীয়।তবে সেথায় আঁধার নেমে।ঠিক তাহুরার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় উমাইর। গালে হাত রাখে আদুরে ভঙ্গিতে,
–“তোমার বাবা হাসপাতালে।কিছু হবে না,তাহু।আমি আর ভাই বেস্ট ডাক্তারের ব্যবস্থা করবো।”
ভেঙে পড়ে তাহুরা।নিজ কানে ভুল শুনলো নাকি বুঝলো না। কাল রাতে বাবা অনেকটা সুস্থ ছিলো।পা যেনো মুড়ে যাচ্ছে।উমাইর তাহুরার কোমরে হাত প্যাঁচায়।সামলে নেয় মেয়েটাকে।আঁখি জোড়া জলে টলমলে।বুকের সেই পোড়া দহন অনুভব করে উমাইর।

–“ক…কি বল…ছেন?”
বাবার ছায়ায় থাকা মুন্সীর ছোট্ট মেয়েটার দুনিয়া ঝাপসা। উমাইরের মসৃণ টিশার্ট শক্ত হাতে খাঁমচে ধরে তাহুরা।
উমাইর তাহুরার মাথার পিছে হাত রাখে।স্নেহের সুরে বলে,
–“একদম কাঁদবে না।কিছু হয়নি আংকেলের।অসুস্থ তাই হাসপাতালে।তোমাকে বললাম বেস্ট ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করবো।”

–“আমার বাবাকে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিবেন প্লিজ।বাবা ছাড়া আমি শেষ হয়ে যাবো।”
ভেঙে পড়ে মেয়েটা।উমাইর তাহুরার মাথায় ধীর গতিতে চুলের গভীরে স্পর্শ করে,
–“তুমি কাঁদলে আমি কিছুই করবো না।স্টপ ক্রাইং তাহু।”
উমাইরের শক্ত হুমকিতে নিজেকে কিছুটা সামলায় তাহুরা।তাও আঁখি জলে ভিজে যায়।
তাহুরার হাত ধরে উমাইর।বাথরুমের সম্মুখে এনে থামায়,

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২০

–“ফ্রেশ হও।”
তাহুরা তার পানে তাকালে উমাইর হালকা হাসে।আশ্বাস দেয় কড়া সুরে,
–“তোমার জন্যে আমি সব করবো তাহুরা।তুমি শুধু অন্য কিছুতে কেঁদো না।”

রেখেছি তারে মন পিঞ্জিরায় পর্ব ২২